অমূলক বিশ্বাস ও কুধারণার বিদআত যেমন, কোন বিশিষ্ট (যা শরীয়ত কর্তৃক নির্দেশিত নয় এমন) মাস, দিন, ক্ষণ বা স্থানে অযথা শুভাশভ আশা ও ধারণা রাখা। যেমন, অমাবশ্যায় অমুক হয়, রবিবারে বাঁশ কাটতে নেই জ্বর হয়। বৃহস্পতিবার অমুক করতে হয় বা তার বিকাল ও সন্ধ্যা অশুভ। অমুক মাসে বিয়ে নেই। মলমাসে কোন শুভ কাজ নেই। অমুক দিনে যাত্রা নেই ইত্যাদি মনে করা।

অমুকের মুখ, খালি কলসী, কালি হাঁড়ি বা অন্য কিছু দেখে, কারো নাম, কাক, কুকুর বা অন্য প্রাণীর ডাক শুনে অমঙ্গলের আশঙ্কা করা। পিছু ডাকলে, ডাইনের শিয়াল বয়ে গেলে যাত্রা অশুভ হয় অথবা কাজ সফল হয় না মনে করা। অমুক জিনিস রাত্রে বা সকালে বের করতে বা দিতে বা বেচতে নেই ইত্যাদি ভাবা। কোন রাশিচক্রকে মঙ্গলামঙ্গল বা বৃষ্টি-অনাবৃষ্টির কারণ ভাবা।

আরো হাস্যকর অসার (মেয়েলি) বিশ্বাস যেমন, কাস্তে দ্বারা মাটিতে আঁক দিলে দেনা হয়। শিশুর কান মললে তার হায়াত কমে যায়। শরকাঠি বা বাম হাত দ্বারা আঘাত করলে (আঘাত প্রাপ্ত শিশু) কৃশ হয়ে (শুকিয়ে) যায়। কোমরে পা ঠেকলে ব্যথা হয়। বালিশে পা পড়লে ঘাড়ে ব্যথা হয়। শাক ডিঙ্গালে জিভে ব্যথা হয়। ঘরে ভাঙ্গা আয়না রাখলে গরীব হতে হয়।

নাপাক অবস্থায় গাছে হাত দিলে গাছ মারা যায়। মুখে মিষ্টি নিয়ে কোন ফলগাছ লাগালে তার ফল তিক্ত হয় না। খেল (কাদা মাখামাখি) খেললে, আখের বোঝার উপর বসলে বা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়। বাম চোখ লাফালে নোকসান ও ডান চোখ লাফালে লাভ হয়। বামের শিয়াল ডাইনে গেলে অথবা তার বিপরীত গেলে লাভ অথবা নোকসান হয়। গলায় খাদ্য বা পানীয় লাগলে কোন আত্মীয় স্মরণ করে। প্রথম ডিমে নোড়া বুলালে মুরগী নোড়ার মত বড় বড় ডিম দেয়। চালুন বুলালে তার। ছিদ্র সমান অসংখ্য ডিম পাড়ে। শিশুর ভাঙ্গা দাঁত পানিতে ফেললে অথবা ইদুরের গর্তে দিলে মাছ বা ইদুরের মত সরু সরু দাঁত হয়! ভালুকের লোম ব্যবহার করলে জ্বর যায়। যাত্রা পথে বাড়ি থেকে বের হতে কেউ পিছু ডাকলে যাত্রা শুভ হয় না বা কাজ সিদ্ধ হয় না ইত্যাদি অযৌক্তিক বিশ্বাস। নতুন গরু মহিষ ক্রয় করলে তার পা ধুয়ে তেল (!) দেওয়া।

গরুর পায়ে ঝাটা ঠেকাতে নেই মনে করা। গরু মারা গেলে তার মুখে দুর্বাঘাস রাখা। গাভিন গায়ের গলায় আমড়ার আঁটি, চাবিকাঠি, কড়ি, চামড়া ইত্যাদি বাধা। সদ্যজাত বাছুরের গলায় লাতাকানি বাঁধা, গরু পরবের (?) দিন গরু-ছাগলের গায়ে রঙ্গিন ছাপ দেওয়া। | কাপড় নিচোড়া পানি পায়ে নিলে অসুখ ছাড়ে না, তালপাতার পাখা ঘুরানোর সময়। কারো গায়ে লাগলে অসুখ হয়। (তার জন্য মাটিয়ে ঠেকাতে হয়।) কশে ঘা (শালকী) হলে শালিক পাখির পায়ের ধুলোয় ভাল হয়। মাথায় মাথায় ঠোকা গেলে এবং

দ্বিতীয়বার না ঠুকলে শিং গজায়! দুই হাঁটু গেড়ে ভাত খেলে মা-বাপের মাথা খাওয়া হয়, আমানিতে হাত ধুলে মরার সময় ছেলে নিজ মা-বাপের মুখ দেখতে পায় না। কোন কথা চালাকালীন কেউ হাঁচলে অথবা টিকটিকি আওয়াজ দিলে কথার সত্যায়ন হয়। দুই মুরগী মুখোমুখী হলে, হাত হতে (চিরুনী, বাটি বা অন্য) কিছু পড়লে অথবা গৃহের ছাদে বা চালে কাকে আদার খাওয়ালে বাড়িতে কুটুম আসে।

পায়ে মইদি মাখতে নেই (কারণ নবী সাহেব দাঁড়িতে লাগিয়েছিলেন তাই!) শাহাদৎ আঙ্গুলে চুন লাগাতে নেই, রাতে নখ কাটতে নেই, চুল আচড়াতে নেই, আয়না দেখতে নেই। রাতের বেলায় চাল চিবিয়ে খেতে নেই, রাতে আঙ্গুল ফোটাতে নেই। সন্ধ্যাবেলায় ভাত খেতে নেই। (কারণ সে সময় মওতারা খায়।) ভাদ্র মাসে। ঝাটা কিনতে নেই, গোয়ালে মাটি দিতে নেই। অগ্রহায়ন মাসে কুকুর-বিড়ালকে ছি করতে নেই। ঝুড়ি-ঝাটা বাইরে রাখতে নেই। ধানের ধুলো ঝাড়তে নেই। (আহা ধানের ধুলো পায় কে?) খাবার জিনিস ঝাঁটা করে ঝাড়তে নেই। (যেহেতু মা লক্ষ্মীকে ঝাঁটা মারা হয় তাই!) পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ডিম খেতে নেই। (খেয়ে পরীক্ষা দিলে ডিমের মত নম্বর অর্থাৎ জিরো পাবে।) পিয়াজ রসুনের ছাল না পোড়ানো। ধানের রাস ও পাটার উপর খড়ের আঁটি রাখা। গোলার নীচে পুঁটে রাখা। মাপার শেষে কিছু চাল ফিরিয়ে নিয়ে বর্কতের আশা।

মাপার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বা এক বলার পরিবর্তে বর্কত বলা। কসাইদের গোশ্যে গোশু মেরে বকতের আশা। ধান-চাল পাছুরতে কুলো খালি না করা। ঘরের মুদুনী তুলতে সিন্দুর ব্যবহার। ছেলে ঘুমাবার সময় কাউকে কোদাল দিলে তাতে পানি দিয়ে। দেওয়া। ছেলে কোলে থাকলে কোদাল কুড়ুল হাতে বহন না করা। অন্ধকারে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা হাঁটতে হাঁটতে কিছু খেলে বা পান করলে, মৃতব্যক্তির পাশে আহার করলে, ভাঙ্গা পাত্রে আহার করলে, পরিহিত কাপড়ে হাত মুছলে, পরিহিত কাপড় সিলাই করলে, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে, ঝাড়ু দিয়ে ঘরের মধ্যে ময়লা জমা রাখলে, খাওয়া শেষে হাঁড়িকুড়ি না ধুয়ে রাখলে, ওযু করার সময় অহেতুক কথা বললে, হেঁটে হেঁটে দাঁতন করলে, তেলাঅতের সিজদায় দেরী করলে, ময়লা কাপড় বা ছেড়া জুতা-খরম ব্যবহার করলে, গুপ্তস্থানের লোম ৪০ দিনের বেশী ছেড়ে রাখলে অথবা তা কাঁচি দ্বারা পরিষ্কার করলে, পানিতে প্রস্রাব করলে, উলঙ্গ হয়ে গোসল করলে, জানাযার আগে আগে হাঁটলে, বিনা ওযুতে হাঁটতে হাঁটতে দরূদ শরীফ পড়লে পরিবারে ও জীবনে অশান্তি নেমে আসে ধারণা করা।

দাঁত দিয়ে নখ কাটলে, রাত্রিকালে একাকী ভ্রমণ করলে, বাম হাতে কোন জিনিস। আদান-প্রদান করলে হৃদয় পাষাণ হয়ে যায় ধারণা রাখা।

হেলান দিয়ে আহার করলে, ঘাড়ের পশম কামিয়ে ফেললে, উকুন পেয়ে জীবিত ছেড়ে দিলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় মনে করা।

উক্ত প্রকার বিশ্বাসগত অমূলক মেয়েলী বিদআত যা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে এবং যার বেশীর ভাগ ‘বুড়ি’দের নিকট হতে ‘হিফয’ ও রেওয়ায়াত করা হয়ে থাকে।