‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’- এ বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো জীবনের সকল ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে তার আনুগত্য করা। জীবনের সকল বিষয়ে, সকল ক্ষেত্রে মহানবীর শিক্ষা, বিধান ও নির্দেশ দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেওয়া। সকল মানুষের কথা ও সকল মতের উর্দ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথাকে স্থান দেওয়া।

তাঁর আনুগত্যই ঈমানের আলামত। মহান আল্লাহ বলেন:

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ

 ‘‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য কর- যদি ঈমানদার হয়ে থাক।’’[1]

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

‘‘আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে রহমত করা হয়।’’[2]

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

‘‘যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আদেশমতো চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হলো বিরাট সাফল্য।’’[3]

আল্লাহ আরো বলেন,

وَمَنْ يُطِعْ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُوْلَئِكَ رَفِيقًا

‘‘আর যদি কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করে, তবে যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন সে তাদের সঙ্গী হবে। তারা নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর সাথী হিসেবে তারাই উত্তম।’’[4]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন:

وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ

‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করে তারাই কৃতকার্য।’’[5]

এভাবে কুরআন কারীমে বারংবার আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) আনুগত্যকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং মুমিনের জাগতিক সফলতা ও পারলৌকিক মুক্তির শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে, আল্লাহর আনুগত্য মূলত তাঁর রাসূলের (ﷺ) আনুগত্যের মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ আল্লাহর আনুগত্য করতে হলে তার আদেশ নিষেধ জানতে হবে। আর আল্লাহর আদেশ নিষেধ একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রাপ্ত ওহীর মাধ্যম ছাড়া কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয়। এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য। বিষয়টি কুরআন কারীমে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে:

مَنْ يُطِعْ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا

‘‘যে ব্যক্তি রাসূলের হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে, তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’’[6]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন:

قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلا الْبَلاغُ الْمُبِين

‘‘বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা তাঁর (রাসূল) থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সঠিক পথ পাবে। রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেয়া।’’[7]

এখানেও আমরা দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।

জাগতিক বিষয়ে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বা ‘আদেশ-নিষেধের অধিকারীদের’ আনুগত্য প্রয়োজনীয়। তবে এ বিষয়ে যে কোনো মতভেদ বা সমস্যা নিষ্পত্তি করতে অবশ্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা তাঁর শিক্ষার কাছে ফিরে আসতে হবে। মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আল্লাহর রাসূল বলে বিশ্বাসকারী প্রতিটি মুসলিমের অন্যতম দায়িত্ব হলো তাদের মধ্যকার সকল মতবিরোধের নিস্পত্তি করা তার নির্দেশ ও শিক্ষা অনুসারে, অর্থাৎ কুরআন-হাদীসের নির্দেশ অনুসারে। কুরআনে বা হাদীসে যে নির্দেশ থাকবে তা সর্বান্তঃকরণে মেনে নিতে হবে। নিজেদের মতামতের  উর্দ্ধে স্থান দিতে হবে তাঁর সিদ্ধান্তকে। এ বিষয়ে একটি আয়াত আমরা উপরে দেখেছি। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ

‘‘হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ‘আদেশের মালিক’ তাদের। তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।’’[8]

[1] সূরা (৮) আনফাল: ১আয়াত।
[2] সূরা (৩) আল-ইমরান: ১৩২ আয়াত।
[3] সূরা (৪) নিসা : ১৩ আয়াত।
[4] সূরা (৪) নিসা: ৬৯ আয়াত।
[5] সূরা (২৪) নুর: ৫২ আয়াত।
[6] সূরা (৪) নিসা : ৮০ আয়াত।
[7] সূরা (২৪) নুর: ৫৪ আয়াত।
[8] সূরা (৪) নিসা: ৫৯ আয়াত।