আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক অধিক স্মরণ কর এবং সকালসন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা কর। (কুঃ ৩৪০-৪১নং)

“আর সকাল সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা কর।” (কুঃ ৪০/৫৫ নং)

“আর তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে।” (কুঃ ৫০/৩৯ নং)

১ সকাল ও সন্ধ্যায় “সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহ” ১০০বার করে। এর অর্থ পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।

২।

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ

উচ্চারণঃ- আমসাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ, আলহামদু লিল্লাহ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদ অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। রাব্বি আসআলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ খাইরা মা বা’দাহা, অ আউযু বিকা মিন শারি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ শারি মা বা'দাহা, রাব্বি আউযু বিকা মিনাল কাসালি অ সুইল কিবার, রাব্বি আউযু বিকা মিন আয-বিন ফিন্না-রি অ আযা-বিন ফিল ক্বাবর।”

অর্থঃ- আমরা এবং সারা রাজ্য আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তারই জন্য যাবতীয় স্তুতি, এবং তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই রাতে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং তার পরেও যে কল্যাণ আছে তাও প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট এই রাত্রে যে অকল্যাণ আছে তা এবং তারপরেও যে অকল্যাণ আছে তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট অলসতা এবং বার্ধক্যের মন্দ হতে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের এবং কবরের সকল প্রকার আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি।

এই দুআটি সন্ধ্যার সময় পাঠ করতে হয়। সকাল বেলায়ও এই দুআটি পাঠ করতে হয়। তবে শুরুতে “আমসাইনা অ আমসাল” এর পরিবর্তে “আসবাহনা অ আসবাহাল” বলতে হবে। এটি আল্লাহর রসূল পাঠ করতেন। (মুসলিম/ ২০৮৮)

৩ সূরা “কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ” “কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক” এবং কূল আউযু বিরাব্বিন্নাস” সকাল সন্ধ্যায় তিনবার করে পঠনীয়। যা প্রত্যেক জিনিসের মন্দ থেকে যথেষ্ট হবে। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

৪। সকাল হলে পড়তে হয়,

اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ

উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা অবিকা আমসাইনা অবিকা নাহয়্যা অবিকা নামূতু অ ইলাইকান নুশূর।

অর্থ- হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন। সন্ধ্যা হলে পড়তে হয়,

اللَّهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ النُّشُورُ

উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা অবিকা আসবাহনা অবিকা নাহয়্যা অবিকা নামূতু অ ইলাইকাল মাসীর।

অর্থ- হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হল এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল। তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যুবরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।

এই দুআটি আল্লাহর রসূল সু তাঁর সাহাবাদেরকে শিক্ষা দিতেন। (তিরমিযী ৫/৪৬৬)

৫। সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার,

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা খালাকতানী, অ আনা আবদুকা অ আনা আলা আহদিকা অ অ’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউযুবিকা মিন শারি মা স্বানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা অ আবুউ বিয়ামবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লায়্যাগফিরুয যুনুবা ইল্লা আন্ত।

অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যা করেছি, তার মন্দ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে সম্পদ রয়েছে, তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও আমি স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ মার্জনা করতে পারে না। ক্ষমা প্রার্থনার এই দুআটি যদি কেউ সন্ধ্যাবেলায় পড়ে ঐ রাতে মারা যায় অথবা সকালবেলায় পড়ে ঐ দিনে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ৭/১৫০)।

৬।

اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ والشَّهَادَةِ، فَاطِرَ السَّموَاتِ والأرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيءٍ ومَلِيْكَهُ، أشْهَدُ أنْ لا إلَهَ إلاَّ أنْتَ، أعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল গায়বি অশশাহা-দাহ, ফা-ত্বিরাস সামাওয়াতি অল আরযি রাব্বা কুল্লি শাইয়িন অমালীকাহ, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আউযুবিকা মিন শারি নাফসী অশারিশ শায়ত্ব-নি অশির্কিহ।

অর্থ- হে উপস্থিত ও অনুপস্থিত পরিজ্ঞাতা, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা, প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও অধিপতি আল্লাহ! আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আমার আত্মার মন্দ হতে এবং শয়তানের মন্দ ও শির্ক হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যায় ও শয়নকালে পঠনীয়। (আবু দাউদ, সহীহ তিরমিযী আলবানী ৩/১৪২)

৭।

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা য়্যায়ুররু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরযি অলা ফিসসামা-ই অহুওয়াস সামীউল আলীম।

অর্থ- আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে পৃথিবী ও আকাশের কোন জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।

এই দুআটি সন্ধ্যাকালে ৩ বার করে পাঠ করলে কোন জিনিস ক্ষতি সাধতে পারে না। (আবু দাউদ, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ আলবানী ২/৩৩২)

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণঃ-আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিততা-ম্মাতি মিনশারি মাখালা।

অর্থঃ-আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার মন্দ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এই দুআটি সন্ধ্যার সময় পড়লে ঐ রাতে কোন সাপ-বিছা ইত্যাদি কষ্ট দিতে পারে না। (মুঃ ৪/২০৮০)।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ استُرْ عَوْرَاتي، وآمِنْ رَوْعَاتي، اللَّهمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَينِ يَدَيَّ، ومِنْ خَلْفي، وَعن يَميني، وعن شِمالي، ومِن فَوْقِي، وأعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحتي

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আ-ফিয়াতা ফিদদুনয়্যা অলআ-খিরাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া অল আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী অ দুনয়্যা-য়্যা অ আহলী অমা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর আওরা-তী অ আমিন রাওআ-তী, আল্লাহুম্মাহফাযনী মিম বাইনি য়্যাদাইয়্যা অমিন খালফী অআঁই য়্যামীনী অআন শিমা-লী অমিন ফাউক্বী, অআউযু বিআযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ইহকালে ও পরকালে নিরাপত্তা চাচ্ছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আমার ধর্ম ও পার্থিব জীবনে এবং পরিবার ও সম্পদে ক্ষমা ও নিরাপত্তা ভিক্ষা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার লজ্জাকর বিষয়সমূহ গোপন করে নাও এবং আমার ভীতিতে নিরাপত্তা দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার সম্মুখ ও পশ্চাৎ, ডান ও বাম এবং উপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ কর। আর আমি তোমার মাহাত্মের অসীলায় আমার নিচে ভূমি ধসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর নবী প্ল এ দুআটি পাঠ করতেন। (সঃ ইমাঃ ২/৩৩২)

১০।

اصْبَحْنا عَلَى فِطْرَةِ الإسْلاَمِ، وَعَلَى كَلِمَةِ الإِخْلاَصِ، وَعَلَى دِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَلَى مِلَّةِ أَبِينَا إبْرَاهِيمَ حَنِيفاً مُسْلِماً وَمَا كَانَ مِنَ المُشْرِكِينَ

উচ্চারণ- আসবাহনা আলা ফিত্বরাতিল ইসলামি অআলা কালিমাতিল ইখলাস, অ আলা দ্বীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম, অ আলা মিল্লাতি আবীনা ইবরাহীমা হানীফাম মুসলিমউ অমা কা-না মিনাল মুশরিকীন।

অর্থ- আমরা সকালে উপনীত হলাম ইসলামের প্রকৃতির উপর, ইখলাসের বাণীর উপর, আমাদের নবী মুঞ্চ-এর দ্বীনের উপর এবং আমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর ধর্মাদর্শের উপর, যিনি একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। এটিও তিনি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতেন। (সহীহুল জামে ৪/২০৯)

يا حي يا قيوم برحمتك أستغيث أصلح لي شأني كله ولا تكلني إلى نفسي طرفة عين

উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়ু ইয়া কৃাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীস, আসলিহ লী শা’নী কুল্লাহ, অলা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা আইন।

অর্থ-হে চিরঞ্জীব! হে অবিনশ্বর। আমি তোমার করুণার অসীলায় ফরিয়াদ করছি। তুমি আমার সকল বিষয়কে সংশােধন করে দাও। আর চোখের এক পলক বরাবরও আমাকে আমার নিজের প্রতি সােপর্দ করে দিও না। (নাসাঈ, বাযযার সহীহ তারগীব ৬৫৪ নং)।

১২। আয়াতুল কুরসী। (সহীহ তারগীব ৬৫৫ নং)।