বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
১০. কোন বস্ত্ত, ব্যক্তি বা প্রাণী দর্শনে বা উহার বিশেষ আচরণে কোন অমঙ্গল রয়েছে বলে বিশ্বাস করার শির্ক

কোন বস্ত্ত, ব্যক্তি বা প্রাণী দর্শনে বা উহার বিশেষ আচরণে কোন অমঙ্গল রয়েছে বলে বিশ্বাস করার শির্ক বলতে যাত্রা লগ্নে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্ত্তর বিশ্রী রূপদর্শন অথবা এ গুলোর কোনরূপ আচরণ এমনকি কোন শব্দ বা ধ্বনির শ্রবণ অথবা কোন জায়গায় অবতরণ কারোর জন্য কোন অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে বিশ্বাস করাকে বুঝানো হয়।

এ জাতীয় কুলক্ষণবোধ ব্যাধি আজকের নতুন নয়। বরং তা অনেক পুরাতন যুগেরই বটে। তখন মানুষ নবী ও তাঁর সঙ্গীদেরকে অলক্ষুনে ভাবতো।

আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:

« فَإِذَا جَآءَتْهُمُ الْـحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَذِهِ، وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَـنْ مَعَهُ، أَلاَ إِنَّمَا طَآئِرُهُمْ عِنْدَ اللهِ، وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ »

‘‘যখন তাদের কোন সুখ-শান্তি বা কল্যাণ সাধিত হতো তখন তারা বলতো: এটি আমাদেরই প্রাপ্য। আর যখন তাদের কোন দুঃখ-দুর্দশা বা বিপদ-আপদ ঘটতো তখন তারা বলতো: এটি মূসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের কারণেই ঘটেছে। তাদের জানা উচিত যে, তাদের সকল অকল্যাণও একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এ কথা জানে না’’। (আ’রাফ্ : ১৩১)

আল্লাহ্ তা’আলা সা’লিহ্ (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:

«قَالُوْا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَ، قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللهِ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ »

‘‘তারা বললো: আমরা তোমাকে ও তোমার সঙ্গী-সাথীদেরকেই সকল অকল্যাণের মূল মনে করছি। সা’লিহ্ (আ.) বললেন: তোমাদের সকল কল্যাণাকল্যাণ আল্লাহ্’র হাতে। মূলতঃ তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে’’। (নাম্ল : ৪৭)

আল্লাহ্ তা’আলা এক মফস্বল এলাকার অধিবাসী ও তাদের রাসূল সম্পর্কে বলেন:

« قَالُوْا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ، لَئِنْ لَمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِنَّا عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالُوْا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ، أَئِنْ ذُكِّرْتُمْ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُوْنَ »

‘‘তারা বললো: আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ বলেই মনে করি। যদি তোমরা নিজ তৎপরতা বন্ধ না করো তাহলে আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর অবশ্যই নিপতিত হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। রাসূলগণ বললেন: তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই কারণে। তোমরা কি মূর্খতার কারণে এটাই মনে করো যে, তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছে বলেই অমঙ্গল নেমে আসছে। বরং তোমরা একটি সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (ইয়াসীন : ১৮)

আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:

« وَإِنْ تُصِبْتُمْ حَسَنَةٌ يَقُوْلُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِ اللهِ، وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُوْلُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِكَ، قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللهِ، فَمَا لِـهَؤُلآءِ الْقَوْمِ لاَ يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا »

‘‘তাদের উপর যখন কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হয় তখন তারা বলে: এটা আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। আর যখন তাদের প্রতি কোন অকল্যাণ নিপতিত হয় তখন তারা বলে: এটা আপনারই পক্ষ থেকে তথা আপনারই কারণে। আপনি বলে দিন: সবই আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। এদের কি হলো যে, তারা কোন কথাই বুঝতে চায় না’’। (নিসা’ : ৭৮)

সকল মঙ্গলামঙ্গল একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার হাতে। কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর বিশ্রী রূপদর্শন বা আচরণে এমন কোন অকল্যাণ নিহিত নেই যার অমূলক আশঙ্কা করা যেতে পারে। বরং সকল কল্যাণকে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ এবং পুণ্যের ফল হিসেবে স্বীকার করতে হবে। আর সকল অকল্যাণকে আল্লাহ্ তা’আলার ইনসাফ ও নিজ গুনাহ্’র শাস্তি হিসেবে মেনে নিতে হবে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«مَآ أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللهِ، وَمَآ أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ »

‘‘তোমার যদি কোন কল্যাণ সাধিত হয় তাহলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। আর যদি তোমার কোন অকল্যাণ সাধিত হয় তাহলে তা একমাত্র তোমার কর্ম দোষেই হয়েছে’’। (নিসা’ : ৭৯)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ نَوْءَ وَلاَ غُوْلَ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَمَا بَالُ الإِبِلِ تَكُوْنُ فِيْ الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ، فَيَجِيْءُ الْبَعِيْرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ فِيْهَا، فَيُجْرِبُهَا كُلَّهَا، قَالَ: فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ؟

‘‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। হুতোম পেঁচা, সফর মাস, রাশি-নক্ষত্র অথবা পথ ভুলানো ভূত কারোর কোন ক্ষতি করতে পারে না। তখন এক গ্রাম্য ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কখনো এমন হয় যে, মরুভূমির মধ্যে শায়িত কিছু উট। দেখতে যেমন হরিণ। অতঃপর দেখা যাচ্ছে, চর্ম রোগী একটি উট এসে এগুলোর সাথে মিশে গেলো। তাতে করে সবগুলো উট চর্ম রোগী হয়ে গেলো। তখন রাসূল (সা.) বললেন: বলো তো: প্রথমটির চর্ম রোগ কোথা থেকে এসেছে?

(বুখারী, হাদীস ৫৭০৭, ৫৭১৭, ৫৭৭০, ৫৭৭৩ মুসলিম, হাদীস ২২২০, ২২২২ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১১, ৩৯১২, ৩৯১৩, ৩৯১৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৫, ৩৬০৬ আহমাদ : ২/২৬৭, ৩৯৭ আব্দুর রায্যাক : ১০/৪০৪ ত্বাহাওয়ী/মুশকিলুল্ আসা-র, হাদীস ২৮৯১)

উম্মে কুর্য (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি:

أَقِرُّوْا الطَّيْرَ عَلَى مَكِنَاتِهَا، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّكُمْ

‘‘তোমরা পাখীগুলোকে নিজ স্থানে থাকতে দাও। ওদেরকে তাড়িয়ে কুলক্ষণ নির্ধারণ করার কোন মানে হয় না। কারণ, ওগুলো তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৮৩৫ মুসতাদরাক্ : ৪/২৩৭)

‘‘তাত্বাইয়ুর’’ তথা কুলক্ষণবোধ ব্যাধি শির্ক এ জন্য যে, কেননা তাতে আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টিকে ক্ষতিসাধক হিসেবে মেনে নেয়া হয়। অথচ সকল কল্যাণাকল্যাণের মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা। তিনি ভিন্ন অন্য কেউ নয়। অন্যদিকে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সাথে বান্দাহ্’র সুগভীর সম্পর্ক কায়েম করার শামিল এবং তা তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহ্ নির্ভরশীলতা বিরোধীও বটে। এমনকি এ বিশ্বাসের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্তরে প্রচুর ভয়েরও উদ্রেক ঘটে। বস্ত্ততঃ তা শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ـ ثَلاَثًا ـ وَمَا مِنَّا إِلاَّ ... وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ

‘‘কুলক্ষণবোধ নিরেট শির্ক। নবী (সা.) এ কথাটি তিন বার বলেছেন। আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রা.) বলেন: আমাদের প্রত্যেকেই কিছুনা কিছু এ ব্যাধিতে ভোগে থাকেন। তবে আল্লাহ্ তা’আলার উপর সত্যিকারের তাওয়াক্কুল থাকলে তা অতিসত্বর দূর হয়ে যায়’’।

(বুখারী/আদাবুল্ মুফরাদ্, হাদীস ৯০৯ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১০ তিরমিযী, হাদীস ১৬১৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৪ ত্বাহাওয়ী/মুশ্কিলুল্ আসা-র, হাদীস ৭২৮, ১৭৪৭ ইবনু হিববান/মাওয়ারিদ্, হাদীস ১৪২৭ হা-কিম : ১/১৭-১৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২৫৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৯ ত্বায়ালিসী, হাদীস ৩৫৬ আহমাদ : ১/৩৮৯, ৪৩৮, ৪৪০)

আপনি যখন শরীয়ত সম্মত কোন কাজ করতে ইচ্ছে করবেন তখন তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উপর ভরসা করেই শুরু করে দিন। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর কুৎসিত রূপ দেখে অথবা কোন অরুচিকর বাক্য শুনে সে কাজ বন্ধ করে দিবেননা। যদি তা করেন তাহলে আপনি আপনার অজান্তেই শির্কে লিপ্ত হবেন।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ عَنْ حَاجَتِهِ فَقَدْ أَشْرَكَ، قَالُوْا: فَمَا كَفَّارَةُ ذَلِكَ؟ قَالَ: أَنْ تَقُوْلَ: اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ، وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ، وَلاَ إلَهَ غَيْرُكَ

‘‘যাকে কুলক্ষণবোধ নিজ প্রয়োজন মেটানো থেকে বিরত রেখেছে বস্ত্ততঃ সে শির্ক করলো। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: এর কাফ্ফারা কি হতে পারে? রাসূল (সা.) বললেন: তখন সে বলবে: হে আল্লাহ্! আপনার কল্যাণ ছাড়া আর কোন কল্যাণ নেই। তেমনিভাবে আপনার অকল্যাণ ছাড়া আর কোন অকল্যাণ নেই এবং আপনি ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই’’। (আহমাদ : ২/২২০)

মু’আবিয়া বিন্ ’হাকাম্ সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম:

وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُوْنَ، قَالَ: ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُوْنَهُ فِيْ صُدُوْرِهِمْ، فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ

‘‘আমাদের অনেকেই কোন না কোন কিছু দেখে বা শুনে কুলক্ষণ বোধ করেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন: এটি হচ্ছে মনের ওয়াস্ওয়াসা। অতএব তারা যেন এ কারণে কোন কাজ বন্ধ না করে’’। (মুসলিম, হাদীস ৫৩৭)

তবে কোন ব্যক্তি কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির বিশ্রী রূপ দেখে তার মধ্যে কোন অকল্যাণ রয়েছে বলে ধারণা করলে তার এ অমূলক ধারণার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ তার কোন ক্ষতি হতে পারে।

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ طِيَرَةَ، وَالطِّيَرَةُ عَلَى مَنْ تَطَيَّرَ، وَإِنْ يَكُ فِيْ شَيْءٍ فَفِيْ الدَّارِ وَالْفَرَسِ وَالْـمَرْأَةِ

‘‘শরীয়তের দৃষ্টিতে কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে অলক্ষণ শাস্তি সরূপ ওর পক্ষে হতে পারে যে শরীয়ত বিরোধীভাবে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে অলক্ষুনে ভাবলো। শরীয়তের দৃষ্টিতে সত্যিকারার্থে যদি কোন বস্ত্তর মাঝে অকল্যাণ নিহিত থাকতো তা হলে ঘর-বাড়ি, গাড়ি-ঘোড়া ও স্ত্রীমহিলাদের মধ্যে তা থাকা যুক্তিসঙ্গত ছিলো’’। (ইবনু হিববান, হাদীস ৬০৯০)

আল্লাহ্ তা’আলা কখনো কখনো তাঁর একান্ত ইচ্ছায় কোন না কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির মধ্যে অকল্যাণ নিহিত রাখেন যা একান্তভাবেই তাঁরই ইচ্ছায় উহার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কিছু না কিছু ক্ষতিসাধন করতে পারে। এরপরও শুরু থেকেই সতর্কতামূলক পন্থায় সে ব্যাপারে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার শরণাপন্ন হলে তা থেকে তিনি বান্দাহ্কে নিশ্চয়ই নিষ্কৃতি দিবেন ইনশা আল্লাহ্। তারপরও কোন অকল্যাণ ঘটে গেলে তা তাক্বদীরে ছিলো বলে বিশ্বাস করতে হবে। এ কারণেই নবী (সা.) কেউ কোন নতুন বিবাহ করলে অথবা কোন নতুন গোলাম বা পশু খরিদ করলে তার মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রাপ্তি ও তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্যে সে ব্যক্তিকে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার শরণাপন্ন হতে আদেশ করেছেন।

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا تَزَوَّجَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً، أَوِ اشْتَرَى خَادِمًا ؛ فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَإِذَا اشْتَرَى بَعِيْرًا فَلْيَأْخُذْ بِذِرْوَةِ سَنَامِهِ، وَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ

‘‘তোমাদের কেউ বিবাহ করলে অথবা নতুন গোলাম খরিদ করলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট এর ও এর মধ্যে নিহিত সকল কল্যাণ কামনা করি এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাই এর ও এর মধ্যে নিহিত সকল অকল্যাণ থেকে। তেমনিভাবে কোন উট কিনলে উহার কুব্জ পৃষ্ঠশৃঙ্গ ধরে অনুরূপ বলবে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২১৬০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৯৪৫ হা-কিম : ২/১৮৫ বায়হাক্বী, হাদীস ৭/১৪৮)

তবে দীর্ঘ প্রয়োজনীয় কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির প্রতি (ঘর-বাড়ি, গাড়ি-ঘোড়া ও স্ত্রীমহিলা ইত্যাদি) বিরক্তি এসে গেলে তা প্রত্যাখ্যান বা বদলানো জায়িয। যাতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঈমানটুকু শির্কমুক্ত থাকে এবং শরীয়ত অসম্মত কুলক্ষণবোধের দরুন তার উপর শাস্তি সরূপ কোন অকল্যাণ আপতিত না হয়।

আনাস্ বিন্ মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّا كُنَّا فِيْ دَارٍ كَثِيْرٌ فِيْهَا عَدَدُنَا، وَكَثِيْرٌ فِيْهَا أَمْوالُنَا، فَتَحَوَّلْنَا إِلَى دَارٍ أُخْرَى، فَقَلَّ فِيْهَا عَدَدُنَا، وَقَلَّتْ فِيْهَا أَمْوَالُنَا، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ذَرُوْهَا ذَمِيْمَةً

‘‘জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমরা ইতিপূর্বে একটি ঘরে বসবাস করতাম। তখন আমাদের জনসংখ্যা বেশি ছিলো এবং সম্পদও বেশি। অতঃপর আমরা আরেকটি ঘরে বসবাস শুরু করলাম। এখন আমাদের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং সম্পদও। তখন রাসূল (সা.) বললেন: এ ঘরটি ছেড়ে দাও। কারণ, তা নিন্দনীয়’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৯২৪)

তবে কোন উত্তম ব্যক্তি বা বস্ত্ত দেখে অথবা কোন ভালো কথা শুনে যে কোন কল্যাণের আশা করা বা সুলক্ষণ ভাবা শরীয়ত বিরোধী নয়। কারণ, এতে করে আল্লাহ্ তা’আলার উপর ভালো ধারণা জন্মে এবং তাঁর উপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে যায়। এমনকি সে কল্যাণ পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনার উদগ্র মানসিকতা তৈরি হয়। এ কারণেই রাসূল (সা.) কোন ভালো কথা বা শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করতেন এবং তা তাঁর পছন্দনীয় অভ্যাসও ছিলো বটে।

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ، وَيُعْجِبُنِيَ الْفَأْلُ، قَالُوْا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ

‘‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। তবে সুলক্ষণই আমার নিকট পছন্দনীয়। সাহাবাগণ বললেন: সুলক্ষণ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেন: ভালো কোন শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করা’’।

(বুখারী, হাদীস ৫৭৫৬, ৫৭৭৬ মুসলিম, হাদীস ২২২৪ তিরমিযী, হাদীস ১৬১৫ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৩ বায়হাক্বী: ৮/১৩৯ ত্বায়ালিসী, হাদীস ১৯৬১ আহমাদ: ৩/১১৮, ১৩০, ১৭৩, ২৭৫ ২৭৬ ইবনু আবী শাইবাহ্: ৯/৪১)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ طِيَرَةَ، وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ، قَالُوْا: وَمَا الْفَأْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الْكَلِمَةُ الصَّالِحَةُ يَسْمَعُهَا أَحَدُكُمْ

‘‘কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। তবে সুলক্ষণই হচ্ছে সর্বোত্তম। সাহাবাগণ বললেন: সুলক্ষণ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেন: ভালো কোন শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করা’’। (বুখারী, হাদীস ৫৭৫৪, ৫৭৫৫ মুসলিম, হাদীস ২২২৩)

যাদের মধ্যে কুলক্ষণবোধ নামক ব্যাধি বলতে কিছুই নেই বরং তাদের মধ্যে রয়েছে শুধু আল্লাহ্ তা’আলার উপর চরম নির্ভরশীলতা একমাত্র তারাই পরকালে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

فَقَيْلَ لِيْ: هَذِهِ أُمَّتُكَ، وَمَعَهُمْ سَبْعُوْنَ أَلْفًا يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلاَ عَذَابٍ ... قَالَ: هُمُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْقُوْنَ، وَلاَ يَسْتَرْقُوْنَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُوْنَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ

‘‘অতঃপর আমাকে বলা হলো: এরা আপনার উম্মত। তাদের সাথে রয়েছে সত্তর হাজার মানুষ যারা বিনা শাস্তি ও বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ওরা যারা কখনো নিজেও ঝাঁড় ফুঁক করেনি এবং অন্যকে দিয়েও করায়নি। কোনভাবেই কখনো কোন কিছুকে অলক্ষুনে ভাবেনি। বরং তারা শুধুমাত্র নিজ প্রভুর উপর চরম নির্ভরশীল রয়েছে। অন্য কারোর উপর নয়’’। (বুখারী, হাদীস ৫৭৫২ মুসলিম, হাদীস ২২০)