প্রশ্ন: একটি দেশে প্রায় পয়ত্রিশটি মাসজিদ রয়েছে যার মধ্যে জুম‘আর সালাত আদায় করা হয়, মুসল্লিগণ জুম‘আর সালাত আদায়ের পর আবার যোহরের সালাত পড়ে থাকে, এটা জায়েয কি না?

 উত্তর: শর‘ঈ প্রমাণ এবং প্রয়োজনের দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক, স্বাধীন ও মুকীম পুরুষদের ব্যাপারে একটি ফরয আদায়ের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা যোহরের সময় জুম‘আর সালাত পড়ার বিধান করেছেন। কাজেই মুসলিমগণ যখন তা আদায় করবে তখন আর দ্বিতীয় কোনো ফরয আদায় করতে হবে না, না যোহর এবং না অন্য কোনো সালাত বরং জুম‘আর সালাতই সেই সময়ের ফরয। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবীবৃন্দ এবং তাদের পরবর্তী সালাফগণ জুম‘আর সালাত আদায়ের পর অন্য কোনো সালাত আদায় করতেন না। বরং আপনি যা উল্লেখ করেছেন তা তাদের কয়েক যুগ পর আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তা একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة»

“(দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাক! কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”[1]

তিনি আরো বলেন:

(من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد)

“যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জুম‘আর সালাতের পর যোহরের সালাত পড়া একটি নতুন কাজ যা রাসূলের সুন্নাতে নেই, কাজেই তা প্রত্যাখ্যাত এবং তা বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতার অন্তর্ভুক্ত; যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। আলেমগণও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে জামাল উদ্দীন আল কাসেমী তার (বিদ‘আত ও দিবস পালন থেকে মাসজিদের সংস্কার) নামক কিতাবে, আল্লামা মুহাম্মদ আহমাদ আব্দুস সালাম তার (সুন্নাত ও বিদ‘আত) নামক কিতাবে সতর্ক করেছেন।

যদি কেউ বলে যে, জুম‘আর সালাত সঠিক না হওয়ার ভয়ে আমরা এটা সতর্কতামূলক করে থাকি। এর উত্তরে প্রশ্নকারীকে বলা যায় যে, আসল হলো জুম‘আর সালাত সঠিক হয়ে যাওয়া এবং যোহরের সালাত ওয়াজিব না হওয়া বরং যার উপর জুম‘আ ফরয তার জন্য জুম‘আর সময় যোহরের সালাত জায়েয না হওয়া। সতর্কতামূলক পালন করা হয় তখন, যখন সুন্নাত গোপনীয় থাকে এবং মনে সন্দেহ জাগে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রেতো কোনো সন্দেহ হওয়ার কথা নয়, বরং আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে জানি যে, ওয়াজিব হচ্ছে শুধু জুম‘আর সালাত, কাজেই এ সময়ে জুম‘আর পরিবর্তে অন্য কোনো সালাত পড়া জায়েয নেই এবং তা সঠিক না হওয়ার অজুহাতে এর সাথে অন্য সালাত যোগ করাও জায়েয নেই। দ্বীনের প্রয়োজনে জানা যায় যে, এতে নতুন কোনো বিধান তৈরী করা যার কোনো নির্দেশ আল্লাহ দেননি এবং এ সময়ে যোহরের সালাত পড়া শর‘ঈ প্রমাণের পরিপন্থী। কাজেই তা ত্যাগ করে এ থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তা করার নির্ভরযোগ্য কোনো কারণ নেই বরং তা মানুষকে সঠিক পথ থেকে দূরে রাখার জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং আল্লাহর নির্দেশ বহির্ভূত দ্বীনের বিধান গড়া। যেমন কারো কারো জন্য সতর্কতামূলক অজু করার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে ফলে তাকে অজুর মাধ্যমে কষ্ট দেয়, যা থেকে সে সহজে সরতে পারে না। যখনই সে অজু শেষ করতে চায় তখনই কুমন্ত্রণা দেয় যে তার অজু সঠিক হয়নি, এটা করেনি সেটা করেনি, এমনিভাবে কেউ কেউ সালাতে তাকবীরে তাহরিমার সময় কুমন্ত্রণা দেয় যে, তাকবীর দেয় নি তখন সে একের পর এক তাকবীর দিতে থাকে ফলে দেখা যায় সে তাকবীর দিতে দিতে ইমাম ক্বেরাত শেষ করে ফেলে বা রাকাত শেষ করে ফেলে। এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং কোনো মুসলিমের আমল বাতিল করা ও তার আমলে ভেজাল লাগানোর জন্য তার প্রচেষ্টা।

শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা ও সুস্থতা চাচ্ছি। নিশ্চয় তিনি প্রার্থনা গ্রহণকারী।মোটকথা জুম‘আর সালাতের পর যোহরের সালাত পড়া বিদ‘আত, পথভ্রষ্টতা এবং আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে শরিয়ত গড়া। কাজেই তা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা এ থেকে সতর্ক থাকা, সধারণ মানুষকে সতর্ক করা এবং শুধু জুম‘আর সালাত আদায় করা ওয়াজিব। যেমন এর উপর চলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণ এবং বর্তমান পর্যন্ত তাদের অনুসারীগণ। আর তা-ই নিঃসন্দেহে সত্য। ইমাম মালেক ইবন আনাস রাহেমাহুল্লাহ বলেন ‘‘এ উম্মাতের পরবর্তী লোকগণকে তা-ই সংশোধন করতে পারবে যা পূর্ববর্তীগণকে সংশোধন করেছিল’’। এমনিভাবে তার পূর্বের এবং পরের ইমামগণও এ কথা বলেছেন।

[1] আহমাদ ১৬৬৯৫, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৬৭৬ এবং ইবনে মাজাহ ৪২।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে