بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭২/ আল-জ্বিন | Al-Jinn | سورة الجن আয়াতঃ ২৮ মাক্কী
৭২:১ قُلۡ اُوۡحِیَ اِلَیَّ اَنَّهُ اسۡتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الۡجِنِّ فَقَالُوۡۤا اِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡاٰنًا عَجَبًا ۙ﴿۱﴾
قل اوحی الی انه استمع نفر من الجن فقالوا انا سمعنا قرانا عجبا ۙ۱

বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, আল-বায়ান

বল, ‘‘আমার কাছে ওয়াহী করা হয়েছে যে, জিন্নদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কুরআন) শুনেছে অতঃপর তারা বলেছে ‘আমরা এক অতি আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি তাইসিরুল

বলঃ আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরাতো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি – মুজিবুর রহমান

Say, [O Muhammad], "It has been revealed to me that a group of the jinn listened and said, 'Indeed, we have heard an amazing Qur'an. Sahih International

১. বলুন(১), ‘আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে যে, জিনদের(২) একটি দল মনোযোগের সাথে শুনেছে(৩) অতঃপর বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি(৪),

(১) হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে যে, এই ঘটনা তখনকার যখন শয়তানদেরকে আকাশে খবর শোনা থেকে উল্কাপিণ্ডের মাধ্যমে প্ৰতিহত করা হয়েছিল। এ সময়ে জিন্নরা পরস্পরে পরামর্শ করল যে আকাশের খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাধাদানের এই ব্যাপারটি কোন আকস্মিক ঘটনা মনে হয় না। পৃথিবীতে অবশ্যই কোন নতুন ব্যাপার সংঘটিত হয়েছে। অতঃপর তারা স্থির করল যে, পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিম ও আনাচে-কানাচে জিন্নদের প্রতিনিধিদল প্রেরণ করতে হবে। যথাযথ খোঁজাখুঁজি করে এই নতুন ব্যাপারটি কি তা জেনে আসবে। হেজাযে প্রেরিত তাদের প্রতিনিধিদল যখন 'নাখলাহ' নামক স্থানে উপস্থিত হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন।

জিন্নদের এই প্রতিনিধিদল সালাতে কুরআন পাঠ শুনে পরস্পরে শপথ করে বলতে লাগলঃ এই কালামই আমাদের ও আকাশের খবরাদির মধ্যে অন্তরায় হয়েছে। তারা সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে স্বজাতির কাছে ঘটনা বিবৃত করল। আল্লাহ্ তা'আলা এসব আয়াতে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে তাঁর রাসূলকে অবহিত করেছেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন এই ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিন্নদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন শোনাননি এবং তিনি তাদেরকে দর্শনও করেন নি বরং তার কাছে জিন্নদের কথা ওহী করে শোনানো হয়েছিল মাত্ৰ।” [বুখারী: ৪৯২১, মুসলিম: ৪৪৯]

(২) জিন্ন আল্লাহ তা'আলার এক প্রকার শরীরী আত্মাধারী ও মানুষের ন্যায় জ্ঞান এবং চেতনাশীল সৃষ্টজীব। জিন এর শাব্দিক অর্থ গুপ্ত। তারা মানুষের দৃষ্টিগোচর নয়। এ কারণেই তাদেরকে জিন বলা হয়। জিন ও ফেরেশতাদের অস্তিত্ব কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। এটা অস্বীকার করা কুফর। মানব সৃষ্টির প্রধান উপকরন যেমন মৃত্তিকা তেমনি জিন সৃষ্টির প্রধান উপকরণ অগ্নি। এই জাতির মধ্যেও মানুষের ন্যায় নর ও নারী আছে এবং সন্তান প্রজননের ধারা বিদ্যমান আছে।

পবিত্র কুরআনে যাদেরকে শয়তান বলা হয়েছে, তারা জিন্নদের দুষ্ট শ্রেনীর নাম। অধিকাংশ আলেমের মতে, সমস্ত জিনই শয়তানের বংশধর। তাদের মধ্যে কাফের ও মুমিন দু’শ্রেণী বিদ্যমান। যারা ঈমানদার তাদেরকে জিন বলা হলেও তাদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে শয়তান বলা হয়। তবে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, জিন্নরা ভিন্ন প্ৰজাতি, তারা শয়তানের বংশধর নয়। তারা মারা যায়। তাদের মধ্যে ঈমানদার ও কাফির দু শ্রেণী রয়েছে। পক্ষান্তরে ইবলীসের সন্তানদেরকে শয়তান বলা হয়, তারা ইবলীসের সাথেই মারা যাবে, তার আগে নয়। [দেখুন: কুরতুবী; ড. উমর সুলাইমান আল-আশকার: আলামুল জিন্ন ওয়াশ শায়াতীন]

(৩) এ থেকে জানা যায় যে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সময় জিন্নদের দেখতে পাচ্ছিলেন না এবং তারা যে কুরআন শুনছে একথাও তার জানা ছিল না। পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তা'আলা তাকে অহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনাটি বর্ণনা প্রসংগে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস স্পষ্টভাবে বলেছেন যে; সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিন্নদের উদ্দেশ্যে কুরআন পাঠ করেননি এবং তিনি তাদের দেখেনওনি। [মুসলিম ৪৪৯, সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬৫২৬, তিরমিযী: ৩৩২৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/২৫২]

(৪) জিন্নদের উক্তির অর্থ হলো, আমরা এমন একটি বাণী শুনে এসেছি যা ভাষাগত উৎকর্ষতা, বিষয়বস্তু, প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বিধান ইত্যাদিতে বিস্ময়কর ও অতুলনীয়। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) বল, আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জ্বিনদের একটি দল[1] মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি। [2]

[1] এই ঘটনা সূরা আহক্বাফের ২৯নং আয়াতের টীকায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনা হল নবী (সাঃ) ওয়াদীয়ে নাখলাহ নামক স্থানে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। এই সময় কয়েকজন জ্বিন সেদিক দিয়ে যাচ্ছিল। তারা নবী (সাঃ)-এর কুরআন পাঠ শুনে প্রভাবিত হয়। এখানে বলা হচ্ছে যে, সেই সময় জ্বিনদের কুরআন শোনার ব্যাপারটা নবী (সাঃ) জানতেন না। বরং অহীর মাধ্যমে তাঁকে এ খবর জানানো হয়।

[2] عَجَبًا ‘আ’জাবান’ হল মাসদার (ক্রিয়ামূল, বা ক্রিয়া-বিশেষ্য) মুবালাগা (অতিরিক্ত বুঝানোর) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অথবা সম্বন্ধপদের যাকে সম্বন্ধ করা হয় সে শব্দ ঊহ্য আছে; অর্থাৎ, ذَا عَجَبٍ । কিংবা মাসদার (ক্রিয়া বিশেষ্য) ব্যবহার হয়েছে ইসম ফায়েল (কর্তৃকারক)এর অর্থে مُعْجِبًا। অর্থ হল, আমরা এমন কুরআন শুনেছি যা ভাষার চমৎকারিত্ব ও সাহিত্য-শৈলীর দিক দিয়ে বড়ই বিস্ময়কর অথবা ওয়ায-নসীহতের দিক দিয়ে বিস্ময়কর কিংবা বর্কতের দিক দিয়ে অতি আশ্চর্যজনক। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:২ یَّهۡدِیۡۤ اِلَی الرُّشۡدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ ؕ وَ لَنۡ نُّشۡرِکَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدًا ۙ﴿۲﴾
یهدی الی الرشد فامنا بهٖ و لن نشرک بربنا احدا ۙ۲

যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না’। আল-বায়ান

যা সত্য-সঠিক পথ প্রদর্শন করে, যার কারণে আমরা তাতে ঈমান এনেছি, আমরা কক্ষনো কাউকে আমাদের প্রতিপালকের অংশীদার গণ্য করব না। তাইসিরুল

যা সঠিক পথ নির্দেশ করে; ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কোন শরীক স্থির করবনা। মুজিবুর রহমান

It guides to the right course, and we have believed in it. And we will never associate with our Lord anyone. Sahih International

২. যা সত্যের দিকে হেদায়াত করে; ফলে আমরা এতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে;[1] ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।[2] আর আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থাপন করব না। [3]

[1] এটা কুরআনের দ্বিতীয় গুণ। তা সঠিক পথ অর্থাৎ, সত্য ও সরল পথ স্পষ্ট করে। অথবা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান দান করে।

[2] অর্থাৎ, আমরা তা শুনে সত্য বলে মেনে নিয়েছি যে, বাস্তবিকই তা আল্লাহর কালাম। এটা কোন মানুষের কালাম নয়। এতে কাফেরদের প্রতি ধমক ও তিরস্কার রয়েছে যে, জ্বিনরা তো একবার শুনেই এই কুরআনের প্রতি ঈমান আনল। স্বল্প কিছু সংখ্যক আয়াত শুনেই তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটল এবং তারা বুঝে নিল যে, এটা কোন মানুষের রচিত কথা নয়। কিন্তু মানুষের, বিশেষ করে তাদের সর্দারদের এই কুরআন দ্বারা কোন লাভ হয়নি। অথচ তারা নবী (সাঃ)-এর মুখে একাধিকবার কুরআন শুনেছে। এ ছাড়া তিনি নিজেও তাদেরই একজন ছিলেন এবং তাদেরই ভাষাতে তিনি তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন।

[3] না তাঁর সৃষ্টির কাউকে, আর না অন্য কোন উপাস্যকে। কারণ, তিনি তাঁর প্রতিপালকত্বে একক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৩ وَّ اَنَّهٗ تَعٰلٰی جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَۃً وَّ لَا وَلَدًا ۙ﴿۳﴾
و انهٗ تعلی جد ربنا ما اتخذ صاحبۃ و لا ولدا ۙ۳

‘আর নিশ্চয় আমাদের রবের মর্যাদা সমুচ্চ। তিনি কোন সংগিনী গ্রহণ করেননি এবং না কোন সন্তান’। আল-বায়ান

আর আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা অতি উচ্চ, তিনি গ্রহণ করেননি কোন স্ত্রী আর কোন সন্তান। তাইসিরুল

এবং নিশ্চয়ই সমুচ্চ আমাদের রবের মর্যাদা; তিনি গ্রহণ করেননি কোন পত্নী এবং না কোন সন্তান। মুজিবুর রহমান

And [it teaches] that exalted is the nobleness of our Lord; He has not taken a wife or a son Sahih International

৩. আর নিশ্চয়ই আমাদের রবের মর্যাদা সমুচ্চ(১); তিনি গ্ৰহণ করেননি কোন সঙ্গিনী এবং না কোন সন্তান।

(১) جدّ শব্দের অর্থ শান অবস্থা, মান-মর্যাদা। আল্লাহ তা'আলার জন্যে বলা হয় وتعالى جدّه অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার শান, মান-মর্যাদা, অনেক ঊর্ধ্বে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) এবং নিশ্চয়ই সমুচ্চ আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা; তিনি গ্রহণ করেননি কোন পত্নী এবং না কোন সন্তান। [1]

[1] جَدٌّ এর অর্থ হল, মর্যাদা, মাহাত্ম্য, ঐশ্বর্য। অর্থাৎ, আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে যে, তাঁর সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রী থাকবে। অর্থাৎ, জ্বিনরা সেই মুশরিকদের কথাকে ভুল সাব্যস্ত করল, যারা আল্লাহর সাথে স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততির সম্পর্ক স্থাপন করত। জ্বিনরা এই উভয় দুর্বলতা থেকে প্রতিপালকের পবিত্রতার ঘোষণা করল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৪ وَّ اَنَّهٗ کَانَ یَقُوۡلُ سَفِیۡهُنَا عَلَی اللّٰهِ شَطَطًا ۙ﴿۴﴾
و انهٗ کان یقول سفیهنا علی الله شططا ۙ۴

‘আর আমাদের মধ্যকার নির্বোধেরা আল্লাহর ব্যাপারে অবাস্তব কথা- বার্তা বলত’। আল-বায়ান

আর আমাদের মধ্যেকার নির্বোধেরা তাঁর সম্পর্কে সীমাতিরিক্ত কথাবার্তা বলত। তাইসিরুল

এবং আমাদের মধ্যকার নির্বোধরা আল্লাহ সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করত। মুজিবুর রহমান

And that our foolish one has been saying about Allah an excessive transgression. Sahih International

৪. এও যে, আমাদের মধ্যকার নির্বোধেরা আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে খুবই অবান্তর উক্তি করত।(১)

(১) شطط  শব্দের অর্থ অবান্তর কথা, অতি-অন্যায় ও যুলুম। উদ্দেশ্য এই যে মুমিন জিনরা এ পর্যন্ত কুফার ও শির্কে লিপ্ত থাকার অজুহাত বৰ্ণনা করে বলেছে, আমাদের সম্প্রদায়ের নির্বোধ লোকেরা আল্লাহ্ তা'আলার শানে অবান্তর কথাবার্তা বলত। অথচ আমরা মনে করতাম না যে কোন মানব অথবা জিন আল্লাহ্ তা'আলা সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতে পারে। তাই বোকাদের কথায় আমরা আজ পর্যন্ত কুফার ও শির্কে লিপ্ত ছিলাম। এখন কুরআন শুনে আমাদের চক্ষু খুলেছে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) এবং আমাদের মধ্যকার নির্বোধরা আল্লাহর সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করত। [1]

[1] سَفِيْهُنَا (আমাদের নির্বোধেরা) বলতে কেউ কেউ শয়তান অর্থ নিয়েছেন। আর কেউ কেউ তাদের সঙ্গী জ্বিনদেরকে বুঝিয়েছেন। আর কেউ বলেন, এ থেকে উদ্দেশ্য এমন সকল ব্যক্তি যার এই বাতিল বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহর সন্তান আছে। شَطَطًا এর কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে। যেমন, যুলুম, মিথ্যা, বাতিল এবং কুফরীতে অতিরঞ্জন করা প্রভৃতি। উদ্দেশ্য মধ্যমপন্থা থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং সীমালঙ্ঘন করা। অর্থ এই দাঁড়াল যে, ‘আল্লাহর সন্তান আছে’ এই কথা সেই নির্বোধ ও বেওকুফদের, যারা মধ্যপন্থা ও সরল-সঠিক পথ থেকে দূরে আছে এবং তারা সীমালংঘনকারী, মিথ্যুক ও অপবাদ আরোপকারীও বটে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৫ وَّ اَنَّا ظَنَنَّاۤ اَنۡ لَّنۡ تَقُوۡلَ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلَی اللّٰهِ کَذِبًا ۙ﴿۵﴾
و انا ظننا ان لن تقول الانس و الجن علی الله کذبا ۙ۵

‘অথচ আমরা তো ধারণা করতাম যে, মানুষ ও জিন কখনো আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করবে না’। আল-বায়ান

আর আমরা ধারণা করতাম যে, মানুষ ও জ্বিন আল্লাহ সম্পর্কে কক্ষনো মিথ্যে কথা বলবে না। তাইসিরুল

অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ এবং জিন, আল্লাহ সম্বন্ধে কখনও মিথ্যা আরোপ করবেনা। মুজিবুর রহমান

And we had thought that mankind and the jinn would never speak about Allah a lie. Sahih International

৫. অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ এবং জিন আল্লাহ সম্পর্কে কখনো মিথ্যা বলবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) অথচ আমরা মনে করতাম যে, মানুষ এবং জ্বিন আল্লাহ সম্বন্ধে কখনো মিথ্যা আরোপ করবে না। [1]

[1] এই জন্যই আমরা তাদের কথা সত্য বলে বিশ্বাস করে এসেছি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এই আকীদা পোষণ করেছি। অতঃপর যখন আমরা কুরআন শুনলাম, তখন আমাদের কাছে এই আকীদা ও বিশ্বাসের ভ্রান্ত হওয়ার কথা পরিষ্কার হয়ে গেল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৬ وَّ اَنَّهٗ کَانَ رِجَالٌ مِّنَ الۡاِنۡسِ یَعُوۡذُوۡنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الۡجِنِّ فَزَادُوۡهُمۡ رَهَقًا ۙ﴿۶﴾
و انهٗ کان رجال من الانس یعوذون برجال من الجن فزادوهم رهقا ۙ۶

আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল। আল-বায়ান

আরো এই যে, কতক মানুষ কতক জ্বিনের আশ্রয় নিত, এর দ্বারা তারা জ্বিনদের গর্ব অহঙ্কার বাড়িয়ে দিয়েছে। তাইসিরুল

আর যে কতিপয় মানুষ কতক জিনের স্মরণ নিত, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত। মুজিবুর রহমান

And there were men from mankind who sought refuge in men from the jinn, so they [only] increased them in burden. Sahih International

৬. এও যে, কিছু কিছু মানুষ কিছু জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিয়েছিল।(১)

(১) জাহেলী যুগে আরবরা যখন কোন জনহীন প্ৰান্তরে রাত্রি যাপন করতো তখন উচ্চস্বরে বলতো, আমরা এ প্রান্তরের অধিপতি জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এভাবে ভয় পেলে মানুষরা জিনের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করত। ফলে জিনের আত্মম্ভরিতা বেড়ে যায়। আয়াতটির আরেকটি অর্থও হতে পারে, এভাবে আশ্রয়-গ্রহণের চেষ্টা করার পরও জিনরা মানুষদের উল্টো ভয় দেখাত। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) আর কতিপয় মানুষ কতক জ্বিনদের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করত,[1] ফলে তারা জ্বিনদের অহংকার[2] বাড়িয়ে দিত।

[1] জাহেলিয়াতের যুগে একটি প্রচলন এও ছিল যে, যখন তারা সফরে কোথাও যেত, তখন যে উপত্যকায় তারা অবস্থান করত, সেখানকার জ্বিনদের কাছে আশ্রয় কামনা করত; যেমন, অঞ্চলের বিশেষ ব্যক্তি এবং সরদারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। ইসলাম এ প্রচলন বাতিল ঘোষণা করে কেবলমাত্র এক আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার উপর তাকীদ করেছে।

[2] অর্থাৎ, যখন জ্বিনরা লক্ষ্য করল যে, মানুষ আমাদেরকে ভয় পায় এবং আমাদের কাছে আশ্রয় কামনা করে, তখন তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার আরো বেড়ে গেল। এখানে رَهَقًا এর অর্থ হল ঔদ্ধত্য, অবাধ্যতা এবং অহংকার। এর আসল অর্থ হল, (ঢাকা) পাপ এবং হারাম কাজ সম্পাদন করা। (এর এক অর্থ ভয় করাও হয়। অর্থাৎ, মানুষরা জ্বিনদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, জ্বিনরা মানুষদের ভয় বৃদ্ধি করত। দ্রঃ ফাতহুল ক্বাদীর -সম্পাদক)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৭ وَّ اَنَّهُمۡ ظَنُّوۡا کَمَا ظَنَنۡتُمۡ اَنۡ لَّنۡ یَّبۡعَثَ اللّٰهُ اَحَدًا ۙ﴿۷﴾
و انهم ظنوا کما ظننتم ان لن یبعث الله احدا ۙ۷

আর নিশ্চয় তারা ধারণা করেছিল যেমন তোমরা ধারণা করেছ যে, আল্লাহ কাউকে কখনই পুনরুত্থিত করবেন না। আল-বায়ান

আরো এই যে (জ্বিনেরা বলেছিল) তোমরা (জ্বিনেরা) যেমন ধারণা করতে তেমনি মানুষেরা ধারণা করত যে, (মৃত্যুর পর) আল্লাহ কাউকে পুনরুত্থিত করবে না। তাইসিরুল

আর জিনরা বলেছিলঃ তোমাদের মত মানুষও মনে করে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ কেহকেও পুনরুত্থিত করবেননা। মুজিবুর রহমান

And they had thought, as you thought, that Allah would never send anyone [as a messenger]. Sahih International

৭. এও যে, তারা ধারণা করেছিল যেমন তোমরা ধারণা কর(১) যে, আল্লাহ কাউকেও কখনো পুনরুত্থিত করবেন না।(২)

(১) আয়াতাংশের দু'টি অর্থ হতে পারে। এক. মানুষেরা ধারণা করেছিল, যেমন হে জিন্ন সম্প্রদায় তোমরা ধারণা করেছিলে’। [মুয়াস্‌সার] দুই. জিন্নরা ধারণা করেছিল, যেমন হে মানব সম্প্রদায় তোমরা ধারণা করেছিলে। [কুরতুবী] উভয় অর্থের মূল কথা হলো, মানুষ ও জিন্ন উভয় সম্প্রদায়ের পথভ্রষ্টদের ধারণার বিপরীতে এ কুরআন এক স্বচ্ছ হিদায়াত নিয়ে এসেছে।

(২) এ আয়াতাংশের দুটি অর্থ হতে পারে। একটি হলো, “মৃত্যুর পর আল্লাহ তা'আলা কাউকে আর জীবিত করে উঠবেন না।” যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। অপরটি হলো, ‘আল্লাহ কাউকে রাসূল বানিয়ে পাঠাবেন না।” [কুরতুবী] যেহেতু কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক তাই তার এ অৰ্থও গ্রহণ করা যেতে পারে যে, মানুষের মত জিনদের মধ্যে একদল আখেরাতকে অস্বীকার করতো। কিন্তু পরবর্তী বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যের দিক থেকে দ্বিতীয় অর্থটিই অধিক অগ্ৰাধিকার পাওয়ার যোগ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) আর তারা (মানুষরা)ও ধারণা করে; যেমন তোমরা ধারণা কর যে, আল্লাহ কখনই কাউকেও (মৃত্যুর পর) পুনরুত্থিত করবেন না।[1]

[1] بَعْثٌ এর দু’টি অর্থ হতে পারে, আল্লাহ কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না অথবা তিনি কাউকে নবীরূপে প্রেরিত করবেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৮ وَّ اَنَّا لَمَسۡنَا السَّمَآءَ فَوَجَدۡنٰهَا مُلِئَتۡ حَرَسًا شَدِیۡدًا وَّ شُهُبًا ۙ﴿۸﴾
و انا لمسنا السماء فوجدنها ملىت حرسا شدیدا و شهبا ۙ۸

‘আর নিশ্চয় আমরা আকাশ স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম*, কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম যে, তা কঠোর প্রহরী এবং উল্কাপিন্ড দ্বারা পরিপূর্ণ’। আল-বায়ান

আর আমরা আকাশের খবর নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম কঠোর প্রহরী বেষ্টিত ও জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডে পরিপূর্ণ। তাইসিরুল

এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। মুজিবুর রহমান

And we have sought [to reach] the heaven but found it filled with powerful guards and burning flames. Sahih International

*আকাশের সংবাদ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলাম।

৮. এও যে, আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্ৰহ করতে কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) এবং আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা তা পরিপূর্ণ। [1]

[1] حَرَسٌ হল حَارِس (প্রহরী)এর এবং شُهُبٌ হল شِهَابٌ (উল্কাপিন্ড)এর বহুবচন। অর্থাৎ, আসমানের উপর ফিরিশতারা পাহারা দিতে থাকেন। যাতে আসমানের কোন কথা অন্য কেউ শুনতে না পায়। আর এই তারাগুলো শয়তানের উপর উল্কাপিন্ড হয়ে উৎক্ষিপ্ত হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:৯ وَّ اَنَّا کُنَّا نَقۡعُدُ مِنۡهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمۡعِ ؕ فَمَنۡ یَّسۡتَمِعِ الۡاٰنَ یَجِدۡ لَهٗ شِهَابًا رَّصَدًا ۙ﴿۹﴾
و انا کنا نقعد منها مقاعد للسمع فمن یستمع الان یجد لهٗ شهابا رصدا ۙ۹

আর আমরা তো সংবাদ শোনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে বসতাম, কিন্তু এখন যে শুনতে চাইবে, সে তার জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড পাবে’। আল-বায়ান

আমরা (আগে) সংবাদ শুনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে তার উপর নিক্ষেপের জন্য সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডকে লুকিয়ে থাকতে দেখে। তাইসিরুল

আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসতাম। কিন্তু এখন কেহ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়। মুজিবুর রহমান

And we used to sit therein in positions for hearing, but whoever listens now will find a burning flame lying in wait for him. Sahih International

৯. এও যে, আমরা আগে আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শুনার জন্য বসতাম।(১) কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়।

(১) জিন্নরা আসমানের সংবাদ শোনার জন্যে উপরের দিকে যেত। হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা'আলা যখন আকাশে কোন হুকুম জারি করেন তখন সব ফেরেশতা আনুগত্যসূচক পাখা নাড়া দেয়। এরপর তারা পরস্পর সে বিষয়ে আলোচনা করে। শয়তানরা এখান থেকে এগুলো চুরি করে অতীন্দ্ৰিয়বাদীদের কাছে পৌছিয়ে দেয় এবং তাতে নিজেদের পক্ষ থেকে শত শত মিথ্যা বিষয় সংযোজন করে দেয়।” [বুখারী: ৪৭০১, ৪৮০০]

সারকথা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত লাভের পূর্বে আকাশের খবর চুরির ধারা বিনা বাধায় অব্যাহত ছিল। শয়তানরা নির্বিঘ্নে উপরে আরোহন করে ফেরেশতাগণের কাছে শুনে নিত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত লাভের সময় তার ওহীর হেফাযতের উদ্দেশ্যে চুরির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হল এবং কোন শয়তান খবর চুরির জন্য উপরে গেলে তাকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতে লাগল। চোর বিতাড়নের এই নতুন উদ্যোগ দেখেই শয়তান ও জিন্নরা চিন্তিত হয়ে পড়ে; কারণ অনুসন্ধানের জন্যে পৃথিবীর কোণে কোণে সন্ধানকারী দল প্রেরণ করেছিল, অতঃপর ‘নাখলাহ’ নামক স্থানে একদল জিন্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে কুরআন শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছিল যা আলোচ্য সূরায় বর্ণিত হয়েছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে (সংবাদ) শুনবার জন্য বসতাম,[1] কিন্তু এখন কেউ (সংবাদ) শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।[2]

[1] আসমানী কথার সামান্য কিছু শুনে জ্যোতিষীদের বলে দিতাম। তাতে তারা শত মিথ্যা মিশ্রিত করে প্রচার করত।

[2] তবে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রেরিত হওয়ার পর এ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন যে-ই এই (কথা শোনার) উদ্দেশ্যে উপরে আরোহণ করে, উল্কা তার অপেক্ষায় থাকে এবং ছুটে তার উপর আপতিত হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২:১০ وَّ اَنَّا لَا نَدۡرِیۡۤ اَشَرٌّ اُرِیۡدَ بِمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ اَمۡ اَرَادَ بِهِمۡ رَبُّهُمۡ رَشَدًا ﴿ۙ۱۰﴾
و انا لا ندری اشر ارید بمن فی الارض ام اراد بهم ربهم رشدا ۙ۱۰

‘আর নিশ্চয় আমরা জানি না, যমীনে যারা রয়েছে তাদের জন্য অকল্যাণ চাওয়া হয়েছে, নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন’। আল-বায়ান

আমরা জানি না (এই পরিবর্তিত অবস্থার মাধ্যমে) পৃথিবীবাসীর অকল্যাণই চাওয়া হচ্ছে, না তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাতে চান। তাইসিরুল

আমরা জানিনা, জগতবাসীর অমংগলই অভিপ্রেত, না কি তাদের রাব্ব তাদের মংগল করার ইচ্ছা রাখেন। মুজিবুর রহমান

And we do not know [therefore] whether evil is intended for those on earth or whether their Lord intends for them a right course. Sahih International

১০. এও যে, আমরা জানি না যমীনের অধিবাসীদের অমঙ্গলই অভিপ্রেত, না তাদের রব তাদের মঙ্গল চান।(১)

(১) বলা হয়েছে, “আমরা জানি না জগদ্বাসীর অমংগলই অভিপ্ৰেত, না তাদের রব তাদের মংগল চান”। এ আয়াতে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো, যখন অকল্যাণের কথা বলা হয়েছে তখন তার সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহর দিকে করা হয় নি, পক্ষান্তরে যখন কল্যাণের কথা বলা হয়েছে তখন তার সম্পর্ক করা হয়েছে সরাসরি আল্লাহর সাথে। এর কারণ হচ্ছে, খারাপ ও অমঙ্গলের সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা বেআদবী। অকল্যাণ আল্লাহর সৃষ্ট বিষয় হলেও তা মানুষের হাতের অর্জন। আর যত কল্যাণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিছক অনুগ্রহ। হাদীসেও বলা হয়েছে, “আর যাবতীয় কল্যাণ সবই আপনার হাতে পক্ষান্তরে কোন অকল্যাণকেই আপনার দিকে সম্পর্কযুক্ত করা যায় না”। [মুসলিম: ৭৭১] [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) আমরা জানি না যে, জগদ্বাসীর অমঙ্গল অভিপ্রেত, না তাদের প্রতিপালক তাদের মঙ্গল চান। [1]

[1] অর্থাৎ, আসমানের এই পাহারার উদ্দেশ্য দুনিয়াবাসীদের জন্য কোন অমঙ্গলকে পূর্ণতা দান করা অর্থাৎ, তাদের উপর আযাব অবতীর্ণ করার ইচ্ছা করা হয়েছে, না তাদের ব্যাপারে মঙ্গলের অর্থাৎ, রসূল প্রেরণের ইচ্ছা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »