‘ কিয়াম’ কয়েক প্রকারের।

(ক) কারো তা’যীমের উদ্দেশ্যে কিয়াম করা, যেমন রাজা-বাদশাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হয়। এমন কিয়াম বৈধ নয়। যেহেতু প্রিয় রাসুল (সঃ) বলেন, “ যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, লক তার জন্য দণ্ডায়মান হক সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে করে নেয়।” (মুনসাদে আহমাদ)

(খ) আগন্তকের সন্মানার্থে উঠে দাঁড়ানো। তাকে আগে বেড়ে আনার জন্য নয়, তাকে ধরে বসাবার জন্য নয়, তার সাথে মুসাফাহা মুআনাক্বা করার জন্য নয়। সে প্রবেশ করলে অথবা প্রস্থান করলে তার তা’যীমের উদ্দেশ্যে খাড়া হওয়া অতঃপর বসে যাওয়া। এই শ্রেণীর ‘কিয়াম’ ও হারাম না হলে মাকরূহ তো বটেই। যেহেতু আনাস (রঃ) বলেন, ‘তাঁদের (সাহাবাদের) নিকট রাসুল (সঃ) অপেক্ষা অন্য কেউই প্রিয়তম ছিল না। তা সত্বেও তাঁরা যখন দেখতেন, তখন তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। যেহেতু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা অপছন্দ করেন । (তিরমিজি)

(গ) আগন্তককে আগে বেড়ে আনার জন্য, তাকে ধরে বসাবার জন্য, তার সাথে মুসাফাহা মুআনাক্বা করার জন্য উঠে দাঁড়ানো সুন্নত।

রাসুল (সঃ) এর কন্যা তার নিকট এলে তিনি তার প্রতি উঠে গিয়ে তার হাত ধরতেন ( মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে তাকে বসাতেন। (আবু দাউদ ৫২১৭, তিরমিজি ৩৮৭২ নং)

(খন্দকের যুদ্ধ শেষে) সাদ (রঃ) আহত ছিলেন। ইয়াহুদিদের ব্যপারে বিচার করার উদেশ্যে রাসুল (সঃ) তাকে আহূত করেন। তাই তিনি এক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করে জখন তার নিকট পৌঁছলেন তখন রাসুল (সঃ) আনসারকে লক্ষ করে বললেন, “ তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ এবং ওঁকে নামাও।” সুতরাং (কিছু) সাহাবা উঠে গিয় তাকে গাধার পিঠ থেকে নামালেন। (আহমাদ, আবু দাউদ প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৭ নং)

আর এক প্রকার কিয়াম আছে, যা মিলাদিরা মিলাদ শেষে করে থাকে। তা বিদআত।

ক্লাসরুমে শিক্ষক প্রবেশ করলে ছাত্রদের দাঁড়িয়ে সন্মান প্রদর্শন করা বৈধ কি?

না, এমন শ্রদ্ধা কিয়ামে বৈধ নয়। যেহেতু আনাস (রঃ) বলেন, ‘ তাঁদের ( সাহাবাদের) নিকট রাসুল (সঃ) অপেক্ষা অন্য কেউই প্রিয়তম ছিলেন না। তা সত্বেও তাঁরা যখন দেখতেন, তখন তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। যেহেতু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা অপছন্দ করেন । (তিরমিজি)

শিক্ষকের জন্য এমন শ্রদ্ধা নেওয়া বৈধ নয়, বৈধ নয় ছাত্রদের জন্য সেই শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আদেশ পালন করা। ( লাজনাহ দায়েমাহ )

রহিম যদি করিমকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মনে করে অথচ করিম তার বিপরীত হয়, তাহলে রহিমকে সতর্ক করা কি জরুরি? নাকি তা গীবতের পর্যায়ভুক্ত হবে?

উদ্দেশ্য যদি রহিমের হিতাকাংক্ষা হয়, তাহলে তা গীবতের পর্যায়ভুক্ত নয়। যেহেতু তামীর দারী (রঃ) বলেন, “ দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করার নাম।” আমরা বললাম, ‘ কার জন্য ?’ তিনি বললেন, “ আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসুলের জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য।” (মুসলিম)

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর নিকট নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলমানদের জন্য হিত কামনা করার উপর বায়আত করেছি। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়। যদি কাপড়ে তার ছিটা লাগার ভয় না থাকে। নবী (সঃ) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। (বুখারি ২২২৪, মুসলিম ২৭৩ নং) তবে বসে প্রস্রাব করাই উত্তম। যাতে সাবধান হওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেন, “তোমরা প্রস্রাব থেকে সাবধানতা অবলম্বন কর। কারণ, অধিকাংশ কবরের আযাব এই প্রস্রাব (থেকে সাবধান না হওয়ার) ফলেই হয়ে থাকে।" ( দারাকুত্বনী, সহিহ তারগিব ১৫১ নং)

খবরের কাগজ বিছিয়ে খাওয়া, তা দিয়ে প্রস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করা, তার উপ বসা বা পা দেওয়া বৈধ কি?

যে কোন কাগজে আল্লাহর নাম অথবা আল্লাহর নামযুক্ত কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম থাকলে অথবা কুরানের আয়াত থাকলে বিছিয়ে খাওয়া, তা দিয়ে প্রস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করা, তার উপর বসা বা পা দেওয়া বৈধ নয়।যেমন কুরানের পাতা, বই পুস্তক বা পত্র পত্রিকা পবিত্র জায়গায় দাফন করা অথবা পুড়িয়ে ফেলা বিধেয়। যাতে আল্লাহর নাম বা কুরানের আয়াতের কোন অমর্যাদা না হয়। ( ইবনে বাজ)

কেবল হাতের ইশারা করা এবং মুখে সালাম উচ্চারণ না করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তির কাছে আওয়াজ পৌছবে না, সে ব্যক্তিকে সালাম জানাতে হাতের ইশারার সাথে মুখে সালাম দিতে হবে। যেহেতু কেবল হাতের ইশারায় সালাম আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের) সালাম। (সহীহ তিরমিযী ২১৬৮ নং, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৮ নং) অবশ্য নামাজররত ব্যক্তি সালামের জবাব দেবে কেবল হাত বা আঙ্গুলের ইশারায়। (মুসলিম ৫৪০, আবু দাউদ ৯২৫ নং)

অনেকে শ্রদ্ধাভাজনের পা ছুঁয়ে সালাম করে, তা কি বৈধ?

পা ছুঁয়ে সালাম করা অমুসলিমদের। আর তা সালাম না তা আসলে প্রণাম। সুতরাং তা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। বৈধ নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য আর জন্য মাথা নত করা।

অনেকে সালাম করার সময় মাথা নত করে, তা কি বৈধ?

সালাম ও মুসাফাহাহ করার সময় মাথা নত করা বৈধ নয়। বৈধ নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য আর জন্য মাথা নত করা। (ইবনে উসাইমিন)

সালামের পর কি শ্রদ্ধাভাজনের হাতে বা কপালে চুমু কি জায়েয?

দুই চোখের মাঝে কপাল চুম্বন দেওয়া বৈধ। জাফর হাবসা থেকে ফিরে এলে মহানবী (সঃ) তার সাথে মুয়ানাকা করে তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) চুম্বন দিয়েছিলেন।( সিলসিলাহ সহিহাহ ৬/১/ ৩৩৮ )

কিছু শর্তের সাথে আলেম (পিতা মাতা বা গুরুজন) দের হাতে বুসা দেওয়া বৈধ।

(ক) শ্রদ্ধাস্পদ যেন গর্বভরে হাত প্রসারিত না করে।
(খ) শ্রদ্ধাকারির মনে যেন তাবাররুক বা বরকত নেওয়ার খেয়াল না থাকে।
(গ) বুসা দেওয়া ও নেওয়াটা যেন কোন প্রথা বা অভ্যাসে পরিণত না হয়।
(ঘ) ওর স্থলে যেন মুসাফাহ পরিত্যক্ত না হয়। ( সিলসিলাহ সহিহাহ ১/৩০২ )
(ঙ) বুসার সময় হাতকে নিয়ে কপালে যেন স্পর্শ না করা হয়।

অবৈধ কাজে কি পিতামাতার অনুগত্য করা জায়েয ?

পিতামাতার অনুগত্য করা ওয়াজিব। কিন্তু অবৈধ কাজে তাদের অনুগত্য করা বৈধ নয়। পিতামাতা যদি হারাম উপার্জন করতে বলে, পর্দা করতে নিষেধ করে, পণ বা যৌতুক নিতে বলে, শিরক ও বিদআত করতে বলে, তাহলে সে সব কাজে তাদের অনুগত্য করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

“ আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সৎব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে অংশী করতে বাধ্য করে , জার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না । আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন , অতঃ পর তোমরা যা কিছু করেছ আমি তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। ( আনকাবুতঃ ৮)

তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে আমার অংশী করতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মান্য করো না, তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সৎভাবে বসবাস করো এবং যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর, অতঃ পর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করব। (লুকমানঃ ১৫)

আর মহানবী(সঃ) বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।” (মুসনাদে আহমদ)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »