ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইলম ও দাওয়াত শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ৫ টি
যারা পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে তাদের শেষ পরিণতি কী হবে? জান্নাত; না জাহান্নাম? যেমন যারা বনে জঙ্গলে বা দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাস করে, তারা কোন নবীর দেখা পায়নি, কেউ তাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে অথবা ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করেনি।

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এই শ্রেণির মানুষ সম্পর্কে সবচেয়ে সুন্দর অভিমত হচ্ছে- কেয়ামতের দিন তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। যে ব্যক্তি নির্দেশ মান্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি অমান্য করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। দলিল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বানী: “আমরা রাসূল প্রেরণ ব্যতিরেকে কাউকে শাস্তি দিই না।” [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১৫]
শাইখ বিন বায (রহঃ) এর ফতোয়া সংকলন, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৫৬

http://islamqa.info/bn/10134
কোন বিষয় দিয়ে দাওয়াতি কাজ শুরু করা অপরিহার্য তা নিয়ে এখানের ইসলামী দলগুলো পরস্পর মতভেদ করছে। সেটা কি রাজনৈতিক দিক, নাকি আকিদা, নাকি আখলাক...? আপনারা কোন বিষয় দিয়ে দাওয়াতী কাজ শুরু করাকে উচিত মনে করেন।

 শরিয়তের বিধান হচ্ছে- আকিদা দিয়ে দাওয়াতি কাজ শুরু করা। যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকিদা দিয়ে দাওয়াতি কাজ শুরু করেছিলেন এবং অন্যান্য রাসূলগণ আকিদা দিয়ে দাওয়াতি কাজ শুরু করেছেন। এর দলীল হচ্ছে- মুআয (রাঃ) এর হাদিস। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “তুমি অচিরেই আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাবে। তাদের কাছে যাওয়ার পর তাদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ-কোন সত্য উপাস্য নেই - আল্লাহ ছাড়া। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)’ এই সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি আহ্বান জানাবে। যদি তারা তোমার এই দাওয়াতে সাড়া দেয় তাহলে তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ দিনরাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা তোমার এ দাওয়াতে সাড়া দেয় তাহলে তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত প্রদান করা ফরয করেছেন। সেটা তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের কাছ থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের মধ্যে যারা গরীব তাদের মাঝে বণ্টন করা হবে। যদি তারা তোমার এ দাওয়াতে সাড়া দেয় তাহলে সাবধান তুমি তাদের উত্তম মালগুলো (যাকাত হিসেবে) নিয়ে নিও না। আর মজলুমের বদদোয়াকে ভয় কর। মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।”

দাওয়াতের টার্গেটকৃত শ্রেণী যদি কাফের হয় তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি প্রযোজ্য। আর দাওয়াতের টার্গেটকৃত শ্রেণী যদি মুসলমান হয় তাহলে দ্বীনের যে বিষয়গুলো তারা জানে না অথবা যে বিষয়গুলোতে তারা অবহেলা করে সে বিষয়গুলো তাদেরকে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের বিবেচনা থেকে ক্রমধারা অবলম্বন করতে হবে।
ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (১২/২৩৮)

http://islamqa.info/bn/10261
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসৎ কিছু দেখে সে যেন হাত দিয়ে তা পরিবর্তন করে” এ হাদিস কি এ কথা বুঝাচ্ছে যে, আমরা অসৎ কাজের প্রতিরোধ সরাসরি হাত দিয়ে শুরু করব; যদিও সে অসৎ কাজটি মুখ দিয়েই প্রতিহত করা সম্ভব।

 আলহামদুলিল্লাহ।

অসৎ কাজে বাধা দেয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্রমধারা অবলম্বন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাবধান করা, (হুকুম) স্মরণ করিয়ে দেয়া। এরপর জান্নাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা ও জাহান্নাম থেকে সাবধান করা। তারপর ধমকি দেয়া ও তিরস্কার করা। এরপর হাত দিয়ে প্রতিরোধ করা। অতঃপর বেত্রাঘাত ও শাস্তির ব্যবস্থা করা। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা ও বিচারের সম্মুখীন করা।

আল্লাহই ভাল জানেন।
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা, খণ্ড- ৩৯, পৃষ্ঠা- ১২৭

http://islamqa.info/bn/10522
আমি ও আমার দুই বান্ধবী ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মসজিদে যেতে চাই; কিন্তু তারা দুজন পর্দা করে না। তাদের জন্য কি নিজেদের অভ্যস্ত পোশাকের সঙ্গে কেবল ওড়না পেঁচিয়ে মসজিদে যাওয়া জায়েয হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।

এক:

পর্দাহীনতা ফেতনার সদর দরজা। পর্দাহীনতা কেবল বেপর্দা মেয়ের জন্য অনিষ্টকর নয়, তাকে যারা দেখবে তাদের জন্যেও অনিষ্টের কারণ। হতে পারে পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্যপ্রদর্শনের ফলে কোনো দূরাচারী লোক কথা বা কাজের মাধ্যমে বেপর্দা নারীকে আক্রমন করে বসবে। পর্দাহীন নারী নিজেকে যতই ভালো দাবি করেন না কেন তাকে কেন্দ্র করে সমাজে গুনাহ ছড়ানো স্বাভাবিক। কারণ, তিনি নিজে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করতে পারেন না। তাই পর্দাহীনতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী; যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখে যাইনি। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যা দিয়ে তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী; অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।’[মুসলিম (২১২৮)]

দুই:

মুসলিমমাত্রই অন্যের হেদায়েত, তার সত্য গ্রহণ ও তাতে তার অবিচলতায় আগ্রহী। সুতরাং এই বোনদের মসজিদে প্রবেশে হয়তো তাদের জন্য অনেক উপকার ডেকে আনবে। যেমন- তারা সেখানে সালাত আদায় করবেন, উত্তম উপদেশ ও ওয়াজ-নসিহত শুনবেন, যা থেকে তাদের অন্তর প্রভাবিত হবে। তেমনি মসজিদের ঈমানী পরিবেশ তাদের অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করবে এবং উদাসী মনকে জাগ্রত করবে। এ কারণে আপনি প্রাথমিকভাবে এ বোনদেরকে ওড়না পরে ও মাথা ঢেকে মসজিদে নিয়ে যেতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে প্রশস্ত ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের উপদেশ দিয়ে যেতে হবে।

তিন:

আল্লাহ তায়ালা মসজিদকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মসজিদের পবিত্রতা ও সম্মানের পরিপন্থী সব কিছু থেকে হেফাযতে রাখার আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন: “(এ রকম আলো জ্বালানো হয়) সে সব গৃহে (অর্থাৎ মসজিদে ও উপাসনালয়ে) যেগুলোকে সমুন্নত রাখতে আর তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ওগুলোতে তাঁর মাহাত্ন্য (তাসবিহ) ঘোষণা করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় (বার বার)।”[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬]

হাফেয ইবনে কাছির (রহ) বলেন: ‘আল্লাহ তায়ালা মসজিদগুলোকে সমুন্নত করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ মসজিদগুলোকে অপবিত্রতা, অনর্থকতা ও এর মর্যাদাবিরোধী কথা ও কর্ম থেকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’[তাফসীরে ইবনে কাছির: ৬/৬২]

বেপর্দা নারীদেরকে মসজিদে প্রবেশে ছাড় দিলে সেটা রাস্তাঘাট ও বাজারের ফেতনা আল্লাহ তায়ালার ঘর মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবুও বেপর্দা মুসলিম নারী যখন তার ফিতনা কমিয়ে ফেলবে, তার গুনাহ কাফেরের কুফরি থেকে তো বেশি ক্ষতিকর নয়, অথচ প্রয়োজনবশত কাফেরকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

‘অমুসলিমের মসজিদে প্রবেশে কোনো অসুবিধা নেই যদি তা হয় কোনো শরয়ি বা বৈধ প্রয়োজনে। যেমন, ধর্মীয় উপদেশ শ্রবণ, পানি পান বা এ জাতীয় অন্য কোনো প্রয়োজন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অমুসলিম কাফেলাকে মসজিদে নববীতে এনেছেন যাতে তারা মুসল্লিদের দেখতে পারে এবং তাঁর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন তেলাওয়াত ও খুতবা শুনতে পারে। যাতে তিনি তাদেরকে কাছে বসিয়ে আল্লাহর দিকে ডাকতে পারেন। যেমন ছুমামা বিন আছাল হানাফীকে যখন বন্দি করে আনা হয় তখন তিনি তাকে মসজিদে বেঁধে রেখেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহই তো তাওফিকদাতা।’[বিন বাযের প্রবন্ধসমগ্র, ৮/৩৫৬]

অতএব, আপনার বান্ধবী যদি কল্যাণের প্রতি আগ্রহী হন এবং তাদের মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় নগ্নতা না ছড়িয়ে উপকৃত হওয়া, তারা তাদের মাথার চুল ঢাকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের মাধ্যমে ফিতনাগুলো কমানোর চেষ্টা করেন তাহলে আশা করা যায় তারা মসজিদে অনুষ্ঠিত দরসগুলোতে অংশগ্রহণ করলে এটি তাদের জন্য কল্যাণের দরজা খুলে দিবে। আল্লাহর শরীয়ত পরিপালনে তাদের পথ উন্মুক্ত হবে। অতএব আপনি তাদের এতে উদ্বুদ্ধ করুন।

আল্লাহই ভালো জানেন।

http://islamqa.info/bn/214386

আলহামদুলিল্লাহ।

ইলমে দ্বীন অর্জন করা ফরজে কিফায়া। যদি কিছু ব্যক্তি ইলমে দ্বীন অর্জনে মনোনিবেশ করে যাদের দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হওয়া সম্ভব তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে ইলমে দ্বীন অর্জন করা সুন্নত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের উপরে ইলমে দ্বীন অর্জন করা ফরজে আইন। এক্ষেত্রে নীতি হচ্ছে- ব্যক্তি যে ইবাদত বা যে লেনদেন করতে চাচ্ছে সে ইবাদত পালন ও সে লেনদেন বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু ইলম প্রয়োজন ততটুকু ইলম অর্জন করা তার উপর ফরজে আইন। এর বাইরে যে ইলম সে ইলম অর্জন করা ফরজে কিফায়া। তালিবুল ইলমের উচিৎ আপন মনে এ অনুভূতি জাগ্রত রাখা যে, সে একটি ফরজে কিফায়া আমল পালন করছে যাতে করে সে ইলম অর্জনের মাধ্যমে একটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পায়।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইলমে দ্বীন হাছিল সবচেয়ে উত্তম ইবাদত। বরং এটি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার তুল্য। বিশেষতঃ আমাদের বর্তমান সময়ে যে সময় মুসলিম সমাজে বিদআতের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হচ্ছে। ইলম ছাড়া ফতোয়া দেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক লোক না জেনে তর্কে লিপ্ত হচ্ছে। মুসলিম যুব সমাজের উপর এ তিনটি কারণ ইলম অর্জনে এগিয়ে আসাকে অনিবার্য করে দেয়।

এক: বিদআতের বহিঃপ্রকাশ।

দুই: উপযুক্ত ইলমদার না হয়েও ফতোয়া প্রদানে এগিয়ে আসা।

তিন: এমন সব মাসয়ালা নিয়ে তর্ক করা যে মাসয়ালাগুলো আলেমদের নিকট সুস্পষ্ট। কিন্তু এমন ব্যক্তি এসব মাসয়ালা নিয়ে তর্ক করেন যার এ ব্যাপারে কোন ইলম নেই।

এসব কারণে আমাদের এমন কিছু আলেম প্রয়োজন যাদের জ্ঞান সুদৃঢ় ও ব্যাপক। দ্বীনের ব্যাপারে যাদের গভীর জ্ঞান রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয়ার মত যাদের প্রজ্ঞা আছে। অনেক মানুষ এমন আছে যাদের কাছে শুধু বিশেষ কোন মাসয়ালার তাত্ত্বিক জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু মানুষের জন্য কোনটা কল্যাণ বা মানুষের শিক্ষাদান পদ্ধতি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই কোন কোন বিষয়ে তাদের ফতোয়া বড় ফিতনা-ফাসাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; যে ফিতনার পরিধি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/20092
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে