ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র আকীদা শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১৮ টি
ঈমান বিল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়

প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান বাস্তবায়নের ফজিলত সম্পর্কে আমি প্রচুর পড়েছি, অনেক শুনেছি। আল্লাহর উপর ঈমান আনা বলতে কী বুঝায়; তা যদি একটু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন যাতে আমি পূর্ণ ঈমান বাস্তবায়ন করতে পারি এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীবর্গের আদর্শ বিরোধী সবকিছু থেকে দূরে থাকতে পারি।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের জন্য।

আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনার অর্থ হলো- “তাঁর অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। কোন সন্দেহ সংশয় ছাড়া এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে- তিনি একমাত্র প্রতিপালক (রব্ব), তিনি একমাত্র উপাস্য (মাবুদ) এবং তাঁর অনেকগুলো নাম ও গুণ রয়েছে।” সুতরাং আল্লাহ্‌র উপর ঈমান চারটি বিষয়কে শামিল করে। যে ব্যক্তি এই চারটি বিষয়কে বাস্তবায়ন করবে, তিনি প্রকৃত মুমিন হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রথমত: আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা: ইসলামী শরিয়তের অসংখ্য দলীল যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে তেমনি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও সাধারণ প্রবৃত্তি দ্বিধাহীনভাবে আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের প্রমাণ সাব্যস্ত করে।

১. আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের ব্যাপারে মানব ফিতরতের বা প্রবৃত্তির প্রমাণ: প্রতিটি সৃষ্টিই স্বপ্রণোদিতভাবে তার স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসী হবে -এটাই যৌক্তিক। এ জন্য সুগভীর চিন্তা বা সুদীর্ঘ গবেষণার কোন প্রয়োজন নেই। সৃষ্টিমাত্রই এ স্বাভাবিক সুস্থ প্রবৃত্তির উপর টিকে থাকবে, যতক্ষণ না তার অন্তরে এমন কোন ভ্রষ্টতা প্রবেশ করে, যা তাকে এ থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এ জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রতিটি নবজাতক তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তির উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, খ্রিস্টান বানায় বা অগ্নিপূজক বানায়।”[বুখারী, ১৩৫৮ ও মুসলিম, ২৬৫৮]

২. আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের ব্যাপারে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির প্রমাণ: বিবেকবানমাত্রই বুঝতে পারে যে, পৃথিবীর আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত যত মাখলুকাত অতিবাহিত হয়েছে বা হবে এদের একজন স্রষ্টা থাকতেই হবে। না থেকে কোন উপায় নেই। কেননা, কোন সৃষ্টি যেমন নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দিতে পারে না, তেমনি দৈবক্রমে অস্তিত্বে আসাও সম্ভব নয়। সে নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দিতে পারবে না। কারণ কোন বস্তুই আপনাকে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না। অস্তিত্বে আসার আগে যে নিজে অস্তিত্বহীন ছিল, সে কিভাবে স্রষ্টা হবে? অনুরূপভাবে দৈবক্রমে হয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। কেননা প্রতিটি ঘটনার, প্রতিটি কর্মের পেছনে একজন কর্মকার থাকে। সর্বোপরি, এমন সুকৌশল-সুশৃঙ্খল-সুনিয়ন্ত্রিত-সুসামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতিতে পৃথিবী সৃষ্টি ও মানবজাতির আবির্ভাব এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, এটি হেলাফেলায় আপনাআপনি হয়নি। আপনাআপনি বিশৃঙ্খলভাবে অস্তিত্বে আসাই তো কোন কিছুর পক্ষে সম্ভব না, আর এভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে টিকে থাকা তো বহুদূরের কথা। সুতরাং সৃষ্টি যখন নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দানের ক্ষমতা রাখে না, আপনাআপনি হয়ে যাওয়াও যখন অবাস্তব, তখন একথাই প্রমাণিত হয় যে, একজন অস্তিত্বদানকারী আছেন। আর তিনি হলেন, “আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন।”

এই বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য প্রমাণ বর্ণনায় আল্লাহ্ নিজে ইরশাদ করেন, “তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে? নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা?” [সূরা তুর ৫২:৩৫] অর্থাৎ তারা স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়নি এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকে সৃষ্টি করেনি। সুতরাং এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য জুবাইর ইবনে মুতয়িম যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সূরা তূরের এ আয়াতগুলো পড়তে শুনলেন- “তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা? তারা কি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা তো অবিশ্বাসী। তোমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের নিকট আছে? না কি তারা এর নিয়ন্ত্রক? “[সূরা তূর ৫২:৩৫-৩৭] তখন তিনি মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও বলে উঠলেন: “আমার হৃদয় যেন উড়ে যাবে। এ আয়াতগুলো আমার অন্তঃকরণে প্রথম ঈমানের আলো জ্বালিয়ে তুললো।”[বুখারী কয়েকটি স্থানে হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন]

একটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারব- “আপনার কাছে এসে কেউ একজন একটি সুরম্য অট্টালিকার গল্প করলো। যার চারদিকে পুষ্পশোভিত বাগান, পাদদেশে বইছে নয়নাভিরাম নহর, খাট-পালঙ্ক-গালিচায় সে উদ্যান সুসজ্জিত, সৌন্দর্য সেখানে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তারপর বলল, এই যে অট্টালিকা, আর তার চারপাশের যাবতীয় সাজসজ্জা সব কিন্তু নিজে নিজে হয়েছে। কেউ এগুলো তৈরী করেনি। এ কথা শুনলে আপনি নিঃসন্দেহে লোকটিকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবেন এবং তার এ দাবীকে হেসে উড়িয়ে দিবেন। তাই যদি হয়, তবে কিভাবে এ কথা মেনে নেয়া সম্ভব যে - এ সুবিশাল মহাবিশ্ব, আকাশমণ্ডল, গ্রহ-নক্ষত্র-তারকারাজি, এত নিখুঁত এত নিপুণ সবকিছু কোন একজন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আপনাআপনি তৈরী হয়েছে?

এক মরুচারী বেদুঈনের মাথায়ও স্রষ্টার অস্তিত্বের এ যুক্তিনির্ভর প্রমাণটি অবলীলায় খেলে গিয়েছিলো। দ্বিধাহীন চিত্তে সে এটি প্রকাশ করেছে। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “কিভাবে তুমি তোমার রব্‌কে চিনলে?” সে বললো, “উটের বিষ্টা দেখে আপনি বুঝে নেন যে এ পথে উট হেঁটেছে। পায়ের চিহ্ন দেখে আপনি বুঝে নেন যে, এ পথে কেউ একজন চলেছে। তাহলে স্তরে স্তরে সাজানো আকাশ, দেশ-মহাদেশে বিভক্ত জমিন, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্র…এগুলো কেন প্রমাণ করবে না যে, একজন সর্বদ্রষ্টা সর্বশ্রোতা মহান সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহ্‌র কর্তৃত্ব ও প্রতিপালকত্বে বিশ্বাস স্থাপন: অর্থাৎ এ বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে যে, আল্লাহ্‌ একমাত্র রব, একমাত্র প্রতিপালক। এই মহাবিশ্ব পরিচালনায় তার আর কোন অংশীদার বা সহযোগী নেই।

রব (رب) বলা হয় তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং মালিকানা যার জন্য। সুতরাং – আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা নেই। আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন মালিক নেই। তিনি ছাড়া আর কোন বিশ্ব পরিচালকও নেই। পবিত্র কোরানে অনেক জায়গায় এ ঘোষণা বারবার উচ্চারিত হয়েছে - “জেনে রাখুন, সৃষ্টি করা ও হুকুমের মালিক তিনি।” [সূরা আ’রাফ ৭:৫৪] “বলুন! তিনি কে, যিনি আসমান ও জমিন হতে তোমাদেরকে রিজিক পৌঁছিয়ে থাকেন? অথবা কে তিনি, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবিতকে মৃত থেকে আর মৃতকে জীবিত থেকে বের করে আনেন? আর তিনি কে, যিনি সমস্ত কার্যাদি পরিচালনা করেন? অবশ্যই তারা বলবে যে তিনি একমাত্র আল্লাহ্‌। সুতরাং আপনি বলুন, তবে কেন তোমরা তাঁকে ভয় করছ না।[সূরা ইউনুছ ১০:৩১] “তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে।”[সূরা হা-মীম সেজদা, ৩২:০৫] “তিনিই আল্লাহ্‌, তোমাদের প্রতিপালক। সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। আর তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, তারা তো খেজুর আঁটির উপরে পাতলা আবরণ বরাবর (অতি তুচ্ছ কিছুরও) মালিক নয়।”[সূরা ফাতির ৩৫:১৩]

একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন। সূরা ফাতিহায় আল্লাহ্‌ বলেছেন, (مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ) অর্থাৎ “তিনি বিচার দিবসের মালিক।” অন্য ক্বেরাতে এসেছে (مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ) অর্থাৎ “তিনি বিচার দিবসের রাজা বা বাদশাহ।” এই দুটি ক্বেরাতকে যদি আপনি একত্রিত করেন তাহলে চমৎকার একটি তাৎপর্য বেরিয়ে আসবে। রাজত্ব ও কর্তৃত্ব বুঝাতে “مَالِكِ” (অধিকর্তা) শব্দের চেয়ে “مَلِكِ” (রাজা) শব্দটি বেশী প্রাঞ্জল ও অর্থবোধক। কিন্তু কখনো কখনো “مَلِكِ” (রাজা) দ্বারা শুধু নামসর্বস্ব কর্তৃত্বহীন রাজাকেও বুঝানো হয়। অর্থাৎ সে “مَلِكِ” বা বাদশাহ-ই কিন্তু তার হাতে কোন কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা না থাকায় তাকে “مَالِكِ” বা অধিকর্তা বলা যায় না। এজন্য দুই ক্বেরাতের “مَالِكِ” ও “مَلِكِ” শব্দদ্বয় একত্র করলে আল্লাহ্‌র জন্য রাজত্ব ও কর্তৃত্ব দুটোই নির্ধারিত হয়ে যায়।

তৃতীয়তঃ আল্লাহ্‌র উপাস্যত্বে বিশ্বাস স্থাপন:

অর্থাৎ মনেপ্রাণে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে- আল্লাহ্‌ই একমাত্র ইলাহ্‌ তথা সত্য উপাস্য। উপাসনা প্রাপ্তিতে আর কেউ তাঁর অংশীদার নয়। ইলাহ্‌ (الاله) অর্থ হলোঃ সম্মান ও বড়ত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যার উপাসনা করা হয়। আর এটাই মূলতঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ) এর তাৎপর্য। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ্‌। সেই দয়াময় ও পরম দয়ালু ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।”[সূরা বাকারা ২:১৬৩] আরো বলেন, “আল্লাহ্‌ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানবানগণও এ সাক্ষ্য প্রদান করে। তিনি (আল্লাহ্‌) ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।[সূরা আলে ইমরান ৩:১৮]

আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে আর যা কিছুর ইবাদত করা হয়, কিংবা আল্লাহ্‌র সাথে আর যারই উপাসনা করা হয়...তার উপাস্যত্ব নিঃসন্দেহে বাতিল। কারণ তিনি ছাড়া আর কারো উপাসনা পাওয়ার অধিকার নেই। আল্লাহ্‌ বলেন, “আল্লাহ্‌, তিনিই একমাত্র সত্য। তারা তার পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা বাতিল। আর আল্লাহ্‌ সুউচ্চ, মহান।”[সূরা হজ্জ ২২:৬২]

আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাউকে إِلَهতথা উপাস্য বা দেবতা নাম দিলেই সে উপাসনা পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারে না। “লাত, মানাত, উজ্জা-র” প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ বলেন, “এগুলোতো কতক নামমাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ। যার সমর্থনে আল্লাহ্‌ কোন দলীল প্রেরণ করেননি।”[সূরা নাজম: ২৩] ইউসুফ (আঃ) এর গল্প বলতে গিয়ে আল্লাহ্‌ ইরশাদ করেন, ইউসুফ কারাগারে তার দু’সঙ্গীকে বলেছিলেন, “ভিন্ন ভিন্ন বিক্ষিপ্ত বহু প্রতিপালক শ্রেয়? নাকি পরাক্রমশালী এক আল্লাহ্‌? তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা শুধু কতকগুলো নামের ইবাদত করছো, যে সব নাম তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছো। এইগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ্‌ পাঠান নাই।”[সূরা ইউসুফ ১২:৩৯-৪০]

সুতরাং, আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। একমাত্র তাঁর জন্য ইবাদতকে একীভূত করতে হবে। কোন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, কিংবা প্রেরিত নবী, কিংবা অন্য কোন কিছুই এ ক্ষেত্রে তাঁর অংশীদার হতে পারে না। এজন্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মূল শ্লোগান ছিল একটিই। “আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই।” (لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ)। আল্লাহ্‌ বলেন, “আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করি নাই, তার প্রতি ওহী ব্যতীত যে- আমি ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।”[সূরা আম্বিয়া, ২১:২৫] আল্লাহ্‌ আরো বলেন, “আমি প্রত্যেক জাতির জন্য রাসূল পাঠিয়েছি এ জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে এবং তাগুতকে বর্জন করবে।”[সূরা নাহল, ১৬:৩৬] এতকিছুর পরও মুশরিকরা কিভাবে আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে অন্যান্য বাতিল উপাস্যদের উপাসনা করে?!

চতুর্থত: আল্লাহ্‌র সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন: অর্থাৎ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের জন্য তাঁর কিতাবে বা তাঁর রাসূলের সুন্নতে যে সমস্ত উপযুক্ত সুন্দর নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোকে কোন ধরনের তাহরীফ (تحريف-গুণকে বিকৃত করা), তা’তীল (تعطيل-গুণকে অস্বীকার করা), তাকয়ীফ (تكييف-গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অবয়ব নির্ধারণ করা) বা তামসীল (تمثيل-মাখলুকের গুণের সাথে সাদৃশ্য দেয়া) ছাড়া নিঃসঙ্কোচে মেনে নেয়া। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর আল্লাহ্‌র সুন্দর সুন্দর ভালো নাম রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকবে। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তাঁর নাম বিকৃত করে। অচিরেই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।”[সূরা আ’রাফ, ৭:১৮০] আল্লাহ্‌র জন্য সুনির্দিষ্ট সুন্দর নাম সাব্যস্ত থাকার ব্যাপারে এ আয়াতটি সুস্পষ্ট দলীল। আল্লাহ্ বলেন, “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ গুণতাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা রুম, ৩০:২৭] এ আয়াতটি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ সিফাতসমূহ সাব্যস্ত হওয়ার প্রমাণ। কেননা, আয়াতে বর্ণিত (الْمَثَلُ الأَعْلَى) অর্থ হলো (الوصف الأكمل) তথা পরিপূর্ণ গুণ। এ আয়াতদুটো আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতের বিষয়টি আমভাবে সাব্যস্ত করে। পাশাপাশি এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা কোরানে ও হাদিসে প্রচুর বিদ্যমান।

“আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতের” অধ্যায়টি জ্ঞানের এমন একটি শাখা যে বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ চরম মতপার্থক্যে লিপ্ত হয়েছে। এ মতপার্থক্যগুলোর সূত্র ধরে তারা নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে। এই মতভেদপূর্ণ পিচ্ছিল পটভূমিকায় আমাদের অবস্থান হলো আল্লাহ্‌র নির্দেশিত “নিরাপদ অবস্থান।” তিনি বলেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে কোন মতবিরোধ হয়, তবে আল্লাহ্‌ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও, যদি তোমরা আল্লাহ্‌ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি।”[সূরা নিসা : ৫৯] সুতরাং, আমরা এ বিষয়ে যাবতীয় মতপার্থক্যকে আল্লাহ্‌র কিতাব ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নতের দিকে ফিরাই। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে আমাদের সৎকর্মশীল পূর্বসূরি সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের মতামতগুলো পর্যালোচনাপূর্বক গ্রহণ করি। কারণ তাঁরা ছিলেন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের কথার তাৎপর্য বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তি। আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ (রাঃ) সাহাবীদের প্রশংসা করতে গিয়ে কত সুন্দর করেই না বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন পথ অনুসরণ করতে চায়, তবে সে যেন যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের পথ অনুসরণ করে। কারণ, জীবিতরা ফেতনার আশংকা থেকে নিরাপদ নয়। আর সে সব মৃতরা হলেন রাসূলের সঙ্গী-সাথীরা। তাঁরা এ উম্মতের মাঝে হৃদয়ের দিক থেকে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পবিত্র, জ্ঞানের দিক থেকে সবচেয়ে গভীর, আর কৃত্রিম আচরণের দিক থেকে সবচেয়ে স্বল্প। তাঁরা এমন একদল লোক, যাঁদেরকে আল্লাহ্‌ তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তাঁর রাসূলের সাহচর্যের জন্য মনোনীত করেছেন। সুতরাং তাঁদেরকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করো। তাঁদের অনুসৃত পথ আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরা ছিলেন সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।”

যে কেউ এ অধ্যায়ে (আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাত) সাহাবী ও তাবেয়ীদের দেখানো পথ থেকে সরে গিয়েছে, সেই ভুল করেছে। পথভ্রষ্ট হয়েছে। মুমিনদের রাস্তা থেকে ছিটকে পড়েছে। এবং আল্লাহ্‌র সেই ঘোষিত শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে যাতে তিনি বলেন, “হেদায়েতের পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও যে ব্যক্তি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্য পথের অনুগামী হয়, তবে সে যাতে নিবিষ্ট আছে আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করবো এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর সেটা কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।”[সূরা নিসা ৪:১১৫]

আল্লাহ্‌ তায়ালা হেদায়েতের জন্য শর্ত করে দিয়েছেন যে, ঈমান হতে হবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গীদের ঈমানের মত। ইরশাদ হচ্ছে- “অনন্তর তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রূপ বিশ্বাস স্থাপন করে তবে নিশ্চয়ই তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে।”[সূরা বাকারাহ ২:১৩৭] বুঝা গেল তাদের অনুসৃত পথ থেকে যে ব্যক্তি যত বেশী দূরে সরে যাবে, তার হেদায়েত প্রাপ্তির পরিমাণও সে হারে কমে আসবে। সুতরাং আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতের এ অধ্যায়ে আমাদের জন্য আবশ্যক হলো-

আমরা আল্লাহ্‌র জন্য কেবলমাত্র সে সব নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করব, যা তিনি অথবা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাব্যস্ত করেছেন। এ সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসসমূহকে এর প্রকাশ্য অর্থের উপরে রাখব; রূপকার্থ খুঁজতে যাবো না। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীরা এগুলোর ক্ষেত্রে যে রূপ বিশ্বাস রাখতেন, আমরাও তাই রাখব। কারণ তাঁরা ছিলেন উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী।

পাশাপাশি আমাদেরকে জেনে রাখতে হবে যে, এখানে চারটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো বিপদসংকুল খাদের মত। যে ব্যক্তি এগুলোর কোনটায় পড়বে, আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতের ব্যাপারে তার ঈমান যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে না। এক্ষেত্রে ঈমানকে সঠিক মাত্রায় ধরে রাখতে হলে এ চারটি বিষয় থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। সেগুলো হল- তাহরীফ (গুণকে বিকৃত করা) , তা’তীল (গুণকে অস্বীকার করা), তামসীল (মাখলুকের গুণের সাথে সাদৃশ্য দেয়া) ও তাকয়ীফ (গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অবয়ব নির্ধারণ করা)।

(১) তাহরীফ (تحريف)

আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাত সংক্রান্ত কোরান বা হাদিসের নস্‌সমূহকে (স্পষ্ট দলীলসমূহকে) এর সঠিক অর্থ থেকে পরিবর্তন করে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া, কিংবা অন্য অর্থ করা, যা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল উদ্দেশ্য করেননি। যেমন- (يد الله) তথা আল্লাহ্‌র হাত। আল্লাহ্‌র হাত থাকার সিফাতটি কোরান ও হাদিসের অনেক নস্‌ দ্বারাই প্রমাণিত। এখানে “হাত” কে নেয়ামত বা কুদরত অর্থে গ্রহণ করা তাহরীফ।

(২) তা’তীল (تعطيل)

আল্লাহর সকল নাম ও সিফাতকে অস্বীকার করা কিংবা এর কোন কোনটিকে অস্বীকার করাকে “তাতীল” বলে। সুতরাং কেউ যদি কোরান ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহ্‌র নাম ও সিফাতসমূহের কোন একটিকেও মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলেই সে তার ঈমানকে যথার্থভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হলো না।

(৩) তামসীল (تمثيل)

আল্লাহ্‌র কোন সিফাত বা বিশেষণকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাকে “তামসীল” বলে। যেমন কেউ যদি বলে- ‘আল্লাহ্‌র হাত মানুষের হাতের মত বা মাখলুক যেভাবে শুনে আল্লাহ্‌ও সেভাবে শোনেন কিংবা আল্লাহ্‌ আরশের উপরে সেভাবেই বসে আছেন যেভাবে মানুষ চেয়ারে বসে…’

সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের সাথে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্যকে তুলনা করা নিঃসন্দেহে বাতিল। আল্লাহ্‌ বলেছেন, “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”[সূরা শুরা: ১১]

(৪) তাকয়ীফ (تكييف)

আল্লাহ্‌র সিফাত তথা বৈশিষ্ট্যসমূহের আকৃতি-প্রকৃতি ও হাকীকত নির্ধারণ করাকে “তাকয়ীফ” বলে। অর্থাৎ মানুষ তার কল্পনার দৌড় অনুযায়ী বা ভাষার চতুরতার আশ্রয় নিয়ে আল্লাহ্‌র গুণাবলীর ধরণ নির্ধারণ করা। এটা অকাট্যভাবে নিষিদ্ধ ও বাতিল। মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় আল্লাহ্‌র সিফাতের বৈশিষ্ট্য জানা। আল্লাহ বলেন, “তারা জ্ঞান দিয়ে তাঁকে আয়ত্ত করতে পারব না।”[সূরা ত্বহা: ১১০]

‘ঈমান বিল্লাহ্’‌ এর এ চারটি দিক যে ব্যক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি যথাযথভাবে ঈমান এনেছে।

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ঈমানের উপর অবিচল রাখুন। আর তিনিই সর্বজ্ঞ।

দেখুন: শায়খ উছাইমিন রচিত “শারহুল উছুলিল ঈমান”।

http://islamqa.info/bn/34630
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ফেরেশতারা অদৃশ্য জগৎ। আল্লাহ তাদেরকে নূর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত আছেন। “তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।”[সূরা তাহরীম, আয়াত:০৬]

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

১. এই স্বীকৃতি প্রদান করা যে, ফেরেশতাদের অস্তিত্ব রয়েছে, তারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ও পরিচালনাধীন। “তারা তাঁর আগ বাড়িয়ে কোন কথা বলে না, তাঁর নির্দেশেই তারা কাজ করে যায়।” [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ২৬-২৭] এবং “তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।”[সূরা তাহরীম, আয়াত: ০৬] এবং “তারা অহঙ্কারবশতঃ তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিন-রাত তাঁর তাসবীহ পাঠ করে, তারা শিথিলতা দেখায় না।” [সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১৯:২০]

২. যে সব ফেরেশতার নাম জানা গেছে তাদের নামের প্রতি ঈমান আনা। যেমন জিব্রাইল (আঃ), মিকাইল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ), মালিক (আঃ), রেদোয়ান (আঃ) প্রমুখ।

৩. যেসব ফেরেশতার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা জানতে পেরেছি সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। যেমন আমরা হাদিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি- জিব্রাইল (আঃ) এর দিগন্ত জুড়ানো ছয়শত ডানা রয়েছে।

৪. ফেরেশতাদের যেসব দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা অবহিত হয়েছি সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। যেমন- অহী বহনের দায়িত্বে আছেন জিব্রাইল (আঃ), যে অহী হচ্ছে- আত্মার জীবন। শিংগায় ফুঁ দেওয়ার দায়িত্বে আছেন ইস্রাফিল (আঃ)। বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে আছেন- মিকাইল (আঃ)। জাহান্নামের দায়িত্বে আছেন- মালিক (আঃ)।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির প্রতি আমাদেরকে ঈমান আনতে হবে তা হচ্ছে- প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে দুইজন করে ফেরেশতা থাকে। এ ফেরেশতাদ্বয় ব্যক্তির আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। “স্মরণ করুন!দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” [সূরা কাফ, আয়াত ১৭-১৮] অর্থাৎ এ শ্রেণীর ফেরেশতা সর্বদা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকে।

অতএব, সাবধান হে মুসলিম! এ ফেরেশতাদ্বয় যেন এমন কিছু লিপিবদ্ধ করতে না পারে যা কিয়ামতের দিন আপনার জন্য অকল্যাণকর হবে। আপনি যা কিছু বলেন বা উচ্চারণ করেন সবই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কেয়ামতের দিন এই লিপিকা বের করে বান্দার সামনে পেশ করা হবে। “এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি বের করব একটি কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট।”[সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১৩-১৪]

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের গুনাহগুলো গোপন রাখেন এবং এড়িয়ে যান। নিশ্চয় তিনি প্রার্থনায় সাড়াদানকারী।

আল্লাহই ভাল জানেন।

দেখুন:

আলামুস সুন্নাহ আল-মানশুরা (৮৬) এবং শাইখ উছাইমীনের ফতোয়া সমগ্র (৩/১৬০)।

আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন প্রশ্ন নং (843) ও প্রশ্ন নং (14610)।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

http://islamqa.info/bn/9477
আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়?

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

এক.

সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সবগুলো আসমানী কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। বাস্তবে আল্লাহ তাআলা এই বাণীসমূহ দিয়ে কথা বলেছেন। এ বাণীসমূহের মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া পর্দার আড়াল থেকে সরাসরি আল্লাহর নিকট হতে শ্রবণীয়। এর মধ্যে কোনটি ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলের নিকট পৌঁছেছে। এর মধ্যে কোনটি আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। “আল্লাহ কোন মানুষের সাথে কথা বললে বলেন ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা কোন দূত পাঠানোর মাধ্যমে; যে দূত আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান সে ওহী পৌঁছে দেন। নিশ্চয় তিনি মহীয়ান, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা আশ্‌ শুরা, আয়াত: ৫১] আল্লাহ আরো বলেন: “আর আল্লাহ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৪] আল্লাহ তাআলা তওরাতের ব্যাপারে বলেন:“আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪৫]

দুই.

এ কিতাবসমূহের মধ্যে আল্লাহ তাআলা যেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করেছেন সেগুলোর প্রতি বিস্তারিতভাবে ঈমান আনা। এ ধরনের কিতাবগুলো হচ্ছে- কুরআন, তওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, সহিফায়ে ইব্রাহিম ও সহিফায়ে মূসা। এ কিতাবগুলোর কথা আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

আর আল্লাহ যে কিতাবগুলোর কথা এজমালিভাবে উল্লেখ করেছেন আমরা সে কিতাবগুলোর প্রতি এজমালিভাবে ঈমান আনব। ঠিক যেইভাবে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন- “বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”[সূরা আশ্‌ শুরা, আয়াত: ১৫]

তিন.

এ কিতাবসমূহে উল্লেখিত যে সংবাদগুলো সহিহ সনদে জানা গেছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা। যেমন- কুরআনের সংবাদসমূহ। অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের যে সংবাদগুলোতে পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটেনি সে সংবাদসমূহের প্রতি ঈমান আনা।

চার.

এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা কুরআনকে সকল কিতাবের উপর ফয়সালাকারী ও সত্যায়নকারীরূপে প্রেরণ করেছেন। “আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সত্যায়নকারী (মুসাদ্দিক) ও তদারককারীরূপে (মুহাইমিন)।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৮] তাফসিরকারগণ বলেন, মুহাইমিন অর্থ হচ্ছে- কুরআনের পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের উপর ফয়সালাকারী, সাক্ষী ও সত্যায়নকারী। অর্থাৎ সে কিতাবসমূহে যা কিছু সত্য কুরআন তার সত্যায়ন করবে এবং যা কিছুতে বিকৃতি, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সে কিতাবসমূহের বিধানাবলীকে রহিত করবে; তথা পূর্ববর্তী বিধানসমূহ উঠিয়ে দিবে অথবা নতুন বিধিবিধান আরোপ করবে। অতএব, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের অনুসরণকারী যদি হঠকারী না হয় তাহলে তাকে কুরআনের কাছে নতি স্বীকার করতে হবে। “ঐসব ব্যক্তি আমি এ(কিতাবে)র পূর্বে যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এ(কিতাবে)র প্রতিও ঈমান রাখে। এবং যখন তাদের নিকট এই কিতাব তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় এটা আমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য। নিশ্চয় আমরা এর পূর্বেও মুসলিম ছিলাম।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ৫২-৫৩]।

উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতিটি সদস্যের কর্তব্য হচ্ছে- প্রকাশ্যে ও গোপনে এই কুরআনের অনুসরণ করা, কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, কুরআনের হক আদায় করা। ঠিক যেভাবে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন- “এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়। অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৫]

কুরআন আঁকড়ে ধরা ও কুরআনের হক আদায় করার অর্থ হচ্ছে- কুরআন যা কিছুকে হালাল ঘোষণা করেছে সেগুলোকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করা, কুরআনের নির্দেশের প্রতি অনুগত হওয়া, ধমকির বিষয়াবলী হতে দূরে থাকা, দৃষ্টান্তসমূহ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা, কাহিনীসমূহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করা, মুহকাম আয়াতের জ্ঞান অর্জন করা, মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি আত্মসমর্পন করা, কুরআন নির্ধারিত সীমারেখায় থেমে যাওয়া, কুরআন রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, কুরআন মুখস্ত করা, তেলাওয়াত করা, এর আয়াতাবলী নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা, রাতদিন কুরআন দিয়ে নামায পড়া, কুরআনের কল্যাণে কাজ করা, ইলমের ভিত্তিতে কুরআনের দিকে দাওয়াত দেয়া।

আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমানার মাধ্যমে বান্দা অনেকগুলো উপকার লাভ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অত্যধিক গুরুত্বের বিষয়টি অবহিত হওয়া। তাইতো তিনি প্রত্যেক কওমকে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা কিতাব পাঠিয়েছেন।

২. শরিয়ত বা আইন আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার হেকমত সম্পর্ক জানা। তাইতো তিনি প্রত্যেক কওমের পরিবেশ-পরিস্থিতির উপযোগী শরিয়ত (আইন) প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন: “আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি।”।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৮]

৩. আল্লাহ তাআলার এই মহান নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।

৪. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআন গবেষণা, কুরআনের অর্থ বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে কুরআনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা।

আল্লাহই ভাল জানেন।

দেখুন:

আলামুস সুন্নাহ আল-মানশুরা (৯০-৯৩) এবং শাইখ উছাইমীনের উসুল ছালাছা এর ব্যাখ্যা (৯১, ৯২)।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

http://islamqa.info/bn/9519
রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা বলতে কী বুঝায়?

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

রাসূলগণের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। সেগুলো হচ্ছে-

এক:

সুদৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কওমের জন্য তাদের মধ্য হতে একজনকে রাসূল (বার্তাবাহক) করে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত (উপাসনা) করার এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করার দাওয়াত দেন। সকল রাসূল সত্যবাদী, সত্যায়নকারী, পুণ্যবান, সঠিক পথের দিশারী, তাকওয়াবান ও বিশ্বস্ত। আল্লাহ তাঁদেরকে যা কিছু দিয়ে প্রেরণ করেছেন তারা তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। কোন অংশ গোপন করেননি বা পরিবর্তন করেননি। নিজে থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করেননি। “রাসূলগণেরদায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।” [সূরা নাহল, আয়াত: ৩৫]

- এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, প্রথম রাসূল হতে শেষ রাসূল পর্যন্ত সকলের দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল একটাই- বিশ্বাস-শ্রেণীয়, বচন-শ্রেণীয় ও কর্ম-শ্রেণীয় যাবতীয় ইবাদত বা উপাসনা শুধুমাত্র এক আল্লাহর জন্য পালন করা এবং অন্য সব উপাস্যকে অস্বীকার করা। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী- “আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই করেছি যে- নেই কোন উপাস্য আমি ব্যতীত; সুতরাং আমারই এবাদত কর।” [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ২৫] এবং তাঁর বাণী “আপনার পূর্বে আমি যেসব রসূল প্রেরণ করেছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত আমি কি কোন উপাস্য স্থির করেছিলাম এবাদতের জন্যে?”[সূরা যুখরূফ, আয়াত: ৪৫]। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াতে কারীমা রয়েছে।

কিন্তু অবশ্য পালনীয় আমল (ফরজ) ও আইন-কানুন এক রাসূল থেকে অন্য রাসূলেরটা ভিন্ন হতে পারে। এক রাসূলের উম্মতের উপর যে নামায-রোজা ফরজ করা হয়েছে অন্য রাসূলের উম্মতের উপরে সেসব হয়তো ফরজ করা হয়নি। এক রাসূলের উম্মতের উপরে যে বিষয়গুলো হারাম করা হয়েছে অন্য রাসূলের উম্মতের জন্য সেসব বিষয় হয়তো হালাল করা হয়েছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। যেন আল্লাহ যাচাই করে নিতে পারেন “তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম”। এর পক্ষে দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী- “আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি শিরআ ও মিনহাজ (আইন ও পথ) দিয়েছি।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৮] ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ- পথ ও আদর্শ (দিয়েছি)। মুজাহিদ, ইকরিমাসহ মুফাসসিরদের আরো অনেকে একই রকম মত দিয়েছেন।

সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নবীরা হচ্ছেন- বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মত। তাদের মা আলাদা আলাদা; কিন্তু ধর্ম অভিন্ন।” অর্থাৎ সকল নবীর মূল ধর্মবিশ্বাস এক। সেটা হচ্ছে- তাওহীদ। যে তাওহীদ দিয়ে আল্লাহ তাআলা সকল রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এবং সকল কিতাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আদেশ-নিষেধ বা হালাল-হারামের ক্ষেত্রে প্রত্যেক রাসূলের শরিয়ত (অনুশাসন) ভিন্ন ভিন্ন। কারণ বৈমাত্রেয় ভাইদের পিতা এক, কিন্তু মা ভিন্ন হয়ে থাকে।

- যে ব্যক্তি কোন একজন রাসূলের রাসূলত্বকে অস্বীকার করল সে যেন সকল রাসূলকে অস্বীকার করল। “নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যারোপ করেছে।”[সূরা শুআরা, আয়াত: ১০৫] এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নূহের সম্প্রদায় সকল রাসূলকে অস্বীকার করেছে। অথচ তারা যে সময়ে নূহ (আলাইহিস সালাম) কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তখন পর্যন্ত নূহ আলাইহিস সালাম ছাড়া আর কোন রাসূল প্রেরিত হননি।

দুই:

রাসূলদের মধ্যে যাদের নাম আমরা জানতে পেরেছি তাদের নামসমূহের প্রতি ঈমান আনা। যেমন- মুহাম্মদ, ইব্রাহিম, মূসা, ঈসা, নূহ (আলাইহিমুস সালাম)। আর যাদের নাম জানা যায়নি তাদের প্রতি এজমালিভাবে ঈমান আনা। যেমন কুরআনে এসেছে- “রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয়ের উপর যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “আমি আপনার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৭৮]

আমরা আরও ঈমান রাখি যে, সর্বশেষ রাসূল হচ্ছেন- আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৪০] সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রাঃ) কে খলিফার দায়িত্বে রেখে তাবুক অভিযানে বের হন। তখন আলী (রাঃ) বলেন: আপনি কী আমাকে নারী ও শিশুদের(দুর্বলদের)দায়িত্বশীল বানালেন!! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: মূসা (আঃ) এর প্রতিনিধি হিসেবে হারুন (আঃ) যে মর্যাদা পেয়েছেন আমার প্রতিনিধি হিসেবে তুমি সে মর্যাদা পেয়ে কি সন্তুষ্ট নও!! তবে আমার পরে কোন নবী নেই।”

আল্লাহ তাআলা অন্য নবীদের উপর আমাদের নবীকে বেশ কিছু বিশেষত্ব দিয়েছেন। যেমন-

১. আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমস্ত জিন ও ইনসান এর নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। অথচ পূর্ববর্তী নবীগণ শুধু তাঁদের কওমের নিকট প্রেরিত হত।

২. একমাসের সম পরিমাণ দূরত্বে অবস্থানরত শত্রুর অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করতেন।

৩. সমস্ত জমিনকে তাঁর জন্য সিজদার স্থান ও পবিত্র করা হয়েছে।

৪. তাঁর জন্য গণিমতের মাল খাওয়া হালাল করা হয়েছে; অথচ তাঁর পূর্বে কারো জন্য তা হালাল ছিল না।

৫. মহা শাফায়াত।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক বিশেষত্ব আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন।

তিন:

সত্য সংবাদের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে যা কিছু জানা যায় সেগুলোর প্রতি ঈমান রাখা।

চার:

আমাদের নিকট যে রাসূল প্রেরিত হয়েছেন তাঁর শরিয়তের আলোকে আমল করা। তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি সকল মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৬৫]

জেনে রাখুন, রাসূলদের প্রতি ঈমান আনার বেশ কিছু ভাল ফলাফল রয়েছে। যেমন-

১. বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত ও গুরুত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করা। যেহেতু বান্দাকে সরল-সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য এবং ইবাদতের পদ্ধতি বর্ণনা করার জন্য আল্লাহ রাসূল পাঠিয়েছেন। এককভাবে মানব-মস্তিষ্কের পক্ষে যা উদঘাটন করা সম্ভবপর ছিল না।

২. এই নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

৩. রাসূলগণকে ভালোবাসা, তাঁদেরকে সম্মান করা, যথোপযুক্ত পদ্ধতিতে তাঁদের প্রশংসা করা। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর রাসূল, তাঁরা তাঁর ইবাদত করেছেন, তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন এবং উম্মতকে সৎ পরামর্শ দিয়েছেন।

(দেখুন আলামুস সুন্নাহ আল-মানশুরা, পৃষ্ঠা ৯৭-১০২ ও শারহুল উসুল আস্‌ ছালাসা, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬)
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

http://islamqa.info/bn/8929

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যু...

ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া। এই মর্মে আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে সহিহ হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভাল) কাজে লাগান।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন: কিভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভাল) কাজে লাগান? তিনি বলেন: “মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন।” [মুসনাদে আহমাদ (১১৬২৫), তিরমিযি (২১৪২), আলবানি ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন (১৩৩৪)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তাআলা যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন সে বান্দাকে ‘আসাল’ করেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন: আসাল কি? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ একটি ভাল কাজ করার তাওফিক দেন এবং এই আমলের উপর তার মৃত্যু ঘটান।[সহিহ আহমাদ (১৭৩৩০), আলবানি সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ ঘোষণা করেছেন (১১১৪)।

ভাল মৃত্যুর বেশ কিছু আলামত আছে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারে এবং কোন কোন আলামত অন্যান্য মানুষও জানতে পারে।

দুই:

মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।”[সূরা ফুসসিলত, আয়াত: ৩০] মৃত্যুকালে মুমিন বান্দাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়। দেখুন: তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ১২৫৬।

এই মর্মে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে এসেছে- যা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাত প্রিয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহর শাস্তি, তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।”

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়, যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না, সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে সেটা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।

ভাল মৃত্যুর আলামত অনেক। আলেমগণ কুরআন-হাদিস খুঁজে এই আলামতগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন। এই আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করতে পারা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” [সুনানে আবু দাউদ, ৩১১৬], সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২৬৭৩) আলবানি এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।

২. মৃত্যুর সময় কপালে ঘাম বের হওয়া। বুরাইদা বিন হাছিব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “মুমিন কপালের ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।”[মুসনাদে আহমাদ (২২৫১৩), জামে তিরমিযি (৯৮০), সুনানে নাসায়ি (১৮২৮) এবং আলবানি সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

৩. জুমার রাতে বা দিনে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করেন আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে নাজাত দেন।”[মুসনাদে আহমাদ (৬৫৪৬), জামে তিরমিযি (১০৭৪), আলবানি বলেছেন: সনদের সবগুলো ধারা মিলালে হাদিসটি সহিহ]

৪. আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়,তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সে শহিদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে মারা যায় সেও শহিদ।”[সহিহ মুসলিম, ১৯১৫]

৫. প্লেগ রোগে মারা যাওয়া। দলীল হচ্ছে নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “প্লেগ রোগে মৃত্যু প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য শাহাদাত।”[সহিহ বুখারী (২৮৩০) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৬)] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তখন তিনি আমাকে জানান যে, “এটি হচ্ছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাদের উপর এই রোগ নাযিল করেন। আর আল্লাহ এই রোগ মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে মুমিন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকাতে অবস্থান করবে, ধৈর্যধারণ করবে, সওয়াবের প্রত্যাশা করবে এবং এই একীন রাখবে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে সে ব্যক্তি শহিদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহিহ বুখারি (৩৪৭৪)]

৬. যে কোন পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করবে সে শহিদ।” [সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]

৭. কোন কিছু ধ্বসে পড়ে অথবা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “পাঁচ ধরনের মৃত্যু শাহাদাত হিসেবে গণ্য। প্লেগ রোগে মৃত্যু, পেটের পীড়ায় মৃত্যু, পানি ডুবে মৃত্যু, কোন কিছু ধ্বসে পড়ে মৃত্যু এবং আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়া।” [সহিহ বুখারি (২৮২৯) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]

৮. প্রসবউত্তর প্রসূতির মৃত্যু অথবা গর্ভবতী অবস্থায় নারীর মৃত্যু। এর দলিল হচ্ছে আবু দাউদ (৩১১১) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে নারী জুমা (বাচ্চা) নিয়ে মারা যায় তিনি শহিদ।”। ইমাম খাত্তাবি বলেন: এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায়।[আওনুল মাবুদ] ইমাম আহমাদ উবাদা বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহিদের শ্রেণীগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন: “যে নারী তার গর্ভস্থিত সন্তানের কারণে মারা যায় তিনি শহিদ। সে নারীকে তার সন্তান সুরার (নাভিরজ্জু) ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”[আলবানি ‘জানায়িয’ গ্রন্থে (৩৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুররা (নাভি): নবজাতকের জন্মের পর ধাত্রী নাড়ী কাটেন এবং সামান্য কিছু অংশ রেখে দেন। যে অংশটুকু রেখে দেন সেটাকে সুররা বা নাভি বলে। আর যে অংশটুকু কেটে ফেলেন সেটাকে সুরার (নাভিরজ্জু) বলা হয়।

৯. আগুনে পুড়ে, প্লুরিসি (ফুসফুসের আবরক ঝিল্লির প্রদাহজনিত রোগবিশেষ) এবং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর রাহে নিহত হওয়া শাহাদাত, প্লেগ রোগে মারা যাওয়া শাহাদাত, পানি ডুবে মারা যাওয়া শাহাদাত, পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া শাহাদাত, সন্তান প্রবসের পর মারা গেলে নবজাতক তার মাকে নাভিরজ্জু ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (সংকলক বলেন, এই হাদিসের জনৈক বর্ণনাকারী বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদেম আবুল আওয়াম হাদিসটির অংশ হিসেবে “আগুনে পুড়ে মৃত্যু ও যক্ষ্মা রোগ” এর কথাও বর্ণনা করেছেন।) আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান-সহিহ।[সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব (১৩৯৬)]

১০. নিজের ধর্ম, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা। দলিল হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম (ইসলাম) রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”[জামে তিরমিযি (১৪২১)] সহিহ বুখারি (২৪৮০) ও সহিহ মুসলিমে (১৪১) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”

১১. আল্লাহর রাস্তায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ব্যক্তি মারা যায় সেও শহিদ। দলিল হচ্ছে সহিহ মুসলিমের হাদিস (১৯১৩): সালমান আলফারেসি (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একদিন, একরাত পাহারা দেয়া একমাস দিনে রোজা রাখা ও রাতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি পাহারারত অবস্থায় সে ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার জীবদ্দশায় সে যে আমলগুলো করত সেগুলোর সওয়াব তার জন্য চলমান থাকবে, তার রিযিকও চলমান থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকে সে মুক্ত থাকবে।”

১২. ভাল মৃত্যুর আরো একটি আলামত হলো- নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদে আহমাদ (২২৮১৩), আলবানি জানায়িয গ্রন্থে পৃষ্ঠা-৪৩ এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা- ৩৪।

এই আলামতগুলো ব্যক্তির ভাল মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে এ নিশ্চয়তা দিব না যে, তিনি জান্নাতি। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন তারা ছাড়া। যেমন চার খলিফার ব্যাপারে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল মৃত্যু দান করুন।

http://islamqa.info/bn/10903

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলোকে ছোট আলামত ও বড় আলামত এই পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কোন কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনো প্রকাশ পায়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী সেগুলো অচিরেই প্রকাশ পাবে।

কেয়ামতের বড় বড় আলামত:

এগুলো হচ্ছে অনেক বড় বড় বিষয়। এগুলোর প্রকাশ পাওয়া প্রমাণ করবে যে, কেয়ামত অতি নিকটে; কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সামান্য কিছু সময় বাকী আছে।

আর ছোট ছোট আলামত:

কেয়ামতের ছোট আলামতের সংখ্যা অনেক। এ বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে আমরা সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ না করে হাদিসগুলোর শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করব। কারণ হাদিসগুলো উল্লেখ করতে গেলে উত্তরের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে। যিনি আরো বেশি জানতে চান তিনি এ বিষয়ে রচিত গ্রন্থাবলী পড়তে পারেন। যেমন- শাইখ উমর সুলাইমান আল-আশকারের “আলকিয়ামতুস সুগরা”, শাইখ ইউসুফ আলওয়াবেল এর “আশরাতুস সাআ” ইত্যাদি।

কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের মধ্যে রয়েছে-

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ।

২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।

৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়।

৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া।

৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না-থাকা।

৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।

৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।

৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থকংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”

৯. আমানতদারিতা না-থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয় তাকে সে দায়িত্ব প্রদান করা।

১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এর সপক্ষে হাদিস এসেছে।

১১. ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া।

১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া।

১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা পাওয়া।

১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া।

১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা।

১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া। সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করা যা একজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে।

১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া।

১৮. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া।

১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া।

২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা।

২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।

২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া।

২৩. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।

২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।

২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।

২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা।

২৭. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া।

২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় হওয়া।

পক্ষান্তরে কেয়ামতের বড় বড় আলামত হচ্ছে সেগুলো যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) এর হাদিসে উল্লেখ করেছেন। সে হাদিসে সব মিলিয়ে ১০টি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে: দাজ্জাল, ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর নাযিল হওয়া, ইয়াজুজ ও মাজুজ, পূর্বে পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া, ধোঁয়া, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, বিশেষ জন্তু, এমন আগুনের বহিঃপ্রকাশ যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে। এই আলামতগুলো একটার পর একটা প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই পরেরটি প্রকাশ পাবে।

ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে বললেন: তোমরা কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছ? সাহাবীগণ বলল: আমরা কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় দশটি আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে কেয়ামত হবে না। তখন তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে উল্লেখ করেন।

এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা কী হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন দলিলকে একত্রে মিলিয়ে এগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো কি ধারাবাহিকভাবে আসবে?

জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন: কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা গেছে; আর কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা যায়নি। ধারাবাহিক আলামতগুলো হচ্ছে- ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের বহিঃপ্রকাশ, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।

প্রথমে দাজ্জালকে পাঠানো হবে। তারপর ঈসা বিন মরিয়ম এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে।

সাফফারিনী (রহঃ) তাঁর রচিত আকিদার গ্রন্থে এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাঁর নির্ণয়কৃত এ ধারাবাহিকতার কোন কোন অংশের প্রতি মন সায় দিলেও সবটুকু অংশের প্রতি মন সায় দেয় না। তাই এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কেয়ামতের বড় বড় কিছু আলামত আছে। এগুলোর কোন একটি প্রকাশ পেলে জানা যাবে, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। কেয়ামত হচ্ছে- অনেক বড় একটা ঘটনা। এই মহা ঘটনার নিকটবর্তিতা সম্পর্কে মানুষকে আগেভাগে সতর্ক করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের জন্য বেশ কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন।[মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড-২, ফতোয়া নং- ১৩৭] আল্লাহই ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/78329
যদি আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের জীবিকা লিপিবদ্ধ করে থাকেন তাহলে কিছু মানুষ না-খেয়ে মারা যায় কেন?

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন- রায্‌যাক (জীবিকাদাতা) এবং তিনিই উত্তম জীবিকাদানকারী। পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রত্যেকটি জীবের জীবিকা আল্লাহরই দায়িত্বে। কোন লোভাতুরের লোভ অথবা হিংসুকের হিংসা কাউকে তার জীবিকা হতে বঞ্চিত করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রজ্ঞা অনুযায়ী মানুষের জীবিকার মধ্যে তারতম্য করেন। যেমনিভাবে মানুষের আকার-আকৃতি ও স্বভাব-চরিত্রের মধ্যেও তিনি ভিন্নতা দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবিকার মধ্যে বিস্তৃতি দেন। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিকার সচ্ছলতা দেন, যাকে ইচ্ছা জীবিকা সংকুচিত করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্ববর্তী জ্ঞান ও লিপিকার ভিত্তিতে মানুষের জীবিকা বণ্টন করেন। তাঁর পূর্ব জ্ঞান ও লিপিকাতে রয়েছে বান্দাদের মধ্যে কে সচ্ছল জীবিকা পাবে, আর কে সংকুচিত জীবিকা পাবে। এর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রভূত হেকমত (গূঢ় রহস্য)। তাঁর সকল হেকমত অনুধাবন করা বান্দার সাধ্যে নেই। জীবিকায় সচ্ছলতা দান ও সংকোচনের একটি হেকমত হচ্ছে- নেয়ামত দিয়ে অথবা বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করা। “আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”[সূরা আম্বিয়া, ৩৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন এভাবে যে, তাকে সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। এবং যখন তাকে পরীক্ষা করেন এভাবে যে, তার রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন সে বলে: আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন।[সূরা ফজর, আয়াত: ১৫-১৬] এই বক্তব্যের পর আল্লাহ তাআলা বলেন: “এটা অমূলক”। অর্থাৎ মানুষ যা ধারনা করে প্রকৃত অবস্থা তদ্রূপ নয়। বরঞ্চ জীবিকার সচ্ছলতা ও সংকোচন বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা; তাকে সম্মান দেয়া বা অপমান করা নয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুকরগুজার ও ধৈর্যশীল বান্দা এবং অকৃতজ্ঞ ও অধৈর্য বান্দাদের চেনা যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞানী। উদ্ধৃতি সমাপ্ত।

আমাদের শিক্ষক শাইখ আব্দুর রহমান আল-বার্‌রাক এই উত্তরটি আমাদের কাছে লিখে পাঠিয়েছেন
http://islamqa.info/bn/3699
ইসলামে উবুদিয়্যত তথা আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের দাসত্বের স্বরূপ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন আশা করছি।

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য।

মুসলমান একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, তাঁরই দাসত্ব করবে। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর কিতাবে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

“অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র উপাসনা (দাসত্ব) কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।”[সূরা নাহল, ১৬:৩৬] عُبُودِيَّة (উবুদিয়্যাহ্‌) শব্দটি تَعْبِيْدٌ (তা’বীদ) শব্দ হতে উদ্ভূত। কোন একটি অমসৃণ রাস্তাকে পদদলিত করে চলার উপযুক্ত করা হলে তখন বলা হয়: عَبَّدتُّ الطَّرِيْقَ। আল্লাহ্‌র জন্য বান্দার দাসত্বের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি ‘আম’ তথা সাধারণ। অপরটি ‘খাস্‌’ তথা বিশেষ।

যদি عُبُودِيَّة দ্বারা مُعَبَّد তথা করায়ত্ব-অধীন-বশীভূত এ অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয়, তখন এ দাসত্বের পরিধি অতি ব্যাপক। মহাবিশ্বে আল্লাহ্‌র যত সৃষ্টি রয়েছে সকল সৃষ্টি এ দাসত্বের আওতায় এসে যায়। চলন্ত-স্থির, শুষ্ক-ভিজা, বুদ্ধিমান-নির্বোধ, মুমিন-কাফির, সৎকর্মশীল-পাপী... সকলেই আল্লাহ্‌র সৃষ্ট, তাঁর বশীভূত এবং তাঁর পরিচালনাধীন। একটা নির্ধারিত সীমানায় এসে সকলকে থেমে যেতে হয়।

আর যদি عبد (আবদ) দ্বারা আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের আজ্ঞাবহ, তাঁর দাসত্বস্বীকারকারী কাউকে উদ্দেশ্য করা হয় তবে এ দাসত্বের আওতায় শুধু মুমিনগণ পড়ে, কাফেরেরা নয়। কেননা মুমিনরাই হলো আল্লাহ্‌র প্রকৃত দাস। যারা একমাত্র তাঁকে তাদের প্রতিপালক হিসেবে মানে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করে। তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না। যেমনটা আল্লাহ্‌ তায়ালা ইবলিসের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন:

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (39) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ (40) قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42) سورة الحجر

“সে (ইবলিস)বললো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন, তার জন্যআমি পৃথিবীতে মানুষেরনিকট পাপকর্মকেঅবশ্যইশোভনীয় করে তুলব এবং তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ দাসগণ(বান্দাগণ) ছাড়া। তিনি (আল্লাহ্‌)বললেন: এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ। বিভ্রান্তদের মধ্য হতেযারা তোমার অনুসরণ করবেতারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) দাসদেরউপর তোমার কোন আধিপত্যথাকবে না।”[সূরা হিজর ৩৯-৪২]

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন যে প্রকার দাসত্ব তথা ইবাদতের আদেশ নাযিল করেছেন সেটা হলো- “এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের পছন্দনীয় সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তার অপছন্দনীয় সবকিছুকে বের করে দেয়। ইবাদতের এ পরিচয়ের আওতায় শাহাদাতাইন (কালিমা ও রিসালাতের দুইটি সাক্ষ্যবাণী), সালাত, হজ্ব, সিয়াম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, ফেরেশতা-রাসূল-শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান...ইত্যাদি সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এ ইবাদতের মূল ভিত্তি হলো ‘ইখলাস’। অর্থাৎ বান্দাহ্‌ সকল কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি কামনা করবে। ইরশাদ হচ্ছে- “আর সে আগুন থেকে রক্ষা পাবে;যে পরমমুত্তাকী। যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। বরং তার মহান প্রতিপালকের সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় এবং সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে।” [সূরা লাইল, ৯২:১৭-২১]

সুতরাং একনিষ্ঠতা (ইখলাস) এবং বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। এ গুণদুটি প্রকাশ পাবে একজন মুমিনের আল্লাহ্‌র আদেশ পালন, তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, অক্ষমতা ও অলসতা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে সংযম অবলম্বন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ বলেন- “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং যারা সত্যবাদী (কথা ও কাজে) তাদেরসঙ্গেথাকো।”[সূরা তাওবাহ্, ৯:১১৯]

এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা (অনুসরণ) করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান (শরিয়ত) অনুযায়ী ইবাদত পালন করবে। মাখলুকের মনমত অথবা নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে আল্লাহর ইবাদত করবে না। এটাই হলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা বা অনুসরণের মর্মার্থ। সুতরাং একনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা বা অকপটতা এবং ইত্তেবায়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ তিনটি উবুদিয়্যাহ্‌ বা আল্লাহর দাসত্বের অনিবার্য উপসর্গ। এ তিনটির সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক সেগুলো ‘মানুষের দাসত্ব’। রিয়া বা লৌকিকতা ‘মানুষের দাসত্ব’। শির্ক ‘মানুষের দাসত্ব’। আল্লাহ্‌র নির্দেশ ত্যাগ করে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে সন্তুষ্ট করা ‘মানুষের দাসত্ব’। এভাবে যে ব্যক্তি তার খেয়ালখুশিকে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের উপরে প্রাধান্য দেবে সে আল্লাহর দাসত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে এবং সরল পথ (সিরাতুল মুস্তাকীম) থেকে ছিটকে পড়বে। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দিনার ও দিরহামের পূজারি ধবংস হোক। ধবংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সে সন্তুষ্ট থাকে; আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।”

“আল্লাহ্‌র দাসত্ব” ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদিকে শামিল করে। সুতরাং বান্দা তার রবকে ভালোবাসবে, তাঁর শাস্তিকে ভয় করবে, তাঁর সওয়াব ও করুণার প্রত্যাশায় থাকবে। এই তিনটি আল্লাহর দাসত্বের মৌলিক উপাদান।

আল্লাহ্‌র দাস হওয়া বান্দার জন্য সম্মানজনক; অপমানকর নয়। কবি বলেছেন,

আপনার সম্বোধন ‘হে আমার বান্দারা’ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে এবং আহমাদকে আমার নবী মনোনীত করাতে আমার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন আমি আকাশের নক্ষত্রকে পায়ের নীচে মাড়িয়ে চলেছি।

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

http://islamqa.info/bn/6622
আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন- "যখন আমি তাকে (বান্দাকে) ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যে কান দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যে চোখ দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যে হাত দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে হাঁটে।" এমতাবস্থায় আমরা স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই সত্তা এই মতাদর্শ এবং আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত আয়াতসমূহের ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসৃত পদ্ধতির মাঝে কিভাবে সমন্বয় করব? আশা করি আপনারা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবেন; আল্লাহ আপনাদের সম্মান বৃদ্ধি করুন। কারণ আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকারকারী সম্প্রদায় আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে সলফে সালেহীনদের অনুসৃত পদ্ধতিকে এই বলে প্রশ্নবিদ্ধ করেন যে, আমরা যদি আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত আয়াত ও হাদিসকে মূল অর্থে গ্রহণ করি এতে করে স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক সত্তা- এ দৃষ্টিভঙ্গি অনিবার্য হয়ে যায়।

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।

এক:

আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- কুরআন ও হাদিসের দলীল ছাড়া আল্লাহর জন্য কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা যাবে না। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর যেসব গুণের উল্লেখ রয়েছে তাঁর জন্য শুধু সে গুণগুলো সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোন মাখলুকের সাথে আল্লাহর গুণ বা বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যতাকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ নিজেই বলেছেন- (لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ) অর্থ- “তাঁর মত কিছুই নেই।” এটি মুমাচ্ছিলা (সাদৃশ্যবাদী) সম্প্রদায়ের মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল। কোন কোন আলেম এদেরকে মুশাব্বিহা (উপমাবাদী) বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ আয়াতের পরবর্তী অংশ হচ্ছে- (وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ) অর্থ- "তিনি হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"[সূরা শুরা, আয়াত: ১১] এ অংশে মুআত্তিলা (নিরাকারবাদী) মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল রয়েছে। যারা বিশ্বাস করেন যে, নামের মধ্যে সাদৃশ্য থাকা অস্তিত্বের মধ্যেও সাদৃশ্য থাকাকে অনিবার্য করে।

আমরা 155206 নং প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা উল্লেখ করেছি। আপনি সে নীতিগুলো পড়ে নিতে পারেন। 34630 নং প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরিহারযোগ্য তাহরিফ (গুণকে বিকৃত করা), তা'তিল (গুণকে অস্বীকার করা), তামছিল (মাখলুকের গুণের সাথে সাদৃশ্য দেয়া) ও তাক্‌য়িফ (গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অবয়ব নির্ধারণ করা) এ চারটি বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে। যে বা যারা এ চারটি নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হবেন তিনি আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি যেভাবে ঈমান আনা ওয়াজিব সেভাবে ঈমান আনেননি। শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) তাঁর লিখিত আল-কাওয়ায়েদ আল-মুছলা ফি সিফাতিল্লাহি ওয়া আসমাইহিল হুসনা গ্রন্থে এ সংক্রান্ত বেশকিছু বিধি উল্লেখ করেছেন। বইটি নিম্নোক্ত লিঙ্কে পাওয়া যাবে। http://www.ibnothaimeen.com/all/books/article_16822.shtml এছাড়া শাইখ আলাবি বিন আব্দুল কাদের আল-সাক্কাফ (হাঃ) তাঁর লিখিত সিফাতুল্লাহি আয্‌যা ওয়া জাল্ল ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ নামক কিতাবে আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কিত একুশটি নীতি উল্লেখ করেছেন। নীচের লিঙ্কে গিয়ে বইটি পড়া যাবে।

http://dorar.net/book_view.asp?book_id=2939

দুই:

প্রশ্নকারী যে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন তা আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ) বলেছেন: "আল্লাহ তাআলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরযকরেছি তা দ্বারাই সে আমারঅধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফলইবাদতের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য হাছিল করতে থাকে। অবশেষ আমিতাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬১৩৭] এখানে আমরা একটা বিষয়ে প্রশ্নকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটা হলো এই হাদিস দিয়ে হুলুলিয়া সম্প্রদায় তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের পক্ষে দলীল দিয়ে থাকে; ইত্তিহাদিয়া সম্প্রদায় নয়। ইত্তিহাদ ও হুলুল এর মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য 147639 নং প্রশ্নের জবাব দেখুন। হুলুলিয়াগণ বলেন যে, এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে - স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই সত্তা। যখন বান্দা ফরয ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করে নেয় তখন আব্‌দ নিজেই মাবুদ হয়ে যায় (আল্লাহ ক্ষমা করুন)। আব্‌দ নিজেই আল্লাহর কর্ণ দিয়ে শুনে, আল্লাহর চক্ষু দিয়ে দেখে। অর্থাৎ খালেক ও মাখলুক একীভূত হয়ে এক জিনিসে পরিণত হয়ে যায়। এ ধরনের বিশ্বাস নিঃসন্দেহে ইসলাম বিনষ্টকারী কুফরি বিশ্বাস। যে হাদিসটি দিয়ে তারা দলীল দিচ্ছেন খোদ সে হাদিসই তাদের বিপক্ষে দলীল। যেহেতু সে হাদিসে খালেক ও মাখলুক এর দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং উভয় সত্তার মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। আবেদ ও মাবুদের দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং উভয় সত্তার মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করা হয়েছে। মুহিব্ব ও মাহবুবের দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রার্থনাকারী ও সাড়াদানকারীর দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসের মধ্যে এমন দলীল পাওয়া যায় না- যা প্রমাণ করে যে, তারা উভয়ে একই সত্তার অধিকারী।

ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: ইত্তিহাদপন্থী নাস্তিকগণ তাদের মতাদর্শের পক্ষে এই দলীল উল্লেখ করেন যে, আমি তার কর্ণ, আমি তার চক্ষু, আমি তার হাত, আমি তার পা।" প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি দিক হতে হাদিসটি তাদের বিপক্ষে দলীল: হাদিসে বলা হয়েছে- "যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিই।" অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা শত্রুও সাব্যস্ত করেছেন, ওলি (বন্ধু)ও সাব্যস্ত করেছেন। তিনি নিজের জন্য এটাও সাব্যস্ত করেছেন, ওটাও সাব্যস্ত করেছেন।

অনুরূপভাবে হাদিসে এসেছে- "আমি যা ফরয করেছি সেটার মত অন্যকিছু দিয়ে বান্দা আমার নৈকট্য হাছিল করতে না।" অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা ও বিভিন্ন ইবাদত ফরযকারী প্রতিপালক সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসে আরো এসেছে- "আমার বান্দা উপর্যুপরি নফল ইবাদত করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালবাসি।" অর্থাৎ 'নৈকট্য লাভকারী ও যার নৈকট্য লাভ করা হয়' সাব্যস্ত করা হয়েছে। মুহিব্ব ও মাহবুব সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ দলীলগুলো তাদের এককঅস্তিত্বের মতাদর্শকে অপনোদন করে দেয়। হাদিসে আরো এসেছে- "আমি তাকে ভালবাসতে থাকি। একপর্যায়ে আমি তার কর্ণ হয়ে যায়, যে কান দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যায়, যে চক্ষু দিয়ে সে দেখে।" অর্থাৎ আল্লাহর ভালবাসা প্রাপ্তির পর বান্দার জন্য এ বিষয়গুলো সাব্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইত্তিহাদিয়াদের মতে আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার পরের অবস্থা ও আগের অবস্থা অভিন্ন।[মাজমু' ফাওয়া (২/৩৭১, ৩৭২)

ইবনে তাইমিয়া আরো বলেন: হাদিসের পরের অংশে আল্লাহ তাআলা বলেন- ( وَلَئِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ ) অর্থ- "যদি সে আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে আমি তাকে সেটা দান করি। যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে আশ্রয় দান করি।" এখানে প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনাগ্রহণকারীর আলাদা সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থী ও আশ্রয়প্রদানকারীর আলাদা সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। বান্দাকে আশ্রয়প্রার্থী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর প্রতিপালককে আশ্রয়প্রদানকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই হাদিসে মহান কিছু উদ্দেশ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে।[মাজমু'ল ফাতাওয়া ১৭/১৩৪]

ইবনে হাজার (রহঃ) এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: এই হাদিসটির অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। তবে যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখা হোক না কেন এই হাদিসে ইত্তেহাদিয়া বা ওয়াহদাতুল ওজুদ (একক অস্তিত্ববাদ) মতাদর্শীদের পক্ষে কোন দলীল নেই। যেহেতু হাদিসের পরের অংশে এসেছে- "যদি বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা করে, যদি বান্দা আমার কাছে আশ্রয় চায়।" অর্থাৎ হাদিসের এ অংশটি ইত্তিহাদিয়া ও ওয়াহদাতুল ওজুদ মতাদর্শীদের বিপক্ষে সুস্পষ্ট দলীল।[ফাতহুল বারী ১১/৩৪৫]

ইমাম শাওকানী (রহঃ) ইবনে হাজার (রহঃ) এর এ উক্তিটি উদ্ধৃত করার পর বলেন: তিনি বাতিলপন্থীদের দলীল খণ্ডন করতে গিয়ে হাদিসের যে অংশটি উদ্ধৃত করেছেন (যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে, যদি আমার কাছে আশ্রয়প্রার্থী হয়) এর ব্যাখ্যা হলো এই যে, হাদিসের এ অংশটি প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনাগ্রহণকারীর আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে এবং আশ্রয়প্রার্থী ও আশ্রয়দাতার আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। সম্ভবতঃ তিনি হাদিসটি নিয়ে যথোপযুক্ত চিন্তাভাবনা করেননি। যদি করতেন তাহলে তিনি শুধু প্রার্থনা ও আশ্রয়প্রার্থনার কথা উল্লেখ করতেন না। কারণ গোটা হাদিসটি তাদের বিরুদ্ধে দলীল। হাদিসের বাণী: "যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে।" এ অংশটি শত্রু, বিপক্ষ শত্রু ও শত্রুতার কারণের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। অনুরূপভাবে বন্ধুত্বপোষণকারী ও বন্ধুত্বগ্রহণকারীর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। অনুরূপভাবে যুদ্ধঘোষণাকারী ও যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় উভয়ের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। যুদ্ধকারী ও যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয় উভয়ের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। নৈকট্যলাভকারী ও নৈকট্যপ্রদানকারীর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। বান্দা ও মাবুদের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। মুহিব্ব ও মাহবুবের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। এভাবে হাদিসের শেষ পর্যন্ত। গোটা হাদিসটি ইত্তেহাদিয়া সম্প্রদায়ের মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল। কিন্তু তারা তা অনুধাবন করতে চায় না। বরঞ্চ আরো পরিস্কারভাবে হাদিসে এসেছে- "মুমিনের আত্মা কবজের ক্ষেত্রে আমি যতবেশী দ্বিধাগ্রস্ত হই অন্য কোন বিষয়ে আমি সে রকম দ্বিধাগ্রস্ত হই না।" এই হাদিসে- দ্বিধাগ্রস্ত ও যার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত দুইটি সত্তার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে। কর্তা ও কৃত দুইটি সত্তার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে। যে আত্মার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত অর্থাৎ মুমিন বান্দা ও যিনি দ্বিধাগ্রস্ত অর্থাৎ কবজকারী দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। মৃত্যুকে অপছন্দকারী তথা মুমিন বান্দা এবং ও মৃত্যুদান করাকে অপছন্দকারী তথা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে।

সারকথা হচ্ছে- ইত্তেহাদিয়াদের এই মতাদর্শ সকল বিবেকবানের বিবেককে বিকল করে দেয়। সুতরাং তাদের বিপক্ষে আর কি প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন আছে। তারা যে শুবা-সন্দেহ দ্বারা বিপথগামী হয়েছে, সেটি দ্বৈতবাদে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে ধারকৃত। যারা মনে করেন ঈশ্বর দুইজন- কল্যাণের ঈশ্বর ও অনিষ্টের ঈশ্বর। কল্যাণের ঈশ্বর হচ্ছে- আলো। আর অনিষ্টের ঈশ্বর হচ্ছে- অন্ধকার। তাদের মতে সকল অস্তিত্বশীলের মূলে রয়েছে এই দুই সত্তা। যখন মানুষের ওপর আলো প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ আলোকিত হয়। আর যখন অন্ধকার প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। কিন্তু ইত্তেহাদিয়াগণ এ ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন যে, এই মতাদর্শের মূল বিশ্বাসই তাদের বিপক্ষে। কারণ অন্ধকার আর আলো তো এক জিনিস নয়। অনুরূপভাবে অন্ধকার বা আলো যে সত্তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটাও তো আলাদা একটি সত্তা।[ইমাম শাওকানী এর কাতরুল ওলি আলা হাদিসিল ওলি গ্রন্থ হতে গৃহীত, পৃষ্ঠা ৪১৯-৪২১] আলোচিত হাদিসটির মূল পাঠ এবং আরো কিছু বিশ্লেষণ 2137114397 নং প্রশ্নের জবাবে দেখা যেতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/163948
আমরা ইসলামি শরিয়ার আলোকে সুস্পষ্টভাবে জানতে চাই মুসলমানেরা অমুসলমানের প্রতি কোন দৃষ্টিতে তাকাবে এবং অমুসলমানদের সাথে কী ধরনের আচরণ করবে।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

১. ইসলাম রহমত ও ন্যায়ের ধর্ম। ইসলাম মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনার জন্য চেষ্টা করে।

২. হেকমত, সুন্দর উপদেশ ও উত্তম পন্থায় বিতর্কের মাধ্যমে অমুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয়ার জন্য মুসলমানদেরকে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুমকরেছে।”[সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]

৩. ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

৪. মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে- যে কোন কাফেরকে আল্লাহর কালাম শুনার সুযোগ করে দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে।অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে।”[সূরা তওবা, আয়াত: ৬]

৫. কাফেরদের প্রকারভেদ অনুযায়ী মুসলমানেরা তাদের সাথে আচরণ করবে। তাদের মধ্যে যারা শান্তিচুক্তি করেছে তাদের সাথে চুক্তি বজায় রাখবে। যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তাদের সাথে যুদ্ধরত কাফের (হারবী) হিসেবে আচরণ করবে। আর যারা পৃথিবীতে ইসলামের বাণী প্রচার ও ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে।

৬. আল্লাহ সম্পর্কে কোন অমুসলিম কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এর উপর নির্ভর করবে কোন মুসলমানের সাথে তার আন্তরিক ভালবাসা বা ঘৃণার সম্পর্ক কি হবে। যদি তারা আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাঁর সাথে কোন অংশীদার সাব্যস্ত না করে তাহলে মুসলমানেরা তাদেরকে ভালবাসবে। যদি তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে, তাঁকে অস্বীকার (কুফরী) করে, তাঁর সাথে অন্য কারো ইবাদত করে অথবা তাঁর ধর্মের সাথে শত্রুতা করে এবং সত্যকে প্রত্যাখান করে তাহলে তাদেরকে ঘৃণা করা মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।

৭. কোন অমুসলিমকে আন্তরিক ঘৃণা করার অর্থ এই নয় যে, তার উপর অত্যাচার করা। কারণ আহলে কিতাবদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কেমন আচরণ করা আবশ্যক তা উদ্ধৃত করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের ওতোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত:১৫] অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মুসলিম, আর তারা হচ্ছে- ইহুদী ও খ্রিস্টান।

৮. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, কোন অমুসলিমের উপর কোন প্রকার জুলুম করা নাজায়েয। অতএব কোন অমুসলিমের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করবে না, ভয় প্রদর্শন করবে না, তার সম্পদ চুরি বা আত্মসাৎ করবে না, তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। তার রাখা আমানতকে অস্বীকার করবে না। তার মজুরি থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। তার কাছ থেকে কোন কিছু খরিদ করলে মূল্য পরিশোধ করবে। যৌথভাবে ব্যবসা করলে ব্যবসার লাভ প্রদান করবে।

৯. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, সে যদি কোন অমুসলমান প্রতিপক্ষের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তাহলে তাকে চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যদি কোন অমুসলমান মুসলমানদের পেশকৃত শর্তসমূহ মানতে একমত হয়ে মুসলিম দেশে প্রবেশের অনুমতি (ভিসা) গ্রহণ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অমুসলিম চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য শর্তভঙ্গ করা, গাদ্দারি করা, চুরি করা, হত্যা করা অথবা বিধ্বংসী কোন কাজ করা নাজায়েয।

১০. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, যে সকল অমুসলিম মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার করেছে অথবা বহিস্কারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে এ ধরনের অমুসলিমের জান ও মাল মুসলমানদের জন্য হালাল।

১১. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ অমুসলিমের সাথে ভাল ব্যবহার করা, আর্থিক সাহায্য করা, ক্ষুধার্ত হলে খাওয়ানো, বিপদে পড়লে ঋণ দেয়া, বৈধ বিষয়ে তার পক্ষে সুপারিশ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, সালামের জবাব দেয়া ইত্যাদি জায়েয। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন: “দ্বীনেরব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।”।[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮]

১২. অধিকার প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধ, মজলুমের সাহায্য, যে কোন অকল্যাণ থেকে গোটা মানবজাতিকে হেফাযত করা যেমন- দূষণ প্রতিরোধ, নিরাপদ পরিবেশ, মহামারী রোগের সংক্রমন রোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অমুসলিমের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে কোন বাধা নেই।

১৩. মুসলমান বিশ্বাস করবে কিছু কিছু বিধানের ক্ষেত্রে মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন- রক্তমূল্য, মিরাছ বণ্টন, বিয়ে, বিয়ের অভিভাবকত্ব, মক্কায় প্রবেশ ইত্যাদি। ফিকাহের গ্রন্থসমূহে এ মাসয়ালাগুলো আলোচনা করা হয়েছে। তবে এ মাসয়ালাগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ। অতএব, এসব ক্ষেত্রে যে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে ও যে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, তার সাথে শরিক করেছে এবং সত্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে উভয়ের মাঝে সমতা করা সম্ভবপর নয়।

১৪. মুসলিম দেশে ও অমুসলিম দেশে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য মুসলমানেরা নির্দেশিত। মুসলমানদের উচিৎ সত্য দ্বীনের বাণী বিশ্ববাসীর নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। পৃথিবীর সর্বত্র মসজিদ তৈরী করা। অমুসলিম জাতিসমূহের নিকট দায়ী প্রেরণ করা এবং তাদের শাসকবর্গের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ করা।

১৫. মুসলিম আলেমগণ অমুসলিমদের সাথে সংলাপের ব্যবস্থা করবেন। অমুসলিমদেরকে আলোচনা করার সুযোগ দিবেন, তাদের কথাবার্তা শুনবেন এবং তাদের সামনে সত্যকে তুলে ধরবেন।

সর্বশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যেও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারোই বাদত করব না। তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ করব না।তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক।”

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

http://islamqa.info/bn/26721
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »