-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭১. আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু(১), তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তারাই, যাদেরকে আল্লাহ্ অচিরেই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনগণকে তুমি দেখবে তাদের দয়া, ভালবাসা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে এক শরীরের ন্যায়। যার এক অংশে ব্যাথা হলে তার সারা শরীর নির্ঘুম ও জ্বরে ভোগে। [বুখারী: ৬০১১; মুসলিম: ২৫৮৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭১) আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু,[1] তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে।[2] আর যথাযথভাবে নামায আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে।[3] এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতি সত্বর করুণা বর্ষণ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান হিকমতওয়ালা।
[1] মুনাফিক্বদের নিন্দনীয় গুণের তুলনায় মু’মিনদের প্রশংসনীয় গুণ উল্লেখ করা হচ্ছে। তাদের প্রথম গুণ হল, তারা এক অপরের বন্ধু, সাহায্যকারী ও সহানুভুতিশীল। যেমন, হাদীসে এসেছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘মু’মিন মুমিনের জন্য দেওয়ালস্বরূপ; যার এক ইঁট অপর ইঁটকে শক্ত করে ধরে থাকে।’’ (বুখারীঃ নামায অধ্যায়, মুসলিম) তিনি আরো বলেছেন, ‘‘পরস্পর সম্প্রীতি ও দয়া-দাক্ষিণ্যে মু’মিনদের উপমা হল একটি দেহের মত, যখন তার কোন এক অঙ্গ কষ্ট পায়, তখন তার সারা দেহ জ্বর ও ব্যথায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। (বুখারীঃ আদব অধ্যায়, মুসলিম)
[2] এটা হল ঈমানদারদের দ্বিতীয় বিশেষ গুণ। مَعرُوف (সৎ) সেই কাজকে বলা হয়, যাকে শরীয়ত নেক ও ভাল বলে চিহ্নিত করেছে। আর مُنكَر (অসৎ) সেই কাজকে বলা হয়, যাকে শরীয়ত মন্দ ও খারাপ বলে আখ্যায়িত করেছে। সেই কাজ সৎ বা অসৎ নয়, যা লোকেরা নিজেদের খেয়াল-খুশী মত ভাল বা মন্দ বলে থাকে।
[3] নামায হল আল্লাহর হকসমূহের মধ্যে একটি প্রধান ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর যাকাত বান্দার হকসমূহের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। এই জন্য এই দু’টিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তারা সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭২. আল্লাহ্ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের—যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরও (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের।(১) আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য।
(১) জান্নাতের বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসেও এসেছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীরা জান্নাতের কামরাগুলোকে এমনভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশে তারকা দেখতে পাও”। [বুখারী: ৬৫৫৫l অন্য হাদীসে এসেছে, ‘জান্নাতে এমন কিছু কক্ষ আছে যে কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের অংশ দেখা যায় আর বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা'আলা এগুলো তো তাদের জন্য তৈরী করেছেন, যারা অপরকে খাদ্য খাওয়ায়, নম্রভাবে কথা বলে, নিয়মিত সাওম পালন করে এবং যখন মানুষ ঘুমন্ত, তখন সালাত আদায় করে। [মুসনাদ আহমাদ: ৫/৩৪৩] অন্য হাদীসে এসেছে, “জান্নাতের প্রাসাদের এক ইট হবে রৌপ্যের, আরেক ইট হবে স্বর্ণের। ...”। [মুসনাদ আহমাদ: ২/৩০৪]
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “মুমিন ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি তাবু থাকবে, যা হবে মাত্র একটি ফাঁপা মুক্তা, আর যার উচ্চতা হবে ষাট মাইল। মুমিন ব্যক্তির জন্য তাতে পরিবার-পরিজন থাকবে, সে তাদের কাছে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তাদের একজন আরেকজনকে দেখতে পাবে না।” [বুখারী: ৪৮৭৯, মুসলিম: ২৮৩৪]
আর আরশের অধিক নিকটবর্তী, জান্নাতের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানের নাম ওয়াসীলা। এটাই জান্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসস্থান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি তোমরা মুয়াযযিনের আযান শোন, তবে সে আযানের জবাব দাও। অতঃপর আমার উপর সালাত পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করে, আল্লাহ্ তা'আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার সালাত পাঠ করেন। তারপর আমার জন্য তোমরা ‘ওয়াসীলা’র প্রার্থনা কর। আর ওয়াসীলা হল জান্নাতের এমন এক মর্যাদাসম্পন্ন স্থান, যা কেবলমাত্র একজন বান্দা ছাড়া আর কারও উপযুক্ত নয়। আর আমি আশা করি, আমি-ই সে বান্দা। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ওয়াসীলার প্রার্থনা করবে, সে কেয়ামতের দিন আমার শাফা’আত পাবে। [মুসলিম: ১৩৮৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবে, হে জান্নাতবাসীরা! তখন তারা বলবে, হে রব! আমরা হাজির, আমরা হাজির, আর সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন তিনি বলবেন, ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট? তখন তারা বলবে, আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন, যা আপনার কোন সৃষ্টিকেই দেন নি? তখন তিনি বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেব না? তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম কী হতে পারে? তখন তিনি বলবেন, আমি আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর অবতরণ করাব; এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না।” [বুখারী: ৬৫৪৯, মুসলিম: ২৮২৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭২) আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদেরকে এমন উদ্যানসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, যেগুলোর নিম্নদেশে বইতে থাকবে নদীমালা, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আরও (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) চিরস্থায়ী উদ্যানসমূহে (জান্নাতে আদনে)[1] পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত)। [2] এটাই হচ্ছে অতি বড় সফলতা।
[1] যা মণিমুক্তা দ্বারা বানানো হয়েছে। عَدن শব্দের কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অর্থ হল চিরস্থায়ী।
[2] হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতে সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে জান্নাতীদের সব থেকে বড় নিয়ামত হিসাবে যা লাভ হবে, তা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। (বুখারী, মুসলিম, রিক্বাক ও জান্নাত অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৩. হে নবী কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন(১), তাদের প্রতি কঠোর হোন(২); এবং তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম, আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল!
(১) আয়াতে কাফের ও মুনাফিক উভয় সম্প্রদায়ের সাথে জিহাদ করতে এবং তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [তাবারী] প্রকাশ্যভাবে যারা কাফের তাদের সাথে জিহাদ করার বিষয়টি তো সুস্পষ্ট যে তাদের বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে জিহাদ করতে হবে, কিন্তু মুনাফিকদের সাথে জিহাদ কিভাবে করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাদের বিরুদ্ধেও হাত দিয়ে, সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে, তাতেও সম্ভব না হলে অন্তর দিয়ে জিহাদ করতে হবে। আর সেটা হচ্ছে তাদেরকে দেখলে কঠোরভাবে তাকানো। [বাগভী]
ইবন আব্বাস বলেন, তাদের সাথে জিহাদ করার মর্ম হল মৌখিক জিহাদ এবং কোমলতা পরিত্যাগ। [তাবারী] অর্থাৎ তাদেরকে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে যাতে করে তারা ইসলামের দাবীতে নিষ্ঠাবান হয়ে যেতে পারে। দাহহাক বলেন, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ হচ্ছে, কথায় কঠোরতা অবলম্বন। কাতাদা বলেন, এক্ষেত্রে বাস্তব ও কার্যকর কঠোরতাই বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ তাদের উপর শরীআতের হুকুম জারী করতে গিয়ে কোন রকম দয়া বা কোমলতা করবেন না। [বাগভী]
(২) এখানে বর্ণিত غلظة এর প্রকৃত অর্থ হল, উদ্দিষ্ট ব্যক্তি যে আচরণের যোগ্য হবে তাতে কোন রকম কোমলতা যেন না করা হয়। এ শব্দটি رأفة এর বিপরীতে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ হল কোমলতা ও করুণা। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৩) হে নবী! তুমি কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর[1] এবং তাদের প্রতি কঠোর হও।[2] তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা। [3]
[1] এই আয়াতে নবী (সাঃ)-কে কাফের ও মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে ও তাদের প্রতি কঠোর হতে আদেশ করা হচ্ছে। নবী (সাঃ)-এর গত হওয়ার পর তাঁর উম্মত হল এ সম্বোধনের লক্ষ্য। কাফেরদের সাথে সাথে মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধেও জিহাদ করার যে আদেশ করা হয়েছে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এক রায় হল এই যে, যদি মুনাফিক্বদের মুনাফিক্বী এবং তাদের চক্রান্ত স্পষ্টাকারে প্রকাশ পায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হবে; যেমন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় রায় হল যে, মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে জিহাদ হল এই যে, তাদেরকে জিহ্বা দ্বারা ওয়ায-নসীহত করা হবে অথবা তারা চারিত্রিক কোন সীমালংঘন করলে তাদের উপর হদ্দ্ (দন্ডবিধি) জারী করা হবে। তৃতীয় রায় হল যে, জিহাদের হুকুম কাফেরদের ব্যাপারে এবং কঠোরতা মুনাফিক্বদের ব্যাপারে। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এই সমস্ত রায়ের মধ্যে কোন পরস্পর-বিরোধিতা নেই। কেননা, অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে এসব রায়ের মধ্যে কোন একটার উপর আমল করা বৈধ।
[2] غِلظَة শব্দটি رَأفَة এর বিপরীত; যার অর্থ হল নম্রতা ও দয়া। এই হিসাবে غِلظَة এর অর্থ হল কঠোরতা ও শক্তিমত্তার সাথে শত্রুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া। কেবলমাত্র জিহ্বা দ্বারা কঠোরতা উদ্দেশ্য নয়। যেহেতু তা নবী (সাঃ)-এর সুমহান চরিত্রের পরিপন্থী। সুতরাং তা তিনি অবলম্বন করতে পারতেন না এবং আল্লাহ তাআলা তা অবলম্বন করতে আদেশও দিতেন না।
[3] জিহাদ এবং কঠোরতার সম্পর্ক পার্থিব জীবনের সাথে। আর আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রয়েছে যা নিকৃষ্টতম স্থান।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৪. তারা আল্লাহ্র শপথ করে যে, তারা কিছু বলেনি(১); অথচ তারা তো কুফরী বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর তারা কুফরী করেছে; আর তারা এমন কিছুর সংকল্প করেছিল যা তারা পায়নি। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেছিলেন বলেই তারা বিরোধিতা করেছিল(২)। অতঃপর তারা তাওবাহ করলে তা তাদের জন্য ভাল হবে, আর তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন; আর যমীনে তাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই।
(১) এ আয়াতে মুনাফিকদের আলোচনা করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের বৈঠক সমাবেশে কুফরী কথাবার্তা বলতে থাকে এবং তা যখন মুসলিমরা জেনে ফেলে, তখন মিথ্যা কসম খেয়ে নিজেদের সুচিতা প্রমাণ করতে প্রয়াসী হয়। ইমাম বগভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ আয়াতের শানে নুযুল বর্ণনা প্রসঙ্গে এ ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গযওয়ায়ে তাবুক প্রসঙ্গে এক ভাষণ দান করেন যাতে মুনাফিকদের অশুভ পরিণতি ও দূরাবস্থার কথা বলা হয়। উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে জুল্লাস নামক এক মুনাফিকও ছিল। সে নিজ বৈঠকে গিয়ে বলল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু বলেন তা যদি সত্যি হয়, তবে আমরা (মুনাফিকরা) গাধার চাইতেও নিকৃষ্ট। তার এ বাক্যটি আমের ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু নামক এক সাহাবী শুনে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু বলেন নিঃসন্দেহে তা সত্য এবং তোমরা গাধা অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাবুকের সফর থেকে মদীনা মুনাওয়ারায় ফিরে আসেন, তখন আমের ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন। জুল্লাস নিজের কথা ঘুরিয়ে বলতে শুরু করে যে, আমের ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করছে (আমি এমন কথা বলিনি)। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়কে মিম্বরে-নববী'র পাশে দাঁড়িয়ে কসম খাবার নির্দেশ দেন। জুল্লাস অবলীলাক্রমে কসম খেয়ে নেয় যে, আমি এমন কথা বলিনি, আমের মিথ্যা কথা বলেছে। আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পালা এলে তিনিও (নিজের বক্তব্য সম্পর্কে) কসম খান এবং পরে হাত উঠিয়ে দো'আ করেন যে, হে আল্লাহ আপনি ওহীর মাধ্যমে স্বীয় রাসূলের উপর এ ঘটনার তাৎপর্য প্রকাশ করে দিন।
তাঁর প্রার্থনায় স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সমস্ত মুসলিম ‘আমীন’ বললেন। তারপর সেখান থেকে তাঁদের সরে আসার পূর্বেই জিবরীলে-আমীন ওহী নিয়ে হাযির হন যাতে উল্লেখিত আয়াতখানি নাযিল হয়। জুল্লাস আয়াতের পাঠ শুনে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে বলতে আরম্ভ করে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখন স্বীকার করছি যে, এ ভুলটি আমার দ্বারা হয়ে গিয়েছিল। আমের ইবন কায়েস যা কিছু বলেছেন তা সবই সত্য। তবে এ আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে তাওবাহ করার অবকাশ দান করেছেন। কাজেই এখনই আমি আল্লাহর নিকট মাগফেরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং সাথে সাথে তাওবাহ করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার তাওবাহ কবুল করে নেন এবং তারপর তিনি নিজ তাওবায় অটল থাকেন। তাতে তার অবস্থাও শুধরে যায়। [বাগভী]
কোন কোন তফসীরবিদ মনীষী এ আয়াতের শানে-নুযূল প্রসঙ্গে এমনি ধরণের অন্যান্য ঘটনার বর্ণনা করেছেন। যেমন, তাবুকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের বিখ্যাত ঘটনা যে, মুনাফিকদের বার জন লোক পাহাড়ী এক ঘাটিতে এমন উদ্দেশ্যে লুকিয়ে বসেছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এখানে এসে পৌছবেন, তখন আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলবে। এ ব্যাপারে জিবরীলে আমীন তাকে খবর দিলে তিনি এ পথ থেকে সরে যান এবং এতে করে তাদের হীনচক্রান্ত ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। [ইবন কাসীর] এছাড়া মুনাফিকদের দ্বারা এ ধরনের অন্যান্য ঘটনাও সংঘটিত হয়। তবে এসবের মধ্যে কোন বৈপরীত্ব কিংবা বিরোধ নেই। এ সমুদয় ঘটনাই উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হতে পারে।
(২) অনুরূপ কথাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমরা ছিলে পথভ্রষ্ট তারপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন। আর তোমরা ছিলে দরিদ্র, আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে ধনী করেছেন। তারা যখনই রাসূলের মুখ থেকে কোন কথা শুনছিল তখনই বলছিল, আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দয়াই বেশী। [বুখারী ৪৩৩০; মুসলিম: ১০৬১]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৪) তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, তারা (গালি) বলেনি, অথচ নিশ্চয়ই তারা কুফরী কথা বলেছে এবং নিজেদের ইসলাম গ্রহণের পর কাফের হয়ে গেছে,[1] আর তারা এমন বিষয়ের সংকল্প করেছিল যা তারা কার্যকরী করতে পারেনি।[2] আর তারা শুধু এই জন্য দোষারোপ করেছিল যে, তাদেরকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে এবং তাঁর রাসূল অভাবমুক্ত করে দিয়েছিলেন,[3] অনন্তর যদি তারা তওবা করে, তাহলে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হবে; আর যদি তারা বিমুখ হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে ও পরকালে যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রদান করবেন এবং ভূ-পৃষ্ঠে তাদের না কোন অলী (অভিভাবক) হবে, আর না কোন সাহায্যকারী।
[1] মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তফসীরে নানান ঘটনা নকল করেছেন, যাতে মুনাফিক্বরা রসূল (সাঃ)-এর শানে বেআদবীমূলক কথা বলেছিল, যা কিছু মুসলিম শুনে ফেলেছিলেন এবং তাঁরা নবী (সাঃ)-এর কাছে এসে সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বাহানা বানাতে শুরু করল। বরং তারা কসম পর্যন্ত খেয়ে বলল যে, তারা এমন কথা বলেনি। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল। এ থেকে এও জানা গেল যে, নবী (সাঃ)-এর শানে বেআদবীমূলক কথা বলা কুফরী। তাঁর শানে যে ব্যক্তি বেআদবীমূলক অশালীন মন্তব্য করবে, সে ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে না।
[2] এ ব্যাপারেও কয়েকটি ঘটনা নকল করা হয়েছে। যেমন, তাবুক থেকে ফিরার পথে মুনাফিকবরা রসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে এক চক্রান্ত করেছিল, যাতে তারা সফল হয়ে ওঠেনি। দশ-বারোজন মুনাফিক্ব এক উপত্যকায় তাঁর পিছু নেয়, যেখানে তিনি বাকী সৈন্য থেকে পৃথকভাবে প্রায় একাকী অতিক্রম করছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে, এই সুযোগে অতর্কিতে তাঁর উপর আক্রমণ করে তাঁকে হত্যা করে ফেলবে! কিন্তু এর খবর অহী মারফৎ জানতে পারলে তিনি সতর্ক হয়ে বেঁচে যান।
[3] মুসলিমদের হিজরতের পর মদীনা শহর কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। যার কারণে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যও বড় উন্নতি লাভ করতে লাগল এবং তার ফলে মদীনাবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা হয়ে উঠল। মদীনার মুনাফিক্বরাও এতে উপকৃত হল। আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে এ কথাই বলেছেন, তারা কি এই দোষ আরোপ করে অথবা এই কথায় নারাজ যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে ধনী বানিয়ে দিয়েছেন? অর্থাৎ এটা নারাজ হওয়ার, রাগ বা দোষের কথা তো নয়। বরং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, তিনি তাদেরকে দরিদ্রতা থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছল ও ধনবান বানিয়ে দিয়েছেন। জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ তাআলার সাথে রসূল (সাঃ)-এর উল্লেখ এই জন্য করা হয়েছে যে, এই সচ্ছল ও ধনবান হওয়ার বাহ্যিক কারণ হলেন নবী (সাঃ)। আসলে আল্লাহই হলেন সচ্ছলতা ও ধনদাতা। এই জন্যই আয়াতে مِن فَضلِه একবচনের সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিয়েছেন।
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৫. আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল, আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করলে আমরা অবশ্যই সদকা দেব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৫) তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল, আল্লাহ যদি আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহ হতে দান করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা দান-খয়রাত করব এবং সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৬. অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ হতে দান করলেন, তখন তারা এ বিষয়ে কার্পণ্য করল এবং বিমুখ হয়ে ফিরে গেল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৬) অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ দান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পণ্য করতে লাগল এবং বিমুখ হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। [1]
[1] এই আয়াতটি সাহাবী সা’লাবাহ বিন হাত্বেব আনসারী (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে বলে কোন কোন মুফাসসির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সনদের দিক থেকে এটা শুদ্ধ নয়। সঠিক মত হল এই যে, এতেও মুনাফিক্বদের আরো একটি মন্দ আচরণ বর্ণনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৭. পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে মুনাফেকী রেখে দিলেন(১) আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত, তারা আল্লাহর কাছে যে অঙ্গীকার করেছিল তা ভঙ্গ করার কারণে এবং তারা যে মিথ্যা বলেছিল সে কারণে।
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা তাদের অপকর্ম ও অঙ্গীকার লংঘনের ফলে তাদের অন্তরসমূহে মুনাফিকী বা কুটিলতাকে আরো পাকাপোক্ত করে বসিয়ে দেন, যাতে তাদের তাওবাহ করার ভাগ্যও হবে না। হাদীসে মুনাফিকদের আলামত বর্ণিত হয়েছে, “মুনাফিকের আলামত হচ্ছে, তিনটি, কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে খিয়ানত করে।” [বুখারী ৩৩; মুসলিম: ৫৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৭) পরিণামে আল্লাহ তাদের শাস্তিস্বরূপ তাদের অন্তরসমূহে মুনাফিক্বী (কপটতা) স্থায়ী করে দিলেন তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার দিন পর্যন্ত। যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে নিজেদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল এবং তারা মিথ্যা বলত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৮. তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন কথা ও তাদের গোপন পরামর্শ জানেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ গায়েবসমূহের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞাত?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৮) তারা কি জানত না যে, আল্লাহ তাদের মনের গুপ্ত কথা এবং গোপন পরামর্শ অবগত আছেন? এবং নিশ্চয় আল্লাহ অদৃশ্য বিষয়ে মহাজ্ঞানী? [1]
[1] এতে সেই সমস্ত মুনাফিক্বদের প্রতি তিরস্কার ও ধমক রয়েছে যারা আল্লাহ তাআলার সাথে অঙ্গীকার করে থাকে, অতঃপর তার পরোয়া করে না। যেন তারা ভাবে যে, আল্লাহ তাআলা তাদের গোপন কথা এবং অন্তরের রহস্য জানেন না। অথচ আল্লাহ তাআলা সব কিছুর ব্যাপারে অবগত, তিনি অদৃশ্যজ্ঞাতা, তিনি গায়েবের সমস্ত খবর জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৯. মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে(১)। অতঃপর তারা তাদের নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন(২); আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(১) আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন সদকার নির্দেশ দেয়া হলো, তখন আমরা পরস্পর অর্থের বিনিময়ে বহন করতাম। তখন আবু আকীল অর্ধ সা’ নিয়ে আসল। অন্য একজন আরও একটু বেশী আনল। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, আল্লাহ এর সদকা থেকে অবশ্যই অমুখাপেক্ষী, আর দ্বিতীয় লোকটিও দেখানোর জন্যই এটা করেছে। তখন এ আয়াত নাযিল হয় ৷ [বুখারী ৪৬৬৮]
(২) আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক কাফের মুনাফিকদের উপহাসের বিপরীতে উপহাস করা কোন খারাপ গুণ নয়। তাই তাদের উপহাসের বিপরীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহাস হতে পারে। [সিফাতুল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি] এ উপহাস সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা মুমিনদের পক্ষ নিয়ে কাফের ও মুনাফিকদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করবেন। তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। এভাবেই তিনি তাদের সাথে উপহাস করবেন। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে তাদের উপর বদদোআ করা হয়েছে যে, যেভাবে তারা মুমিনদের সাথে উপহাস করেছে আল্লাহও তাদের সাথে সেভাবে উপহাস করুন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৯) বিশ্বাসীদের মধ্যে সতস্ফুতভাবে যারা (নফল) সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, [1] আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন[2] এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
[1] مُطَََّوِّعََِْينَ শব্দের অর্থ হল ওয়াজেব সাদকাহ (যাকাত) ছাড়াও নিজ খুশী মতে আল্লাহর রাহে অতিরিক্ত ব্যয়কারী। جُهد শব্দের অর্থ হল শ্রম ও কষ্ট। অর্থাৎ, সেই সব মানুষ যারা ধনবান নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের মেহনত ও কষ্টের সাথে উপার্জিত সামান্য মাল থেকেও অল্প কিছু দান করে থাকে। আলোচ্য আয়াতে মুনাফিক্বদের আরো একটি নোংরা আচরণের কথা উল্লেখ হয়েছে। আর তা এই যে, যখন আল্লাহর রসূল (সাঃ) যুদ্ধ প্রভৃতির ব্যাপারে মুসলিমদেরকে দান করতে আহবান করতেন, তখন তাঁরা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ক্ষমতানুযায়ী দান করতেন। কারো কাছে অধিক মাল থাকলে তিনি বেশী বেশী স্বাদক্বাহ করতেন। আর অল্প থাকলে অল্পই দিতেন। এই মুনাফিক্বরা উভয় প্রকার মুসলমানদের প্রতি ভৎর্সনা করত। আর অধিক দানকারীর জন্য বলত, এর উদ্দেশ্য হল লোক দেখানো। আর স্বল্প দানকারীকে বলত, তোমার এই সামান্য মাল স্বাদক্বাহ করায় কি উপকার হবে? অথবা আল্লাহ তাআলা তোমার এই স্বল্প মালের মুখাপেক্ষী নন। (বুখারী সূরা তাওবার ব্যখ্যা পরিচ্ছেদ, মুসলিম যাকাত অধ্যায়) এইভাবে মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে ঠাট্টা-পরিহাস করত।
[2] অর্থাৎ, মু’মিনদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার বদলা এইভাবে দিয়ে থাকেন যে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন। এটি হল (কর্মের অনুরূপ দন্ডদান নীতি এবং) অলংকার শাস্ত্রের সাদৃশ্য সাধনের রীতি। অথবা এটা হল বদদুআস্বরূপ। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাদের সাথেও উপহাস করুন, যেমন তারা মুসলিমদের সাথে করে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮০. আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন একই কথা; আপনি সত্তর বার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা এ জন্যে যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।(১)
(১) তাফসীরবিদগণ বলেন, এ আয়াত তখন নাযিল হয়, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন মুনাফিকের জন্য ক্ষমার দো'আ করছিলেন। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮০) তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা না কর (উভয়ই সমান); যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না;[1] যেহেতু তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে। [2] আর আল্লাহ অবাধ্য সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [3]
[1] সত্তরের সংখ্যা আধিক্য বর্ণনার জন্য ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, তুমি যত বেশীই তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর না কেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, ৭০ বারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তারা ক্ষমালাভ করবে।
[2] এখানে ক্ষমা না করার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে মানুষ কারো সুপারিশের আশায় বসে না থাকে; বরং ঈমান ও নেক আমলের পুঁজি সংগ্রহ করে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়। যদি এই আখেরাতের পাথেয় কারো কাছে না থাকে, তাহলে এমন কাফের ও অবাধ্যদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা এমন লোকদের জন্য সুপারিশের অনুমতিই দান করবেন না।
[3] এই হিদায়াত (পথপ্রদর্শন) থেকে সেই হিদায়াত উদ্দেশ্য যা মানুষকে তার অভীষ্ট (ঈমান) পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। নতুবা হিদায়াত অর্থ হল, পথনির্দেশ করা। যার সুব্যবস্থা প্রত্যেক মু’মিন ও কাফেরের জন্য করে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ।’’ (সূরা দাহর ৩ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন, ‘‘এবং আমি কি তাকে দু’টি পথ দেখাইনি?’’(সূরা বালাদ ১০ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান