-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬১. আর যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার রব-এর কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর – তিনি যেন আমাদের জন্য ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাকুড়, গম, মসুর ও পেয়াজ উৎপাদন করেন। মূসা বললেন, তোমরা কি উত্তম জিনিসের বদলে নিম্নমানের জিনিষ চাও? তবে কোন শহরে চলে যাও, তোমরা যা চাও, সেখানে তা আছে(১)। আর তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য আপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর গযবের শিকার হল। এটা এ জন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত(২)। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করার জন্যই তাদের এ পরিণতি হয়েছিল(৩)।
১. তীহ উপত্যকায় মান্না’ ও ‘সালওয়া’র প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়েই তারা ওসব শক্ত ও শস্যের জন্য আবেদন করলো। এ প্রান্তরের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি শহর ছিল। সেখানে গিয়ে চাষাবাদ করে উৎপন্ন ফসলাদি ভোগের নির্দেশ দেয়া হলো। আল্লাহ্ তাআলা মূসা আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে পূর্বেই তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, যদি নির্দেশ অমান্য কর, তবে চিরকাল তোমরা অন্য জাতির দ্বারা শাসিত হতে থাকবে। যেমন বলা হয়েছে وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ আর সে সময়টি স্মরণ করুন, যখন আপনার রব জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় তিনি ইয়াহুদীদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত এমন শাসক প্রেরণ করতে থাকবেন, যারা তাদের প্রতি কঠোর শাস্তি পৌছাতে থাকবে। [সূরা আল-আরাফ: ১৬৭]
২. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী আযাব হবে সে লোকের যাকে কোন নবী হত্যা করেছে, অথবা কোন নবীকে হত্যা করেছে। আর ভ্রষ্ট ইমাম বা নেতা এবং ভাস্কর্য নির্মাণকারী।” [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪১৩, ৪১৫]
৩. কাতাদাই এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, তোমরা আল্লাহর অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন হতে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ; কেননা পূর্বেকার লোকেরা এ দুটির কারণেই ধ্বংস হয়েছিল। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া৬১। আর তোমরা যখন বলেছিলে, ‘হে মূসা! একই রকম খাদ্যে আমরা কখনো ধৈর্য ধারণ করব না, সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, তিনি যেন ভূমি জাত দ্রব্য শাক-সবজী, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পিঁয়াজ উৎপাদন করেন। মূসা বলল, তোমরা কি উৎকৃষ্ট বস্তুকে নিকৃষ্ট বস্তুর সাথে বিনিময় করতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যা চাও, তা সেখানে আছে।’(1) আর তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হল এবং আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হল। (2) এ জন্য যে তারা আল্লাহর নিদর্শন সকলকে অমান্য করত এবং (প্রেরিত পুরুষ) নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। (3) অবাধ্যতা ও সীমালঙঘন করবার জন্যেই তাদের এই পরিণতি ঘটেছিল। (4)
(1) এ ঘটনাও ঐ তীহ্ প্রান্তরের। মিসর বলতে এখানে মিসর দেশ বুঝানো হয় নি, বরং কোন এক নগরীকে বুঝানো হয়েছে। অর্থ হল, এখান থেকে যে কোন নগরীতে চলে যাও এবং সেখানে চাষাবাদ করে নিজেদের পছন্দমত শাক-সবজি, ডাল ইত্যাদি উৎপাদন করে খাও। তাদের চাওয়া যেহেতু অকৃতজ্ঞতা এবং অহংকারের ভিত্তিতে ছিল, তাই ধমকের স্বরে তাদেরকে বলা হল, তোমরা যা চাও, তা সেখানে আছে।
(2) কোথায় সেই পুরস্কার ও অনুগ্রহসমূহ যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে? আর কোথায় সেই লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য যা পরে তাদের উপর নিপতিত হয়েছে? এবং যার কারণে তারা আল্লাহর গযবের শিকার হয়েছে। 'গযব' (ক্রোধ)ও 'রহমত' (দয়া)র মত আল্লাহর একটি গুণ বিশেষ। এর ব্যাখ্যা শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা বা শাস্তি করা ঠিক নয়, বরং বলতে হবে, আল্লাহ তাদের উপর ঐভাবেই ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যেভাবে ক্রোধান্বিত হওয়া তাঁর গৌরবময় সত্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(3) এখানে লাঞ্ছিত এবং আল্লাহর গযবের শিকার হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মহান আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করা, তাঁর দ্বীনের প্রতি আহবানকারী আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম) ও সত্যের সন্ধানদাতাদেরকে হত্যা করা ও তাঁদের অবমাননা করাই হল তাদের আল্লাহর গযবের শিকার হওয়ার কারণ। কাল এই কর্মে জড়িত হওয়ার কারণে ইয়াহুদীরা যদি অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত হয়ে থাকে, তবে আজ এই একই কাজ সম্পাদনকারীরা কিভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারে? তাতে তারা যারাই হোক এবং যেখানেই থাক?
(4) এটা ইয়াহুদীদের লাঞ্ছনা ও দরিদ্রতার দ্বিতীয় কারণ। عَصَوا (অবাধ্যতা)র অর্থ হল, যে কাজ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হত, তা তারা সম্পাদন করত এবং يَعتَدُون (সীমালংঘন করা)র অর্থ হল, নির্দেশিত কাজগুলোর ব্যাপারে তারা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করত। অনুসরণ ও আনুগত্য হল, নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকা এবং নির্দেশাবলীকে ঐভাবেই পালন করা, যেভাবে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজের পক্ষ থেকে কমবেশী করলে তা বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন হবে; যা আল্লাহর নিকট অতীব অপছন্দনীয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*সাবিঈ- বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের পূজারী মতান্তরে ফেরেশতাদের উপাসনাকারী।
৬২. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, যারা ইয়ুহূদী হয়েছে(১) এবং নাসারা(২) ও সাবি’ঈরা(৩) যারাই আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে তাদের রব-এর কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।(৪)
১. তাদেরকে ইয়াহুদী নামকরণ তারা নিজেরাই করেছিল। কারও কারও মতে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পুত্র ‘ইয়াহুদা’ এর নামানুসারে তাদের এ নাম দেয়া হয়েছিল। অপর কারও কারও মতে, ‘হাওদ’ শব্দের অর্থ ঝুঁকে যাওয়া। তারা তাওরাত পাঠের সময় সামনে-পিছনে ঝুঁকে যেত বলে তাদের এ নাম হয়েছে। অথবা হাওদ এর অর্থ ফিরে আসা। তারা বলেছিল إِنَّا هُدْنَا إِلَيْكَ আমরা তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করলাম। [সূরা আল-আরাফ: ১৫৬] সে অনুসারে তাদের নাম হয়েছে, ইয়াহুদ। পবিত্র কুরআনে যেখানেই তাদেরকে এ নামে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই তাদের খারাপ গুণে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং ইয়াহুদী নামটি কোন ভাল গুণবাচক নাম নয়।
২. কাতাদাহ বলেন, তাদেরকে নাসারা নামকরণ করা হয়েছে, কেননা তারা নাসেরাহ নামক এক গ্রামের অধিবাসী ছিল যেখানে ঈসা আলাইহিস সালাম তাদের কাছে এসেছিলেন। এ নামে তারা নিজেদেরকে নামকরণ করেছিল। তাদেরকে এ নাম দেয়ার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দেন নি। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
৩. সাবে’ঈন কারা এ নিয়ে মুফাসসিরগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তারা ইয়াহুদী-নাসারা এবং অগ্নি-উপাসকদের মাঝামাঝি একটি জাতি। তাদের কোন সুনির্দিষ্ট দ্বীন নেই। হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তারা ফেরেশতা-উপাসক জাতি। তারা কেবলার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে। রাগেব ইস্পাহানী বলেনঃ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা নূহ আলাইহিস সালাম-এর দ্বীনের অনুসরণ করে চলত। বস্তুতঃ সাবেঈনরা এক বিরাট জাতি, যাদের অস্তিত্ব ইরাক থেকে শুরু করে পূর্ব দিকের দেশগুলোতে দেখা যায়। বর্তমানেও ইরাকে তাদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাদের কিছু ইবাদাত, যেমনঃ অযু, সালাত, কেবলা, সাওম ইত্যাদি প্রায় মুসলিমদের মতই। কিন্তু, আকীদাগতভাবে তারা দু’ভাগে বিভক্ত।
(এক) যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে। কিন্তু তারা কোন রাসূলের অনুসরণ করে না। (দুই) যারা তারকা-পূজার এবং পৃথিবীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি তারকার প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্বাস করে।
৪. এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন যে, আমার দরবারে কোন ব্যক্তির বিশেষ মর্যাদা নেই। যে ব্যক্তি ঈমান ও কর্মে পুরোপুরি আনুগত্য স্বীকার করবে, সে পূর্বে যেমনই থাকুক না কেন, আমার নিকট গ্রহণযোগ্য এবং তার আমল পছন্দনীয় ও প্রশংসনীয়। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, কুরআন নাযিল হওয়ার পর পূর্ণ আনুগত্য মুহাম্মাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মুসলিম হওয়াতেই সীমাবদ্ধ। আয়াতে وَعَمِلَ صَالِحًا বা “সৎকাজ করে” এটুকু বলার মাধ্যমে একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করার দ্বারাই তাদের নাজাত পাওয়া সীমাবদ্ধ এটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কারণ, যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ না করা হয়, তবে কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যার অর্থ এই যে, যে মুসলিম হবে, সে-ই আখেরাতে নাজাতের অধিকারী হবে। অর্থাৎ পূর্বোল্লেখিত ইয়াহুদী, নাসারা, সাবেয়ী, মাজুস এ সমস্ত লোকদের এতসব অনাচার ও গর্হিত আচরণের পরও কেউ যদি মুসলিম হয়ে যায়, তবে আমি সব মাফ করে দেব।
তাফসীরে জাকারিয়া৬২। নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে (মুমিন), যারা ইয়াহুদী (1) এবং খ্রিষ্টান (2) হয়েছে অথবা সাবেয়ী (3) হয়েছে, এদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (4)
(1) يَهُود (ইয়াহুদ) হয় هَوَادَة (যার অর্থ, ভালবাসা) ধাতু থেকে গঠিত অথবা تَهَوّد (যার অর্থ, তাওবা করা) ধাতু থেকে গঠিত। অর্থাৎ, তাদের এই নামকরণ প্রকৃতপক্ষে তাওবা করার কারণে অথবা একে অপরকে ভালবাসার কারণে হয়েছে। এ ছাড়া মূসা (আঃ)-এর অনুসারীদেরকে 'ইয়াহুদী' বলা হয়।
(2) نَصَارَى (নাসারা) نَصرَان এর বহুবচন। যেমন, سكَارَى سَكرَان এর বহুবচন। এর মূল ধাতু হল نصر (যার অর্থ সাহায্য-সহযোগিতা)। আপোসে একে অপরের সাহায্য করার কারণে তাদের এই নামকরণ হয়েছে। ওদেরকে 'আনসার'ও বলা হয়। যেমন তারা ঈসা (আঃ)-কে বলেছিল, {نَحْنُ اَنْصَارُ اللهِ} ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদেরকে নাসারা (খ্রিষ্টান) বলা হয় এবং তাদেরকে ঈসায়ীও বলা হয়।
(3) صَابِئِين صَابِئ- এর বহুবচন। এরা সেই লোক, যারা শুরুতে নিঃসন্দেহে কোন সত্য দ্বীনের অনুসারী ছিল। (আর এই জন্যই ক্বুরআনে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি তাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে।) পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে ফিরিশ্তা ও তারকা পূজার প্রচলন শুরু হয়। অথবা তারা কোন দ্বীনকেই মানত না। এই কারণেই যাদের কোন দ্বীন-ধর্ম নেই তাদেরকে 'স্বাবী' (বা স্বাবেয়ী) বলা হয়।
(4) আধুনিক অনেক মুফাসসির (?) এই আয়াতের (সঠিক) অর্থ অনুধাবন করতে ভুল করে থাকে এবং এ থেকে ধর্ম-ঐক্য (সকল ধর্ম সমান) হওয়ার দর্শন আওড়ানোর ঘৃণিত প্রয়াস চালায়। অর্থাৎ, তারা মনে করে যে, রিসালাতে মুহাম্মাদ (মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রসূল হওয়ার) উপর ঈমান আনা জরুরী নয়, বরং যে কেউ যে কোন ধর্মকে মানবে, সেই অনুযায়ী বিশ্বাস রাখবে এবং সৎকর্ম করবে, সে মুক্তি পেয়ে যাবে। এ দর্শন অতীব বিভ্রান্তিকর দর্শন। বলা বাহুল্য, আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হল, যখন মহান আল্লাহ পূর্বোক্ত আয়াতে ইয়াহুদীদের মন্দ কর্মসমূহ এবং তাদের অবাধ্যতার কারণে শাস্তিযোগ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করেন, তখন মানুষের মনে এই প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক ছিল যে, এই ইয়াহুদীদের মধ্যে যারা সত্যনিষ্ঠ, আল্লাহর কিতাবের অনুসারী এবং যারা নবীর আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেছে, তাদের সাথে আল্লাহ তাআলা কি আচরণ করেছেন? অথবা কি আচরণ করবেন? মহান আল্লাহ এই কথাটাই পরিষ্কার করে দিলেন যে, ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান এবং স্বাবেয়ীদের মধ্যে যারাই স্ব স্ব যুগে আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা সকলেই আখেরাতে মুক্তিলাভ করবে। অনুরূপ বর্তমানে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাতের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিমও যদি সঠিক পন্থায় আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনে সৎকর্মের প্রতি যত্ন নেয়, তবে সেও অবশ্যই অবশ্যই আখেরাতের চিরন্তন নিয়ামত লাভ করার অধিকারী হবে। আখেরাতে মুক্তির ব্যাপারে কারো সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। সেখানে নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার হবে। চাহে সে মুসলিম হোক অথবা শেষ নবীর পূর্বে অতিবাহিত কোন ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান বা স্বাবেয়ী ইত্যাদি যেই হোক না কেন। এই কথার সমর্থন কোন কোন মুরসাল আসার (ছিন্ন সনদে বর্ণিত সাহাবীর উক্তি) থেকে পাওয়া যায়। যেমন মুজাহিদ সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সালমান ফারেসী) বলেছেন, আমি নবী করীম (সাঃ)-কে আমার কিছু ধার্মিক সাথীর কথা জিজ্ঞাসা করলাম, যারা ইবাদতকারী ও নামাযী ছিল। (অর্থাৎ, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাতের পূর্বে তারা তাদের দ্বীনের সত্যিকার অনুসারী ছিল।) এই জিজ্ঞাসার উত্তরে এই আয়াত নাযিল হয়, {إِنَّ الَّذِيْنَ آَمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوْا} (ইবনে কাসীর) ক্বুরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারাও এর সমর্থন হয়। যেমন, {إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْأِسْلامُ} নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সুরা আলে ইমরান : ১৯)
{وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْأِسْلامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ} (সুরা আলে ইমরান : ৮৫) যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুসন্ধান করে, কস্মিনকালে তা তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না। বহু হাদীসেও নবী করীম (সাঃ) পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, এখন আমার রিসালাতের উপর ঈমান আনা ব্যতীত কোন ব্যক্তির মুক্তি হতে পারে না। যেমন, তিনি বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে সেই আল্লাহর শপথ! এই উম্মতের যে কেউ আমার (রিসালাতের) কথা শুনবে, তাতে সে ইয়াহুদী হোক অথবা খ্রিষ্টান, তারপর সে যদি আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, পরিচ্ছেদঃ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবূওয়াতের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব) অর্থাৎ, 'সকল ধর্ম সমান' এই বিভ্রান্তিকর ধারণা যেমন বহু ক্বুরআনী আয়াতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করারই ফল, তেমনি এর মাধ্যমে হাদীস ছাড়াই ক্বুরআন বুঝার ঘৃণিত প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছে। সুতরাং এ কথা সঠিক যে, সহীহ হাদীস ছাড়া ক্বুরআন বুঝা যেতে পারে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৩. আর স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম(১) এবং তোমাদের উপর উত্তোলন করেছিলাম তুর পর্বত; (বলেছিলাম,) আমরা যা দিলাম দৃঢ়তার সাথে(২) তা গ্রহণ কর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ রাখ, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।(৩)
১. আবুল আলীয়াহ বলেন, এ অঙ্গীকার ছিল, নিষ্ঠাসহকারে একমাত্র আল্লাহ্ ইবাদত করা। আর কারও ইবাদত না করা। [আত-তাফসীরুস সহীহ] তবে অন্যান্য তাফসীরকারগণ বলেন, এর সাথে সাথে অঙ্গীকারের অন্যান্য বিষয়াবলী আয়াতের শেষেই বর্ণিত হয়েছে।
২. আয়াতে বর্ণিত بِقُوَّةٍ এর তাফসীর কেউ করেছেন, দৃঢ়তার সাথে। কাতাদাহ করেছেন, গুরুত্বের সাথে আবুল আলীয়াহ বলেছেন, আনুগত্যের সাথে। আর মুজাহিদ বলেছেন, এর উপর আমল করার স্বীকারোক্তির সাথে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
৩. যখন মূসা আলাইহিস সালাম-কে তুর পর্বতে তাওরাত প্রদান করা হল, তখন তিনি ফিরে এসে তা ইসরাঈল-বংশধরকে দেখাতে ও শোনাতে আরম্ভ করলেন। এতে হুকুমগুলো কিছুটা কঠোর ছিল - কিন্তু তাদের অবস্থানুযায়ীই ছিল। এ সম্পর্কে প্রথম তারা এ কথাই বলেছিল যে, যখন স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে বলে দেবেন। যে, এটা আমার কিতাব' তখনই আমরা মেনে নেবো। (যে বর্ণনা উপরে চলে গেছে) মোটকথা যে সত্তরজন লোক মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে গিয়েছিল, তারাও ফিরে এসে সাক্ষী দিল। কিন্তু ইসরাঈল-বংশধররা পরিস্কারভাবে বলে দিল, আমাদের দ্বারা এ গ্রন্থের উপর আমল করা সম্ভব হবে না। ফলে আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাদেরকে হুকুম করলেন, তুর পর্বতের একটি অংশ তুলে নিয়ে তাদের মাথার উপর ঝুলিয়ে দাও এবং বল, হয় কিতাব মেনে নাও, নইলে এক্ষুণি মাথার উপর পড়লো। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তা মেনে নিতে হলো। এ আয়াতে বর্ণিত তুর পাহাড় উঠানোর তাফসীর আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে করে দিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে, “স্মরণ করুন, আমরা পর্বতকে তাদের উপরে উঠাই, আর তা ছিল যেন এক শামিয়ানা। তারা মনে করল যে, ওটা তাদের উপর পড়ে যাবে। বললাম, আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ওটাতে যা আছে তা স্মরণ কর” [সূরা আল-আ’রাফ: ১৭১]
তাফসীরে জাকারিয়া৬৩। (স্মরণ কর) যখন তোমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তোমাদের ঊর্ধ্বে ‘ত্বুর’ পর্বতকে উত্তোলন করেছিলাম, (1) (বলেছিলাম,) ‘আমি যা (গ্রন্থ) দিলাম (সেই গ্রন্থে যে নির্দেশ আছে) দৃঢ়তার সাথে তোমরা তা গ্রহণ কর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ রাখ, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার।’
(1) যখন তাওরাতের বিধানের ব্যাপারে ইয়াহুদীরা অবাধ্যতামূলক আচরণ প্রকাশ করে বলল যে, এই বিধানগুলোর উপর আমল করা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়, তখন মহান আল্লাহ ত্বূর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর ছায়ামন্ডপের মত তুলে ধরলেন। ফলে ভয়ে তারা আমল করার অঙ্গীকার করল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৪. এরপরও তোমরা মুখ ফিরালে! অতঃপর তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা না থাকলে তোমরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে।(১)
১. এ আয়াতের সম্বোধন বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে সমস্ত ইয়াহুদীদের করা হচ্ছে, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে উপস্থিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ঈমান না আনাও যেহেতু উল্লেখিত প্রতিজ্ঞা ভংগেরই অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু তাদেরকে পূর্বোক্ত প্রতিজ্ঞা ভংগকারীদের আওতাভুক্ত করে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে যে, এরপরও আমি দুনিয়াতে তোমাদের উপর তেমন কোন আযাব নাযিল করিনি, যেমনটি পূর্বকালে প্রতিজ্ঞা ভংগকারীদের উপর নাযিল হয়ে থাকত। এটা একান্তই আল্লাহর রহমত।
তাফসীরে জাকারিয়া৬৪। এর পরেও তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৫. আর তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সীমালংঘন করেছিল তাদেরকে তোমরা নিশ্চিতভাবে জেনেছিলে(১)। ফলে আমরা তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও।
১. আয়াতে বর্ণিত এ ঘটনাটি দাউদ আলাইহিস সালাম-এর আমলেই সংঘটিত হয়। ইসরাঈল-বংশধরদের জন্য শনিবার ছিল পবিত্র এবং সাপ্তাহিক উপাসনার জন্য নির্ধারিত দিন। এ দিন মৎস শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকূলের অধিবাসী ছিল বলে মৎস শিকার ছিল তাদের প্রিয় কাজ। তারা প্রথম প্রথম কলা-কৌশলের অন্তরালে এবং পরে সাধারণ পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে মৎস শিকার করতে থাকে। এতে তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল ছিল সৎ ও বিজ্ঞ লোকদের। তারা এ অপকর্মে বাধা দিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ বিরত হলো না। অবশেষে তারা এদের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথক হয়ে গেলেন। এমনকি বাসস্থানও দুই ভাগে ভাগ করে নিলেন। একভাগে অবাধ্যরা বসবাস করতো আর অপর ভাগে সৎ ও বিজ্ঞজনেরা বাস করতেন। একদিন তারা অবাধ্যদের বস্তিতে অস্বাভাবিক নীরবতা লক্ষ্য করলেন।
অতঃপর সেখানে পৌছে দেখলেন যে, সবাই বিকৃত হয়ে বানরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। কাতাদাহ বলেন, তাদের যুবকরা বানরে এবং বৃদ্ধরা শুকরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। রূপান্তরিত বানররা নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনকে চিনতো এবং তাদের কাছে এসে অঝোরে অশ্রু বিসর্জন করতো। হাদীসে এসেছে, জনৈক সাহাবী একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের যুগের বানর ও শুকরগুলো কি সেই রূপান্তরিত ইয়াহুদী সম্প্রদায়? তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা'আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন তখন তিনি তাদের অবশিষ্ট বংশধর রাখেন না। বস্তুতঃ বানর ও শূকর পৃথিবীতে তাদের পূর্বেও ছিল। [মুসলিমঃ ২৬৬৩] সুতরাং বর্তমান বানরদের সাথে রূপান্তরিত বানর ও শূকরের কোন সম্পর্ক নেই। দেখুন, [আত-তাফসীরুস সহীহ] যেমনিভাবে এ ধারণা করারও কোন সুযোগ নেই যে, মানুষ কোন এক সময় বানরের বংশধর ছিল।
তাফসীরে জাকারিয়া৬৫। তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারে (1) (বিশ্রামের দিনে) সীমালংঘন করেছিল, তাদেরকে তোমরা নিশ্চিতভাবে জান। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’
(1) শনিবারের দিন ইয়াহুদীদেরকে মাছ ধরতে এবং অন্যান্য যে কোনও পার্থিব কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা একটি বাহানা বানিয়ে আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করল। শনিবারের দিন (পরীক্ষা স্বরূপ) মাছ সংখ্যায় অনেক বেশী আসত। তারা খাল কেটে নিল, তাতে মাছগুলো আটকা পড়ে যেত এবং পরদিন রবিবারে সেগুলো ধরে নিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৬. অতএব আমরা এটা করেছি তাদের সমকালীন ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি(১)। আর মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ(২)।
১. এ তাফসীর আবুল আলীয়াহ থেকে বর্ণিত। পক্ষান্তরে মুজাহিদ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এর অর্থ “আমরা এটাকে তাদের এ ঘটনার পূর্বের গুনাহ এবং এ ঘটনার গোনাহের জন্য শাস্তি হিসেবে নির্ধারণ করে দিলাম”। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অর্থাৎ আল্লাহ তাদের শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে দিলেন।
২. এ ঘটনা মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইয়াহুদীরা যে অন্যায় করেছে তোমরা তা করতে যেও না। এতে তোমরা ইয়াহুদীদের মত আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা বাহানা করে হালাল করে ফেলবে”। [ইবনে বাত্তাহ: ইবতালুল হিয়াল ৪৬, ৪৭]
তাফসীরে জাকারিয়া৬৬। আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীকালের লোকেদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত এবং সাবধানীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ করেছি।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৭. আর স্মরণ কর(১), যখন মূসা তার জাতিকে বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিয়েছেন, তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ? মূসা বললেন, আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।
১. এ ঘটনার সংক্ষিপ্তবিবরণ এই যে, ইসরাঈল-বংশধরদের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। হত্যাকারী কে? তা জানা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তখন, আল্লাহ তাদেরকে একটি গরু জবাই করতে নির্দেশ দেন। ইসরাঈল-বংশধররা কোন বাদানুবাদে প্রবৃত্ত না হলে এতসব শর্তও আরোপিত হতো না, বরং যেকোন গরু জবাই করলেই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু তারা প্রশ্ন করে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে নেয়। শেষ পর্যন্ত তারা সেটা করতে সমর্থ হয়। তারপর গরু জবাই করার পর মৃতদেহে সে গরুর গোশতের টুকরো স্পর্শ করাতেই সে জীবিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীর নাম বলে তৎক্ষণাৎ আবার মারা যায়। [ইবনে কাসীর থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া৬৭। আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহর আদেশ দিচ্ছেন’, (1) তখন তারা বলেছিল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ?’ মূসা বলল, ‘আমি অজ্ঞদের দলভুক্ত হওয়া হতে আল্লাহর শরণ নিচ্ছি।’
(1) বানী-ইস্রাঈলদের মধ্যে একজন সন্তানহীন বিত্তশালী লোক ছিল। তার উত্তরাধিকার বলতে কেবল তার এক ভাইপো ছিল। এক রাতে এই ভাইপো চাচাকে হত্যা করে তার লাশ অন্য লোকের দরজায় ফেলে দিল। সকালে হত্যাকারীর খোঁজে সবাই একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত খবর মূসা (আঃ)-এর নিকটে পৌঁছলে তাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দেওয়া হল। সেই গাভীর কোন অংশ নিয়ে মৃত ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করা হলে সে জীবিত হয়ে তার হত্যাকারী কে - তা জানিয়ে দিয়ে পুনরায় মৃত্যুবরণ করল। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৮. তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার রবকে আহবান কর তিনি যেন আমাদেরকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সেটা কিরূপ? মূসা বললেন, আল্লাহ বলছেন, সেটা এমন গাভী যা বৃদ্ধও নয়, অল্পবয়স্কও নয়, মধ্যবয়সী। অতএব তোমাদেরকে যে আদেশ করা হয়েছে তা পালন কর”।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৬৮। তারা বলল, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টরূপে জানিয়ে দিতে বল, ঐ গাভীটি কিরূপ?’ মূসা বলল, ‘আল্লাহ বলছেন, এ এমন একটি গাভী যা বৃদ্ধা নয়, অল্প বয়স্কও নয়, মধ্য বয়সী। অতএব তোমরা যা আদেশ পেয়েছে তা পালন কর।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৯. তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার রবকে ডাক, সেটার রং কি, তা যেন আমাদেরকে বলে দেন। মূসা বললেন, তিনি বলেছেন, সেটা হলুদ বর্ণের গাভী, উজ্জ্বল গাঢ় রং বিশিষ্ট, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়’।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৬৯। তারা বলল, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টরূপে জানিয়ে দিতে বল, তার (গাভীটির) রঙ কি?’ মূসা বলল, ‘আল্লাহ বলছেন, তা হলুদ বর্ণের গাভী, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়; যা দর্শকদেরকে আনন্দ দেয়।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭০. তারা বলল, তোমার রবকে আহবান কর, তিনি যেন আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, সেটা কোনটি? নিশ্চয় গাভীটি আমাদের জন্য সন্দেহপূর্ণ হয়ে গেছে। আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে আমরা নিশ্চয় দিশা পাব’।(১)
১. ইকরিমাহ বলেন, যদি তারা “আল্লাহ ইচ্ছে করলে” বাক্য না বলত, তবে কখনই সে ধরনের গরু খুঁজে পেত না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া৭০। তারা বলল, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল, গরুটি কি ধরনের? আমাদের নিকট গরু তো পরস্পর সাদৃশ্যশীল মনে হয়। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় আমরা পথ পাব।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান