আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম করার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে

জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

«قال رَجُلٌ وَاَللَّه لَا يَغْفِر اللَّه لِفُلَانٍ وَإِنَّ اللَّه تَعَالَى قَالَ مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَلَّا أَغْفِر لِفُلَانٍ؟ فَإِنِّي قَدْ غَفَرْت لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْت عَمَلك»

‘‘এক ব্যক্তি বললোঃ আল্লাহর কসম, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেনঃ কে এই ব্যক্তি, যে আমার নামে কসম করে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করবোনা? আমি অমুককেই ক্ষমা করে দিলাম। আর তোমার আমল বাতিল করে দিলাম’’। ইমাম মুসলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন’’।[1]

ব্যাখ্যাঃ শাইখ এই অধ্যায়ে জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীছের শব্দ يتألى অর্থ يحلف শপথ করে। আর الأليَّة শব্দের ‘ইয়া’ বর্ণে তাশদীদ দিয়ে পড়তে হবে।

ইমাম আবু দাউদ (রঃ) আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি

«كَانَ رَجُلاَنِ فِى بَنِى إِسْرَائِيلَ مُتَآخِيَيْنِ فَكَانَ أَحَدُهُمَا يُذْنِبُ وَالآخَرُ مُجْتَهِدٌ فِى الْعِبَادَةِ فَكَانَ لاَ يَزَالُ الْمُجْتَهِدُ يَرَى الآخَرَ عَلَى الذَّنْبِ فَيَقُولُ أَقْصِرْ فَوَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ فَقَالَ لَهُ أَقْصِرْ فَقَالَ خَلِّنِى وَرَبِّى أَبُعِثْتَ عَلَىَّ رَقِيبًا فَقَالَ وَاللَّهِ لاَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ وَ لاَ يُدْخِلُكَ اللَّهُ الْجَنَّةَ. فَقُبِضَ أَرْوَاحُهُمَا فَاجْتَمَعَا عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ فَقَالَ لِهَذَا الْمُجْتَهِدِ أَكُنْتَ بِى عَالِمًا أَوْ كُنْتَ عَلَى مَا فِى يَدِى قَادِرًا وَقَالَ لِلْمُذْنِبِ اذْهَبْ فَادْخُلِ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِى وَقَالَ لِلآخَرِ اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّارِ»

‘‘বনী ইসরাঈলের দুই ব্যক্তি পরস্পরকে ভাই বানিয়ে নিয়েছিল। তাদের একজন সবসময় পাপ কাজে লিপ্ত হতো আর অন্যজন সবসময় এবাদত-বন্দেগীতে মাশগুল থাকতো। এবাদত-বন্দেগীতে পরিশ্রমকারী লোকটি তার ভাইকে সবসময় পাপের কাজে লিপ্ত হতে দেখতো আর বলতোঃ পাপ কাজ হতে বিরত থাকো! অতঃপর এবাদত গোজার লোকটি একদিন তার ভাইকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বললঃ বিরত হও! এতে পাপ কাজে লিপ্ত লোকটি বললঃ আমার প্রভুর দোহাই দিয়ে বলছি! আমাকে তুমি আমার অবস্থায় ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর দারোগা বানিয়ে পাঠানো হয়েছে? এতে এবাদতকারী লোকটি বললঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে কখনই ক্ষমা করবেন না এবং তোমাকে জান্নাতেও স্থান দিবেন না।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের উভয়ের রূহ কবয করে নিলেন। তারা উভয়েই রাববুল আলামীনের নিকট হাযির হলো। তখন আল্লাহ তাআলা এই এবাদতকারীকে বললেনঃ তুমি কি আমার সব কিছুই জানতে কিংবা যা কিছু আমার হাতে আছে, উহার উপর কি তোমার কোনো ক্ষমতা ছিল? অতঃপর আল্লাহ তাআলা গুনাহগারকে লক্ষ্য করে বললেনঃ যাও এবং আমার রহমতের ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর অন্যজনের ব্যাপারে তিনি বললেনঃ একে জাহান্নামে নিয়ে যাও।[2]

আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি কসম করে উল্লে­খিত কথা বলেছিলো, সে ছিল একজন আবেদ। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ ঐ ব্যক্তি একটি মাত্র কথার মাধ্যমে তাঁর দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়টাই বরবাদ করে ফেলেছে।

ব্যাখ্যাঃ এখানে উপরে বর্ণিত হাদীছের ঐ বাক্যের দিকে ইংগিত করা হয়েছে যে, তাদের একজন ছিল এবাদত-বন্দেগীতে খুব পরিশ্রমী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর এই হাদীছের অর্থও রয়েছেঃ তিনি বলেনঃ মানুষ কখনো এমন কথা বলে ফেলে, যে ব্যাপারে সে ধারণাও করতে পারেনা যে, কথাটি এই পর্যন্ত গড়াবে। অর্থাৎ কথাটি যে এত বিপদজনক, তা সে কল্পনাও করতে পারেনা। আল্লাহ তাআলা এই কথার কারণে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার উপর স্বীয় অসন্তুষ্টি লিখে দেন। পরিশেষে এই অবস্থাতেই সে আল্লাহর সাথে মিলিত হয়।[3] এই অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়ে কসম খাওয়া থেকে সতর্ক করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছাধীন বিষয়ে মাতববরী করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করার আদেশ করা হয়েছে

২) আমাদের কারো জাহান্নাম তার জুতার ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী।

৩) জান্নাতও অনুরূপ মানুষের খুবই নিকটবর্তী।

৪) এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ঐ কথার সমর্থন মিলে যেখানে তিনি বলেছেনঃ একজন লোক কখনো মাত্র এমন একটি কথা বলে, যার মাধ্যমে তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে যায়।

৫) কোনো কোনো সময় মানুষকে এমন কারণেও মাফ করে দেয়া হয়, যা তাঁর কাছে সর্বাধিক অপছন্দনীয়।

[1] - সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ২৬২১।

[2] - হাদীছটি হাসান, দেখুনঃ আবু দাউদ, হাদীছ নং- ৪৯০১। শাওয়াহেদ থাকার কারণে তথা একাধিক উৎস থেকে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীছটি সহীহ। দেখুন তিরমিযী, হাদীছ নং- ২৩১৯।

[3] - শাওয়াহেদ থাকার কারণে তথা একাধিক উৎস থেকে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীছটি সহীহ। দেখুনঃ তিরমিযী, হাদীছ নং- ২৩১৯। এই অর্থেই সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ، لا يُلْقِي لَهَا بَالاً، يَرْفَعُهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهًِ لا يُلْقِي لَهَا بَالاً يَهْوِي بِهَا فِي جَهَنَّمَ».

‘‘বান্দা কখনও এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন। অথচ কথা বলার সময় সে এ ব্যাপারে কোন গুরুত্বই দেয় নি। এই কথার কারণে আল্লাহ্ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। অপর পক্ষে বান্দা কখনও এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন। অথচ কথা বলার সময় সে এ ব্যাপারে কোন খেয়ালই করেনা। এই কথার কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে’’। (দেখুনঃ সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ৬৪৭৮)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে