-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক বা ভারি অবস্থায় এবং জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!(১)
(১) এ আয়াতে তাগিদদানের উদ্দেশ্যে পুনরোল্লেখ করা হয়েছে যে, জিহাদে বের হবার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তোমাদের আদেশ করেন, তখন সর্বাবস্থায় তা তোমাদের জন্য ফরয হয়ে গেল। আর এ আদেশ পালনের জন্য জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করা তোমাদের জন্য বসে থাকা থেকে উত্তম। কেননা এ জিহাদেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে উচু মর্যাদা পেতে পারে। আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করতে পারে। এভাবেই একজন আল্লাহর সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। [সা’দী] তাদের এ কল্যাণ দুনিয়া ও আখেরাত ব্যাপী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে বের হবে, সে যদি কেবলমাত্র আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর বাণীতে ঈমানের কারণেই বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জিম্মাদারী নিলেন অথবা সে যে গনীমতের মাল গ্রহণ করেছে তা সহ তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরৎ পাঠাবেন। [বুখারী: ৭৪৫৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) দুর্বল হও অথবা সবল, সর্বাবস্থাতেই তোমরা বের হও[1] এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদ কর। এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে।
[1] এর নানা অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, একাকী হও কিম্বা দলবদ্ধভাবে, খুশী হয়ে অথবা অখুশী হয়ে, গরীব হও অথবা আমীর, যুবক হও অথবা বৃদ্ধ, পায়ে হেঁটে হোক অথবা সওয়ার হয়ে, সন্তানবান হও অথবা সন্তানহীন, সৈন্যদলের অগ্রে থাকো অথবা পিছনে। ইমাম শওকানী (রঃ) বলেন, আয়াতটি এই সমস্ত অর্থের জন্য ব্যাপক হতে পারে। যেহেতু আয়াতের অর্থ এই যে, ‘‘তোমরা জিহাদে বের হও; চাহে তা তোমাদের জন্য ভারী মনে হোক অথবা হালকা।’’ আর এই অর্থে উল্লিখিত সমস্ত অর্থ এসে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. যদি সহজে সম্পদ লাভের আশা থাকত ও সফর সহজ হত তবে তারা অবশ্যই আপনার অনুসরণ করত, কিন্তু তাদের কাছে যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। আর অচিরেই তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, পারলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে বের হতাম। তারা তাদের নিজেদেরকেই ধ্বংস করে। আর আল্লাহ জানেন নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।(১)
(১) এ আয়াতে অলসতার দরুন জিহাদ থেকে বিরত রয়েছে এমন লোকদের একটি ওযরকে প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে যে, এ ওযর গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আল্লাহ যে শক্তি সামর্থ্য তাদের দান করেছেন, তা আল্লাহর রাহে সাধ্যমত ব্যয় করেনি। তাই তাদের অসমর্থ থাকার ওযর গ্রহণযোগ্য নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) আশু লাভের সম্ভাবনা থাকলে[1] এবং সফরও সহজ হলে তারা অবশ্যই তোমার সহগামী হতো,[2] কিন্তু তাদের নিকট পথের দূরত্বই দীর্ঘতর বোধ হতে লাগল। আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘যদি আমাদের সাধ্য থাকত, তাহলে অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে বের হতাম।’ তারা (মিথ্যা বলে) নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করছে।[3] আর আল্লাহ জানেন যে, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
[1] এখান থেকে সেই সব লোকদের কথা আরম্ভ হচ্ছে, যারা ওজর পেশ করে নবী (সাঃ) থেকে অনুমতি নিয়েছিল; অথচ বাস্তবে তাদের ওজর বলতে কিছু ছিল না। عَرَضٌ থেকে উদ্দেশ্যঃ পার্থিব স্বার্থ, অর্থাৎ, গনীমতের মাল।
[2] অর্থাৎ, তোমার সাথে জিহাদে শরীক হতো। কিন্তু দূর সফর তাদেরকে বাহানা খুঁজতে বাধ্য করল।
[3] অর্থাৎ, মিথ্যা কসম খেয়ে। কেননা, মিথ্যা কসম খাওয়া মহাপাপ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করেছেন কারা সত্যবাদী তা আপনার কাছে স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এবং কারা মিথ্যাবাদী তা না জানা পর্যন্ত আপনি কেন তাদেরকে অব্যাহতি দিলেন?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। তোমার নিকট সত্যবাদী স্পষ্ট ও মিথ্যাবাদী জ্ঞাত হওয়ার পূর্বে তুমি তাদেরকে অনুমতি কেন দিলে?[1]
[1] এখানে নবী (সাঃ)-কে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে যে, জিহাদে শরীক না হওয়ার অনুমতি প্রার্থীদেরকে তাদের ওজর সত্য ছিল কি না, তা তদন্ত করে না দেখে কেন অনুমতি দিয়ে দিলে? কিন্তু এই তিরস্কারেও স্নেহের প্রভাব বেশী ছিল। এই জন্য উক্ত ত্রুটির ক্ষমার কথা প্রথমেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জেনে রাখা দরকার যে, এই তিরস্কার এই জন্য করা হয়েছে যে, অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ার সাথে কাজ নেওয়া হয়েছে এবং পূর্ণভাবে সত্যতা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। নচেৎ তদন্তের পর যার সত্যই ওজর আছে তাকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহর তরফ থেকে তাঁকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যেমন তিনি বলেছেন, {فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ} ‘‘অতএব তারা তোমার কাছে তাদের কোন কাজের অনুমতি চাইলে তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দাও।’’ (সূরা নূর ৬২ আয়াত) ‘যাকে ইচ্ছা’ মানে হল, যার কাছে সত্যিকারে ওজর আছে, তাকে অনুমতি দেওয়ার অধিকার তোমার রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে যেতে আপনার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, তারা নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদ করার ব্যাপারে তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে না।[1] আর আল্লাহ পরহেযগারদের সম্বন্ধে খুব অবগত আছেন।
[1] এখানে খাঁটি মু’মিনদের আচরণ বর্ণনা করা হয়েছে। বরং তাদের অভ্যাসই তো এই যে, তারা বড়ই উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে অগ্রণী হয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. আপনার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে না। আর তাদের অন্তরসমূহ সংশয়গ্রস্ত হয়ে গেছে, সুতরাং তারা আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) অবশ্য ঐসব লোক তোমার কাছে অনুমতি চেয়ে থাকে, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না, আর তাদের অন্তরসমূহ সন্দেহগ্রস্ত। অতএব তারা নিজেদের সন্দেহে হতবুদ্ধি হয়ে রয়েছে।[1]
[1] এখানে সেই মুনাফিক্বদের কথা বর্ণনা হচ্ছে, যারা ছোট্ট ধরনের বাহানা বের করে রসূলের সাথে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে না। আর তার অর্থ এই যে, সেই ঈমানহীনতাই তাদেরদেরকে জিহাদে না যেতে বাধ্য করেছিল। পক্ষান্তরে যদি ঈমান তাদের অন্তরে সুদৃঢ় হত, তাহলে তারা না জিহাদ থেকে গা বাঁচাতো, আর না-ই তাদের মনে কোন প্রকার সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি হতো।
জেনে রাখা দরকার যে, উক্ত জিহাদে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে মুসলিমরা চার দলে বিভক্ত ছিলেন। প্রথম দল হল তাঁরা, যাঁরা নির্দ্বিধায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দল তাঁরা, যাঁদের প্রথম প্রথম দ্বিধা ছিল এবং তাঁদের মন ভ্রষ্ট ছিল। কিন্তু সত্বর তাঁরা সে দ্বিধাকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তৃতীয় দল তাঁরা, যাঁদের শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে অথবা সওয়ারী ও সফরের খরচ না থাকার কারণে সত্যসত্যই ওজর ছিল। যাঁদেরকে স্বয়ং আল্লাহ অনুমতি দান করেছিলেন। (এ ব্যাপারে বর্ণনা ৯১-৯২নং আয়াতে এসেছে।) চতুর্থ দল তাঁরা, যাঁরা কেবল অলসতার কারণে শরীক হননি এবং যখন নবী (সাঃ) ফিরে এলেন তখন তাঁরা নিজেদের ত্রুটি ও গোনাহর কথা স্বীকার করে নিজেদেরকে তওবা ও শাস্তির জন্য পেশ করে দিলেন। এ ছাড়া বাকী লোকেরা মুনাফিক্বদল ও তাদের গুপ্তচর ছিল। এখানে মুসলিমদের প্রথম দল এবং মুনাফিক্বদের কথা উল্লেখ হয়েছে। বাকী তিন দল মুসলিমদের বর্ণনা পরবর্তীতে আসবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. আর যদি তারা বের হতে চাইত তবে অবশ্যই তারা সে জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহ্ অপছন্দ করলেন। কাজেই তিনি তাদেরকে অলসতার মাধ্যমে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে বলা হল, যারা বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) আর যদি তারা (যুদ্ধে) বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে এর কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করত,[1] কিন্তু আল্লাহ তাদের যাত্রাকে অপছন্দ করেছেন, এ জন্য তাদেরকে বিরত রাখলেন[2] এবং বলে দেওয়া হলো, ‘তোমরাও বসে থাকা (অক্ষম) লোকদের সাথে বসে থাকো।’ [3]
[1] যারা মিথ্যা ওজর পেশ করে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি লাভ করেছিল এ কথা সেই মুনাফিক্বদের সম্বন্ধে বলা হচ্ছে যে, যদি তারা জিহাদে যাবার ইচ্ছা রাখত, তাহলে অবশ্যই তার জন্য প্রস্তুতি নিত।
[2] فثَبَّطَهُم শব্দের অর্থ হল, তাদেরকে বিরত রাখলেন। অর্থাৎ, পিছনে থেকে যাওয়া তাদের কাছে পছন্দনীয় বানিয়ে দেওয়া হল। সুতরাং তারা অলস হয়ে গেল এবং মুসলিমদের সাথে বের হল না। (আইসারুত্ তাফাসীর) উদ্দেশ্য হল যে, তাদের বদমায়েশি ও দুরভিসন্ধি সম্পর্কে আল্লাহ অবগত ছিলেন। এই জন্য আল্লাহর তকদীরগত ইচ্ছা এটাই ছিল যে, তারা না যাক।
[3] এটা সেই আল্লাহর ইচ্ছার প্রকাশরূপ আদেশ, যা তকদীরে লেখা ছিল। অথবা অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়ে রসূল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঠিক আছে! তোমরা নারী, শিশু, রোগী ও বৃদ্ধদের দলে শামিল হয়ে তাদের মত ঘরে বসে থাক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে তোমাদের ফাসাদই বৃদ্ধি করত এবং ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটোছুটি করত। আর তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শুনার লোক রয়েছে।(১)। আর আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত।
(১) অর্থাৎ “তোমাদের কথা শুনে সেগুলো অন্যের কাছে পাচার করে থাকে”। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত তাহলে কেবল তোমাদের মাঝে বিভ্রাটই বৃদ্ধি করত[1] এবং তারা তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছুটাছুটি করত।[2] আর তোমাদের মধ্যে তাদের কতিপয় অনুগত (গুপ্তচর) রয়েছে। [3] আল্লাহ যালেমদের সম্বন্ধে খুব অবগত আছেন।
[1] এই মুনাফিক্বরা যদি মুসলিম সৈন্যদলে শরীক হত, তাহলে এরা ভুল রায় ও পরামর্শ দিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির কারণ হত।
[2] إيضاع শব্দের অর্থ হল নিজ সওয়ারীকে দ্রুতবেগে দৌড়ানো। অর্থাৎ চুগলখোরী প্রভৃতি দ্বারা তোমাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করায় ছুটাছুটি করত এবং তাতে তারা কোন একটি মিনিটও বরবাদ করত না। আর এখানে ‘ফিতনা’ থেকে উদ্দেশ্য আপোসের মাঝে বিচ্ছিন্নতা, শত্রুতা ও বিদ্বেষ।
[3] এ থেকে জানা যায় যে, মুনাফিক্বদের গোয়েন্দাগিরী করার জন্য কিছু মানুষ মু’মিনদের সাথেও সৈন্যদলে শামিল ছিল, যারা মুনাফিক্বদের নিকট মুসলিমদের খবর পৌঁছে দিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. অবশ্য তারা আগেও(১) ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তারা আপনার বহু কাজে ওলট-পালট করেছিল, অবশেষে সত্যের আগমন ঘটল এবং আল্লাহর হুকুম বিজয়ী হল(২), অথচ তারা ছিল অপছন্দকারী।
(১) অর্থাৎ তারা চিন্তাশক্তি ও মতামতকে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে খাটিয়েছিল। তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছে আপনার দ্বীনকে অপমানিত করতে। যেমন প্রথম যখন আপনি মদীনায় আগমন করেছিলেন তখন আপনার বিরুদ্ধে ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারপর যখন বদরের যুদ্ধে মুসলিমরা জয়লাভ করল তখন আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ও তার সাথীরা বলল, এ কাজ তো দেখি পথে উঠে এসেছে। তারপর তারা প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর যখনই কোথাও মুসলিমদের বিজয় দেখে তখনই তা তাদেরকে পীড়া দেয়। [ইবন কাসীর]
(২) অর্থাৎ “আল্লাহর আদেশ বিজয় হল”, যাতে মুনাফিকরা মর্মপীড়া বোধ করছিল। এর দ্বারা ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, জয় বিজয় সবই আল্লাহর আয়ত্তে। যেমন ইতিপূর্বের যুদ্ধসমূহে আপনাকে জয়ী করা হয়েছে, তেমনি এ যুদ্ধেও জয়ী হবেন এবং মুনাফিকদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে পড়বে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) তারা তো পূর্বেও ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, আর তোমার (ক্ষতি সাধনের) জন্য কর্মসমূহ উলট-পালট করেছিল। পরিশেষে সত্য সমাগত হল এবং আল্লাহর দ্বীন বিজয় লাভ করল[1] অথচ তাদের কাছে এটা অপ্রীতিকরই ছিল। [2]
[1] এই জন্য অতীত ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে তোমাকে অবহিত করা হয়েছে। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে, এই মুনাফিক্বদল যে তোমাদের সাথে যায়নি তাতে তোমাদের জন্য মঙ্গলই হয়েছে। নচেৎ যদি তারা যেত, তাহলে তাদের কারণে এই সকল বিপর্যয় সৃষ্টি হত।
[2] অর্থাৎ, এই মুনাফিক্বরা যখন থেকে তুমি মদীনায় আমগন করেছ তখন থেকেই তোমার বিরুদ্ধে ফিতনা সৃষ্টি করতে এবং তোমার (ক্ষতি সাধনের) জন্য কর্মসমূহ উলট-পালট করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। পরিশেষে বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা তোমাকে বিজয় ও আধিপত্য দান করলেন; যা তাদের জন্য অসহনীয় ও অপছন্দনীয় ছিল। অনুরূপ উহুদ যুদ্ধেও ঐ মুনাফিক্বদল রাস্তা থেকেই ফিরে এসে সমস্যা সৃষ্টি করার এবং তারপরও প্রত্যেক জায়গাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেই আসছিল। পরিশেষে মক্কা জয় হল এবং অধিকাংশ আরববাসীরা মুসলমান হয়ে গেল। যার কারণে তারা আক্ষেপ ও আফসোসে হাত মলতে থেকে গেল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. আর তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, “আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না। সাবধান! তারাই ফিতনাতে পড়ে আছে(১)। আর জাহান্নাম তো কাফেরদের বেষ্টন করেই আছে।(২)
(১) এ আয়াতে জদ বিন কায়স নামক জনৈক বিশিষ্ট মুনাফিকের এক বিশেষ বাহানার উল্লেখ করে তার গোমরাহীর বর্ণনা দেয়া হয়। সে জিহাদ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্যে ওযর পেশ করে বলেছিল আমি এক পৌরুষদীপ্ত যুবক। রোমানদের সাথে যুদ্ধে লড়তে গিয়ে তাদের সুন্দরী যুবতীদের মোহগ্ৰস্ত হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। [সা’দী] আল্লাহ্ তা'আলা তার কথার উত্তরে বলেনঃ “ভাল করে শোন”, এই নির্বোধ এক সম্ভাব্য আশংকার বাহানা করে এক নিশ্চিত আশংকা অর্থাৎ রাসূলের অবাধ্যতা ও জিহাদ পরিত্যাগের অপরাধে এখনই দণ্ডযোগ্য হয়ে গেল। সে যদি মহিলাদের মোহে পড়ার ফিতনা থেকে বাঁচতে এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত থাকে তবে জেনে নিক যে, সে আরও বড় ফিতনায় পড়েছে। আর সেটা হচ্ছে, দুনিয়াতে শির্ক ও কুফর, আর আখেরাতে তার শাস্তি। [ইবনুল কাইয়্যেম: ইগাসাতুল লাহফান ২/১৫৮-১৫৯]
(২) “আর নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এই কাফেরদের পরিবেষ্টন করে আছে।” তা থেকে নিস্তার লাভের উপায় নেই। [ইবন কাসীর; সাদী] পরিবেষ্টন করার অর্থ, যারাই আল্লাহর সাথে কুফরী করবে, তার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, জাহান্নামে তাদের ঘিরে রাখবে, কিয়ামতের দিন তাদের সবাইকে একত্রিত করবে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, যে বলে, ‘আমাকে (যুদ্ধে না যাওয়ার) অনুমতি দাও এবং আমাকে ফিতনায় ফেলো না।’ সাবধান! তারা তো ফিতনায় পড়েই গেছে। আর নিশ্চয়ই জাহান্নাম অবিশ্বাসীদেরকে বেষ্টন করবে। [1]
[1] ‘আমাকে ফিতনায় ফেলো না’ এর একটা অর্থ হল যে, যদি তুমি আমাকে অনুমতি না দাও, তাহলে বিনা অনুমতিতে থেকে গেলে আমার মহাপাপ হবে। এই হিসাবে ফিতনার অর্থে হবে পাপ। অর্থাৎ, ‘আমাকে পাপে ফেলো না।’ ফিতনার দ্বিতীয় অর্থ ধ্বংস। অর্থাৎ, আমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে ধ্বংসে পতিত করো না। কথিত আছে যে, জাদ্দ্ বিন কাইস আরয করল যে, ‘(হে মুহাম্মাদ!) তুমি আমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে ফিতনায় ফেলো না। কারণ রোমান মহিলাদেরকে দেখে আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না।’ তার কথা শুনে নবী (সাঃ) মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তাকে না যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। পরক্ষণে এই আয়াত অবতীর্ণ হল। আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘‘তারা তো ফিতনায় পড়েই রয়েছে।’’ অর্থাৎ, জিহাদ থেকে দূরে সরে থাকা এবং তা বর্জন করা তো স্বস্থানে একটা বড় ফিতনা ও মহাপাপ; যাতে তারা আলিপ্ত আছে। আর মরণের পর জাহান্নাম তাদেরকে বেষ্টন করবে; যেখান হতে পালিয়ে যাওয়ার কোন পথ পাবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. আপনার মঙ্গল হলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়, আর আপনার বিপদ ঘটলে তারা বলে, “আমরা তো আগেই আমাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম এবং তারা উৎফুল্ল চিত্তে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) যদি তোমার প্রতি কোন মঙ্গল উপস্থিত হয়, তাহলে তাতে দুঃখিত হয়। আর যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তখন তারা বলে, ‘আমরা তো প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম’, এবং তারা খুশী হয়ে ফিরে যায়। [1]
[1] বাগধারায় এখানে حسنةٌ (মঙ্গল) বলে সাফল্য ও গনীমতের মাল, আর سيئةٌ (বিপদ) বলে অসাফল্য, পরাজয় এবং যুদ্ধে অনুরূপ আশঙ্কনীয় ক্ষতিকে বুঝানো হয়েছে। উক্ত আচরণে সেই অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, যা মুনাফিক্বদের অন্তরে বিদ্যমান ছিল। যেহেতু অপরের বিপদের সময় আনন্দিত হওয়া এবং মঙ্গল লাভের সময় মনে দুঃখ ও কষ্ট অনুভব করা হল, নিতান্ত শত্রুতার নিদর্শন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান