بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৩৯/ আয-যুমার | Az-Zumar | ٱلزُّمَر আয়াতঃ ৭৫ মাক্কী

৩৯ : ৫১

فَاَصَابَهُمۡ سَیِّاٰتُ مَا كَسَبُوۡا ؕ وَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡ هٰۤؤُلَآءِ سَیُصِیۡبُهُمۡ سَیِّاٰتُ مَا كَسَبُوۡا ۙ وَ مَا هُمۡ بِمُعۡجِزِیۡنَ ﴿۵۱﴾

فاصابهم سیات ما كسبوا و الذین ظلموا من هؤلآء سیصیبهم سیات ما كسبوا و ما هم بمعجزین ﴿۵۱﴾
সুতরাং তাদের কৃতকর্মের মন্দ ফল তাদের উপর আপতিত হয়েছিল। এদের মধ্যেও যারা যুলম করে তাদের উপরেও তাদের অর্জনের সব মন্দফল শীঘ্রই আপতিত হবে। আর তারা অক্ষম করতে পারবে না।

-আল-বায়ান

তাদের কর্মের খারাপ পরিণাম তাদের উপর পতিত হয়েছিল। আর এদের মধ্যেও যারা যুলম করেছে তাদের কর্মের মন্দ পরিণাম এদেরই উপর পতিত হবে। এরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না।

-তাইসিরুল

তাদের কর্মের মন্দ ফল তাদের উপর আপতিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা যুল্‌ম করে তাদের উপরও তাদের কর্মের মন্দ ফল আপতিত হবে এবং তারা ব্যর্থও করতে পারবেনা।

-মুজিবুর রহমান

And the evil consequences of what they earned struck them. And those who have wronged of these [people] will be afflicted by the evil consequences of what they earned; and they will not cause failure.

-Sahih International

৫১. সুতরাং তাদের কৃতকর্মের মন্দ ফল তাদের উপর আপতিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা যুলুম করে তাদের উপরও শীঘ্রই আপতিত হবে তারা যা অর্জন করেছে তার মন্দ ফল এবং তারা অপারগ করতে পারবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) সুতরাং ওদের দুষ্কর্মের পাপরাশি ওদের উপর আপতিত হয়েছে।[1] আর ওদের মধ্যে যারা সীমালংঘন করে, তাদেরও দুষ্কর্মের পাপরাশি তাদের উপর আপতিত হবে এবং ওরা আল্লাহর শাস্তি ব্যাহত করতে পারবে না। [2]

[1] ‘পাপরাশি’ বলতে এখানে তাদের পাপরাশির মন্দ ফল বা শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। শব্দের মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য রেখে পাপের মন্দ ফলকে পাপ বলা হয়েছে। যেমন, ﴿وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا﴾ তে বলা হয়েছে। তাছাড়া পাপের শাস্তি পাপ নয়।

[2] এ হল মক্কার কাফেরদের জন্য হুঁশিয়ারি। আর হলও তাই। এরাও বিগত জাতির মত অনাবৃষ্টি, হত্যা এবং বন্দিদশা ইত্যাদির শিকার হয়। আল্লাহর পক্ষ হতে আগত এই আযাবগুলোকে তারা রোধ করতে পারেনি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫২

اَوَ لَمۡ یَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۵۲﴾

او لم یعلموا ان الله یبسط الرزق لمن یشآء و یقدر ان فی ذلك لایت لقوم یؤمنون ﴿۵۲﴾
তারা কি জানে না, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন রিয্ক প্রশস্ত করে দেন আর সঙ্কুচিত করে দেন? নিশ্চয় এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।

-আল-বায়ান

এরা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে রিযক প্রশস্ত করেন আর (যার জন্য ইচ্ছে) সংকুচিত করেন? মু’মিন লোকদের জন্য অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন আছে।

-তাইসিরুল

তারা কি জানেনা, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার রিয্ক বৃদ্ধি করেন অথবা হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য।

-মুজিবুর রহমান

Do they not know that Allah extends provision for whom He wills and restricts [it]? Indeed in that are signs for a people who believe.

-Sahih International

৫২. তারা কি জানে না, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে রিযিক প্রশস্ত করেন, আর সীমিত করেন? নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ঈমান আনে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) ওরা কি জানে না যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার রুযী বর্ধিত করেন অথবা হ্রাস করেন? এতে অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।[1]

[1] অর্থাৎ, রুযীর প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতার মধ্যেও আল্লাহর তাওহীদের দলীল বিদ্যমান। অর্থাৎ, এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্বজাহানে কেবল তাঁরই নির্দেশ ও কর্তৃত্ব চলে। তাঁরই পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা কার্যকর ও প্রভাবশীল। এই জন্য তিনি যাকে চান তাকে প্রচুর ধন দিয়ে ধন্য করেন এবং যাকে চান তাকে অভাব-অনটনে নাজেহাল করেন। তাঁর এই বিচার-বিবেচনায় -- যা তাঁর সুকৌশল ও ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত -- না কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে, আর না তাতে কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে। তবে এই নিদর্শনাবলী কেবল ঈমানদারদের জন্যই ফলপ্রসূ হয়। কেননা, তারাই এগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে উপকৃত হয় এবং আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৩

قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵۳﴾

قل یعبادی الذین اسرفوا علی انفسهم لا تقنطوا من رحمۃ الله ان الله یغفر الذنوب جمیعا انهٗ هو الغفور الرحیم ﴿۵۳﴾
বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

-আল-বায়ান

বল- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।

-তাইসিরুল

বলঃ (আমার এ কথা) হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ - আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-মুজিবুর রহমান

Say, "O My servants who have transgressed against themselves [by sinning], do not despair of the mercy of Allah. Indeed, Allah forgives all sins. Indeed, it is He who is the Forgiving, the Merciful."

-Sahih International

৫৩. বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(১)

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায় হত্যা করেছিল এবং অনেক করেছিল। আরও কিছু লোক ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করল: আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম, কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এই যে, আমরা অনেক জঘন্য গোনাহ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় ৷ [বুখারী: ৪৮১০, মুসলিম: ১২২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [1]

[1] এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর মহা ক্ষমাশীলতার কথা বর্ণনা করেছেন। إسرَاف ‘ইসরাফ’ অর্থ পাপের আধিক্য ও তার প্রাচুর্য। ‘‘আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না’’ এর অর্থ, ঈমান আনার পূর্বে অথবা তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে যতই গুনাহ করে থাক, মানুষ যেন এই মনে না করে যে, আমি তো অনেক বড় পাপী, আমাকে আল্লাহ কিভাবে ক্ষমা করবেন? বরং সত্য হৃদয়ে যদি ঈমান আনে বা নিষ্ঠার সাথে যদি তওবা করে, তবে মহান আল্লাহ সমস্ত পাপকে মাফ করে দেবেন। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণিক ঘটনা থেকেও এই অর্থই সাব্যস্ত হয়। কিছু কাফের ও মুশরিক এমন ছিল, যারা প্রচুর হত্যা ও ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। এরা নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, আপনার দাওয়াত তো সঠিক, কিন্তু আমরা অনেক পাপের পাপী। যদি আমরা ঈমান আনি, তবে এই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে কি? এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা যুমার) তবে এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় খুব পাপ করে যাও।
তাঁর যাবতীয় বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদির ব্যাপারে কোনই পরোয়া করো না এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা ও নিয়ম-নীতি নিষ্ঠুরতার সাথে লঙ্ঘন করে যাও। এইভাবে তাঁর ক্রোধ ও প্রতিশোধকে আহবান জানিয়ে তাঁর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশা করা একেবারে বোকামি ও খামখেয়ালী। এটা হল নিম ফলের বীজ লাগিয়ে আঙ্গুর ফলের আশা রাখার মতই। এই ধরনের মানুষের স্মরণ রাখা উচিত যে, তিনি যেমন তাঁর বান্দাদের জন্য غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ তেমনি তিনি তাঁর অবাধ্যজনদের জন্য عَزِيْزٌ ذُو اْنْتِقَامٍ ও বটে।

তাই তো কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে এই উভয় দিককে এক সাথেই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, ﴿نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ، وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ﴾ অর্থাৎ, আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা হিজর ৪৯-৫০ আয়াত) সম্ভবতঃ এটাই কারণ যে, এখানে আয়াতের আরম্ভ يَا عِبَادِيْ (হে আমার বান্দাগণ!) দিয়ে হয়েছে। যার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে অথবা সত্য হৃদয়ে তওবা করে প্রকৃত অর্থে সে তাঁর বান্দা হয়ে যাবে, তার পাপ যদি সমুদ্রের ফেনা বরাবরও হয়, তবুও তা মাফ হয়ে যাবে। তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়াবান। যেমন, হাদীসে একশত মানুষের খুনীর তওবার ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। (বুখারীঃ আম্বিয়া অধ্যায়, মুসলিমঃ তওবা অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৪

وَ اَنِیۡبُوۡۤا اِلٰی رَبِّكُمۡ وَ اَسۡلِمُوۡا لَهٗ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَكُمُ الۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنۡصَرُوۡنَ ﴿۵۴﴾

و انیبوا الی ربكم و اسلموا لهٗ من قبل ان یاتیكم العذاب ثم لا تنصرون ﴿۵۴﴾
আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর। তার (আযাব আসার) পরে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

-আল-বায়ান

তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও আর তাঁর অনুগত হও তোমাদের কাছে ‘আযাব আসার পূর্বে। (‘আযাব এসে গেলে) তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

-তাইসিরুল

তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ কর তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

And return [in repentance] to your Lord and submit to Him before the punishment comes upon you; then you will not be helped.

-Sahih International

৫৪. আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ কর তোমাদের কাছে শাস্তি আসার আগে; তার পরে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ কর; শাস্তি এসে পড়লে তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৫

وَ اتَّبِعُوۡۤا اَحۡسَنَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكُمۡ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَكُمُ الۡعَذَابُ بَغۡتَۃً وَّ اَنۡتُمۡ لَا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿ۙ۵۵﴾

و اتبعوا احسن ما انزل الیكم من ربكم من قبل ان یاتیكم العذاب بغتۃ و انتم لا تشعرون ﴿۵۵﴾
আর অনুসরণ কর উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে আযাব আসার পূর্বে। অথচ তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে না।

-আল-বায়ান

তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে যাকে উত্তম আখ্যায়িত করা হয়েছে তোমরা সেগুলোর অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অকস্মাৎ ‘আযাব এসে যাওয়ার পূর্বে যে বিষয়ে তোমরা টেরও পাবে না।

-তাইসিরুল

অনুসরণ কর তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট হতে উত্তম যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার, তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে তোমাদের অজ্ঞাতে শাস্তি আসার পূর্বে –

-মুজিবুর রহমান

And follow the best of what was revealed to you from your Lord before the punishment comes upon you suddenly while you do not perceive,

-Sahih International

৫৫. আর তোমরা তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ কর(১), তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে শাস্তি আসার আগে, অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।

(১) এখানে ‘উত্তম অবতীর্ণ বিষয়’ বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। সমগ্র কুরআনই উত্তম। একে এদিক দিয়েও উত্তম বলা যায় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর ইত্যাদি যত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, তন্মধ্যে উত্তম ও পূর্ণতম কিতাব হচ্ছে কুরআন। অথবা, আল্লাহর কিতাবের সর্বোত্তম দিকসমূহ অনুসরণ করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা যেসব কাজের নির্দেশ দিয়েছেন মানুষ তা পালন করবে। তিনি যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবে এবং উপমা ও কিসসা-কাহিনীতে যা বলেছেন তা থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্ৰহণ করবে। অপরদিকে যে ব্যক্তি তাঁর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, নিষিদ্ধ কাজসমূহ করে এবং আল্লাহর উপদেশ বাণীর কানা কড়িও মূল্য দেয় না, সে আল্লাহর কিতাবের এমন দিক গ্ৰহণ করে যাকে আল্লাহর কিতাব নিকৃষ্টতম দিক বলে আখ্যায়িত করে। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৫) তোমাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের ওপর অতর্কিতে শাস্তি আসার পূর্বে তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে, তার অনুসরণ কর।[1]

[1] অর্থাৎ, আযাব আসার পূর্বে তওবা এবং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হয়ে যাও। কেননা, যখন আযাব আসবে, তখন তার কোন খবর তোমাদের থাকবে না এবং তোমরা টেরও পাবে না। এ থেকে পার্থিব আযাব বুঝানো হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৬

اَنۡ تَقُوۡلَ نَفۡسٌ یّٰحَسۡرَتٰی عَلٰی مَا فَرَّطۡتُّ فِیۡ جَنۡۢبِ اللّٰهِ وَ اِنۡ كُنۡتُ لَمِنَ السّٰخِرِیۡنَ ﴿ۙ۵۶﴾

ان تقول نفس یحسرتی علی ما فرطت فی جنب الله و ان كنت لمن السخرین ﴿۵۶﴾
যাতে কাউকেও বলতে না হয়, ‘হায় আফসোস! আল্লাহর হক আদায়ে আমি যে শৈথিল্য করেছিলাম তার জন্য। আর আমি কেবল ঠাট্টা-বিদ্রূপকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম’।

-আল-বায়ান

যাতে কাউকে বলতে না হয়- হায় আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি (আমার কর্তব্যে) অবহেলা করেছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

-তাইসিরুল

যাতে কেহকেও বলতে না হয়ঃ হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস! আমিতো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

-মুজিবুর রহমান

Lest a soul should say, "Oh [how great is] my regret over what I neglected in regard to Allah and that I was among the mockers."

-Sahih International

৫৬. যাতে কাউকেও বলতে না হয়, হায় আফসোস! আল্লাহ্‌র প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য(১)! আর আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাহান্নামবাসীকেই জান্নাতে তার যে স্থানটি ছিল তা দেখানো হবে, তখন সে বলবে, হায় যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত করত ফলে তা তার জন্য আফসোসের কারণ হবে। আর প্রত্যেক জান্নাতবাসীকেই জাহান্নামে তার যে স্থানটি ছিল তা দেখানো হবে; তখন সে বলবে, হায় যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত না করত তবে আমার কি হতো! ফলে সেটা তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হিসেবে দেখা দিবে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন।’ [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৩৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) যাতে কাউকেও বলতে না হয়, ‘হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি তো শৈথিল্য করেছি।[1] আর অবশ্যই আমি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারীদের একজন ছিলাম।’

[1] فِي جَنْبِ اللهِ এর অর্থ, আল্লাহর আনুগত্য। অর্থাৎ, কুরআন অনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে শৈথিল্য। অথবা جَنْبٌ এর অর্থ, নিকট ও পাশে হওয়া। অর্থাৎ, আল্লাহর নৈকট্য (বা জান্নাত) কামনা করার ব্যাপারে শৈথিল্য করেছি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৭

اَوۡ تَقُوۡلَ لَوۡ اَنَّ اللّٰهَ هَدٰىنِیۡ لَكُنۡتُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿ۙ۵۷﴾

او تقول لو ان الله هدىنی لكنت من المتقین ﴿۵۷﴾
অথবা যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, ‘আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দিতেন তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম’।

-আল-বায়ান

অথবা এ কথা যেন বলতে না হয় যে, আল্লাহ যদি আমাকে সঠিক পথ দেখাতেন, তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

-তাইসিরুল

অথবা কেহ যেন না বলেঃ আল্লাহ আমাকে পথ প্রদর্শন করলে আমিতো অবশ্যই মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

-মুজিবুর রহমান

Or [lest] it say, "If only Allah had guided me, I would have been among the righteous."

-Sahih International

৫৭. অথবা কেউ যেন না বলে, হায়! আল্লাহ্‌ আমাকে হিদায়াত করলে আমি তো অবশ্যই মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৭) অথবা কেউ না বলে, ‘আল্লাহ আমাকে পথপ্রদর্শন করলে আমি তো অবশ্যই সাবধানীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ [1]

[1] অর্থাৎ, যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করতেন, তবে আমি শিরক এবং পাপাচার থেকে বেঁচে যেতাম। এটা ঠিক মুশরিকদের উক্তির মতই; যা অন্যত্র উদ্ধৃত হয়েছে।﴿لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا﴾ ‘‘যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহলে আমরা শিরক করতাম না।’’ (সূরা আনআমঃ ১৪৮) তাদের এই কথা كَلِمَةُ حَقٍّ أُرِيْدَ بِهِ الْبَاطِلُ (কথা ভালো কিন্তু উদ্দেশ্য মন্দ) এর মতনই। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৮

اَوۡ تَقُوۡلَ حِیۡنَ تَرَی الۡعَذَابَ لَوۡ اَنَّ لِیۡ كَرَّۃً فَاَكُوۡنَ مِنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۵۸﴾

او تقول حین تری العذاب لو ان لی كرۃ فاكون من المحسنین ﴿۵۸﴾
অথবা আযাব প্রত্যক্ষ করার সময় যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, ‘যদি একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ আমার হত, তাহলে আমি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম’।

-আল-বায়ান

অথবা শাস্তি দেখার পর কাউকে যেন বলতে না হয়, আমাকে যদি একবার (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

-তাইসিরুল

অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলে যেন কেহকে বলতে না হয়ঃ আহা! যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত তাহলে আমি সৎকর্মশীল হতাম।

-মুজিবুর রহমান

Or [lest] it say when it sees the punishment, "If only I had another turn so I could be among the doers of good."

-Sahih International

৫৮. অথবা শাস্তি দেখতে পেলে যেন কাউকেও বলতে না হয়, হায়! যদি একবার আমি ফিরে যেতে পারতাম তবে আমি মুহসিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলে যেন কাকেও বলতে না হয়, ‘হায়! যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত, তাহলে আমি সৎকর্মপরায়ণ হতাম।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৫৯

بَلٰی قَدۡ جَآءَتۡكَ اٰیٰتِیۡ فَكَذَّبۡتَ بِهَا وَ اسۡتَكۡبَرۡتَ وَ كُنۡتَ مِنَ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۵۹﴾

بلی قد جآءتك ایتی فكذبت بها و استكبرت و كنت من الكفرین ﴿۵۹﴾
হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার কাছে আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলোকে অস্বীকার করেছিলে এবং তুমি অহঙ্কার করেছিলে। আর তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

-আল-বায়ান

(তাকে উত্তর দেয়া হবে) না, বরং তোমার কাছে আমার নিদর্শন এসেছিল, তখন তুমি সেগুলোকে মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিলে, অহংকার করেছিলে আর কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

-তাইসিরুল

প্রকৃত ব্যাপারতো এই যে, আমার নিদর্শন তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি এগুলিকে মিথ্যা বলেছিলে এবং অহংকার করেছিলে; আর তুমিতো ছিলে কাফিরদের একজন।

-মুজিবুর রহমান

But yes, there had come to you My verses, but you denied them and were arrogant, and you were among the disbelievers.

-Sahih International

৫৯. হ্যাঁ, অবশ্যই আমার নিদর্শন তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি এগুলোতে মিথ্যারোপ করেছিলে এবং অহংকার করেছিলে; আর তুমি ছিলে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) (আল্লাহ বলবেন,) প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে, আমার নিদর্শনসমূহ তোমার নিকট এসেছিল; কিন্তু তুমি ঐগুলিকে মিথ্যা বলেছিলে এবং অহংকার করেছিলে। আর তুমি ছিলে অবিশ্বাসীদের একজন। [1]

[1] এটা মহান আল্লাহ তাদের বাসনামূলক উক্তির উত্তরে বলবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

৩৯ : ৬০

وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تَرَی الَّذِیۡنَ كَذَبُوۡا عَلَی اللّٰهِ وُجُوۡهُهُمۡ مُّسۡوَدَّۃٌ ؕ اَلَیۡسَ فِیۡ جَهَنَّمَ مَثۡوًی لِّلۡمُتَكَبِّرِیۡنَ ﴿۶۰﴾

و یوم القیمۃ تری الذین كذبوا علی الله وجوههم مسودۃ الیس فی جهنم مثوی للمتكبرین ﴿۶۰﴾
আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?

-আল-বায়ান

যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে ক্বিয়ামতের দিনে তুমি তাদের মুখগুলো কালো দেখতে পাবে. অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নামে নয়?

-তাইসিরুল

যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তুমি কিয়ামাত দিবসে তাদের মুখমণ্ডল কালো দেখবে। ঔদ্ধত্যদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?

-মুজিবুর রহমান

And on the Day of Resurrection you will see those who lied about Allah [with] their faces blackened. Is there not in Hell a residence for the arrogant?

-Sahih International

৬০. আর যারা আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, আপনি কিয়ামতের দিন তাদের চেহারাসমূহ কালো দেখবেন অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তুমি কিয়ামতের দিন তাদের মুখ কালো দেখবে।[1] অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নাম নয় কি? [2]

[1] কালো হওয়ার কারণ হবে, আযাবের ভয়াবহতা এবং আল্লাহর ক্রোধের প্রত্যক্ষ দর্শন।

[2] হাদীসে এসেছে যে, (الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ) ‘‘অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তাচ্ছিল্য করা।’’ এখানে ‘ইস্তিফহাম’ (প্রশ্ন) তাকরীরী (স্বীকৃতিমূলক; যার অর্থ হয় সাব্যস্ত করা)। অর্থাৎ, আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে যে অহংকার প্রদর্শন করে, তার ঠিকানা হল জাহান্নাম।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 পরের পাতা »