৩৯ : ৬১
وَ یُنَجِّی اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا بِمَفَازَتِهِمۡ ۫ لَا یَمَسُّهُمُ السُّوۡٓءُ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۶۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬১. আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে উদ্ধার করবেন তাদের সাফল্যসহ; তাদেরকে অমঙ্গল স্পর্শ করবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬১) আল্লাহ সাবধানীদেরকে তাদের সাফল্য সহ উদ্ধার করবেন;[1] অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না এবং তারা দুঃখও পাবে না। [2]
[1] مَفَازَةٌ শব্দটি হল ‘মাসদার মীমী’ (ক্রিয়ামূল)। অর্থাৎ, فَوْزٌ (সাফল্য) হল, অকল্যাণ থেকে বেঁচে যাওয়া এবং কল্যাণ ও সৌভাগ্য লাভ করা। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা আল্লাহভীরুদেরকে সেই সফলতা ও সৌভাগ্যের কারণে মুক্তি দেবেন, যা পূর্ব থেকেই তাঁর নিকটে তাদের জন্য সাব্যস্ত হয়ে আছে।
[2] তারা দুনিয়াতে যা কিছু ছেড়ে এসেছে, তার জন্য তাদের কোন দুঃখ হবে না। আর যেহেতু তারা কিয়ামতের ভয়াবহতা হতে সুরক্ষিত থাকবে, তাই তারা কোন ব্যাপারে চিন্তিত ও দুঃখিত হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬২
اَللّٰهُ خَالِقُ كُلِّ شَیۡءٍ ۫ وَّ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ وَّكِیۡلٌ ﴿۶۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬২. আল্লাহ্ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬২) আল্লাহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক। [1]
[1] অর্থাৎ, প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টাও তিনি এবং মালিকও তিনিই। তিনি যেভাবে চান, পরিচালনা করেন। প্রতিটি জিনিস তাঁর আয়ত্তে ও তাঁর পরিচালনার অধীনে বন্দী। কারো অবাধ্যতা করার অথবা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। وكيل (উকীল) অর্থ, দায়িত্বপ্রাপ্ত, কর্মবিধায়ক। প্রতিটি জিনিসই তাঁরই অধীনে এবং তিনি কারো অংশীদারী ছাড়াই সমস্ত কিছুর হেফাযত ও পরিচালনা করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৩
لَهٗ مَقَالِیۡدُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۶۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৩. আসমানসমূহ ও যমীনের চাবিসমূহ তাঁরই কাছে।(১) আর যারা আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্ৰস্ত।
(১) চাবি কারও হাতে থাকা তার মালিক ও নিয়ন্ত্রক হওয়ার লক্ষণ। তাই আয়াতের মর্মার্থ দাঁড়ায় এই যে, আকাশে ও পৃথিবীতে লুকায়িত সকল ভাণ্ডারের চাবি আল্লাহর হাতে। তিনিই এগুলোর রক্ষক, তিনিই নিয়ন্ত্রক, যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা যে পরিমাণ ইচ্ছা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা দান করবেন আর যাকে ইচ্ছা দান করেন না। [মুয়াস্সার, তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৩) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ তাঁরই নিকট।[1] যারা আল্লাহর আয়াত (বাক্য)কে অস্বীকার করে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।[2]
[1] مَقَالِيْدٌ হল, مِقْلَدٌ এবং مِقْلاَدٌ এর বহুবচন। (ফাতহুল ক্বাদীর) কেউ এর অর্থ করেছেন, চাবিসমূহ। আবার কেউ এর অর্থ করেছেন, ধন-ভান্ডার। উভয় অর্থের উদ্দেশ্য একই। সমস্ত কার্যকলাপের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে।
[2] অর্থাৎ, পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা, এই কুফরীর কারণে তারা জাহান্নামে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৪
قُلۡ اَفَغَیۡرَ اللّٰهِ تَاۡمُرُوۡٓنِّیۡۤ اَعۡبُدُ اَیُّهَا الۡجٰهِلُوۡنَ ﴿۶۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৪. বলুন, হে অজ্ঞরা! তোমরাকি আমাকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করতে নির্দেশ দিচ্ছ?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৪) বল, ‘হে অজ্ঞ ব্যক্তিরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ভিন্ন অন্যের ইবাদত (দাসত্ব) করতে বলছ?’[1]
[1] এ কথা কাফেরদের সেই আহবানের জওয়াবে বলা হচ্ছে, যাতে তারা ইসলামের পয়গম্বর মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বলত যে, তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের ধর্ম অবলম্বন করে নাও, আর তাতে মূর্তিপূজাও ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৫
وَ لَقَدۡ اُوۡحِیَ اِلَیۡكَ وَ اِلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ لَئِنۡ اَشۡرَكۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَ لَتَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۶۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৫. আর আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হয়েছে যে, যদি আপনি শির্ক করেন তবে আপনার সমস্ত আমল তো নিস্ফল হবে এবং অবশ্যই আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহী (প্রত্যাদেশ) করা হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর অংশী স্থির কর, তাহলে অবশ্যই তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্তদের শ্রেণীভুক্ত।[1]
[1] ‘‘যদি তুমি শিরক (আল্লাহর অংশী স্থির) কর’’ এর অর্থ হল, যদি তোমার মৃত্যু শিরকের উপরেই আসে এবং তা থেকে তওবা না কর। সম্বোধন নবী করীম (সাঃ)-কে করা হয়েছে, যিনি ছিলেন শিরক থেকে পাক ও পবিত্র এবং আগামীতে যে তাঁর দ্বারা শিরক হবে না, সে ব্যাপারেও নিশ্চয়তা ছিল। কেননা, নবী আল্লাহর হিফাযত ও তাঁর সংরক্ষণে থাকেন। তাঁর দ্বারা শিরক হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। আসলে এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরোক্ষভাবে উম্মতকে বুঝানো, (যদিও সম্বোধন নবীকে করা হয়েছে)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৬
بَلِ اللّٰهَ فَاعۡبُدۡ وَ كُنۡ مِّنَ الشّٰكِرِیۡنَ ﴿۶۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৬. বরং আপনি আল্লাহরই ইবাদাত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হোন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) বরং তুমি আল্লাহরই ইবাদত (দাসত্ব) কর[1] এবং কৃতজ্ঞদের দলভুক্ত হও।
[1] إِيَّاكَ نَعْبُدُ এর মতই এখানেও ‘মাফউল’ (কর্মপদ, আল্লাহ) কে পূর্বে উল্লেখ করে ‘হাসর’ (নির্দিষ্টীকরণের) এর অর্থ সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ, কেবল আল্লাহরই ইবাদত কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৭
وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ ٭ۖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۶۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৭. আর তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করেনি অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে।(১) পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।
(১) কেয়ামতের দিন পৃথিবী আল্লাহর মুঠোতে থাকবে এবং আকাশ ভাঁজ করা অবস্থায় তার ডান হাতে থাকবে। আলেমগণের মতে আক্ষরিক অর্থেই এমনটি হবে। যার স্বরূপ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। এ আয়াতের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা'আলার ‘মুঠি’ ও ‘ডান হাত’ আছে। এ দুটি আল্লাহর অন্যান্য গুণাগুণের মতই দুটি গুণ। এগুলোতে বিশ্বাস করতে হবে। এগুলোর অর্থ সাব্যস্ত করতে হবে। কিন্তু পরিচিত কোন অবয়ব দেয়া যাবে না। একথা মানতে হবে যে, আল্লাহর সত্ত্বা যেমন আমরা না দেখে সাব্যস্ত করছি তেমনিভাবে তার গুণও না দেখে সাব্যস্ত করব। যমীন আল্লাহ তা’আলার হাতের মুঠিতে থাকা এবং আসমান ডান হাতে পেচানো থাকার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সঠিক মর্যাদা, বড়ত্ব ও সম্মান সম্পর্কে মানুষকে কিছুটা ধারণা দেয়া হয়েছে।
কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ (যারা আজ আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বের অনুমান করতেও অক্ষম) নিজ চোখে দেখতে পাবে যমীন ও আসমান আল্লাহর হাতে একটা নগণ্যতম বল ও ছোট একটি রুমালের মত। হাদীসে এসেছে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে খুতবা দিচ্ছিলেন। খুতবা দানের সময় তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীনকে (অর্থাৎ গ্রহসমূহকে) তাঁর মুষ্ঠির মধ্যে নিয়ে এমনভাবে ঘুরাবেন যেমন শিশুরা বল ঘুরিয়ে থাকে এবং বলবেনঃ আমি একমাত্র আল্লাহ। আমি বাদশাহ। আমি সর্বশক্তিমান। আমি বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের মালিক। কোথায় পৃথিবীর বাদশাহ? কোথায় শক্তিমানরা? কোথায় অহংকারীরা? এভাবে বলতে বলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে কাঁপতে থাকলেন যে, তিনি মিম্বারসহ পড়ে না যান আমাদের সে ভয় হতে লাগলো। [মুসলিম: ২৭৮৮]
অপর হাদীসে এসেছে, ইয়াহুদী এক আলেম এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমরা আমাদের কিতাবে পাই যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহকে এক আঙ্গুলে রাখবেন, যমীনসমূহকে অপর আঙ্গুলে রাখবেন, গাছ-গাছালীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন, পানি ও মাটিকে এক আঙ্গুলে রাখবেন আর সমস্ত সৃষ্টিকে অপর আঙ্গুলে রাখবেন, তারপর বলবেন: আমিই বাদশাহ! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ইয়াহুদী আলেমের বক্তব্যের সমর্থনে এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [বুখারী: ৪৮১১]
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যমীনকে মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন। আর আসমানসমূহকে ডানহাতে গুটিয়ে রাখবেন তারপর বলবেন; আমিই বাদশাহ! কোথায় দুনিয়ার বাদশাহরা? [বুখারী: ৪৮১২, মুসলিম: ২৭৮১] অপর এক হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে।” সেদিন ঈমানদারগণ কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! সিরাতের (পুলসিরাতের) উপরে থাকবে। [তিরমিযী: ৩২৪২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৭) ওরা আল্লাহর যথোচিত কদর করেনি।[1] কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে গুটানো।[2] পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা যাকে অংশী করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।
[1] কেননা, তাঁর কথাও মানেনি, যা তিনি নবীদের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং ইবাদতকেও কেবল তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করেনি, বরং অন্যকেও তাতে শরীক করেছিল। হাদীসে এসেছে যে, ‘‘এক ইয়াহুদী পন্ডিত নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল যে, আমরা আল্লাহর ব্যাপারে (কিতাবে) এই কথা পাই যে, তিনি (কিয়ামতের দিন) আসমানসমূহকে এক আঙ্গুলে, যমীনসমূহকে আর এক আঙ্গুলে, গাছ-পালাকে এক আঙ্গুলে, পানি ও স্থলকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলকে এক আঙ্গুলে ধারণ করে বলবেন, আমিই সম্রাট।’’ নবী (সাঃ) মুচকি হেসে তার কথার সত্যায়ন করলেন এবং وَمَا قَدَرُوا اللهَ আয়াতটি তেলাঅত করলেন। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা যুমার) মুহাদ্দিসীন ও সলফদের আকীদা হল, আল্লাহর যেসব গুণাবলী কুরআনে এবং সহীহ হাদীসসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে, (যেমন, এই আয়াতে হাতের এবং হাদীসে তাঁর আঙ্গুলের কথা প্রমাণিত) সেগুলোর উপর কোন ধরন-গঠন নির্ণয়, সাদৃশ্য আরোপ এবং অপব্যাখ্যা ও পরিবর্তন করা ছাড়াই ঈমান অত্যাবশ্যক। কাজেই এখানে বর্ণিত প্রকৃতত্বকে কেবল প্রবলতা ও শক্তিমত্তার অর্থে গ্রহণ করা সঠিক নয়।
[2] এ ব্যাপারেও হাদীসে এসেছে যে, অতঃপর মহান আল্লাহ বলবেন, (أَنَا الْمَلِكُ، أَيْنَ مُلُوْكُ الأرضِ) ‘‘আমিই বাদশাহ, পৃথিবীর বাদশাহরা আজ কোথায়? (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫৫২২নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৮
وَ نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَصَعِقَ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا مَنۡ شَآءَ اللّٰهُ ؕ ثُمَّ نُفِخَ فِیۡهِ اُخۡرٰی فَاِذَا هُمۡ قِیَامٌ یَّنۡظُرُوۡنَ ﴿۶۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৮. আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে(১), ফলে আসমানসমূহে যারা আছে ও যমীনে যারা আছে তারা সবাই বেহুশ হয়ে পড়বে, যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছে করেন তারা ছাড়া(২)। তারপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে(৩), ফলে তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিভাবে আমি শান্তিতে থাকিব অথচ শিঙ্গাওয়ালা (ইসরাফীল) শিঙ্গা মুখে পুরে আছে, তার কপাল টান করে আছে এবং কান খাড়া করে আছে, অপেক্ষা করছে কখন তাকে ফুঁক দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। আর সে ফুঁক দিবে। তখন মুসলিমরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা কি বলবো? তিনি বললেন, তোমরা বলো, حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ تَوَكَّلْنَا عَلَى اللَّهِ رَبِّنَا “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ; আর তিনি কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক, আমরা আমাদের রব আল্লাহর উপরই তাওয়াকুল করছি।” [তিরমিযী: ৩২৪৩]
(২) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর প্রথম আমি মাথা উঠাবো তখন দেখতে পাবো যে, মূসা আরশ ধরে আছেন। আমি জানিনা তিনি কি এভাবেই ছিলেন নাকি শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পরে হুশে এসে এরূপ করেছেন। [বুখারী: ৪৮১৩]
(৩) প্রথম ও দ্বিতীয় ফুঁক দেয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বর্ণনায় এক হাদীসে এসেছে যে, তা চল্লিশ হবে। বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন: চল্লিশ দিন? তিনি বললেনঃ আমি তা বলতে অস্বীকার করছি। তারা বললো: চল্লিশ বছর? তিনি বললেনঃ আমি তাও বলতে অস্বীকার করছি। তারা বললো: চল্লিশ মাস? তিনি বললেনঃ আমি তাও অস্বীকার করছি। আর মানুষের সবকিছুই পচে যাবে। তবে তার নিম্নাংশের এক টুকরো ছাড়া। যার উপর মানুষ পুনরায় সংযোজিত হবে। [বুখারী: ৪৮১৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৮) সেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, ফলে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে;[1] তবে যাদেরকে আল্লাহ রক্ষা করতে ইচ্ছা করবেন তারা নয়।[2] অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন ওরা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে।[3]
[1] কারো কারো নিকট (অকস্মাৎ প্রথম ফুঁকের পর) এটা হবে দ্বিতীয় ফুঁক। অর্থাৎ, এটা হবে বেহুঁশ হওয়ার ফুঁক। যার ফলে সবারই মৃত্যু হয়ে যাবে। কারো কারো নিকট এ ফুঁকই প্রথম ফুঁক। এর ফলেই প্রথমতঃ সকলে কঠিন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং পরে সবারই মৃত্যু হয়ে যাবে। কেউ কেউ এই ফুঁকগুলোর পর্যায়ক্রম এইভাবে বর্ণনা করেছেন; প্রথমঃ نَفْخَةُ الْفَنَاءْ (ধ্বংসের ফুঁক), দ্বিতীয়ঃ نَفْخَةُ الْبَعْثِ (পুনরুত্থানের ফুঁক), তৃতীয় نَفْخَةُ الصَّعْقِ (বেহুঁশ হওয়ার ফুঁক) এবং চতুর্থ, نَفْخَةُ الْقِيَامِ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ (বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ফুঁক)। (আয়সারুত্ তাফাসীর) আবার কারো কারো মতে ফুঁক কেবল দুটোই; نَفْخَة المَوتُ (মৃত্যুর ফুঁক) এবং نَفْخَةُ الْبَعْثِ (পুনরুত্থানের ফুঁক)। আবার কারো কারো নিকট ফুঁক তিনটি হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
[2] অর্থাৎ, যার জন্য আল্লাহ চাইবেন তার মৃত্যু আসবে না। যেমন তারা হলেন জিবরীল, মীকাঈল, এবং ইস্রাফীল (আলাইহিমুস্ সালাম)। কেউ কেউ (বেহেশ্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রিযওয়ান ফিরিশতা, حَمَلَةُ الْعَرْشِ (আরশ উত্তোলনকারী ফিরিশতা) এবং জান্নাত ও জাহান্নামের দারোগার কথাও বলেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] যাঁরা চার ফুঁকের কথা বলেছেন, তাদের কাছে এটা হবে চতুর্থ ফুঁক, যাঁরা তিন ফুঁকের কথা বলেছেন, তাদের কাছে এটা হবে তৃতীয় ফুঁক এবং যাঁরা দু’টি ফুঁকের কথা বলেছেন, তাদের কাছে এটা হবে দ্বিতীয় ফুঁক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৬৯
وَ اَشۡرَقَتِ الۡاَرۡضُ بِنُوۡرِ رَبِّهَا وَ وُضِعَ الۡكِتٰبُ وَ جِایۡٓءَ بِالنَّبِیّٖنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ قُضِیَ بَیۡنَهُمۡ بِالۡحَقِّ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۶۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৯. আর যমীন তার প্রভুর নূরে উদ্ভাসিত হবে এবং আমলনামা পেশ করা হবে। আর নবীগণকে ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে(১) এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
(১) অর্থাৎ হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশের সময় সমস্ত নবী-রাসুলগণও উপস্থিত থাকবেন এবং অন্যান্য সাক্ষীও উপস্থিত থাকবে। সাক্ষীগণের এ তালিকায় থাকবেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰؤُلَاءِ شَهِيدًا) “অতঃপর যখন আমরা প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কি অবস্থা হবে?” [সূরা আন-নিসা: ৪১] অনুরূপভাবে ফেরেশতাগণও। যেমন, এক আয়াতে আছে, (وَجَاءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَعَهَا سَائِقٌ وَشَهِيدٌ) “আর সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সঙ্গে থাকবে চালক ও সাক্ষী।” [সূরা কাফ: ২১] তদ্রুপ উম্মতে মোহাম্মদীও থাকবে। যেমন, এক আয়াতে বলা হয়েছে, (وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ) “এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানুষের জন্য।” [সূরা আল-হাজ: ৭৮] কোন কোন মুফাসসিরের মতে, আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়েছেন তারাও থাকবেন এবং স্বয়ং মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও থাকবে। যেমন, কুরআনে বলা হয়েছে, (وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ) এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের। [সূরা ইয়াসীনঃ ৬৫] [আরো দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৯) বিশ্ব-প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে বিশ্ব,[1] আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবীগণ ও সাক্ষীদেরকে আনয়ন করা হবে[2] এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে ও তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না। [3]
[1] এই জ্যোতি বা নূর থেকে কেউ সুবিচার এবং নির্দেশ অর্থ নিয়েছেন। তবে এ থেকে প্রকৃত অর্থ নেওয়াতে কোন বাধা নেই। কেননা, আল্লাহ আসমান ও যমীনের নূর। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[2] নবীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমরা আমার বার্তা তোমাদের উম্মতদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলে? অথবা জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমাদের উম্মত তোমাদের দাওয়াতের কি উত্তর দিয়েছিল? তা গ্রহণ করেছিল, না প্রত্যাখ্যান করেছিল? উম্মতে মুহাম্মাদীকে সাক্ষীস্বরূপ আনা হবে। সুতরাং তারা সাক্ষ্য দেবে যে, তোমার নবীগণ তোমার পয়গাম স্ব-স্ব জাতির নিকট পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর তুমিই তোমার কুরআনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছ।
[3] অর্থাৎ, কারো প্রাপ্য নেকী-সওয়াবে কোন প্রকার কম করা হবে না এবং কাউকে তার অপরাধের অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৯ : ৭০
وَ وُفِّیَتۡ كُلُّ نَفۡسٍ مَّا عَمِلَتۡ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِمَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۷۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭০. আর প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) প্রত্যেকের কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে। ওরা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [1]
[1] অর্থাৎ, তাঁর কোন লেখক, হিসাবরক্ষক এবং সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। এই আমলনামা এবং সাক্ষী কেবল হুজ্জত কায়েম এবং ওজর-বাহানা দূর করার জন্য হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান