আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী বিনিময়ের পরিমাণ জানিয়ে দিবেন এবং তারা যা কিছু ভুলে যাবে, তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এর নামই হিসাব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا أَحْصَاهُ اللَّهُ وَنَسُوهُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ﴾

‘‘সেদিন আল্লাহ সমস্ত মানুষকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন এবং তাদেরকে জানিয়ে দিবেন, যা তারা করতো। আল্লাহ তার হিসাব রেখেছেন। আর তারা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা’’। (সূরা মুজাদালাহ: ৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

 ﴿وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا﴾

‘‘এবং তারা বলবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এটা কেমন খাতা, আমাদের ছোট বড় কোনো কিছুই এখানে লেখা থেকে বাদ পড়েনি। তারা যাকিছু করেছিল সবই নিজের সামনে উপস্থিত পাবে এবং তোমার রব কারোর প্রতি যুলুম করবেন না’’। (সূরা আল-কাহাফ: ৪৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ﴾

‘‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎ কর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তাও দেখতে পাবে’’। (সূরা যিলযাল: ৭-৮)

কিয়ামতের দিন মানুষের কাছ থেকে বদলা নেয়াও হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা যালেমের কাছ থেকে মাযলুমের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন অথবা মাযলুমকে যালেমের উপর সক্ষম করবেন এবং প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ করে দিবেন।

যেমন মুসলিম শরীফ ও তিরমিযী শরীফে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদীছে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنْ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ

‘‘তোমরা অবশ্যই প্রত্যেক হকদারের হক পরিশোধ করে দিবে। তা না করলে কিয়ামতের দিন অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এমনকি শিং ওয়ালা ছাগল দুনিয়াতে শিংবিহীন কোনো ছাগলকে শিং দিয়ে গুঁতা মেরে থাকলে তার থেকে শিং বিহীন ছাগলের জন্য প্রতিশোধ নেয়া হবে’’।[1]

কিয়ামতের দিন হিসাব বিভিন্ন রকম হবে। কারো হিসাব নেয়া হবে শক্তভাবে। আবার কারো হিসাব হবে একদম সহজ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সৃষ্টির হিসাব নিবেন এবং তার মুমিন বান্দার সাথে নির্জনে মিলিত হবেন ও তার গুনাহসমূহ স্বীকার করাবেন। আল্লাহ কিতাব ও রসূলের সুন্নাতে এর বিবরণ এসেছে।

তবে যাদের সৎ কর্ম ও অন্যায় কর্মগুলো ওজন করা হবে তাদের হিসাবের ন্যায় কাফেরদের হিসাব নেয়া হবেনা। কেননা তাদের কোনো সৎকর্মই থাকবে না। কিন্তু তাদের কাজ-কর্মগুলো গণনা করে ও সংরক্ষণ করে রাখা হবে। তার কারণে তাদেরকে আটকানো হবে এবং স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা হবে। শাইখুল ইসলামের কথা এখানেই শেষ।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। আর মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম রক্তপাতের বিচার করা হবে’’।[2]

ইমাম তিরমিযী, আবু দাউদ এবং হাকেম আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ النَّاسُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ أَعْمَالِهِمْ الصَّلَاةُ يَقُولُ الله تعالى لِمَلَائِكَتِهِ انْظُرُوا فِي صَلَاةِ عَبْدِي أَتَمَّهَا أَمْ نَقَصَهَا فَإِنْ كَانَتْ تَامَّةً كُتِبَتْ لَهُ تَامَّةً وَإِنْ كَانَ انْتَقَصَ مِنْهَا شَيْئًا قَالَ انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَإِنْ كَانَ لَهُ تَطَوُّعٌ قَالَ أَتِمُّوا لِعَبْدِي فَرِيضَتَهُ مِنْ تَطَوُّعِهِ ثُمَّ تُؤْخَذُ الْأَعْمَالُ عَلَى ذَلك

‘‘কিয়ামতের ময়দানে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হল তার সালাত। আল্লাহ তা‘আলা তার ফেরেশতাদেরকে বলবেন, আমার বান্দার সালাত  দেখো। সে কি তা পূর্ণরূপে আদায় করেছে না কি অসম্পূর্ণরূপে আদায় করেছে? সে যদি পূর্ণ রূপে আদায় করে থাকে, তাহলে তার জন্য পূর্ণ ছাওয়াব লেখা হবে। আর তাতে ত্রুটি করে থাকে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, দেখো আমার বান্দার কোনো নফল সালাত  আছে কি না? তার যদি নফল সালাত থাকে, তাহলে তিনি বলবেন, আমার বান্দার ফরয নামাযের ত্রুটি-বিচ্যুতি নফল দ্বারা পূরণ করো। অতঃপর সমস্ত ফরয আমলের ত্রুটি-বিচ্যুতি নফল দ্বারা পরিপূর্ণ করা হবে’’।[3] ইমাম তিরমিযী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন এবং হাকেম সহীহ বলেছেন।

ইমাম নাসাঈ রাহিমাহুল্লাহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ الصَّلَاةُ وَأَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ فِي الدِّمَاءِ

‘‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। আর মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম রক্তপাতের বিচার করা হবে’’।[4]


[1]. সহীহ: তিরমিযী, হাদীছ নং- ২৪২০।

[2]. বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়:  কিতাবুত দিয়া‘ত

[3]. সহীহ: আবূ দাউদ ৮৬৪, মুস্তাদরাক হাকেম, হাদীছ নং- ৯২২।

[4]. বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুত দিয়া‘ত, নাসাঈ ৩৯৯১, সহীহ।