সালাফিয়াতের অনুসরণ করা ও তার সাথে সম্বন্ধ জোড়ার বিধান

এ ব্যাপারে বলি, প্রত্যেক মুসলিম ফরয-নফল নামাযের সময় কিবলার দিকে মুখ করে থাকে। আর নিশ্চয় তাতে জরুরী ভিত্তিতে সূরা ফাতেহা পাঠ করে থাকে। যেহেতু এটা হল নামাযের অন্যতম রুকন (স্তম্ভ)। তাতে রয়েছে মহান আল্লাহর বাণী,

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

“আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।”

অর্থাৎ, নামাযী আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে থাকে, তিনি যেন তাকে সরল পথ প্রদর্শন করেন। কিন্তু কী সে সরল পথ, যা আমরা আল্লাহর নিকট তার প্রাপ্তি কামনা করি?

উত্তরঃ এর অর্থে আহলুল ইলমগণের বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি। আপনার জন্য ইমাম আবুল আলিয়াহ আর-রিয়াহী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সারসংক্ষেপ পেশ করেছেন।

ইমাম ইবনে জারীর তার তফসীর গ্রন্থে হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন, হামযাহ বিন মুগীরাহ বলেছেন, একদা আমি আবুল আলিয়াহকে মহান আল্লাহ বাণী, (اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ) “আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।” এর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, ‘(সরল পথ হল) রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তার পরে তার দুই সাহাবী আবু বাকর ও উমার।

অতঃপর আমি হাসানের নিকট এসে এ কথা বলে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার মত কী?' তিনি বললেন, 'সত্য বলেছেন ও উপদেশ দিয়েছেন।

(প্রিয় পাঠক!) আপনি কি চান, আল্লাহ আপনাকে সরল পথ দেখান? তাহলে রাসুলুল্লাহ -এর সুন্নাহ এবং তাঁর সাহাবাগণের সুন্নাহ অবলম্বন করুন। তার সাহাবাগণের তরীকায় চলুন। যাদের মস্তকে রয়েছেন খুলাফায়ে রাশেদীন এবং তাদের মস্তকে রয়েছেন আবু বাকর ও উমার।

ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থ ‘যামুত তাবীল’ (৩৮পৃঃ)তে বলেন, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তাঁর পথে চলমান ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহর সরল পথে চলমান হবে। তাই আমাদের জন্য আবশ্যক, তার অনুসরণ করা। সেখানে থামা, যেখানে তিনি থেমেছেন। সেই বিষয়ে নীরব থাকা, যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন।

শায়খুল ইসলাম ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বাদাইউল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে (২/৪০এ) বলেন, ‘বিশ নং মাসআলাহঃ স্বিরাতে মুস্তাকীম (সরল পথ) কী? আমরা এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করব। যেহেতু এ ব্যাপারে লোকেদের বক্তব্য ভিন্ন-ভিন্ন। আর তার প্রকৃতত্ব একটি জিনিস, আর তা হলঃ

আল্লাহর পথ, যা তিনি রসূলগণ প্রমুখাৎ নিজ বান্দাদের জন্য স্থাপন করেছেন। সেই পথকে তিনি বান্দাদের জন্য নিজের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথ করেছেন। সুতরাং সেই পথ ছাড়া তাঁর কাছে পৌছনোর। কোন ভিন্ন পথ নেই। বরং সেই পথ ছাড়া সকল পথ বন্ধ।[১]

আর তা হল একমাত্র তারই ইবাদত করা এবং একমাত্র তার রসূলেরই অনুসরণ করা। সুতরাং তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না এবং তাঁর রসূলের অনুসরণে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। বলা বাহুল্য, খাটিভাবে তওহীদ অবলম্বন করতে হবে এবং খাটিভাবে রসূল (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে।

সংক্ষেপে উল্লিখিত বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রশ্ন হল, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবাগণের পথ অবলম্বন করার বিধান কী? উত্তর হল, ওয়াজেব, অপরিহার্য। এ বিধানের ভূরিভূরি দলীল-প্রমাণ কিতাব ও সুন্নাহতে রয়েছে, প্রণিধান করলে (প্রাপ্ত হবেন)। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) তার অনন্য গ্রন্থ (ই’লামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/ ১২৩-১৫৯)এ সলফ ও সাহাবাগণের অনুসরণ ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে একটি উপকারী অধ্যায় উল্লেখ করেছেন। আমরা (সেখান হতে পাঠকের খিদমতে) কিছু দলীল পেশ করব। একঃমহান আল্লাহ বলেছেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

“তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার অংশী (শির্ক) করতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না, তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস কর এবং যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর, অতঃপর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করব।” (লুকমানঃ ১৫)

দলীল গ্রহণের পদ্ধতিঃ

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[২] এ হল সূক্ষ্ম ফিকহ (সমঝ), যা ধৈর্যশীলগণ ব্যতীত অন্য কেউ প্রাপ্ত হন না। তিনি বলেছেন, 'সমস্ত সাহাবাগণই মহান আল্লাহর অভিমুখী ছিলেন। তাই তাদের পথ অবলম্বন করা ওয়াজেব। আর তাঁদের উক্তি, কর্ম এবং বিশ্বাস তাদের বৃহত্তম পথেরই অন্তর্ভুক্ত।

আর তারা যে আল্লাহ-অভিমুখী, তার প্রমাণ হল, মহান আল্লাহ তাদেরকে ইসলামের জন্য হিদায়াত করেছেন। পরন্ত তিনি বলেছেন,

وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ

“যে তার অভিমুখী হয়, তাকে তিনি হিদায়াত করেন।” (শূরাঃ ১৩)

দুইঃ মহান আল্লাহর বাণী,

قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

“তুমি বল, এটাই আমার পথ। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে আমি এবং আমার অনুসারিগণও। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (ইউসুফঃ ১০৮)

দলীল গ্রহণের পদ্ধতিঃ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[৩] আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা অবহিত করেছেন যে, যে ব্যক্তি রসূল (সা.)-এর অনুসরণ করেছে, সে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে সজ্ঞানে দাওয়াত দেয়, তার অনুসরণ করা ওয়াজেব। হয়ে যায়। যেহেতু মহান আল্লাহ জ্বিনদের কথা উদ্ধৃত করেছেন এবং তা পছন্দ করেছেন, সেখানে তিনি বলেছেন,

يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ

“হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।” (আহকাফঃ ৩১)।

আর যেহেতু যে ব্যক্তি সজ্ঞানে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহন। করে, সে আসলে হক জেনে তার দিকে আহ্বান করে। আর আল্লাহর আহকামের দিকে আহ্বান করাই হল আল্লাহর দিকে আহ্বান করা।

যেহেতু তা হল তিনি যা আদেশ ও নিষেধ করেছেন, তাতে তার আনুগত্য করার দিকে আহান। তাহলে সাহাবাগণ রসূল (সা.)-এর অনুসরণ করেছেন। তাই তারা যখন আল্লাহর দিকে আহান করবেন, তাদের অনুসরণ করা ওয়াজেব হবে।”

তিনঃ মহান আল্লাহর বাণী,

وَمَن يَعْتَصِم بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

“যে আল্লাহকে অবলম্বন করবে, সে অবশ্যই সরল পথ পাবে।” (আলে ইমরানঃ ১০১)।

দলীল গ্রহণের পদ্ধতিঃ

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[৪] উক্ত আয়াত থেকে দলীল এইভাবে গ্রহণ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাকে অবলম্বনকারীদের ব্যাপারে খবর দিয়েছেন যে, তারা হকপথ প্রাপ্ত। সুতরাং আমরা বলি, সাহাবা গণ আল্লাহকে অবলম্বনকারী, বিধায় তারা সরল পথপ্রাপ্ত। অতএব তাদের অনুসরণ করা ওয়াজেব।”

চারঃ মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

“আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুমিনদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!” (নিসাঃ ১১৫)

দলীল গ্রহণের পদ্ধতিঃ

ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[৫] সুতরাং যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, সে আখেরাতে সলফগণের সাথী হবে এবং তারা যে জান্নাত ও সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি সেও লাভ করবে, তার উচিত, সরল মনে তাদের অনুসরণ করা। পক্ষান্তরে যে। ব্যক্তি তাদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি মহান। আল্লাহর উক্ত বাণীর ব্যাপকতায় প্রবেশ করবে। অতঃপর তিনি সরা নিসার এই আয়াত উল্লেখ করেছেন।

তিনি উক্ত গ্রন্থের একটি অধ্যায়ে বলেছেন, দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সলফের অনুসরণ করা ওয়াজেব, তার বর্ণনা। তাঁদের মযহাব অবলম্বন করা এবং তাঁদের পথের পথিক হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ। কিতাব, সুন্নাহ ও ইমামগণের উক্তি থেকে তার বিবরণ।”[৬]

অতঃপর উক্ত অধ্যায়ে দলীল উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘কিতাব থেকে দলীল হল--- তারপর তিনি সূরা নিসার উক্ত আয়াত উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, সুতরাং তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির হুমকি দিয়েছেন, যারা তাদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। পক্ষান্তরে তাঁদের অনুসারীদেরকে তিনি সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

“আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য এমন। উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, এ হল বিরাট সফলতা।” (তাওবাহঃ ১০০)।

বলা বাহুল্য, নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারীদেরকে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে প্রতিশ্রুতি তিনি তাদেরকে দিয়েছেন, আর তা হল তার সন্তুষ্টি, তার জান্নাত ও মহা সাফল্য।

পাঁচঃ ইরবায বিন সারিয়াহর প্রসিদ্ধ হাদীসে নবী (সা.)-এর বাণী,

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

“সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।”

হাদীসটিকে সুনান-প্রণেতাগণ বর্ণনা করেছেন। আর সেটা সহীহ হাদীস।[৭]

দলীল গ্রহণের পদ্ধতিঃ

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[৮] ‘সুতরাং [নবী (সা.)] নিজের সুন্নাহর সাথে তাঁর খলীফাগণের সুন্নাহকে সংযুক্ত করেছেন। এবং তার অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন; যেমন নিজের সুন্নাহকে অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। পরন্তু তার অনুসরণ করার ব্যাপারে। অধিক তাকীদ করেছেন। এমনকি তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাদের সুন্নাহ বলতে তাদের দেওয়া ফতোয়া এবং উম্মতের জন্য তাঁদের চালুকৃত রীতিও শামিল।

ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[৯] ‘সুতরাং তিনি তাঁর খলীফাগণের সুন্নাহকে ধারণ করার আদেশ দিয়েছেন, যেমন নিজের সুন্নাহকে ধারণ করার আদেশ দিয়েছেন। সেই সাথে অবহিত করেছেন যে, নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ বিদআত ও ভ্রষ্টতা। আর তা হল সেই কর্ম, যাতে না রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করা হয়েছে, আর না-ই তাঁর সাহাবাগণের সুন্নাহর অনুসরণ করা হয়েছে।

আলোচ্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্ধৃতি

একঃ ইমাম উষমান বিন সাঈদ দারেমী তার বিশাল কিতাব আররাদু আলাল জাহমিয়্যাহ’ (২০৯-২১০নং, ১০৬-১০৭পৃঃ)তে মহান আল্লাহর দর্শন সম্বন্ধে জাহমীদের উক্তি আমরা এই আষার (সাহাবীর উক্তি ও আমল) গ্রহণ করি না এবং তা দলীলও মনে করি না’---এর খন্ডন করতে গিয়ে বলেছেন, আমি বললাম, ঠিক আছে, আর। আল্লাহর কিতাবও গ্রহণ করো না। কী মনে কর তোমরা, যদি তোমরা আষার গ্রহণ না কর? তোমরা কি সন্দেহ কর যে, তা সলফ থেকে বর্ণিত, তাদের নিকট থেকে আগত, তাদের মাঝে বহুল প্রচলিত, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা তাদের উলামা ও ফুকাহার নিকট থেকে উত্তরাধিকারী হয়ে আসছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। আমরা বললাম, যথেষ্ট। তোমাদের স্বীকারোক্তি যে, সে আষারসমূহ প্রসিদ্ধ ও বর্ণিত, যা উলামা ও ফুক্বাহাগণ গ্রহণ করেছেন। এটা তোমাদের বিপক্ষে প্রমাণ, যা আমাদের উক্ত দাবীর সপক্ষে প্রমাণ। সুতরাং তোমরা তাদের নিকট থেকে তোমাদের দাবীর সপক্ষে অনুরূপ প্রমাণ উপস্থিত কর, যার মাধ্যমে তোমরা সমস্ত আষারকে মিথ্যাজ্ঞান করছ।

তোমরা এ ব্যাপারে কোন খবর বা আষার উপস্থিত করতে সক্ষম হবে না। অথচ তোমরা---ইন শাআল্লাহ---অবশ্যই জেনেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবাগণের সুন্নাহসমূহ, তাদের ফায়সালামীমাংসা ও বিচারাদি এই আষার ও সনদসমূহ ছাড়া প্রাপ্তিলাভ হবে। যদিও তাতে মতবিরোধ বর্তমান। আষারই হল সুন্নাহ লাভের উপায়। এটাই হল সেই পদ্ধতি, যা মুসলিমরা মান্য করে চলেছে। তা হল তাদের দ্বীনে মহান আল্লাহর কিতাবের পর তাদের ইমাম। সেখান । হতেই তারা ইলম উদ্ধৃত করে, তার সাহায্যেই বিচার-ফায়সালা করে, তারই মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠিত থাকে, তারই উপরে তারা নির্ভর করে, তা দিয়েই তারা সৌন্দর্যমন্ডিত হয়, তাদের দ্বিতীয়জন প্রথমজনের নিকট থেকে তার উত্তরাধিকারী হয়, তাদের উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে তা পৌঁছে দেয়, তা তারা প্রমাণ রূপে ব্যবহার করে, তা শ্রোতার কাছে পৌছে দেওয়ার মাঝে সওয়াব কামনা করে, তারা তার। নাম দেয়, সুনান ও আষার, ফিকহ ও ইলম।

তার সন্ধানে তারা পৃথিবীর প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সফর করে, তারই মাধ্যমে তারা আল্লাহর হালালকে হালাল এবং তার হারামকে হারাম গণ্য করে। তারই মাধ্যমে হক ও বাতিল এবং সুন্নাত ও বিদআতের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করে। কুরআনের তফসীর, তার অর্থ ও আহকাম প্রমাণে তাকে দলীলরূপে ব্যবহার করে। তারই মাধ্যমে হিদায়াত থেকে ভ্রষ্ট ব্যক্তির ভ্রষ্টতা জানতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি তা হতে বিমুখ হয়, সে আসলে সলফের কথা, কর্ম ও আদর্শ থেকে বিমুখ হয় এবং তাদের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ করে। যার ফলে নিজের খেয়াল-খুশীকে তার দ্বীনরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহর কিতাবকে নিজ রায় দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্যের বিপরীত অর্থে গ্রহণ করে।

সুতরাং যদি তোমরা মুমিনদের দলভুক্ত হও এবং তাদের সলফদের মতাদর্শের অনুসারী হও, তাহলে ইলমকে তাদের আষার থেকে গ্রহণ কর। তার পথে হিদায়াত গ্রহণ কর। আর এই আষারসমূহকে ইমামরূপে মানতে সন্তুষ্ট হও, যেমন জাতি তাকে নিজেদের জন্য ইমামরূপে মানতে সন্তুষ্ট। শপথ করে বলছি, আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে তোমরা তাদের থেকে বেশি জ্ঞান রাখো না, তাদের মতো সমান জ্ঞানও নেই তোমাদের। আর বর্ণিত আষারসমূহের অনুসরণ ব্যতীত তাদের অনুগমন অসম্ভব। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করবে না, সে ব্যক্তি আসলে মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করতে চায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

“যে ব্যক্তি ---- মুমিনদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!” (নিসাঃ ১১৫)

দুইঃ ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তার গ্রন্থ 'যাহ্মত তা’বীল’ (৩৩পৃঃ)তে বলেন, ‘সলফ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম)দের অনুসরণ করা যে ওয়াজেব, তা কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমার দলীলে প্রমাণিত। যুক্তিও তাই নির্দেশ করে। যেহেতু সলফগণ হয় সঠিক হবেন, না হয় বেঠিক হবেন। এ দুয়ের অন্যথা নয়। সুতরাং তারা। সঠিক হলে তাদের অনুসরণ ওয়াজেব। কারণ সঠিকতার অনুসরণ করা ওয়াজেব এবং আকীদা ও বিশ্বাসে ভুলে পড়া হারাম।

পক্ষান্তরে যদি তারা সঠিক হন, তাহলে তারাই হলেন ‘সিরাত্বে মুস্তাক্বীম (সরল পথের) অনুসারী এবং তাঁদের বিরুদ্ধাচরণকারী ‘স্বিরাত্বে জাহীম (জাহান্নামের পথের) দিকে পরিচালক শয়তানের পথের অনুসারী। অথচ আল্লাহ তার পথকেই অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন এবং তা ছাড়া অন্য পথের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,

وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

“নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেন তোমরা সাবধান হও।” (আনআমঃ ১৫৩)

পরন্তু যদি কোন ধারণাকারী এই ধারণা করে যে, তারা বেঠিক, তাহলে সে গোটা ইসলামের সত্যতায় আঘাতকারী হবে। যেহেতু যদি এ ব্যাপারে তাদের ভুল করা সম্ভাব্য হয়, তাহলে এ ছাড়া গোটা ইসলামের অন্য বিষয়েও তাদের ভুল সম্ভাব্য হয়ে যাবে। আর তখন উচিত হবে, তারা যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তা বর্ণনা না করা, তাঁরা নবী -এর যে মু'জেযাসমূহ বর্ণনা করেছেন, তা প্রামাণ্য ধারণা না করা। তা হলে তো বর্ণনাই বাতিল হয়ে যাবে এবং শরীয়তও লয়প্রাপ্ত হবে! আর কোন মুসলিমের জন্য এমন কথা বলা ও বিশ্বাস করা বৈধ নয়। যেমনটি বলেছি, দলীল আছে ভূরিভূরি।

[১]. সেই পথ ছাড়া অন্য কোন পথই তার কাছে পৌছেনি। যেহেতু এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দু পর্যন্ত কেবল একটাই সরল রেখা টানা সম্ভব।---অনুবাদক)

[২]. ই’লামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/ ১৩০

[৩]. ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/ ১৩০-১৩১

[৪]. ই’লামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/ ১৩৪

[৫]. যাম্মুত তাবীল’ ৭পৃঃ

[৬]. যাম্মুত তাবীল’ ২৬পৃঃ

[৭]. আবু দাউদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২-৪৩নং, আহমাদ ৪/১২৬, ইবনে হিব্বান (ইহসান) ৫নং প্রমুখ, তিরমিযী বলেছেন, 'হাসান সহীহ। ইবনে হিব্বান ‘সহীহ বলেছেন। আবু নুআইম বলেছেন, 'শামী। বর্ণনাকারীদের সহীহর অন্তর্ভুক্ত উত্তম হাদীস।” (জামিউল উলুমি ওয়াল-হিকাম ২/৪১০৯) আলবানী সহীহ বলেছেন। দ্রঃ মিশকাত ১৬৫, ইরওয়া ২৪৫৫নং

[৮]. ই’লামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/ ১৪০

[৯]. যাম্মুত তাবীল’ ২৬পৃঃ

প্রিয় পাঠক! আল্লাহ আপনাকে তওফীক দিন। জানলেন যে, বিগত সলফ তথা মুমিনদের পথ অনুসরণ করা ওয়াজেব। আর এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়া (এবং নিজেকে ‘সালাফী’ বলা) আপনার জন্য মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[১] যে ব্যক্তি সলফের মযহাব প্রকাশ করে, তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়ে এবং তাদের প্রতি সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তাতে তার কোন দোষ হয় না। বরং তার নিকট থেকে সেটা গ্রহণ করা ওয়াজেব। যেহেতু সলফের মযহাব হক বৈ নয়।

সুপ্রিয় পাঠক! আপনি যদি ইমামগণের উপদেশ-অনুদেশাবলী নিয়ে ভেবে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন, তারা সলফে সালেহর পথ অবলম্বন ও অনুসরণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিছু উপদেশ নিম্নরূপঃ

১। শামবাসীদের ইমাম, ইমাম আওযায়ী বলেছেন, সুন্নাহর উপর নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখো। (সলফ) গোষ্ঠী যেখানে থেমেছেন, সেখানে থেমে যাও। তুমি তাই বল, যা তারা বলেছেন। তুমি সেই জিনিস থেকে নিজেকে বিরত রাখো, যে জিনিস থেকে তারা নিজেদেরকে বিরত রেখেছেন। তুমি তোমার সলফে সালেহর পথের পথিক হও। যেহেতু তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, যেমন তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।[২]

২। তিনি আরো বলেছেন, 'তুমি সলফদের আষার অবলম্বন করে। থেকো, যদিও লোকেরা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। আর ব্যক্তিগত রায়সমূহ থেকে দূরে থেকো, যদিও তোমার জন্য উক্তিকে সুশোভিত করা হয়। যেহেতু বিষয় যখন স্পষ্ট হওয়ার তখন স্পষ্ট হবে। আর সে। বিষয়ে তখন তুমি সরল পথে চলমান থাকবে। [৩]

৩। ইমাম ইসমাঈল স্বাবুনী বলেছেন, '(আসহাবুল হাদীস) নবী - এর অনুসরণ করে এবং তার সাহাবাবর্গের অনুগমন করে, যারা তারকারাজির মতো।---তারা সলফে সালেহীনের অনুগামী দ্বীনের ইমামগণ ও মুসলিমদের উলামাগণের অনুসরণ করে এবং সেই সুদৃঢ় দ্বীন ও স্পষ্ট হক মজবুত সহকারে ধারণ করে, যা তারা মজবুত সহকারে ধারণ করে ছিলেন।[৪]

৪। ইমাম বার্বাহারী বলেন, “যে ভিত্তির উপর জামাআতের প্রতিষ্ঠা, তা হল মুহাম্মাদ -এর সাহাবাগণ। তারাই হলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের নিকট থেকে (ইলম) গ্রহণ করবে না, সে ভ্রষ্ট হয়ে যাবে, সে বিদআত করবে। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।[৫]

এ মর্মে আমাদের শায়খ আল্লামা যায়দ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহু ওয়া রাআ’হ)র একটি সুন্দর ও শক্তিশালী উক্তি উদ্ধৃত করে ইতি টানব। উক্তিটি আসলে একজনের সুদীর্ঘ প্রশ্নের উত্তরে কথিত। তার প্রশ্নের প্রথমাংশে বলা হয়েছে, কিছু লোকে বলে, কেন আমরা “সালাফী” উপাধি গ্রহণ করব? কেন রাসূল (মুহাম্মাদ) (সা.) এর দিকে সম্পর্ক জুড়ে “মুহাম্মাদী” বলা হবে না?

এ প্রশ্নের উত্তরে হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন, আমরা তাকে বলব, যে ব্যক্তি সলফে সালেহর মযহাব প্রকাশ করে এবং তার দিকে সম্পর্ক জুড়ে (নিজেকে সালাফী বলে), তার বিরুদ্ধে তোমার আপত্তি তোলা অন্যায়। এই আপত্তিতে তোমার উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ হল, হয় তোমার বীভৎস অজ্ঞতা। সঠিক সালাফিয়াত ও সালাফী, কিতাব ও সুন্নাহর ধারক ও বাহক, যারা নবী (সা.)-এর সাহাবা এবং যারা তাদের পথের পথিক, ইলম ও দাওয়াতের ইমাম, যারা শ্রেষ্ঠ শতাব্দীগুলিতে জীবনধারণ করেছেন এবং যাদের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমার অজ্ঞতা।

আর তা না হয় তুমি দ্বীন শিক্ষার্থীদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করতে চাইছ। যে, সালাফিয়াত একটি দল বা সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা হল মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব। সুতরাং তার থেকে দুরে থাকতে হবে এবং তার সাথে সম্পর্ক জোড়া বৈধ নয়। সত্য এই যে, যে ব্যক্তি সালাফ বা সালাফিয়াতের দিকে নিজের সম্পর্ক জোড়ে, তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা কারো জন্য বৈধ নয়। অতএব যে বলবে, আমি সালাফী এবং আমার আকীদাহ সালাফিয়াহ’, তার নিন্দা করা ঠিক নয়। বরং রাব্বানী উলামা ও তাদের ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ মতানুসারে তার নিকট থেকে তা গ্রহণ করা (মেনে নেওয়া) ওয়াজেব। আর তা এই কারণে যে, সলফদের মযহাব হক বৈ নয়। আর সালাফ শব্দের প্রতি সম্বদ্ধ সালাফিয়াত’ এমন নামকরণ, যা মুসলিম উম্মাহ থেকে ক্ষণকালের জন্যও বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। বরং সালাফিয়াত হল মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ। এর বিপরীত হল, বিদআতী সংগঠনসমূহের সাথে সম্পর্ক জোড়া; যেমন ইখওয়ানী দল ও তবলীগী ফিকাহ এবং তাদের সমর্থক দল। যাদের (পরিচিতি) ও মতাদর্শের বিবরণ পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

বাকী থাকল সালাফী আকীদাহ ও তাতে বিশ্বাসী সালাফীগণের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপনকারীর উক্তি, মুহাম্মাদী’ বলা হয় না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, এ হল তার পক্ষ থেকে মানুষের মাঝে সংশয় সৃষ্টি ও গোলমাল পাকানোর অপচেষ্টা, যা পূর্বোক্ত আপত্তির শ্রেণীভুক্ত। যেহেতু উম্মাহর সকলের জন্য বলা হয়, “উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যাহ”। অর্থাৎ, মুহাম্মাদ তার নবী। সে উম্মত আবার দুই ভাগে বিভক্ত; (এক) উম্মতে দাওয়াহ (যাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি)। (দুই) উম্মতে ইজাবাহ (যাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, আর তারা তা গ্রহণ করেছে)।

এই উম্মতে ইজাবাহ আবার ৭৩ দলে বিভক্ত। যাদের একটি দল ছাড়া বাকীরা জাহান্নামী। আর সে দলটি হল, যেটি সেই মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত, যার উপর নবী করীম ও তার সাহাবাগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বলা বাহুল্য, নবী (সা.)-এর সাহাবাগণই হলেন সলফ। অতঃপর তাদের পর যারা এসেছেন, তাদের তরীকা অবলম্বন করেছেন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন, তাদেরকেও তাদের সাথে মিলিত করা হবে এবং বলা হবে, তারা সালাফী এবং তাদের আকীদাহ সালাফিয়্যাহ।[৬]

অবশেষে হে প্রিয়! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি সুন্নাহর কিতাবসমূহ অধ্যয়ন কর। তাতে তুমি অগণিত সংখ্যক স্পষ্ট উক্তি প্রাপ্ত হবে, যা তোমাকে সেই অসিয়তের ব্যাপারে স্থির-নিশ্চিত করবে, যা আমি সলফের পথ অবলম্বন করা এবং তা হতে দূরে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করার লক্ষ্যে উল্লেখ করেছি। আর আল্লাহই তওফীকদাতা।

[১]. মাজমুউ ফাতাওয়া ৪/ ১৪৯

[২]. আশ-শারীআহ, আজুরী ৫৮পৃঃ প্রমুখ।

[৩]. ঐ, আরো দ্রঃ শারাফু আসহাবিল হাদীস, খাত্বীব ৭পৃঃ সহীহ

[৪]. আক্বীদাতুস সালাফ আসহাবিল হাদীস ৮২পৃঃ

[৫]. শারহুস সুন্নাহ ৬৫পৃঃ

[৬]. আল-আজবিবাতুল আযারিয়্যাহ আনিল মাসাইলিল মানহাজিয়্যাহ ৭৭৭৯পৃঃ
[৫].
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে