সূরাঃ ৯/ আত-তাওবা | At-Tawba | ٱلتَّوْبَة আয়াতঃ ১২৯ মাদানী

৯ : ৬১

وَ مِنۡهُمُ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ النَّبِیَّ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هُوَ اُذُنٌ ؕ قُلۡ اُذُنُ خَیۡرٍ لَّكُمۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ یُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ رَحۡمَۃٌ لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡكُمۡ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ رَسُوۡلَ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۶۱﴾

و منهم الذین یؤذون النبی و یقولون هو اذن قل اذن خیر لكم یؤمن بالله و یؤمن للمؤمنین و رحمۃ للذین امنوا منكم و الذین یؤذون رسول الله لهم عذاب الیم ﴿۶۱﴾
আর তাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘তিনি (সব বিষয়ে) শ্রবণকারী’। বল, তোমাদের জন্য যা কল্যাণের তা শ্রবণকারী। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদের বিশ্বাস করে, আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সে রহমত এবং যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

-আল-বায়ান

তাদের মাঝে এমন লোকও আছে যারা নাবীকে কষ্ট দেয় আর বলে তিনি কান কথা শুনেন। বল, ‘তোমাদের যাতে ভালো আছে সে তাই শোনে’। সে আল্লাহয় বিশ্বাস রাখে, আর মু’মিনদেরকেও বিশ্বাস করে, আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য রহমত। অপরপক্ষে আল্লাহর রসূলকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ ‘আযাব।

-তাইসিরুল

আর তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নাবীকে যাতনা দেয় এবং বলেঃ তিনি প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত করে থাকেন। বলে দাওঃ এই নাবীতো কর্ণপাত করে সেই কথায় যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আর মু’মিনদের বিশ্বাস করে, আর সে ঐ সব লোকের প্রতি রাহমাত স্বরূপ যারা মু’মিন। আর যারা আল্লাহর রাসূলকে যাতনা দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

-মুজিবুর রহমান

And among them are those who abuse the Prophet and say, "He is an ear." Say, "[It is] an ear of goodness for you that believes in Allah and believes the believers and [is] a mercy to those who believe among you." And those who abuse the Messenger of Allah - for them is a painful punishment.

-Sahih International

৬১. আর তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, সে তো কর্ণপাতকারী। বলুন, তার কান তোমাদের জন্য যা মঙ্গল তা-ই শুনে। তিনি আল্লাহর উপর ঈমান আনেন এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে; আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তিনি তাদের জন্য রহমত। আর যারা আল্লাহ্‌র রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।(১)

(১) ইবনে আব্বাস বলেন, নবতাল ইবনুল হারেস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বসত। তারপর সেখানে যা শুনত তা মুনাফিকদের কাছে পাচার করত। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অর্থাৎ সে তাদের কাছে গিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে বলেছিল যে, তিনি কান কথা বেশী শুনেন। তিনি সবার কথা শুনেন। [তাবারী] অথবা তারা বলতে চেয়েছিল যে, আমরা যা বলছি তা যদি মুহাম্মাদের কানে যায়, তারপরও কোন অসুবিধা নেই, কারণ তার কাছে গিয়ে ওজর পেশ করব। আর তিনি সব কথাই শুনে থাকেন। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। এভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এমন খারাপ মন্তব্য করতে লাগল যে, তিনি সত্য-মিথ্যা ও ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম নন। অথচ তিনি তাদের হিদায়াতের জন্যই প্রেরিত। এটা নিঃসন্দেহে রাসূলকে কষ্ট দেয়া। [সা’দী]

আল্লাহ্ তা'আলা তার জবাবে বললেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল কথা শুনেন। তার কথাগুলো ঈমানদারদের জন্য কল্যাণকর। তিনি আল্লাহর উপর ঈমান রাখেন এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করেন। [তাবারী] শানকীতী বলেন, আয়াতে সে সমস্ত লোকদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত ও তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সেখানে এসেছে, “নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা'নত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। [সূরা আল-আহযাব: ৫৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬১) তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত করে থাকে।’ তুমি বলে দাও, ‘সে কর্ণপাত তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।[1] সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং মুমিনদের (কথাকে) বিশ্বাস করে। আর সে তোমাদের মধ্যে বিশ্বাসী লোকদের জন্য করুণাস্বরূপ। যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’

[1] এখানে পুনরায় মুনাফিক্বদের কথা আলোচনা করা হচ্ছে। নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে এক অশালীন আচরণ প্রদর্শন করে বলতে লাগল যে, সে বড় কান-পাতলা! অর্থাৎ, সে প্রত্যেকের (প্রত্যেক) কথা শোনে (ও মেনে) নেয়। (সম্ভবতঃ নবী (সাঃ)-এর সহনশীলতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার দেখে তাদের এ ব্যাপারে ধোকা হয়েছিল।) আল্লাহ তাআলা বললেন, না! আমার পয়গম্বর মন্দ ও অশান্তির কোন কথা শোনে না। যা শোনে তা তোমাদের জন্য মঙ্গলদায়ক এবং ভাল। (যেমন তোমরা মিথ্যা কসম খেয়ে ও মিথ্যা ওজর পেশ করে তার কাছে ক্ষমা চাইলে সে তোমাদের মুখের কথা শুনে ক্ষমা করে দেয়। আর এটা তোমাদের জন্য অবশ্যই উত্তম।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬২

یَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَكُمۡ لِیُرۡضُوۡكُمۡ ۚ وَ اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗۤ اَحَقُّ اَنۡ یُّرۡضُوۡهُ اِنۡ كَانُوۡا مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۶۲﴾

یحلفون بالله لكم لیرضوكم و الله و رسولهٗ احق ان یرضوه ان كانوا مؤمنین ﴿۶۲﴾
তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর কসম করে, যাতে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক হকদার যে, তারা তাকে সন্তুষ্ট করবে, যদি তারা ঈমানদার হয়ে থাকে।

-আল-বায়ান

তোমাদেরকে খুশি করার জন্য তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে কসম করে। তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তবে কাউকে খুশি করতে চাইলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলই এর সবচেয়ে বেশি হকদার।

-তাইসিরুল

তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে শপথ করে যেন তারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্ট করা তাদের জন্য বেশি যরুরী, যদি তারা সত্যিকারের মু’মিন হয়ে থাকে।

-মুজিবুর রহমান

They swear by Allah to you [Muslims] to satisfy you. But Allah and His Messenger are more worthy for them to satisfy, if they should be believers.

-Sahih International

৬২. তারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে(১)। অথচ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই এর বেশী হকদার যে, তারা তাদেরকেই সন্তুষ্ট করবে(২), যদি তারা মুমিন হয়।

(১) কাতাদা বলেন, মুনাফিকদের এক লোক বলেছিল যে, যদি মুহাম্মদ যা বলে তা সত্য হয় তবে তারা গাধার চেয়েও অধম ৷ একথা শুনে মুসলিমদের এক ব্যক্তি বলল যে, আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ যা বলে তা সত্য, আর তুমি গাধার চেয়েও অধম। মুসলিম লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি জানাল। তিনি মুনাফিকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এ কথাটি তুমি কেন বলেছ? সে লা'নত দিতে লাগল এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলল যে, সে তা বলেনি। তখন মুসলিম লোকটি বলল, হে আল্লাহ্! আপনি সত্যবাদীকে সত্যায়ন করুন আর মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করুন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ তারা তোমাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ করে সন্তুষ্ট করতে চায়। অথচ তাদের উচিত ঈমান এনে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সন্তুষ্ট করবে। [মুয়াসসার] কারণ একজন মুমিনের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্ট করা। মুমিন এর উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেয় না। তারা যেহেতু সেটা করছে না সেহেতু প্রমাণিত হলো যে, তারা ঈমানদার নয়। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬২) তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে থাকে। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসূল হচ্ছেন বেশী হকদার (এই বিষয়ে) যে, তারা যেন তাঁকে সন্তুষ্ট করে; যদি তারা বিশ্বাসী হয়ে থাকে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৩

اَلَمۡ یَعۡلَمُوۡۤا اَنَّهٗ مَنۡ یُّحَادِدِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِیۡهَا ؕ ذٰلِكَ الۡخِزۡیُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۶۳﴾

الم یعلموا انهٗ من یحادد الله و رسولهٗ فان لهٗ نار جهنم خالدا فیها ذلك الخزی العظیم ﴿۶۳﴾
তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তবে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা।

-আল-বায়ান

তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন যেখানে সে হবে চিরস্থায়ী? আর এটা খুবই লাঞ্ছনার ব্যাপার।

-তাইসিরুল

তারা কি জানেনা যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যারা বিরুদ্ধাচরণ করে, এমন লোকের ভাগ্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন? তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে, এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা।

-মুজিবুর রহমান

Do they not know that whoever opposes Allah and His Messenger - that for him is the fire of Hell, wherein he will abide eternally? That is the great disgrace.

-Sahih International

৬৩. তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করে(১) তার জন্য তো আছে জাহান্নামের আগুন, যেখানে সে স্থায়ী হবে? এটাই চরম লাঞ্ছনা।

(১) তারা যেহেতু রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে, মুমিনদের কাছে মিথ্যা শপথ করে তাদেরকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করছে, সুতরাং তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নেমেছে। আর যারাই আল্লাহ্ তা'আলা ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নামে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আর তা নিঃসন্দেহে লাঞ্ছিত জীবন। [সা'দী; মুয়াসসার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৩) তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন; সে তাতে অনন্তকাল থাকবে। এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৪

یَحۡذَرُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ اَنۡ تُنَزَّلَ عَلَیۡهِمۡ سُوۡرَۃٌ تُنَبِّئُهُمۡ بِمَا فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ قُلِ اسۡتَهۡزِءُوۡا ۚ اِنَّ اللّٰهَ مُخۡرِجٌ مَّا تَحۡذَرُوۡنَ ﴿۶۴﴾

یحذر المنفقون ان تنزل علیهم سورۃ تنبئهم بما فی قلوبهم قل استهزءوا ان الله مخرج ما تحذرون ﴿۶۴﴾
মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলি জানিয়ে দেবে। বল, ‘তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ’।

-আল-বায়ান

মুনাফিকরা ভয় পায় তাদের মনের কথা প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে কোন সূরাহ নাযিল হয়ে যায় নাকি। বল, ‘ঠাট্টা করতে থাক, তোমরা যে ব্যাপারে ভয় পাও, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিবেন’।

-তাইসিরুল

মুনাফিকরা আশংকা করে যে, তাদের (মুসলিমদের) প্রতি না জানি এমন কোন সূরা নাযিল হয় যা তাদের (মুনাফিকদের) অন্তরের কথা অবহিত করে দেয়। তুমি বলে দাওঃ হ্যাঁ, তোমরা বিদ্রুপ করতে থাক, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বিষয়কে প্রকাশ করেই দিবেন যে সম্বন্ধে তোমরা আশংকা করছিলে।

-মুজিবুর রহমান

They hypocrites are apprehensive lest a surah be revealed about them, informing them of what is in their hearts. Say, "Mock [as you wish]; indeed, Allah will expose that which you fear."

-Sahih International

৬৪. মুনাফেকরা ভয় করে, তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না নাযিল হয়, যা ওদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে(১)! বলুন, ‘তোমরা বিদ্রুপ করতে থাক; তোমরা যা ভয় কর নিশ্চয় আল্লাহ তা বের করে দেবেন।

(১) আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, মুনাফিকরা এ ভয়ে থাকে যে, কখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সূরা নাযিল হয়ে তাদের অপমানিত করবে, তাদের মনের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করে দিবে। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা দিলেন যে, তারা যতই গোপন করুক না কেন আল্লাহ তা অবশ্যই বের করে দেবেন। [আদওয়াউল বায়ান] মুজাহিদ বলেন, তারা নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলে তারপর ভাবতে থাকে যে, এমনও তো হতে পারে যে, আল্লাহ আমাদের এ গোপন কথা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন? কাতাদা বলেন, তাদের মনের গোপন কথাগুলো বলে দিয়ে আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করলেন। আর এ জন্যই এ সূরার অপর নাম আল-ফাদিহা বা অপদস্থকারী বা অপমানকারী। [ইবন কাসীর]

অন্য আয়াতেও তাদের এ আশঙ্কার কথা আল্লাহ জানিয়েছেন। যেমন, “যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ কখনো তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন না, আর আমরা ইচ্ছে করলে আপনাকে তাদের পরিচয় দিতাম; ফলে আপনি তাদের লক্ষণ দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন। তবে আপনি অবশ্যই কথার ভংগিতে জানেন।” [সূরা মুহাম্মদঃ ২৯–৩০] অন্য আয়াতে তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত ভাবের কথা অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। “তারা যে কোন আওয়াজকেই তাদের বিরুদ্ধে মনে করে। [সূরা আল-মুনাফিকুন: ৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৪) মুনাফিকরা আশংকা করে যে, তাদের (মুসলমানদের) প্রতি এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে পড়ে, যা তাদেরকে সেই মুনাফিকদের অন্তরের কথা অবহিত করে দেবে। তুমি বলে দাও, ‘তোমরা বিদ্রূপ করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বিষয়কে প্রকাশ করেই দিবেন, যে সম্বন্ধে তোমরা আশংকা করছিলে।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৫

وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوۡلِهٖ كُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ ﴿۶۵﴾

و لئن سالتهم لیقولن انما كنا نخوض و نلعب قل ا بالله و ایتهٖ و رسولهٖ كنتم تستهزءون ﴿۶۵﴾
আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?

-আল-বায়ান

তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, ‘আমরা হাস্য রস আর খেল-তামাশা করছিলাম।’ বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?’

-তাইসিরুল

আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর তাহলে তারা বলে দিবেঃ আমরাতো শুধু আলাপ আলোচনা ও হাসি তামাশা করছিলাম। তুমি বলঃ তাহলে কি তোমরা আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি হাসি তামাসা করছিলে?

-মুজিবুর রহমান

And if you ask them, they will surely say, "We were only conversing and playing." Say, "Is it Allah and His verses and His Messenger that you were mocking?"

-Sahih International

৬৫. আর আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে অবশ্যই তারা বলবে, আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বলুন, তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে?(১)

(১) যায়দ ইবন আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক মুনাফিক আওফ ইবন মালিককে তাবুকের যুদ্ধে বলে বসল: আমাদের এ কারীসাহেবগণ (রাসূল ও সাহাবায়ে কিরামদেরকে মুনাফিকদের পক্ষ থেকে উপহাস করে দেয়া নাম) উদরপূর্তির প্রতি বেশী আগ্রহী, কথাবাতায় মিথ্যাচার, আর শত্রুর সামনে সবচেয়ে ভীরু। তখন আওফ ইবন মালিক বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি মুনাফিক, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা জানাব ৷ আওফ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানাতে গেলে দেখতে পেলেন কুরআন তার আগেই সেটা জানিয়েছে।

যায়দ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমর বলেন, তখন আমি ঐ মুনাফিক লোকটিকে দেখতে পেলাম যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উষ্ট্রীর পেছনের দিকে ঝুলে ছিল, পাথর তার উপর ছিটে এসে পড়ছিল, সে বলছিল, আমরা তো কেবল আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছিলেন, তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ করছিলে? [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৫) আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, তাহলে তারা নিশ্চয় বলবে যে, ‘আমরা তো শুধু আলাপ-আলোচনা ও হাসি-তামাশা করছিলাম।’ তুমি বলে দাও, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং রসূলকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছিলে?’ [1]

[1] মুনাফিক্বরা আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিদ্রূপ করত। মু’মিনদের সাথে ঠাট্টা-ব্যঙ্গ করত। এমনকি রসূল (সাঃ) সম্বন্ধেও অসভ্য কথা বলা হতেও বিরত থাকত না। যার খবর কোন না কোনভাবে কিছু মুসলিম এবং পরে রসূল (সাঃ)-এর কাছে পৌঁছে যেত। কিন্তু যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হত তখন পরিষ্কারভাবে বাহানা বের করত আর বলত যে, আমরা এমনি আপোসে হাসি-মজাক করছিলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, হাসি-মজাকের জন্য তোমাদের সামনে (সব বাদ দিয়ে কেবল) আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রসূলই ছিলেন? উদ্দেশ্য এই যে, যদি উদ্দেশ্য আপোসে হাসি-মজাক করাই হত তাহলে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ ও রসূল তার মাঝে কেন আসত? এটা নিঃসন্দেহে তোমাদের সেই কূট আচরণ ও কপটতার বহিঃপ্রকাশ, যা আমার আয়াত ও পয়গম্বরের প্রতি তোমাদের অন্তরে লুক্কায়িত রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৬

لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ كَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِكُمۡ ؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآئِفَۃٍ مِّنۡكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَۃًۢ بِاَنَّهُمۡ كَانُوۡا مُجۡرِمِیۡنَ ﴿۶۶﴾

لا تعتذروا قد كفرتم بعد ایمانكم ان نعف عن طآئفۃ منكم نعذب طآئفۃ بانهم كانوا مجرمین ﴿۶۶﴾
তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।

-আল-বায়ান

ওযর পেশের চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। তোমাদের মধ্যেকার কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্যদেরকে শাস্তি দেব, কারণ তারা অপরাধী।

-তাইসিরুল

তোমরা এখন অজুহাত দেখিয়োনা, তোমরাতো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ, যদিও আমি তোমাদের মধ্য হতে কতককে ক্ষমা করে দিই, তবুও কতককে শাস্তি দিবই। কারণ তারা অপরাধী ছিল।

-মুজিবুর রহমান

Make no excuse; you have disbelieved after your belief. If We pardon one faction of you - We will punish another faction because they were criminals.

-Sahih International

৬৬. তোমরা ওজর পেশ করোনা তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। আমরা তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব—কারণ তারা অপরাধী।(১)

(১) ইকরিমা বলেন, মুনাফিকদের একজনকে আল্লাহ্‌ তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক ক্ষমা করলে সে বলল, হে আল্লাহ! আমি একটি আয়াত শুনতে পাই যাতে আমাকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যা আমার চামড়া শিহরিত করে এবং অন্তরে আঘাত করে। হে আল্লাহ! সুতরাং আমার মৃত্যু যেন আপনার রাহে শাহাদাতের মাধ্যমে হয়। কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমি অমুককে গোসল দিয়েছি, তাকে কাফন দিয়েছি, তাকে দাফন করেছি। ইকরিমা বলেন, সে ইয়ামামাহ এর যুদ্ধে মারা গেল, কিন্তু অন্যান্য মুসলিমদের লাশ পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায় নি। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৬) তোমরা এখন (বাজে) ওজর পেশ করো না, তোমরা তো নিজেদের ঈমান প্রকাশ করার পর কুফরী করেছ,[1] যদিও আমি তোমাদের মধ্য হতে কতককে ক্ষমা করে দিই, [2] তবুও কতককে শাস্তি দিব, কারণ তারা অপরাধী। [3]

[1] অর্থাৎ, তোমরা যে ঈমান প্রকাশ করে আসছিলে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করার পর তার কোন মূল্য বাকী থাকল না। প্রথমতঃ সে ঈমানের ভিত্তিও মুনাফিক্বী ছিল। তবুও এরই অসীলায় প্রকাশ্যভাবে তোমরা মুসলিমদের মধ্যে পরিগণিত হতে। কিন্তু এখন সেখানেও কোন ঠাঁই নেই।

[2] এ থেকে উদ্দেশ্য এমন লোক যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে নিয়েছে এবং খাঁটি মুসলমান হয়ে গেছে।

[3] এরা সেই লোক যাদের তওবা করার তওফীক ভাগ্যে জোটেনি এবং কুফরী ও মুনাফিক্বীর উপর অটল থেকেছে। এই জন্য এই শাস্তির কারণও বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা পাপিষ্ঠ ও অপরাধী ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৭

اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡكَرِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَقۡبِضُوۡنَ اَیۡدِیَهُمۡ ؕ نَسُوا اللّٰهَ فَنَسِیَهُمۡ ؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ﴿۶۷﴾

المنفقون و المنفقت بعضهم من بعض یامرون بالمنكر و ینهون عن المعروف و یقبضون ایدیهم نسوا الله فنسیهم ان المنفقین هم الفسقون ﴿۶۷﴾
মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয়, আর ভাল কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা নিজদের হাতগুলোকে সঙ্কুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন*, নিশ্চয় মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।

-আল-বায়ান

মুনাফিক পুরুষ আর মুনাফিক নারী সব এক রকম, তারা অন্যায় কাজের নির্দেশ দেয় আর সৎ কাজ করতে নিষেধ করে, (আল্লাহর পথে ব্যয় করার ব্যাপারে) হাত গুটিয়ে রাখে, তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, তাই তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন। মুনাফিকরাই তো ফাসিক।

-তাইসিরুল

মুনাফিক পুরুষ এবং মুনাফিক নারীরা সবাই এক রকম, অসৎ কর্মের শিক্ষা দেয় এবং সৎ কাজ হতে বিরত রাখে, আর নিজেদের হাতসমূহকে (আল্লাহর পথে ব্যয় করা হতে) বন্ধ করে রাখে, তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন, নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা হচ্ছে অতি অবাধ্য।

-মুজিবুর রহমান

The hypocrite men and hypocrite women are of one another. They enjoin what is wrong and forbid what is right and close their hands. They have forgotten Allah, so He has forgotten them [accordingly]. Indeed, the hypocrites - it is they who are the defiantly disobedient.

-Sahih International

* টিকা দেখুন পৃষ্ঠা ২০৫।

৬৭. মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারী একে অপরের অংশ, তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং সৎকাজে নিষেধ করে, তারা তাদের হাতগুটিয়ে রাখে, তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন; মুনাফেকরা তো ফাসিক।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৭) মুনাফিক পুরুষেরা এবং মুনাফিক নারীরা এক অপরের অনুরূপ।[1] তারা অসৎকর্মের নির্দেশ দেয়, সৎকর্ম হতে বিরত রাখে এবং নিজেদের হাতগুলিকে (আল্লাহর পথে ব্যয় করা হতে) বন্ধ করে রাখে।[2] তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন।[3] নিঃসন্দেহে মুনাফিকরাই হচ্ছে অতি অবাধ্য।

[1] মুনাফিক্বরা যে কসম খেয়ে মুসলিমদেরকে জানাত যে, ‘আমরা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত’ আল্লাহ পাক তাদের এই কথার খন্ডন করলেন যে, ঈমানদারদের সাথে এদের কি সম্পর্ক? অবশ্য এরা হল সবাই মুনাফিক্ব, চাহে পুরুষ হোক অথবা মহিলা, তারা সকলে সমান। অর্থাৎ, কুফরী ও মুনাফিক্বীতে উভয়েই তুল্যমূল্য। পরবর্তীতে তাদের গুণ বর্ণনা করা হচ্ছে যা মু’মিনদের গুণের সম্পূর্ণ উল্টো ও বিপরীত।

[2] এ থেকে উদ্দেশ্য হল কৃপণতা করা। অর্থাৎ, মু’মিনদের গুণ হল; তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে থাকে। কিন্তু মুনাফিক্বদের গুণ এর বিপরীত; তারা কৃপণতা করে থাকে। অর্থাৎ, আল্লাহর পথে ব্যয় করে না।

[3] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলাও তাদের সাথে এমন ব্যবহার করবেন যে, যেন তিনি তাদেরকে ভুলে গেছেন। যেমন, অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন, ‘‘আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তোমরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে।’’ (সূরা জাষিয়াহ ৩৪ আয়াত) তার মানে হল, যেমন তারা দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম-আহকামকে বর্জন করেছিল, তেমনি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ ও দয়া হতে বঞ্চিত করবেন। এখানে আল্লাহর ভুলে যাওয়া (কর্মের অনুরূপ দন্ডদান নীতি এবং) অলংকার শাস্ত্রের রীতি অনুযায়ী সাদৃশ্য সাধনের জন্য বলা হয়েছে। নচেৎ আল্লাহর সত্তা ভুলে যাওয়া থেকে পাক ও পবিত্র। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৮

وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتِ وَ الۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ هِیَ حَسۡبُهُمۡ ۚ وَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّقِیۡمٌ ﴿ۙ۶۸﴾

وعد الله المنفقین و المنفقت و الكفار نار جهنم خلدین فیها هی حسبهم و لعنهم الله و لهم عذاب مقیم ﴿۶۸﴾
আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে, এটি তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের লা‘নত করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।

-আল-বায়ান

আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়া‘দা দিয়েছেন, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট। তাদের উপর আছে আল্লাহর অভিশাপ, আর আছে তাদের জন্য স্থায়ী ‘আযাব।

-তাইসিরুল

আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারীদের এবং কাফিরদের সাথে জাহান্নামের আগুনের অঙ্গীকার করেছেন, তাতে তারা চিরকাল থাকবে, ওটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।

-মুজিবুর রহমান

Allah has promised the hypocrite men and hypocrite women and the disbelievers the fire of Hell, wherein they will abide eternally. It is sufficient for them. And Allah has cursed them, and for them is an enduring punishment.

-Sahih International

৬৮. মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী ও কাফেরদেরকে আল্লাহ্‌ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের, যেখানে তারা স্থায়ী হবে, এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদেরকে লা'নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৮) আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৬৯

كَالَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ كَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡكُمۡ قُوَّۃً وَّ اَكۡثَرَ اَمۡوَالًا وَّ اَوۡلَادًا ؕ فَاسۡتَمۡتَعُوۡا بِخَلَاقِهِمۡ فَاسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِخَلَاقِكُمۡ كَمَا اسۡتَمۡتَعَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ بِخَلَاقِهِمۡ وَ خُضۡتُمۡ كَالَّذِیۡ خَاضُوۡا ؕ اُولٰٓئِكَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۶۹﴾

كالذین من قبلكم كانوا اشد منكم قوۃ و اكثر اموالا و اولادا فاستمتعوا بخلاقهم فاستمتعتم بخلاقكم كما استمتع الذین من قبلكم بخلاقهم و خضتم كالذی خاضوا اولٓئك حبطت اعمالهم فی الدنیا و الاخرۃ و اولٓئك هم الخسرون ﴿۶۹﴾
তাদের মত, যারা তোমাদের পূর্বে ছিল, তারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী, ধন-সম্পদ ও সন্তানাদিতে অধিক। ফলে তারা তাদের অংশ ভোগ করেছে, আর তোমরাও তোমাদের অংশ ভোগ করেছ, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা তাদের অংশ ভোগ করেছে। আর তোমরা খেল-তামাশায় মত্ত হয়েছ, যেমনিভাবে তারা মত্ত হয়েছে। এদেরই আমলসমূহ নষ্ট হয়ে গিয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে। আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

-আল-বায়ান

(তোমাদের কাজ-কারবার) তোমাদের আগের লোকেদের মতই, যারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তির অধিকারী, আর ধন-মাল আর সন্তান-সন্ততিতেও তোমাদের চেয়ে অধিক সমৃদ্ধিশালী, তাদের প্রাপ্য অংশ তারা ভোগ করে গেছে, এখন তোমরাও তোমাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ কর যেমন তোমাদের আগের লোকেরা তাদের প্রাপ্য অংশ ভোগ করেছে, আর তোমরা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত আছ যেমন তারা অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত ছিল, এরাই হল তারা দুনিয়া ও আখেরাতে যাদের কাজ-কর্ম নিস্ফল হয়ে গেছে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

-তাইসিরুল

তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে, যারা ছিল তোমাদের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী এবং ধন-সম্পদ ও সন্তানাদীর প্রাচুর্য্যও ছিল তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী; তারা তাদের (পার্থিব) অংশ দ্বারা যথেষ্ট উপকার লাভ করেছে। অতঃপর তোমরাও তোমাদের (পার্থিব) অংশ দ্বারা খুব উপকার লাভ করলে যেমন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা নিজেদের অংশ দ্বারা ফল ভোগ করেছিল; আর তোমরাও ব্যাঙ্গাত্মক হাসি তামাসায় এরূপভাবে নিমগ্ন রয়েছ যেমন তারা নিমগ্ন হয়েছিল। তাদের কার্যসমূহ বিনষ্ট হয়ে গেছে দুনিয়ায় ও আখিরাতে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

-মুজিবুর রহমান

[You disbelievers are] like those before you; they were stronger than you in power and more abundant in wealth and children. They enjoyed their portion [of worldly enjoyment], and you have enjoyed your portion as those before you enjoyed their portion, and you have engaged [in vanities] like that in which they engaged. [It is] those whose deeds have become worthless in this world and in the Hereafter, and it is they who are the losers.

-Sahih International

৬৯. তাদের নত, যারা তোমাদের পূর্বে ছিল, তারা শক্তিতে তোমাদের চেয়ে প্রবল ছিল এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ছিল তোমাদের চেয়ে বেশী। অতঃপর তারা তাদের ভাগ্যে যা ছিল তা ভোগ করলে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের ভাগ্যে যা ছিল তা ভোগ করেছে। আর তোমরাও সেরূপ অনর্থক আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত রয়েছ যেরূপ অনর্থক আলাপ-আলোচনায় তারা লিপ্ত ছিল।(১) ওরা তারাই যাদের আমল দুনিয়া ও আখেরাতে নিষ্ফল হয়ে গিয়েছে, আর তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

(১) আল্লাহ তা'আলা বলেন, এ লোকগুলো সে রকম আযাবই পেয়েছে যে রকম আযাব তাদের পূর্ববর্তীরা পেয়েছে। অথচ তারা এদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ও বেশী সম্পদ ও সন্তান সন্ততির অধিকারী ছিল। অতঃপর তারা ভোগ করেছে তাদের অংশ। হাসান বসরী বলেন, এখানে অংশ বলে দ্বীন বোঝানো হয়েছে। তারা তাদের দ্বীনের অংশ অনুসারে আমল করে চলেছে। যেমনিভাবে তোমরা তোমাদের দ্বীনের অংশ অনুসারে আমল করে চলছ। অনুরূপভাবে তোমরা মিথ্যা ও অসার আলোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়েছ যেমনি তারা মিথ্যা ও অসার আলোচনায় লিপ্ত হয়েছিল। [ইবন কাসীর]

ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, এর অর্থ তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে তোমরাও তা-ই করছ। আর তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে দ্বীনের মধ্যে না জেনে কথা বলেছে, তোমরাও তা বলছ। তোমাদের ও তাদের পথভ্রষ্টতার ধরণ একই। কারণ দ্বীন নষ্ট হয় দু’ভাবে। কখনও বাতিল বিশ্বাস ও সে অনুসারে কথা বলার মাধ্যমে, আবার কখনও সঠিক জ্ঞানের বাইরে চলে বাতিল আমল করার মাধ্যমে। প্রথমটি হচ্ছে, বিদ’আত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, খারাপ আমল। প্রথমটি সন্দেহ থেকে আসে আর দ্বিতীয়টি আসে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে। বর্তমান যুগের ফাসেক লোকরাও পূর্ববর্তী লোকদের মতই এ দুটিতে লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। [ইগাসাতুল লাহফানঃ ২/১৬৬-১৬৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করবে, প্রতি গজে গজে প্রতি হাতে হাতে তাদের অনুসরণ করবে। এমনকি যদি তারা ‘দব’ তথা ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়? তিনি বললেন, তবে আর কারা? [বুখারী ৩৪৫৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) (তোমরাও) তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত,[1] যারা শক্তি, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে ছিল তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী; ফলতঃ তারা নিজেদের (দ্বীনী) অংশ উপভোগ করেছে। অতঃপর তোমরাও তোমাদের (দ্বীনী) অংশ উপভোগ করেছ,[2] যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীগণ নিজেদের অংশ উপভোগ করেছে। আর তোমরাও সেইরূপ (অন্যায়) আলাপ-আলোচনায় নিমগ্ন হয়েছ, যেরূপ তারা হয়েছিল।[3] দুনিয়াতে ও আখেরাতে ওদের (নেক) কর্মসমূহ বিনষ্ট হয়ে গেছে, আর ওরাই হল ক্ষতিগ্রস্ত। [4]

[1] অর্থাৎ, তোমাদের অবস্থাও কর্ম এবং পরিণামের দিক দিয়ে পূর্ববর্তী কাফেরদের মতই। এখন অদৃশ্যভাবে বলার পরিবর্তে মুনাফিক্বদেরকে সরাসরি সম্বোধন করা হচ্ছে।

[2] خَلاق এর দ্বিতীয় অর্থ পার্থিব অংশও করা হয়েছে। অর্থাৎ, তোমাদের তকদীরে পার্থিব যতটা অংশ লিখে দেওয়া হয়েছিল তা উপভোগ করে নাও, যেমন তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা নিজেদের পার্থিব অংশ উপভোগ করে নিয়েছে। অতঃপর মৃত্যু অথবা আযাবের শিকার হয়েছিল।

[3] অর্থাৎ, আল্লাহর আয়াত এবং তাঁর পয়গম্বরদেরকে মিথ্যা জানার ব্যাপারে। অথবা দ্বিতীয় অর্থ হল যে, দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও খেল-তামাশায় যেমন তারা মগ্ন ছিল, তোমাদের অবস্থাও ঠিক তাই। আয়াতে পূর্ববর্তী লোক বলতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। যেমন এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন ‘‘অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ (সম্পূর্ণরূপে) এমনকি তারা যদি গোসাপের গর্তে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে।’’ সাহাবাগণ বললেন, ‘আল্লাহর রসূল ইয়াহুদ ও খ্রীষ্টানরা?’ তিনি বললেন, ‘‘তবে আবার কারা?’’ (বুখারী, মুসলিম ও হাকেম)

[4] أولئك (ওরাই) বলতে উদ্দেশ্য সেই লোকেরা যারা উল্লিখিত অভ্যাসে ও গুণে গুণান্বিত; যাদের উপমা দেওয়া হচ্ছে তারা এবং যাদের জন্য উপমা দেওয়া হচ্ছে তারাও। অর্থাৎ, যেমন তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল, তোমরাও সেইরূপ হবে। অথচ তারা তোমাদের চাইতে অধিক শক্তিশালী এবং মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা অধিক সমৃদ্ধ ছিল। এ সত্ত্বেও তারা আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ পায়নি; তাহলে তোমরা, যারা তাদের চাইতে সব দিক দিয়ে কম, তারা কেমন করে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৯ : ৭০

اَلَمۡ یَاۡتِهِمۡ نَبَاُ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّ عَادٍ وَّ ثَمُوۡدَ ۬ۙ وَ قَوۡمِ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اَصۡحٰبِ مَدۡیَنَ وَ الۡمُؤۡتَفِكٰتِ ؕ اَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ ۚ فَمَا كَانَ اللّٰهُ لِیَظۡلِمَهُمۡ وَ لٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۷۰﴾

الم یاتهم نبا الذین من قبلهم قوم نوح و عاد و ثمود و قوم ابرهیم و اصحب مدین و المؤتفكت اتتهم رسلهم بالبینت فما كان الله لیظلمهم و لكن كانوا انفسهم یظلمون ﴿۷۰﴾
তাদের কাছে কি তাদের পূর্বের লোকদের সংবাদ পৌঁছেনি, নূহের কওম, আদ, সামূদ, ইবরাহীমের কওম, মাদায়েনবাসী ও বিধ্বস্ত নগরীর? তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ প্রমাণসমূহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। অতএব আল্লাহ তাদের উপর যুলম করার নন, বরং তারাই তাদের নিজদের উপর যুলম করছিল।

-আল-বায়ান

তাদের কাছে কি তাদের আগের লোকদের সংবাদ আসেনি, নূহের জাতি, ‘আদ, সামূদ, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদ্য়্যানের অধিবাসীবৃন্দ আর উল্টে দেয়া নগরসমূহের? তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, আল্লাহ তাদের উপর যুলম করেননি, আসলে (তারাই তাদের অন্যায় কার্যকলাপের মাধ্যমে) নিজেদের আত্মার উপর যুলম করেছিল।

-তাইসিরুল

তাদের কাছে কি ঐ সব লোকের সংবাদ পৌঁছেনি যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে, নূহ সম্প্রদায় এবং আদ ও ছামূদ সম্প্রদায়, আর ইবরাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদইয়ানের অধিবাসীরা এবং বিধ্বস্ত জনপদগুলির? তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিল। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যাচার করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছিল।

-মুজিবুর রহমান

Has there not reached them the news of those before them - the people of Noah and [the tribes of] 'Aad and Thamud and the people of Abraham and the companions of Madyan and the towns overturned? Their messengers came to them with clear proofs. And Allah would never have wronged them, but they were wronging themselves.

-Sahih International

৭০. তাদের পূর্ববতী নূহ, আদ ও সামূদের সম্প্রদায়, ইবরাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদইয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসীদের সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি? তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন। অতএব, আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলুম করেন, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭০) তাদের কাছে কি তাদের পূর্ববর্তী নূহ সম্প্রদায় এবং আদ ও সামূদ সম্প্রদায়, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদয়্যানের অধিবাসিগণ এবং বিধ্বস্ত জনপদের অধিবাসিগণের সংবাদ কি আসেনি?[1] তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিল।[2] বস্তুতঃ আল্লাহ তো তাদের প্রতি অত্যাচার করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি অত্যাচার করত। [3]

[1] এখানে সেই ছয় সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে যাদের বাসস্থান ছিল শাম দেশে। এ দেশ আরব দেশের সন্নিকটেই অবস্থিত। আর তাদের কিছু কথা হতে পারে তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেও ছিল। নূহ নবী (আঃ)-এর সম্প্রদায়; যাদেরকে তুফানে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। আ’দ সম্প্রদায়; যাদেরকে বল ও শক্তিতে প্রবল থাকা সত্ত্বেও প্রচন্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। সামূদ সম্প্রদায়; যাদেরকে এক আসমানী গর্জন দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল। ইবরাহীম (আঃ)-এর সম্প্রদায়; যাদের বাদশাহ নমরূদ বিন কিনআন বিন কূশকে মশা দ্বারা মারা হয়েছিল। মাদয়্যানবাসী (শুআইব (আঃ)-এর সম্প্রদায়); যাদেরকে বিকট শব্দ ও ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। মু’তাফিকাতবাসী (বিধ্বস্ত জনপদের অধিবাসী) লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়’ যাদের জনপদের নাম ছিল ‘সাদুম’। ‘মু’তাফিকাত’এর অর্থ হল, উল্টো-পাল্টাকৃত। এদের উপরে প্রথমতঃ আসমান থেকে পাথর বর্ষণ করা হয়েছিল, আর দ্বিতীয়তঃ তাদের জনপদকে উল্টো-পাল্টা করে দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে বস্তিটার উপরিভাগ নিম্নে এবং নিম্নভাগ উপরে হয়ে গিয়েছিল। এই কারণেই তাদেরকে ‘আসহাবে মু’তাফিকাত’ বলা হয়।

[2] এ সকল সম্প্রদায়ের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন করে পয়গম্বর এসেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁদের কথার গুরুত্ব দেয়নি। বরং মিথ্যাজ্ঞান ও শত্রুতার পথ অবলম্বন করেছিল। যার পরিণামে আল্লাহর আযাব এসেছিল।

[3] অর্থাৎ, এই আযাব ছিল তাদের যুলুম, অত্যাচার ও সীমালংঘনে অবিচল থাকার পরিণাম। এমনি অকারণে কেউ আল্লাহর আযাবের শিকার হয়নি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৬১ থেকে ৭০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 · · · 10 11 12 13 পরের পাতা »