-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬১. অতঃপর তারা উভয়ে যখন দু’সাগরের মিলনস্থলে পৌঁছল তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; ফলে সেটা সুড়ঙ্গের মত নিজের পথ করে সাগরে নেমে গেল।(১)
(১) মাছের সমুদ্রে চলে যাওয়ার কথাটি প্রথমবার سَرَبًا শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ সুড়ঙ্গ। পাহাড়ে রাস্তা তৈরী করার জন্য অথবা শহরে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরী করার উদ্দেশ্যে সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। এ থেকে জানা গেল যে, মাছটি সমুদ্রের যেদিকে যেত, সেদিকে একটি সুড়ঙ্গের মত পথ তৈরী হয়ে যেত। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] উপরোক্ত হাদীস থেকে তা-ই জানা যায়। দ্বিতীয় বার যখন ইউশা ইবন নূন দীর্ঘ সফরের পর এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন, তখন (وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا) শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে عَجَبًا শব্দের অর্থ: আশ্চর্যজনকভাবে। উভয় বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা, পানিতে সুড়ঙ্গ তৈরী হওয়া স্বয়ং একটি অভ্যাসবিরুদ্ধ আশ্চর্য ঘটনা। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬১) তারা যখন উভয় (সমুদ্রে)র সঙ্গম স্থলে পৌঁছল, তখন নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; অথচ ওটা সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬২. অতঃপর যখন তারা আরো অগ্রসর হল মূসা তার সঙ্গীকে বললেন, আমাদের দুপুরের খাবার আন, আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬২) যখন তারা আরো অগ্রসর হল, তখন মূসা তার সঙ্গীকে বলল, ‘আমাদের নাশতা আনো, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৩. সে বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন মাছের যা ঘটেছিল আমি তা আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম শয়তানই সেটার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; আর মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সাগরে নেমে গেল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৩) সে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই ওর কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’ [1]
[1] অর্থাৎ, মাছটি জীবিত হয়ে সমুদ্রের মধ্যে চলে যায় এবং তার জন্য মহান আল্লাহ সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ বানিয়ে দেন। ইউশা’ (আঃ) মাছটিকে সমুদ্রে যেতে এবং পথ সৃষ্টি হতে দেখেছিলেন, কিন্তু মূসা (আঃ)-কে এ কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। এমন কি সেখানে বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন। এই দিন এবং দিনের পরে রাত সফর করে যখন দ্বিতীয় দিনে মূসা (আঃ) ক্লান্তি ও ক্ষুধা অনুভব করলেন, তখন তিনি তাঁর যুবক সাথীকে বললেন, চল খাবার খেয়ে নিই। তিনি বললেন, যেখানে পাথরে হেলান দিয়ে আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম, মাছটি সেখানে জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে গেছে এবং সেখানে বিস্ময়করভাবে সে তাঁর পথ বানিয়ে নিয়েছে। আর এ কথা আপনাকে বলতে আমি ভুলে গেছি। আসলে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৪. মূসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম(১) তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। এরপর তারা সাক্ষাত পেল আমাদের।
(১) অর্থাৎ আমাদের গন্তব্যের এ নিশানীটিই তো আমাকে বলা হয়েছিল। এ থেকে স্বতঃস্ফৰ্তভাবে এ ইংগিতই পাওয়া যায় যে, আল্লাহর ইংগিতেই মূসা আলাইহিস সালাম এ সফর করছিলেন। তার গন্তব্য স্থলের চিহ্ন হিসেবে তাকে বলে দেয়া হয়েছিল যে, যেখানে তাদের খাওয়ার জন্য নিয়ে আসা মাছটি অদৃশ্য হয়ে যাবে সেখানে তারা আল্লাহর সেই বান্দার দেখা পাবেন, যার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৪) মূসা বলল, ‘আমরা তো সেটারই অনুসন্ধান করছিলাম।’ অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলতে লাগল। [1]
[1] মূসা (আঃ) বললেন, আল্লাহর বান্দা! যেখানে মাছটি জীবিত হয়ে অদৃশ্য হয়েছে, সেটাই হচ্ছে আমাদের ঐ গন্তব্যস্থল, যার খোঁজে আমরা সফর করছি। তাই নিজেদের পায়ের চিহ্নকে অনুসরণ করে সেদিকেই প্রত্যাবর্তন করলেন, যেদিক থেকে এসেছিলেন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে ফিরে গেলেন। قَصَصًا এর অর্থ, পিছনে পড়া, পিছে পিছে চলা। অর্থাৎ, পায়ের চিহ্নকে অনুসরণ করে তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৫. এরপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।(১)
(১) কুরআনুল করীমে ঘটনার মূল ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং (عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا) (আমার বান্দাদের একজন) বলা হয়েছে। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খাদির” উল্লেখ করা হয়েছে। খাদির অর্থ সবুজ-শ্যামল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২] খাদির কি নবী ছিলেন, না ওলী ছিলেন, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য আলেমদের মতে, খাদির ‘আলাইহিস সালামও একজন নবী। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের;[1] যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ[2] দান করেছিলাম ও যাকে আমি আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। [3]
[1] এই দাস বা বান্দা হলেন খাযির। বহু সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এটা বর্ণিত হয়েছে। ‘খাযির’-এর অর্থ সবুজ-শ্যামল। তিনি একদা সাদা যমীনের উপর বসলে, যমীনের সেই অংশটুকু তাঁর নীচে দিয়ে সবুজ হয়ে উঠে। এই কারণেই তাঁর নাম হয়ে যায় ‘খাযির’। (বুখারীঃ সূরা কাহ্ফের তাফসীর)
[2] رَحْمَةٌ এর অর্থ কোন কোন মুফাসসির নিয়েছেন বিশেষ অনুগ্রহ যা আল্লাহ তাঁর এই বিশিষ্ট বান্দাকে প্রদান করেছিলেন। তবে অধিকাংশ মুফাস্সির এর অর্থ নিয়েছেন নবুঅত।
[3] এটা মূসা (আঃ)-এর কাছে যে জ্ঞান ছিল সেই নবুঅত ছাড়াও এমন সৃষ্টিগত বিষয়ের এমন জ্ঞান, যে জ্ঞান দানে মহান আল্লাহ কেবল খাযিরকেই ধন্য করেছিলেন এবং মূসা (আঃ)-এর কাছেও এ জ্ঞান ছিল না। এটাকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করে কোন কোন সুফিপন্থীরা দাবী করে যে, আল্লাহ তাআলা নবী নন এমন কোন কোন লোককে, ‘ইলমে লাদুন্নী’ (বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান) দানে ধন্য করেন। আর এ জ্ঞান কোন শিক্ষক ছাড়াই কেবল আল্লাহর অপার দয়া ও করুণায় লব্ধ হয় এবং এই ‘বাতেনী ইলম’ (গুপ্ত জ্ঞান) শরীয়তের বাহ্যিক জ্ঞান -- যা কুরআন ও হাদীস আকারে বিদ্যমান তা -- থেকে ভিন্ন হয়, বরং কখনো কখনো তার বিপরীত ও বিরোধীও হয়। কিন্তু এ দলীল এই জন্য সঠিক নয় যে, তাঁকে যে কিছু বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মহান আল্লাহ নিজেই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অথচ অন্য কারো জন্য এ ধরনের কথা বলা হয়নি। যদি এটাকে ব্যাপক করে দেওয়া হয়, তবে প্রত্যেক যাদুকর-ভেল্কিবাজ এই ধরনের দাবী করতে পারে। তাই তো সুফিবাদীদের মাঝে এই দাবী ব্যাপকহারে বিদ্যমান। তবে এই ধরনের দাবীর কোনই মূল্য নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৬. মূসা তাকে বললেন, যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন, যা দ্বারা আমি সঠিক পথ পাব, এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?(১)
(১) এখানে মূসা 'আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবী ও শীর্ষস্থানীয় রাসূল হওয়া সত্বেও খাদির ‘আলাইহিস সালাম-এর কাছে সবিনয় প্রার্থনা করেছিলেন যে, আমি আপনার জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আপনার সাহচর্য কামনা করি। এ থেকে বোঝা গেল যে, ছাত্রকে অবশ্যই উস্তাদের সাথে আদব রক্ষা করতে হবে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) মূসা তাকে বলল, ‘সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন -- এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৭. সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সংগে ধৈৰ্য ধারণ করে থাকতে পারবেন না,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৭) সে বলল, ‘তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৮. যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন কেমন করে?(১)
(১) খাদির ‘আলাইহিস সালাম মূসা (আলাইহিস সালাম-কে বললেনঃ আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৮) যে বিষয় তোমার জ্ঞানায়ত্ত নয়,[1] সে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ করবে কেমন করে?’
[1] অর্থাৎ, যে ব্যাপারে তোমার পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬৯. মূসা বললেন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৯) মূসা বলল, ‘ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ চাইলে) আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭০. সে বলল, আচ্ছা, আপনি যদি আমার অনুসরণ করবেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না। আমি সে বিষয়ে আপনাকে কিছু বলি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) সে বলল, আচ্ছা, ‘তুমি যদি আমার অনুসরণ কর-ই, তাহলে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলি।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান