১১৪ : ১
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া১। বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের নিকট। [1]
[1] رَبّ (প্রতিপালক) এর অর্থ হল যে, যিনি শুরু থেকেই -- মানুষ যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই -- তার তত্ত্বাবধান ও লালন-পালন করতে থাকেন; পরিশেষে সে সাবালক ও জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে যায়। তাঁর এই কাজ শুধু কিছু সংখ্যক লোকের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সকল মানুষের জন্য ব্যাপক। আবার কেবলমাত্র সকল মানুষের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রতিপালন করে থাকেন। এখানে কেবল ‘মানুষ’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে মানুষের সেই মান ও মর্যাদাকে ব্যক্ত করার জন্য যা সকল সৃষ্টির উপরে রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১১৪ : ২
مَلِكِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. মানুষের অধিপতির,
-
তাফসীরে জাকারিয়া২। যিনি মানুষের মালিক। [1]
[1] যে সত্তা সমস্ত মানুষের প্রতিপালন ও তত্ত্বাবধান করে থাকেন; তিনিই হলেন সকল কিছুর মালিক, অধিপতি ও রাজা হওয়ার উপযুক্ত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১১৪ : ৩
اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. মানুষের ইলাহের কাছে(১),
(১) এখানে রব্ব্, মালিক এবং ইলাহ এ তিনটি গুণের অধিকারীর নিকট আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। আল্লাহ রব, মালিক বা অধিপতি, মা’বুদ সবই। সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি, তার মালিকানাধীন, তাঁর বান্দা। তাই আশ্রয়প্রার্থনকারীকে এ তিনটি গুণে গুণান্বিত মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। যিনি মানুষের উপাস্য। [1]
[1] যিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা এবং যাঁর হাতে সারা দুনিয়ার বাদশাহী, তিনিই হলেন সর্বপ্রকার ইবাদত ও উপাসনা পাওয়ার যোগ্য এবং তিনিই সমস্ত মানুষের একক মাবূদ (উপাস্য)। সুতরাং আমি সেই সুমহান ও সুউচ্চ সত্তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১১৪ : ৪
مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার(১) অনিষ্ট হতে,
(১) এখানে কুমন্ত্রণাদাতা বলতে মানুষের সাথে নিয়োগকৃত শয়তানের কথা বলা হয়েছে, যে সঙ্গী তাকে খারাপ কাজ করাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন। ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভাল কাজের কথাই বলে।” [মুসলিম: ২৮১৪]।
তাফসীরে জাকারিয়া৪। আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে। [1]
[1] الوَسوَاس শব্দটি কিছু উলামার নিকট ইসম ফায়েল (কর্তৃকারক) مُوَسوِس এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আর কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, এর আসল হল ذِي الوِسوَاس
অসঅসা বা কুমন্ত্রণা গুপ্ত শব্দকে বলা হয়। শয়তান তার অনুপলব্ধ পদ্ধতিতে মানুষের অন্তরে নানা প্রকার প্রলোভন, কুমন্ত্রণা বা ফুসমন্ত্র দিয়ে থাকে; তাকেই ‘অসঅসা’ বলা হয়। الخَنّاس শব্দের অর্থ হল সরে পড়ে আত্মগোপনকারী। এটি শয়তানের গুণবিশেষ। যেহেতু যখন কোন স্থানে আল্লাহর যিকর করা হয়, তখন সে স্থান হতে শয়তান সরে পড়ে এবং যখন কেউ আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়, তখন সে তার অন্তরে ছেয়ে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১১৪ : ৫
الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ﴿۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১১৪ : ৬
مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।(১)
(১) এখানে দুটি অর্থ হতে পারে। প্রথমটি হল, শয়তান জিন ও মানুষ-উভয় প্রকার মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। এ অর্থে এখানে ناس বলে জিন ও মানুষ সকলকে বুঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় মতটি হল: কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান জিনদের মধ্য থেকেও হয়, মানুষের মধ্য থেকেও হয়। এ মতটিই শক্তিশালী। [ইবন কাসীর] অতএব সারমর্ম এই দাঁড়াল যে, আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলকে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন জিন-শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং মানুষ-শয়তানের অনিষ্ট থেকে। জিন-শয়তানের কুমন্ত্রণা হল অলক্ষ্যে থেকে মানুষের অন্তরে কোন কথা রাখা। শয়তান যেমন মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়, তেমনিভাবে মানুষের নফসও মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন নফসের অনিষ্ট থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই, আমার নফসের অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকেও এবং তার শির্ক (বা জাল) থেকেও।” [আবু দাউদ: ৫০৬৭, তিরমিযী: ৩৩৯২, মুসনাদে আহমাদ: ১/৯]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। জ্বিন ও মানুষের মধ্য হতে। [1]
[1] অর্থাৎ, এই কুমন্ত্রণাদাতা হল দুই শ্রেণীর। (১) শয়তান জ্বিনঃ শয়তান জ্বিনদেরকে মহান আল্লাহ মানুষকে ভ্রষ্ট করার ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান সাথী হিসাবে সদা বিদ্যমান থাকে; সেও তাকে ভ্রষ্ট করার প্রচেষ্টায় থাকে। হাদীসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী (সাঃ) ঐ কথা লোকদেরকে বললেন, তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথেও কি শয়তান বিদ্যমান থাকে। তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আমার সাথেও থাকে। তবে আল্লাহ তাআলা তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য দান করেছেন; যার ফলে সে আমার অনুগত হয়ে গেছে। সে আমাকে মঙ্গল ব্যতীত কিছু আদেশ করে না।’’ (সহীহ মুসলিম, কিয়ামতের বিবরণ অধ্যায়)
অনুরূপ অন্য হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী (সাঃ) যখন ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন তখন তাঁর পবিত্রা সহধর্মিণী স্বাফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর সাক্ষাতে (মসজিদে) এলেন। সময়টা রাত্রিবেলা ছিল। সাক্ষাতের পর তিনি তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে বের হলেন। রাস্তায় দুই আনসারী সাহাবী পার হচ্ছিলেন। তিনি তাঁদেরকে ডেকে বললেন, ‘‘এটি আমার স্ত্রী স্বাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই।’’ তাঁরা আরজ করলেন যে, ‘আপনার সম্পর্কে কি আমাদের কোন কুধারণা হতে পারে হে আল্লাহর রসূল?!’ তিনি বললেন, ‘‘তা তো ঠিক কথা। কিন্তু শয়তান যে মানুষের রক্ত-ধমনীতে রক্তের মতই প্রবাহিত হয়। আমার আশঙ্কা হল যে, হয়তো বা সে তোমাদের মনে কোন সন্দেহ প্রক্ষিপ্ত করে দিতে পারে।’’ (সহীহ বুখারী, আহকাম অধ্যায়)
(২) মানুষ শয়তানঃ মানুষের মধ্যে কিছু শয়তান আছে যারা উপদেষ্টা, হিতাকাঙ্ক্ষী ও দয়াবানরূপে এসে অপরকে ভ্রষ্ট হতে উদ্বুদ্ধ করে।
কোন কোন উলামা বলেন, শয়তান যাদেরকে ভ্রষ্ট করে, তারা হল দুই শ্রেণীর। অর্থাৎ, শয়তান মানুষকে যেমন ভ্রষ্ট করে তেমনি জ্বিনকেও ভ্রষ্ট করে থাকে। তবে এখানে মানুষের অন্তরের উল্লেখ তার ভ্রষ্টতার তুলনামূলক আধিক্যের কারণে করা হয়েছে। নচেৎ জ্বিন সম্প্রদায়ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় ভ্রষ্টতার শিকার হয়। কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, কুরআনে জ্বিনদের জন্যও ‘রিজাল’ (পুরুষ মানুষ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (সূরা জিন ৬ নং আয়াত) সুতরাং তারাও মানুষ শব্দে শামিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান