-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭১. ফিরআউন বলল, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা মূসার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে! সে তো তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে।(১) কাজেই আমি তো তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটিবই(২) এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কাণ্ডে শূলিবিদ্ধ করবই।(৩) আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে। আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।(৪)
(১) সূরা আল-আ'রাফে বলা হয়েছেঃ “এটি একটি ষড়যন্ত্র, তোমরা শহরে বসে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে লোকদেরকে এখান থেকে হটিয়ে দেবার জন্য এ ষড়যন্ত্র করেছো।” এখানে এ উক্তিটির বিস্তারিত বর্ণনা আবার এভাবে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যে শুধু পারস্পরিক যোগসাজশ আছে তাই নয় বরং মনে হচ্ছে এ মূসা তোমাদের দলের গুরু। তোমরা মু'জিযার কাছে পরাজিত হওনি বরং নিজেদের গুরুর জাদুর পাতানো খেলার কাছে পরাজিত হয়েছে। বুঝা যাচ্ছে, তোমরা নিজেদের মধ্যে এ মর্মে পরামর্শ করে এসেছে যে, নিজেদের গুরুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমুখ করে এবং একে তার নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে পেশ করবে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ ফিরআউন জাদুকরদেরকে কঠোর শাস্তির হুমকি দিল যে, তোমাদের হস্তপদ এমনভাবে কাটা হবে যে, ডান হাত কেটে বাম পা কাটা হবে। সম্ভবতঃ ফিরআউনী আইনে শাস্তির এই পন্থাই প্রচলিত ছিল অথবা এভাবে হস্তপদ কাটা হলে মানুষের শিক্ষার একটা নমুনা হয়ে যায়। তাই ফিরআউন এই ব্যবস্থাই প্রস্তাব হিসেবে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে সেই সর্বপ্রথম এটা প্ৰচলন করেছে। [ইবন কাসীর]
(৩) শূলিবিদ্ধ করার প্রাচীন পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপঃ একটি লম্বা কড়িকাঠ মাটিতে গেড়ে দেয়া হতো। অথবা পুরাতন গাছের গুড়ি একাজে ব্যবহৃত হতো। এর মাথার উপর একটি তখতা আড়াআড়িভাবে বেঁধে দেয়া হতো। অপরাধীকে উপরে উঠিয়ে তার দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে তখতার গায়ে পেরেক মেরে আটকে দেয়া হতো। এভাবে অপরাধী তখতার সাথে ঝুলতে থাকতো এবং ঘন্টর পর ঘন্টা কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুবরণ করতো। লোকদের শিক্ষালাভের জন্য শূলিদণ্ডপ্রাপ্তকে এভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বুলিয়ে রাখা হতো। ফিরআউনও তাই বলছিল যে, হস্তপদ কাটার পর তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের শূলে চড়ানো হবে। ক্ষুধা ও পিপাসায় না মরা পর্যন্ত তোমরা ঝুলে থাকবে। মুফাসসিরগণ বলেন, এ জন্যই في শব্দ ব্যবহার করেছে। কারণ, في দ্বারা স্থায়িত্ব বোঝায়। [ফাতহুল কাদীর]
(৪) অর্থাৎ মূসা বেশী শাস্তি দিতে পারে নাকি আমি বেশী শাস্তি দিতে পারি। এখানে মূসাকে শাস্তিদাতা হিসেবে উল্লেখ করা এক ধরনের প্রহসন। মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে শাস্তি দান কেন করবেন? অথবা মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে কুফরি ও শির্কের উপর থাকলে যে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলেছিলেন এটাকে নিয়েই সে ঠাট্টা করতে আরম্ভ করছিল। অথবা এখানে মূসা বলে মূসার রব বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭১) ফিরআউন বলল, ‘তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই কী তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রধান যে তোমাদের জাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব নিশ্চয় আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীতভাবে[1] কেটে ফেলব এবং তোমাদেরকে খেজুর কান্ডে শূলবিদ্ধ করব। আর তখন তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শক্তি কঠোরতর ও দীর্ঘস্থায়ী।’
[1] ‘বিপরীতভাবে’ এর অর্থ হল, ডান হাত ও বাম পা অথবা বাম হাত ও ডান পা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭২. তারা বলল, আমাদের কাছে যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। কাজেই তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবার নিতে পার। তুমি তো শুধু এ দুনিয়ার জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার।(১)
(১) জাদুকররা ফিরআউনী কঠোর হুমকি ও শাস্তির ঘোষণা শুনে ঈমানের ব্যাপারে এতটুকুও বিচলিত হল না। তারা বললঃ আমরা তোমাকে অথবা তোমার কোন কথাকে ঐসব নিদর্শন ও মু'জিযার উপর প্রাধান্য দিতে পারি না, যেগুলো মূসা আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছেছে। জগৎ-স্রষ্টা আসমান-যমীনের পালনকর্তাকে ছেড়ে আমরা তোমাকে পালনকর্তা স্বীকার করতে পারি না। (فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ) এখন তোমার যা খুশী, আমাদের সম্পর্কে ফয়সালা কর এবং যে সাজার ইচ্ছা দাও। (إِنَّمَا تَقْضِي هَٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا) অর্থাৎ তুমি আমাদেরকে শান্তি দিলেও তা এই ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবন পর্যন্তই হবে। মৃত্যুর পর আমাদের উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। আল্লাহর অবস্থা এর বিপরীত। আমরা মৃত্যুর পূর্বেও তাঁর অধিকারে আছি এবং মৃত্যুর পরও থাকব। কাজেই তাঁর শাস্তির চিন্তা অগ্রগণ্য। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭২) তারা বলল, ‘আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন[1] তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও তাই কর। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবন সম্বন্ধে যা করবার করতে পারো। [2]
[1] এই অনুবাদ ঐ সময় সঠিক হবে যখন وَالَّذِي فَطَرَنِي বাক্যের সংযোগ مَا جَاءنَا বাক্যের সাথে ধরা হবে। পক্ষান্তরে কিছু ব্যাখ্যাতা وَالَّذِي فَطَرَنِي বাক্যটিকে শপথ বাক্য বলেছেন। অর্থাৎ, সেই সত্তার শপথ যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন! আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসে গেছে, তার উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দেব না।
[2] অর্থাৎ, তোমার যা করার ক্ষমতা আছে, তাই কর। আমরা জানি, তোমার ক্ষমতা শুধু এই পার্থিব জীবনেই চলতে পারে। পক্ষান্তরে আমরা ঈমান এনেছি সেই পালনকর্তার উপর যাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দুনিয়া ও আখেরাতে সমানভাবে চলে। মৃত্যুর পর আমরা তোমার শাসন ও অত্যাচার থেকে তো বেঁচে যাব। কারণ দেহ হতে প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার পর আমাদের প্রতি তোমার এখতিয়ার শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে থাকি, তাহলে মৃত্যুর পরও আল্লাহর এখতিয়ারের বাইরে বের হওয়া সম্ভব নয়। তিনি আমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে সক্ষম। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর এক মু’মিনের জীবনে যে মহা পরিবর্তন আসা আবশ্যক, পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী ও আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের প্রতি যে দৃঢ়-বিশ্বাস হওয়া দরকার, অতঃপর এই আকীদা ও বিশ্বাসের উপর যে দুঃখ-কষ্ট আসে তা যে উদ্যম, ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সাথে বরণ করার প্রয়োজন, জাদুকররা তার একটি প্রকৃষ্ট নমুনা পেশ করেছে। ঈমান আনার পূর্বে কেমন তারা ফিরআউনের নিকট থেকে পুরস্কার ও পার্থিব পদ-মর্যাদার আকাঙ্ক্ষী ছিল, কিন্তু ঈমান আনার পরে কোন প্রলোভন ও প্ররোচনা তাদেরকে বিচলিত করতে পারেনি এবং দন্ড ও শাস্তির হুমকিও তাদেরকে ঈমান হতে বিমুখ করতে সফল হয়নি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৩. আমরা নিশ্চয় আমাদের রব-এর প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ তা।(১) আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী।
(১) জাদুকররা এখন ফিরআউনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করল যে, আমাদেরকে জাদু করতে তুমিই বাধ্য করেছ। নতুবা আমরা এই অর্থহীন কাজের কাছেও যেতাম না। এখন আমরা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর কাছে এই পাপ কাজেরও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ফিরআউন তার রাজ্যে জাদুশিক্ষা সবার জন্য অথবা কিছু লোকের জন্য বাধ্যতামূলক করে রেখেছিল। সম্ভবত: তারাই এখানে তার উপর দোষ দিচ্ছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৩) আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস করেছি; যাতে তিনি আমাদের পাপরাশি এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছিলে (তার পাপ) ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহই শ্রেষ্ঠতম ও অবিনশ্বর।’[1]
[1] এটি ফিরআউনের উক্তি, ‘তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে যে, আমাদের মধ্যে কার শক্তি কঠোরতর ও দীর্ঘস্থায়ী’-এর উত্তর। অর্থাৎ, হে ফিরআউন! তুমি আমাদেরকে যে কঠিন শাস্তি দেওয়ার ধমক দিচ্ছ, তার তুলনায় আল্লাহর নিকট যে প্রতিদান পাব, তা অত্যধিক শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৪. যে তার রব-এর কাছে অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্য তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।(১)
(১) অর্থাৎ জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। পুরোপুরি মৃত্যু হবে না। যার ফলে তার কষ্ট ও বিপদের সমাপ্তি সূচিত হবে না আবার জীবনকে মৃত্যুর উপর প্রাধান্য দেবার মতো জীবনের কোন আনন্দও লাভ করবে না। জীবনের প্রতি বিরূপ হবে কিন্তু মৃত্যু লাভ করবে না। মরতে চাইবে কিন্তু মরতে পারবে না। কুরআন মজীদে জাহান্নামের আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এ অবস্থাটি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভয়াবহ। এর কল্পনায়ও হৃদয় মন কেঁপে উঠে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আর যারা জাহান্নামের অধিবাসী হিসেবে জাহান্নামে যাবে তারা সেখানে মরবেও না বাঁচবেও না [মুসলিম: ১৮৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৪) নিশ্চয় যে তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্য আছে জাহান্নাম; সেখানে সে মরবেও না এবং বাঁচবেও না।[1]
[1] অর্থাৎ, আমার আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে তারা মরণ কামনা করবে, কিন্তু তাদের মরণ আসবে না। আর দিবারাত্রি আযাবের কষ্ট ভোগ করতে থাকা, পানাহারের জন্য যাক্কুমের মত অতি তিক্ত গাছ, জাহান্নামীদের দেহ হতে নির্গত রক্ত-পুঁজ পেতে থাকা, এটা কি কোন জীবন হল? হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৫. আর যারা তাঁর কাছে সৎকর্ম করে মুমিন অবস্থায় আসবে, তাদের জন্যই রয়েছে উচ্চতম মর্যাদা।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৫) আর যারা তাঁর নিকট বিশ্বাসী হয়ে ও সৎকর্ম করে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদাসমূহ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৬. স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটা তাদেরই পুরস্কার যারা পরিশুদ্ধ হয়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৬) স্থায়ী জান্নাত যার নিচে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র।[1]
[1] জাহান্নামীদের বিপরীত ঈমানদারদেরকে জান্নাতে যে সুখময় বিলাস-জীবন দেওয়া হবে মহান আল্লাহ এখানে তার উল্লেখ করেছেন এবং পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এর উপযুক্ত তারাই হবে যারা ঈমান আনার পর ঈমানের চাহিদাও পূরণ করে। অর্থাৎ, তারা সৎকর্ম করে ও নিজের আত্মাকে পাপাচার হতে পবিত্র রাখে। মুখে কিছু বাক্য পাঠ করার নাম ঈমান নয়, বরং বিশ্বাস, স্বীকার ও আমলের সমষ্টির নাম হল ঈমান।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৭. আর আমরা অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হন সুতরাং আপনি তাদের জন্য সাগরের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথের ব্যবস্থা করুন, পিছন থেকে এসে ধরে ফেলার আশংকা করবেন না এবং ভয়ও করবেন না।(১)
(১) এ সংক্ষিপ্ত কথাটির বিস্তারিত বিবরণ হচ্ছে এই যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ একটি রাত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। মূসা সবাইকে নিয়ে লোহিত সাগরের পথ ধরলেন। ফিরআউন একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে ঠিক এমন সময় পৌঁছে গেলো যখন এ কাফেলা সবেমাত্ৰ সাগরের তীরেই উপস্থিত হয়েছিল। মুহাজিরদের কাফেলা ফিরআউনের সেনা দল ও সমুদ্র দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল। [ইবন কাসীর] ঠিক এমনি সময় আল্লাহ মূসাকে হুকুম দিলেন “সমুদ্রের উপর আপনার লাঠি দ্বারা আঘাত করুন।” “তখনই সাগর ফেটে গেলো এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা একটি বড় পর্বত শৃংগের মতো দাঁড়িয়ে গেলো।” [সূরা আশ শু'আরাঃ ৬৩]
সহীহ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা মহররমের দশ তারিখ সাওম পালন করছে। তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা বললো, এ দিন মূসা ফিরআউনের উপর জয় লাভ করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা তাদের চেয়েও মূসার বেশী নিকটের সুতরাং তোমরাও সাওম পালন করো। [বুখারী: ৪৭৩৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৭) আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এই মর্মে যে, আমার দাসদের নিয়ে রাতারাতি বের হয়ে যাও[1] এবং ওদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথ নির্মাণ কর।[2] পশ্চাৎ হতে এসে তোমাকে ধরে ফেলবে, এ আশঙ্কা করো না এবং ভয়ও করো না।[3]
[1] যখন ফিরআউন ঈমান আনল না এবং বানী ইস্রাঈলদেরকে মুক্তও করল না, তখন মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে এই আদেশ করলেন।
[2] এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা শুআরাতে আসবে। মূসা (আঃ) আল্লাহর আদেশে সমুদ্রে লাঠি মারলেন যার কারণে সমুদ্র পার করার জন্য শুকনো রাস্তা তৈরী হয়ে গেল।
[3] আশঙ্কা ফিরআউন ও তার সৈন্যদলের, আর ভয় পানিতে ডুবে মরার।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৮. অতঃপর ফির’আউন তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ তাদের পিছনে ছুটল, তারপর সাগর তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল।(১)
(১) এখানে বলা হয়েছে, সমুদ্র তাকে ও তার সেনাদেরকে ডুবিয়ে মারলো। অন্যত্র বলা হয়েছে, মুহাজিরদের সাগর অতিক্রম করার পর পরই ফিরআউন তার সৈন্য সামন্ত সহ সমুদ্রের বুকে তৈরী হওয়া এ পথে নেমে পড়লো। [সূরা আশ-শু'আরাঃ ৬৩–৬৪] সূরা আল-বাকারায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল সমুদ্রের অন্য তীর থেকে ফিরআউন ও তার সেনাদলকে ডুবে যেতে দেখছিল। [সূরা আল-বাকারাহ্ঃ ৫০] অন্যদিকে সূরা ইউনুসে বলা হয়েছে, ডুবে যাবার সময় ফিরআউন চিৎকার করে উঠলোঃ “আমি মেনে নিয়েছি যে আর কোন ইলাহ নেই সেই ইলাই ছাড়া যাঁর প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমিও মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা ইউনুসঃ ৯০] কিন্তু এ শেষ মুহুর্তের ঈমান গৃহীত হয়নি এবং জবাব দেয়া হলোঃ “এখন! আর ইতিপূর্বে এমন অবস্থা ছিল যে, নাফরমানীতেই ডুবে ছিলে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করেই চলছিলো। বেশ, আজ আমি তোমার লাশটাকে রক্ষা করছি, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।” [সূরা ইউনুসঃ ৯১–৯২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৮) অতঃপর ফিরআউন তার সেনাবাহিনীসহ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলে সমুদ্র ওদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল।[1]
[1] যখন সেই শুকনো রাস্তা দিয়ে ফিরআউন তার সৈন্য সামন্তরা চলতে শুরু করল, তখন আল্লাহ সমুদ্রকে আদেশ করলেন, ‘তুমি আগের অবস্থায় ফিরে যাও।’ আর তা সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে শুকনো রাস্তা সমুদ্রের ঢেউয়ে পরিণত হল এবং ফিরআউন তথা তার সৈন্য-সামন্ত সবই সমুদ্রে ডুবে মরল। غَشِيَهم এর অর্থ عَلاهُم وأصَابَهُم অর্থাৎ, সমুদ্রের পানি তাদের উপরে এসে তাদেরকে ঢেকে নিল। مَا غَشِيَهم এর পুনরাবৃত্তি ভয়ঙ্করতা বর্ণনার জন্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭৯. আর ফিরআউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৯) ফিরআউন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল, সৎপথ দেখায়নি। [1]
[1] যার ফলে সমুদ্রে ডুবে মরা তাদের ভাগ্য ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* তারা তূর পাহাড়ের ডানপার্শ্বে উপস্থিত হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাওরাত কিতাব প্রদান করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন।
৮০. হে বনী ইসরাঈল! আমরা তো তোমাদেরকে শত্রু থেকে উদ্ধার করেছিলাম, আর আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তুর পর্বতের ডান পাশে(১) এবং তোমাদের উপর মান্না ও সালওয়া নাযিল করেছিলাম(২),
(১) অর্থাৎ ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া এবং সমুদ্র পার হওয়ার পর আল্লাহ তা'আলা মুসা আলাইহিস সালাম-কে এবং তার মধ্যস্থতায় বনী-ইসরাঈলকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তারা তুর পর্বতের ডান পার্শ্বে চলে আসুক, যাতে আল্লাহ তা'আলা মূসার সাথে কথা বলেন। এখানেই মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন এবং তাকে এখানেই তাওরাত দেয়া হয়। [ইবন কাসীর]
(২) এটা তখনকার ঘটনা, যখন বনী-ইসরাঈল সমুদ্র পার হওয়ার পর সামনে অগ্রসর হয় এবং তাদেরকে একটি পবিত্র শহরে প্রবেশ করার আদেশ দেয়া হয়। তারা আদেশ অমান্য করে। তখন সাজা হিসেবে তাদেরকে তীহ নামক উপত্যকায় আটক করা হয়। তারা চল্লিশ বছর পর্যন্ত এ উপত্যকা থেকে বাইরে যেতে সক্ষম হয়নি। এই শাস্তি সত্বেও মূসা আলাইহিস সালাম-এর দো'আয় নানা রকম নেয়ামত বৰ্ষিত হতে থাকে। ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া” ছিল এইসব নেয়ামতের অন্যতম, যা তাদের আহারের জন্যে দেয়া হত। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮০) হে বানী ইস্রাঈল! নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু হতে উদ্ধার করলাম, আমি তোমাদেরকে ত্বুর পাহাড়ের ডান পাশে (তাওরাত) দানের প্রতিশ্রুতি দিলাম[1] এবং তোমাদের নিকট ‘মান্ন্’ ও ‘সালওয়া’ প্রেরণ করলাম। [2]
[1] ووَاعَدنَاكُم ‘‘আমি তোমাদেরকে তূর পাহাড়ের ডান পাশে (তাওরাত) দানের প্রতিশ্রুতি দিলাম।’’ এখানে ‘তোমাদের’ সর্বনাম বহুবচন ব্যবহারের অর্থ হল যে, মূসা ত্বুর পাহাড়ে তোমাদেরকে প্রতিনিধিরূপে নিয়ে আসবে, যাতে আমি তোমাদের সামনেই তার সঙ্গে কথোপকথন করতে পারি। অথবা বহুবচন সর্বনাম এই কারণে ব্যবহার করা হয়েছে, যেহেতু মূসা (আঃ)-কে ত্বুর পাহাড়ে আহবান করা হয়েছিল বানী ইস্রাঈলদের স্বার্থেই তাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্যই।
[2] ‘মান্ন্ ও সালওয়া’ অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা সূরা বাক্বারাহ ৫৭নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ‘মান্ন্’ ছিল কোন মিষ্টি খাদ্য যা আকাশ হতে অবতীর্ণ হত। আর ‘সালওয়া’ হল এক জাতীয় পাখি যা অধিক সংখ্যায় তাদের কাছে আসত এবং তারা তাদের প্রয়োজন মত তা ধরত ও রান্না করে খেত। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান