بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام আয়াতঃ ১৬৫ মাক্কী
৬:৯১ وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖۤ اِذۡ قَالُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ عَلٰی بَشَرٍ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ قُلۡ مَنۡ اَنۡزَلَ الۡکِتٰبَ الَّذِیۡ جَآءَ بِهٖ مُوۡسٰی نُوۡرًا وَّ هُدًی لِّلنَّاسِ تَجۡعَلُوۡنَهٗ قَرَاطِیۡسَ تُبۡدُوۡنَهَا وَ تُخۡفُوۡنَ کَثِیۡرًا ۚ وَ عُلِّمۡتُمۡ مَّا لَمۡ تَعۡلَمُوۡۤا اَنۡتُمۡ وَ لَاۤ اٰبَآؤُکُمۡ ؕ قُلِ اللّٰهُ ۙ ثُمَّ ذَرۡهُمۡ فِیۡ خَوۡضِهِمۡ یَلۡعَبُوۡنَ ﴿۹۱﴾
و ما قدروا الله حق قدرهٖ اذ قالوا ما انزل الله علی بشر من شیء قل من انزل الکتب الذی جاء بهٖ موسی نورا و هدی للناس تجعلونهٗ قراطیس تبدونها و تخفون کثیرا ۚ و علمتم ما لم تعلموا انتم و لا اباوکم قل الله ۙ ثم ذرهم فی خوضهم یلعبون ۹۱

আর তারা আল্লাহকে যথার্থ সম্মান দেয়নি, যখন তারা বলছে, আল্লাহ কোন মানুষের উপর কিছুই নাযিল করেননি। বল, ‘কে নাযিল করেছে সে কিতাব, যা মূসা নিয়ে এসেছে মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশস্বরূপ, তোমরা তা বিভিন্ন কাগজে লিখে রাখতে, তোমরা তা প্রকাশ করতে আর অনেক অংশ গোপন রাখতে; আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যা জানতে না তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষ’? বল, ‘আল্লাহ’। তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা তাদের অযাচিত সমালোচনায় খেলতে থাকুক। আল-বায়ান

তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি যখন তারা এ কথা বলেছে যে, আল্লাহ কোন মানুষের কাছে কোন কিছুই অবতীর্ণ করেননি। বল, তাহলে ঐ কিতাব কে অবতীর্ণ করেছিলেন যা নিয়ে এসেছিলেন মূসা, যা ছিল মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা ও সঠিক পথের দিকদিশারী, কাগজের পৃষ্ঠায় যা তোমরা প্রকাশ কর আর বেশির ভাগই গোপন কর, যার সাহায্যে তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যা তোমরাও জানতে না, তোমাদের বাপ-দাদারাও জানত না? বল, (মূসার প্রতি ঐ কিতাব) আল্লাহ্ই (নাযিল করেছিলেন), অতঃপর তাদেরকে তাদের নিরর্থক আলোচনায় মত্ত হয়ে থাকতে দাও। তাইসিরুল

এই লোকেরা আল্লাহর যথাযথ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। কেননা তারা বললঃ আল্লাহ কোন মানুষের উপর কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি; তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ মানুষের হিদায়াত ও আলোকবর্তিকা রূপে যে কিতাব মূসা এনেছিল তা কে অবতীর্ণ করেছেন? তোমরা সেই কিতাব খন্ড খন্ড করে বিভিন্ন পত্রে রেখেছ, ওর কিয়দংশ তোমরা প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশ গোপন করছ। (ঐ কিতাব দ্বারা) তোমাদেরকে বহু বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব-পুরুষরা জানতেনা; তুমি বলে দাওঃ তা আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে তাদের বাতিল ধারণার উপর ছেড়ে দাও, তারা খেলা করতে থাকুক। মুজিবুর রহমান

And they did not appraise Allah with true appraisal when they said, "Allah did not reveal to a human being anything." Say, "Who revealed the Scripture that Moses brought as light and guidance to the people? You [Jews] make it into pages, disclosing [some of] it and concealing much. And you were taught that which you knew not - neither you nor your fathers." Say, "Allah [revealed it]." Then leave them in their [empty] discourse, amusing themselves. Sahih International

৯১. আর তারা আল্লাহকে তাঁর যথার্থ মর্যাদা দেয়নি, যখন তারা বলে, আল্লাহ্‌ কোন মানুষের উপর কিছুই নাযিল করেননি।(১) বলুন, কে নাযিল করেছে মূসার আনীত কিতাব যা মানুষের জন্য আলো ও হিদায়াতস্বরূপ, যা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও অনেকাংশ গোপন রাখ এবং যা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ ও তোমরা জানতে না তাও তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল? বলুন, ‘আল্লাহই’; অতঃপর তাদেরকে তাদের অযাচিত সমালোচনার উপর ছেড়ে দিন, তারা খেলা করতে থাকুক।(২)

(১) এ আয়াতে ঐসব লোকের জবাব দেয়া হয়েছে, যারা বলেছিল, আল্লাহ তা'আলা কোন মানুষের প্রতি কখনো কোন গ্রন্থ নাযিলই করেননি, গ্রন্থ ও রাসূলদের ব্যাপারটি মূলতঃ ভিত্তিহীন। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এটি মূর্তিপূজারী কুরাইশদের উক্তি। [ইবন কাসীর]। ইবন জারীর তাবারী এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [তাবারী] কেননা, তারা কোন গ্রন্থ ও নবীর প্রবক্তা কোন কালেই ছিল না। অন্যান্য মুফাসসিরদের মতে এটি ইয়াহুদীদের উক্তি। আয়াতের বর্ণনা পরম্পরা বাহ্যতঃ এরই সমর্থন করে। এমতাবস্থায় তাদের এ উক্তি ছিল ক্রোধ ও বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ, যা স্বয়ং তাদেরও দ্বীনের পরিপন্থী ছিল। [বাগভী]

যদি আয়াতে বর্ণিত লোকেরা ইয়াহুদী হয়, তবে এতে আল্লাহ্ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলেছেন, যারা এমন বাজে কথা বলেছে, তারা যথোপযুক্তভাবে আল্লাহ্ তা'আলাকে চিনে নি। নতুবা এরূপ ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি তাদের মুখ থেকে বেরই হত না। যারা সর্বাবস্থায় আসমানী গ্রন্থকে অস্বীকার করে, আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ তা'আলা কোন মানুষের কাছে যদি গ্রন্থ প্রেরণ না-ই করে থাকেন, তবে যে তাওরাত তোমরা স্বীকার কর, সে তাওরাত কে নাযিল করেছে? তাওরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিচয় ও গুণাবলী সম্পর্কিত কিছু আয়াত ছিল। ইয়াহুদীরা সেগুলো তাওরাত থেকে উধাও করে দিয়েছিল। [তাবারী, বাগভী, মুয়াসসার]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা কোন কিতাব নাযিল না করে থাকলে তাওরাত কে নাযিল করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর তারা কি দেবে; আপনিই বলে দিন, আল্লাহ্ তা'আলাই নাযিল করেছেন। [বাগভী] যখন তাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পূর্ণ হয়ে গেছে, তখন আপনার কাজও শেষ হয়ে গেছে। এখন তারা যে ক্রীড়া-কৌতুকে ডুবে আছে, তাতেই তাদেরকে থাকতে দিন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯১) তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দান করেনি, যখন তারা বলে, ‘আল্লাহ মানুষের নিকট কিছুই অবতীর্ণ করেননি।’[1] বল, ‘তবে মূসার আনীত কিতাব -- যা মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ ছিল, যা তোমরা বিভিন্ন কাগজ-পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও যার অনেকাংশ গোপন রাখ।[2] (যাতে) তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, [3] যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা জানতো না -- তা কে অবতীর্ণ করেছিল?’ তুমি বল, ‘আল্লাহই।’[4] অতঃপর তাদেরকে নিরর্থক আলোচনারূপ খেলায় মগ্ন হতে দাও।

[1] قَدَرٌ এর অর্থ হল, অনুমান করা (কদর ও মূল্যায়ন করা, মর্যাদা দেওয়া)। আর এটা কোন জিনিসের প্রকৃতত্বকে জানা এবং তার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার অর্থেও ব্যবহার হয়। উদ্দেশ্য হল, মক্কার এই মুশরিকরা রসূল প্রেরণ হওয়া এবং গ্রন্থাদি অবতীর্ণ হওয়ার কথা অস্বীকার করে। যার পরিষ্কার অর্থ হল, তারা আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না। তা নাহলে তারা এ জিনিসগুলোকে অস্বীকার করত না। তাছাড়া আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে তারা নবুঅত ও রিসালাতকে জানতেও অক্ষম হয়। ফলে তাদের মনে এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে, কোন মানুষের উপর আল্লাহর এই বাণী কিভাবে অবতীর্ণ হতে পারে? যেমন, অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, {أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَا إِلَى رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ أَنْذِرِ النَّاسَ} ‘‘মানুষের কাছে কি আশ্চর্য লাগছে যে, আমি অহী পাঠিয়েছি তাদের মধ্য থেকে একজনের কাছে, যেন সে মানুষকে সতর্ক করে?’’ (সূরা ইউনুস ২) তিনি আরো বলেন, {وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلَّا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَسُولًا} ‘‘মানুষের কাছে হিদায়াত এসে যাওয়ার পরও তাদের এই উক্তিই কি তাদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখে যে, আল্লাহ একজন মানুষকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?’’ (সূরা ইসরা’ ৯৪) এর কিঞ্চিৎ আলোচনা ইতিপূর্বে ৮নং আয়াতের টীকায় উল্লিখিত হয়েছে। আলোচ্য আয়াতের বক্তব্যেও তারা উক্ত ধারণাবশে এ কথা অস্বীকার করল যে, আল্লাহ কোন মানুষের উপর কোন কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। মহান আল্লাহ বললেন, যদি ব্যাপার এ রকমই হয়, তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর যে, মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত কে অবতীর্ণ করেছিলেন? (যেটাকে তারা স্বীকার করে।)

[2] আয়াতের পূর্বোক্ত তাফসীর অনুযায়ী এখন ইয়াহুদীদেরকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে যে, তোমরা এই কিতাবকে বিক্ষিপ্ত পত্রে রেখে তার মধ্য থেকে যেটাকে তোমরা চাচ্ছ প্রকাশ করছ এবং যেটাকে চাচ্ছ গোপন করছ। যেমন, রজমের বিষয় অথবা নবী করীম (সাঃ)-এর নিদর্শনাবলীর বিষয়। হাফেয ইবনে কাসীর ও ইবনে জারীর ত্বাবারী প্রভৃতিগণ يَجْعَلُوْنَهُ ও يَبْدُوْنَهَا (গায়বের সীগা (মধ্যম পুরুষের স্থলে প্রথম পুরুষ বহুবচন পদ) দ্বারা পড়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন (অর্থাৎ, ‘তোমরা কর’-এর স্থলে ‘তারা করে’ ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন) এবং এর দলীল এই দেন যে, এটা হল মক্কী আয়াত। অতএব, এখানে ইয়াহুদীদেরকে সম্বোধন কিভাবে করা যেতে পারে? আবার কোন কোন মুফাসসির সম্পূর্ণ আয়াতকেই ইয়াহুদী সম্পর্কীয় গণ্য করেছেন এবং এতে মূলতঃ নবুঅত ও রিসালাতের যে অস্বীকৃতি রয়েছে তা তাদের এমন কথা, যার ভিত্তি হল হঠকারিতা, জেদ এবং শত্রুতার উপর। অর্থাৎ, এই আয়াতের তফসীরে মুফাসসিরদের রয়েছে তিনটি মত। প্রথমতঃ সম্পূর্ণ আয়াতকেই ইয়াহুদী সম্পর্কীয় বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ সম্পূর্ণ আয়াতকে মুশরিক সম্পর্কীয় বলা হয়েছে এবং তৃতীয়তঃ আয়াতের শুরুর অংশকে মুশরিক সম্পর্কীয় এবং تَجْعَلُوْنَهُ থেকে অবশিষ্ট অংশটুকু ইয়াহুদী সম্পর্কীয় বলা হয়েছে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

[3] ইয়াহুদী সম্পর্কীয় হলে এর ব্যাখ্যা হবে, তাওরাতের মাধ্যমে তোমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। নচেৎ মুশরিক সম্পর্কীয় মনে করলে এর ব্যাখ্যা হবে, কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

[4] এটা হল مَنْ أَنْزَلَ (কে অবতীর্ণ করেছিল)এর উত্তর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯২ وَ هٰذَا کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ مُبٰرَکٌ مُّصَدِّقُ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ لِتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰی وَ مَنۡ حَوۡلَهَا ؕ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ هُمۡ عَلٰی صَلَاتِهِمۡ یُحَافِظُوۡنَ ﴿۹۲﴾
و هذا کتب انزلنه مبرک مصدق الذی بین یدیه و لتنذر ام القری و من حولها و الذین یومنون بالاخرۃ یومنون بهٖ و هم علی صلاتهم یحافظون ۹۲

আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাযিল করেছি, বরকতময়, যা তাদের সামনে আছে তার সত্যায়নকারী। আর যাতে তুমি সতর্ক কর উম্মুল কুরা (মক্কা) ও তার আশ-পাশে যারা আছে তাদেরকে। আর যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে তারা এ কিতাবের প্রতি ঈমান আনে এবং তারা তাদের সালাতের উপর যত্নবান থাকে। আল-বায়ান

আর [এখন যা মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি নাযিল করা হয়েছে] এ কিতাব বরকতে ভরপুর, তাদের কাছে যে কিতাব আছে তার সত্যতা প্রতিপাদনকারী, আর তা মক্কা ও তার চতুষ্পার্শবস্থ এলাকার লোকেদেরকে সতর্ক করার জন্য প্রেরিত। যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে তারা এতে বিশ্বাস করে, আর তারা তাদের সলাতের হিফাযাত করে। তাইসিরুল

আর এই কিতাবও (কুরআন) আমিই অবতীর্ণ করেছি; যা খুবই বারাকাতময় কিতাব এবং পূর্বের সকল কিতাবকে সত্যায়িত করে থাকে, যেন তুমি কেন্দ্রীয় মাক্কা নগরী এবং ওর চতুস্পার্শ্বস্থ জনপদের লোকদেরকে ওর দ্বারা ভীতি প্রদর্শন কর। যারা পরকালে বিশ্বাস রাখে তারা এই কিতাবকেও বিশ্বাস করবে এবং ওর প্রতি ঈমান আনবে, আর তারা নিয়মিতভাবে সালাতও আদায় করে থাকে। মুজিবুর রহমান

And this is a Book which We have sent down, blessed and confirming what was before it, that you may warn the Mother of Cities and those around it. Those who believe in the Hereafter believe in it, and they are maintaining their prayers. Sahih International

৯২. আর এটি বরকতময় কিতাব, যা আমরা নাযিল করেছি, যা তার আগের সব কিতাবের সত্যায়নকারী এবং যা দ্বারা আপনি মক্কা ও তার চারপাশের মানুষদেরকে সতর্ক করেন(১)। আর যারা আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, তারা এটাতেও ঈমান রাখে(২) এবং তারা তাদের সালাতের হিফাযত করে।

(১) অর্থাৎ তাওরাত আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল- একথা যেমন তারা স্বীকার করে, তেমনিভাবে এ কুরআনও আমি নাযিল করেছি। কুরআনের সত্যতার জন্য তাদের পক্ষ থেকে এ সাক্ষ্যই যথেষ্ট যে, কুরআন, তাওরাত ও ইঞ্জলে নাযিলকৃত সব বিষয়বস্তুর সত্যায়ন করে। মক্কা মুআযযামাকে কুরআনুল কারীম ‘উম্মুল কুরা’ বলেছে। অর্থাৎ বস্তিসমূহের মূল। এর কারণ এই যে, ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী এখান থেকেই পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল। তাছাড়া এ স্থানটিই সারা বিশ্বের কেবল এবং মুখ ফেরানোর কেন্দ্রবিন্দু। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর]

(২) যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে, তারা কুরআনের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত সংরক্ষণ করে। এতে ইয়াহুদী ও মুশরিকদের একটি অভিন্ন রোগ সম্পর্কে হুশিয়ার করা হয়েছে। অর্থাৎ যা ইচ্ছা মেনে নেয়া এবং যা ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করা, এর বিরুদ্ধে রণক্ষেত্র তৈরী করা- এটি আখেরাতে বিশ্বাসহীনতা রোগেরই প্রতিক্রিয়া। যে ব্যক্তি আখেরাতে বিশ্বাস করে, আল্লাহভীতি অবশ্যই তাকে যুক্তি-প্রমাণে চিন্তা-ভাবনা করতে এবং পৈতৃক প্রথার পরওয়া না করে সত্যকে গ্রহণ করে নিতে উদ্ভুদ্ধ করবে। চিন্তা করলে দেখা যায়, আখেরাতের চিন্তা না থাকাই সর্বরোগের মূল কারণ।

কুফর ও শিকসহ যাবতীয় পাপও এরই ফলশ্রুতি। আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তির দ্বারা যদি কোন সময় ভুল ও পাপ হয়েও যায়, তাতে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে এবং অবশেষে তাওবা করে পাপ থেকে বেঁচে থাকতে কৃতসংকল্প হয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহভীতি এবং আখেরাতভীতিই মানুষকে মানুষ করে এবং অপরাধ থেকে বিরত রাখে। এ কারণেই কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন সূরায় আখেরাতের চিন্তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যার অন্তরে আখেরাতের উপর ঈমান নেই সে কখনো অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে না, আর ন্যায় কাজ করতে উৎসাহ বোধ করে না। [দেখুন, তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯২) এ কিতাব (কুরআন) কল্যাণময় করে অবতীর্ণ করেছি, যা ওর পূর্বেকার কিতাবের সমর্থক এবং যা দিয়ে তুমি মক্কা ও ওর পার্শ্ববর্তী লোকদের সতর্ক কর। যারা পরকালে বিশ্বাস করে, তারা ওতে (কুরআনে) বিশ্বাস করে এবং তারা তাদের নামাযের হিফাযত করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৩ وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ کَذِبًا اَوۡ قَالَ اُوۡحِیَ اِلَیَّ وَ لَمۡ یُوۡحَ اِلَیۡهِ شَیۡءٌ وَّ مَنۡ قَالَ سَاُنۡزِلُ مِثۡلَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ ؕ وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا کُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ کُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِهٖ تَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۹۳﴾
و من اظلم ممن افتری علی الله کذبا او قال اوحی الی و لم یوح الیه شیء و من قال سانزل مثل ما انزل الله و لو تری اذ الظلمون فی غمرت الموت و الملىکۃ باسطوا ایدیهم ۚ اخرجوا انفسکم الیوم تجزون عذاب الهون بما کنتم تقولون علی الله غیر الحق و کنتم عن ایتهٖ تستکبرون ۹۳

আর তার চেয়ে বড় যালিম কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, অথবা বলে, ‘আমার উপর ওহী প্রেরণ করা হয়েছে’, অথচ তার প্রতি কোন কিছুই প্রেরণ করা হয়নি? এবং যে বলে ‘আমি অচিরেই নাযিল করব, যেরূপ আল্লাহ নাযিল করেছেন’। আর যদি তুমি দেখতে, যখন যালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহঙ্কার করতে। আল-বায়ান

তার থেকে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে কথা রচনা করে অথবা বলে, আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল হয়; যদিও তার কাছে কিছুই অবতীর্ণ হয় না। আর যে বলে : আল্লাহ যা নাযিল করেন আমি শীঘ্রই তার অনুরূপ নাযিল করব। হায়! যদি তুমি ঐ যালিমদেরকে দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের জানগুলোকে বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে যা প্রকৃত সত্য নয় আর তাঁর নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে। তাইসিরুল

আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী কে হতে পারে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে? অথবা এরূপ বলেঃ আমার উপর অহী নাযিল করা হয়েছে, অথচ তার উপর প্রকৃত পক্ষে কোন অহী নাযিল করা হয়নি এবং যে ব্যক্তি এও বলেঃ যেরূপ কালাম আল্লাহ নাযিল করেছেন, তদ্রুপ আমিও আনয়ন করছি। আর তুমি যদি দেখতে পেতে (ঐ সময়ের অবস্থা) যে সময় যালিমরা হবে মৃত্যু সংকটে (পরিবেষ্টিত); আর মালাইকা/ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবেঃ নিজেদের প্রাণগুলি বের কর, আজ তোমাদেরকে সেই সব অপরাধের শাস্তি হিসাবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে যা তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা দোষারোপ করে অকারণ প্রলাপ বকেছিলে এবং তাঁর আয়াতসমূহ কবূল করা হতে অহংকার করেছিলে। মুজিবুর রহমান

And who is more unjust than one who invents a lie about Allah or says, "It has been inspired to me," while nothing has been inspired to him, and one who says, "I will reveal [something] like what Allah revealed." And if you could but see when the wrongdoers are in the overwhelming pangs of death while the angels extend their hands, [saying], "Discharge your souls! Today you will be awarded the punishment of [extreme] humiliation for what you used to say against Allah other than the truth and [that] you were, toward His verses, being arrogant." Sahih International

৯৩. আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে, কিংবা বলে, আমার কাছে ওহী হয়, অথচ তার প্রতি কিছুই ওহী করা হয় না এবং যে বলে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন আমিও তার মত নাযিল করব? আর যদি আপনি দেখতে পেতেন, যখন যালিমরা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের কর। আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহংকার করতে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৩) আর যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, ‘আমার নিকট প্রত্যাদেশ (অহী) হয়’, যদিও তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় না এবং যে বলে, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, আমিও ওর অনুরূপ অবতীর্ণ করব’, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে? যদি তুমি দেখতে পেতে (তখনকার অবস্থা), যখন (ঐ) যালেমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে, আর ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, ‘তোমাদের প্রাণ বের কর। আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দান করা হবে;[1] কারণ তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় বলতে ও তাঁর আয়াত গ্রহণে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে।’[2]

[1] ‘যালেম’ বলতে প্রত্যেক যালেমকে বুঝানো হয়েছে এবং এর মধ্যে আল্লাহর কিতাবকে অস্বীকারকারী ও নবুঅতের মিথ্যা দাবীদারগণ সর্বপ্রথম শামিল থাকবে। غَمَرَاتٌ থেকে মৃত্যু-যন্ত্রণাকে বুঝানো হয়েছে। ‘ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে’ অর্থাৎ, জান কবয করার জন্য। اليَوْمَ (আজ) অর্থাৎ, জান কবয করার দিন। আর এই দিন হল আযাব শুরু হওয়ার সময়; যার প্রথম স্থান হল কবর। আর এ থেকে এ কথাও সুসাব্যস্ত হয়ে যায় যে, কবরের আযাব সত্য। তা না হলে হাত বাড়ানো এবং প্রাণ বের করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সাথে এ কথা বলার কোন অর্থ থাকে না যে, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হবে। স্মরণ থাকে যে, কবর বলতে উদ্দেশ্য বারযাখী জীবন। অর্থাৎ, ইহজগতের জীবনের পর এবং পরজগতের জীবনের (কিয়ামত ঘটার) পূর্বে এটা একটি মধ্যজগতের জীবন। যার সময়কাল হল, মানুষের মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত। এটাকে বলা হয় বারযাখী জীবন। চাহে তাকে কোন হিংস্র পশু খেয়ে নিক অথবা তার লাশ সামুদ্রিক তরঙ্গ-কবলিত হোক কিংবা জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া হোক বা কবরে দাফন করা হোক। মরণের পর এ হল বারযাখী জীবন, যেখানে আযাব দেওয়ার শক্তি মহান আল্লাহর আছে।

[2] আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় বা অসত্য বলার মধ্যে কিতাব অবতীর্ণ হওয়া ও রসূল প্রেরণের কথা অস্বীকার এবং নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী করার কথাও শামিল আছে। নবুঅত ও রিসালাতের অস্বীকার এবং তা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার ব্যাপারটাও অনুরূপ। এই উভয় কারণের ভিত্তিতে তাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৪ وَ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا فُرَادٰی کَمَا خَلَقۡنٰکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ وَّ تَرَکۡتُمۡ مَّا خَوَّلۡنٰکُمۡ وَرَآءَ ظُهُوۡرِکُمۡ ۚ وَ مَا نَرٰی مَعَکُمۡ شُفَعَآءَکُمُ الَّذِیۡنَ زَعَمۡتُمۡ اَنَّهُمۡ فِیۡکُمۡ شُرَکٰٓؤُا ؕ لَقَدۡ تَّقَطَّعَ بَیۡنَکُمۡ وَ ضَلَّ عَنۡکُمۡ مَّا کُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ ﴿۹۴﴾
و لقد جىتمونا فرادی کما خلقنکم اول مرۃ و ترکتم ما خولنکم وراء ظهورکم ۚ و ما نری معکم شفعاءکم الذین زعمتم انهم فیکم شرکوا لقد تقطع بینکم و ضل عنکم ما کنتم تزعمون ۹۴

আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে। আল-বায়ান

(ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছ যেমনভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, তোমাদেরকে যা (নি‘মাতরাজি) দান করেছিলাম তা তোমরা তোমাদের পেছনে ফেলে রেখে এসেছ, আর তোমাদের সাথে সেই সুপারিশকারীগণকেও দেখছি না যাদের সম্পর্কে তোমরা ধারণা করতে যে তোমাদের কার্য উদ্ধারের ব্যাপারে তাদের অংশ আছে। তোমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে, আর তোমরা যে সব ধারণা করতে সে সব অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তাইসিরুল

আর তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ এসেছ, যেভাবে প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম, আর যা কিছু আমি তোমাদেরকে দিয়েছিলাম তা তোমরা নিজেদের পশ্চাতেই ছেড়ে এসেছ, আর আমিতো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকে দেখছিনা যাদের সম্বন্ধে তোমরা দাবী করতে যে, তারা তোমাদের কাজকর্মে (আমার) শরীক; বাস্তবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্কতো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর তোমরা যা কিছু ধারণা করতে তা সবই আজ তোমাদের নিকট থেকে উধাও হয়ে গেছে। মুজিবুর রহমান

[It will be said to them], "And you have certainly come to Us alone as We created you the first time, and you have left whatever We bestowed upon you behind you. And We do not see with you your 'intercessors' which you claimed that they were among you associates [of Allah]. It has [all] been severed between you, and lost from you is what you used to claim." Sahih International

৯৪. আর অবশ্যই তোমরা আমাদের কাছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমন আমরা প্রথম বার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম; আর আমরা তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা তোমাদের পিছনে ফেলে এসেছ। আর তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে (আল্লাহর সাথে) শরীক মনে করতে, তোমাদের সে সুপারিশকারিদেরকেও আমরা তোমাদের সাথে দেখছি না। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৪) তোমরা আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ[1] যেমন প্রথমবারে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা তোমরা পশ্চাতে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে (আমার) অংশী ধারণা করতে, সেই সুপারিশকারিগণকেও তোমাদের সাথে দেখছি না। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও উধাও হয়েছে।

[1] فُرَادَى হল فَرْدٌ এর বহুবচন। যেমন, سُكَارَى হল سَكْرَانٌ এর এবং كُسَالَى হল كَسْلاَنٌ এর বহুবচন। অর্থাৎ, তোমরা পৃথক পৃথকভাবে একজন একজন করে আমার কাছে আসবে। তোমাদের সাথে না থাকবে মাল, না সন্তান-সন্ততি আর না সেই উপাস্যগুলো, যাদেরকে তোমরা আল্লাহর শরীক এবং নিজেদের সাহায্যকারী মনে করেছিলে। অর্থাৎ, এগুলোর মধ্য থেকে কোন জিনিসই তোমাদের কোন উপকারে আসার ক্ষমতা রাখবে না। পরের আয়াতগুলোতে এ কথাগুলোরই আরো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৫ اِنَّ اللّٰهَ فَالِقُ الۡحَبِّ وَ النَّوٰی ؕ یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ مُخۡرِجُ الۡمَیِّتِ مِنَ الۡحَیِّ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰهُ فَاَنّٰی تُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۹۵﴾
ان الله فالق الحب و النوی یخرج الحی من المیت و مخرج المیت من الحی ذلکم الله فانی توفکون ۹۵

নিশ্চয় আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বেরকারী। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং (সৎপথ থেকে) কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? আল-বায়ান

আল্লাহই হচ্ছেন শস্য দানা ও বীজ বিদীর্ণকারী, তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে মৃতকে। এই হচ্ছেন আল্লাহ; সৎপথ থেকে তোমরা কোথায় চলে যাচ্ছ? তাইসিরুল

নিশ্চয়ই দানা ও বীজ দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ। তিনিই জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং তিনিই প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে নিগর্তকারী; তিনিইতো আল্লাহ, তাহলে তোমরা কোথায় যাচ্ছো? মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah is the cleaver of grain and date seeds. He brings the living out of the dead and brings the dead out of the living. That is Allah; so how are you deluded? Sahih International

৯৫. নিশ্চয় আল্লাহ শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনিই প্রাণহীন থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে প্রাণহীন বেরকারী।(১) তিনিই তো আল্লাহ্‌, কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?(২)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলাই মৃত বস্তু থেকে জীবিত বস্তু সৃষ্টি করেন। মৃত বস্তু যেমন, বীর্য ও ডিম- এগুলো থেকে মানুষ ও জন্তু-জানোয়ার সৃষ্টি হয়, এমনিভাবে তিনি জীবিত বস্তু থেকে মৃত বস্তু বের করে দেন- যেমন, বীর্য ও ডিম জীবিত বস্তু থেকে বের হয়। [জালালাইন; মুয়াসসার]

(২) এগুলো সব এক আল্লাহর কাজ। অতঃপর এ কথা জেনে-শুনে তোমরা কোন দিকে বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছ? তোমরা স্বহস্তে নির্মিত প্রতিমাকে বিপদ-বিদূরণকারী ও অভাব পূরণকারী উপাস্য বলতে শুরু করেছ। [মুয়াসসার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৫) নিশ্চয় আল্লাহ শস্যবীজ ও আঁটিকে অঙ্কুরিত করেন।[1] তিনিই প্রাণহীন হতে জীবন্তকে নির্গত করেন[2] এবং জীবন্ত হতে প্রাণহীনকে নির্গত করেন।[3] তিনিই তো আল্লাহ। সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরে যাবে?

[1] এখান থেকে আল্লাহর অপরিসীম শক্তি এবং তাঁর কর্মক্ষমতার কথা আরম্ভ হচ্ছে। বললেন, আল্লাহ তাআলা বীজ ও আঁটি, -- যেটাকে চাষী জমির নীচে (মাটি) চাপা দেয় -- তা অঙ্কুরিত করে তা থেকে বহু প্রকার বৃক্ষ উদগত করেন। জমি একটাই এবং যে পানি দিয়ে তার সেচ করা হয় তাও একটাই, কিন্তু যে যে জিনিসের সে বীজ বপন করে অথবা আঁটি পুঁতে সেই অনুযায়ী মহান আল্লাহ বিভিন্ন প্রকার শস্যাদি ও ফল-মূলের গাছ সৃষ্টি করেন। আচ্ছা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এমন আছে নাকি, যে এ কাজ করে বা করতে পারে?

[2] অর্থাৎ, বীজ এবং আঁটি থেকে বৃক্ষ উদগত করেন; যাতে থাকে জীবন এবং তা বাড়ে, সম্প্রসারিত হয় এবং ফল অথবা শস্য দেয় কিংবা সেই সুগন্ধময় রকমারি ফুল; যা দেখে বা যার ঘ্রাণ নিয়ে মানুষ আনন্দ ও খুশী অনুভব করে। অথবা বীর্য ও ডিম থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু সৃষ্টি করেন।

[3] অর্থাৎ, জীব-জন্তু থেকে ডিমকে; যা মৃত জিনিসেরই আওতাভুক্ত। حي এবং ميت ব্যাখ্যা মু’মিন এবং কাফেরও করা হয়েছে। অর্থাৎ, মু’মিনের ঘরে কাফের এবং কাফেরের ঘরে মু’মিন সৃষ্টি করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৬ فَالِقُ الۡاِصۡبَاحِ ۚ وَ جَعَلَ الَّیۡلَ سَکَنًا وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ حُسۡبَانًا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ﴿۹۶﴾
فالق الاصباح ۚ و جعل الیل سکنا و الشمس و القمر حسبانا ذلک تقدیر العزیز العلیم ۹۶

(তিনি) প্রভাত উদ্ভাসক। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ। আল-বায়ান

তিনি ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনি রাত সৃষ্টি করেছেন শান্তি ও আরামের জন্য, সূর্য ও চন্দ্র বানিয়েছেন গণনার জন্য। এসব মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞাতা কর্তৃক নির্ধারিত। তাইসিরুল

তিনিই রাতের আবরণ বিদীর্ণ করে রঙ্গিন প্রভাতের উন্মেষকারী, তিনিই রাতকে বিশ্রামকাল এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরূপক করে দিয়েছেন; এটা হচ্ছে সেই পরম পরাক্রান্ত ও সর্ব পরিজ্ঞাতার (আল্লাহর) নির্ধারণ। মুজিবুর রহমান

[He is] the cleaver of daybreak and has made the night for rest and the sun and moon for calculation. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. Sahih International

৯৬. তিনি প্রভাত উদ্ভাসকৎ(১) আর তিনি রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরুপক করেছেন(২); এটা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ্‌র নির্ধারণ।(৩)

(১) فَالِقُ শব্দের অর্থ ফাঁককারী এবং إصباح শব্দের অর্থ এখানে প্রভাতকাল। (فَالِقُ الْإِصْبَاحِ) এর অর্থ প্রভাতের ফাঁককারী; অর্থাৎ গভীর অন্ধকারের চাদর ফাঁক করে প্রভাতের উন্মেষকারী। [জালালাইন] এটিও এমন একটি কাজ, যাতে জ্বিন, মানব ও সমগ্র সৃষ্ট জীবের শক্তিই ব্যর্থ। প্রতিটি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এ কথা বুঝতে বাধ্য যে, রাত্রির অন্ধকারের পর প্রভাতরশ্মির উদ্ভাবক জ্বিন, মানব, ফিরিশতা অথবা অন্য কোন সৃষ্টজীব হতে পারে না, বরং এটি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তা'আলারই কাজ। তিনি ধীরে ধীরে অন্ধকার চিরে আলোর উন্মেষ ঘটান। সে আলোতে মানুষ তাদের জীবিকার জন্যে বের হতে পারে। [সা’দী]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সূর্য ও চন্দ্রের উদয়-অস্ত এবং এদের গতিকে একটি বিশেষ হিসাবের অধীনে রেখেছেন। এর ফলে মানুষ বৎসর, মাস, দিন, ঘন্টা এমনকি মিনিট ও সেকেণ্ডের হিসাবও অতি সহজে করতে পারে। আল্লাহ্ তা'আলার অপার শক্তিই এসব উজ্জ্বল বিশাল গোলক ও এদের গতি-বিধিকে অটল ও অনড় নিয়মের অধীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার বছরেও এদের গতি-বিধিতে এক মিনিট বা এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। এ উজ্জ্বল গোলকদ্বয় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে বিচরণ করছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রমকারী হওয়া। আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটে।” [সূরা ইয়াসীন: ৪০]

পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির এ অটল ও অপরিবর্তনীয় ব্যবস্থা থেকেই মানুষ প্রতারিত হয়েছে। তারা এগুলোকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বরং উপাস্য ও উদ্দিষ্ট মনে করে বসেছে। যদি এ ব্যবস্থা মাঝে মাঝে অচল হয়ে যেত এবং কলকজা মেরামতের জন্য কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টার বিরতি দেখা দিত, তবে মানুষ বুঝতে পারত যে, এসব মেশিন আপনা আপনিই চলে না, বরং এগুলোর পরিচালক ও নির্মাতা আছে। আসমানী কিতাব, নবী ও রাসূলগণ এ সত্য উদঘাটন করার জন্যই প্রেরিত হন। কুরআনুল কারীমের এ বাক্য আরো ইঙ্গিত করেছে যে, বছর ও মাসের সৌর ও চান্দ্র উভয় প্রকার হিসাবই হতে পারে এবং উভয়টিই আল্লাহ্ তা'আলার নেয়ামত। এর মাধ্যমেই সময় ও কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে লেন-দেনের সময়ও ঠিক রাখা যায়। তাছাড়া কতটুকু সময় পার হয়েছে আর কতটুকু বাকী রয়েছে সেটা জানাও এ দুটোর কারণেই হয়ে থাকে। যদি এগুলো না থাকত, তবে এ সময় নির্ধারণের ব্যাপারটি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকত না। এর জন্য বিশেষ শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ত। যাতে দ্বীন ও দুনিয়ার অনেক স্বার্থ হানি ঘটত। [সা'দী]

(৩) অর্থাৎ এ বিস্ময়কর অটল ব্যবস্থা- যাতে কখনো এক মিনিট ও এক সেকেণ্ড এদিক-ওদিক হয় না- এটি একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই দুটি মহান গুণ অপরিসীম শক্তি ও অপার জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। [মানার] এজন্যেই বাক্যের শেষে আল্লাহর দুটি গুণ বাচক নাম পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী’ উল্লেখ করা হয়েছে। তার অপার শক্তির কারণে সমস্ত কিছু তার অনুগত বাধ্য হয়েছে। আর তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের কারণে কোন গোপন বা প্রকাশ্য সবকিছু তার আয়ত্বাধীন রয়েছে। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৬) তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান,[1] আর তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত[2] এবং গণনার জন্য চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন,[3] এ সব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ কর্তৃক সুবিন্যস্ত।

[1] অন্ধকার ও আলোর স্রষ্টাও তিনিই। তিনি রাতের অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল প্রভাত সৃষ্টি করেন। ফলে প্রতিটি জিনিসই আলোকিত হয়ে যায়।

[2] অর্থাৎ, রাতকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন, যাতে মানুষ উজ্জ্বলতার সমস্ত ব্যস্ততাকে দূর করে বিশ্রাম নিতে পারে।

[3] (অথবা হিসাবমত সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন।) অর্থাৎ, উভয়ের জন্য একটি হিসাব বাঁধা আছে, যাতে কোন পরিবর্তন ও অনিয়ম ঘটতে পারে না। বরং উভয়ের রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথ, যাতে তারা শীত-গ্রীষ্মে ধাবমান থাকে। আর এরই ভিত্তিতে শীতের সময় দিন ছোট এবং রাত বড় হয়, আর গ্রীষ্ম এর বিপরীত; অর্থাৎ, দিন বড় এবং রাত ছোট হয়। এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা ইউনুসের ৫নং আয়াতে, সূরা ইয়াসীনের ৪০নং আয়াতে এবং সূরা আ’রাফের ৫৪ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৭ وَ هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ النُّجُوۡمَ لِتَهۡتَدُوۡا بِهَا فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۹۷﴾
و هو الذی جعل لکم النجوم لتهتدوا بها فی ظلمت البر و البحر قد فصلنا الایت لقوم یعلمون ۹۷

আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। আল-বায়ান

তিনি তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা সেগুলোর সাহায্যে জলে স্থলে অন্ধকারে পথের দিশা লাভ করতে পার। আমি আমার নিদর্শনগুলোকে জ্ঞানীদের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। তাইসিরুল

আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার স্থল ভাগে এবং সমুদ্রে। নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ঐ সমস্ত লোকের জন্য যারা জ্ঞান রাখে। মুজিবুর রহমান

And it is He who placed for you the stars that you may be guided by them through the darknesses of the land and sea. We have detailed the signs for a people who know. Sahih International

৯৭. আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামণ্ডল সৃষ্টিকরেছেন যেন তা দ্বারা তোমরা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও(১)। অবশ্যই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি।(২)

(১) অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র ছাড়া অন্যান্য নক্ষত্রও আল্লাহ্ তা'আলার অপরিসীম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এগুলো সৃষ্টি করার পিছনে যে হাজারো রহস্য রয়েছে, তন্মধ্যে একটি এই যে, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় রাত্রির অন্ধকারে যখন দিক নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ এসব নক্ষত্রের সাহায্যে পথ ঠিক করে নিতে পারে। [মুয়াসসার] অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, আজ বৈজ্ঞানিক কলকজার যুগেও মানুষ নক্ষত্রপুঞ্জের পথ প্রদর্শনের প্রতি অমুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতেও মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, এসব নক্ষত্রও কোন একজন নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিচরণ করছে। এরা স্বীয় অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও কর্মে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়। যারা শুধু এদের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে এবং নির্মাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, তারা অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং আত্মপ্রবঞ্চিত।

(২) অর্থাৎ আমি শক্তির প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি বিজ্ঞজনদের জন্য। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে চিনে না, তারা বেখবর ও অচেতন। কোন নিদর্শনই তাদের কাজে লাগে না। নবীদের বর্ণনাও তাদের কোন সন্দেহ দূর করতে পারে না। তাদের কাছে এসব বর্ণনা যত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবেই আসুক না কেন, তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৭) আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তা দিয়ে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ পাও।[1] জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছেন।

[1] এখানে তারকারাজির আরো একটি উপকারিতা ও উদ্দেশ্যের কথা বর্ণনা হয়েছে। এর আরো দু’টি উদ্দেশ্য আছে যা অন্যত্র বর্ণনা করা হয়েছে। আসমানের সৌন্দর্য এবং শয়তানকে মেরে তাড়ানোর হাতিয়ার। رُجُوْمًا لِلشَّيَاطِيْن অর্থাৎ, শয়তান যখন আসমানে যাওয়ার প্রচেষ্টা করে, তখন এরা উলকা হয়ে তার উপর পতিত হয়। কোন কোন সালাফদের উক্তি হল, مَنِ اعْتَقَدَ فِيْ هَذِهِ النَّجُوْمِ غَيْرَ ثَلاَثٍ، فَقَدْ أَخْطَأَ وَكَذَبَ عَلَى اللهِ অর্থাৎ, এই তিনটি জিনিস ব্যতীত এই তারাগুলোর ব্যাপারে কেউ যদি অন্য কোন ধারণা পোষণ করে, তবে সে ভুল করবে এবং আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারী গণ্য হবে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের দেশে যে জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা রয়েছে যাতে আগামীর অবস্থাসমূহ, মানুষের জীবন অথবা বিশ্বপরিচালনার উপর তারকারাজির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া আছে বলে দাবী করা হয়, তার সবই ভিত্তিহীন এবং শরীয়তের পরিপন্থীও। সুতরাং একটি হাদীসে এই বিদ্যাকে যাদুরই একটি অংশ বলা হয়েছে।

مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِّنَ النُّجُوْمِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِّنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ (حسنه الألباني، صحيح أبي داود ৩৯০৫)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৮ وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ فَمُسۡتَقَرٌّ وَّ مُسۡتَوۡدَعٌ ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّفۡقَهُوۡنَ ﴿۹۸﴾
و هو الذی انشاکم من نفس واحدۃ فمستقر و مستودع قد فصلنا الایت لقوم یفقهون ۹۸

আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এক নফস থেকে। অতঃপর রয়েছে আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, এমন কওমের জন্য যারা ভালভাবে বুঝে। আল-বায়ান

তিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন, তারপর প্রত্যেকের জন্য একটা অবস্থান স্থল আছে আর একটি আছে তাকে গচ্ছিত রাখার জায়গা। জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেদের জন্য আমি আমার আয়াতগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি। তাইসিরুল

তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর (প্রত্যেকের জন্য) একটি স্থান অধিক দিন থাকার জন্য এবং একটি স্থান অল্প দিন থাকার জন্য রয়েছে, এই নিদর্শনসমূহ আমি তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করলাম যাদের বুদ্ধি বিবেচনা আছে। মুজিবুর রহমান

And it is He who produced you from one soul and [gave you] a place of dwelling and of storage. We have detailed the signs for a people who understand. Sahih International

৯৮. আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রয়েছে দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান(১)। অবশ্যই আমরা অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।

(১) এ আয়াতে দুটি শব্দ বলা হয়েছে, مُسْتَقَرٌّ ও مُسْتَوْدَعٌ তন্মধ্যে مُسْتَقَرٌّ শব্দটি قرار থেকে উদ্ভুত। কোন বস্তুর অবস্থান স্থলকে مستقر বলা হয়। আর مُسْتَوْدَعٌ শব্দটি وديعت থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ কারো কাছে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রেখে দেয়া। অতএব, مستودع ঐ জায়গাকে বলা হবে, যেখানে কোন বস্তু অস্থায়ীভাবে কয়েক দিন রাখা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাই সে পবিত্র সত্তা যিনি মানুষকে এক সত্তা থেকে অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার জন্য একটি দীর্ঘকালীন এবং একটি স্বল্পকালীন অবস্থানস্থল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [সা'দী] কুরআনুল কারীমের ভাষা এরূপ হলেও এর ব্যাখ্যায় বহুবিধ সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এ সম্পর্কে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। কেউ বলেছেন, مُسْتَوْدَعٌ ও مُسْتَقَرٌّ যথাক্রমে মাতৃগর্ভ ও দুনিয়া। আবার কেউ বলেছেন, কবর ও আখেরাত। [ফাতহুল কাদীর]

আবার কেউ বলেছেন, মায়ের পেট হচ্ছে مُسْتَقَرٌّ আর পিতার পিঠ হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ [আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার] এছাড়া আরো বিভিন্ন উক্তি আছে এবং কুরআনের ভাষায় সবগুলোরই অবকাশ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেনঃ مُسْتَقَرٌّ হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। আর মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে আখেরাত পর্যন্ত সবগুলো স্তর, তা মাতৃগর্ভই হোক কিংবা পৃথিবীতে বসবাসের জায়গাই হোক কিংবা কবর বা বরযখই হোক-সবগুলোই হচ্ছে مُسْتَوْدَعٌ অর্থাৎ সাময়িক অবস্থানস্থল। [সা’দী] কুরআনুল কারীমের এক আয়াত দ্বারাও এ উক্তির অগ্রগণ্যতা বুঝা যায়। যেখানে বলা হয়েছে, (لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍ) অর্থাৎ তোমরা সর্বদা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে আরোহণ করতে থাকবে। [সূরা আল-ইনশিকাক: ১৯] এর সারমর্ম এই যে, আখেরাতের পূর্বে মানুষ সমগ্র জীবনে একজন মুসাফিরসদৃশ। বাহ্যিক স্থিরতা ও অবস্থিতির সময়ও প্রকৃতপক্ষে সে জীবন-সফরের বিভিন্ন মনযিল অতিক্রম করতে থাকে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৮) আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান রয়েছে।[1] নিশ্চয় আমি অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেছি।

[1] অধিকাংশ মুফাসসিরদের নিকট مُسْتَقَرٌّ বলতে মায়ের গর্ভাশয় এবং مُسْتَوْدَعٌ বলতে বাপের পৃষ্ঠদেশকে বুঝানো হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:৯৯ وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَخۡرَجۡنَا بِهٖ نَبَاتَ کُلِّ شَیۡءٍ فَاَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرًا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبًّا مُّتَرَاکِبًا ۚ وَ مِنَ النَّخۡلِ مِنۡ طَلۡعِهَا قِنۡوَانٌ دَانِیَۃٌ وَّ جَنّٰتٍ مِّنۡ اَعۡنَابٍ وَّ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُشۡتَبِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ اُنۡظُرُوۡۤا اِلٰی ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ یَنۡعِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکُمۡ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۹۹﴾
و هو الذی انزل من السماء ماء ۚ فاخرجنا بهٖ نبات کل شیء فاخرجنا منه خضرا نخرج منه حبا متراکبا ۚ و من النخل من طلعها قنوان دانیۃ و جنت من اعناب و الزیتون و الرمان مشتبها و غیر متشابه انظروا الی ثمرهٖ اذا اثمر و ینعهٖ ان فی ذلکم لایت لقوم یومنون ۹۹

আর তিনিই আসমান থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর আমি এ দ্বারা উৎপন্ন করেছি সব জাতের উদ্ভিদ। অতঃপর আমি তা থেকে বের করেছি সবুজ ডাল-পালা। আমি তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে (বের করি) ঝুলন্ত থোকা। আর (উৎপন্ন করি) আঙ্গুরের বাগান এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন যয়তুন ও আনার। দেখ তার ফলের দিকে, যখন সে ফলবান হয় এবং তার পাকার প্রতি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা ঈমান আনে। আল-বায়ান

তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন অতঃপর তা দ্বারা আমি সকল প্রকার উদ্ভিদ উদগত করি, অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদ্গত করি, অতঃপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপন্ন করি, খেজুর গাছের মোচা থেকে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি, আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি, আর সৃষ্টি করি জায়তুন ও ডালিম, সেগুলো একই রকম এবং বিভিন্ন রকমও। লক্ষ্য কর তার ফলের প্রতি যখন গাছে ফল আসে আর ফল পাকে। এসবের ভিতরে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে। তাইসিরুল

আর তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, ওর সাহায্যে সব রকমের উদ্ভিদ আমি (আল্লাহ) উৎপন্ন করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ শাখা বের করি, ফলতঃ তা থেকে আমি উপর্যুপরি উত্থিত বীজ উৎপন্ন করি। এবং খেজুর বৃক্ষ থেকে অর্থাৎ ওর পুস্পকণিকা থেকে ছড়া হয় যা নিম্ন দিকে ঝুঁকে পড়ে, আর আঙ্গুরসমূহের উদ্যান এবং যাইতূন ও আনার যা পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত। প্রত্যেক ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন ওটা ফলে এবং ওর পরিপক্ক হওয়ার প্রতি লক্ষ্য কর। এই সমুদয়ের মধ্যে নিদর্শনসমূহ রয়েছে তাদেরই জন্য যারা ঈমান রাখে। মুজিবুর রহমান

And it is He who sends down rain from the sky, and We produce thereby the growth of all things. We produce from it greenery from which We produce grains arranged in layers. And from the palm trees - of its emerging fruit are clusters hanging low. And [We produce] gardens of grapevines and olives and pomegranates, similar yet varied. Look at [each of] its fruit when it yields and [at] its ripening. Indeed in that are signs for a people who believe. Sahih International

৯৯. আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা আমরা সব রকমের উদ্ভিদের চারা উদগম করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদগত করি। যা থেকে আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি। আরও (নির্গত করি) খেজুর গাছের মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি, আংগুরের বাগান, যায়তুন ও আনার। একটার সাথে অন্যটার মিল আছে, আবার নেইও। লক্ষ্য করুন, ওগুলোর ফলের দিকে যখন সেগুলো ফলবান হয় এবং সেগুলো পেকে উঠার পদ্ধতির প্রতি। নিশ্চয় মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য এগুলোর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।(১)

(১) উপরোক্ত ৯৫-৯৯ আয়াতসমূহে প্রথমে অধঃজগতের বস্তুসমূহ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। কারণ এগুলো আমাদের অধিক নিকটবর্তী। এরপর এগুলোর বর্ণনাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এক. মাটি থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ, বৃক্ষ ও বাগানের বর্ণনা এবং দুই. মানব ও জীবজন্তুর বর্ণনা। এরপর শূন্য জগতের উল্লেখ করা হয়েছে; অর্থাৎ সকাল ও বিকাল। এরপর উর্ধ্ব জগতের সৃষ্ট বস্তু বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি। অতঃপর অধঃজগতের বস্তুসমূহ অধিক প্রত্যক্ষ হওয়ার কারণে এগুলোর পূর্ণ বর্ণনা দ্বারা আলোচনা সমাপ্ত করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৯) তিনিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর তা দিয়ে আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদগম করেছি।[1] অনন্তর তা থেকে আমি সবুজ পাতা উদগত করেছি।[2] অতঃপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্য-দানা সৃষ্টি করি[3] এবং খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি।[4] আর আঙ্গুরের উদ্যানরাজি সৃষ্টি করি এবং যয়তুন ও ডালিমও,[5] যা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও।[6] যখন তা ফলবান হয় এবং ফলগুলি পরিপক্ব হয়, তখন সেগুলির প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চই এগুলিতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। [7]

[1] এখান থেকে তাঁর আরো একটি বিস্ময়কর কারিগরির কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, বৃষ্টির পানি। যার দ্বারা তিনি বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষ সৃষ্টি করেন।

[2] অর্থাৎ, সেই সবুজ কচি কিশলয় ও অঙ্কুরিত চারাগাছকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলো মাটিতে চাপা দেওয়া বীজ হতে মহান আল্লাহ মাটির উপর প্রকাশ করেন। অতঃপর সে চারাগাছ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

[3] অর্থাৎ, সবুজ এই চারাগাছগুলোর উপর সন্নিবিষ্ট দানা সৃষ্টি করি। যেমন, গম ও ধানের শীষে হয়। উদ্দেশ্য, সকল প্রকার শস্যাদি। যেমন, যব, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা এবং গম ও ধান ইত্যাদি।

[4] قِنْوانٌ হল قِنْوٌ এর বহুবচন; যেমন, صِنْوٌ এবং صِنْوانٌ অর্থঃ গুচ্ছ। طَلْعٌ হল খেজুরের সেই মোচা, যা প্রাথমিক অবস্থায় প্রকাশ পায়। এটাই বড় হয়ে কাঁদির আকার ধারণ করে অতঃপর তা আধপাকা খেজুরে পরিণত হয়। دَانِيَةٌ সেই গুচ্ছকে বলা হয়, যা নুয়ে থাকে। আর কিছু গুচ্ছ অনেক দূরে থাকে যেখানে হাত পৌঁছে না। অনুগ্রহের প্রকাশ স্বরূপ دانية এর কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, مِنْهَا دَانِيَةٌ ومِنْهَا بَعِيْدَةٌ (কিছু গুচ্ছ নিকটে থাকে এবং কিছু দূরে)। (ফাতহুল ক্বাদীর) بَعِيْدَةٌ শব্দ ঊহ্য আছে।

[5] جنات، الزيتون এবং الرمان শব্দগুলো ‘মানসূব’ (যবর অবস্থায়) এসেছে, কারণ এগুলোর সংযোগ হল পূর্বোক্ত نباتَ এর সাথে। অর্থাৎ, وَأَخْرَجْنَا بِهِ جَنَّاتٍ (আর বৃষ্টির পানির দ্বারা আমি আঙ্গুরের বাগান এবং যয়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছি।)

[6] অর্থাৎ, কোন কোন গুণাবলীতে এরা পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত, আবার কোন কোন গুণাবলীতে এদের পারস্পরিক কোন সাদৃশ্য থাকে না। অথবা এদের পাতাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সাদৃশ্য থাকে, কিন্তু ফলের মধ্যে কোন মিল থাকে না। কিংবা আকার-আকৃতিতে এদের মধ্যে সাদৃশ্য থাকে, কিন্তু মজা ও সবাদে এরা একে অপর থেকে ভিন্নতর হয়।

[7] অর্থাৎ, উল্লিখিত সমস্ত জিনিসের মধ্যে বিশ্বজাহানের স্রষ্টার পরিপূর্ণ শক্তি এবং তাঁর হিকমত ও রহমতের বহু প্রমাণ রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬:১০০ وَ جَعَلُوۡا لِلّٰهِ شُرَکَآءَ الۡجِنَّ وَ خَلَقَهُمۡ وَ خَرَقُوۡا لَهٗ بَنِیۡنَ وَ بَنٰتٍۭ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾
و جعلوا لله شرکاء الجن و خلقهم و خرقوا لهٗ بنین و بنتۭ بغیر علم سبحنهٗ و تعلی عما یصفون ۱۰۰

আর তারা জিনকে আল্লাহর জন্য শরীক সাব্যস্ত করেছে, অথচ তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশত মনগড়াভাবে নির্ধারণ করেছে তার জন্য পুত্র ও কন্যা সন্তান। তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা বিবরণ দেয় তা থেকে ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

তারা জ্বীনকে আল্লাহর অংশীদার স্থির করে অথচ তাদেরকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন, তারা না জেনে না বুঝে আল্লাহর জন্য পুত্র-কন্যা স্থির করে, তাদের এসব কথা হতে তিনি পবিত্র ও মহান। তাইসিরুল

আর এই (অজ্ঞ) লোকেরা জিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিয়েছে, অথচ আল্লাহই ঐগুলিকে সৃষ্টি করেছেন, আর না জেনে না বুঝে তারা তাঁর জন্য পুত্র কন্যা রচনা করে; তিনি মহিমান্বিত (পবিত্র), এদের আরোপিত বিশেষণগুলি হতে বহু উর্ধ্বে তিনি। মুজিবুর রহমান

But they have attributed to Allah partners - the jinn, while He has created them - and have fabricated for Him sons and daughters. Exalted is He and high above what they describe Sahih International

১০০. আর তারা জিনকে আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্রকন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র- মহিমান্বিত! এবং তারা যা বলে তিনি তার ঊর্ধ্বে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০০) তারা জ্বিনকে আল্লাহর অংশী স্থাপন করে, অথচ তিনিই ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং ওরা অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যা বলে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৯১ থেকে ১০০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 7 8 9 10 11 · · · 14 15 16 17 পরের পাতা »