নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

এ সময় নিজেদের সৈন্যসংখ্যা বেশী দেখে কেউ কেউ বলে উঠেন,لَنْ نُغْلَبَ الْيَوْمَ مِنْ قِلَّةٍ ‘শত্রু সংখ্যা কম হওয়ার কারণে আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। ইবনু ইসহাক বলেন, এরা ছিল নওমুসলিম বনু বকরের কোন কোন ব্যক্তি।[1] মাত্র ১৯ দিন পূর্বে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হওয়া এই সব ব্যক্তিগণ ইতিহাসে ‘তুলাক্বা’ (الطُّلَقاءُ) বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল নামে খ্যাত (যাদুল মা‘আদ ৫/৫৯)। উক্ত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক স্থানে এবং হোনায়েন-এর দিনে। যেদিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বিত করেছিল। অথচ তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। ফলে যমীন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য তা সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে’ (তওবা ৯/২৫)

ছুহায়েব রূমী (রাঃ) বলেন, হোনায়েনের দিন ফজরের ছালাতের পর রাসূল (ছাঃ) বারবার ঠোট নাড়াতে থাকেন। এরূপ আমরা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। তখন আমরা তাঁকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বে একজন নবী ছিলেন, যিনি তাঁর উম্মতের আধিক্য দেখে গর্বিত হন এবং বলেন, لَنْ يَرُومَ هَؤُلاَءِ شَىْءٌ ‘এদের উপর কেউ কখনো বিজয়ের আশা করবে না’। তখন আল্লাহ তাঁর উপর অহী নাযিল করে বললেন, তোমার উম্মতকে তিনটির যেকোন একটির ব্যাপারে এখতিয়ার দেওয়া হ’ল। তাদের উপরে শত্রুদের চাপিয়ে দেওয়া হবে। যারা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবে। অথবা ক্ষুধা চাপিয়ে দেওয়া হবে। অথবা মৃত্যু পাঠানো হবে’। তখন উক্ত নবী তাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তারা বলল, শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অতঃপর ক্ষুধার উপর ধৈর্য্য ধারণের শক্তি আমাদের নেই। অতএব মৃত্যুই উত্তম’। তখন আল্লাহ তাদের উপর মৃত্যু প্রেরণ করেন। তাতে তিন দিনে ৭০ হাযার উম্মত মারা যায়। এ ঘটনা বলার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি এখন আমাদের সংখ্যাধিক্য দেখে বলব,اللَّهُمَّ بِكَ أُحَاوِلُ وَبِكَ أُصَاوِلُ وَبِكَ أُقَاتِلُ ‘হে আল্লাহ! তোমার মাধ্যমে আমি কৌশল করি, তোমার মাধ্যমে আমি হামলা করি এবং তোমার মাধ্যমেই আমি যুদ্ধ করি’ (আহমাদ হা/১৮৯৬০, সনদ ছহীহ)

নিঃসন্দেহে আল্লাহর সাহায্য তখনই নেমে আসে, যখন বান্দা তার শর্ত পূরণ করে। আর তা হ’ল, আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা গুলিকে দৃঢ় করবেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৭)। আর আল্লাহকে সাহায্য করা অর্থ হ’ল, যাবতীয় বস্ত্তগত প্রস্ত্ততিসহ আল্লাহর উপরে খালেছ তাওয়াক্কুল করা। হোনায়েন যুদ্ধে বস্ত্তগত প্রস্ত্ততি পূর্ণ মাত্রায় থাকলেও অনেকের মধ্যে খালেছ তাওয়াক্কুলের অভাব ছিল বলেই যুদ্ধের প্রথম দিকে বিপর্যয় নেমে আসে। অতঃপর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঈমানের দৃঢ়তা ফিরে আসে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় নেমে আসে।

আনাস (রাঃ) বলেন, كَانَ مِنْ دُعَاءِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ- اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ أَنْ لاَ تُعْبَدَ بَعْدَ الْيَوْمِ ‘হোনায়েনের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম প্রার্থনা ছিল, হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও, তাহ’লে আজকের দিনের পর তোমার ইবাদত করার আর কেউ থাকবে না’ (আহমাদ হা/১২২৪২, সনদ ছহীহ)

[1]. ইবনু হিশাম ২/৪৪৪। বর্ণনাটির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৭৪৯)।