بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران আয়াতঃ ২০০ মাদানী
৩ : ৫১ اِنَّ اللّٰهَ رَبِّیۡ وَ رَبُّكُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُ ؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِیۡمٌ ﴿۵۱﴾
ان الله ربی و ربكم فاعبدوه هذا صراط مستقیم ﴿۵۱﴾
• ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার রব ও তোমাদের রব। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। এটি সরল পথ’।

-আল-বায়ান

• ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক, অতএব তাঁর ‘ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ’।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রাব্ব এবং তোমাদের রাব্ব; অতএব তাঁর ইবাদাত কর - এটাই সরল পথ।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, Allah is my Lord and your Lord, so worship Him. That is the straight path."

-Sahih International

৫১. নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব, কাজেই তোমরা তারই ইবাদাত কর। এটাই সরল পথ।(১)

(১) এখানেও ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ বলে ইসলাম বোঝানো হয়েছে। যেমন পূর্বে সূরা আল-ফাতিহার তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁর উপাসনা কর। এটাই হল সরল পথ। [1]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত সম্পাদনে এবং তাঁর সামনে অসহায়তা ও অপরাগতার প্রকাশ করার ব্যাপারে আমি ও তোমরা সমান। সুতরাং এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর উপাস্যত্বে অন্য কাউকে শরীক না করাই হল সঠিক ও সরল পথ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫২ فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِیۡسٰی مِنۡهُمُ الۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ اَنۡصَارِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ قَالَ الۡحَوَارِیُّوۡنَ نَحۡنُ اَنۡصَارُ اللّٰهِ ۚ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ ۚ وَ اشۡهَدۡ بِاَنَّا مُسۡلِمُوۡنَ ﴿۵۲﴾
فلما احس عیسی منهم الكفر قال من انصاری الی الله قال الحواریون نحن انصار الله امنا بالله و اشهد بانا مسلمون ﴿۵۲﴾
• অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফরী উপলব্ধি করল, তখন বলল, ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’।

-আল-বায়ান

• অতঃপর ‘ঈসা যখন তাদের অবিশ্বাস অনুভব করল, তখন বলল, ‘কেউ আছে কি যে আল্লাহর পথে আমার সহায়ক হবে’। হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী, আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী’।

-তাইসিরুল

• অনন্তর যখন ঈসা তাদের মধ্যে প্রত্যাখ্যান প্রত্যক্ষ করল তখন সে বললঃ আল্লাহর উদ্দেশে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারিগণ বললঃ আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী, আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি, এবং সাক্ষী থেকো যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী।

-মুজিবুর রহমান

• But when Jesus felt [persistence in] disbelief from them, he said, "Who are my supporters for [the cause of] Allah?" The disciples said, "We are supporters for Allah. We have believed in Allah and testify that we are Muslims [submitting to Him].

-Sahih International

৫২. যখন ঈসা তাদের থেকে কুফরী উপলব্ধি করলেন তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী’?(১) হাওয়ারীগণ(২) বলল, “আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।

(১) এ আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে। মুজাহিদ বলেনঃ এর অর্থ হল কে আমার অনুসরণ করবে আল্লাহর পথে? সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ এর অর্থ কে আল্লাহর সাথে আমাকে সহযোগিতা করবে? মুজাহিদের কথা এখানে সবচেয়ে বেশী প্রণিধানযোগ্য। তবে সবচেয়ে স্পষ্ট মত হল, এর অর্থ, কে আমাকে সাহায্য করবে আল্লাহর পথে আহবানের ক্ষেত্রে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের মৌসুমে ডেকে ডেকে বলতেনঃ ‘এমন কে আছে যে আমাকে আশ্রয় দেবে, যাতে করে আমি আমার প্রভুর বাণী প্রচার করতে পারি। কেননা, কুরাইশরা আমাকে আমার রবের বাণী প্রচারে বাধা দিচ্ছে’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩৩৯-৩৪০]

(২) ঈসা আলাইহিস সালামের খাঁটি ভক্তদের উপাধি ছিল হাওয়ারী- তাদের আন্তরিকতা ও মনের স্বচ্ছতার কারণে অথবা যেহেতু তারা সাদা পোষাক পরিধান করতেন এ জন্য তাদেরকে হাওয়ারী নামে অভিহিত করা হত। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের উপাধি ছিল সাহাবী। কোন কোন তাফসীরবিদ হাওয়ারীদের সংখ্যা দ্বাদশ উল্লেখ করেছেন। ‘হাওয়ারী’ শব্দটি কোন সময় শুধু সাহায্যকারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ অর্থেই এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘প্রত্যেক রাসূলের একজন হাওয়ারী অর্থাৎ খাঁটি সহচর থাকে আমার হাওয়ারী হলেন যুবায়ের [বুখারীঃ ২৬৯১, মুসলিমঃ ২৪১৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) অনন্তর যখন ঈসা তাদের অবাধ্যতার কথা উপলব্ধি করল,[1] তখন সে বলল, ‘আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী হবে?’[2] হাওয়ারী (শিষ্য)গণ[3] বলল, ‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হব। আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।

[1] অর্থাৎ, এমন গভীর ষড়যন্ত্র এবং সন্দেহজনক আচরণ যার ভিত্তিই ছিল কুফরী তথা মাসীহ (আঃ)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করার উপর।

[2] বহু নবী স্বীয় জাতির ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে বাহ্যিক উপায়-উপকরণের ভিত্তিতে তাদেরই মধ্যেকার বিবেকবান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেছেন। যেমন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও (ইসলামের) প্রাথমিক পর্যায়ে যখন কুরাইশরা তাঁর দাওয়াতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন তিনি হজ্জের মৌসুমে লোকদেরকে তাঁর সাথী ও সাহায্যকারী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। যাতে তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী মানুষের নিকট পৌঁছাতে পারেন। আর তাঁর এই আহবানে সাড়া দিয়ে আনসারী সাহাবীগণ হিজরতের আগে ও পরে নবী কারীম (সাঃ)-কে সাহায্য করেছিলেন। অনুরূপ এখানে ঈসা (আঃ) সাহায্য চেয়েছেন। তবে এই সাহায্য এমন সাহায্য নয়, যা কোন উপায়-উপকরণ ছাড়াই আসে। (এবং যে সাহায্য করার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নেই।) কারণ এ রকম সাহায্য সৃষ্টির কাছে চাওয়া শিরক। আর প্রত্যেক নবীর আগমন ঘটেছে শিরকের দরজা বন্ধ করার জন্যই, অতএব তাঁরা কিভাবে শির্ককীয় কাজ সম্পাদন করতে পারেন? কিন্তু কবরপূজারীদের ভ্রান্ত মতাদর্শ সত্যিই বড়ই দুঃখজনক যে, তারা মৃতদের নিকট সাহায্য চাওয়া বৈধতার প্রমাণে ঈসা (আঃ)-এর مَنْ أَنْصَارِيْ إِلَى اللهِ উক্তিকে পেশ করে। সুতরাং ‘ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দান করুন!

[3] حَوَارِيُّوْنَ (হাওয়ারিয়্যুন) حَوَارِي (হাওয়ারী) শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হল, সাহায্যকারী (শিষ্য)। যেমন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক নবীর একজন বিশেষ সাহায্যকারী ছিল। আমার বিশেষ সাহায্যকারী হল যুবায়ের।’’ (বুখারী ২৮৪৭, মুসলিম ২৪১৫নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৩ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا بِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ وَ اتَّبَعۡنَا الرَّسُوۡلَ فَاكۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ ﴿۵۳﴾
ربنا امنا بما انزلت و اتبعنا الرسول فاكتبنا مع الشهدین ﴿۵۳﴾
• হে আমাদের রব, আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন’।

-আল-বায়ান

• ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা অবতীর্ণ করেছ আমরা তার উপর ঈমান এনেছি, রসূলের আনুগত্য স্বীকার করেছি, সুতরাং আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ কর।’

-তাইসিরুল

• হে আমাদের রাব্ব! আপনি যা অবতীর্ণ করেছেন, আমরা তা বিশ্বাস করি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করছি, অতএব সাক্ষীগণের সাথে আমাদেরকে লিপিবদ্ধ করুন।

-মুজিবুর রহমান

• Our Lord, we have believed in what You revealed and have followed the messenger Jesus, so register us among the witnesses [to truth]."

-Sahih International

৫৩. হে আমাদের রব! আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এ রাসূলের অনুসরণ করেছি কাজেই আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা (ইঞ্জীল) অবতীর্ণ করেছ তাতে আমরা বিশ্বাস করেছি এবং আমরা রসূল (ঈসা)র অনুসারী। সুতরাং আমাদেরকে (সত্যতার) সাক্ষীদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নাও।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৪ وَ مَكَرُوۡا وَ مَكَرَ اللّٰهُ ؕ وَ اللّٰهُ خَیۡرُ الۡمٰكِرِیۡنَ ﴿۵۴﴾
و مكروا و مكر الله و الله خیر المكرین ﴿۵۴﴾
• আর তারা কুটকৌশল করেছে এবং আল্লাহ কৌশল করেছেন। আর আল্লাহ উত্তম কৌশলকারী।

-আল-বায়ান

• এবং তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহ্ও (জবাবে) কৌশল করেছিলেন, আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ।

-তাইসিরুল

• আর তারা (কাফিরেরা) ষড়যন্ত্র করেছিল ও আল্লাহও কৌশল করলেন এবং আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।

-মুজিবুর রহমান

• And the disbelievers planned, but Allah planned. And Allah is the best of planners.

-Sahih International

৫৪. আর তারা কুটকৌশল করেছিল আল্লাহও কৌশল করেছিলেন; আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী(১)।

(১) আরবী ভাষায় ‘মাকর’ শব্দের অর্থ সুরক্ষা ও গোপন কৌশল। উত্তম লক্ষ্য অর্জনের জন্য মকর ভাল এবং মন্দ লক্ষ্য অর্জনের জন্য হলে তা মন্দও হতে পারে। এ আয়াতে কাফেরদের ‘মাকার’-এর বিপরীতে আল্লাহর পক্ষ থেকেও মাকার করার কথা এ কারণেই যোগ করা সঠিক হয়েছে। বাংলা ভাষার বাচনভঙ্গিতে ‘মাকার’ শব্দটি শুধু ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল অর্থে ব্যবহৃত হয়। কাজেই এ নিয়ে আরবী বাচনভঙ্গিতে সন্দেহ করা উচিত নয়। আরবী অর্থের দিক দিয়েই এখানে আল্লাহকে “শ্রেষ্ঠতম কুশলী” বলা হয়েছে। তাছাড়া مَكْر ও خِدَاع এবং এ জাতীয় শব্দসমূহের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা হলো, এগুলো যদি কাফেরদের مَكْر ও خِدَاع এর বিপরীতে ব্যবহৃত হয় তখন সেটি খারাপ গুণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। বরং কাফেরদের مَكْر ও خِدَاع এর বিপরীতে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে مَكْر ও خِدَاع করা একটি ইতিবাচক গুণ। [সিফাতুল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, আস-সাক্কাফ]

উদ্দেশ্য এই যে, ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও গোপন কৌশল অবলম্বন করতে আরম্ভ করে। তারা অনবরত বাদশাহর কাছে বলতে থাকে যে, লোকটি আল্লাদ্রোহী। সে তাওরাত পরিবর্তন করে সবাইকে বিধর্মী করতে সচেষ্ট। এসব অভিযোগ শুনে বাদশাহ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। ইয়াহুদীদের এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্যে আল্লাহ তা'আলার সূক্ষ্ম ও গোপন কৌশলও স্বীয় পথে অগ্রসর হচ্ছিল। পরবর্তী আয়াতে এর বর্ণনা রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) অতঃপর তারা ষড়যন্ত্র করল এবং আল্লাহও কৌশল প্রয়োগ করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলী। [1]

[1] ঈসা (আঃ)-এর যামানায় শাম (সিরিয়া) অঞ্চল রোমক শাসনের অন্তর্গত ছিল। এখানে রোমকদের পক্ষ থেকে যাকে শাসক নির্বাচিত করা হয়েছিল সে কাফের ছিল। ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে এই শাসকের কান ভারী করল। যেমন, তিনি (নাঊযু বিল্লাহ) বিনা বাপের (জারজ সন্তান) এবং বড়ই ফাসাদী ইত্যাদি। শাসক তাদের দাবী অনুযায়ী তাঁকে শূলে চড়ানোর ফায়সালা গ্রহণ করে। কিন্তু মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে সযত্নে আসমানে উঠিয়ে নেন, আর এরা তাঁর স্থানে তাঁরই মত দেখতে অন্য এক ব্যক্তিকে শূলে চড়িয়ে দেয় এবং মনে করে যে, তারা ঈসা (আঃ)-কে শূলে চড়িয়ে দিয়েছে। مَكْرٌ আরবী ভাষায় কোন কার্য সিদ্ধির জন্য সূক্ষ্ণ ও গোপনভাবে তদবির (বা কৌশল অবলম্বন) করাকে বলা হয়। আর এই অর্থেই এখানে মহান আল্লাহকে خَيْرُ المَاكِرِيْنَ (সর্বোত্তম কৌশলী) বলা হয়েছে। পরন্তু কৌশল মন্দও হতে পারে, যদি মন্দ উদ্দেশ্যে হয় (আর তখন তাকে চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র বলা হয়) এবং ভালও হতে পারে, যদি তা ভাল উদ্দেশ্যে হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৫ اِذۡ قَالَ اللّٰهُ یٰعِیۡسٰۤی اِنِّیۡ مُتَوَفِّیۡكَ وَ رَافِعُكَ اِلَیَّ وَ مُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ جَاعِلُ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡكَ فَوۡقَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡۤا اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَاَحۡكُمُ بَیۡنَكُمۡ فِیۡمَا كُنۡتُمۡ فِیۡهِ تَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۵۵﴾
اذ قال الله یعیسی انی متوفیك و رافعك الی و مطهرك من الذین كفروا و جاعل الذین اتبعوك فوق الذین كفروا الی یوم القیمۃ ثم الی مرجعكم فاحكم بینكم فیما كنتم فیه تختلفون ﴿۵۵﴾
• স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, ‘হে ঈসা, নিশ্চয় আমি তোমাকে পরিগ্রহণ করব, তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নেব এবং কাফিরদের থেকে তোমাকে পবিত্র করব। আর যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপরে প্রাধান্য দেব। অতঃপর আমার নিকটই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে। তখন আমি তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেব, যে ব্যাপারে তোমরা মতবিরোধ করতে’ ।

-আল-বায়ান

• (স্মরণ কর) যখন আল্লাহ ‘ঈসাকে বলেছিলেন, ‘হে ‘ঈসা! আমি তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করব (তোমাকে মৃত্যু ছাড়াই দুনিয়া থেকে কবজ করব) এবং তোমাকে আমার কাছে উঠিয়ে নেব এবং তোমাকে কাফিরদের হতে মুক্ত করব আর তোমার অনুসরণকারীদেরকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী রাখব; অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন আমি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেব যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছ।’

-তাইসিরুল

• যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে আমার দিকে প্রতিগ্রহণ করব এবং তোমাকে উত্তোলন করব এবং অবিশ্বাসকারীদের হতে তোমাকে পবিত্র করব, আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের উপর তোমার অনুসারীগণকে উত্থান দিন পর্যন্ত সমুন্নত করব; অনন্তর আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বিষয়ে মতভেদ ছিল তার মীমাংসা করব।

-মুজিবুর রহমান

• [Mention] when Allah said, "O Jesus, indeed I will take you and raise you to Myself and purify you from those who disbelieve and make those who follow you [in submission to Allah alone] superior to those who disbelieve until the Day of Resurrection. Then to Me is your return, and I will judge between you concerning that in which you used to differ.

-Sahih International

৫৫. স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ্‌ বললেন, হে ঈসা নিশ্চয় আমি আপনাকে পরিগ্রহণ করব(১), আমার নিকট আপনাকে উঠিয়ে নিব(২) এবং যারা কুফর করে তাদের মধ্য থেকে আপনাকে পবিত্র করব। আর আপনার অনুসারিগণকে কেয়ামত পর্যন্ত কাফেরদের উপর প্রাধান্য দিব, তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটেছে আমি তোমাদের মধ্যে তার মীমাংসা করে দিব।(৩)

(১) مُتَوَفِّيكَ  শব্দের ধাতু توفى এবং মূলধাতু وفى অভিধানে এর অর্থ পুরোপুরি লওয়া আরবী ভাষার সব অভিধান গ্রন্থেই এ অর্থ রয়েছে। মৃত্যুর সময় মানুষ নির্ধারিত আয়ুপূর্ণ করে ফেলে এবং আল্লাহ প্রদত্ত আত্মা পুরোপুরি নিয়ে নেয়া হয়। এ কারণে শব্দটি মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়। মানুষের দৈনন্দিন নিদ্রা মৃত্যুর একটি হাল্কা নমুনা। কুরআনে এ অর্থেও توفى শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে- (اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا) অর্থাৎ “আল্লাহ মৃত্যুর সময় প্রাণ নিয়ে নেন। আর যাদের মৃত্যু আসে না, তাদের প্রাণও নিদ্রার সময় নিয়ে নেন।” [সূরা আয-যুমারঃ ৪২] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ مُتَوَفِّيكَ এর অর্থ, আমি আপনাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেব এবং শেষ যামানায় স্বাভাবিক মৃত্যুদান করব। এ তাফসীরের সারমর্ম এই যে, مُتَوَفِّيكَ শব্দের অর্থ মৃত্যু; কিন্তু আয়াতের শব্দে رَافِعُكَ إِلَيَّ প্রথমে ও مُتَوَفِّيكَ পরে হবে।

এখানে مُتَوَفِّيكَ কে পূর্বে উল্লেখ করার কারণ এদিকে ইঙ্গিত করা যে, নিজের কাছে  উঠিয়ে নেয়া চিরতরে নয়; বরং এ ব্যবস্থা কিছুদিনের জন্য হবে। এরপর তিনি আবার দুনিয়াতে আসবেন, শক্রদের পরাজিত করবেন এবং অবশেষে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন। এভাবে আকাশ থেকে পুনর্বার অবতরণ এবং শক্রর বিরুদ্ধে জয়লাভের পর মৃত্যুবরণের ঘটনাটি একাধারে একটি মু'জিযা। এতদসঙ্গে ঈসা আলাইহিস সালামের সম্মান ও মর্যাদার পূর্ণত্বলাভ এবং নাসারাদের এ বিশ্বাসের খণ্ডন যে, ঈসা আলাইহিস সালাম অন্যতম উপাস্য। নতুবা জীবিত অবস্থায় আকাশে উত্থিত হওয়ার ঘটনা থেকে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস আরও জোরদার হয়ে যেত যে, তিনিও আল্লাহ তা'আলার মতই চিরঞ্জীব এবং ভালমন্দের নিয়ামক। এ কারণে প্রথমে مُتَوَفِّيكَ বলে এসব ভ্রান্ত ধারণার মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এরপর নিজের দিকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

(২) এতে বাহ্যতঃ ঈসা আলাইহিস সালামকেই সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, আপনাকে উপরে উঠিয়ে নেব। সবাই জানেন যে, ঈসা শুধু আত্মার নাম নয়; বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের নাম। কাজেই আয়াতে দৈহিক উত্তোলন বাদ দিয়ে শুধু আত্মিক উত্তোলন বুঝা সম্পূর্ন ভুল। কুরআনের অন্যত্রও ইয়াহুদীদের ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে (بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ) অর্থাৎ ইয়াহুদীরা নিশ্চিতই ঈসাকে হত্যা করেনি, বরং “আল্লাহ তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন।” [সূরা আন-নিসাঃ ১৫৮] “নিজের কাছে তুলে নেয়া” সশরীরে তুলে নেয়াকেই বলা হয়।

(৩) আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইয়াহুদীদের বিপক্ষে ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে পাঁচটি অঙ্গীকার করেছেনঃ

সর্বপ্রথম অঙ্গীকার এই যে, তার মৃত্যু ইয়াহুদীদের হাতে হত্যার মাধ্যমে হবে না; বরং প্রতিশ্রুত সময়ে স্বাভাবিক পস্থায় হবে। প্রতিশ্রুত সময়টি কেয়ামতের নিকটতম যামানায় আসবে। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। বিভিন্ন সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীসে এর বিবরণ রয়েছে।

দ্বিতীয় অঙ্গীকার ছিল যে, ঈসা আলাইহিস সালামকে আপাততঃ উর্ধ্ব জগতে তুলে নেয়া হবে। সাথে সাথে এ অঙ্গীকার পূর্ণ করা হয়।

তৃতীয় অঙ্গীকার ছিল শক্ৰদের অপবাদ থেকে মুক্ত করা। এ অঙ্গীকার এভাবে পূর্ণ হয়েছে যে, শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করে ইয়াহুদীদের যাবতীয় অপবাদ দূর করে দেন। উদাহরণতঃ পিতা ব্যতিরেকে জন্মগ্রহণ করার কারণে ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম বিষয়ে অপবাদ আরোপ করত। কুরআন এ অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছে যে, তিনি আল্লাহর কুদরত ও নির্দেশে পিতা ব্যতিরেকে জন্মগ্রহণ করেছেন। এটা কোন বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। আদমের জন্মগ্রহণ ছিল আরো বেশী বিস্ময়কর ব্যাপার। কারণ, তিনি পিতা ও মাতা উভয় ব্যতিরেকেই জন্মগ্রহণ করেন। ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে ইলাহ হওয়ার দাবী করার অভিযোগও এনেছিল। কুরআনের অনেক আয়াতে এর বিপরীতে ঈসা আলাইহিস সালামের বন্দেগী ও মানবত্বের স্বীকারোক্তি বর্ণিত হয়েছে।

চতুর্থ অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসীর বিপক্ষে আপনার অনুসারীদের কেয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী রাখা হবে। আয়াতে অনুসরণের অর্থ ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতে বিশ্বাস করা ও স্বীকারোক্তি করা। এর জন্য যাবতীয় বিধি-বিধানে বিশ্বাস করা শর্ত নয়। এভাবে নাসারা ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় তার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মুসলিমরাও ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতে বিশ্বাসী। এটা ভিন্ন কথা যে, এতটুকু বিশ্বাসই আখেরাতের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়; বরং মুক্তি নির্ভরশীল। ঈসা আলাইহিস সালামের অকাট্য বিধানাবলীর মধ্যে একটি ছিল এই যে, পরবর্তীকালে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও ঈমান আনতে হবে। নাসারারা এটি পালন করেনি। ফলে তারা আখেরাতের মুক্তি থেকে বঞ্চিত। মুসলিমরা এটিও পালন করেছে। ফলে তারা আখেরাতে মুক্তির অধিকারী হয়েছে।

পঞ্চম অঙ্গীকার এই যে, কেয়ামতের দিন সব ধর্মীয় মতবিরোধের মীমাংসা করা হবে। সময় এলে এ অঙ্গীকারও পূর্ণ হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৫) (স্মরণ কর) যখন আল্লাহ বললেন, ‘হে ঈসা! নিশ্চয় আমি তোমার নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ করব[1] এবং আমার কাছে তোমাকে তুলে নেব এবং যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের মধ্যে থেকে তোমাকে পবিত্র (মুক্ত) করব। [2] আর তোমার অনুসারিগণকে কিয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর জয়ী করে রাখব,[3] অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন (ঘটবে)। তার পর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটেছে, তার মীমাংসা করে দেব।

[1]المتوفى  শব্দের মাসদার বা ক্রিয়া বিশেষ্য হল, توفى এবং এর মূলধাতু হল, وفى যার প্রকৃত অর্থ হল, পুরোপুরি কিছু নেওয়া। মানুষ মারা গেলে ‘অফাত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। কারণ, তার শারীরিক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই দিক দিয়ে মৃত্যু কেবল মানুষের বিভিন্ন অবস্থার একটি অবস্থা। ঘুমের অবস্থায়ও যেহেতু মানুষের স্বাধীনতা কিছু কালের জন্য নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তাই ঘুমকেও কুরআন ‘অফাত’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এ থেকে জানা গেল যে, এর যথাযথ ও প্রকৃত অর্থ হল, পুরোপুরি নেওয়া। [إِنِّيْ مُتَوَفِّيْكَ] আয়াতে ‘অফাত’কে এই প্রকৃত অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, হে ঈসা! আমি তোমাকে ইয়াহুদীদের চক্রান্ত থেকে পরিপূর্ণভাবে আমার কাছে আসমানে উঠিয়ে নিব। হলও তা-ই। আর কেউ কেউ ‘অফাত’এর রূপকার্থের প্রসিদ্ধতার কারণে তার অর্থ মৃত্যুই করেছেন। তবে তারা বলেছেন, শব্দের মধ্যে আগে পিছে হয়ে আছে। অর্থাৎ, رَافِعُكَ (আমি আমার কাছে আসমানে উঠিয়ে নিব) এর অর্থ আগে হবে। আর مُتَوَفِّيْكَ এর অর্থ পরে হবে। অর্থাৎ, আমি তোমাকে আসমানে উঠিয়ে নিব। তারপর পুনরায় যখন দুনিয়াতে অবতরণ করবে, তখন তোমার মৃত্যু দান করব। অর্থাৎ, ইয়াহুদীদের হাতে তুমি নিহত হবে না, বরং তুমি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করবে। (অফাতের আর এক অর্থঃ নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ করা।) (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর) যেমন অনুবাদে এখতিয়ার করা হয়েছে।

[2] এখানে সেই সমস্ত অপবাদ থেকে পবিত্রকরণকে বুঝানো হয়েছে, যা ইয়াহুদীরা তাঁর উপর আরোপ করত। সুতরাং শেষ নবী (সাঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতার কথা বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করে দেওয়া হয়। (অথবা পবিত্র করার অর্থঃ কাফেরদল থেকে তাঁকে মুক্ত করা, তাদের হাত থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে নেওয়া।)

[3] এ থেকে হয়তো ইয়াহুদীদের উপরে খ্রিষ্টানদের জয়ী থাকাকে বুঝানো হয়েছে। এরা ইয়াহুদীদের উপরে কিয়ামত পর্যন্ত জয়ী থাকবে; যদিও তারা তাদের ভ্রান্ত আকীদার কারণে আখেরাতে মুক্তি লাভ থেকে বঞ্চিত থাকবে। অথবা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের জয়ী থাকাকে বুঝানো হয়েছে; যারা ঈসা (আঃ) এবং অন্যান্য সমস্ত নবীদেরকে সত্য বলে জানে এবং তাঁদের সঠিক ও অপরিবর্তিত দ্বীনে (ইসলামে)র অনুসরণ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৬ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا فَاُعَذِّبُهُمۡ عَذَابًا شَدِیۡدًا فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۫ وَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ ﴿۵۶﴾
فاما الذین كفروا فاعذبهم عذابا شدیدا فی الدنیا و الاخرۃ و ما لهم من نصرین ﴿۵۶﴾
• অতঃপর যারা কুফরী করেছে, আমি তাদেরকে কঠিন আযাব দেব দুনিয়া ও আখিরাতে, আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

-আল-বায়ান

• অতঃপর যারা অবিশ্বাসী, তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি দেব এবং কেউই তাদের সাহায্যকারী নেই।

-তাইসিরুল

• অনন্তর যারা কুফরী করেছে (অবিশ্বাসী হয়েছে), বস্তুতঃ তাদেরকে ইহকাল ও আখিরাতে কঠোর শাস্তি প্রদান করব এবং তাদের জন্য কেহ সাহায্যকারী নেই।

-মুজিবুর রহমান

• And as for those who disbelieved, I will punish them with a severe punishment in this world and the Hereafter, and they will have no helpers."

-Sahih International

৫৬. তারপর যারা কুফরী করেছে আমি তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি প্রদান করব এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।(১)

(১) ইয়াহুদীরা একথা বলে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম নিহত ও শূলবিদ্ধ হয়ে সমাহিত হয়ে গেছেন এবং পরে জীবিত হননি। বর্তমানে নাসারাগণও ইয়াহুদীদের আকীদা-বিশ্বাসে প্রভাবিত হয়ে বলে থাকে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম শূলে বিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অবশ্য তারা এটাও বলে থাকে যে, তিনি পরে জীবিত হয়ে আবার আকাশে চলে গিয়েছেন। প্রকৃত কথা হলো, ঈসা আলাইহিস সালামকে তার হত্যা করতে সক্ষম হয়নি। বরং আল্লাহ তা'আলা ঈসা আলাইহিস সালামের শক্রদের চক্রান্ত স্বয়ং তাদের দিকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ যেসব ইয়াহুদী তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘরে প্রবেশ করেছিল, আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্য থেকেই এক ব্যক্তির আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে হুবহু ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় করে দেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালামকে জীবিতাবস্থায় আকাশে তুলে নেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, (وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ) “তারা ঈসাকে হত্যা করেনি, শূলীতেও চড়ায়নি। কিন্তু আল্লাহর কৌশলে তারা সাদৃশ্যের ধাধায় পতিত হয়।” [সূরা আন-নিসাঃ ১৫৭] এভাবে তারা নিজেদের লোককে হত্যা করেই আত্মপ্রসাদ লাভ করে।

এ দুই দলের বিপরীতে ইসলামের বিশ্বাস আলোচ্য আয়াত ও অন্যান্য কতিপয় আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে ইয়াহুদীদের কবল থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যে জীবিতাবস্থায় আকাশে তুলে নিয়েছেন। তাকে হত্যা করা হয়নি এবং শূলিতেও চড়ানো হয়নি। তিনি জীবিতাবস্থায় আকাশে বিদ্যমান রয়েছেন এবং কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আকাশ থেকে অবতরণ করে ইয়াহুদীদের বিপক্ষে জয়লাভ করবেন, অবশেষে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন। এ বিশ্বাসের উপর সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ইজমা তথা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) অনন্তর যারা অবিশ্বাস করেছে, আমি তাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করব। আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৭ وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَیُوَفِّیۡهِمۡ اُجُوۡرَهُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۷﴾
و اما الذین امنوا و عملوا الصلحت فیوفیهم اجورهم و الله لا یحب الظلمین ﴿۵۷﴾
• আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেবেন। আর আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।

-আল-বায়ান

• পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তাদেরকে তিনি পুরোপুরি সাওয়াব দান করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।

-তাইসিরুল

• আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকাজ করেছে ফলতঃ তিনি তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন এবং আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেননা।

-মুজিবুর রহমান

• But as for those who believed and did righteous deeds, He will give them in full their rewards, and Allah does not like the wrongdoers.

-Sahih International

৫৭. আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তিনি তাদের প্রতিফল পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন। আর আল্লাহ্‌ যালেমদের পছন্দ করেন না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৭) আর যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকার্য করেছে, তিনি তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে প্রদান করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যাচারিগণকে ভালবাসেন না।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৮ ذٰلِكَ نَتۡلُوۡهُ عَلَیۡكَ مِنَ الۡاٰیٰتِ وَ الذِّكۡرِ الۡحَكِیۡمِ ﴿۵۸﴾
ذلك نتلوه علیك من الایت و الذكر الحكیم ﴿۵۸﴾
• এটি আমি তোমার উপর তিলাওয়াত করছি, আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ থেকে।

-আল-বায়ান

• এসব আমি তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি আয়াতসমষ্টি ও জ্ঞানগর্ভ বাণী হতে।

-তাইসিরুল

• আমি তোমার প্রতি বিজ্ঞানময় বর্ণনা ও নিদর্শনাবলী হতে এটা আবৃত্তি করছি।

-মুজিবুর রহমান

• This is what We recite to you, [O Muhammad], of [Our] verses and the precise [and wise] message.

-Sahih International

৫৮. এটা আমরা আপনার নিকট তেলাওয়াত করছি আয়াতসমূহ ও হেকমতপূর্ণ বাণী থেকে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) যা আমি তোমার কাছে পাঠ করছি, তা হল আয়াত (নিদর্শনাবলী) ও বিজ্ঞানময় উপদেশ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৫৯ اِنَّ مَثَلَ عِیۡسٰی عِنۡدَ اللّٰهِ كَمَثَلِ اٰدَمَ ؕ خَلَقَهٗ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنۡ فَیَكُوۡنُ ﴿۵۹﴾
ان مثل عیسی عند الله كمثل ادم خلقهٗ من تراب ثم قال لهٗ كن فیكون ﴿۵۹﴾
• নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত, তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে বললেন, ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।

-আল-বায়ান

• আল্লাহর নিকট ঈসার অবস্থা আদামের অবস্থার মত, মাটি দ্বারা তাকে গঠন করে তাকে হুকুম করলেন, হয়ে যাও, ফলে সে হয়ে গেল।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, অতঃপর বললেন হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, the example of Jesus to Allah is like that of Adam. He created Him from dust; then He said to him, "Be," and he was.

-Sahih International

৫৯. নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তসদৃশ। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন; তারপর তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, ফলে তিনি হয়ে যান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ : ৬০ اَلۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنۡ مِّنَ الۡمُمۡتَرِیۡنَ ﴿۶۰﴾
الحق من ربك فلا تكن من الممترین ﴿۶۰﴾
• সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে, সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

-আল-বায়ান

• এ বাস্তব ঘটনা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতেই, সুতরাং তুমি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

-তাইসিরুল

• এই বাস্তব ঘটনা তোমার রবের পক্ষ হতে; সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।

-মুজিবুর রহমান

• The truth is from your Lord, so do not be among the doubters.

-Sahih International

৬০. (এটা) আপনার রবের নিকট থেকে সত্য, কাজেই আপনি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।(১)

(১) এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সূরা আলে-ইমরানে আল্লাহ্ তা'আলা পূর্ববর্তী রাসূলগণের উল্লেখ প্রসঙ্গে আদম, নূহ, ইবরাহীম ও ইমরানের বংশধরের কথা একটি মাত্র আয়াতে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। এরপর প্রায় বাইশটি আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার পরিবারের উল্লেখ এমন বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে যে, কুরআন যার প্রতি নাযিল হয়েছে তার উল্লেখও এমন বিস্তারিতভাবে করা হয়নি। ঈসা আলাইহিস সালামের মাতামহীর উল্লেখ, তার মানতের বর্ণনা, জননীর জন্ম, তার নাম, তার লালন-পালনের বিস্তারিত বিবরণ, ঈসা আলাইহিস সালামের জননীর গর্ভে আগমন, অতঃপর জন্মের বিস্তারিত অবস্থা, জন্মের পর জননী কি পানাহার করলেন, শিশু সন্তানকে নিয়ে গৃহে আগমন, পরিবারের লোকদের ভর্ৎসনা, জন্মের পরপরই ঈসা আলাইহিস সালামের বাকশক্তি প্রাপ্তি, যৌবনে পদার্পণ, স্বজাতিকে দ্বীনের প্রতি আহবান, তাদের বিরোধিতা, সহচরদের সাহায্য, ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র, জীবিতাবস্থায় আকাশে উত্থিত হওয়া প্রভৃতি।

এরপর মুতাওয়াতির হাদীসসমূহে তার আরো গুণাবলী, আকার আকৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণও এমনিভাবে দেয়া হয়েছে যে, সমগ্র কুরআন ও হাদীসে কোন রাসূলের জীবনালেখ্য এমন বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়নি। সামান্য চিন্তা করলেই এ বিষয়টির কারণ পরিস্কার হয়ে যায় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী, তার পর আর কোন নবী আসবেন না। এ কারণে, তিনি অত্যন্ত যত্ন সহকারে কেয়ামত পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘটনাবলী সম্পর্কে স্বীয় উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই একদিকে তিনি পরবর্তীকালে অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং সাধারণ গুণাবলীর মাধ্যমে ও অনেকের বেলায় নাম উল্লেখ করে তাদের অনুসরণ করতে জোর তাকিদ করেছেন। অপরদিকে উম্মতের ক্ষতিসাধনকারী পথভ্রষ্ট লোকদের পরিচয়ও বলেছেন।

পরবর্তীকালে আগমনকারী পথভ্রষ্টদের মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক হবে দাজ্জাল। তার ফেৎনাই হবে সর্বাধিক বিভ্রান্তিকর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এত বেশী হাল-হাকীকত বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার আগমনের সময় সে যে পথভ্রষ্ট, এ বিষয়ে কারো মনে সন্দেহ থাকবে না। এমনিভাবে পরবর্তীকালে আগমনকারী সংস্কারক ও অনুসরণযোগ্য মনীষিগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হবেন ঈসা আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তা'আলা তাকে নবুওয়াত ও রিসালতের সম্মানে ভূষিত করেছেন; দাজ্জালের ফেৎনার সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সাহায্যের জন্য আকাশে জীবিত রেখেছেন এবং কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দাজ্জাল হত্যার জন্য নিয়োজিত হবেন। এ কারণে তার জীবনালেখ্য ও গুণাবলী মুসলিম সম্পপ্রাদয়ের কাছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ফুটিয়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, যাতে তার অবতরণের সময় তাকে চেনার ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ ও বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে। এর রহস্য ও উপযোগিতা অনেক। প্রথম, তার পরিচয়ে জটিলতা থাকলে তার অবতরণের উদ্দেশ্যই পণ্ড হয়ে যাবে।

মুসলিম সম্প্রদায় তার সাথে সহযোগিতা করবে না। ফলে তিনি কিভাবে তাদের সাহায্য করবেন? দ্বিতীয়, ঈসা আলাইহিস সালাম সে সময় নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনে আদিষ্ট হয়ে জগতে আসবেন না; বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্বদানের উদ্দেশ্যে আগমন করবেন, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি স্বীয় নবুওয়াতের পদ থেকে অপসারিতও হবেন না। তৃতীয়, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণের ঘটনা দুনিয়ার অন্তিম পর্যায়ে সংঘটিত হবে। এমতাবস্থায় তার অবস্থা ও লক্ষণাদি অস্পষ্ট হলে অন্য কোন প্রতারকের পক্ষ থেকে এরূপও দাবী করার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল যে, আমিই মসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম ৷ এখন কেউ এরূপ করলে লক্ষণাদির সাহায্যে তাকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে। উদাহরণতঃ হিন্দুস্থানে এক সময় মির্যা কাদিয়ানী দাবী করে বসে যে, সে-ই প্রতিশ্রুত মসীহ। মুসলিম ওলামাগণ এসব লক্ষণের সাহায্যেই তার ভ্রান্ত দাবী প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) (এ) সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত, সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 17 18 19 20 পরের পাতা »