‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ، فَلَمَّا هَاجَرَ إِلَى الْمَدِينَةِ، صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، فَلَمَّا فُرِضَ شَهْرُ رَمَضَانَ قَالَ: «مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“জাহেলী যুগে কুরাইশের লোকেরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর মদীনায় হিজরত করার পরার পর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।”[1]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كَانَ يُصَامُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হলো তখন যার ইচ্ছা সে আশুরার দিনে সাওম পালন করতো আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিতো”।[2]

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِصِيَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»

“কুরায়শরা জাহিলী যুগে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও এদিন সাওম পালন করার নির্দেশ দিতেন। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যার ইচ্ছা, সে এদিন সাওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে”।[3]

‘আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,

«عَنْ نَافِعٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَهُ، وَالْمُسْلِمُونَ قَبْلَ أَنْ يُفْتَرَضَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا افْتُرِضَ رَمَضَانُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عَاشُورَاءَ يَوْمٌ مِنْ أَيَّامِ اللهِ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ»

“জাহেলী যুগে লোকেরা আশুরার দিন সাওম রাখতো। রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ এ দিন সাওম রাখতেন। অতঃপর যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর দিনগুলোর মধ্যে ‘আশুরাও একটি দিন। কাজেই যে চায় ঐ দিনের সাওম রাখতে পারে আর যে চায় নাও রাখতে পারে।”[4]

ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,

«أَنَّهُ ذُكِرَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَانَ يَوْمًا يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ كَرِهَ فَلْيَدَعْهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে ‘আশুরা সর্ম্পকে কথা উঠলো। তিনি বললেন, “জাহেলী যুগের লোকেরা ঐ দিন সাওম রাখতো। সুতরাং এখন তোমাদের কেউ যদি ঐ দিন সাওম রাখা পছন্দ করে তাহলে সে ঐ দিন সাওম রাখতে পারে। আর অপছন্দ করলে সে নাও রাখতে পারে”।[5]

নাফে‘ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আশুরার দিন বলতে শুনেছেন,

«إِنَّ هَذَا يَوْمٌ كَانَ يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ» وَكَانَ عَبْدُ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَا يَصُومُهُ، إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صِيَامَهُ "

“আজকের এ দিনে জাহেলী যুগের লোকেরা সাওম রাখতো। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দিনের সাওম রাখা পছন্দ করে সে যেন (এ দিনে) সাওম রাখে। আর যে ব্যক্তি অপছন্দ করে সে যেন এ দিনের সাওম থেকে বিরত থাকে। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ দিন সাওম রাখলো না। কিন্তু যেসব দিনে তিনি সাওম রাখার অভ্যস্ত ছিলেন এর কোনো একদিন ‘আশুরা হলে তিনি সেদিনও সাওম রাখতেন”।[6]

‘আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى عَبْدِ اللهِ، وَهُوَ يَتَغَدَّى فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ إِلَى الْغَدَاءِ، فَقَالَ: أَوَلَيْسَ الْيَوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ: وَهَلْ تَدْرِي مَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ؟ قَالَ: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: إِنَّمَا هُوَ يَوْمٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ شَهْرُ رَمَضَانَ، فَلَمَّا نَزَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ تُرِكَ» وقَالَ أَبُو كُرَيْبٍ تَرَكَهُ».

“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন, তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! তুমি খাবার জন্য কাছে এসো। তিনি বললেন, আজ কি ‘আশুরার দিন নয়? তিনি বললেন, তুমি কি জানো ‘আশুরা দিবস কী? আশ‘আস রহ. বললেন, সে আবার কী? তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন। যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হলো”।[7]

কায়স ইবন সাকান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ الْأَشْعَثَ بْنَ قَيْسٍ، دَخَلَ عَلَى عَبْدِ اللهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهُوَ يَأْكُلُ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ فَكُلْ، قَالَ: إِنِّي صَائِمٌ، قَالَ: كُنَّا نَصُومُهُ ثُمَّ تُرِكَ»

“আশুরার দিন আশ‘আস ইবন কায়স রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি আহার করছিলেন। তিনি আশ‘আসকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! নিকটে এসো, খানা খাও। তিনি বললেন, আমি তো সাওম পালন করছি। এ কথা শুনে ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমরা এ সাওম পালন করতাম। পরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”[8]

‘আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى ابْنِ مَسْعُودٍ وَهُوَ يَأْكُلُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، إِنَّ الْيَوْمَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: قَدْ كَانَ يُصَامُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ رَمَضَانُ، فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ، تُرِكَ، فَإِنْ كُنْتَ مُفْطِرًا فَاطْعَمْ»

“আশ‘আস ইবন কায়স রহ. ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলেন। সেটা ‘আশুরার দিন ছিল। তখন তিনি খানা খাচ্ছিলেন। এ দেখে আশ‘আস রহ. বললেন, হে ‘আব্দুর রহমানের পিতা! আজ তো ‘আশুরার দিন। তিনি বললেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনে সাওম পালন”।[9]

জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنَا بِصِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَيَحُثُّنَا عَلَيْهِ، وَيَتَعَاهَدُنَا عِنْدَهُ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ، لَمْ يَأْمُرْنَا، وَلَمْ يَنْهَنَا وَلَمْ يَتَعَاهَدْنَا عِنْدَهُ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আমাদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দিতেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। কিন্তু যখন রমযানের সাওম ফরয হলো, তখন তিনি আমাদেরকে আদেশও করেন নি, বাধ্যও করেন নি এবং কোনো খোঁজ-খবর আর নেন নি।”[10]

হুমাইদ ইবন ‘আব্দুর রহমান রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণিত,

«عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، خَطِيبًا بِالْمَدِينَةِ يَعْنِي فِي قَدْمَةٍ قَدِمَهَا خَطَبَهُمْ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ؟ يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لِهَذَا الْيَوْمِ هَذَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ، وَلَمْ يَكْتُبِ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَأَنَا صَائِمٌ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَ فَلْيَصُمْ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُفْطِرَ فَلْيُفْطِرْ»

“তিনি একদিন মু‘আবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মদীনায় খুতবায় বলতে শুনলেন অর্থাৎ যখন মদীনায় এসেছিলেন তখন ‘আশুরার দিবসে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের ‘আলেমগণ কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দিন সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, এ হলো ‘আশুরা দিবস। তোমাদের ওপর এ দিনের সাওম ফরয করেন নি। তবে আমি সাওম পালন করছি। তাই তোমাদের মধ্যে যে সাওম পালন করতে পছন্দ করে, সে পালন করবে আর যে পছন্দ করে নি সে করবে না।”[11]

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ؟ فَقَالُوا: هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي أَظْهَرَ اللهُ فِيهِ مُوسَى، وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ، فَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরত করে) মদীনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালন করতে দেখতে পেলেন। এরপর তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, এ সে দিন যে দিন আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাঈলকে ফির‘আউনের ওপর বিজয়ী করেছিলেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা সাওম পালন করে থাকি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তোমাদের চেয়েও মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন”।[12]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟» فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ

ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদেরকে ‘আশুরার দিন সাওম পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কোনো দিনের সাওম পালন করছ? তারা বলল, এ মহান দিন আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফির‘আউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মুসা আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সাওম পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সাওম পালন করছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা তো তোমাদের থেকে মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী এবং হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করলেন এবং সাওম পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন”।[13]

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ، وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صُومُوهُ أَنْتُمْ»

“ইয়াহূদী সম্প্রদায় ‘আশুরা দিবসের সম্মান প্রদর্শন করতো এবং তারা এ দিনকে ঈদ বলে গণ্য করতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”।[14]

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَصُومُوهُ أَنْتُمْ»

“খায়বারের ইয়াহূদীরা ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত, তারা এ দিনকে ঈদরূপে বরণ করত এবং তারা তাদের মহিলাদেরকে অলঙ্কার ও উত্তম পোশাকে সুসজ্জিত করত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর”।[15]

‘উবায়দুল্লাহ ইবন আবু ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে শুনেছেন,

«وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: مَا عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الْأَيَّامِ إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ وَلَا شَهْرًا إِلَّا هَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي رَمَضَانَ».

“ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ‘আশুরার দিনে সাওম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো দিনকে অন্য দিনের তূলনায় উত্তম মনে করে সেদিনে সাওম পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। অনুরূপভাবে রমযান ব্যতীত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে সাওম পালন করেছেন বলেও আমার জানা নেই।”[16]

হাকাম ইবন ‘আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ، فَقُلْتُ لَهُ: أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: إِذَا رَأَيْتَ هِلَالَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ، وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا، قُلْتُ: هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ قَالَ: نَعَمْ»

“আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার কাছে পৌঁছলাম। এ সময় তিনি যমযমের কাছে চাদর বিছানো অবস্থায় বসা ছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম! আমাকে ‘আশুরা দিবসের সাওম পালন সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে তিনি বললেন, মুহাররম মাসের চাঁদ দেখার পর তুমি এর তারিখগুলো গুণে রাখবে। এরপর নবম তারিখে সাওম অবস্থায় তোমার যেন ভোর হয়। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সেদিন সাওম পালন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, করেছেন”।[17]

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ: فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেন এবং লোকদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সাওম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসে নি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়ে যায়।”[18]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لَأَصُومَنَّ التَّاسِعَ» وَفِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرٍ: قَالَ: يَعْنِي يَوْمَ عَاشُورَاءَ

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি যদি আগামী বছর বেচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও সাওম পালন করব”। আবু বকর রহ. বলেন, নবম তারিখই হচ্ছে ‘আশুরার দিন।[19]

সালামা ইবন আকও‘য়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَأَمَرَهُ أَنْ يُؤَذِّنَ فِي النَّاسِ: «مَنْ كَانَ لَمْ يَصُمْ، فَلْيَصُمْ وَمَنْ كَانَ أَكَلَ، فَلْيُتِمَّ صِيَامَهُ إِلَى اللَّيْلِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন লোকদের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করে যে যে সাওম পালন করেনি, সে যেন সাওম পালন করে এবং যে আহার করেছে, সে যেন রাত পর্যন্ত তার সাওম স্পর্শ করে”।[20]

রুবায়্যি‘ বিনত মু‘য়াওয়ায ইবন ‘আফরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَرْسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الْأَنْصَارِ، الَّتِي حَوْلَ الْمَدِينَةِ: مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا، فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ فَكُنَّا، بَعْدَ ذَلِكَ نَصُومُهُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا الصِّغَارَ مِنْهُمْ إِنْ شَاءَ اللهُ، وَنَذْهَبُ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهَا إِيَّاهُ عِنْدَ الْإِفْطَارِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন ভোরে এক ব্যক্তিকে মদীনার পার্শবর্তী আনসারী সাহাবীদের জনপদে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন এ ঘোষণা করে দেয় যে, সাওমরত অবস্থায় যার ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনকে পূর্ণ করে। আর যার ইফতার অবস্থায় ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত অবস্থায় পূর্ণ করে। এরপর আমরা এ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সাওম পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদের জন্য পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এমনি করে ইফতারের সময় হয়ে যেত।”[21]

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৫।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৫।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।

[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৬।

[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।

[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।

[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৭।

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৮।

[11] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২৯।

[12] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০।

[13] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০।

[14] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩১।

[15] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩১।

[16] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩২।

[17] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৩।

[18] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।

[19] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৪।

[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৫।

[21] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৬।