আমি রাতের সাহূর (সেহরী) এর সময় গোসল করেছি কারণ আমি জানি যে আমার মাসিক এই দিনে শেষ হবে, এরপর আমি সেহরী খেয়েছি, সাওম পালন করেছি ও সালাত ও আদায় করেছি। কিন্তু আমার এরপর ফাজর থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত সময়ে কোন কিছু বের হয়নি।এরপর আমি যখন সালাত আদায়ের জন্য গেলাম দেখতে পেলাম যে আমার মাসিক আসলেই শেষ হয়েছে, এক্ষেত্রে আমার সিয়াম ও সালাত কি সঠিক হয়েছে?

ফাত্‌ওয়া নং - 66062

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

একজন হায়েয ওয়ালী বা ঋতুবতী নারীর মাসিক শেষ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার আগে হায়েয থেকে গোসল করা, সালাত আদায় করা ও সিয়াম পালন করায় তাড়াহুড়ো করা জায়েয (বৈধ) নয়।

আর একজন নারী তার হায়েয (মাসিক) শেষ হওয়ার ব্যাপারটি জানতে পারে সাদা স্রাব বের হওয়ার মাধ্যমে যা তাদের (নারী সমাজে) পরিচিত, আর তা হল, আল-ক্বাস্বস্বাতুল বাইদ্বা’ (শ্বেতস্রাব)। আর নারীদের কেউ কেউ তার পবিত্রতা রক্তের পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জানতে পারে।

সুতরাং একজন নারীর উচিৎ পবিত্রতার ব্যাপারে (পুরোপুরি) নিশ্চিত না হয়ে গোসল করবে না করা।

ইমাম আল-বুখারী ‘ইক্ববাল আল-মাহীদ্ব ওয়া ইদবারিহ’ অধ্যায়ে বলেছেন: ‘আর মহিলা সাহাবীগণ ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে পাত্রে করে তুলো পাঠাতেন যাতে হলদে রঙ থাকতো। তিনি বলতেন : ‘আপনারা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবেন না।’ তিনি এর দ্বারা হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া বোঝাতেন। যায়িদ ইবনু সাবিতের কন্যার কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে নারীরা গভীর রাতে আলোকবাতির সাহায্যে পবিত্রতা এসেছে কিনা তা দেখতেন। তিনি ‘নারীরা এরূপ করত না’ বলে তাঁদের সমালোচনা করেন।” সমাপ্ত

হাফিয ইবনু হাজার –রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন:

‘আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, হায়েযের শুরু বোঝা যায় তা হওয়ার সময় রক্ত পড়ার মাধ্যমে এবং তারা তা শেষ হওয়ার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

কেউ বলেছেন, তা জানা যায় শুষ্কতার মাধ্যমে; আর তা হল সেখানে কোন কিছু প্রবেশ করালে তা যদি শুষ্ক অবস্থায় বের হয়।

আবার কেউ বলেন তা জানা যাবে শ্বেতস্রাব এর মাধ্যমে। আর এই মতটি লেখক- অর্থাৎ ইমাম আল-বুখারী প্রাধান্য দিয়েছেন।”

আর এতে আছে, শ্বেতস্রাব হায়েয শেষ হওয়ার চিহ্ন। আর এ দ্বারা পবিত্রতা শুরু হয়েছে তা বোঝা যায়। আর তিনি তাঁদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন যাদের মতে এটি (পবিত্রতা) শুষ্কতার মাধ্যমে বোঝা যায়; কারণ, হায়েযের মাঝেও (ভেতরে প্রবেশ করানো) তুলো শুষ্ক অবস্থায় বের হতে পারে, সে ক্ষেত্রে এর মাধ্যমে হায়েয শেষ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না, যা শ্বেতস্রাব এর বিপরীত। আর তা এক ধরণের সাদা তরল যা জরায়ু হায়েযের শেষে বের করে দেয়।

ইমাম মালিক বলেছেন:

“আমি নারীদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি, এটি তাদের মধ্যে পরিচিত একটি ব্যাপার যা তারা পবিত্রতার সময় দেখা যায়।” সমাপ্ত। [ফাত্‌হুল-বারী, (১/৪২০)]

শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন- রাহিমাহুল্লাহ তা‘আলা-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল হায়েয ওয়ালী (ঋতুবতী নারী) যদি ফাজরের আগে পবিত্র হয় ও পরে গোসল করে তবে তার হুকুম কি?

তিনি এর উত্তরে বলেন :

“তার সাওম সঠিক হয়েছে যদি সে ফাজর উদিত হওয়ার (অর্থাৎ ফাজরের সময় শুরু হওয়ার) আগে পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। মূলনীতিটি হল, একজন নারীকে সে যে পবিত্র হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে কারণ, নারীদের কেউ কেউ মনে করে যে সে পবিত্র হয়েছে, কিন্তু আসলে সে পবিত্র হয় নি। এ কারণে মহিলা সাহাবীগণ ‘আয়েশাহ্‌ -রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কাছে তুলো নিয়ে আসতেন এবং পবিত্রতার চিহ্ন এসেছে কিনা তা জানতে তাঁকে তা দেখাতেন, তিনি (‘আয়েশাহ্‌) তাঁদেরকে বলতেন :

“আপনারা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবেন না।”

তাই একজন নারীর উচিৎ ধীরস্থির ভাবে নিশ্চিত হওয়া যে সে পবিত্র হয়েছে কি না। সে পবিত্র হলে সাওম পালনের নিয়্যাত করবে যদিও বা সে ফাজর উদিত হওয়ার (অর্থাৎ ফাজরের সময় শুরু হওয়া) পরে গোসল করে, তবে তার উচিৎ সালাতের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া এবং সময় মত ফাজরের সালাত পড়ার জন্য তাড়াতাড়ি গোসল করে নেওয়া…”

[মাজমূ‘ ফাত্‌ওয়া আশ-শাইখ ইবন ‘উসাইমীন (১৭/প্রশ্ন নং-৫৩)]

আর প্রশ্নকারিণী এমন সময়ে গোসল করেছেন যখন তিনি হায়েয শেষ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন নি, আর তিনি হায়েয থেকে তাঁর পবিত্রতার ব্যাপারে দেরীতে জানতে পেরেছেন, আর তা ছিল যা তার বক্তব্য অনুসারে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে।

সে কারণে প্রশ্নকারিণী যা করেছেন তা সঠিক হয় নি এবং তার সে দিনের সাওম শুদ্ধ হয় নি। তাই তাকে সেই দিনের কাযা করতে হবে।

আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর (প্রশ্নকারিনীর জন্য) উপকারী জ্ঞান ও ভালো কাজের তাওফীক্ব চাই।

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।