بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ১০/ ইউনুস | Yunus | سورة يونس আয়াতঃ ১০৯ মাক্কী
১০ : ৫১ اَثُمَّ اِذَا مَا وَقَعَ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ ؕ آٰلۡـٰٔنَ وَ قَدۡ كُنۡتُمۡ بِهٖ تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ ﴿۵۱﴾
اثم اذا ما وقع امنتم بهٖ آلـٔن و قد كنتم بهٖ تستعجلون ﴿۵۱﴾
• তবে কি যখন তা ঘটবে, তখন তোমরা তাতে ঈমান আনবে? এখন? অথচ তোমরা এর জন্যই তাড়াহুড়া করতে।

-আল-বায়ান

• তাহলে ওটা বাস্তবে ঘটে যাওয়ার পরই কি তোমরা তাতে বিশ্বাস করতে চাও? (ঘটে যাওয়ার পর বলা হবে) ‘এখন, (বিশ্বাস করলে) এটার জন্য তোমরা তাড়াহুড়ো করছিলে!’

-তাইসিরুল

• তাহলে কি ওটা যখন এসেই পড়বে, তখন ওটা বিশ্বাস করবে? (বলা হবে) হ্যাঁ, এখন মেনে নিলে। অথচ তোমরা ওর জন্য তাড়াহুড়া করছিলে।

-মুজিবুর রহমান

• Then is it that when it has [actually] occurred you will believe in it? Now? And you were [once] for it impatient

-Sahih International

৫১. তবে কি তোমরা এটা ঘটার পর তাতে ঈমান আনবে? এখন?!(১) অথচ তোমরা তো এটাকেই তাড়াতাড়ি পেতে চাইছিলে!

(১) অর্থাৎ তোমরা কি তখন ঈমান আনবে, যখন তোমাদের উপর আযাব পতিত হয়ে যাবে? চাই তা মৃত্যুর সময়ে হোক কিংবা তার পূর্বে। কিন্তু তখন তোমাদের ঈমানের উত্তরে কি বলা হবে- (آلْآنَ) এতক্ষণে ঈমান আনলে, যখন ঈমানের সময় চলে গেছে? যেমন, জলমগ্ন হবার সময়ে ফিরআউন যখন বললঃ “আমি ঈমান আনছি, নিশ্চয়ই কোন হক উপাস্য নেই তিনি ছাড়া যার উপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলরা।” [সূরা ইউনুসঃ ৯০]। উত্তরে বলা হয়েছিল- (آلْآنَ) অর্থাৎ এতক্ষণে ঈমান আনলে? বস্তুতঃ তার ঈমান কবুল করা হয়নি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ না তার মৃত্যুকালীন উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়”। [তিরমিযীঃ ৩৫৩৭, মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৩২, হাকেম মুস্তাদরাকঃ ৪/২৫৭, ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৩, ইবনে হিব্বান ৬২৮] অর্থাৎ মৃত্যুকালীন গরগরা বা উর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর ঈমান ও তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে দুনিয়াতে আযাব সংঘটিত হওয়ার পূর্বাহ্নে তাওবা কবুল হতে পারে। কিন্তু আযাব এসে যাবার পর আর তাওবা কবুল হয় না। আয়াতের শেষে এবং সূরা গাফেরের ৮৪ ও ৮৫ নং আয়াতদ্বয়ে একথাটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরার শেষাংশে ইউনুস আলাইহিস সালাম এর কওমের ঘটনা আসছে যে, তাদের তাওবা কবুল করে নেয়া হয়েছিল, তা এই মূলনীতির ভিত্তিতেই হয়েছিল। কারণ, তারা দূরে থেকে আযাব আসতে দেখেই বিশুদ্ধ-সত্য মনে কেঁদে-কেটে তাওবা করে নিয়েছিল। তাই আযাব সরে যায়। যদি আযাব তাদের উপর পতিত হয়ে যেত, তবে আর তাওবা কবুল হত না।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫১) তাহলে কি তা যখন এসেই পড়বে তখন তা (বা তাঁকে) বিশ্বাস করবে? (বলা হবে,) হ্যাঁ এখন মানলে?[1] অথচ তোমরা এর জন্য তাড়াহুড়া করছিলে।

[1] কিন্তু শাস্তি চলে আসার পর মেনে নেওয়ায় লাভ কি?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫২ ثُمَّ قِیۡلَ لِلَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِ ۚ هَلۡ تُجۡزَوۡنَ اِلَّا بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡسِبُوۡنَ ﴿۵۲﴾
ثم قیل للذین ظلموا ذوقوا عذاب الخلد هل تجزون الا بما كنتم تكسبون ﴿۵۲﴾
• তারপর যারা যুলম করেছে তাদের বলা হবে, স্থায়ী আযাব আস্বাদন কর। তোমরা যা অর্জন করতে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিদান দেয়া হচ্ছে।

-আল-বায়ান

• অবশেষে যালিমদেরকে বলা হবে- ‘স্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছিলে তার প্রতিফল ছাড়া তোমাদের আর কী দেয়া যেতে পারে!

-তাইসিরুল

• অতঃপর যালিমদেরকে বলা হবেঃ চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাক, তোমরাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল পাচ্ছ।

-মুজিবুর রহমান

• Then it will be said to those who had wronged, "Taste the punishment of eternity; are you being recompensed except for what you used to earn?"

-Sahih International

৫২. তারপর যারা যুলুম করত তাদেরকে বলা হবে, স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন কর; তোমরা যা করতে, তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হচ্ছে।(১)

(১) এটা তাদেরকে ধমকের সুরে বলা হবে। কারণ তারা এ আযাবকে অস্বীকার করেছিল। সূরা আত-তুরের ১৩–১৬ নং আয়াতেও তা বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫২) অতঃপর যালেমদেরকে বলা হবে, ‘চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো, তোমাদেরকে তো তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিফলই দেওয়া হচ্ছে।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৩ وَ یَسۡتَنۡۢبِئُوۡنَكَ اَحَقٌّ هُوَ ؕؔ قُلۡ اِیۡ وَ رَبِّیۡۤ اِنَّهٗ لَحَقٌّ ۚؕؔ وَ مَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِیۡنَ ﴿۵۳﴾
و یستنبئونك احق هو قل ای و ربی انهٗ لحق و ما انتم بمعجزین ﴿۵۳﴾
• আর তারা তোমার কাছে জানতে চায়, ‘তা কি সত্য’? বল, ‘হ্যাঁ, আমার রবের কসম! নিশ্চয় তা সত্য এবং তোমরা পরাস্তকারী নও’।

-আল-বায়ান

• তারা তোমার কাছে জানতে চায় (তুমি যা বলছ) সেগুলো কি প্রকৃতই সঠিক? বল-‘হাঁ, আমার রবের কসম! তা একবারেই সত্য। তোমরা তা বানচাল করতে পারবে না।

-তাইসিরুল

• তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, ওটা (শাস্তি) কি যথার্থ বিষয়? তুমি বলে দাওঃ হ্যাঁ, আমার রবের কসম! ওটা নিশ্চিত সত্য; আর তোমরা কিছুতেই আল্লাহকে অপারগ করতে পারবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And they ask information of you, [O Muhammad], "Is it true?" Say, "Yes, by my Lord. Indeed, it is truth; and you will not cause failure [to Allah]."

-Sahih International

৫৩. আর সূরা আপনার কাছে জানতে চায়, এটা কি সত্য? বলুন, হ্যাঁ, আমার রবের শপথ! এটা অবশ্যই সত্য(১) আর তোমরা মোটেই অপারগকারী নও।

(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবীকে আল্লাহর সত্বার শপথ করে কেয়ামত যে আসন্ন তা বলতে নির্দেশ দিচ্ছেন। পবিত্র কুরআনের আরো দুটি স্থানে এ ধরণের নির্দেশ এসেছে, [যেমন সূরা সাবাঃ ৩, এবং আত-তাগাবুনঃ ৭] মূলতঃ কেয়ামতের ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্বের দাবী রাখার কারণেই আল্লাহ তাঁর নবীকে শপথ করে বলার নির্দেশ দিয়েছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৩) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তা (শাস্তি) কি সত্য?’[1] তুমি বল, ‘হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের কসম! তা অবশ্যই সত্য; আর তোমরা কিছুতেই ব্যর্থ করতে পারবে না।’

[1] অর্থাৎ তারা জিজ্ঞাসা করে যে, কিয়ামত এবং পুনরুত্থান (মানুষ মৃত্যুবরণ করে পচে-গলে মাটি হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠা কি সত্য? আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী! তাদেরকে বলে দাও যে, তোমাদের মাটি হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলেও, তা তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ব্যর্থ ও অপারগ করতে পারবে না। অতএব পুনর্জীবন অবশ্যই ঘটবে। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতের মত আয়াত কুরআনে শুধু আর দুটি আছে, যাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর পয়গম্বরকে আদেশ করেছেন যে, তিনি যেন শপথ করে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা প্রচার করেন। প্রথমটি সূরা সাবা’র ৩নং আয়াত, আর দ্বিতীয়টি সূরা তাগাবুনের ৭নং আয়াত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৪ وَ لَوۡ اَنَّ لِكُلِّ نَفۡسٍ ظَلَمَتۡ مَا فِی الۡاَرۡضِ لَافۡتَدَتۡ بِهٖ ؕ وَ اَسَرُّوا النَّدَامَۃَ لَمَّا رَاَوُا الۡعَذَابَ ۚ وَ قُضِیَ بَیۡنَهُمۡ بِالۡقِسۡطِ وَ هُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۵۴﴾
و لو ان لكل نفس ظلمت ما فی الارض لافتدت بهٖ و اسروا الندامۃ لما راوا العذاب و قضی بینهم بالقسط و هم لا یظلمون ﴿۵۴﴾
• আর যমীনে যা রয়েছে, তা যদি যুলম করেছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির হয়ে যায়, তবে তা সে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দেবে এবং তারা লজ্জা গোপন করবে, যখন তারা আযাব দেখবে। আর তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করা হবে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না।

-আল-বায়ান

• যুলম করেছে এমন প্রত্যেকেই দুনিয়াতে যা কিছু আছে যদি তা সব তার হত তবে সে বিনিময়ে তা প্রদান করে ‘আযাব হতে বাঁচতে চাইত। তারা যখন ‘আযাব প্রত্যক্ষ করবে তখন মনের দুঃখ-তাপ গোপন করবে। ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা করা হবে। তাদের প্রতি কোন প্রকার যুলম করা হবে না।

-তাইসিরুল

• আর যদি প্রত্যেক মুশরিকের কাছে এই পরিমাণ (মাল) থাকে যে, তা সমগ্র পৃথিবীর সম পরিমাণ হয় তাহলে সে তা দান করেও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে চাবে; এবং যখন তারা আযাব দেখতে পাবে তখন (নিজেদের) অনুশোচনা প্রকাশ করতে সক্ষম হবেনা, আর তাদের ফাইসালা করা হবে ন্যায়ভাবে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And if each soul that wronged had everything on earth, it would offer it in ransom. And they will confide regret when they see the punishment; and they will be judged in justice, and they will not be wronged

-Sahih International

৫৪. আর যমীনে যা রয়েছে, তা যদি প্রত্যেক যুলুমকারী(১) ব্যক্তির হয়ে যায়, তবে সে মুক্তির বিনিময়ে সেসব দিয়ে দেবে এবং অনুতাপ গোপন করবে যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। আর দের মীমাংসা ন্যায়ভিত্তিক করা হবে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।(২)

(১) এখানে যুলুম বলতে শির্ক ও কুফর বোঝানো হয়েছে। মুয়াসসার কারণ, শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলম। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় শির্ক হচ্ছে বড় যুলুম। [সূরা লুকমান: ১৩]

(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন কাফেরদেরকে উপস্থিত করে বলা হবেঃ যদি তোমার নিকট পৃথিবীর সমান পরিমান স্বর্ণ থাকে, তাহলে কি তুমি এর বিনিময়ে এ শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করবে? তখন তারা বলবেঃ হ্যাঁ, তাকে বলা হবে যে, তোমার নিকট এর চেয়েও সহজ জিনিস চাওয়া হয়েছিল... আমার সাথে আর কাউকে শরীক না করতে কিন্তু তুমি তা মানতে রাজি হওনি। [বুখারীঃ ৬৫৩৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) আর যদি প্রত্যেক যালেমের কাছে পৃথিবীর সমপরিমাণ (মাল) থাকে, তাহলে সে তা মুক্তিপণ দিয়েও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে উদ্যত হবে।[1] যখন তারা আযাব দেখতে পাবে তখন (নিজেদের) মনস্তাপকে গোপন রাখবে। আর তাদের ফায়সালা করা হবে ন্যায়ভাবে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।

[1] অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত প্রকার সম্পদ দিয়েও যদি তারা শাস্তি থেকে রক্ষা পায়, তবে তা দেওয়ার জন্য তৈরী হয়ে যাবে। কিন্তু সেখানে মানুষের নিকট থাকবেই বা কি? উদ্দেশ্য হল যে, শাস্তি থেকে রক্ষার কোন পথই থাকবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৫ اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّ لٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۵﴾
الا ان لله ما فی السموت و الارض الا ان وعد الله حق و لكن اكثرهم لا یعلمون ﴿۵۵﴾
• জেনে রাখ, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে, তা আল্লাহরই। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

-আল-বায়ান

• জেনে রেখ, আসমানসমূহ আর যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। জেনে রেখ, আল্লাহর ওয়া‘দা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ (এ সকল বিষয়) জানে না।

-তাইসিরুল

• সাবধান! আসমানসমূহে এবং যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর; সাবধান! আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করেনা।

-মুজিবুর রহমান

• Unquestionably, to Allah belongs whatever is in the heavens and the earth. Unquestionably, the promise of Allah is truth, but most of them do not know

-Sahih International

৫৫. জেনে রাখ! আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। জেনে রাখ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৫) মনে রেখো যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। মনে রেখো যে, আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই অবগত নয়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৬ هُوَ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۵۶﴾
هو یحیٖ و یمیت و الیه ترجعون ﴿۵۶﴾
• তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।

-আল-বায়ান

• তিনি জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু দেন, আর তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।

-তাইসিরুল

• তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান, আর তোমরা সবাই তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

-মুজিবুর রহমান

• He gives life and causes death, and to Him you will be returned

-Sahih International

৫৬. তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তারই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তোমরা সবাই তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।[1]

[1] উক্ত আয়াতে আকাশ ও পৃথিবীর সকল বস্তুর উপর আল্লাহর পূর্ণ মালিকানা, আল্লাহর ওয়াদার সত্যতা, জীবন ও মরণ তাঁর ইচ্ছায় সংঘটন এবং তাঁর দরবারে সকলের উপস্থিতির বর্ণনা আছে। যার উদ্দেশ্য পূর্বোক্ত আলোচনাকে পরিষ্ফুটিত ও সমর্থন করা। আর তা এই যে, যে সত্তা এত বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পেয়ে মানুষ কোথায় যেতে পারে? এবং হিসাব-নিকাশ নেওয়ার জন্য তিনি যে একটি দিন নির্ধারিত করে রেখেছেন, সে দিন থেকে কে রেহাই পাবে? আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য, কিয়ামত অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে এবং সকল ভাল ও মন্দ লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৭ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُمۡ مَّوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ ۬ۙ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۵۷﴾
یایها الناس قد جآءتكم موعظۃ من ربكم و شفآء لما فی الصدور و هدی و رحمۃ للمؤمنین ﴿۵۷﴾
• হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।

-আল-বায়ান

• হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নাসীহাত আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমাত।

-তাইসিরুল

• (হে মানব জাতি!) তোমাদের কাছে তোমাদের রবের তরফ হতে এমন বিষয় সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নাসীহাত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মু’মিনদের জন্য ওটা পথ প্রদর্শক ও রাহমাত।

-মুজিবুর রহমান

• O mankind, there has to come to you instruction from your Lord and healing for what is in the breasts and guidance and mercy for the believers.

-Sahih International

৫৭. হে লোকসকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে উপদেশ ও অন্তরসমূহে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।(১)

(১) এখানে কুরআনুল কারীমের চারটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে-

এক. (مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ) مَوْعِظَةٌ ও وَعْظٌ এর প্রকৃত অর্থ হলো উৎসাহ কিংবা ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে পরিণাম সম্পর্কে স্মরণ করে দেয়া। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ এমন বিষয় বর্ণনা করা, যা শুনে মানুষের অন্তর কোমল হয় এবং আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে পড়ে। পার্থিব গাফলতীর পর্দা ছিন্ন হয়ে মনে আখেরাতের ভাবনা উদয় হয়। যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লিলতা থেকে বিরত করে। [ইবন কাসীর] কুরআনুল কারীমের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই ‘মাওয়ায়েযে হাসানাহ'-এর অত্যন্ত সালঙ্কার প্রচারক। এর প্রতিটি জায়গায় ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে ভীতি-প্রদর্শন, সওয়াবের সাথে সাথে আযাব, পার্থিব জীবনের কল্যাণ ও কৃতকার্যতার সাথে সাথে ব্যর্থতা ও পথভ্রষ্টতা প্রভৃতির এমন সংমিশ্রিত আলোচনা করা হয়েছে, যা শোনার পর পাথরও পানি হয়ে যেতে পারে।

দুই. কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় গুণ (وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ) বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। شِفَاءٌ অর্থ রোগ নিরাময় হওয়া আর صُدُوْرٌ হলো صَدْرٌ এর বহুবচন, যার অর্থ বুক। আর এর মর্মার্থ অন্তর। সারার্থ হচ্ছে যে, কুরআনুল কারীম অন্তরের ব্যাধিসমূহ যেমন সন্দেহ, সংশয়, নিফাক, মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদির জন্য একান্ত সফল চিকিৎসা ও সুস্থতা এবং রোগ নিরাময়ের অব্যৰ্থ ব্যবস্থাপত্র। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে অন্তরে যে সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা রয়েছে সেগুলোর জন্যও মহৌষধ। [ইবন কাসীর] সঠিক আকীদা বিশ্বাস বিরোধী যাবতীয় সন্দেহ কুরআনের মাধ্যমে দূর হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, কুরআনের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, এটি বিশেষতঃ অন্তরের রোগের শিফা; দৈহিক রোগের চিকিৎসা নয়। কিন্তু অন্যান্য মনীষীবৃন্দ বলেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে কুরআন সর্ব রোগের নিরাময়, তা অন্তরের রোগই হোক কিংবা দেহেরই হোক। [আদ-দুররুল মানসূর]। তবে আত্মিক রোগের ধ্বংসকারিতা মানুষের দৈহিক রোগ অপেক্ষা বেশী মারাত্মক এবং এর চিকিৎসাও যে কারো সাধ্যের ব্যাপার নয়। সে কারণেই এখানে শুধু আন্তরিক ও আধ্যাত্মিক রোগের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে একথা প্রতীয়মান হয় না যে, দৈহিক রোগের জন্য এটি চিকিৎসা নয়। হাদীসের বর্ণনা ও উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এর প্রমাণ যে, কুরআনুল কারীম যেমন আন্তরিক ব্যাধির জন্য অব্যর্থ মহৌষধ, তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধির জন্যও উত্তম চিকিৎসা।

তিন. কুরআনুল কারীমের তৃতীয় গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো হেদায়াত। অর্থাৎ যে তার অনুসরণ করবে তার জন্য সঠিক পথের দিশা প্রদানকারী। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কুরআনকে হেদায়াত বলে অভিহিত করেছেন। যেমন সূরা আল-বাকারার ২য় আয়াত, সূরা আল ইসরার নবম আয়াত, সূরা আল-বাকারাহঃ ৯৭, ১৮৫, সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৮, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭, সূরা আল-আরাফঃ ৫২, ২০৩, সূরা ইউসুফঃ ১১১, সূরা আন-নাহলঃ ৬৪, ৮৯, ১০২, সূরা আয-যুমারঃ ২৩, সূরা ফুসসিলাতঃ ৪৪, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০।

চার. কুরআনুল করীমের চতুর্থ গুণ হচ্ছেঃ কুরআন হলো রহমত। যার এক অর্থ হচ্ছে নে’আমত। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে সূরা আল-ইসরার ৮২, সূরা আল-আনআমঃ ১৫৭, আল-আরাফঃ ১৫২, ২০৩, সূরা ইউসুফঃ ১১১, সূরা আন-নাহলঃ ৬৪, ৮৯, সূরা আল-ইসরাঃ ৮২, সূরা আন-নামলঃ ৭৭, সুরা লুকমানঃ ৩, সূরা আল-জাসিয়াহঃ ২০, সূরা আল-কাসাসঃ ৮৬ নং আয়াতেও কুরআনকে রহমত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই কিন্তু মুমিনদের জন্য কারণ তারাই এর দ্বার উপকৃত হয়, কাফেররা এর দ্বারা উপকৃত হয় না, কারণ তারা এ ব্যাপারে অন্ধ। [মুয়াসসার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৭) হে মানব জাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের তরফ হতে উপদেশ[1] ও অন্তরের রোগের নিরাময়[2] এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথপ্রদর্শক ও করুণা সমাগত হয়েছে। [3]

[1] অর্থাৎ যে ব্যক্তি মন দিয়ে কুরআন পাঠ করবে এবং তার অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, কুরআন তার জন্য উপদেশ। ওয়াযের প্রকৃত অর্থ হল পরিণাম ও ফলাফল স্মরণ করিয়ে দেওয়া; চাহে তা উৎসাহ দানের মাধ্যমে হোক বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। আর একজন উপদেষ্টা (বক্তা) একজন ডাক্তারের মত, তিনি রোগীকে ঐ সকল বস্তু থেকে বিরত থাকতে বলেন, যা রোগীর শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনুরূপ কুরআনও উৎসাহদান ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে ওয়ায-নসীহত করে এবং ঐ সকল পরিণাম ও ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক করে, যা আল্লাহর অবাধ্যাচরণের কারণে ভোগ করতে হবে। আর ঐ সকল কর্ম থেকে নিষেধ করে যে কর্ম দ্বারা মানুষের আখেরাত বরবাদ হয়।

[2] অর্থাৎ, অন্তরে তাওহীদ ও রিসালাত এবং সঠিক ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে যে সন্দেহ ও সংশয়ের রোগ সৃষ্টি হয়, তা দূরীভূত করে এবং কুফরী ও মুনাফিকীর পঙ্কিলতা ও আবর্জনা থেকে হৃদয়কে পরিষ্কার করে দেয়।

[3] এই কুরআন মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত (সুপথ ও করুণা) লাভের অসীলা। প্রকৃতপক্ষে কুরআন পৃথিবীর সকলের জন্য হিদায়াত ও রহমত লাভের কারণ। কিন্তু যেহেতু মু’মিনগণই তার দ্বারা উপকৃত হয়, ফলে এখানে শুধু তাদের জন্যই হিদায়াত ও রহমত বলা হয়েছে। এই বিষয়টি কুরআন কারীমের সূরা বানী ইস্রাঈলের ৮২নং আয়াত ও সূরা সাজদাহর ৪৪নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে। এ ছাড়া (هدًى للمُتَّقِين) এর টীকা দ্রষ্টব্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৮ قُلۡ بِفَضۡلِ اللّٰهِ وَ بِرَحۡمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلۡیَفۡرَحُوۡا ؕ هُوَ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ ﴿۵۸﴾
قل بفضل الله و برحمتهٖ فبذلك فلیفرحوا هو خیر مما یجمعون ﴿۵۸﴾
• বল, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়’। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।

-আল-বায়ান

• বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার বদৌলতে (তা এসেছে), এজন্য তারা আনন্দিত হোক। তারা যা স্তুপীকৃত করছে তার চেয়ে তা (অর্থাৎ হিদায়াত ও রহমাতপূর্ণ কুরআন) উত্তম।

-তাইসিরুল

• তুমি বলে দাওঃ আল্লাহর এই দান ও রাহমাতের প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; তা ওটা (পার্থিব সম্পদ) হতে বহু গুণে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "In the bounty of Allah and in His mercy - in that let them rejoice; it is better than what they accumulate."

-Sahih International

৫৮. বলুন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়। তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।(১)

(১) অর্থাৎ মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা'আলার রহমত ও অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং একমাত্র তাতেই আনন্দিত হওয়া দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও মান-সম্ভ্রম কোনটাই প্রকৃতপক্ষে আনন্দের বিষয় নয়। কারণ, একে তো কেউ যত অধিক পরিমাণেই তা অর্জন করুক না কেন, সবই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে; পরিপূর্ণ হয় না। দ্বিতীয়তঃ সর্বদাই তার পতনাশঙ্কা লেগেই থাকে। তাই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- (هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ) অর্থাৎ আল্লাহর করুণা-অনুগ্রহ সে সমস্ত ধন-সম্পদ ও সম্মান-সাম্রাজ্য অপেক্ষা উত্তম, যেগুলোকে মানুষ নিজেদের সমগ্র জীবনের ভরসা বিবেচনা করে সংগ্রহ করে। এ আয়াতে দুটি বিষয়কে আনন্দ-হর্ষের বিষয় সাব্যস্ত করা হয়েছে। একটি হলো فضل ফদল, অপরটি হলো رحمة রহমত।

আবু সাঈদ খুদরী ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন যে, ফদল অর্থ কুরআন; আর রহমত অর্থ ইসলাম। [কুরতুবী] অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস বলেন, ফদল হচ্ছে, কুরআন, আর তার রহমত হচ্ছে এই যে, তিনি আমাদেরকে কুরআনের অনুসারী করেছেন। হাসান, দাহহাক, মুজাহিদ, কাতাদা বলেন, এখানে ফদল হচ্ছে ঈমান, আর তার রহমত হচ্ছে, কুরআন। [তাবারী; কুরতুবী]

বস্তুতঃ রহমতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন এবং এর উপর আমল করার সামর্থ্য দিয়েছেন। কারণ, ইসলামও এ তথ্যেরই শিরোনাম। যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ইরাকের খারাজ নিয়ে আসা হলো তখন তিনি তা গুনছিলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিলেন। তখন তার এক কর্মচারী বললঃ এগুলো আল্লাহর দান ও রহমত। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ তোমার উদ্দেশ্য সঠিক নয়। আল্লাহর কুরআনে যে কথা বলা হয়েছে যে, “বল তোমরা আল্লাহর দান ও রহমত পেয়ে খুশী হও যা তোমরা যা জমা করছ তার থেকে উত্তম” এ আয়াত দ্বারা দুনিয়ার কোন ধন-সম্পদ বুঝানো হয়নি। কারণ আল্লাহ তা'আলা জমা করা যায় এমন সম্পদ থেকে অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তা উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদই জমা করা যায়। সুতরাং আয়াত দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। [ইবনে আবী হাতিম]। বরং ঈমান, ইসলাম ও কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য। আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্ক দ্বারাও এ অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

সুতরাং এ জাতীয় দ্বীনী কোন সুসংবাদ যদি কারো হাসিল হয় তিনিও এ আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আব্দুর রহমান ইবনে আবযা তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেনঃ “আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে এবং আমাকে তা তোমাকে পড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” তিনি বললেন, আমি বললামঃ আমার নাম নেয়া হয়েছে? রাসূল বললেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি আমার পিতা (উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বললামঃ হে আবুল মুনযির! আপনি কি তাতে খুশী হয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমাকে খুশী হতে কিসে নিষেধ করল অথচ আল্লাহ তা'আলা বলছেনঃ “বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তারই রহমতের উপর তোমরা খুশী হও”। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৩/৩০৪, আবু দাউদঃ ৩৯৮০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) তুমি বলে দাও, ‘এ হল তাঁরই অনুগ্রহ ও করুণায়; সুতরাং এ নিয়েই তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত;[1] এটা তারা যা (পার্থিব সম্পদ) সঞ্চয় করছে তা হতে অধিক উত্তম।’

[1] ‘আনন্দ’ বা ‘খুশি’ বলা হয় ঐ অবস্থাকে যা কোন আকাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জনের ফলে মানুষ নিজ মনে অনুভব করে। মু’মিনগণকে বলা হচ্ছে যে, এই কুরআন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত, এ অনুগ্রহ লাভ করে মু’মিনগণের আনন্দিত হওয়া উচিত। এর অর্থ এই নয় যে, আনন্দ প্রকাশ করার জন্য জালসা-জলুস করে, আলোকসজ্জা বা অন্য কোনরূপ অপচয়ের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করবে। যেমন বর্তমানের বিদআতীরা উক্ত আয়াত দ্বারা ‘নবীদিবস’ ইত্যাদি অভিনব বিদআতী অনুষ্ঠান বৈধ হওয়ার কথা প্রমাণ করতে চায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৫৯ قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ لَكُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ فَجَعَلۡتُمۡ مِّنۡهُ حَرَامًا وَّ حَلٰلًا ؕ قُلۡ آٰللّٰهُ اَذِنَ لَكُمۡ اَمۡ عَلَی اللّٰهِ تَفۡتَرُوۡنَ ﴿۵۹﴾
قل ارءیتم ما انزل الله لكم من رزق فجعلتم منه حراما و حللا قل آلله اذن لكم ام علی الله تفترون ﴿۵۹﴾
• বল, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রিয্ক নাযিল করেছেন, পরে তোমরা তার কিছু বানিয়েছ হারাম ও হালাল’। বল, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর উপর তোমরা মিথ্যা রটাচ্ছ’?

-আল-বায়ান

• বল-তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ যে রিযক তোমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, তোমরা তার কতকগুলোকে হারাম আর কতককে হালাল করে নিয়েছ। বল, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন? না তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ?

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু রিয্ক পাঠিয়েছিলেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করে নিলে; তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, না কি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছ?

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Have you seen what Allah has sent down to you of provision of which you have made [some] lawful and [some] unlawful?" Say, "Has Allah permitted you [to do so], or do you invent [something] about Allah?"

-Sahih International

৫৯. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ্‌ তোমাদের যে রিযক(১) দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ(২), বলুন, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ?(৩)

(১) আয়াত নাযিল হওয়া সম্পর্কে ইবন আব্বাস বলেন, জাহেলী যুগে তারা কিছু জিনিস-কাপড় ইত্যাদি নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল, সেটার সংবাদই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে প্রদান করেছেন। তারপর আল্লাহ অন্য আয়াতে সেটার ব্যাপারে বলেছেন, “বলুন, কে তোমাদের উপর সে সব বস্তু হারাম করেছেন যেগুলো আল্লাহ বান্দাদের জন্য বের করেছেন?” [সূরা আল-আরাফ: ৩২] [তাবারী]

মূলত: রিযিক শব্দটি নিছক খাদ্যের অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং রকমারি দান, অনুদানও এর আওতাভুক্ত রয়েছে। আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে যা কিছু দিয়েছেন তা সবই তার রিযিক। এমনকি সন্তান-সন্ততিও রিযিক। হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রত্যেক গর্ভবতীর পেটে একজন ফেরেশতা পাঠান। তিনি শিশুর রিযিক এবং তার আয়ু ও কর্ম লিখে দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ৩০৩৬] এখানে রিযিক মানে শুধু খাদ্য নয়, যা ভূমিষ্ঠ হবার পরে এ শিশু লাভ করবে। বরং এ দুনিয়ায় তাকে যা কিছু দেয়া হবে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে বলা হয়েছেঃ “যা কিছু আমি তাদের রিযক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ৩]

(২) অর্থাৎ তোমরা যে এটা কতবড় মারাত্মক বিদ্রোহাত্মক অপরাধ করছে তার কোন অনুভূতিই তোমাদের নেই। রিযিকের মালিক আল্লাহ। তোমরা নিজেরাও আল্লাহর অধীন। এ অবস্থায় আল্লাহর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ এবং তা ব্যবহার ও ভোগ করার জন্য তার মধ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করার অধিকার তোমরা কোথা থেকে পেলে? বিধি-নিষেধ তো তিনিই দেবেন। তিনিই হালাল বা হারামকারী, অন্য কেউ নয়। আর তা তাঁর রাসূলের মাধ্যমেই আসতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]

(৩) আবুল আহওয়াছ আউফ ইবনে মালেক ইবনে নাদলাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খুব অবিন্যস্ত অবস্থায় আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ “তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ কি সম্পদ? আমি বললামঃ সবধরণের সম্পদ, উট, দাস, ঘোড়া এবং ছাগল। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমাকে কোন সম্পদ দিয়ে থাকেন তবে তা তোমার নিকট দেখা যাওয়া উচিত।” এরপর আরো বললেনঃ “তোমার সম্প্রদায়ের উটের বাচ্চা সুস্থ কান সম্পন্ন হওয়ার পরে তুমি ক্ষুর নিয়ে সেগুলোর কান কেটে বল না যে, এগুলো বুহুর? এবং সেগুলো ফাটিয়ে দিয়ে বা সেগুলোর চামড়া ফাটিয়ে তুমি কি বলনা যে, এগুলোঃ ছুরম? আর এতে করে তুমি সেগুলোকে তোমার এবং তোমার পরিবারের জন্য হারাম বানিয়ে নাও না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তা অবশ্যই তোমার জন্য হালাল। আল্লাহর বাহুর ক্ষমতা তোমার বাহুর ক্ষমতা থেকে নিঃসন্দেহে বেশী শক্তিশালী, আর আল্লাহর ক্ষুর তোমার ক্ষুরের চাইতে ধারালো”। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৪৭৩] সুতরাং কোন হালাল বস্তুকে হারাম করার ক্ষমতা মানুষকে আল্লাহ দেন নি। তারপর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আখেরাতের কঠিন ভয় দেখিয়ে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৯) তুমি বল, ‘আচ্ছা বল তো, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রুযী অবতীর্ণ করেছেন, অতঃপর তোমরা তার কিছুকে বৈধ ও কিছুকে অবৈধ করে নিয়েছ’;[1] বল, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে (তার) অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছ?’

[1] এখানে মুশরিকরা যে সকল পশুকে তাদের মূর্তির নামে উৎসর্গ করে নিজেদের জন্য তা হারাম করে নিত, সেই সকল পশুকে হারাম বা অবৈধ করার কথা বুঝানো হয়েছে। সূরা আন্আমে এর বিস্তারিত আলোচনা পার হয়ে গেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ : ৬০ وَ مَا ظَنُّ الَّذِیۡنَ یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ الۡكَذِبَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی النَّاسِ وَ لٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا یَشۡكُرُوۡنَ ﴿۶۰﴾
و ما ظن الذین یفترون علی الله الكذب یوم القیمۃ ان الله لذو فضل علی الناس و لكن اكثرهم لا یشكرون ﴿۶۰﴾
• আর যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটাচ্ছে, তাদের কী ধারণা, কিয়ামতের দিন (তাদের পরিণতি) সম্পর্কে? নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহশীল; কিন্তু তাদের অধিকাংশ শোকর করে না।

-আল-বায়ান

• যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যোরোপ করে, কিয়ামাতের দিন (আল্লাহ তাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করবেন সে) সম্পর্কে তাদের কী ধারণা? আল্লাহ তো মানুষদের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল, কিন্তু তাদের অধিকাংশই আল্লাহর শোকর করে না।

-তাইসিরুল

• আর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তাদের কিয়ামাতের দিন সম্বন্ধে কি ধারণা? বাস্তবিক, মানুষের উপর আল্লাহর খুবই অনুগ্রহ রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই অকৃতজ্ঞ।

-মুজিবুর রহমান

• And what will be the supposition of those who invent falsehood about Allah on the Day of Resurrection? Indeed, Allah is full of bounty to the people, but most of them are not grateful."

-Sahih International

৬০. আর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে, কিয়ামতের দিন সম্পর্কে তাদের কি ধারণা? নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।(১)

(১) অর্থাৎ এ সমস্ত লোকদের সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? তাদেরকে কি আল্লাহ এমনিই ছেড়ে দিবেন? কিয়ামতের দিন কি তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? [ইবন কাসীর] কিন্তু তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। তাঁর অনুগ্রহের এক প্রকাশ হচ্ছে যে, তিনি তাদেরকে দুনিয়ার বুকে এর কারণে দ্রুত শাস্তি দেন না। [তাবারী] আরেক প্রকাশ হচ্ছে, তিনি ঐ সব বস্তুই হারাম করেছেন যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিকর বিবেচিত। পক্ষান্তরে যা উপকারী তা অবশ্যই হালাল করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন না করে আল্লাহ তাদের জন্য যা হালাল করেছেন তা হারাম করছে, এতে করে তারা তাদের নিজেদের উপর দুনিয়াকে সংকীর্ণ করে নিচ্ছে। আর এ কাজটা মুশরিকরাই করে থাকে, তারা নিজেদের জন্য শরীআত প্রবর্তন করে নিয়েছে। অনুরূপভাবে আহলে কিতাবগণও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারাও দ্বীনের মধ্যে বিদ’আতের প্রবর্তন করেছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬০) আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, কিয়ামত দিবস সম্বন্ধে তাদের কি ধারণা?[1] বস্তুতঃ আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ,[2] কিন্তু অধিকাংশ লোকই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।[3]

[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবেন?

[2] (মানুষের প্রতি আল্লাহর একটি অনুগ্রহ) এই যে, তিনি পৃথিবীতে মানুষকে পাপের জন্য সত্ত্বর পাকড়াও করেন না; বরং তাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে রেখেছেন। অথবা এর অর্থ এই যে, তিনি পার্থিব নিয়ামত বিনা পার্থক্যে মু’মিন ও কাফের সকলকে প্রদান করেন। অথবা যে বস্তু মানুষের জন্য উপকারী ও জরুরী, তা হালাল করেছেন, হারাম করেননি।

[3] অর্থাৎ, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। অথবা তাঁর হালালকৃত বস্তুকে হারাম করে নেয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 পরের পাতা »