بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১৮/ আল-কাহফ | Al-Kahf | سورة الكهف আয়াতঃ ১১০ মাক্কী
১৮:৬১ فَلَمَّا بَلَغَا مَجۡمَعَ بَیۡنِهِمَا نَسِیَا حُوۡتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِیۡلَهٗ فِی الۡبَحۡرِ سَرَبًا ﴿۶۱﴾
فلما بلغا مجمع بینهما نسیا حوتهما فاتخذ سبیلهٗ فی البحر سربا ۶۱

এরপর যখন তারা তাদের দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে উপনীত হল, তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেল। ফলে মাছটি নালার মত করে সমুদ্রে তার পথ করে নিল। আল-বায়ান

অতঃপর যখন তারা দু’জনে দুই সমুদ্রের মিলন স্থলে পৌঁছল, তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেল আর সেটি সমুদ্রে তার পথ করে নিল সুড়ঙ্গের মত। তাইসিরুল

তারা যখন উভয়ের সংগমস্থলে পৌঁছল, তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; ওটা সুরঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। মুজিবুর রহমান

But when they reached the junction between them, they forgot their fish, and it took its course into the sea, slipping away. Sahih International

৬১. অতঃপর তারা উভয়ে যখন দু’সাগরের মিলনস্থলে পৌঁছল তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; ফলে সেটা সুড়ঙ্গের মত নিজের পথ করে সাগরে নেমে গেল।(১)

(১) মাছের সমুদ্রে চলে যাওয়ার কথাটি প্রথমবার سَرَبًا শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ সুড়ঙ্গ। পাহাড়ে রাস্তা তৈরী করার জন্য অথবা শহরে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরী করার উদ্দেশ্যে সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। এ থেকে জানা গেল যে, মাছটি সমুদ্রের যেদিকে যেত, সেদিকে একটি সুড়ঙ্গের মত পথ তৈরী হয়ে যেত। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] উপরোক্ত হাদীস থেকে তা-ই জানা যায়। দ্বিতীয় বার যখন ইউশা ইবন নূন দীর্ঘ সফরের পর এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন, তখন (وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا) শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে عَجَبًا শব্দের অর্থ: আশ্চর্যজনকভাবে। উভয় বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা, পানিতে সুড়ঙ্গ তৈরী হওয়া স্বয়ং একটি অভ্যাসবিরুদ্ধ আশ্চর্য ঘটনা। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬১) তারা যখন উভয় (সমুদ্রে)র সঙ্গম স্থলে পৌঁছল, তখন নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; অথচ ওটা সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬২ فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتٰىهُ اٰتِنَا غَدَآءَنَا ۫ لَقَدۡ لَقِیۡنَا مِنۡ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا ﴿۶۲﴾
فلما جاوزا قال لفتىه اتنا غداءنا ۫ لقد لقینا من سفرنا هذا نصبا ۶۲

অতঃপর যখন তারা অগ্রসর হল তখন সে তার যুবককে বলল, ‘আমাদের সকালের খাবার নিয়ে আস। আমাদের এই সফরে আমরা অনেক ক্লান্তির মুখোমুখি হয়েছি’। আল-বায়ান

যখন তারা আরো এগিয়ে গেল, সে তার সঙ্গীকে বলল, ‘আমাদের সকালের খাবার আন, আমরা আমাদের এই সফরে বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ তাইসিরুল

যখন তারা আরও অগ্রসর হল, মূসা তার সংগীকে বললঃ আমাদের প্রাতঃরাশ নিয়ে এসো, আমরাতো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। মুজিবুর রহমান

So when they had passed beyond it, [Moses] said to his boy, "Bring us our morning meal. We have certainly suffered in this, our journey, [much] fatigue." Sahih International

৬২. অতঃপর যখন তারা আরো অগ্রসর হল মূসা তার সঙ্গীকে বললেন, আমাদের দুপুরের খাবার আন, আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) যখন তারা আরো অগ্রসর হল, তখন মূসা তার সঙ্গীকে বলল, ‘আমাদের নাশতা আনো, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৩ قَالَ اَرَءَیۡتَ اِذۡ اَوَیۡنَاۤ اِلَی الصَّخۡرَۃِ فَاِنِّیۡ نَسِیۡتُ الۡحُوۡتَ ۫ وَ مَاۤ اَنۡسٰنِیۡهُ اِلَّا الشَّیۡطٰنُ اَنۡ اَذۡکُرَهٗ ۚ وَ اتَّخَذَ سَبِیۡلَهٗ فِی الۡبَحۡرِ ٭ۖ عَجَبًا ﴿۶۳﴾
قال ارءیت اذ اوینا الی الصخرۃ فانی نسیت الحوت ۫ و ما انسنیه الا الشیطن ان اذکرهٗ ۚ و اتخذ سبیلهٗ فی البحر ٭ۖ عجبا ۶۳

সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, যখন আমরা পাথরটিতে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছটি হারিয়ে ফেলি। আর আমাকে তা স্মরণ করতে ভুলিয়েছে কেবল শয়তান এবং আশ্চর্যজনকভাবে তা সমুদ্রে তার পথ করে নিয়েছে’। আল-বায়ান

সঙ্গীটি বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে (বসে) ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। সেটার কথা আপনাকে বলতে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল আর মাছটি বিস্ময়করভাবে সমুদ্রে তার রাস্তা করে চলে গিয়েছিল।’ তাইসিরুল

সে বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শাইতানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে। মুজিবুর রহমান

He said, "Did you see when we retired to the rock? Indeed, I forgot [there] the fish. And none made me forget it except Satan - that I should mention it. And it took its course into the sea amazingly". Sahih International

৬৩. সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন মাছের যা ঘটেছিল আমি তা আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম শয়তানই সেটার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; আর মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সাগরে নেমে গেল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৩) সে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই ওর কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’ [1]

[1] অর্থাৎ, মাছটি জীবিত হয়ে সমুদ্রের মধ্যে চলে যায় এবং তার জন্য মহান আল্লাহ সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ বানিয়ে দেন। ইউশা’ (আঃ) মাছটিকে সমুদ্রে যেতে এবং পথ সৃষ্টি হতে দেখেছিলেন, কিন্তু মূসা (আঃ)-কে এ কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। এমন কি সেখানে বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন। এই দিন এবং দিনের পরে রাত সফর করে যখন দ্বিতীয় দিনে মূসা (আঃ) ক্লান্তি ও ক্ষুধা অনুভব করলেন, তখন তিনি তাঁর যুবক সাথীকে বললেন, চল খাবার খেয়ে নিই। তিনি বললেন, যেখানে পাথরে হেলান দিয়ে আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম, মাছটি সেখানে জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে গেছে এবং সেখানে বিস্ময়করভাবে সে তাঁর পথ বানিয়ে নিয়েছে। আর এ কথা আপনাকে বলতে আমি ভুলে গেছি। আসলে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৪ قَالَ ذٰلِکَ مَا کُنَّا نَبۡغِ ٭ۖ فَارۡتَدَّا عَلٰۤی اٰثَارِهِمَا قَصَصًا ﴿ۙ۶۴﴾
قال ذلک ما کنا نبغ ٭ۖ فارتدا علی اثارهما قصصا ۙ۶۴

সে বলল, ‘ঐ স্থানটিই আমরা খুঁজছি। তাই তারা তাদের পদচি‎হ্ন অনুসরণ করে পেছনে ফিরে গেল’। আল-বায়ান

মূসা বলল, ‘এটাই তো সে জায়গা যেটা আমরা খুঁজছি।’ কাজেই তারা তাদের পায়ের চিহ্ন ধরে ফিরে গেল। তাইসিরুল

মূসা বললঃ আমরাতো ঐ স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম; অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। মুজিবুর রহমান

[Moses] said, "That is what we were seeking." So they returned, following their footprints. Sahih International

৬৪. মূসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম(১) তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। এরপর তারা সাক্ষাত পেল আমাদের।

(১) অর্থাৎ আমাদের গন্তব্যের এ নিশানীটিই তো আমাকে বলা হয়েছিল। এ থেকে স্বতঃস্ফৰ্তভাবে এ ইংগিতই পাওয়া যায় যে, আল্লাহর ইংগিতেই মূসা আলাইহিস সালাম এ সফর করছিলেন। তার গন্তব্য স্থলের চিহ্ন হিসেবে তাকে বলে দেয়া হয়েছিল যে, যেখানে তাদের খাওয়ার জন্য নিয়ে আসা মাছটি অদৃশ্য হয়ে যাবে সেখানে তারা আল্লাহর সেই বান্দার দেখা পাবেন, যার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৪) মূসা বলল, ‘আমরা তো সেটারই অনুসন্ধান করছিলাম।’ অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলতে লাগল। [1]

[1] মূসা (আঃ) বললেন, আল্লাহর বান্দা! যেখানে মাছটি জীবিত হয়ে অদৃশ্য হয়েছে, সেটাই হচ্ছে আমাদের ঐ গন্তব্যস্থল, যার খোঁজে আমরা সফর করছি। তাই নিজেদের পায়ের চিহ্নকে অনুসরণ করে সেদিকেই প্রত্যাবর্তন করলেন, যেদিক থেকে এসেছিলেন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে ফিরে গেলেন। قَصَصًا এর অর্থ, পিছনে পড়া, পিছে পিছে চলা। অর্থাৎ, পায়ের চিহ্নকে অনুসরণ করে তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৫ فَوَجَدَا عَبۡدًا مِّنۡ عِبَادِنَاۤ اٰتَیۡنٰهُ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ عَلَّمۡنٰهُ مِنۡ لَّدُنَّا عِلۡمًا ﴿۶۵﴾
فوجدا عبدا من عبادنا اتینه رحمۃ من عندنا و علمنه من لدنا علما ۶۵

অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেল, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছি এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি। আল-বায়ান

তখন তারা আমার বান্দাদের এক বান্দাকে পেল, যার প্রতি আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম আর আমার পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম। তাইসিরুল

অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের যাকে আমি আমার নিকট হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মুজিবুর রহমান

And they found a servant from among Our servants to whom we had given mercy from us and had taught him from Us a [certain] knowledge. Sahih International

৬৫. এরপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।(১)

(১) কুরআনুল করীমে ঘটনার মূল ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং (عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا) (আমার বান্দাদের একজন) বলা হয়েছে। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খাদির” উল্লেখ করা হয়েছে। খাদির অর্থ সবুজ-শ্যামল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২] খাদির কি নবী ছিলেন, না ওলী ছিলেন, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য আলেমদের মতে, খাদির ‘আলাইহিস সালামও একজন নবী। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৫) অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের;[1] যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ[2] দান করেছিলাম ও যাকে আমি আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। [3]

[1] এই দাস বা বান্দা হলেন খাযির। বহু সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এটা বর্ণিত হয়েছে। ‘খাযির’-এর অর্থ সবুজ-শ্যামল। তিনি একদা সাদা যমীনের উপর বসলে, যমীনের সেই অংশটুকু তাঁর নীচে দিয়ে সবুজ হয়ে উঠে। এই কারণেই তাঁর নাম হয়ে যায় ‘খাযির’। (বুখারীঃ সূরা কাহ্ফের তাফসীর)

[2] رَحْمَةٌ এর অর্থ কোন কোন মুফাসসির নিয়েছেন বিশেষ অনুগ্রহ যা আল্লাহ তাঁর এই বিশিষ্ট বান্দাকে প্রদান করেছিলেন। তবে অধিকাংশ মুফাস্সির এর অর্থ নিয়েছেন নবুঅত।

[3] এটা মূসা (আঃ)-এর কাছে যে জ্ঞান ছিল সেই নবুঅত ছাড়াও এমন সৃষ্টিগত বিষয়ের এমন জ্ঞান, যে জ্ঞান দানে মহান আল্লাহ কেবল খাযিরকেই ধন্য করেছিলেন এবং মূসা (আঃ)-এর কাছেও এ জ্ঞান ছিল না। এটাকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করে কোন কোন সুফিপন্থীরা দাবী করে যে, আল্লাহ তাআলা নবী নন এমন কোন কোন লোককে, ‘ইলমে লাদুন্নী’ (বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান) দানে ধন্য করেন। আর এ জ্ঞান কোন শিক্ষক ছাড়াই কেবল আল্লাহর অপার দয়া ও করুণায় লব্ধ হয় এবং এই ‘বাতেনী ইলম’ (গুপ্ত জ্ঞান) শরীয়তের বাহ্যিক জ্ঞান -- যা কুরআন ও হাদীস আকারে বিদ্যমান তা -- থেকে ভিন্ন হয়, বরং কখনো কখনো তার বিপরীত ও বিরোধীও হয়। কিন্তু এ দলীল এই জন্য সঠিক নয় যে, তাঁকে যে কিছু বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মহান আল্লাহ নিজেই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অথচ অন্য কারো জন্য এ ধরনের কথা বলা হয়নি। যদি এটাকে ব্যাপক করে দেওয়া হয়, তবে প্রত্যেক যাদুকর-ভেল্কিবাজ এই ধরনের দাবী করতে পারে। তাই তো সুফিবাদীদের মাঝে এই দাবী ব্যাপকহারে বিদ্যমান। তবে এই ধরনের দাবীর কোনই মূল্য নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৬ قَالَ لَهٗ مُوۡسٰی هَلۡ اَتَّبِعُکَ عَلٰۤی اَنۡ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدًا ﴿۶۶﴾
قال لهٗ موسی هل اتبعک علی ان تعلمن مما علمت رشدا ۶۶

মূসা তাঁকে বলল, ‘আমি কি আপনাকে এই শর্তে অনুসরণ করব যে, আপনাকে যে সঠিক জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তা আমাকে শিক্ষা দেবেন’? আল-বায়ান

মূসা তাকে বলল, ‘আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করব যে, আপনি আমাকে সেই (বিশেষ) জ্ঞান থেকে শিক্ষা দেবেন যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে?’ তাইসিরুল

মূসা তাকে বললঃ সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন - এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি? মুজিবুর রহমান

Moses said to him, "May I follow you on [the condition] that you teach me from what you have been taught of sound judgement?" Sahih International

৬৬. মূসা তাকে বললেন, যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন, যা দ্বারা আমি সঠিক পথ পাব, এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?(১)

(১) এখানে মূসা 'আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবী ও শীর্ষস্থানীয় রাসূল হওয়া সত্বেও খাদির ‘আলাইহিস সালাম-এর কাছে সবিনয় প্রার্থনা করেছিলেন যে, আমি আপনার জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আপনার সাহচর্য কামনা করি। এ থেকে বোঝা গেল যে, ছাত্রকে অবশ্যই উস্তাদের সাথে আদব রক্ষা করতে হবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৬) মূসা তাকে বলল, ‘সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন -- এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৭ قَالَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا ﴿۶۷﴾
قال انک لن تستطیع معی صبرا ۶۷

সে বলল, ‘আপনি কখনো আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না’। আল-বায়ান

সে বলল, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না।’ তাইসিরুল

সে বললঃ তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবেনা। মুজিবুর রহমান

He said, "Indeed, with me you will never be able to have patience. Sahih International

৬৭. সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সংগে ধৈৰ্য ধারণ করে থাকতে পারবেন না,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৭) সে বলল, ‘তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৮ وَ کَیۡفَ تَصۡبِرُ عَلٰی مَا لَمۡ تُحِطۡ بِهٖ خُبۡرًا ﴿۶۸﴾
و کیف تصبر علی ما لم تحط بهٖ خبرا ۶۸

‘আপনি তাতে কীভাবে ধৈর্য ধরবেন, যে সম্পর্কে আপনি জানেন না’? আল-বায়ান

আপনি কীভাবে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করবেন যা আপনার জ্ঞানের আয়ত্বের বাইরে?’ তাইসিরুল

যে বিষয় তোমার জ্ঞানায়ত্ত নয় সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে কেমন করে? মুজিবুর রহমান

And how can you have patience for what you do not encompass in knowledge?" Sahih International

৬৮. যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন কেমন করে?(১)

(১) খাদির ‘আলাইহিস সালাম মূসা (আলাইহিস সালাম-কে বললেনঃ আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৮) যে বিষয় তোমার জ্ঞানায়ত্ত নয়,[1] সে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ করবে কেমন করে?’

[1] অর্থাৎ, যে ব্যাপারে তোমার পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৬৯ قَالَ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ صَابِرًا وَّ لَاۤ اَعۡصِیۡ لَکَ اَمۡرًا ﴿۶۹﴾
قال ستجدنی ان شاء الله صابرا و لا اعصی لک امرا ۶۹

সে বলল, ‘ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং কোন বিষয়ে আমি আপনার অবাধ্য হব না’। আল-বায়ান

মূসা বলল, ‘আল্লাহ চাইলে আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন, আমি আপনার কোন নির্দেশই লঙ্ঘন করব না।’ তাইসিরুল

মূসা বললঃ আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করবনা। মুজিবুর রহমান

[Moses] said, "You will find me, if Allah wills, patient, and I will not disobey you in [any] order." Sahih International

৬৯. মূসা বললেন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) মূসা বলল, ‘ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ চাইলে) আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮:৭০ قَالَ فَاِنِ اتَّبَعۡتَنِیۡ فَلَا تَسۡـَٔلۡنِیۡ عَنۡ شَیۡءٍ حَتّٰۤی اُحۡدِثَ لَکَ مِنۡهُ ذِکۡرًا ﴿۷۰﴾
قال فان اتبعتنی فلا تسلنی عن شیء حتی احدث لک منه ذکرا ۷۰

সে বলল, ‘তবে আপনি যদি আমাকে অনুসরণ করেন, তাহলে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্পর্কে আপনাকে জানাই’। আল-বায়ান

সে বলল, ‘আপনি যেহেতু আমার অনুসরণ করতেই চান, তাহলে আপনি আমাকে কোন ব্যাপারেই প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে বলি।’ তাইসিরুল

সে বললঃ আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই তাহলে কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করনা, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলি। মুজিবুর রহমান

He said, "Then if you follow me, do not ask me about anything until I make to you about it mention." Sahih International

৭০. সে বলল, আচ্ছা, আপনি যদি আমার অনুসরণ করবেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না। আমি সে বিষয়ে আপনাকে কিছু বলি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭০) সে বলল, আচ্ছা, ‘তুমি যদি আমার অনুসরণ কর-ই, তাহলে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলি।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৬১ থেকে ৭০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 পরের পাতা »