এক ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গেলে এক হুকবা বা দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে - ৪

(20) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لا طُهُوْرَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لا صَلاَةَ لَهُ إِنَّمَا مَوْضِعُ الصَّلاَةِ مِنَ الدِّيْنِ كَمَوْضِعِ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ.

(২০) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না, যে ছালাত আদায় করে না তার দ্বীন নেই। মূলতঃ দ্বীনের মধ্যে ছালাতের স্থান অনুরূপ যেমন শরীরের মধ্যে মাথার স্থান।[1]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, মিনদিল ছাড়া উবায়দুল্লাহ বিন ওমর থেকে এই হাদীছ কেউ বর্ণনা করেনি। আর হাসান তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে।[2] উল্লেখ্য যে, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই মর্মে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[3]

(21) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ مَنْ تَرَكَ صَلاةً لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.

(২১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দিল সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন তিনি ঐ ব্যক্তির উপর রাগান্বিত থাকবেন।[4]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে সিমাক ও সাহল ইবনু মাহমূদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে।[5]

(22) عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  ثَلاثَةٌ لا يَهُوْلُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَلاَ يَنَالُهُمُ الْحِسَابُ هُمْ عَلَى كَثِيْبٍ مِنْ مِسْكٍ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ حِسَابِ الْخَلاَئِقِ رَجُلٌ قَرَأَ الْقُرْآنَ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَأَمَّ بِهِ قَوْمًا وَهُمْ يَرْضَوْنَ بِهِ وَدَاعٍ يَدْعُو إِلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَعَبْدٌ أَحْسَنَ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ رَبِّهِ وَفِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ مَوَالِيْهِ.

(২২) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, এমন তিন ব্যক্তি আছে, যাদের জন্য ক্বিয়ামতের কঠিন কষ্টের ভয় নেই। অন্যান্য মাখলূকের হিসাব না হওয়া পর্যন্ত তাদের হিসাব দিতে হবে না। এর পূর্বে তারা মেশকের টিলায় ভ্রমণ করবে। এক- যে আল্লাহর জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছে, এমনভাবে ইমামতি করেছে যে মুক্তাদীরা তার উপর সন্তুষ্ট। দুই- ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ছালাতের দিকে আহবান করে। তিন- ঐ ব্যক্তি, যে তার মনীবের সাথে ও আয়ত্বাধীন লোকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।[6]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে উছমান ইবনু ক্বায়েস আবুল ইয়াকযান ও বাশীর ইবনু আছেম নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।[7]

(২৩) عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ سَلْمَانَ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ  حَدَّثَهُ قَالَ لَمَّا فَتَحْنَا خَيْبَرَ أَخْرَجُوْا غَنَائِمَهُمْ مِنَ الْمَتَاعِ وَالسَّبْىِ فَجَعَلَ النَّاسُ يَتَبَايَعُوْنَ غَنَائِمَهُمْ فَجَاءَ رَجُلٌ حِيْنَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ  فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَقَدْ رَبِحْتُ رِبْحًا مَا رَبِحَ الْيَوْمَ مِثْلَهُ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ هَذَا الْوَادِى قَالَ وَيْحَكَ وَمَا رَبِحْتَ قَالَ مَا زِلْتُ أَبِيْعُ وَأَبْتَاعُ حَتَّى رَبِحْتُ ثَلاَثَمِائَةِ أُوقِيَّةٍ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ  أَنَا أُنَبِّئُكَ بِخَيْرِ رَجُلٍ رَبِحَ قَالَ مَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الصَّلاَةِ.

(২৩) উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী তার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, আমরা যখন খায়বার বিজয় করলাম, তখন তারা তাদের গণীমত সমূহ বের করে দিল। যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী ছিল। লোকেরা তাদের নিকট থেকে গণীমত ক্রয় করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, এই ব্যবসায় আমার যা লাভ হয়েছে অন্য কারো এত লাভ হয়নি। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কত লাভ হয়েছে? সে বলল, আমি সমানে ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম তাতে ৩০০ উকিয়া লাভ হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় এমন কথা বলব? সে বলল, সেটা কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ফরয ছালাতের পর দুই রাক‘আত ছালাত।[8]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে।[9]

(24) عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَوْصَانِىْ خَلِيْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ  بِسَبْعِ خِصَالٍ فَقَالَ لاَ تُشْرِكُوْا بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِعْتُمْ أَوْ حُرِّقْتُمْ أَوْ صُلِّبْتُمْ وَلاَ تَتْرُكُوا الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدِيْنَ فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا فَقَدْ خَرَجَ مِنَ الْمِلَّةِ وَلاَ تَرْكَبُوْا الْمَعْصِيَةَ فَإِنَّهَا سَخَطُ اللهِ وَلاَ تَشْرَبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا رَأْسُ الْخَطَايَا كُلِّهَا وَلاَ تَفِرُّوْا مِنَ الْمَوْتِ أَوِ الْقَتْلِ وَإِنْ كُنْتُمْ فِيْهِ وَلاَ تَعْصَ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الدُّنْيَا كُلِّهَا فَاخْرُجْ وَلاَ تَضَعْ عَصَاكَ عَنْ أَهْلِكَ وَأَنْصِفْهِمْ مِنْ نَفْسِكَ.

(২৪) উবাদা ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, আমার বন্ধু রাসূল (ছাঃ) আমাকে সাতটি বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। তিনি বলেন, (১) তোমরা শিরক করবে না যদিও তোমাদেরকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে পোড়ানো হয় অথবা শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা হয় (২) তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ছালাত ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। (৩) অবাধ্যতার নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ এটা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। (৪) মদ্যপান করো না। কারণ উহা প্রত্যেক পাপের উৎস (৫) মৃত্যু কিংবা জিহাদ থেকে পলায়ন করো না, যদি তার মধ্যে পড়ে যাও (৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। যদি তারা তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে তবুও তুমি তা থেকে বিরত থাক (৭) তুমি তোমার পরিবার থেকে আদর্শের লাঠি তুলে নিও না এবং তোমার পক্ষ থেকে তাদের উপর ইনছাফ করো।[10]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে সালামাহ ইবনু শুরাইহ ও ইয়াযীদ ইবনু ক্বাওযুর নামে দু’জন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও যাহাবী তাদের অপরিচিত বলেছেন।[11] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে দশটি নছীহত করেছিলেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ ছহীহ।[12]

(25) عَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ  حَيْثُ حَضَرَتْهُ الْوَفَاةُ قَالَ فَقَالَ لَنَا اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاَةِ اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاةِ ثَلاَثًا اِتَّقُوا اللهَ فِيْمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ اِتَّقُوا اللهَ فِى الضَّعِيْفَيْنِ الْمَرْأَةِ الْأَرْمَلَةِ وَ الصَّبِىِّ الْيَتِيْمِ اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاَةِ فَجَعَلَ يُرَدِّدُهَا وَ هُوَ يَقُوْلُ الصَّلاَةُ وَ هُوَ يُغَرْغِرُ حَتَّى فَاضَتْ نَفْسُهُ.

(২৫) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা ছালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। এটা তিনবার বললেন। অতঃপর তোমাদের দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং দুই শ্রেণীর দুর্বল লোকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর- বিধবা নারী ও ইয়াতীম বালক। তারপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, ছালাতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আত্মা বের হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ছালাতের কথা বলতেই থাকলেন।[13]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আম্মার ইবনু যুরাবী নামে মাতরূক ও মিথ্যুক রাবী আছে।[14] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ কথা ছিল ছালাত ও নারী জাতি সম্পর্কে- উক্ত মর্মে যে হাদীছ ইবনু মাজাহতে এসেছে তা ছহীহ।[15]

[1]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব ২/৩৮৩ পৃঃ; আল-মু‘জামুছ ছাগীর হা/১৬২; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯০।

[2]. لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بن عُمَرَ إِلا مِنْدَلٌ وَلا عَنْ مِنْدَلٍ إِلا حَسَنٌ تَفَرَّدَ بِهِ الْحُسَيْنُ بن الْحَكَمِ-যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১৩; যঈফুল জামে‘ হা/৬১৭৮।

[3]. আহমাদ হা/১২৪০৬; সনদ ছহীহ, ছহীহ তারগীব হা/৩০০৪; মিশকাত হা/৩৫।

[4]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১১৬১৭; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯১।

[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৭৩।

[6]. ত্বাবারাণী হা/১১১৬; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯৫।

[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৮১২; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৮৬৩।

[8]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৫, ২/৩৮৫ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৫।

[9]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৪৮।

[10]. আল-আহাদীছিল মুখতারাহ হা/৩৫১; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৯৬।

[11]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯৯১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০০।

[12]. আহমাদ হা/২২১২৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৫৭০; সনদ হাসান, মিশকাত হা/৬১, পৃঃ ১৮।

[13]. বায়হাক্বী হা/১১০৫৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৭।

[14]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২১৬।

[15]. ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮, পৃঃ ১৯৩, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬, ২/৭০১ পৃঃ।