১০০ : ১
وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. শপথ উধৰ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির(১),
(১) الْعَادِيَات শব্দটি عدو থেকে উদ্ভূত। অর্থ দৌড়ানো। ضبح বলা হয় ঘোড়ার দৌড় দেয়ার সময় তার বক্ষ থেকে নিৰ্গত আওয়াজকে। কোন কোন গবেষকের মতে এখানে দৌড়ায় শব্দের মাধ্যমে ঘোড়া বা উট অথবা উভয়টিও উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে ইমাম কুরতুবী ঘোড়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
তাফসীরে জাকারিয়া১। শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির। [1]
[1] عاديات হল عادية এর বহুবচন শব্দ। এর মূল ধাতু হল عدو। যেমন غزو ধাতু হতে غازيات। মূল শব্দের و কে ي দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে। এর অর্থ হল ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্ব বা ঘোড়া। ضَبح শব্দের অর্থ হল হাঁপানো। কারো নিকট এর অর্থ হল, চিঁহি রব করা। উদ্দেশ্য সেই অশ্বরাজি; যেগুলি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে অথবা চিঁহি রব করে (ঊর্ধ্বশ্বাসে) জিহাদে দ্রুত গতিতে শত্রুর দিকে ছুটে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ২
فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ۙ﴿۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত করে(১),
(১) موريات শব্দটি إيراء থেকে উদ্ভূত। অর্থ অগ্নি নিৰ্গত করা। যেমন চকমকি পাথর ঘষে ঘষে অথবা দিয়াশলাই ঘষা দিয়ে অগ্নি নির্গত করা হয়। قدح এর অর্থ আঘাত করা, ঘর্ষন করা; যার কারণে আগুন তৈরী হয়। লৌহনাল পরিহিত অবস্থায় ঘোড়া যখন প্রস্তরময় মাটিতে ক্ষুরাঘাত করে দৌড় দেয় তখন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া২। অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিতকারী (অশ্বরাজির শপথ)। [1]
[1] مُورِيَات শব্দটি উৎপত্তি إيرَاء থেকে; এর অর্থ হল অগ্নি প্রজ্বলনকারী । قَدح শব্দের অর্থ হল, চলাকালে হাঁটু অথবা গোড়ালির সংঘর্ষ হওয়া অথবা ক্ষুর দ্বারা আঘাত করা। এ থেকেই قَدح بالزنَاد বলা হয়; অর্থাৎ, চকমকি ঘষে আগুন বের করা। অর্থ দাঁড়াল, সেই ঘোড়াসমূহের কসম! যার ক্ষুরের ঘর্ষণে পাথর থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হয়; যেমন চকমকি পাথর ঘষলে বের হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৩
فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ۙ﴿۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. অতঃপর যারা অভিযান করে প্রভাতকালে(১),
(১) مغيرات শব্দটি أغارة থেকে উদ্ভূত। অর্থ হামলা করা, হানা দেয়া। صبحاً বা ‘ভোর বেলায়’ বলে আরবদের অভ্যাস হিসেবে প্রভাতকালের উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, আরববাসীদের নিয়ম ছিল, কোন জনপদে অতর্কিত আক্রমণ করতে হলে তারা রাতের আঁধারে বের হয়ে পড়তো। এর ফলে শত্রুপক্ষ পূর্বাহ্নে সতর্ক হতে পারতো না। এভাবে একেবারে খুব সকালে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। প্রভাতে আলো যেটুকু ছড়িয়ে পড়তো তাতে তারা সবকিছু দেখতে পেতো। আবার দিনের আলো খুব বেশী উজ্জ্বল না হবার কারণে প্রতিপক্ষ দূর থেকে তাদের আগমন দেখতে পেতো না। ফলে তারা মোকাবেলার জন্য প্ৰস্তুতিও গ্ৰহণ করতে পারতো না। [দেখুন: কুরতুবী] এখানে অবশ্য জিহাদে আল্লাহর পথে ব্যবহৃত ঘোড়সওয়ারদের বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী (অশ্বরাজির শপথ)। [1]
[1] المُغِيرَات শব্দটি أغَار يُغِير থেকে। আক্রমণকারী অশ্ব। صُبحًا থেকে ভোরবেলার অর্থ বোঝানো হয়েছে। আরবে সাধারণতঃ ঐ সময় আক্রমণ করা হত। আসলে আক্রমণ সেই সৈন্যরা করে, যারা ঘোড়ার উপর সওয়ার থাকে। কিন্তু এ কর্মের সম্বন্ধ ঘোড়ার প্রতি এই জন্য করা হয়েছে যে, আক্রমণ কাজে ঘোড়ার ভূমিকাই বেশী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৪
فَاَثَرۡنَ بِهٖ نَقۡعًا ۙ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে(১);
(১) أثرن শব্দটি إثارة থেকে উৎপন্ন। অর্থ ধূলি উড়ানো। نقع ধূলিকে বলা হয়। আর به শব্দের অর্থ, সে সময়ে বা শক্ৰদের সে স্থানে। অর্থাৎ অশ্বসমূহ যুদ্ধক্ষেত্রে এত দ্রুত ধাবমান হয় যে, তাদের ক্ষুর থেকে ধূলি উড়ে চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে ফেলে। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। যারা সে সময়ে ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে। [1]
[1] أثَار শব্দের অর্থ হল উৎক্ষিপ্ত করা, উড়ানো। আর نَقع শব্দের অর্থ হল ধূলো-বালি। অর্থাৎ, যখন দ্রুতগতিতে ছুটে যায় অথবা হামলা করে, তখন সে স্থান ধূলো-বালিতে ছেয়ে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৫
فَوَسَطۡنَ بِهٖ جَمۡعًا ۙ﴿۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. অতঃপর তা দ্বারা শত্রু দলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।(১)
(১) وسطن শব্দটির অর্থ কোন কিছুর মধ্যভাগে পৌছে যাওয়া। جمعاً অর্থ, দল বা গোষ্ঠী। আর به অর্থ, তা দ্বারা। এখানে তা বলতে আরোহীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অশ্বসমূহ ধূলিকণা উড়িয়ে তাদের আরোহীদের নিয়ে শক্ৰদের মধ্যভাগে পৌছে যায়। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। অতঃপর শত্রু দলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। [1]
[1] فَوَسَطنَ শব্দের অর্থ হল মধ্যস্থলে ঢুকে পড়া। جَمعًا শব্দের অর্থ হল শত্রুসেনা। অর্থাৎ, সে সময় বা সেই অবস্থায় যখন আকাশ ধূলো-বালিতে ছেয়ে যায়, তখন এই অশ্বদল শত্রুসেনার মাঝে ঢুকে পড়ে আর ভীষণভাবে যুদ্ধ লড়ে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৬
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّهٖ لَكَنُوۡدٌ ۚ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ(১)
(১) এত বড় শপথ করার পরে এখানে যে উদ্দেশ্যে শপথ করা হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়েছে। শপথের মূলকথা হচ্ছে এটা বৰ্ণনা করা যে, মানুষ তার প্রভুর অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে থাকে। كنود বলতে এখানে মূলত বোঝানো হয়েছে যে, মানুষ তার রবের নেয়ামতের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। হাসান বসরী বলেন, كنود এর অর্থ সে ব্যক্তি, যে বিপদ স্মরণ রাখে এবং নেয়ামত ভুলে যায়। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। অবশ্যই মানুষ তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ। [1]
[1] এটা হল কসমের জওয়াব। এখানে ‘মানুষ’ বলে উদ্দেশ্য হল কাফের (অবিশ্বাসী)। অর্থাৎ, সকল মানুষ উদ্দেশ্য নয়; (যেহেতু বিশ্বাসী এরূপ নয়।) كَنُود অর্থ হল, না-শোকর, অকৃতজ্ঞ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৭
وَ اِنَّهٗ عَلٰی ذٰلِكَ لَشَهِیۡدٌ ۚ﴿۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর নিশ্চয় সে এ বিষয়ে সাক্ষী(১),
(১) এখানে ‘সে’ বলে বোঝানো হচ্ছে, মানুষ নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী। এ সাক্ষ্য নিজ মুখেই প্রকাশ করতে পারে, আবার কাজ-কর্ম ও অবস্থার মাধ্যমেও প্রকাশিত হতে পারে। এর আরেকটি অর্থ হতে পারে যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের এ অকৃতজ্ঞতার ব্যপারে সাক্ষী। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। এবং নিশ্চয়ই সে নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী। [1]
[1] অর্থাৎ, মানুষ স্বয়ং নিজের অকৃতজ্ঞতার সাক্ষ্য দেয়। কেউ কেউ إنَّه (সে) সর্বনামের বিশেষ্য বা সাক্ষ্য-ক্রিয়ার কর্তা আল্লাহকে বুঝেছেন। কিন্তু ইমাম শাওকানী প্রথম অর্থকেই বলিষ্ঠ বলেছেন। কেননা, পরবর্তী সর্বনামের বিশেষ্য মানুষই। এ আয়াতেও মানুষ উদ্দেশ্য হওয়াটাই অধিক সঠিক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৮
وَ اِنَّهٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ ؕ﴿۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর নিশ্চয় সে ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল(১)।
(১) خير এর শাব্দিক অর্থ মঙ্গল। এখানে ব্যাপক অর্থ ত্যাগ করে আরবের বাকপদ্ধতি অনুযায়ী এ আয়াত ধন-সম্পদকে خير বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমন, অন্য এক আয়াতে আছে (إِنْ تَرَكَ خَيْرًا) “যদি কোন সম্পদ ত্যাগ করে যায়”। [সূরা আল বাকারাহ: ১৮০] এ আয়াতটির অর্থও দুরকম হতে পারে। এক. সে সম্পদের আসক্তির কারণে প্রচণ্ড কৃপণ; দুই. সম্পদের প্রতি তার আসক্তি অত্যন্ত প্রবল। দ্বিতীয় অর্থটির মধ্যেই মূলত প্রথমটি চলে আসে; কেননা সম্পদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তিই কৃপণতার কারণ। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। এবং অবশ্যই সে ধন-সম্পদের আসক্তিতে অত্যন্ত প্রবল। [1]
[1] خَير থেকে মাল-ধনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, আল্লাহর বাণী (إن تَرَكَ خَيرًا الوَصِيّة) সূরা বাক্বারাহ ১৮০নং আয়াতে ঐ শব্দ স্পষ্টভাবে মাল-ধনের অর্থেই ব্যবহূত হয়েছে। অর্থ হল, মানুষ ধন-সম্পদের ব্যাপারে অতি লালসা রাখে ও কৃপণতা বা বখীলী করে; যা মালের প্রতি মহব্বত ও আসক্তি রাখার অনিবার্য পরিণতি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ৯
اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ ۙ﴿۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. তবে কি সে জানে না যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৯। তবে কি সে (তখনকার খবর) জানে না, যখন কবরে যা আছে, তা উত্থিত করা হবে? [1]
[1] بُعثِر শব্দের অর্থ হল, কবর থেকে মৃতব্যক্তিকে জীবিত করে উঠান হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১০০ : ১০
وَ حُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ ﴿ۙ۱۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর অন্তরে যা আছে তা প্ৰকাশ করা হবে?(১)
(১) অর্থাৎ অন্তরের ভালো-মন্দ পৃথক করে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। ফলে গোপনগুলো প্রকাশ হয়ে পড়বে; মানুষের কর্মফল তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে। [সা’দী] এ-বক্তব্যটিই অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “যেদিন গোপন রহস্য যাচাই বাছাই করা হবে।” [সূরা আত-তারিক: ৯] এ দু আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ তা'আলা কবর থেকে উত্থিত করে, গোপন বিষয় প্রকাশ করার পর যে বিচার ও প্রতিদান প্ৰদান করা হবে, মানুষ কি তা জানে না? [মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া১০। এবং অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করা হবে। [1]
[1] حُصِّل এর মানে হল, অন্তরে যা কিছু গোপন আছে তা প্রকাশ করে দেওয়া হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান