নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ভোর রাতের অন্ধকারে যুদ্ধ শুরু : মুসলিম বাহিনীর বিপর্যয় (بدء القتال فى غلس الصبح وتشتت الجيش الإسلامى)

ভোর রাতের অন্ধকারে মুসলিম বাহিনী হোনায়েন পৌঁছল। শত্রুপক্ষের ছাক্বীফ ও হাওয়াযেন গোত্রের দক্ষ তীরন্দাযরা সেখানে আগেই ওঁৎ পেতে ছিল। তারা গিরিসংকটের সংকীর্ণ পথে মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী দলকে নাগালের মধ্যে পাওয়া মাত্রই চারদিক থেকে তীরবৃষ্টি শুরু করে দিল। তাদের এ আকস্মিক হামলায় মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। সবাই দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে ছুটতে লাগল। বিভিন্ন বর্ণনা মোতাবেক এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলেন ৪, ৯, ১০, ১২, ৮০ অথবা সর্বোচ্চ ১০০ জন লোক’ (ফাৎহুল বারী হা/৪৩১৫-এর আলোচনা)। হ’তে পারে শুরুতে ৪জন এবং পরে সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) মুসলিম বাহিনীর ডান দিকে অবস্থান করছিলেন। এ সময় হাওয়াযেন বাহিনীর সম্মুখভাগে কালো পতাকাবাহী জনৈক সুসজ্জিত ব্যক্তি লাল উটে সওয়ার হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। সে যাকেই পাচ্ছিল তাকেই মেরে দিচ্ছিল। হযরত আলী ও একজন আনছার ছাহাবী তাকে টার্গেট করেন। অতঃপর তার উটের পিছন পায়ের হাঁটুর স্থানে আঘাত করেন। তাতে লোকটি পিছন দিকে পড়ে যায়। অতঃপর আনছার ব্যক্তি তার পায়ের নলায় আঘাত করলে তা দু’টুকরা হয়ে পতিত হয়। তারপর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অবশেষে পরাজয় এসে যায়।[1] এ সময় ছাফওয়ান বিন উমাইয়ার বৈপিত্রেয় সহোদর ভাই কালাদাহ বিন হাম্বল বলল,أَلاَ بَطَلَ السِّحْرُ الْيَوْمَ ‘দেখ জাদু আজ ব্যর্থ হয়ে গেল’। একথা শুনে ছাফওয়ান বললেন, যিনি তখনও মুশরিক ছিলেন, চুপ কর, আল্লাহ তোমার চেহারাকে বিকৃত করুন! আল্লাহর কসম! কুরায়েশ-এর কোন ব্যক্তি আমার নিকটবর্তী হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয় হাওয়াযেন-এর কোন ব্যক্তি আমার নিকটবর্তী হওয়ার চাইতে’।[2] পালানোর এ দৃশ্য দেখে কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারব, যিনি মাত্র ২০ দিন আগে মুসলমান হয়েছেন, তিনি বলে ওঠেন,لاَ تَنْتَهِي هَزِيمَتُهُمْ دُونَ الْبَحْرِ ‘সাগরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এদের পালানোর গতি শেষ হবে না’।[3]

এভাবে প্রথম ধাক্কাতেই এদের ঈমান ভঙ্গুর হয়ে গেল এবং পূর্বের কুফরীতে ফিরে যাবার উপক্রম হ’ল। যারা মূলতঃ গণীমত লাভের উদ্দেশ্যে এই যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। ঈমানের স্বাদ এবং আল্লাহর পথে জিহাদের মহববত তাদের অন্তরে তখনও প্রবিষ্ট হয়নি। মুসলিম বাহিনী শেষ পর্যন্ত পরাজিত হ’লে হয়তোবা তারা পুনরায় কুফরীতে ফিরে যেতেন।

[1]. ইবনু হিশাম ২/৪৪৫, সনদ ছহীহ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৭৫১)।

[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৭৭৪, সনদ হাসান; ইবনু হিশাম ২/৪৪৪; মুহাক্কিক এটি ধরেননি।

[3]. আবু জা‘ফর আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আত্ব-ত্বাহাবী আল-মিছরী (২৩৯-৩২১ হি.), মুশকিলুল আছার হা/২১৫৭; ইবনু হিশাম ২/৪৪৩; মুহাক্কিক এটি ধরেননি।