২৫ : ৫১
وَ لَوۡ شِئۡنَا لَبَعَثۡنَا فِیۡ كُلِّ قَرۡیَۃٍ نَّذِیۡرًا ﴿۫ۖ۵۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫১. আর আমরা ইচ্ছে করলে প্রতিটি জনপদে একজন সকর্তকারী পাঠাতে পারতাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫১) আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী প্রেরণ করতে পারতাম। [1]
[1] কিন্তু আমি এ রকম করিনি। আমি কেবল তোমাকেই সমস্ত জনপদের জন্য; বরং সমগ্র মনুষ্য জাতির জন্য সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫২
فَلَا تُطِعِ الۡكٰفِرِیۡنَ وَ جَاهِدۡهُمۡ بِهٖ جِهَادًا كَبِیۡرًا ﴿۵۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫২. কাজেই আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং আপনি কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে বড় জিহাদ চালিয়ে যান।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫২) সুতরাং তুমি অবিশ্বাসীদের আনুগত্য করো না এবং তুমি এ (কুরআনে)র সাহায্যে ওদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাও। [1]
[1] جاهدهم به এর ه (এ) সর্বনাম দ্বারা কুরআনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, কুরআন দ্বারা কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাও। আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়, তখন জিহাদের আদেশ দেওয়া হয়নি। সেই কারণে এর অর্থ হবে কুরআনের আদেশ নিষেধকে প্রকাশ্যভাবে বর্ণনা কর এবং কাফেরদের জন্য যেসব শাস্তির ধমক ও তিরস্কার বর্ণিত হয়েছে, তা তাদের সামনে স্পষ্ট কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৩
وَ هُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ هٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّ هٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَ جَعَلَ بَیۡنَهُمَا بَرۡزَخًا وَّ حِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا ﴿۵۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৩. আর তিনিই দুই সাগরকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অন্যটি লোনা, খর; আর তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।(১)
(১) مرج শব্দের অর্থ স্বাধীন ছেড়ে দেয়া। عذب মিঠা পানিকে বলা হয়। فُرَاتٌ এর অর্থ সুপেয়, مِلْحٌ এর অর্থ লোনা এবং أُجَاجٌ এর অর্থ তিক্ত বিস্বাদ। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় কৃপা ও অপার রহস্য দ্বারা পৃথিবীতে দুই প্রকার সাগর সৃষ্টি করেছেন। (এক) সর্ববৃহৎ যাকে মহাসাগর বলা হয়। গোটা পৃথিবী এর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ এ জলধির বাইরে উন্মুক্ত, যাতে সারা বিশ্বের মানব সমাজ বসবাস করে। এই সর্ববৃহৎ সাগরের পানি রহস্যবশতঃ তীব্ৰ লোনা ও বিস্বাদ। পৃথিবীর স্থলভাগে আকাশ থেকে বর্ষিত পানির ঝর্ণা, নদনদী, নহর ও বড় বড় সাগর আছে। এগুলোর পানি মিষ্ট ও সুপেয়। মানুষের নিজেদের তৃষ্ণা নিবারণে এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে এরূপ পানিরই প্রয়োজন, যা আল্লাহ্ তা'আলা স্থলভাগে বিভিন্ন প্রকারে সরবরাহ করেছেন।
সমুদ্রে স্থলভাগের চাইতে অনেক বেশী সামুদ্রিক জন্তুজানোয়ার বসবাস করে। এগুলো সেখানেই মরে, সেখানেই পচে এবং সেখানেই মাটি হয়ে যায়। সমগ্ৰ পৃথিবীর পানি ও আবর্জনা অবশেষে সমুদ্রে পতিত হয়। যদি সমুদ্রের পানি মিষ্ট হত, তবে মিষ্ট পানি দ্রুত পচনশীল বিধায় দু’চার দিনেই পচে যেত। এই পানি পচে গেলে তার দুর্গন্ধে ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের জীবনধারন দুরূহ হয়ে যেত। তাই আল্লাহ্ তা'আলা তাকে এত তীব্ৰ লোনা, তিক্ত ও তেজস্ক্রিয় করে দিয়েছেন যেন সারা বিশ্বের আবর্জনা তাতে পতিত হয়ে বিলীন হয়ে যায় এবং সেখানে বসবাসকারী যে সকল সৃষ্টজীব সেখানে মরে, তাও পচতে পারে। দেখুন: আদওয়াউল-বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৩) তিনিই দুটি সাগরকে প্রবাহিত করেছেন, একটির পানি মিষ্ট, সুপেয় এবং অপরটির পানি লোনা, ক্ষারবিশিষ্ট।[1] আর উভয়ের মধ্যে তিনি রেখে দিয়েছেন এক সীমারেখা, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান। [2]
[1] মিষ্টি পানিকে فُرَات বলা হয়। এর মূল অর্থঃ কেটে দেওয়া, ভেঙ্গে দেওয়া। যেহেতু মিষ্টি পানি পিপাসাকে কেটে দেয় অর্থাৎ, দূর করে দেয়, সেহেতু তাকে ‘ফুরাত’ বলা হয়। আর أُجَاج অর্থ ক্ষারবিশিষ্ট।
[2] যা এক অপরের সাথে মিলিত হতে দেয় না। আবার কেউ কেউ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا এর অর্থ করেছেন حَرَامًا مُّحَرَّمًا ওদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়েছে যে, মিষ্টি পানি লবণাক্ত ও লবণাক্ত পানি মিষ্টি যেন না হয়। আবার কেউ কেউ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ এর অর্থ করেছেন خَلَقَ المَاءَين দুই পানি সৃষ্টি করেছেন; এক মিষ্টি ও একটি লবণাক্ত। মিষ্টি পানি ঐসব পানি, যা নদী, ঝরনা ও কূপের পানিরূপে আবাদীর মধ্যে প্রাপ্ত হয়, যা মানুষ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। আর লবণাক্ত পানি ঐসব মহা সমুদ্রের পানি, যা পূর্বে পশ্চিমে বিস্তৃত। যার জন্য বলা হয় যে, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি ও এক ভাগ স্থল; যার উপর মানুষ ও জীবজন্তু বসবাস করছে। সমুদ্র স্থির, তবে তাতে জোয়ার-ভাটা হয় এবং ঢেউ-সংঘাত বাধে। সমুদ্রের পানিকে লবণাক্ত করার মধ্যে অনেক হিকমত রয়েছে। মিষ্টি পানি কোন জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির থাকলে তা খারাপ হয়ে যায়। তার রঙ, গন্ধ ও সবাদে পরিবর্তন ঘটে। আর লবণাক্ত পানি খারাপ হয় না এবং তার রঙ, গন্ধ ও সবাদে পরিবর্তনও আসে না। যদি ঐ সব স্থির সমুদ্রের পানিও মিষ্টি হত, তাহলে তা দুর্গন্ধময় হয়ে যেত। আর যার কারণে মানুষ ও জীবজন্তুর পৃথিবীতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ত। তার উপর আবার তাতে মৃত জীবের দুর্গন্ধ। আল্লাহর হিকমত এই যে হাজার হাজার বছর ধরে এই সমস্ত সমুদ্র বিদ্যমান এবং তাতে হাজার হাজার জীব-জন্তু মরে গলে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ ওর মধ্যে লবণের এমন ভাগ রেখেছেন যে, যাতে পানির মধ্যে সামান্যতম দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না। সমুদ্র হতে উত্থিত বাতাসও পরিষ্কার ও সবাস্থ্যকর এবং তার পানিও পবিত্র; এমনকি মৃত সামুদ্রিক প্রাণীও হালাল। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(মুআত্তা ইমাম মালিক, ইবনে মাজাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী পবিত্রতা অধ্যায়, নাসাঈ পানির বর্ণনা পরিচ্ছেদ।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৪
وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ مِنَ الۡمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّ صِهۡرًا ؕ وَ كَانَ رَبُّكَ قَدِیۡرًا ﴿۵۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৪. আর তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; তারপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন।(১) আর আপনার রব হলেন প্রভূত ক্ষমতাবান।
(১) পিতামাতার দিক থেকে যে সম্পর্ক ও আত্মীয়তা হয়, তাকে نسب বলা হয় এবং স্ত্রীর পক্ষ হতে যে আত্মীয়তা হয়, তাকে صهر বলা হয়। [আদওয়াউল বায়ান, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) তিনিই মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি মানবজাতির মধ্যে রক্তগত ও বৈবাহিক সন্ধি স্থাপন করেছেন। [1] তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।
[1] نسب বলতে (রক্তগত) আত্মীয়তা যা মা-বাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর صِهر বলতে (বৈবাহিক) আত্মীয়তা যা বিবাহের পর স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয়, যাকে আমরা বৈবাহিক সম্বন্ধ বলে থাকি। এই দুই ধরনের আত্মীয়দের বিস্তারিত আলোচনা সূরা নিসার ২২-২৩নং আয়াতে করা হয়েছে। দুধ-সম্পর্কিত আত্মীয়তা হাদীসানুসারে বংশগত আত্মীয়তারই শামিল। যেমন, নবী (সাঃ) বলেছেন, يحرم من الرضاع ما يحرم من النسب (বুখারী ২৬৪৫ নং, মুসলিম ১০৭০ নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৫
وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَنۡفَعُهُمۡ وَ لَا یَضُرُّهُمۡ ؕ وَ كَانَ الۡكَافِرُ عَلٰی رَبِّهٖ ظَهِیۡرًا ﴿۵۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৫. আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করে, যা তাদের উপকার করতে পারে না এবং তাদের অপকারও করতে পারে না। আর কাফের তো তার রব-এর বিরোধিতায় সহযোগিতাকারী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৫) ওরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর উপাসনা করে, যা ওদের উপকার করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না। আর অবিশ্বাসী তো স্বীয় প্রতিপালকের বিরোধী।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৬
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ اِلَّا مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا ﴿۵۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৬. আর আমরা তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৬) আমি তো তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৭
قُلۡ مَاۤ اَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَیۡهِ مِنۡ اَجۡرٍ اِلَّا مَنۡ شَآءَ اَنۡ یَّتَّخِذَ اِلٰی رَبِّهٖ سَبِیۡلًا ﴿۵۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৭. বলুন, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোন বিনিময় চাই না, তবে যে তার রব এর দিকের পথ অবলম্বন করার ইচ্ছা করে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৭) বল, ‘আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না; কিন্তু যে চায় সে তার প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করতে পারে।’ [1]
[1] অর্থাৎ, এটাই আমার প্রতিদান ও পারিশ্রমিক যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তা অবলম্বন করে নাও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৮
وَ تَوَكَّلۡ عَلَی الۡحَیِّ الَّذِیۡ لَا یَمُوۡتُ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِهٖ ؕ وَ كَفٰی بِهٖ بِذُنُوۡبِ عِبَادِهٖ خَبِیۡرَا ﴿ۚۛۙ۵۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৮. আর আপনি নির্ভর করুন তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তার সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, তিনি তার বান্দাদের পাপ সম্পর্কে অবহিত হিসেবে যথেষ্ট।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৮) তুমি তাঁর উপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তাঁর দাসদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৫৯
ۣالَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۚۛ اَلرَّحۡمٰنُ فَسۡـَٔلۡ بِهٖ خَبِیۡرًا ﴿۵۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫৯. তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন। তিনিই রাহমান, সুতরাং তাঁর সম্বন্ধে যে অবহিত তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৯) তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে আরোহণ করেন। তিনিই দয়াময়, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান২৫ : ৬০
وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمُ اسۡجُدُوۡا لِلرَّحۡمٰنِ قَالُوۡا وَ مَا الرَّحۡمٰنُ ٭ اَنَسۡجُدُ لِمَا تَاۡمُرُنَا وَ زَادَهُمۡ نُفُوۡرًا ﴿ٛ۶۰﴾ (سُجود)
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬০. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, সিজদাবনত হও রাহমান এর প্রতি, তখন তারা বলে রাহমান আবার কি?(১) তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? আর এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পায়। [সাজদাহ] ۩
(১) মক্কার কাফেররা এ নামটি যে জানত না তা নয়। তারা এ নামটি জানত। তবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করতে দ্বিধা করত। তারা এ নামটিকে কোন কোন মানুষকেও প্রদান করত। অথচ এ নামটি এমন এক নাম যা শুধুমাত্র মহান রাব্বুল আলমীনের জন্যই নির্দিষ্ট। কোন ক্রমেই অন্য কারো জন্য এ নামটিকে নাম হিসেবে বা গুণ হিসেবে ব্যবহার করা জায়েয নেই। কিন্তু তারা হঠকারিতাবশতঃ প্রশ্ন করল যে, রহমান কে এবং কি? হুদায়বিয়ার সন্ধির দিনও তারা এমনটি অস্বীকার করে বলেছিলঃ “আমরা রহমান বা রহীম কি জিনিস তা জানিনা; বরং যেভাবে তুমি আগে লিখতে, সেভাবে ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ লিখা।” [মুসলিমঃ ১৭৮৪] সূরা আল-ইসরার ১১০ নং আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে তার এ নামের তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেছেন যে, “আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যেভাবেই ডাক এগুলো তার সুন্দর নামসমূহের অন্তর্গত”।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) যখন ওদেরকে বলা হয়, ‘পরম দয়াময়ের প্রতি তোমরা সিজদাবনত হও।’ তখন ওরা বলে, ‘পরম দয়াময় আবার কে? তুমি কাউকেও সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব?’ আর এতে ওদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] رحمن و رحيم (রাহমান ও রাহীম) আল্লাহর সুন্দর গুণ ও নামাবলীর মধ্যে দু’টি গুণবাচক নাম। কিন্তু জাহেলী যুগের লোকেরা আল্লাহকে উক্ত নামে চিনত না। যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র লেখার সময় শুরুতে بسم الله الرحمن الرحيم লেখা হলে মক্কার মুশরিকরা বলেছিল, আমরা রাহমান ও রাহীমকে জানি না। باسمك اللّهم লেখ। (সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৩১৭) আরো দেখুন সূরা বানী ইস্রাঈল ১১০ এবং সূরা রা’দ ৩০নং আয়াত; এখানেও কাফেরদের ‘রাহমান’ নাম শুনে চমকে যাওয়া ও সিজদা করতে অস্বীকার করার কথা বর্ণিত হয়েছে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন। -সম্পাদক)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান