২.৫১ জানাযার সালাত আদায়ের পদ্ধতি - ১৮৭. জানাযা পড়ার নিয়মাবলি কী?

শুরুতে মনে মনে নিয়ত করে প্রথম তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধবে। অতঃপর চুপিসারে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম' পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। এরপর অন্য একটি সূরা পড়বে। তারপর দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে সালাতে পঠিত দরূদ শরীফটি পড়বে। অতঃপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে নিমের যেকোন একটি অথবা দুটি বা সবক’টি দু'আ-ই পড়বে। সর্বশেষ চতুর্থ তাকবীর দিয়ে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে জানাযার সালাত শেষ করবে।জানাযার সালাতে এভাবে ৪টি তাকবীর দিবে।
 
ক. প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পড়া

(১) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,

“নবী (সা.) জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়তেন।” (তিরমিযী- ১০২৬)।

(২) তালহা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর পেছনে জানাযার সালাত আদায় করেছি। তাতে তিনি (প্রথম তাকবীরের পর) সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন এবং জানাযা শেষে বললেন, লোকেরা যেন জেনে নেয় যে, জানাযার নামাযের এটাই পদ্ধতি।” (বুখারী: ১৩৩৫, ইফা, ১২৫৪, আধুনিক ১২৪৭)। আরবী ইবারতে এখানে ‘সুন্নাহ' শব্দটি মুস্তাহাব অর্থে আসেনি; বরং সূরা ফাতিহা পড়া ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল, এ অর্থ বোঝানো হয়েছে।
(দেখুন, ওয়েবসাইট www.islamqa.com, উত্তর নং ৭২২২১)

(৩) তাছাড়া সাহাবী ইবনে মাসউদ (রা.)-ও জানাযার নামাযে (প্রথম তাকবীরের পর) সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। (বায়হাকী ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৪-৬৫)। (৪) হানাফী ও মালেকী ফকীহগণ জানাযায় সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে কোন হাদীসের দলীল পেশ করেননি। তবে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-র একটি 3 (আছর)-কে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন,
“তিনি জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়তেন না।” (মুয়াত্তা মালেক: ৫৪৬, ৭৭৭)। উল্লেখ্য, আছারের গুরুত্বের উপর হাদীসের গুরুত্ব অনেক বেশি। কাজেই সূরা ফাতিহা পড়া অতীব গুরুত্ববহ। ইমাম শাফেয়ী (র) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াকে রুকন বলেছেন। শায়খ উসাইমিন (র) ও এটাকে রুকন বলেছেন (শরহুল মুমতি: ৫/৪০১)। আর রুকন হলো এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা বাদ গেলে জানাযার সালাত শুদ্ধ হবে না। সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ বিন বায (র) বলেছেন, জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব (ফাতাওয়া বিন বায: ১৩/১৪৩)। আবদুল কাদের জিলানী (র) ও জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠের পক্ষে মত দিয়েছেন। (গুনিয়াতুত্ তালেবীন) ছানা পড়া লাগবে না কেউ কেউ প্রথম তাকবীরের পর শুধু ছানা (অথাৎ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা...) পড়েন; অথচ এর & সপক্ষে কোন সহীহ হাদীস খুঁজে পাওয়া যায় না।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মতে,
প্রথম তাকবীরের পর আ'উযুবিল্লাহ... ও বিসমিল্লাহ... এবং পরে সূরা ফাতিহা পড়বে। কিন্তু ছানা পড়বে না। অতএব উত্তম হলো প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পড়া যা রাসূল (সা.) করেছেন।

খ. দ্বিতীয় তাকবীরের পর ইবরাহীমী দুরূদ পড়া

“হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করো, যেমন রহমত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার বংশধরের ওপর বরকত নাযিল করো, যেমন বরকত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (বুখারী: ৩৩৭০)।

গ. তৃতীয় তাকবীরের পর নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক বা সবকয়টি দুআ পড়া জানাযার চারটি দু'আ নিয়ে দেওয়া হলো।

একই জানাযায় একাধিক দু'আ পড়া উত্তম। জানাযার দুআ-১ আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (খ) যখন জানাযার সালাত পড়াতেন তখন এই দু'আ পড়তেন।

এক

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ ، اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ ، وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়িনা অমাইয়িতিনা অশা-হিদিনা অগায়িবিনা অস্বাগীরিনা অকাবীরিনা অযাকারিনা অউনষা-না, আল্লা-হুম্মা মান আহয়্যাইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, অমান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান, আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু অলা তাফতিন্না বাদাহ।


“হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত এবং (এই জানাযায়) উপস্থিত ও অনুপস্থিত, আর আমাদের ছোট ও বড় এবং আমাদের নর ও নারী সবাইকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্য থেকে তুমি যাকে বাঁচিয়ে রাখবে তাকে তুমি ইসলামের উপরে বাঁচিয়ে রাখো এবং যাকে তুমি মারতে চাও তাকে তুমি ঈমানের অবস্থায় মৃত্যু দাও। আর আল্লাহ এই লাশের প্রতিদান থেকে তুমি আমাদের বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদেরকে ফিতনায়ও ফেলো না।” (আবু দাউদ ৩২০১, তিরমিযী ১০২৪)।

জানাযার দু'আ-২

 

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ، وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنْ الدَّنَسِ ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ ، وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মাগফির লাহু অরহামহু অআ-ফিহী অ'ফু আনহু অআকরিম নুযুলাহু অঅসসি’ মুদখালাহু, অগসিলহু বিলমা-ই অসসালজি অল-বারাদ। অনাক্বিহী মিনাল খাত্বায়্যা কামা য়ুনাক্কাস সাউবুল আবয়্যাযু মিনাদ দানাস। অ আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী অ আহলান খাইরাম মিন আহলিহী অযাওজান খাইরাম মিন যাওজিহ। অ আদখিলহুল জান্নাতা অ আইযহু মিন আযা-বিল ক্বাবরি অ আযা-বিন্নার।

“হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো, তার উপর রহম করো, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখো, তাকে মাফ করো, মর্যাদার সাথে তার আতিথেয়তা করো। তার বাসস্থানটা প্রশস্ত করে দাও, তুমি তাকে ধৌত করে দাও- পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তুমি তাকে গুনাহ হতে এমনভাবে পরিষ্কার করো যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। আর তার পার্থিব ঘরের বদলে তুমি তাকে একটি উত্তম ঘর দান করো এবং তার পরিবারের বদলে এক উত্তম পরিবার এবং জুড়ির বদলে এক উত্তম জুড়ি দান করো। আর তাকে তুমি জান্নাতে দাখিল করো এবং কবরের আযাব ও জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে তাকে মুক্তি দাও।” (মুসলিম: ৯৬৩)

জানাযার দু'আ-৩

اللَّهُمَّ إنَّ فُلانَ ابْنَ فُلان في ذِمَّتِكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ فِتْنَةَ القَبْر، وَعَذَابَ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الوَفاءِ والحَمْدِ، اللَّهُمَّ فاغفِرْ لهُ وَارْحَمْهُ، إنكَ أَنْتَ الغَفُور الرَّحيمُ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলা-নাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা অহাবলি জিওয়ারিক, ফাক্বিহী ফিতনাতাল ক্বাবরি অ আযা-বান্নার, অ আন্তা আহলুল অফা-ই অলহাক্ক, ফাগফির লাহু অরহামহু ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহীম।

“হে আল্লাহ! নিশ্চয় অমুকের পুত্র অমুককে তোমার যিম্মায় এবং তোমার প্রতিবেশীর বন্ধনে (তোমারই কাছে সোপর্দ করা হলো)।অতএব, ওকে তুমি কবর ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। তুমি বিশ্বাস ও ন্যায়ের পাত্র। সুতরাং, তাকে তুমি মাফ করে দাও এবং তার প্রতি তুমি দয়া কর।নিঃসন্দেহে তুমি মহাক্ষমাশীল অতীব দয়াবান।” (ইবনে মাজাহ- ১/২৫১)

জানাযার দু'আ-৪

اللهم عبدك وابن امتك احتاج الى رحمتك وأنت غني عن عذابه إن كان محسنا فزد في حسناته وإن كان مسيئا فتجاوز عنه

উচ্চারণঃ- “আল্লা-হুম্মা আবদুকা অবনু আমাতিকাহতাজা ইলা রাহমাতিক, অআন্তা গানিইয়্যুন আন আযা-বিহ, ইন কা-না মুহসিনান ফাযিদ ফী হাসানা-তিহ, অইন কা-না মুসীআন ফাতাজা-অয আহ। ”

“হে আল্লাহ! তোমার (এই) বান্দা এবং তোমার (এই) বান্দীর পুত্র তোমার রহমতের মুখাপেক্ষী এবং তুমি ওকে আযাব দিতেই হবে এমনটি নয়। যদি সে নেক বান্দা হয় তবে তার নেকী আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যদি সে গুনাহগার হয় তবে তাকে ক্ষমা করে দাও।” (হাকেম- ১/৩৫৯)