অর্থাৎ যেসব বস্তু দিয়ে ব্যবসা করা হয়, যেমন ব্যবসার নানা পণ্য, জমি, গাড়ি ও ব্যবসার অন্যান্য সামগ্রী। অধিকাংশ আলিম বলেন: ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব। এটিই বিশুদ্ধ মত।

ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ:

ক. মালিকানা পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবসায়ী পণ্যের পূর্ণ মালিক হওয়া, যেমন ক্রয় বা হেবা বা মিরাস বা অন্য কোনোভাবে ব্যবসায়ী পণ্যের পূর্ণ মালিক হওয়া। এটিই বিশুদ্ধ মত। অতএব, কেউ যদি ব্যবসায়ী পণ্যের আমানতদার বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা জিম্মাদার হয় তার ওপর যাকাত ফরয হবে না।

খ. ব্যবসায়ী পণ্যের উদ্দেশ্য ব্যবসা হওয়া, যদি জমা ও ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সম্পদের মালিক হয়, ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে গণ্য হবে না।

গ. ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য স্বর্ণ বা রূপার নিসাব সমপরিমাণ হওয়া, অর্থাৎ সে যদি যাকাতের জন্য স্বর্ণের নিসাবকে গ্রহণ করে, তাহলে দেখবে তার ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য স্বর্ণের নিসাবের মূল্য বরাবর কি-না। আর যদি রূপার হিসেব আমলে নেয়, তাহলে দেখবে তার ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য রূপার নিসাবের মূল্য বরাবর কি-না।

ঘ. ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হওয়া।

কয়েকটি জরুরি বিষয়:

১. উদাহরণত কেউ যদি গাড়ি অথবা নিজের ব্যবহারের জন্য জমি অথবা বাড়ি নির্মাণ করার জন্য খরিদ করে, যা দিয়ে তার ব্যবসার নিয়ত ছিল না, অতঃপর প্রয়োজন না থাকায় অথবা অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যে সেটি বিক্রি করে দেয়, এতে উক্ত গাড়ি ও জমি ব্যবসায়ী পণ্য হবে না। কারণ, এগুলো ব্যবসার জন্য খরিদ করা হয় নি। অতএব, তাতে যাকাত নেই। আর যদি নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য কোনও বস্তু খরিদ করে অতঃপর সেটি দিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যখন থেকে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিবে তখন থেকে ব্যবসায়ী পণ্য হবে। তার নিসাব পরিমাণ মূল্যের ওপর যদি হিজরী এক বছর পূর্ণ হয় যাকাত ওয়াজিব হবে।

২. ব্যবসায়ী পণ্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়, প্রতি হিজরী বছর তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। অধিকাংশ আলিম এ কথা বলেছেন, এটিই বিশুদ্ধ।

৩. যদি ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব হয়, নিম্নের নিয়মে যাকাত বের করবে:

প্রথমত: হিজরী এক বছর পূর্ণ হলে ব্যবসার পণ্য পৃথক করবে, যেমন যাকাত দানকারীর নিকট যত মাল আছে সব মালের বর্তমান পাইকারি দর জানবে, অর্থাৎ যে মূল্য দিয়ে কিনেছে বা যে দামে বিক্রি করবে সেই দাম নয়, বরং বর্তমান দাম হিসেব করবে।

দ্বিতীয়ত: যাকাতের জন্য নিজের তরলমানি বা নগদ-ক্যাশ হিসেব করবে। যেমন, স্বর্ণ, রূপ ও নগদ অর্থ, তবে যার যাকাত দিয়েছে একই বছর তার ওপর দ্বিতীয়বার যাকাত ওয়াজিব হবে না। অতঃপর তার সাথে ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করবে, উদাহরণস্বরূপ যদি স্বর্ণ, রূপা ও নগদ অর্থ থাকে, স্বর্ণ ও রূপার মূল্য হিসেব করবে নিম্নের পদ্ধতিতে: একগ্রাম স্বর্ণের বাজার দরকে তার নিকট যত গ্রাম স্বর্ণ রয়েছে, সেই সংখ্যা দিয়ে পূরণ দিবে; একই পদ্ধতি অনুসরণ করবে রূপার ক্ষেত্রে, অতঃপর স্বর্ণ ও রূপার মূল্যের সাথে যোগ করবে নগদ অর্থ, অতঃপর স্বর্ণ-রূপার মূল্য, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করবে। এভাবে পুরো সম্পদের যাকাত বের করবে, এক হাজার টাকা থেকে ২৫ টাকা, অর্থাৎ স্বর্ণ ও রূপার মূল্য, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য থেকে ২.৫ পার্সেন্ট যাকাত দিবে।

কেউ যদি স্বর্ণ ও রূপার ব্যবসা করে, সে স্বর্ণ-রূপার যাকাত দিবে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে, যদি তার শর্ত পূরণ হয়। এ মাসআলায় ব্যবহারের অলঙ্কার যোগ হবে না, কারণ সেটি ব্যবসায়ী পণ্য নয়, অতএব, তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জ্ঞাতব্য:

ক. যদি কারও নিকট ঋণ থাকে তার ওপর যাকাত নেই। এটি বিশুদ্ধ মত।

খ. কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হয়, আর বছর শেষে ঋণ পরিশোধ করার সময় হয়, তবে আগে ঋণ দিবে, ঋণের যাকাত তার ওপর নেই। যদি ঋণ পরিশোধ করার সময় না হয়, তাহলে ঋণ এবং ঋণ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করে যাকাত দিবে, কারণ তার মালিকানায় থাকা সকল সম্পদের যাকাত দেওয়া তার ওপর ওয়াজিব।

গ. চলতি বছর ট্যাক্স, কাস্টমস, কর্মচারীদের বেতন, ঘর ভাড়া, ব্যক্তিগত ও সংসার খরচ বাবদ যা ব্যয় হয়েছে তার ওপর যাকাত নেই।

৪. জ্ঞাতব্য যে, ব্যবহারের আসবাব-পত্রে যাকাত নেই, অর্থাৎ যে ঘরে ব্যবসায়ী পণ্য রাখা হয় সে ঘরের যাকাত নেই। কারণ যাকাত ওয়াজিব হয় ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর। হ্যাঁ, কেউ যদি ঘরের ব্যবসা করে এবং এক বা একাধিক ঘরের মূল্য যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয হবে, যদি হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়।

অনুরূপ যেসব আসবাব-পত্র মূলধন, যেমন উৎপাদন যন্ত্র, মেশিন ও পরিবহন গাড়ি ইত্যাদির ওপর যাকাত নেই। অনুরূপ ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সির ওপর যাকাত নেই, তবে তার মুনাফায় যাকাত ওয়াজিব, যদি তার নিসাব পরিমাণ মুনাফার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়।

৫. কেউ এক পণ্যের ব্যবসা করে, অতঃপর যদি দ্বিতীয় পণ্যের ব্যবসা শুরু করে, কোন পণ্য থেকে বছর গুনবে?

এ মাসআলায় বিশুদ্ধ মত ও উত্তম পন্থা হচ্ছে প্রথম পণ্য থেকে বছর গণনা করা। কারণ, ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যই আসল, পণ্য আসল নয়।

৬. ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত ব্যবসায়ী পণ্য দিয়ে দেওয়া বৈধ, অনুরূপ তার মূল্য দিয়ে দেওয়াও বৈধ।

৭. দু’জন ব্যক্তি এক পণ্যের ব্যবসা করে, তাদের কারও অংশই নিসাব পরিমাণ নয়, কিন্তু দু’জনের অংশ যৌথভাবে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায়, এমতাবস্থায় তাদের কারও ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ না তাদের প্রত্যেকের অংশ যাকাতের নিসাব সমপরিমাণ হবে। হ্যাঁ, দু’জন থেকে যার অংশ নিসাব পরিমাণ হবে, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে, অপরের ওপর নয়।