বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৯. আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ক

আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ক বলতে যে কোন নিয়ামত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার দান বা অনুগ্রহ বলে স্বীকার না করে তা নিজ বা অন্য কারোর কৃতিত্বের সুফল অথবা নিজ মেধা বা যোগ্যতার পাওনা বলে দাবি করাকে বুঝানো হয়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

« يَعْرِفُوْنَ نِعْمَةَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ »

‘‘তারা আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ সম্পর্কে জেনেও তা অস্বীকার করে। আসলে তাদের অধিকাংশই কাফির’’। (নাহল : ৮৩)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ »

‘‘তোমরা যে সব নিয়ামত ভোগ করছো তা সবই আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে’’। (নাহল : ৫৩)

বর্তমান যুগের সকল কল্যাণকে একান্ত আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ না বলে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল বলাও আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শামিল তথা শির্ক।

তেমনিভাবে কোন সম্পদকে আল্লাহ্ প্রদত্ত না বলে বাপ-দাদার মিরাসি সম্পত্তি বলে দাবি করা এবং এমন বলা যে, অমুক না হলে এমন হতোনা, আবহাওয়া ভালো এবং মাঝি পাকা হওয়ার দরুন বাঁচা গেলো। নচেৎ নৌকো ডুবে যেতো, পীর-বুযুর্গের নেক নজর থাকার দরুন বাঁচা গেলো। নচেৎ মরতে হতো বলাও আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শামিল তথা শির্ক।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِيْ الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهِ، إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا »

‘‘তোমাদের প্রভু তিনিই যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে জলযান পরিচালিত করেন। যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তথা রিয্ক অনুসন্ধান করতে পারো। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু’’। (ইসরা/বানী ইস্রাঈল : ৬৬)

আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিয়ামত অস্বীকারকারী পূর্বেকার এক সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেনঃ

«وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ رَحْمَةً مِّنَّا مِنْ بَعْدِ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُ لَيَقُوْلَنَّ هَذَا لِيْ، وَمَآ أَظُنُّ السَّاعَةَ قَآئِمَةً، وَلَئِنْ رُّجِعْتُ إِلَى رَبِّيْ إِنَّ لِيْ عِنْدَهُ لَلْحُسْنَى، فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِمَا عَمِلُوْا، وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ »

‘‘আমি যদি মানুষকে অনেক দুঃখ-কষ্টের পর অনুগ্রহের স্বাদ আস্বাদন করাই তখন সে নিশ্চিতভাবেই বলবে: এটা আমারই প্রাপ্য (আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ নয়) এবং আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর যদি আমি ঘটনাচক্রে আমার প্রভুর নিকট প্রত্যাবর্তিত হইও তখন তাঁর নিকট তো আমার জন্য কল্যাণই থাকবে। আমি কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত করবো এবং তাদেরকে আস্বাদন করাবো কঠোর শাস্তি’’। (ফুসসিলাত/হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৫০)

কারূন যখন আল্লাহ্ তা’আলার দেয়া ধন-ভান্ডারকে তাঁর একান্ত অনুগ্রহ বলে স্বীকার না করে বরং তার নিজ মেধার প্রাপ্য বলে দাবি করেছে তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে তলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«قَالَ إِنَّمَا أُوْتِيْتُهُ عَلَى عِلْمٍ عِنْدِيْ ... فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ، فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهُ مِنْ دُوْنِ اللهِ، وَمَا كَانَ مِنَ الْـمُنْتَصِرِيْنَ »

‘‘কারূন বললো: নিশ্চয়ই আমাকে এ সম্পদ দেয়া হয়েছে আমার জ্ঞানের প্রাপ্তি হিসেবে। ... অতঃপর আমি কারূন ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে তলিয়ে দিলাম। তখন তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিলোনা যারা আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারতো এবং সে নিজেও তার আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিলো না’’। (কাসাস্ : ৭৮, ৮১)

আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইস্রাঈলের কয়েকজন ব্যক্তিকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পুনরায় তাদেরকে ফিরিশ্তার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। তাদের অধিকাংশই তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ নয় বলে তাঁর নিয়ামত অস্বীকার করতঃ তা তাদের বাপ-দাদার সম্পদ বলে দাবি করলে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেন। আর যারা তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ বলে স্বীকার করলো তাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট হন এবং তাদের সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

إِنَّ ثَلاَثَةً فِيْ بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ: أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى، أَرَادَ اللهُ أَنْ يَّبْتَلِيَهُمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا، فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْإِبِلُ، أَوْ قَالَ: الْبَقَرُ ـ شَكَّ إِسْحَاقُ ـ إِلاَّ أَنَّ الْأَبْرَصَ أَوِ الْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا: الْإِبِلُ وَقَالَ الْآخَرُ: الْبَقَرُ، قَالَ: فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَآءَ، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا .

قَالَ: فَأَتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ هَذَا الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ وَأُعْطِيَ شَعْرًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْبَقَرُ، فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلًا، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا.

قَالَ: فَأَتَى الْأَعْمَى فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: أَنْ يَرُدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ فَأُبْصِرَ بِهِ النَّاسَ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْغَنَـمُ، فَأُعْطِيَ شَاةً وَالِدًا، فَأَنْتَجَ هَذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا، قَالَ: فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنَ الْإِبِلِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْغَنَمِ .

قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ، قَدِ انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلاَ بَلاَغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجِلْدَ الْحَسَنَ وَالْمَالَ بَعِيْرًا أَتَبَلَّغُ عَلَيْهِ فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: الْحُقُوْقُ كَثِيْرَةٌ، فَقَالَ لَهُ: كَأَنِّيْ أَعْرِفُكَ، أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ؟ فَقِيْرًا فَأَعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ: إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِرٍ، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتُ .

قَالَ: وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِيْ صُوْرَتِهِ، فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا، وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلَى هَذَا، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ.

قَالَ: وَأَتَى الْأَعْمَى فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ وَابْنُ سَبِيْلٍ، انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلاَ بَلاَغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ، شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ، فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ، فَوَاللهِ لاَ أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ شَيْئًا أَخَذْتَهُ لِلَّهِ، فَقَالَ: أَمْسِكْ مَالَكَ، فَإِنَّمَا ابْتُلِيْتُمْ، فَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيْكَ

‘‘বনী ইস্রাঈলের তিন ব্যক্তি শ্বেতী রোগী, টাক মাথা ও অন্ধের নিকট আল্লাহ্ তা’আলা জনৈক ফিরিশ্তা পাঠিয়েছেন তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে। ফিরিশ্তাটি শ্বেতী রোগীর নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়। যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: উট অথবা গরু। শ্বেতি রোগী অথবা টাক মাথার যে কোন এক জন উট চেয়েছে আর অন্য জন গাভী। বর্ণনাকারী ইস্হাক এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছে। যা হোক তাকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উষ্ট্রী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তাটি তার জন্য দো’আ করলেন: আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ উষ্ট্রীর মধ্যে বরকত দিক!

এরপর ফিরিশ্তাটি টাক মাথা লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর চুল এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়। যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর চুল দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: গাভী। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি গাভী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তাটি তার জন্য দো’আ করলেন: আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ গাভীর মধ্যে বরকত দিক!

এরপর ফিরিশ্তাটি অন্ধ লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেয়। যাতে আমি মানুষ জন দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্ তা’আলা তার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেন। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: ছাগল। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি ছাগী দেয়া হলো। অতঃপর প্রত্যেকের উষ্ট্রী, গাভী ও ছাগী বাচ্চা দিতে থাকে। এতে করে কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যেকের উট, গরু ও ছাগলে এক এক উপত্যকা ভরে যায়।

আরো কিছু দিন পর ফিরিশতাটি শ্বেতী রোগীর নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি এক জন গরিব মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা’আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি উট চাচ্ছি যিনি তোমাকে সুন্দর রং, মনোরম চামড়া ও সম্পদ দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: দায়িত্ব অনেক বেশি। তোমাকে কিছু দেয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। ফিরিশ্তাটি তাকে বললেন: তোমাকে চেনা চেনা মনে হয়। তুমি কি শ্বেতী রোগী ছিলে না? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করতো। তুমি কি দরিদ্র ছিলে না? অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন। সে বললো: না, আমি কখনো গরিব ছিলাম না। এ সম্পদগুলো আমি বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। অতঃপর ফিরিশ্তাটি বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

অনুরূপভাবে ফিরিশ্তাটি টাক মাথার নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে সে জাতীয় কথাই বললেন যা বলেছেন শ্বেতী রোগীর সঙ্গে এবং সেও সে উত্তর দিলো যা দিয়েছে শ্বেতী রোগী। অতঃপর ফিরিশ্তাটি বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

তেমনিভাবে ফিরিশ্তাটি অন্ধের নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি দরিদ্র মুসাফির মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা’আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি ছাগল চাচ্ছি যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: আমি নিশ্চয়ই অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আমার চক্ষু ফিরিয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমার যা ইচ্ছা নিয়ে যাও এবং যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আজ আমি তোমাকে বারণ করবো না যাই তুমি আল্লাহ্’র জন্য নিবে। ফিরিশ্তাটি বললেন: তোমার সম্পদ তুমিই রেখে দাও। তোমাদেরকে শুধু পরীক্ষাই করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তোমার সাথীদ্বয়ের উপর হয়েছেন অসন্তুষ্ট’’। (বুখারী, হাদীস ৩৪৬৪, ৬৬৫৩ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৪)

উক্ত হাদীসে প্রথমোক্ত ব্যক্তিদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ অস্বীকার ও তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কারণে তিনি তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁর দেয়া নিয়ামত তিনি তাদের থেকে ছিনিয়ে নেন। অন্য দিকে অপর জন তাঁর নিয়ামত স্বীকার করেন এবং তাতে তাঁর অধিকার আদায় করেন বিধায় আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।

অতএব নিয়ামতের শুকর আদায় করা অপরিহার্য। নিয়ামতের শুকর বলতে বিনয় ও ভালোবাসার সঙ্গে অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ স্বীকার করাকেই বুঝানো হয়।

সুতরাং যে ব্যক্তি নিয়ামত সম্পর্কে একেবারেই অবগত নয় সে নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে নিয়ামত সম্পর্কে অবগত তবে নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত নয় সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত তবে সে তা স্বীকার করে না সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত এমনকি সে তা স্বীকারও করে কিন্তু তা বিনয় ও ভালোবাসা নিয়ে নয় তা হলে সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত এমনকি সে তা বিনয় ও ভালোবাসার সঙ্গে স্বীকারও করে এবং সে তা নিয়ামতদাতার আনুগত্যেই খরচ করে তা হলে সে সত্যিকারার্থেই নিয়ামতের শুকর আদায়কারী।