জানাযা দর্পণ মাইয়্যেতের গোসল আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

অহেতুক বিলম্ব না করে কিছু লোকের মাইয়্যেতকে গোসল দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। এ গোসল দেওয়া ওয়াজেব (কিফায়াহ)। নবীকরীম (ﷺ) এর একাধিক আদেশ এই ওয়াজেব হওয়ার কথা প্রমাণ করে। যেমন, এক ইহরাম বাধা হাজীকে তার সওয়ারী আছাড়ে দিলে সে মারা যায়। নবী (ﷺ) সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “ওকে কুলপাতা-মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল দাও--।” (বুখারী ১১৮৬ক, মুসলিম ২০১২ক, প্রমুখ)।

তাঁর কন্যা যয়নাবকে গোসল দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, “ওকে তিনবার গোসল দাও অথবা পাঁচ, সাত বা তারও অধিকবার--- ” (বুখারী ১১৭৫ক, মুসলিম, ১৫৫৭ক, প্রমুখ।)

যে ব্যক্তি গোসল দেওয়ার দায়িত্ব নেয় তার জন্য রয়েছে বিরাট পরিমাণের সওয়াব। তবে এই সওয়াব লাভের শর্ত হল দুটি, প্রথমতঃ সে যেন এ কাজ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে এবং কোন প্রকারের পার্থিব । প্রতিদান, স্বার্থ বা কৃতজ্ঞতা লাভের আশায় না করে। দ্বিতীয়তঃ, সে যেন মৃতের সকল ত্রুটি গোপন করে এবং অপ্রীতিকর কিছু দেখলে তা কারো কাছে প্রকাশ না করে। পিয়ারা নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে গোসল দেয় এবং তার সকল ত্রুটি গোপন করে আল্লাহ তাকে ৪০ বার ক্ষমা করে দেন।” আর এক বর্ণনায় আছে, “৪০টি কাবীরাহ গোনাহ মাফ করে দেন।” (হাকেম ১/৩৫৪ ৩৬২, বাইহাকী ৩/৩৯৫, মাযমাউয যাওয়াইদ ৩/২১)।

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মুদাকে গোসল দেয় এবং তার ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ সে ব্যক্তির গোনাহ গোপন (মাফ) করে দেন। আর যে ব্যক্তি মুর্দাকে কাফনায় আল্লাহ তাকে (বেহেস্তী) ফাইন রেশমের বস্ত্র পরিধান করাবেন।” (ত্বাবারানী কাবীর, সহীহুল জামে’ ৬৪০৩নং)

গোসল দেওয়ার অধিক হকদার সেই ব্যক্তি যাকে মাইয়্যেত জীবিতাবস্থায় অসিয়ত করে যাবে। তা না হলে তার সবচেয়ে অধিক নিকটাত্মীয় গোসল দেবে। অবশ্য যে ব্যক্তি গোসলের সুন্নাহ আদির অধিক জ্ঞান রাখে এবং যার। মধ্যে আমানতদারী; কথায়, কাজে নামাযে ও দ্বীনদারীতে বেশী আমানতদারী আছে। তাকেই এ কাজের জন্য প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

অবশ্য স্ত্রীর জন্য স্বামীকে গোসল দেওয়া এবং স্বামীর জন্য স্ত্রীকে গোসল দেওয়া অধিক শোভনীয় ও সমীচীন। যেহেতু দাম্পত্য জীবন থেকেই উভয়েই এক অপরের দেহের গোপনীয়তা রক্ষায় যত্নশীল। তাই এই বিদায় মুহূর্তেও সেই গোপনীয়তার সাথেই শেষ খিদমত পাওয়ার উভয়েই উপযুক্ত।

মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, 'যা হয়ে গেছে তা যদি আবার ফিরে আসত তাহলে নবী (ﷺ)-কে তাঁর স্ত্রীগণ ছাড়া অন্য কেউ গোসল দিত না।” (ইবনে মাজাহ ১৪৫৩ক, আবু দাউদ ২৭৩২ক, সহীহ ইবনে মাজাহ ১১৯৬নং)।

মা আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, 'একদা নবী (ﷺ) কারো জানাযা পড়ে বাকী (গোরস্থান) থেকে আমার নিকট এলেন। তখন আমার মাথায় ছিল যন্ত্রণা। আমি বলছিলাম, হায় আমার মাথা গেল!” তিনি বললেন, “বরং আমার মাথাও গেল! (হে আয়েশা!) তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও এবং আমি তোমাকে গোসল দিই, কাফনাই, অতঃপর তোমার উপর জানাযা পড়ে তোমাকে দাফন করি, তাহলে এতে তোমার নোকসান আছে কি?” (ইবনে মাজাহ ১৪৫৪ক, আহমাদ ২৪৭২০ক দারেমী ৮০ক, সহীহ ইবনে মাজাহ ১১৯৭নং, দারাকুত্বনী ১৯২নং, বাইহাকী ৩/৩৯৬)।

আর এখানে একথা বলা যথার্থ নয় যে, এ ব্যাপারটা নবী (ﷺ) এর জন্য খাস। কারণ, যে কোনও বিধানের কার্যকারিতা হল সাধারণ ও ব্যাপক। অবশ্য খাস ও নির্দিষ্ট হওয়ার দলীল থাকলে সে কথা ভিন্ন। পরন্তু খাস হওয়ার কোন দলীল নেই।

এ ছাড়া আবু বকর (রাঃ) তাঁর স্ত্রী আসমাকে মৃত্যুর পূর্বে তাকে গোসল দেওয়ার জন্য অসিয়ত করেছিলেন। (ইবনে আবী শাইবাহ ১০৯৬৯, ১০৯৭০নং)

ফাতেমা (রাঃ) অসিয়ত করেছিলেন, যেন তাকে তার স্বামী আলী (রাঃ) এবং আসমা বিনতে উমাইস এ গোসল দেন। ফলে তারাই তার গোসল দিয়েছিলেন। (দারাকুত্বনী ১৮৩৩নং, বাইহাকী ৩/৩৯৬) এ ছাড়া আরো দলীল দেখুন, ইবনে আবী শাইবাতে (২/৪৫-৪৫৬)

মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায় না। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে জান্নাতী হলে উভয়েই জান্নাতে একই সাথে বাস করবে। আর সম্পর্ক ছিন্ন হয় না বলেই তো এক অপরের ওয়ারেস হয়ে থাকে। পরন্তু সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ দলীলও নেই।

মৃতের স্ত্রী অথবা মৃতার স্বামী না থাকলে পুরুষের গোসল পুরুষ এবং মহিলার গোসল মহিলাই দিতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে মহিলা না পাওয়া গেলে অথবা (দগ্ধ ইত্যাদি) লাশের জন্য গোসল ক্ষতিকর হলে অথবা পানি না পাওয়া গেলে মাইয়্যেতকে তায়াম্মুম করানো হবে। হাতে কোন আবরণ রেখে তায়াম্মুমের নিয়মানুসারে মাটি দ্বারা লাশের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় (কবজি পর্যন্ত) মাসাহ করে দিতে হবে। (দেখুন ইবনে আবী শাইবাহ ১০৯৬২- ১০৯৬৫নং, আশ-শারহুল মুমত’৫/৩৭৫)।

সাত বছরের নিন্মে কোন বালক-বালিকার লাশের যে কোন পুরুষ অথবা মহিলা গোসল দিতে পারে। কারণ, তাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ওয়াজেব নয়। (আলবিজাযাহ ৭৫পৃঃ)

ঋতুমতী মহিলাও - তার ঋতু অবস্থায় থাকলেও - মৃতা বা শিশুকে গোসল দিতে পারে। (মুগনী)

আলকামাহ, আত্বা প্রভৃতি ইমামগণ বলেন, ঋতু বা বীর্যপাত-জনিত নাপাকে থেকেও মৃতকে গোসল দেওয়ায় কোন ক্ষতি নেই। (ইবনে আবী শাইবাহ ১০৯৫৮, ১০৯৬০নং)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে