بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৭/ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) | Al-Isra | سورة الإسراء আয়াতঃ ১১১ মাক্কী
১৭ : ৭১ یَوۡمَ نَدۡعُوۡا كُلَّ اُنَاسٍۭ بِاِمَامِهِمۡ ۚ فَمَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ فَاُولٰٓئِكَ یَقۡرَءُوۡنَ كِتٰبَهُمۡ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ فَتِیۡلًا ﴿۷۱﴾
یوم ندعوا كل اناس بامامهم فمن اوتی كتبهٗ بیمینهٖ فاولٓئك یقرءون كتبهم و لا یظلمون فتیلا ﴿۷۱﴾
• স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামসহ* ডাকব। অতঃপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তারা নিজদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণ অবিচার করা হবে না।

-আল-বায়ান

• স্মরণ কর, যেদিন আমি সকল সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ ডাকব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ‘আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তারা তাদের ‘আমালনামা পাঠ করবে (আনন্দচিত্তে) আর তাদের প্রতি এতটুকু যুলম করা হবে না।

-তাইসিরুল

• স্মরণ কর সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করব; যাদেরকে ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে তারা তাদের ‘আমলনামা পাঠ করবে (আনন্দের সাথে) এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলম করা হবে না।

-মুজিবুর রহমান

• [Mention, O Muhammad], the Day We will call forth every people with their record [of deeds]. Then whoever is given his record in his right hand - those will read their records, and injustice will not be done to them, [even] as much as a thread [inside the date seed].

-Sahih International

* ‘ইমাম’ অর্থ এখানে নেতা, আমলনামা, নবী বা প্রতিটি জাতির স্ব স্ব ঐশী কিতাব।

৭১. স্মরণ করুন সে দিনকে, যখন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমাম(১) সহ ডাকব। অতঃপর যাদের ডান হাতে তাদের আমলনামা দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পড়বে এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না।

(১) إمام শব্দের বিভিন্ন অর্থ করা হয়ে থাকে।

কেউ কেউ এখানে إمام দ্বারা গ্ৰন্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সে হিসেবে গ্ৰন্থকে ইমাম বলার কারণ এই যে, ভুলভ্রান্তি ও দ্বিমত দেখা দিলে গ্রন্থের আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন- কোন অনুসৃত ইমামের আশ্রয় নেয়া হয়। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ) “আর যাবতীয় বস্তুই আমি সুস্পষ্ট গ্রন্থে গুনে রেখেছি।” [সূরা ইয়াসীনঃ ১২] এখানেও (إِمَامٍ مُبِينٍ) বলে সুস্পষ্ট গ্রন্থ বুঝানো হয়েছে। তাই এ আয়াতেও তাদের বিচারের জন্য তাদের আমলনামার গ্রন্থ হাযির করার কথা বলাই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] এ অর্থের সমর্থনে কুরআনের আরো কিছু আয়াত প্রমাণ বহন করছে। [যেমনঃ সূরা কাহাফঃ ৪৯, আল-জাসিয়াঃ ২৮, ২৯, আয-যুমারঃ ৬৯, আন-নিসাঃ ৪১]

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুজাহিদ থেকে এখানে ইমাম শব্দের অর্থ নেতাও বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার নাম দ্বারা ডাকা হবে এবং সবাইকে এক জায়গায় জমায়েত করা হবে। উদাহরণতঃ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী দল এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী দল। এ প্রসঙ্গে এসব অনুসারীর প্রত্যেক নেতাদের নাম নেয়াও সম্ভবপর। [ফাতহুল কাদীর]

এ অর্থের সপক্ষে আরো প্রমাণ হলো, আল্লাহর বাণীঃ “প্রত্যেক জাতির জন্য আছে। একজন রাসূল এবং যখন ওদের রাসূল আসবে তখন ন্যায়বিচারের সাথে ওদের মীমাংসা করে দেয়া হবে এবং ওদের প্রতি যুলুম করা হবে না।” [সূরা ইউনুসঃ ৪৭] তাছাড়া একই অর্থে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আরো আয়াত এসেছে। [যেমন সূরা আন-নিসাঃ ৪১, আন-নাহলঃ ৮৪, ৮৯, আল-হাজ্বঃ ৭৮, আল-কাসাসঃ ৭৫, আয-যুমারঃ ৬৯]

কোন কোন সালফে সালেহীন বলেন, এ আয়াত দ্বারা হাদীসের প্রকৃত অনুসারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রমাণিত হয়। কারণ তাদের নেতা হলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

তবে আয়াতের পরবর্তী অংশ অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, এখানে إمام  বলতে গ্ৰন্থই বুঝানো হয়েছে। ইবন কাসীর এ মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, “যাদের ডান হাতে তাদের ‘আমলনামা দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পড়বে এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে। না”। অনুরূপভাবে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তখন যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, ‘লও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ; আমি জানতাম যে, আমাকে আমার হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে। [সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৯–২০]।

আর কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি দেয়াই না হত আমার আমলনামা, এবং আমি যদি না জানতাম আমার হিসেব!” [সূরা আল-হাক্কাহঃ ২৫–২৬] যদিও মূলতঃ উভয় তাফসীরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, তাদের আমলনামার উপর সাক্ষীস্বরূপ প্রত্যেক উম্মতের নবীদেরকে হাজির করা হবে। তারা সেগুলোর সত্যায়ন করবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭১) (স্মরণ কর,) যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা সহ[1] আহবান করব। যাদেরকে ডান হাতে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না। [2]

[1] إِمَامٌ এর অর্থ, পথপ্রদর্শক, নেতা ও পরিচালক। এখানে ইমাম বলতে কি বুঝানো হয়েছে? এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, এ থেকে পয়গম্বর বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, প্রত্যেক উম্মতকে তাদের নবীর মাধ্যমে ডাকা হবে। কেউ বলেন, এ থেকে আসমানী কিতাব বুঝানো হয়েছে যা নবীদের সাথে অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ, হে তাওরাতধারী! হে ইঞ্জীলধারী! হে কুরআনধারী! ইত্যাদি বলে ডাকা হবে। কেউ বলেন, এখানে ‘ইমাম’ অর্থ, আমলনামা। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তিকে যখন ডাকা হবে, তখন তার আমলনামা তার সাথে থাকবে এবং সেই অনুযায়ী তার ফায়সালা হবে। এই উক্তিকে ইমাম ইবনে কাসীর এবং ইমাম শাওকানী প্রাধান্য দিয়েছেন।

[2] فَتِيْلٌ খেজুরের আঁটির ফাটলে অতি সূক্ষ্ণ ও পাতলা যে সুতো থাকে তাকেই ‘ফাতীল’ বলা হয়। উদ্দেশ্য, অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭২ وَ مَنۡ كَانَ فِیۡ هٰذِهٖۤ اَعۡمٰی فَهُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ اَعۡمٰی وَ اَضَلُّ سَبِیۡلًا ﴿۷۲﴾
و من كان فی هذهٖ اعمی فهو فی الاخرۃ اعمی و اضل سبیلا ﴿۷۲﴾
• আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।

-আল-বায়ান

• যে ব্যক্তি এখানে (সত্য পথ দেখার ব্যাপারে) অন্ধ, সে আখেরাতেও হবে অন্ধ, আর সঠিক পথ থেকে অধিক বিচ্যুত।

-তাইসিরুল

• যে ইহলোকে অন্ধ পরলোকেও সে অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।

-মুজিবুর রহমান

• And whoever is blind in this [life] will be blind in the Hereafter and more astray in way.

-Sahih International

৭২. আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ(১) সে আখিরাতেও অন্ধ(২) এবং সবচেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট।

১. এখানে অন্ধ বলে বাহ্যিক অন্ধদের বুঝানো হয়নি। বরং যাদের মন হক্ক বুঝার ক্ষেত্রে, আল্লাহর নিদর্শনাবলী দেখার ক্ষেত্রে অন্ধত্ব গ্রহণ করেছে। হক্ক মানতে চায়না এবং নিদর্শনাবলী দেখতে চায়না এমন প্রকৃত অন্ধদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তারা কি দেশ ভ্ৰমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়।” [সূরা আল-হাজ্বঃ ৪৬]

পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবনে যারা অন্ধ তারা যদি ঈমানদার হয় এবং সৎকাজ করে ও ধৈর্যধারণ করে তবে তাদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রশংসা বাণী এসেছে। কুরআনে বলা হয়েছে, “তিনি ভ্ৰকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি আসল। আপনি কেমন করে জানবেন–সো হয়ত পরিশুদ্ধ হত, অথবা উপদেশ গ্ৰহণ করত, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। [সূরা আবাসাঃ ১–৩] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসেও ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ জানানো হয়েছে যারা অন্ধ হয়ে যাবার পর ধৈর্যধারণ করেছে।

২. এখানে বলা হয়েছে যে, তারা আখেরাতে অন্ধ হবে। আখেরাতে তাদের অন্ধত্বের ধরণ সম্পর্কে দু'টি মত রয়েছে। এক, তারা বাস্তবিকই শারীরিকভাবে অন্ধ হিসেবে হাশরের মাঠে উঠবে। এ অর্থের সমর্থনে কুরআনের অন্যত্র এসেছে, “যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।” [ত্ব-হাঃ ১২৪]

আরো এসেছে, “কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মূক ও বধির করে। [সূরা আল-ইসরাঃ ৯৭] দুই, এ ছাড়া আয়াতের আরেক অর্থ করা হয়ে থাকে যে, তারা কিয়ামতের দিন তাদের দুনিয়ার জীবনে যে সমস্ত দলীলপ্রমাণাদি ব্যবহার করে হক্ক পথ থেকে দূরে থাকে, সে সব থেকে তাদেরকে অন্ধ করে উঠানো হবে। মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ এ অর্থ গ্রহণ করেছেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭২) যে লোক ইহলোকে অন্ধ, সে লোক পরলোকেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। [1]

[1] أَعْمَى (অন্ধ) বলতে অন্তরের অন্ধ। অর্থাৎ, যে দুনিয়াতে সত্য দেখা হতে, বুঝা হতে এবং কবুল করা হতে বঞ্চিত থাকে, সে আখেরাতে অন্ধ হবে এবং প্রতিপালকের বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৩ وَ اِنۡ كَادُوۡا لَیَفۡتِنُوۡنَكَ عَنِ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡكَ لِتَفۡتَرِیَ عَلَیۡنَا غَیۡرَهٗ ٭ۖ وَ اِذًا لَّاتَّخَذُوۡكَ خَلِیۡلًا ﴿۷۳﴾
و ان كادوا لیفتنونك عن الذی اوحینا الیك لتفتری علینا غیرهٗ ٭ و اذا لاتخذوك خلیلا ﴿۷۳﴾
• আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, আমি তোমাকে যে ওহী দিয়েছি, তা থেকে তারা তোমাকে প্রায় ফিতনায় ফেলে দিয়েছিল, যাতে তুমি আমার নামে এর বিপরীত মিথ্যা রটাতে পার এবং তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।

-আল-বায়ান

• আমি তোমার প্রতি যে ওয়াহী করেছি তাত্থেকে তোমাকে পদস্খলিত করার জন্য তারা চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার (অর্থাৎ নাযিলকৃত ওয়াহীর) বিপরীতে মিথ্যা রচনা কর, তাহলে তারা তোমাকে অবশ্যই বন্ধু বানিয়ে নিত।

-তাইসিরুল

• আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে তোমার পদস্খলন ঘটানোর জন্য তারা চূড়ান্ত চেষ্টা করেছে যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে কিছু মিথ্যা উদ্ভাবন কর। সফলকাম হলে তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করত।

-মুজিবুর রহমান

• And indeed, they were about to tempt you away from that which We revealed to you in order to [make] you invent about Us something else; and then they would have taken you as a friend.

-Sahih International

৭৩. আর আমরা আপনার প্রতি যা ওহী করেছি তা থেকে ওরা আপনাকে পদস্খলন ঘটাবার চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল, যাতে আপনি আমাদের উপর সেটার বিপরীত মিথ্যা রটাতে পারেন(১); আর নিঃসন্দেহে তখন তারা আপনাকে বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করত।

১. কাফেররা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে সমস্ত প্রস্তাব দিত। তন্মধ্যে এক বিশেষ প্রস্তাব ছিল যে, আপনি এ কুরআন বাদ দিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু নিয়ে আসুন যা আমাদের মনঃপুত হবে। কিন্তু একজন নবীর পক্ষে কিভাবে ওহী ব্যতিত অন্য কিছু আনা সম্ভব হতে পারে? তিনি যদি তা করেন তবে হয়ত তারা তাকে বন্ধু বানাবে কিন্তু আল্লাহ কি তাকে এভাবেই ছেড়ে দিবেন? অবশ্যই না। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, “তিনি যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতেন, আমি অবশ্যই ডান হাতে ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার জীবন-ধমনী।” [সূরা আলহাক্কাহঃ ৪৪–৪৬]

সুতরাং, নবীর পক্ষে ওহী ব্যতীত কিছু বলা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন, “যখন আমার আয়াত, যা সুস্পষ্ট, তাদের কাছে পাঠ করা হয় তখন যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, “অন্য এক কুরআন আন এটা ছাড়া, বা এটাকে বদলাও৷” বলুন, “নিজ থেকে এটা বদলান আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী হয়, আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। আমি আমার রবের অবাধ্যতা করলে অবশ্যই মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।” [সূরা ইউনুসঃ ১৫] তাই একজন সত্য নবীর পক্ষে কক্ষনো নিজ থেকে বানিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৩) আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি, তা হতে তারা তোমার পদস্খলন প্রায় ঘটিয়েই ফেলেছিল, যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে ওর বিপরীত কিছু মিথ্যা উদ্ভাবন কর; আর তা করলে, তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৪ وَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ ثَبَّتۡنٰكَ لَقَدۡ كِدۡتَّ تَرۡكَنُ اِلَیۡهِمۡ شَیۡئًا قَلِیۡلًا ﴿٭ۙ۷۴﴾
و لو لا ان ثبتنك لقد كدت تركن الیهم شیئا قلیلا ﴿٭۷۴﴾
• আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে,

-আল-বায়ান

• আমি তোমাকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকেই পড়তে।

-তাইসিরুল

• আমি তোমাকে অবিচলিত না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকেই পড়তে।

-মুজিবুর রহমান

• And if We had not strengthened you, you would have almost inclined to them a little.

-Sahih International

৭৪. আর আমরা আপনাকে অবিচলিত না রাখলে আপনি অবশ্যই তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তেন;(১)

১. অর্থাৎ যদি অসম্ভবকে ধরে নেয়ার পর্যায়ে আপনি তাদের ভ্রান্ত কার্যক্রমের দিকে ঝুকে পড়ার কাছাকাছি হয়ে যেতেন, তবে আপনার শাস্তি দুনিয়াতেও দ্বিগুণ হত এবং মৃত্যুর পর কবর অথবা আখেরাতেও দ্বিগুণ হত। কেননা, নৈকট্যশীলদের মামুলী ভ্ৰান্তিকেও বিরাট মনে করা হয়। এ বিষয়বস্তুর প্রায় অনুরূপ, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পত্নীদের সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে “হে নবী পত্নীরা, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে নির্লজ্জ কাজ করে, তবে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে।” [সূরা আল-আহযাবঃ ৩০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৪) আমি তোমাকে অবিচলিত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছুটা প্রায় ঝুঁকে পড়তে। [1]

[1] এখানে সেই সুরক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে, যা আল্লাহর পক্ষ হতে নবীগণ লাভ করে থাকেন। এ থেকে জানা গেল যে, মুশরিকরা যদিও নবী (সাঃ)-কে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁকে তাদের আকর্ষণ থেকে বাঁচিয়ে নেন। ফলে তিনি সামান্য পরিমাণও তাদের প্রতি ঝুঁকে যাননি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৫ اِذًا لَّاَذَقۡنٰكَ ضِعۡفَ الۡحَیٰوۃِ وَ ضِعۡفَ الۡمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَیۡنَا نَصِیۡرًا ﴿۷۵﴾
اذا لاذقنك ضعف الحیوۃ و ضعف الممات ثم لا تجد لك علینا نصیرا ﴿۷۵﴾
• তখন আমি অবশ্যই তোমাকে আস্বাদন করাতাম জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব।* তারপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না।

-আল-বায়ান

• তুমি তা করলে আমি তোমাকে এ দুনিয়ায় দ্বিগুণ আর পরকালেও দ্বিগুণ ‘আযাবের স্বাদ আস্বাদন করাতাম। সে অবস্থায় তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পেতে না।

-তাইসিরুল

• তুমি ঝুঁকে পড়লে অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম; তখন আমার বিরুদ্ধে তোমার জন্য কোন সাহায্যকারী পেতেনা।

-মুজিবুর রহমান

• Then [if you had], We would have made you taste double [punishment in] life and double [after] death. Then you would not find for yourself against Us a helper.

-Sahih International

* এখানে জীবনের দিগুণ ও মরণের দিগুণ আযাব দ্বারা দুনিয়াবী জীবন ও আখিরাতের জীবনের দিগুণ আযাব উদ্দেশ্য।

৭৫. তাহলে অবশ্যই আমরা আপনাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ ও পরজীবনে দ্বিগুণ শান্তি আস্বাদন করাতাম; তখন আমাদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য কোন সাহায্যকারী পেতেন না।(১)

১. এ সমগ্র কার্যবিবরণীর উপর মন্তব্য প্রসংগে আল্লাহ দুটি কথা বলেছেন। এক, যদি আপনি সত্যকে জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতেন তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার উপর নেমে পড়ত এবং আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো। দুই, মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ-সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না। শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের উপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি। তিনিই রাসূলুল্লাহ হেফাযত করেছেন, অপরাধী ও দুষ্ট লোকদের ক্ষতি থেকে নিরাপদ করেছেন। আর তিনিই তার যাবতীয় কাজের দায়িত্ব নিচ্ছেন। তিনিই তাকে জয়ী করবেন। তিনি তাকে কারও কাছে তার কোন বান্দার কাছে সোপর্দ করবেন না। তার দ্বীনকে তিনি তার বিরোধী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শক্তির পরাজিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করবেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৫) তাহলে আমি অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম,[1] আর তখন আমার বিরুদ্ধে তোমার জন্য কোন সাহায্যকারী পেতে না।

[1] এ থেকে জানা গেল যে, শাস্তির ভারও মান-মর্যাদা অনুযায়ী অধিক হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৬ وَ اِنۡ كَادُوۡا لَیَسۡتَفِزُّوۡنَكَ مِنَ الۡاَرۡضِ لِیُخۡرِجُوۡكَ مِنۡهَا وَ اِذًا لَّا یَلۡبَثُوۡنَ خِلٰفَكَ اِلَّا قَلِیۡلًا ﴿۷۶﴾
و ان كادوا لیستفزونك من الارض لیخرجوك منها و اذا لا یلبثون خلفك الا قلیلا ﴿۷۶﴾
• আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা তোমাকে যমীন থেকে উৎখাত করে দেবে, যাতে তোমাকে সেখান থেকে বের করে দিতে পারে এবং তখন তারা তোমার পরে স্বল্প সময়ই টিকে থাকতে পারত।

-আল-বায়ান

• তারা তোমাকে যমীন থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল যাতে তারা তোমাকে তাত্থেকে বের করে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে তারা এখানে তোমার পরে খুব অল্পকালই টিকে থাকত।

-তাইসিরুল

• তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল তোমাকে সেখান হতে বহিস্কার করার জন্য। তাহলে তোমার পর তারাও সেখানে অল্পকালই টিকে থাকত।

-মুজিবুর রহমান

• And indeed, they were about to drive you from the land to evict you therefrom. And then [when they do], they will not remain [there] after you, except for a little.

-Sahih International

৭৬. আর তারা আপনাকে দেশ থেকে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল, আপনাকে সেখান থেকে বহিস্কার করার জন্য; তাহলে আপনার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকত।(১)

১. এটি একটি সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী। সে সময় এটি তো নিছক একটি হুমকি মনে হচ্ছিল। কিন্তু দশ বারো বছরের মধ্যেই এর সত্যতা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ হয়ে গেলো। এ সূরা নাযিলের দেড় বছর পর মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের জন্মভূমি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করলো। তারপর বদরের যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের চরম বিপর্যয় ঘটলো, তাদের নেতারা মারা গেল। [ইবন কাসীর] তারপর ৮ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হতে না হতেই তিনি বিজয়ীর বেশে মক্কা মুয়াযযামায় প্রবেশ করলেন। তারপর দু’বছরের মধ্যেই সমগ্র আরব ভূখণ্ড মুশরিক শূন্য করা হলো। এরপর যারাই এ দেশে বসবাস করেছে মুসলিম হিসেবেই বসবাস করেছে, মুশরিক হিসেবে কেউ সেখানে টিকতে পারেনি।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৬) তারা তোমাকে স্বদেশ থেকে প্রায় উচ্ছেদ করেই ফেলেছিল সেথা হতে বহিস্কার করার জন্য; [1] তা করলে তোমার পর তারাও সেথায় অল্পকালই টিঁকে থাকত। [2]

[1] এতে সেই ষড়্যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা নবী (সাঃ)-কে মক্কা থেকে বহিষ্কার করার জন্য মক্কার কুরাইশরা করেছিল এবং যা থেকে মহান আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলেন।

[2] অর্থাৎ, নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি এরা তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দিত, তবে এরাও তার পরে বেশী দিন (মক্কায়) থাকত না। অর্থাৎ, তারা সত্ত্বর আল্লাহর আযাবের হাতে ধরা খেত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৭ سُنَّۃَ مَنۡ قَدۡ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَكَ مِنۡ رُّسُلِنَا وَ لَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحۡوِیۡلًا ﴿۷۷﴾
سنۃ من قد ارسلنا قبلك من رسلنا و لا تجد لسنتنا تحویلا ﴿۷۷﴾
• তাদের নিয়ম অনুসারে যাদেরকে আমি আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে পাঠিয়েছিলাম এবং তুমি আমার নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না।

-আল-বায়ান

• তোমার পূর্বে আমি আমার যে সব রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রে এটাই ছিল নিয়ম আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না।

-তাইসিরুল

• আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• [That is Our] established way for those We had sent before you of Our messengers; and you will not find in Our way any alteration.

-Sahih International

৭৭. আমাদের রাসূলদের মধ্যে আপনার আগে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং আপনি আমাদের নিয়মের কোন পরিবর্ত পাবেন না।(১)

১. সকল নবীর ব্যাপারে। আল্লাহ এ একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ যে জাতি তাদেরকে হত্যা ও দেশান্তরী করেছে, তারপর সে আর বেশীদিন স্বস্থানে অবস্থান করতে পারেনি। এরপর হয় আল্লাহর আযাব তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদি আল্লাহর রাসূল তাদের জন্য রহমতস্বরূপ না আসতেন তবে তাদের উপর এমন আযাব আসত যার মোকাবিলা করা তাদের কারও পক্ষে সম্ভব হতো না। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৭) আমার রসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম, তাদের ক্ষেত্রেও ছিল অনুরূপ নিয়ম। [1] আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না। [2]

[1] অর্থাৎ, এই নিয়ম পূর্ব থেকেই চলে আসছে। তোমার পূর্ববর্তী রসূলদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মই প্রয়োগ করা হয়েছে। যখন তাঁদের সম্প্রদায়রা তাঁদেরকে তাঁদের দেশ থেকে বের করে দিল অথবা বের হতে বাধ্য করল, তখন সেই জাতিরাও আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পায়নি।

[2] সুতরাং মক্কাবাসীদের সাথেও এটাই হয়েছে। রসূল (সাঃ)-এর হিজরতের দেড় বছর পরেই বদর প্রান্তে তারা শিক্ষামূলক লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের শিকার হয় এবং ছয় বছর পর হিজরী ৮ম সনে মক্কাই বিজয় হয়ে যায়। আর এই লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের পর তাদের আর মাথা তোলার মত কোন ক্ষমতা থাকল না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৮ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِدُلُوۡكِ الشَّمۡسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیۡلِ وَ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ ؕ اِنَّ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُوۡدًا ﴿۷۸﴾
اقم الصلوۃ لدلوك الشمس الی غسق الیل و قران الفجر ان قران الفجر كان مشهودا ﴿۷۸﴾
• সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন*। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়।**

-আল-বায়ান

• সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার সময় হতে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার পর্যন্ত নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর ফাজরের সলাতে কুরআন পাঠ (করার নীতি অবলম্বন কর), নিশ্চয়ই ফাজরের সলাতের কুরআন পাঠ (ফেরেশতাগণের) সরাসরি সাক্ষ্য হয়।

-তাইসিরুল

• সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফাজরের কুরআন পাঠও। কারণ ভোরের কুরআন পাঠ সাক্ষী স্বরূপ।

-মুজিবুর রহমান

• Establish prayer at the decline of the sun [from its meridian] until the darkness of the night and [also] the Qur'an of dawn. Indeed, the recitation of dawn is ever witnessed.

-Sahih International

*‘ফজরের কুরআন’ দ্বারা উদ্দেশ্য ফজরের সালাত।

৭৮. সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন(১) এবং ফজরের সালাত।(২) নিশ্চয় ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।(৩)

১. আলোচ্য আয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সময় মত সালাত কায়েম করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। [ইবন কাসীর] পূর্বের আয়াতসমূহে আল্লাহ সংক্রান্ত আকীদা, আখেরাতের জন্য পুনরুত্থান ও প্রতিফল বিষয়াদি বর্ণিত হয়েছে। এখানে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর] পর্বত সমান সমস্যা ও সংকটের আলোচনা করার পর পরই সালাত কায়েম করার হুকুম দেয়ার মাধ্যমে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ মর্মে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করেছেন যে, এ অবস্থায় একজন মুমিনের জন্য যে অবিচলতার প্রয়োজন হয় তা সালাত কায়েমের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে। শত্রুদের দুরভিসন্ধি ও উৎপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার উত্তম প্রতিকার হচ্ছে সালাত কায়েম করা।

সূরা হিজারের আয়াতে আরও স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেঃ “আমি জানি যে, কাফেরদের পীড়াদায়ক কথাবার্তা শুনে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়। অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসা দ্বারা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।” [৯৭–৯৮]

এ আয়াতে আল্লাহর যিকির, প্রশংসা, তসবীহ ও সালাতে মশগুল হয়ে যাওয়াকে শক্ৰদের উৎপীড়নের প্রতিকার সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহর যিকর ও সালাত বিশেষভাবে এ থেকে আত্মরক্ষার প্রতিকার। এ ব্যাখ্যাও অবাস্তব নয় যে, শক্ৰদের উৎপীড়ন থেকে আত্মরক্ষা করা আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভরশীল এবং আল্লাহর সাহায্য লাভ করার উত্তম পন্থা হচ্ছে সালাত। যেমন কুরআন পাক বলেঃ “সবর ও সালাত দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা কর।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ৪৫]

২. আয়াতে قُرْآنَ শব্দ এসেছে, যার অর্থঃ পড়া। আরও এসেছে فجر শব্দ, ‘ফজর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ভোর হওয়া বা প্ৰভাতের উদয় হওয়া। অর্থাৎ একেবারে সেই প্রথম লগ্নটি যখন প্ৰভাতের শুভ্ৰতা রাতের আঁধার চিরে উঁকি দিতে থাকে। তাই এ শব্দদ্বয়ের অর্থ দাঁড়ায়, ফজরের কুরআন পাঠ। কুরআন মজীদে সালাতের প্রতিশব্দ হিসেবে সালাতের বিভিন্ন অংশের মধ্য থেকে কোন একটির নাম নিয়ে সমগ্ৰ সালাতটি ধরা হয়েছে। যেমন তাসবীহ, যিকির, হামদ (প্ৰশংসা), কিয়াম (দাঁড়ানো) রুকু, সিজদাহ ইত্যাদি। এখানে قرآن শব্দ বলে সালাত বোঝানো হয়েছে। কেননা, কুরআন পাঠ নামায্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কাজেই আয়াতের দ্বারা ফজরের সালাতকেই বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে এ আয়াতটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ। কেননা, دولك শব্দের অর্থ আসলে ঝুঁকে পড়া। সূর্যের ঝুঁকে পড়া তখন শুরু হয়, যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে, সূর্যস্তকেও دولك বলা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এস্থলে শব্দের অর্থ সূর্যের ঢলে পড়াই নিয়েছেন। আর غسق শব্দের অর্থ রাত্রির অন্ধকার সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া। এভাবে (لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ) এর মধ্যে চারটি সালাত এসে গেছেঃ যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। এর পরবর্তী বৰ্ণনা (وَقُرْآنَ الْفَجْرِ) দ্বারা ফজরের সালাতকে বুঝানো হয়েছে।

এ আয়াতে সংক্ষেপে মিরাজের সময় যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছিল তার সময়গুলো কিভাবে সংগঠিত ও বিন্যস্ত করা হবে তা বলা হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে, একটি সালাত পড়ে নিতে হবে সূর্যোদয়ের আগে। আর বাকি চারটি সালাত সুর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে। তারপর এ হুকুমটি ব্যাখ্যা করার জন্য জিবরীল আলাইহিস সালামকে পাঠানো হয়েছে। তিনি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযগুলোর সঠিক সময়ের শিক্ষা দান করেছেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “জিবরীল দু’বার আমাকে বায়তুল্লাহর কাছাকাছি জায়গায় সালাত পড়ান।

প্রথম দিন যোহরের সালাত ঠিক এমন সময় পড়ান যখন সূর্য সবেমাত্র হেলে পড়েছিল এবং ছায়া জুতার একটি ফিতার চাইতে বেশী লম্বা হয়নি। তারপর আসরের সালাত পড়ান এমন এক সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমপরিমাণ ছিল। এরপর মাগরিবের সালাত এমন সময় পড়ান যখন রোযাদার রোযার ইফতার করে। তারপর পশ্চিমাকাশের লালিমা খতম হবার পরপরই এশার সালাত পড়ান। আর ফজরের সালাত পড়ান ঠিক যখন রোযাদারের উপর খাওয়া দাওয়া হারাম হয়ে যায় তেমনি সময়। দ্বিতীয় দিন তিনি আমাকে যোহরের সালাত এমন সময় পড়ান যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈঘ্যের সমান ছিল।

আসরের সালাত পড়ান এমন সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের দ্বিগুণ ছিল। মাগরিবের সালাত পড়ান এমন সময় যখন সাওমপালনকারী সাওমের ইফতার করে। এশার সালাত পড়ান এমন সময় যখন রাতের তিনভাগের একভাগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং ফজরের সালাত পড়ান আলো চারদিকে ভালভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর। তারপর জিবরীল আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, যে মুহাম্মাদ ! এই হচ্ছে নবীদের সালাত আদায়ের সময় এবং এ দু'টি সময়ের মাঝখানেই হচ্ছে সালাতের সঠিক সময়।” [তিরমিযীঃ ১৫৯, আবু দাউদঃ ৩৯৩]

কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায়ও পাঁচ সালাতের এ ওয়াক্তসমূহের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। যেমন সূরা হুদে বলা হয়েছেঃ “সালাত কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিব) এবং কিছু রাত পার হয়ে গেলে (অর্থাৎ এশা)। [সূরা হূদঃ ১১৪] সূরা ‘ত্বা-হা’য়ে বলা হয়েছেঃ “আর নিজের রবের হামদ (প্রশংসা) সহকারে তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা) করতে থাকো সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসর) এবং রাতের সময় আবার তাসবীহ করো (এশা) আর দিনের প্রান্তসমূহে (অর্থাৎ সকাল, যোহর ও মাগরিব)” [সূরা ত্বা-হাঃ ১৩০] তারপর সূরা রূমে বলা হয়েছেঃ “কাজেই আল্লাহর তাসবীহ করো যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় (মাগরিব) এবং যখন সকাল হয় (ফজর)। তাঁরই জন্য প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং তাঁর তাসবীহ করো দিনের শেষ অংশে (আসর) এবং যখন তোমাদের দুপুর (যোহর) হয়।” [সূরা আর-রূমঃ ১৭–১৮]

তবে যদিও আলোচ্য আয়াতসমূহে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নির্দেশই সংক্ষেপে বৰ্ণিত হয়েছে কিন্তু এর পূর্ণ তাফসীর ও ব্যাখ্যা কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজের মাধ্যমেই সাব্যস্ত হয়েছে। [ইবন কাসীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাখ্যা গ্ৰহণ না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি সালাত আদায়ই করতে পারে না। জানি না, যারা কুরআনকে হাদীস ও রাসূলের বর্ণনা ছাড়াই বোঝার দাবী করে, তারা সালাত কিভাবে পড়ে? এমনিভাবে এ আয়াতে সালাতে কুরআন পাঠের কথাও সংক্ষেপে উল্লেখিত হয়েছে। এর বিবরণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ দ্বারা প্ৰমাণিত হয়েছে।

৩. مشهود শব্দটি شهد ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ উপস্থিত হওয়া। হাদীসসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী এ সময় দিবা-রাত্রির উভয় দল ফেরেশতা সালাতে উপস্থিত হয়। তাই একে مشهود বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “রাতের ফেরেশতা এবং দিনের ফেরেশতাগণ এ সময় উপস্থিত হয়।” [তিরমিযীঃ ৩১৩৫] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামাতের সালাতের ফযীলত একাকী সালাতের চেয়ে পচিশ গুণ বেশী। রাতের ফেরেশতা এবং দিনের ফেরেশতাগণ ফজরের সালাতে একত্রিত হন।” [বুখারীঃ ৬৪৮, মুসলিমঃ ৬৪৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৮) সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার[1] পর্যন্ত নামায কায়েম কর এবং (কায়েম কর) ফজরের কুরআন (নামায); নিশ্চয় ফজরের কুরআন (নামায) পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে। [2]

[1] دُلُوْكٌ এর অর্থ, ঢলা (সূর্যঢলা) এবং غسق এর অর্থ, অন্ধকার। সূর্য ঢলার পর যোহর ও আসরের নামায এবং রাতের অন্ধকার পর্যন্ত বলতে মাগরেব ও এশার নামায উদ্দেশ্য। আর قرآن الفجر বলতে ফজরের নামায। এখানে কুরআন অর্থ নামায। ফজরের নামাযকে কুরআন বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, ফজরে কিরাআত পাঠ লম্বা হয়। এইভাবে এই আয়াতে পাঁচঅক্ত নামাযের কথা মোটামুটিভাবে এসে যায়। আর এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা হাদীসসমূহে পাওয়া যায় এবং তা বহুধাসূত্রে বর্ণিত উম্মতের পরম্পরাগত আমল দ্বারাও সাব্যস্ত।

[2] অর্থাৎ, এই সময় ফিরিশতাগণ উপস্থিত হন; বরং (এ সময়) দিনের ও রাতের ফিরিশতাগণ একত্রে মিলিত হন। যেমন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী, সূরা বনী ইস্রাইলের তাফসীর) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাতের ফিরিশতাগণ যখন আল্লাহর নিকট যান, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন -- অথচ তিনি ভালভাবে তা জানেন -- ‘‘তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ?’’ ফিরিশতাগণ বলেন, ‘যখন আমরা তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাযে রত ছিল এবং যখন আমরা তাদের কাছ থেকে ফিরে এলাম, তখনও তারা নামাযে রত ছিল।’

(বুখারী, কিতাবুল মাওয়াকীত, মুসলিম, পরিচ্ছেদঃ আসর ও ফজরের নামাযের ফযীলত---)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৭৯ وَ مِنَ الَّیۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهٖ نَافِلَۃً لَّكَ ٭ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحۡمُوۡدًا ﴿۷۹﴾
و من الیل فتهجد بهٖ نافلۃ لك ٭ عسی ان یبعثك ربك مقاما محمودا ﴿۷۹﴾
• আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

-আল-বায়ান

• আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়, ওটা তোমার জন্য নফল, শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করবেন।

-তাইসিরুল

• আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে; এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য; আশা করা যায় তোমার রাব্ব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।

-মুজিবুর রহমান

• And from [part of] the night, pray with it as additional [worship] for you; it is expected that your Lord will resurrect you to a praised station.

-Sahih International

৭৯. আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ(১) আদায় করুন, এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত।(২) আশা করা যায় আপনার রব আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। প্ৰশংসিত স্থানে।(৩)

১. تهجد শব্দটি নিদ্ৰা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পর বিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই যে, রাত্রির কিছু অংশে কুরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। কেননা به এর সর্বনাম দ্বারা কুরআন বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] আর কুরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ সালাত পড়া। এ কারণেই শরীআতের পরিভাষায় রাত্রিকালীন সালাতকে “তাহাজ্জুদ” বলা হয়। সাধারণতঃ এর অর্থ, এরূপ নেয়া হয় যে কিছুক্ষণ নিদ্ৰা যাওয়ার পর যে সালাত পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের সালাত। হাসান বসরী বলেনঃ এশার পরে পড়া হয় এমন প্রত্যেক সালাতকে তাহাজ্জুদ বলা যায়। [ইবন কাসীর]

তবে প্রচলিত পদ্ধতির কারণে কিছুক্ষণ নিদ্ৰা যাওয়ার পর পড়ার অর্থেই অনেকে তাহাজ্জুদ বুঝে থাকেন। সাধারণতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম শেষ রাত্রে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের সালাত পড়তেন। তাই এভাবে পড়াই উত্তম হবে। তাহাজ্জুদের সালাতের ব্যাপারে বহু হাদীসে অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রমযানের সাওমের পর সবচেয়ে উত্তম হলো আল্লাহর মাস মুহররামের সাওম আর ফরয সালাতের পর সবচেয়ে উত্তম সালাত হলো, রাতের সালাত।” [মুসলিমঃ ১১৬৩]

২. نافلة শব্দের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত। এ কারণেই যেসব সালাত, দান-সদকা ওয়াজিব ও জরুরী নয়- করলে সওয়াব পাওয়া যায় এবং না করলে গোনাহ নাই, সেগুলোকে নফল বলা হয়। আয়াতে নামাযে তাহাজ্জুদের সাথে نافلة শব্দ সংযুক্ত হওয়ায় এটাই বোঝা যায় যে, তাহাজ্জুদের সালাত বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম— এর জন্যে নফল। অথচ সমগ্র উম্মতের জন্যেও নফল। এজন্যেই কোন কোন তফসীরবিদ এখানে نافلة শব্দটিকে উম্মতের ওপর তো শুধু পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই ফরয; কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর তাহাজ্জুদও একটি অতিরিক্ত ফরয। অতএব, এখানে نافلة শব্দের অর্থ অতিরিক্ত ফরয। নফলের সাধারণ অর্থে নয়। [তাবারী]।

আবার কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে نافلة শব্দটি তার সাধারণ অর্থ অতিরিক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে, তখন অর্থ হবেঃ আপনার যাবতীয় পূর্ব ও পরের গুণাহ মাফ হয়ে যাওয়ার কারণে আপনার জন্য তাহাজ্জুদের সালাত অতিরিক্তই রয়ে গেল। [ইবন কাসীর] আপনার উম্মাতের জন্য সেটার প্রয়োজনীয়তা হলো, গোনাহ মাফ পাওয়া। কিন্তু আপনার জন্য তা মর্যাদা বৃদ্ধি কারক। কিন্তু নফল হওয়া সত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ ত্যাগ করতেন না। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন যে, (أَفَلا أَكُونُ عَبْداً شَكُوراً) অর্থাৎ “আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?” [মুসলিমঃ ২৮১৯]

৩. আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাকামে মাহমুদের ওয়াদা দেয়া হয়েছে। মাকামে মাহমুদ শব্দদ্বয়ের অর্থ, প্রশংসনীয় স্থান। এই মাকাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যেই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট অন্য কোন নবীর জন্যে নয়। এর তাফসীর প্রসঙ্গে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। সহীহ হাদীস সমূহে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে “বড় শাফাআতের মাকাম”। [ফাতহুল কাদীর]। হাশরের ময়দানে যখন সমগ্ৰ মানব জাতি একত্রিত হবে এবং প্রত্যেক নবীর কাছেই শাফাআতের দরখাস্ত করবে, তখন সব নবীই শাফা’আত করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন।

তখন কেবল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাই সমগ্ৰ মানবজাতির জন্যে শাফাআত করবেন। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ কিয়ামতের দিন লোকেরা দলে দলে বিভক্ত হবে। প্রত্যেক উম্মত তার নিজের নবীর কাছে যাবে। তারা বলবে, হে অমুক (নবী)! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা’আত করুন। হে অমুক (নবী)!! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা’আত করুন। (কিন্তু তারা কেউ শাফা’আত করতে রাযী হবেন না)। শেষ পর্যন্ত শাফাআতের দায়িত্ব এসে পড়বে নবী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর। আর এই দিনেই আল্লাহ তাকে মাকামে মাহমুদে দাঁড় করবেন। [বুখারীঃ ৪৭১৮]

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনার পর বলবে “আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্‌ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়েমাহ, আতি মুহাম্মদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদীলাহ ওয়াব’আসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযী ওয়াদতাহ্” তার জন্য আমার শাফা’আত হালাল হয়ে যাবে। [বুখারীঃ ৪৭১৯] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি এ আয়াতে مقام محمود “মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থান” সম্পর্কে বলেছেনঃ “এটা সে স্থান যেখান থেকে আমি আমার উম্মাতের জন্য শাফা’আত করব।” [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৪৪১, ৫২৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৯) আর রাত্রির কিছু অংশে তা দিয়ে[1] তাহাজ্জুদ[2] পড়; এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য।[3] আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। [4]

[1] অর্থাৎ, কুরআন পড়ার মাধ্যমে।

[2] কেউ কেউ বলেন, تهجد শব্দটি সেই শ্রেণীভুক্ত শব্দ, যাতে বিপরীতমুখী দু’ রকম অর্থ পাওয়া যায়। এর অর্থ ঘুমানোও হয়, আবার ঘুম থেকে জাগাও হয়। এখানে দ্বিতীয় অর্থেই ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, রাতে ঘুম থেকে ওঠো এবং নফল নামায পড়। কেউ বলেন, هجود এর প্রকৃত অর্থই হল, রাতে ঘুমানো। কিন্তু باب تفعُّل এর ছাঁচে পড়ে তাতে تجنب (বেঁচে থাকা) এর অর্থ সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন, إثم মানে পাপ, কিন্তু ঐ ছাঁচে পড়ে تَأَثُّم এর অর্থ হয়, পাপ থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। অনুরূপ تهجد এর অর্থ হবে, ঘুম থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। আর مُتَهَجِّدٌ হবে সে, যে রাতে না ঘুমিয়ে কিয়াম করে। মোট কথা তাহাজ্জুদের অর্থ হল, রাতের শেষ প্রহরে উঠে নফল নামায পড়া। সারা রাত قيام الليل (নামায) পড়া সুন্নতের বিপরীত। নবী (সাঃ) রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। আর এটাই হল সুন্নতী তরীকা।

[3] কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, এটা একটি অতিরিক্ত ফরয, যা নবী (সাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এইভাবে তারা বলেন যে, নবী (সাঃ)-এর উপর তাহাজ্জুদের নামাযও ঐরূপ ফরয ছিল, যেমন পাঁচ অক্ত নামায ফরয ছিল। অবশ্য উম্মতের জন্য তাহাজ্জুদের নামায ফরয নয়। কেউ কেউ বলেন যে, نَافِلَةً (অতিরিক্ত) এর অর্থ হল, তাহাজ্জুদের এই নামায রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত জিনিস। কারণ, তিনি হলেন, مغفور الذنب (পাপ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত)। পক্ষান্তরে উম্মতের জন্য উক্ত আমল এবং অন্যান্য সমস্ত নেক আমল পাপসমূহের কাফফারা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, نَافِلَةً মানে নফলই। অর্থাৎ, এ নামায না রসূল (সাঃ)-এর উপর ফরয ছিল, আর না তাঁর উম্মতের উপর। এটি একটি অতিরিক্ত নফল ইবাদত, যার ফযীলত অবশ্যই অনেক। এই সময়ে আল্লাহ তাঁর ইবাদতে বড়ই সন্তুষ্ট হন। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোযা হল আল্লাহর মাস মুহার্রমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামায হল রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায।’’ (মুসলিম ১১৬৩নং, আবু দাঊদ তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ) তিনি বলেন, ‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন একটি কক্ষ আছে, যার বাহিরের অংশ ভিতর থেকে এবং ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যাবে।’’ তা শুনে আবু মালেক আশআরী (রাঃ) বললেন, ‘সে কক্ষ কার জন্য হবে, হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি উত্তম কথা বলে, অন্নদান করে ও লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাযে রত হয়; তার জন্য।’’ (ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১১নং) তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে নীচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার নিকট কিছু চাইবে? আমি তাকে দান করব। এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’’ (বুখারী, মুসলিম, সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১২২৩নং) তিনি বলেন, ‘‘তোমরা তাহাজ্জুদের নামাযে অভ্যাসী হও। কারণ, তা তোমাদের পূর্বতন নেক বান্দাদের অভ্যাস; তা তোমাদের প্রভুর নৈকট্যদানকারী ও পাপক্ষালনকারী এবং গোনাহ হতে বিরতকারী আমল।’’ (তিরমিযী, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১৮ নং)

[4] এটা হল সেই স্থান, যা কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ নবী (সাঃ)-কে দান করবেন এবং সেই স্থানে সিজদায় পড়ে আল্লাহর অসীম প্রশংসা বর্ণনা করবেন। অতঃপর আল্লাহ জাল্লা শানুহ বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা তোল, কি চাও বল, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, মঞ্জুর করা হবে।’ তখন তিনি সেই বড় সুপারিশটি করবেন, যার পর লোকদের হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হবে। (আশা এখানে নিশ্চিতের অর্থে।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ : ৮০ وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡكَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا ﴿۸۰﴾
و قل رب ادخلنی مدخل صدق و اخرجنی مخرج صدق و اجعل لی من لدنك سلطنا نصیرا ﴿۸۰﴾
• আর বল, ‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে*। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর’।

-আল-বায়ান

• বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে (যেখানেই) প্রবেশ করাও, (সেটা কর) সত্য ও সম্মানের প্রবেশ, আর আমাকে (যেখান হতেই) বের কর, (সেটা কর) সত্য ও সম্মানের বহির্গমন, আর তোমার নিকট হতে আমাকে এক সাহায্যকারী শক্তি দান কর।

-তাইসিরুল

• বলঃ হে আমার রাব্ব! যেখানে গমন শুভ ও সন্তোষজনক আপনি আমাকে সেখানে নিয়ে যান এবং যেখান হতে নির্গমন শুভ ও সন্তোষজনক সেখান হতে আমাকে বের করে নিন এবং আপনার নিকট হতে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।

-মুজিবুর রহমান

• And say, "My Lord, cause me to enter a sound entrance and to exit a sound exit and grant me from Yourself a supporting authority."

-Sahih International

* উত্তমভাবে প্রবেশ করাও অর্থাৎ সসম্মানে ও মর্যাদার সাথে মদীনায় প্রবেশ করাও এবং বের কর উত্তমভাবে অর্থাৎ মক্কা থেকে বের কর বিজয়ী বেশে। তাফসীরে শাওকানী।

৮০. আর বলুন, হে আমার রব! আমাকে প্রবেশ করান সত্যতার সাথে এবং আমাকে বের করান সত্যতার সাথে(১) এবং আপনার কাছ থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।

১. উপরোক্ত অনুবাদটি বাগভীর অনুকরণে করা হয়েছে। অন্য অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর সন্তোষ যেভাবে হয় সেভাবে প্রবেশ করানো এবং আল্লাহর সন্তোষ যাতে রয়েছে সেভাবে বের করা। মূলত: مدخل ও مخرج এর অর্থ প্রবেশ করার স্থান ও বহিগর্মনের স্থান। উভয়ের সাথে صدق  বিশ্লেষণ যুক্ত হওয়ার অর্থ এই যে, এই প্রবেশ ও বহিগর্মন সব আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী উত্তম পন্থায় হোক। কেননা, আরবী ভাষায় صدق এমন কাজের জন্যে ব্যবহৃত হয়, যা বাহ্যতঃ ও আভ্যন্তরীন উভয় দিক দিয়ে সঠিক ও উত্তম হবে।

কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে ‘প্ৰবেশ করার স্থান’ বলে মদীনা এবং ‘বহির্গমনের স্থান’ বলে মক্কা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] উদ্দেশ্য এই যে, হে আল্লাহ, মদীনায় আমার প্রবেশ উত্তমভাবে সম্পন্ন হোক। সেখানে কোন অগ্ৰীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এবং মক্কা থেকে আমার বের হওয়া উত্তমভাবে সম্পন্ন হোক। এই তাফসীরটি অনেক তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮০) বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কল্যাণ সহ প্রবেশ করাও এবং কল্যাণ সহ বের কর। আর তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’ [1]

[1] কেউ কেউ বলেন, এটা হিজরতের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন নবী (সাঃ)-এর মক্কা থেকে বের হওয়ার এবং মদীনাতে প্রবেশ করার সময় উপস্থিত হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, সত্যের উপর আমার মৃত্যু দিও এবং সত্যের উপর আমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করো। আবার কেউ কেউ বলেন, সত্যতার সাথে আমাকে কবরে প্রবিষ্ট করো এবং কিয়ামতের দিন সত্যতার সাথে আমাকে কবর থেকে বের করো ইত্যাদি। ইমাম শাওকানী বলেন, এটা যেহেতু দু’আ, বিধায় এর ব্যাপকতায় উল্লিখিত সব কথাই এসে যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৭১ থেকে ৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 পরের পাতা »