بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১২/ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف আয়াতঃ ১১১ মাক্কী
১২ : ৫১ قَالَ مَا خَطۡبُكُنَّ اِذۡ رَاوَدۡتُّنَّ یُوۡسُفَ عَنۡ نَّفۡسِهٖ ؕ قُلۡنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا عَلِمۡنَا عَلَیۡهِ مِنۡ سُوۡٓءٍ ؕ قَالَتِ امۡرَاَتُ الۡعَزِیۡزِ الۡـٰٔنَ حَصۡحَصَ الۡحَقُّ ۫ اَنَا رَاوَدۡتُّهٗ عَنۡ نَّفۡسِهٖ وَ اِنَّهٗ لَمِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۵۱﴾
قال ما خطبكن اذ راودتن یوسف عن نفسهٖ قلن حاش لله ما علمنا علیه من سوٓء قالت امرات العزیز الـٔن حصحص الحق انا راودتهٗ عن نفسهٖ و انهٗ لمن الصدقین ﴿۵۱﴾
• বাদশাহ বলল, ‘তোমরা যখন ইউসুফকে কুপ্ররোচনা দিয়েছিলে তখন তোমাদের কী হয়েছিল’? তারা বলল, ‘মহিমা আল্লাহর! আমরা তার ব্যাপারে খারাপ কিছু জানি না’। আযীয পত্নী বলল, ‘এখন সত্য প্রকাশ পেয়েছে, আমিই তাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছি। আর নিশ্চয় সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’।

-আল-বায়ান

• রাজা মহিলাদের জিজ্ঞেস করল- ‘তোমরা যখন ইউসুফকে ভুলাতে চেষ্টা করেছিলে তখন তোমাদের কী হয়েছিল?’ তারা বলল, ‘আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন! আমরা তার মাঝে কোন দোষ দেখতে পাইনি।’ আযীযের স্ত্রী বলল, ‘এখন সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, আমিই তাকে ভুলাতে চেষ্টা করেছিলাম, নিশ্চয়ই সে ছিল সত্যবাদী।’

-তাইসিরুল

• বাদশাহ নারীদেরকে বললঃ যখন তোমরা ইউসুফ হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলে তখন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বললঃ অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। আযীযের স্ত্রী বললঃ এক্ষণে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল, আমিই তার হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলাম, সেতো সত্যবাদী।

-মুজিবুর রহমান

• Said [the king to the women], "What was your condition when you sought to seduce Joseph?" They said, "Perfect is Allah! We know about him no evil." The wife of al-'Azeez said, "Now the truth has become evident. It was I who sought to seduce him, and indeed, he is of the truthful.

-Sahih International

৫১. রাজা নারীদেরকে বলল, যখন তোমরা ইউসুফ থেকে অসৎকাজ কামনা করেছিলে, তখন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বলল, অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি। আযীযের স্ত্রী বলল, এতদিনে সত্য প্রকাশ হল, আমিই তাকে প্ররোচনা দিয়েছিলাম, আর সে তো অবশ্যই সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) রাজা মহিলাদেরকে বলল, ‘কী ব্যাপার তোমাদের? যখন তোমরা ইউসুফের কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছিলে, (তখন কি সে সম্মত হয়েছিল?)’ তারা বলল, ‘আল্লাহ পবিত্র! আমরা তার মধ্যে কোন দোষ দেখিনি।’[1] আযীযের স্ত্রী বলল, ‘এক্ষণে সত্য প্রকাশ পেয়ে গেল। আমিই তার কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছিলাম, আর সে অবশ্যই সত্যবাদী। [2]

[1] বাদশার জিজ্ঞাসাবাদে সমস্ত মহিলা ইউসুফ (আঃ) এর পবিত্রতার কথা স্বীকার করল।

[2] এখন আযীযের স্ত্রী যুলাইখারও এই কথা স্বীকার করা ছাড়া কোন উপায় থাকল না। সে স্বীকার করল যে, ইউসুফ নির্দোষ এবং প্রেমের পয়গাম আমার পক্ষ থেকেই ছিল। ইউসুফের এই ত্রুটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫২ ذٰلِكَ لِیَعۡلَمَ اَنِّیۡ لَمۡ اَخُنۡهُ بِالۡغَیۡبِ وَ اَنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِیۡ كَیۡدَ الۡخَآئِنِیۡنَ ﴿۵۲﴾
ذلك لیعلم انی لم اخنه بالغیب و ان الله لا یهدی كید الخآئنین ﴿۵۲﴾
• এটি এ জন্য যে, যাতে সে জানতে পারে, আমি তার অনুপস্থিতিতে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আর আল্লাহ অবশ্যই বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে দেন না।

-আল-বায়ান

• (ইউসুফ বলল) ‘আমার উদ্দেশ্য এই যে, সে (অর্থাৎ আযীয) যেন জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি আর আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের কৌশলকে অবশ্যই সফল হতে দেন না।’

-তাইসিরুল

• সে বললঃ আমি এটা বলেছিলাম যাতে সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং আল্লাহ বিশ্বাস ঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেননা।

-মুজিবুর রহমান

• That is so al-'Azeez will know that I did not betray him in [his] absence and that Allah does not guide the plan of betrayers.

-Sahih International

৫২. এটা এ জন্যে যে, যাতে সে জানতে পারে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) এটা এ জন্য যে, যাতে সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি[1] এবং আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না। [2]

[1] জেলখানাতে যখন ইউসুফ (আঃ)-কে এই সমস্ত সংবাদ জানানো হল, তখন তিনি তা শ্রবণ করে এই কথা বলেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি বাদশার নিকট গিয়ে এই কথা বলেছিলেন এবং কোন কোন তফসীরকারকের নিকট এটাও যুলাইখারই উক্তি ছিল। উদ্দেশ্য এই যে, ইউসুফ (আঃ)-এর অনুপস্থিতিতেও তাকে মিথ্যাভাবে অপবাদ দিয়ে খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করব না। বরং আমানতদারীর চাহিদা সামনে রেখেই আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। অথবা উদ্দেশ্য এই যে, আমি আমার স্বামীর খিয়ানত করিনি এবং কোন বড় পাপ করে বসিনি। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

[2] যে, সে আপন ছলনা ও চক্রান্তে সর্বদা কৃতকার্য থাকবে। বরং তার প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকে ও সাময়িক হয়। পরিশেষে সত্য ও সত্যবাদীরই জয় হয়। সত্যবাদীদেরকে সাময়িক কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় মাত্র।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৩ وَ مَاۤ اُبَرِّیٴُ نَفۡسِیۡ ۚ اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیۡ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۵۳﴾
و ما ابریٴ نفسی ان النفس لامارۃ بالسوٓء الا ما رحم ربی ان ربی غفور رحیم ﴿۵۳﴾
• ‘আর আমি আমার নাফ্সকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফ্স মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

-আল-বায়ান

• (সে বলল), ‘আমি নিজেকে দোষমুক্ত মনে করি না, নফস্ তো মন্দ কাজে প্ররোচিত করতেই থাকে, আমার প্রতিপালক যার প্রতি দয়া করেন সে ছাড়া। আমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’

-তাইসিরুল

• আমি নিজকে নির্দোষ মনে করিনা, মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্ম-প্রবণ। কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার রাব্ব অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার রাব্ব অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

-মুজিবুর রহমান

• And I do not acquit myself. Indeed, the soul is a persistent enjoiner of evil, except those upon which my Lord has mercy. Indeed, my Lord is Forgiving and Merciful."

-Sahih International

৫৩. আর আমি নিজকে নির্দোষ মনে করিনা, কেননা নিশ্চয় মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে(১), কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন(২)। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(১) এখানে আযীয-পত্নী কর্তৃক ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর নির্দোষিতা ঘোষিত হয়েছে। অর্থাৎ আযীয-পত্নী তখন বললেনঃ “এখন সত্য প্রকাশিত হয়েছে, আমিই তাকে ফুসলিয়েছিলাম, অবশ্যই সে (ইউসুফ) সত্যবাদীদের অন্তর্গত। আর এটা আমি এ জন্যই বলছি, যাতে করে সবাই জানতে পারে যে, আমি তার (ইউসুফের) অনুপস্থিতিতে তার প্রতি কোন মিথ্যা ও খেয়ানতের অপবাদ দিচ্ছি না। [ইবনুল কাইয়্যেম: রাওদাতুল মুহিব্বীন ২৯৯] আর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা যারা খেয়ানত করে তাদের চক্রান্ত সফল হতে দেন না। আর আমি আমার নিজ আত্মাকে নির্দোষ বলছি না। আত্মা তো খারাপ কাজের নির্দেশই দেয়, অবশ্য যাদেরকে আল্লাহ করুনা করেছেন, তাদের কথা ভিন্ন। নিঃসন্দেহে আমার রব অতীব ক্ষমাশীল, দয়াময়।” এ তিনটি আয়াতই আযীয-পত্নী বলেছিল। ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর আত্মা নফসে আম্মারা বা খারাপ কাজের আদেশদানকারী আত্মা নয়। এ ব্যাপারে সত্যাম্বেষী আলেমগণ সবাই একমত। সুতরাং এখানে আযীয-পত্নী নিজ আত্মার কথাই বলেছে। আর তার আত্মা অবশ্যই নফসে আম্মারা ছিল, ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম-এর আত্মা নয়। [দেখুন, ইবন কাসীর; ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিববীন, ২৯৯-৩০০]

(২) মানব মন আপন সত্তার দিকে মন্দ কাজের আদেশদাতা। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহ ও আখেরাতের ভয়ে মনের আদেশ পালনে বিরত থাকে, তখন তা لَوَّامَة হয়ে যায়। অর্থাৎ মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারকারী ও মন্দ কাজ থেকে তাওবাকারী এবং যখন কোন মানুষ নিজের মনের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা করতে করতে মনকে এ স্তরে পৌছিয়ে দেয় যে, তার মধ্যে মন্দ কাজের কোন স্পৃহাই অবশিষ্ট থাকে না, তখন তা مُطْمَئِنَّة হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রশান্ত ও নিরুদ্বেগ মন। পুণ্যবানরা চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে এ স্তর অর্জন করতে পারে। [ইবনুল কাইয়্যেম, আর রূহ: ২২০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, [1] মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ, [2] কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন।[3] নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

[1] এটা যদি ইউসুফ (আঃ)-এর উক্তি হয়, তাহলে এটা তাঁর পক্ষ থেকে আত্মবিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। কেননা এটা সুস্পষ্ট যে, সব দিক থেকেই তাঁর পবিত্রতা সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। পক্ষান্তরে এটা যদি মিশরের বাদশার স্ত্রীর কথা হয়, (যেমন ইবনে কাসীরের মত) তাহলে তা বাস্তবের উপরই প্রতিষ্ঠিত। কেননা সে নিজের অপরাধ এবং ইউসুফ (আঃ)-কে ফুসলানো ও ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করানোর কথা স্বীকার করেছিল।

[2] এটা সে তার নিজের কৃত অপরাধের কারণ উল্লেখ করে বলছে যে, মানুষের মনের প্রবণতা এমন যে, সে তাকে মন্দ কর্মের প্রতি প্ররোচিত করে এবং খারাপ কাজের দিকে অগ্রসর করে।

[3] অর্থাৎ, মনের কুপ্রবণতা থেকে সেই বেঁচে থাকে, যার প্রতি আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা হয়। যেমন তিনি ইউসুফ (আঃ)-কে বাঁচিয়ে নিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৪ وَ قَالَ الۡمَلِكُ ائۡتُوۡنِیۡ بِهٖۤ اَسۡتَخۡلِصۡهُ لِنَفۡسِیۡ ۚ فَلَمَّا كَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّكَ الۡیَوۡمَ لَدَیۡنَا مَكِیۡنٌ اَمِیۡنٌ ﴿۵۴﴾
و قال الملك ائتونی بهٖ استخلصه لنفسی فلما كلمهٗ قال انك الیوم لدینا مكین امین ﴿۵۴﴾
• আর বাদশাহ বলল, ‘তোমরা তাকে আমার নিকট নিয়ে আস, আমি তাকে নিজের জন্য আপন করে নেব’। অতঃপর যখন সে তার সাথে কথা বলল, তখন বলল, ‘নিশ্চয় আজ তুমি আমাদের নিকট মর্যাদাবান ও আস্থাভাজন’।

-আল-বায়ান

• রাজা বললেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে আমার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নেব।’ অতঃপর সে (ইউসুফ) যখন তার সাথে কথা বলল, তখন রাজা বলল, ‘আজ তুমি আমাদের কাছে খুবই মর্যাদাশীল ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিগণিত।’

-তাইসিরুল

• বাদশাহ বললঃ ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে একান্ত সহচর নিযুক্ত করব। অতঃপর বাদশাহ যখন তার সাথে কথা বলল তখন রাজা বললঃ আজ তুমি আমাদের কাছে মর্যাদাবান ও বিশ্বাস ভাজন হলে।

-মুজিবুর রহমান

• And the king said, "Bring him to me; I will appoint him exclusively for myself." And when he spoke to him, he said, "Indeed, you are today established [in position] and trusted."

-Sahih International

৫৪. আর রাজা বলল, ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে আস; আমি তাকে আমার নিজের জন্য আপন করে নেব। তারপর রাজা যখন তার সাথে কথা বলল, তখন রাজা বলল, ‘আজ আপনি তো আমাদের কাছে মর্যাদাশীল আস্থাভাজন।(১)

(১) অর্থাৎ বাদশাহ যখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর দাবী অনুযায়ী মহিলাদের কাছে ঘটনার তদন্ত করলেন এবং আযীয-পত্নী ও অন্যান্য সব মহিলা বাস্তব ঘটনা স্বীকার করল, তখন বাদশাহ নির্দেশ দিলেনঃ ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-কে আমার কাছে নিয়ে আসো- যাতে তাকে একান্ত উপদেষ্টা করে নেই। নির্দেশ অনুযায়ী তাকে সসম্মানে কারাগার থেকে দরবারে আনা হল। অতঃপর পারস্পরিক আলাপ ও আলোচনার ফলে তার যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বাদশাহ বললেনঃ আপনি আজ থেকে আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানাহ এবং বিশ্বস্ত। অর্থাৎ আপনার কথা গ্রহণযোগ্য এবং আপনি এমনই বিশ্বস্ত যে আপনার পক্ষ থেকে কোন গাদ্দারীর ভয় নেই। [কুরতুবী, সংক্ষেপিত]

এটা যেন বাদশাহর পক্ষ থেকে এ মর্মে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে, আপনার হাতে যে কোন দায়িত্বপূর্ণ কাজ সোপর্দ করা যেতে পারে। স্বপ্ন এবং অনাগত পরিস্থিতির ব্যাপারে বাদশাহ বললেনঃ এখন কি করা দরকার? ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেনঃ প্রথম সাত বছর খুব বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় অধিকতর পরিমাণে চাষাবাদ করে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে অধিক ফসল ফলানোর জন্য নির্দেশ দিতে হবে। উৎপন্ন ফসলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজের কাছে সঞ্চিতও রাখতে হবে।

এভাবে দুর্ভিক্ষের সাত বছরের জন্য মিসরবাসীর কাছে প্রচুর শস্যভাণ্ডার মজুদ থাকবে এবং আপনি তাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিন্ত থাকবেন। রাজস্ব আয় ও খাস জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল সরকারের হাতে আসবে, তা ভিনদেশী লোকদের জন্য রাখতে হবে। কারণ এ দুর্ভিক্ষ হবে সুদূরদেশ অবধি বিস্তৃত। ভিনদেশীরা তখন আপনার মুখাপেক্ষী হবে। আপনি খাদ্যশস্য দিয়ে সেসব আর্তমানুষকে সাহায্য করবেন। বিনিময়ে যৎকিঞ্চিৎ মূল্য গ্রহণ করলেও সরকারী ধনভাণ্ডারে অভূতপূর্ব অর্থ সমাগত হবে।

এ পরামর্শ শুনে বাদশাহ মুগ্ধ ও আনন্দিত হয়ে বললেনঃ এ বিরাট পরিকল্পনার ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে এবং কে করবে? ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেন, জমির উৎপন্ন ফসলসহ দেশীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আপনি আমাকে সোপর্দ করুন। আমি এগুলোর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম এবং ব্যয়ের খাত ও পরিমাণ সম্পর্কেও আমার পুরোপুরি জ্ঞান আছে। [কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত] যেখানে যে পরিমাণ ব্যয় করা জরুরী, সেখানে সেই পরিমাণ ব্যয় করব এবং এক্ষেত্রে কোন কম-বেশী করব না। حَفِيظ শব্দটি প্রথম প্রয়োজনের এবং عَلِيم শব্দটি দ্বিতীয় প্রয়োজনের নিশ্চয়তা।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) রাজা বলল, ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এস, আমি তাকে আমার একান্ত সহচর নিযুক্ত করব।[1] অতঃপর রাজা যখন তার সাথে কথা বলল, তখন বলল, ‘আজ তুমি আমাদের কাছে মর্যাদাবান ও বিশ্বাসভাজন।’ [2]

[1] যখন বাদশা আযীয (রাইয়ান বিন অলীদ)-এর সামনে ইউসুফ (আঃ)-এর জ্ঞান ও মর্যাদা সহ তাঁর চরিত্রের উৎকর্ষতা ও পবিত্রতাও প্রস্ফুটিত হয়ে গেল, তখন তিনি আদেশ করলেন যে, তাঁকে (ইউসুফ (আঃ)-কে) আমার কাছে পেশ কর; আমি তাঁকে আমার সঙ্গী (প্রিয়পাত্র) ও মন্ত্রী (পরামর্শদাতা) বানাতে চাই।

[2] مَكِيْنٌ অর্থাৎ মর্যাদার অধিকারী এবং أمِيْنٌ (বিশ্বস্ত) অর্থাৎ রাষ্ট্র রহস্যবিদ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৫ قَالَ اجۡعَلۡنِیۡ عَلٰی خَزَآئِنِ الۡاَرۡضِ ۚ اِنِّیۡ حَفِیۡظٌ عَلِیۡمٌ ﴿۵۵﴾
قال اجعلنی علی خزآئن الارض انی حفیظ علیم ﴿۵۵﴾
• সে বলল, ‘আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্ব দিন, নিশ্চয় আমি যথাযথ হেফাযতকারী, সুবিজ্ঞ’।

-আল-বায়ান

• সে (ইউসুফ) বলল- ‘আমাকে দেশের ধন-ভান্ডারের দায়িত্ব দিন, আমি উত্তম রক্ষক ও যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী।’

-তাইসিরুল

• সে বললঃ আমাকে কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি উত্তম সংরক্ষণকারী, অতিশয় জ্ঞানবান।

-মুজিবুর রহমান

• [Joseph] said, "Appoint me over the storehouses of the land. Indeed, I will be a knowing guardian."

-Sahih International

৫৫. ইউসুফ বললেন, আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৫) সে বলল, ‘আমাকে দেশের কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত করুন।[1] নিশ্চয়ই আমি সুসংরক্ষণকারী, সুবিজ্ঞ।’ [2]

[1] خَزَائِنُ শব্দটি خِزَانَةٌ শব্দের বহুবচন। خِزَانَةٌ এমন স্থানকে বলা হয় যেখানে জিনিসপত্র হিফাযতে রাখা হয়। خَزَائِنُ الْأرْضِ বলতে সেই সব গুদামকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে রসদ-শস্য জমা করা হতো অর্থাৎ, শস্যাগার। তিনি এ (শস্যাগারের) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব¸ নিজ হাতে নেওয়ার ইচ্ছা এই জন্য প্রকাশ করলেন, যাতে (স্বপ্নের তা’বীর বা ব্যাখ্যা অনুসারে) আসন্ন দুর্ভিক্ষের জন্য উচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে শস্য সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। সাধারণ অবস্থায় যদিও পদ বা নেতৃত্ব প্রার্থনা করা বৈধ নয়, কিন্তু ­ইউসুফ (আঃ)-এর এই পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে জানা যায় যে, বিশেষ অবস্থায় যদি কোন লোক এটা মনে করে যে, জাতি ও রাষ্ট্রের উপর আগত সঙ্কটের উচিত ব্যবস্থার যথাযথ যোগ্যতা আমার মধ্যে বিদ্যমান, যা অন্যের মধ্যে নেই, তাহলে সে নিজের যোগ্যতা অনুসারে এই বিশেষ পদ প্রার্থনা করতে পারে। পক্ষান্তরে ইউসুফ (আঃ) মূলতঃ পদ প্রার্থনাই করেননি। বরং যখন মিসরের রাজা তাঁর সামনে এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন তিনি এমন পদ গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন, যাতে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি জাতি ও রাষ্ট্রের সেবা সুন্দর ও সহজভাবে করতে পারেন।

[2] حفيظ অর্থাৎ, আমি শস্যাগারের এমনভাবে সুরক্ষা করব যে, আমি কখনো তার অপব্যয় ঘটতে দিব না। عَلِيْمٌ অর্থাৎ, শস্য জমা করা, ব্যয় করা এবং রাখার ও বের করার উত্তম জ্ঞান রাখি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৬ وَ كَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِیُوۡسُفَ فِی الۡاَرۡضِ ۚ یَتَبَوَّاُ مِنۡهَا حَیۡثُ یَشَآءُ ؕ نُصِیۡبُ بِرَحۡمَتِنَا مَنۡ نَّشَآءُ وَ لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۵۶﴾
و كذلك مكنا لیوسف فی الارض یتبوا منها حیث یشآء نصیب برحمتنا من نشآء و لا نضیع اجر المحسنین ﴿۵۶﴾
• আর এমনিভাবে আমি ইউসুফকে যমীনে কর্তৃত্ব প্রদান করেছি, সে তার যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত। আমি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত দান করি, আর আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না।

-আল-বায়ান

• এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম। দেশের যেখানে ইচ্ছে সে নিজের স্থান করে নিতে পারত, আমি যাকে চাই আমার রহমাত দিয়ে ধন্য করি, আমি সৎকর্মশীলদের কর্মফল কক্ষনো বিনষ্ট করি না।

-তাইসিরুল

• এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম। সে সেই দেশে যথা ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত। আমি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি দয়া করি, আর আমি সৎ কর্মপরায়ণদের শ্রমফল বিনষ্ট করিনা।

-মুজিবুর রহমান

• And thus We established Joseph in the land to settle therein wherever he willed. We touch with Our mercy whom We will, and We do not allow to be lost the reward of those who do good.

-Sahih International

৫৬. আর এভাবে ইউসুফকে আমরা সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম; সে দেশে তিনি যেখানে ইচ্ছে অবস্থান করতে পারতেন। আমরা যাকে ইচ্ছে তার প্রতি আমাদের রহমত দান করি; এবং আমরা মুহসিনদের পুরস্কার নষ্ট করি না।(১)

(১) অর্থাৎ আমি ইউসুফকে বাদশাহর দরবারে যেভাবে মান-সম্মান ও উচ্চ পদমর্যাদা দান করেছি, এমনিভাবে আমি তাকে সমগ্র মিসরের শাসনক্ষমতা দান করেছি। এখানে সে যেভাবে ইচ্ছা আদেশ জারি করতে পারে। আমি যাকে ইচ্ছা, স্বীয় রহমত ও নেয়ামত দ্বারা সৌভাগ্যমণ্ডিত করি এবং আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না।

তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেনঃ এসব প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রাজক্ষমতা দ্বারা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল আল্লাহর বিধি-বিধান জারি করা এবং তার দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি কোন সময় এ কর্তব্য বিস্মৃত হননি এবং অব্যাহতভাবে বাদশাহকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। তার অবিরাম দাওয়াত ও প্রচেষ্টার ফলে শেষ পর্যন্ত বাদশাহও মুসলিম হয়ে যান। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) এইভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম; সে ঐ দেশে যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত।[1] আমি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি দয়া করে থাকি। আর আমি সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না।[2]

[1] অর্থাৎ আমি ইউসুফ (আঃ)-কে ঐ দেশের উপর এমন শক্তি ও কৌশল প্রদান করলাম যে, মিসরের রাজা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতেন এবং তিনি মিসরের মাটিতে এমন অধিকার প্রয়োগ করতেন, যেমন কোন মানুষ নিজ গৃহে প্রয়োগ করে থাকে। তিনি যেখানে ইচ্ছা সেখানে অবস্থান করতেন, পুরা মিসর ছিল তাঁর পরিপূর্ণ অধীনস্থ।

[2] এটা যেন তাঁর সেই সবরের সুফল, যা তিনি ভাইদের অন্যায়-অত্যাচারের উপর করেছিলেন এবং ঐ সুদৃঢ় পদক্ষেপের (বদলা ছিল) যা তিনি যুলাইখার পাপের আহবানের মোকাবিলায় এখতিয়ার করেছিলেন এবং সেই দৃঢ়তার (বদলা ছিল), যা তিনি কয়েদখানার জীবনে অবলম্বন করেছিলেন। ইউসুফ (আঃ)-এর এই পদ সেই পদ ছিল, যার উপর ইতিপূর্বে মিসরের সেই রাজা অধিষ্ঠিত ছিলেন, যাঁর স্ত্রী ইউসুফ (আঃ)-কে ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল। কারো কারো মন্তব্য যে, উক্ত রাজা ইউসুফ (আঃ)-এর দা’ওয়াত ও তবলীগে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। অনুরূপ কারো কারো মন্তব্য যে, মিসরের রাজা ইতফীরের মৃত্যুর পর ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে যুলাইখার বিয়ে হয়েছিল এবং দুটি সন্তানও হয়েছিল; একজনের নাম আফরাইম এবং দ্বিতীয়জনের নাম মীশা ছিল। আফরাইমই ছিল ইউশা’ বিন নূন ও আইউব (আঃ)-এর স্ত্রী ‘রাহমাত’-এর পিতা। (তাফসীর ইবনে কাসীর) কিন্তু এ কথাটা কোন বিশ্বস্ত সূত্রে প্রমাণিত নয়, তাই বিবাহ সংক্রান্ত কথাটা বিশুদ্ধ বলে মনে হয় না। এ ছাড়া উক্ত মহিলার পক্ষ থেকে পূর্বে যে অসদাচরণ প্রদর্শিত হয়েছিল, তার কারণে এক নবী পরিবারের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম হওয়ার কথা নেহাতই অনুচিত মনে হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৭ وَ لَاَجۡرُ الۡاٰخِرَۃِ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ كَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ ﴿۵۷﴾
و لاجر الاخرۃ خیر للذین امنوا و كانوا یتقون ﴿۵۷﴾
• আর যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আখিরাতের প্রতিদানই উত্তম।

-আল-বায়ান

• আর আখেরাতের কর্মফল তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম যারা ঈমান আনে আর তাকওয়া অবলম্বন করে কাজ করতে থাকে।

-তাইসিরুল

• যারা মু’মিন ও মুত্তাকী তাদের পরকালের পুরস্কারই উত্তম।

-মুজিবুর রহমান

• And the reward of the Hereafter is better for those who believed and were fearing Allah.

-Sahih International

৫৭. আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের পুরস্কারই উত্তম।(১)

(১) অর্থাৎ আখেরাতের প্রতিদান ও সওয়াব তাদের জন্য দুনিয়ার নেয়ামতের চাইতে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ, যারা ঈমানদার এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে। এখানে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য আখেরাতে যা সঞ্চিত রেখেছেন তা পার্থিব রাষ্ট্রক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করা থেকে উত্তম। [ইবন কাসীর] কেননা, দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ ধ্বংসশীল, আর আখেরাতের সম্পদ চিরস্থায়ী। [কুরতুবী] সুতরাং জেনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ আখেরাতে যে পুরষ্কার দেবেন সেটিই সর্বোত্তম প্রতিদান এবং সেই প্রতিদানটিই মুমিনের কাংখিত হওয়া উচিত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৭) অবশ্যই যারা বিশ্বাসী ও সাবধানী তাদের জন্য পরকালের পুরস্কারই উত্তম।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৮ وَ جَآءَ اِخۡوَۃُ یُوۡسُفَ فَدَخَلُوۡا عَلَیۡهِ فَعَرَفَهُمۡ وَ هُمۡ لَهٗ مُنۡكِرُوۡنَ ﴿۵۸﴾
و جآء اخوۃ یوسف فدخلوا علیه فعرفهم و هم لهٗ منكرون ﴿۵۸﴾
• আর ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে প্রবেশ করল। অতঃপর সে তাদেরকে চিনল, অথচ তারা তাকে চিনতে পারল না।

-আল-বায়ান

• ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে হাযির হল। সে তাদেরকে চিনতে পারল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না।

-তাইসিরুল

• ইউসুফের ভাইয়েরা এলো এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারলনা।

-মুজিবুর রহমান

• And the brothers of Joseph came [seeking food], and they entered upon him; and he recognized them, but he was to them unknown.

-Sahih International

৫৮. আর(১) ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে প্রবেশ করল।(২) অতঃপর তিনি তাদেরকে চিনলেন, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না।

(১) এখানে আবার সাত আট বছরের ঘটনা মাঝখানে বাদ দিয়ে বর্ণনার ধারাবাহিকতা এমন এক জায়গা থেকে শুরু করে দেয়া হয়েছে যেখান থেকে বনী ইসরাঈলের মিসরে স্থানান্তরিত হবার এবং ইয়াকুব আলাইহিস সালামের হারানো ছেলের সন্ধান পাওয়ার সূত্রপাত হয়। মাঝখানে যেসব ঘটনা বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলোর সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে, ইউসুফ আলাইহিস সালামের রাজত্বের প্রথম সাত বছর মিসরে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হয়। এ সময় তিনি আসন্ন দুর্ভিক্ষ সমস্যা দূর করার জন্য পূর্বাহ্নে এমন সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করেন যার পরামর্শ তিনি স্বপ্নের তা’বীর বলার পর বাদশাহকে দিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় দুর্ভিক্ষের যামানা। [ইবন কাসীর]

(২) এ আয়াত থেকে পরবর্তী কয়েক আয়াতে ইউসুফ-ভ্রাতাদের খাদ্যশস্যের জন্যে মিসরে আগমন উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, দুর্ভিক্ষ শুধু মিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং দূর-দূরান্ত অঞ্চল এর করালগ্রাসে পতিত হয়েছিল। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর জন্মভূমি কেনান ছিল ফিলিস্তিনের একটি অংশ। এ এলাকাটিও দুর্ভিক্ষের করালগ্রাস থেকে মুক্ত ছিল না।

ফলে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর পরিবারেও অনটন দেখা দেয়। সাথে সাথেই মিসরের এ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে যে, সেখানে স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর কানে এ সংবাদ পৌছে যে, মিসরের বাদশাহ অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি জনসাধারণের মধ্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করেন। অতঃপর তিনি পুত্রদেরকে বললেনঃ তোমরাও যাও এবং মিসর থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে আসো। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র বিনইয়ামীন ছিলেন ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর সহোদর।

ইউসুফ নিখোঁজ হওয়ার পর ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর স্নেহ ও ভালবাসা তার প্রতিই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। তাই সাস্তুনা ও দেখাশোনার জন্য তাকে নিজের কাছে রেখে দিলেন। দশ ভাই কেনান থেকে মিসর পৌছল। তারা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে চিনল না; কিন্তু ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদেরকে ঠিকই চিনে ফেললেন। এরপর যে কোনভাবেই হোক ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদের কাছ থেকে তাদের আরেক ছোট ভাইয়ের তথ্য উদঘাটন করলেন। তারপর ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদেরকে রাজকীয় মেহমানের মর্যাদায় রাখা এবং যথারীতি খাদ্যশস্য প্রদান করার আদেশ দিলেন। বন্টনের ব্যাপারে ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম-এর রীতি ছিল এই যে, একবারে কোন এক ব্যক্তিকে এক উটের বোঝার চাইতে বেশী খাদ্যশস্য দিতেন না। হিসাব অনুযায়ী যখন তা শেষ হয়ে যেত, তখন পুনর্বার দিতেন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) ইউসুফের ভাইগণ এল এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না। [1]

[1] এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ফল-ফসল-সমৃদ্ধ সাতটি বছর সমাপ্ত হয়ে দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হল, যা মিশর দেশের সমস্ত এলাকা ও শহরকে আক্রমণ করল, এমনকি কানআন পর্যন্ত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ল, যেখানে ইয়াকূব (আঃ) ও ইউসুফ (আঃ)-এর ভায়েরা বসবাস রত ছিলেন। ইউসুফ (আঃ) এই দুর্ভিক্ষের জন্য সুকৌশলের সাথে যে সুব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা সফল হল এবং শস্যপ্রাপ্তির জন্য সব দিক থেকে লোকজন তাঁর কাছে আসতে লাগল। ইউসুফ (আঃ)-এর প্রসিদ্ধি কানআন পর্যন্তও পৌঁছে গেল যে, মিসরের বাদশা এভাবে শস্য বিক্রি করছেন। সুতরাং পিতার আদেশে ইউসুফ (আঃ)-এর ভায়েরাও বাড়ি থেকে পুঁজি নিয়ে শস্য প্রাপ্তির জন্য রাজদরবারে উপস্থিত হলেন, যেখানে ইউসুফ (আঃ) রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ভায়েরা তাঁকে চিনতে পারেননি, কিন্তু তিনি তাঁদেরকে চিনে নিয়েছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৫৯ وَ لَمَّا جَهَّزَهُمۡ بِجَهَازِهِمۡ قَالَ ائۡتُوۡنِیۡ بِاَخٍ لَّكُمۡ مِّنۡ اَبِیۡكُمۡ ۚ اَلَا تَرَوۡنَ اَنِّیۡۤ اُوۡفِی الۡكَیۡلَ وَ اَنَا خَیۡرُ الۡمُنۡزِلِیۡنَ ﴿۵۹﴾
و لما جهزهم بجهازهم قال ائتونی باخ لكم من ابیكم الا ترون انی اوفی الكیل و انا خیر المنزلین ﴿۵۹﴾
• আর সে যখন তাদেরকে তাদের রসদসামগ্রী প্রস্তুত করে দিল, তখন বলল, ‘তোমরা তোমাদের পিতার পক্ষ হতে তোমাদের এক ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আস, তোমরা কি দেখ না, আমি পরিমাপে পূর্ণমাত্রায় দেই এবং আমি উত্তম অতিথিপরায়ণ?

-আল-বায়ান

• সে যখন তাদের দ্রব্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে বলল, ‘তোমরা তোমাদের সৎ ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আসবে, তোমরা কি দেখছ না, আমি কীভাবে পাত্র ভরে দেই, আর আমি উত্তম অতিথি সেবক।

-তাইসিরুল

• আর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে বললঃ তোমরা আমার নিকট তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে এসো; তোমরা কি দেখছনা যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দিই? এবং আমি উত্তম মেযবান?

-মুজিবুর রহমান

• And when he had furnished them with their supplies, he said, "Bring me a brother of yours from your father. Do not you see that I give full measure and that I am the best of accommodators?

-Sahih International

৫৯. আর তিনি যখন তাদেরকে তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিলেন তখন তিনি বললেন(১), তোমরা আমার কাছে তোমাদের পিতার পক্ষ থেকে বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে আস।(২) তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দেই এবং আমি উত্তম অতিথিপরায়ণ।(৩)

(১) ভাইদের কাছে সব বিবরণ জানার পর তার মনে এরূপ আকাঙ্খার উদয় হওয়া স্বাভাবিক যে, তারা পুনর্বার আসুক। এজন্যে একটি প্রকাশ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি স্বয়ং ভাইদেরকে বললেন, তোমরা যখন পুনর্বার আসবে, তখন তোমাদের সে ভাইকেও সঙ্গে নিয়ে এসো। তোমরা দেখতেই পাচ্ছ যে, আমি কিভাবে পুরোপুরি খাদ্যশস্য প্রদান করি এবং কিভাবে অতিথি আপ্যায়ন করি। এরপর একটি সাবধান বাণীও শুনিয়ে দিলেন, তোমরা যদি ভাইকে সাথে না আন, তবে আমি তোমাদের কাউকেই খাদ্যশস্য দেব না। কেননা, আমি মনে করব যে, তোমরা আমার সাথে মিথ্যা বলেছ। এভাবে তোমরা আমার কাছে আসবে না।

অপর একটি গোপন ব্যবস্থা এই করলেন যে, তারা খাদ্যশস্যের মূল্যবাবদ যে নগদ অর্থকড়ি কিংবা অলংকার জমা দিয়েছিল, সেগুলো গোপনে তাদের আসবাবপত্রের মধ্যে রেখে দেয়ার জন্য কর্মচারীদেরকে আদেশ দিলেন, যাতে বাড়ী পৌছে যখন তারা আসবাবপত্র খুলবে এবং নগদ অর্থ ও অলংকার পাবে, তখন যেন পুনর্বার খাদ্যশস্য নেয়ার জন্য আসতে পারে। মোটকথা, ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম কর্তৃক এসব ব্যবস্থা সম্পন্ন করার কারণ ছিল এই যে, ভবিষ্যতেও ভাইদের আগমন যেন অব্যাহত থাকে এবং ছোট সহোদর ভাইয়ের সাথেও তার সাক্ষাত ঘটার সুযোগ উপস্থিত হয়। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(২) এ আয়াতাংশের দুটি অর্থ হতে পারে। এক. তোমরা তোমাদের পিতার কাছ থেকে আরেকজনকে নিয়ে আস, যাতে তোমরা আরও এক বোঝা বেশী নিতে পার। তোমরা কি দেখতে পাওনা যে, মিশরে আমি সুন্দরভাবে সওদার ওজন প্রদান করে থাকি। [তাবারী] তাছাড়া আরেকটি অনুবাদ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের পিতার পক্ষীয় ভাই অর্থাৎ তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে আস। তোমরা তো দেখছ যে আমি পূর্ণ মাপ প্রদান করে থাকি। মাপে কম দেই না। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ] কোন কোন তাফসীরে এসেছে যে, তারা কথায় কথায় তাদের অপর ভাইয়ের কথা ইউসুফের কাছে বর্ণনা করেছিল। তিনি তাদেরকে সেটার সত্যতা নিরূপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে করে তার আপন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায় [যামাখশারী; ফাতহুল কাদীর]

(৩) এর দুই অর্থ হতে পারে, এক. আমি সুন্দর অতিথি পরায়ণ। দুই. আমার এখানে মানুষ নিরাপদ। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) আর সে যখন তাদের খাদ্য-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন বলল, ‘তোমরা আমার নিকট তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে নিয়ে এস। তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপে পূর্ণ মাত্রায় দিই এবং আমিই উত্তম অতিথিপরায়ণ? [1]

[1] ইউসুফ (আঃ) অপরিচিত থেকে স্বীয় ভাইদেরকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করলে তারা অন্যান্য কথা বলার সাথে সাথে এটাও বলে ফেলল যে, আমরা দশ ভাই এখানে উপস্থিত রয়েছি, কিন্তু আরো দুজন বৈমাত্রেয় ভাই আছে, তাদের একজন তো জঙ্গলে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং দ্বিতীয়জনকে আববা সান্ত্বনা স্বরূপ নিজের কাছে রেখে নিয়েছেন, আমাদের সাথে পাঠাননি। তখন ইউসুফ (আঃ) বললেন, আগামীতে তাকেও নিয়ে আসবে, তোমরা কি দেখ না যে, আমি মাপও পরিপূর্ণ দিচ্ছি এবং চমৎকাররূপে আতিথ্যও করছি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ : ৬০ فَاِنۡ لَّمۡ تَاۡتُوۡنِیۡ بِهٖ فَلَا كَیۡلَ لَكُمۡ عِنۡدِیۡ وَ لَا تَقۡرَبُوۡنِ ﴿۶۰﴾
فان لم تاتونی بهٖ فلا كیل لكم عندی و لا تقربون ﴿۶۰﴾
• আর যদি তোমরা তাকে নিয়ে না আস, তাহলে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন পরিমাপকৃত (রসদ) নেই এবং তোমরা আমার নিকটবর্তীও হয়ো না’।

-আল-বায়ান

• তোমরা যদি তাকে না নিয়ে আসো তাহলে আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন শস্য বরাদ্দ হবে না, আর আমার কাছেও আসতে পারবে না।’

-তাইসিরুল

• কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস তাহলে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবেনা এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• But if you do not bring him to me, no measure will there be [hereafter] for you from me, nor will you approach me."

-Sahih International

৬০. কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার কাছে না নিয়ে আস তবে আমার কাছে তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবে না এবং তোমরা আমার ধারে-কাছেও আসবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস, তাহলে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন খাদ্য-সামগ্রী থাকবে না এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী হবে না।’ [1]

[1] লোভ দেওয়ার সাথে এটা ধমক ছিল যে, যদি তোমরা এগার নম্বর ভাইকে সাথে না নিয়ে আসো, তাহলে না তোমরা শস্য পাবে, আর না আমার পক্ষ থেকে আতিথ্যের সুব্যবস্থা থাকবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »