যদি কোনো প্রশ্নকারী এ প্রশ্ন করে যে: তাবিলপন্থীদের মাযহাব যে বাতিল তা আমরা সিফাত অধ্যায়ে বুঝতে পেরেছি। আর এটা জানা যে আশ‘আরী সম্প্রদায় তাবিলপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে কি আশ‘আরীদের মাযহাব বাতিল? অথচ বলা হয়ে থাকে যে, মুসলিমদের মধ্যে শতকরা পঁচানব্বই জনই আশ‘আরী।

যেখানে ইমাম আবুল হাসান আল-আশ‘আরী, আশ‘আরীদের অনুসরণীয় আদর্শ, সেখানে তাদের মাযহাব কি করে বাতিল হতে পারে? তাদের মাযহাব কি করে বাতিল হতে পারে, যেখানে তাদের মধ্যে অমুক অমুক আলেম রয়েছেন, যারা আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিমদের ইমামগণ ও সাধারণ মুসলিমদের জন্য কল্যাণপ্রত্যাশী ছিলেন?

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলব যে, অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের তুলনায় আশ‘আরীদের সংখ্যা এত বিশাল হবে এটি এমন একটি দাবি যা প্রমাণ করার জন্য সূক্ষ্ণ পরিসংখ্যান প্রয়োজন।

যদি আমরা মেনেও নিই যে আশ‘আরীদের সংখ্যা উল্লিখিত পরিমাণেই আছে, অথবা তার চেয়েও বেশি, তবু আমরা বলতে পারি না যে তারা ভুল থেকে মুক্ত। কারণ যা ভুলমুক্ত তা হলো মুসলিমদের ইজমা, সংখ্যায় অধিক হলেই ভুলমুক্ত হবে, তা জরুরি নয়। আর মুসলিমগণ প্রাচীনকালে যে বিষয়ে ইজমা করেছেন তা তাবিলপন্থীদের বিপরীত। সালাফে সালেহীন যারা এই উম্মতের পুরোভাগে ছিলেন - যেমন সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন এবং তৎপরবর্তী হিদায়েতের দিশারি ইমামগণ তারা সকলেই এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের জন্য যে নাম ও সিফাতসমূহ সাব্যস্ত করেছেন, অথবা আল্লাহ তা‘আলার জন্য তাঁর রাসূল যেসব নাম ও সিফাতসমূহ সাব্যস্ত করেছেন, তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হবে। আর এ সংক্রান্ত মূলবক্তব্যকে আল্লাহর জন্য উপযোগীভাবে তার বাহ্যিক অর্থেই নেওয়া হবে, কোনো বিকৃতিসাধন, বাতিলকরণ, ধরন-ধারণ নির্ধারণকরণ ও উদাহরণ নির্ণয়করণ ব্যতীতই।

আর তারা হলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা অনুযায়ী, উত্তম যুগের মানুষ। তাদের ঐকমত্য আবশ্যিকভাবে মান্য প্রমাণ। কেননা তাদের ইজমায় প্রতিফলিত হয়েছে কুরআন-সুন্নাহর দাবি। সিফাত-বিষয়ক মূলবক্তব্যে আলোচনাকালে চতুর্থ নম্বর মূলনীতিতে তাদের ইজমার বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে।

ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী এবং অন্যান্য ইমামগণ নিজেদেরকে ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে মনে করতেন না। বরং তারা তো দ্বীনের ইমাম বনার মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন নিজেদের কদর যথার্থরূপে বুঝা এবং নিজেদেরকে যথার্থ স্থানে রাখতে পারার কারণেই। তাদের অন্তরে ছিল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নতের তা‘যীম। যার কারণেই তারা ইমাম হওয়ার যোগ্য হয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে:

﴿ وَجَعَلۡنَا مِنۡهُمۡ أَئِمَّةٗ يَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُواْۖ وَكَانُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا يُوقِنُونَ ٢٤ ﴾ [السجدة: ٢٤]

আর আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত। (সূরা আস্সাজদাহ: ৩২: ২৪)

আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম আ. সম্পর্কে বলেন:

﴿ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ كَانَ أُمَّةٗ قَانِتٗا لِّلَّهِ حَنِيفٗا وَلَمۡ يَكُ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٢٠ شَاكِرٗا لِّأَنۡعُمِهِۚ ٱجۡتَبَىٰهُ وَهَدَىٰهُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٢١ ﴾ [النحل: ١٢٠، ١٢١]

নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক উম্মত[1], আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। সে ছিল তার নিয়ামতের শুকরকারী। তিনি তাকে বাছাই করেছেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। (সূরা আন-নাহল: ১৬: ১২০- ১২১)

>
[1] তিনি উম্মত বা জাতি ছিলেন, এই অর্থে যে, একটি জাতির মাঝে যে সমস্ত গুণাবলি পাওয়া যায়, ব্যক্তি ইব্রাহীমের মাঝেই তা বিদ্যমান ছিল। কারও কারও মতে এর অর্থ ‘আদর্শ পুরুষ’ ‘‘ইমাম’ বা কল্যাণের শিক্ষক।