-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন।
৪১. আর জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা গনীমত হিসেবে লাভ করেছ, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর(১), রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং সফরকারীদের(২) যদি তোমরা ঈমান রাখ আল্লাহতে এবং তাতে যা মীমাংসার দিন আমরা আমাদের বান্দার প্রতি নাযিল করেছিলাম(৩), যে দিন দু’ দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(১) এ আয়াতে গনীমতের বিধান ও তার বন্টননীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অভিধানে গনীমত বলা হয় সে সমস্ত মাল-সামানকে যা শত্রুর নিকট থেকে লাভ করা হয়। শরীআতের পরিভাষা অনুযায়ী অমুসলিমদের নিকট থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহে বিজয়ার্জনের মাধ্যমে যে মালামাল অর্জিত হয়, তাকেই বলা হয় ‘গনীমত’। [ফাতহুল কাদীর] আর যা কিছু আপোষ, সন্ধি-সম্মতির মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে বলা হয় ‘ফাই’। [ইবন কাসীর]
কুরআনুল কারীমে এতদুভয় শব্দের মাধ্যমে (অর্থাৎ ‘গনীমত’ ও ‘ফাই’) এতদুভয় প্রকার মালামালের হুকুম-আহকাম তথা বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে এবং এ আয়াতে শুধুমাত্র গনীমতের মালামালের কথাই আলোচিত হয়েছে যা যুদ্ধকালে অমুসলিমদের কাছ থেকে লাভ হয়েছে। ‘ফাই’-এর আলোচনা সূরা হাশর-এ আসবে।
(২) এখানে জিহাদের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ গণীমতের হকদারদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সমস্ত সম্পদ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। এর চার ভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। আর বাকী এক পঞ্চমাংশ পাঁচভাগে ভাগ করা হবে। প্রথমভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এ অংশ মুসলিমদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষনে ব্যয় হবে। দ্বিতীয়ভাগ রাসূলের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত। তারা হলেন ঐ সমস্ত লোক যাদের উপর সদকা খাওয়া হারাম। অর্থাৎ বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। কারণ তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব রাসূলের ছিল।
তিনি তার নবুওয়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় তাদের জন্য এ গণীমতের মাল থেকে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তৃতীয়ভাগ ইয়াতিমদের জন্য সুনির্দিষ্ট। চতুর্থভাগ ফকীর ও মিসকিনদের জন্য, আর পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের জন্য। [ইবন কাসীর] ইবন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পুরো এক পঞ্চমাংশই বর্তমানে ইমামের কর্তৃত্বে থাকবে। তিনি মুসলিমদের অবস্থা অনুযায়ী কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন। [ইবন কাসীর] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, গণীমতের মাল যদিও পূর্বে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের বলা হয়েছে তবুও তা মূলতঃ মুসলিমদের মধ্যেই পুনরায় বন্টন হয়ে গেছে। রাসূল তার জন্য তার জীবদ্দশায় যা কিছু পেতেন তাও বর্তমানে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
(৩) অর্থাৎ সে সাহায্য ও সহায়তা, যার বদৌলতে তোমরা জয়লাভ করেছ। [মুয়াসসার] এখানে মীমাংসার দিন বলে বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে। কারণ এ দিন তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর বিজয়ী করেছেন এবং তার দ্বীন, তার নবী ও অনুসারীদেরকে উপরে উঠিয়েছেন। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) আরো জেনে রাখ যে, যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গনীমত) লাভ কর[1] তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রসূলের, রসূলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতীম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য;[2] যদি তোমরা আল্লাহতে ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও যা ফায়সালার দিন[3] (বদরে) আমি আমার দাসের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম;[4] যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল[5] এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
[1] ‘গনীমতের মাল’ থেকে সেই মাল উদ্দেশ্য যা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর লাভ হয়। পূর্বের উম্মতে এই মাল বিতরণের পদ্ধতি এই ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কাফেরদের নিকট হতে লাভ করা সমস্ত মাল-সম্পদকে এক জায়গায় জমা করা হত, আর আসমান হতে আগুন এসে তাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিত। কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য এই গনীমতের মাল আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন। আর যে মাল দুই দলের সন্ধি চুক্তির ভিত্তিতে বিনা যুদ্ধে অথবা জিযিয়া কর ও খাজনা আদায়ের মাধ্যমে লাভ হয় তাকে ‘ফাই-এর মাল’ বলা হয়। কখনো কখনো গনীমতের মালকেও ফাই-এর মাল বলা হয়ে থাকে। من شيءٍ অর্থঃ যা কিছু। অর্থাৎ, কম হোক অথবা বেশী, মূল্যবান হোক অথবা সামান্য মূল্যের, সমস্তকে জমা করে তা যথারীতি বণ্টন করা হবে। কোন সৈন্যের জন্য তা হতে বণ্টনের পূর্বে কোন বস্তু রেখে নেওয়ার অনুমতি নেই।
[2] এখানে ‘আল্লাহ’ শব্দটি বরকতস্বরূপ। পরন্তু এই জন্যও যে, প্রত্যেক জিনিসের প্রকৃত পক্ষে মালিক হলেন তিনিই। আর আদেশও তাঁরই চলে। আল্লাহ ও তদীয় রসূলের ভাগ থেকে উদ্দেশ্য একটাই। অর্থাৎ, সমস্ত গনীমতের মালকে পাঁচ ভাগ করে চার ভাগ সেই মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যেও পদাতিক (পায়ে হাঁটা ব্যক্তিদের)-কে এক ভাগ এবং অশ্বারোহীকে তিন ভাগ দেওয়া হবে। আর পঞ্চম ভাগটাকে পুনরায় পাঁচ ভাগ করা হবে, তার মধ্যে রসূল (সাঃ)-এর জন্য এক ভাগ। অতঃপর বাকী ভাগগুলি মুসলিমদের সাধারণ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। যেমন, নবী (সাঃ) নিজেও এই ভাগগুলি মুসলিমদের উপরেই খরচ করতেন। বরং তিনি বলেছেনও, الخمسُ مَردودٌ عليكم (সুনানে নাসাঈ, সহীহ নাসাঈ ৩৮৫৮নং, আহমাদ ৫/৩১৯) অর্থাৎ, আমার ভাগে যে পঞ্চম অংশ রয়েছে সেটাও মুসলিমদের উপকারে ব্যয় করা হবে। দ্বিতীয় ভাগ রসূল (সাঃ)-এর আত্মীয়-স্বজনের জন্য। অতঃপর এতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য। আরো বলা হয় যে, এই পঞ্চম ভাগটি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করা হবে।
[3] ‘ফায়সালার দিন’ বলতে হক ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, বদর যুদ্ধের দিন। এ যুদ্ধ সন ২ হিজরী, রমযানের ১৭ তারীখে ঘটেছিল। সেই দিনটিকে ‘ফায়সালার দিন’ এই জন্য বলা হয় যে, এটা ছিল কাফের ও মুসলিমদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ এবং তাতে মুসলিমদেরকে বিজয়ী করে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম ধর্মই হল সত্য ধর্ম আর কুফর ও শিরক হল বাতিল ধর্ম।
[4] এখানে ‘যা অবতীর্ণ’ বলতে ফিরিশতা এবং অলৌকিক কিছু বিষয় ইত্যাদি অবতীর্ণ করাকে বুঝানো হয়েছে, যা বদর যুদ্ধের দিন ঘটেছিল।
[5]অর্থাৎ, মুসলিম ও কাফিরদের সৈনদল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* কুরাইশ কাফেলা।
৪২. স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে আর আরোহী দল(১) ছিল তোমাদের থেকে নিম্নভূমিতে। আর যদি তোমরা পরস্পর যুদ্ধ সম্পর্কে কোন পূর্ব সিদ্ধান্তে থাকতে তবে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমরা মতভেদ করতে। কিন্তু যা ঘটার ছিল, আল্লাহ্ তা সম্পন্ন করলেন, যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর জীবিত থাকে(২); আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(১) আরোহী দল বলে এখানে মক্কার কুরাইশ কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে। যাদের নেতৃত্বে ছিল আবু সুফিয়ান, যারা ব্যবসায়ী পণ্য নিয়ে সমুদ্রের পাশ ঘেঁষে যাচ্ছিল। [ইবন কাসীর]
(২) বিনা ঘোষণায় কাফের ও ঈমানদারদেরকে বদরের এ যুদ্ধে নিয়ে আসার পিছনে কি রহস্য রয়েছে আল্লাহ্ তা'আলা এখানে তাই ব্যক্ত করছেন। আর তা হলো, যাতে তোমাদেরকে কাফেরদের উপর বিজয় দেই, হকের ঝান্ডা বাতিলের উপর বুলন্দ করে দেখাই, ফলে কোনটা হক এবং কোনটা বাতিল তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ইসলাম ও তার অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং কুফর-শির্ক ও তাদের অনুসারীরা অসম্মানিত হয়। [ইবন কাসীর] যাতে অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা মানুষ বুঝে নিতে পারে যে, মুসলিমরা হকের উপর আছে ফলে তাদের বিজয় এসেছে, আর কাফেররা বাতিলের উপর আছে ফলে তাদের বিপর্যয় ঘটেছে।
সুতরাং যারা জীবিত আছে তারা দলীল প্রমাণসহ হক বেছে নিতে পারে। আর তাদের মধ্যে যে বাতিল বেছে নেয় সে তার স্বইচ্ছায় হক স্পষ্ট হওয়ার পরও বাতিলকে গ্রহণ করে নিজের ধ্বংসকেই ডেকে আনলো। মূলতঃ বদরের যুদ্ধের পর অধিকাংশ মানুষের কাছে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আজও মানুষ বদর যুদ্ধের বিজয়কে হক ও বাতিল চেনার ক্ষেত্রে এক বিরাট নিদর্শন বলে বিশ্বাস করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) স্মরণ কর, তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে[1] আর উষ্ট্রারোহী কাফেলা ছিল তোমাদের অপেক্ষা নিম্ন ভূমিতে।[2] যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে (যুদ্ধ সম্পর্কে সময়) ধার্য করতে, তাহলে সে ধার্যকৃত সময়ে পৌঁছতে তোমরা ভিন্নতর হতে।[3] কিন্তু বস্তুতঃ যা ঘটার ছিল আল্লাহ তা সম্পন্ন করার জন্য উভয় দলকে যুদ্ধক্ষেত্রে (ধার্যকাল ছাড়াই সমবেত করলেন)। যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে, সে যেন স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে, সে যেন স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে জীবিত থাকে।[4] আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[1] دُنيا শব্দটির উৎপত্তি دُنُو থেকে, যার অর্থঃ নিকটে। এখানে ‘নিকট প্রান্ত’ বলে সেই প্রান্তকে বোঝানো হয়েছে যেটা মদীনা শহর থেকে নিকটেই ছিল। আর قصوى বলা হয় দূরকে। কাফেররা সেই প্রান্তে ছিল, যা মদীনা শহর থেকে দূরে অবস্থিত ছিল।
[2] ‘কাফেলা’ থেকে সেই বাণিজ্যিক দলকে বোঝানো হয়েছে যা আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে শাম থেকে মক্কা ফিরছিল এবং (মক্কায় কবলিত সম্পত্তির বিনিময় স্বরূপ) যা পাবার উদ্দেশে মূলতঃ মুসলিমগণ এই দিকে এসেছিলেন। এ উটের কাফেলা পাহাড় থেকে বহুদূরে পশ্চিম দিকে নিম্নভূমিতে অবস্থিত ছিল। আর বদর প্রান্ত যুদ্ধক্ষেত্র ছিল উঁচু জায়গায়।
[3] অর্থাৎ, যদি যুদ্ধের দিন ও তারীখ নির্ধারিত করে পরস্পরের মাঝে অঙ্গীকার বা ঘোষণা হত, তাহলে এমন সম্ভব ছিল, বরং নিশ্চিত ছিল যে, কোন দল লড়াই ছাড়াই পাশ কেটে যেত। কিন্তু এই যুদ্ধ ঘটার কথা যেহেতু আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছিলেন তাই তার জন্য এমন কারণ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, উভয় দল কোন প্রকার পূর্বদত্ত অঙ্গীকার ও হুমকি ছাড়াই বদর প্রান্তরে যুদ্ধের জন্য এক অপরের সামনা-সামনি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
[4] এ হল আল্লাহর তকদীরী ইচ্ছার হেতু বা কারণ, যার ফলে উভয় দল বদরের ময়দানে একত্রিত হল। যাতে যে ঈমানদার হয়ে জীবিত থাকবে, সে যেন দলীলের সাথে জীবিত থাকে এবং তার এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, ইসলাম হল সত্য ধর্ম। কেননা, এর সত্যতার চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছে বদরের যুদ্ধে। আর যে কাফের অবস্থায় ধ্বংস হবে, সেও যেন দলীলের সাথে ধ্বংস হয়। কেননা, এতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মুশরিকদের পথ হল ভ্রষ্ট এবং বাতিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় কম(১); যদি আপনাকে দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় বেশী তবে অবশ্যই তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত।
(১) মুফাস্সির মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছিল। আর তাই তিনি সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে তাদের সংখ্যা অল্প দেখিয়েছিলেন। যদি তোমাকে তাদের সংখ্যা অধিক দেখাতেন, তাহলে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে অবশ্যই তিনি বিশেষভাবে অবহিত।[1]
[1] আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-কে সবপ্নে কাফেরদের সংখ্যা অল্প দেখিয়েছিলেন। আর সেই সংখ্যা তিনি সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করলেন। যার ফলে তাঁদের হিম্মত বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদি তাঁদের তুলনায় কাফেরদের সংখ্যা বেশী দেখানো হত, তাহলে হয়তো সাহাবাগণের হিম্মত দমে যেত এবং আপোসের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই দু’টি সমস্যা থেকে তাঁদেরকে বাঁচিয়ে নিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. আর স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন(১) এবং তোমাদেরকে তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছিলেন, যাতে আল্লাহ সম্পন্ন করেন এমন কাজ যা ঘটারই ছিল। আর আল্লাহর দিকেই সব বিষয় প্রত্যাবর্তন করা হয়।
(১) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, বদরের দিন কাফেরদেরকে আমাদের দৃষ্টিতে কম করে দেখানো হয়েছিল। এমনকি আমার পাশের লোককে বলছিলাম যে, তুমি তাদের সংখ্যা সত্তর দেখতে পাও? সে বললঃ আমি একশত দেখতে পাচ্ছি। আব্দুল্লাহ বলেনঃ শেষে আমরা তাদের একজনকে বন্দী করে জিজ্ঞাসা করলে সে তাদের সংখ্যা এক হাজার বলে জানায়। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪)স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে, তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প-সংখ্যক দেখিয়েছিলেন এবং তোমাদেরকেও তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প-সংখ্যক দেখিয়েছিলেন; [1] যাতে যা ঘটার ছিল তা তিনি সম্পন্ন করেন। [2] আর সব বিষয় আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে।
[1] যাতে সেই কাফেররাও তোমাদের ভয়ে পিছু হটে না যায়। প্রথম ঘটনাটি ছিল স্বপ্নের। আর এটা ঠিক লড়াইয়ের সময় দেখানো হয়েছিল, যেমন কুরআনের শব্দাবলী হতে এ কথা স্পষ্ট হয়। পরন্তু এই ব্যাপারটি শুরুর দিকে ছিল। কিন্তু যখন পূর্ণভাবে লড়াই আরম্ভ হয়ে গেল তখন কাফেররা মুসলিমদেরকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখতে পেল; যেমন সূরা আলে ইমরানের ১৩নং আয়াত থেকে সে কথা জানা যায়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে সংখ্যা বেশী দেখাবার হিকমত এই ছিল যে, যাতে অধিক সংখ্যা দেখে তাদের অন্তরে মুসলিমদের ত্রাস ও ভীতি সঞ্চার হয় এবং তার ফলে কাফেরদের মধ্যে কাপুরুষতা, ভীরুতা ও নিরুদ্যমতা এসে যায়। আর এর বিপরীত প্রথমে কম সংখ্যা দেখানোতে হিকমত এটাই ছিল যে, তারা যেন যুদ্ধ থেকে দূরে সরে না পড়ে।
[2] এসবের উদ্দেশ্য ছিল যে, আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করে রেখেছিলেন তা পূরণ হয়ে যায়। এই জন্য তিনি তার কারণ ও উপকরণ সৃষ্টি করে দিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচলিত থাক(১) এবং আল্লাহকে বেশী পরিমাণ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(২)
(১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক যুদ্ধে তিনি এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আবি আওফা বলেনঃ এক যুদ্ধে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূৰ্য্য পশ্চিমাকাশে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন, তারপর ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ হে মানুষগণ! তোমরা শক্রর সাথে সাক্ষাতের আকাংখায় থেকে না। আল্লাহর কাছে এর থেকে বিমুক্তি চাও। তারপরও যদি সাক্ষাত হয়ে যায় তখন ধৈর্যের সাথে টিকে থাক এবং মনে রেখ যে, তরবারীর ছায়ার নীচে জান্নাত। [বুখারীঃ ২৯৬৫, ২৯৬৬]
(২) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে যুদ্ধক্ষেত্র এবং শক্রর মোকাবেলার জন্য এক বিশেষ হেদায়াত দান করেছেন। তন্মধ্যে প্রথম হচ্ছে, দৃঢ়তা অবলম্বন করা ও স্থির-অটল থাকা। মনের দৃঢ়তা ও সংকল্পের অটলতা উভয়টিই এর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর যিকর। আল্লাহর যিকর-এ নিজস্বভাবে যে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে, তা তো যথাস্থানে আছেই, তদুপরি এটাও একটি বাস্তব সত্য যে, দৃঢ়তার জন্যও এর চেয়ে পরীক্ষিত কোন ব্যবস্থা নেই। সুতরাং দৃঢ়পদ থাকা ও আল্লাহর যিকর এ দুটি বিজয়ের প্রধান কারণ। [সা’দী; আইসারুত তাফসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচল থাক এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [1]
[1] এবার এখানে মুসলিমদেরকে সেই আদবসমূহ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পালন করা জরুরী। (ক) দৃঢ়পদ ও অবিচলিত থাকবে। কারণ এ ছাড়া যুদ্ধের ময়দানে টিঁকে থাকা সম্ভব নয়। তবে কিন্তু এ থেকে যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন কিংবা স্বীয় দলে স্থান নেওয়ার দুই অবস্থা স্বতন্ত্র; যা পূর্বে (সূরা আনফাল ১৬ আয়াতে) স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। কেননা, কোন কোন ক্ষেত্রে দৃঢ়পদ থাকার জন্যেও যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন কিংবা স্বীয় দলে স্থান নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। (খ) যুদ্ধের সময় আল্লাহকে অধিকাধিক স্মরণ করবে। মুসলিম যোদ্ধা যদি সংখ্যায় কম থাকে, তাহলে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। অধিক যিকর করার ফলে আল্লাহও তাদের খেয়াল রাখবেন। আর যদি মুসলিমরা সংখ্যায় বেশী হয়, তাহলে আধিক্যের কারণে যেন তোমাদের অন্তরে গর্ব ও অহংকার সৃষ্টি না হয়। বরং আসল নির্ভর যেন আল্লাহর সাহায্যের উপরই থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর(১) এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না(২), করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।(৩) আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর(৪); নিশ্চয় আল্লাহু ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।(৫)
(১) এ আয়াতের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য কুরআনী হেদায়াতনামার তিনটি ধারা সাব্যস্ত হয়ে যায়। তা হল দৃঢ়চিত্ততা, আল্লাহর যিকর ও আনুগত্য।
(২) অর্থাৎ তোমরা পারস্পরিক বিবাদ-বিসংবাদে লিপ্ত হয়ো না। এটি চতুর্থ হিদায়াত। [আইসারুত তাফসীর]
(৩) এখানে আরও একটি হিদায়াত দেয়া হয়েছে। যাতে দূর্বল ও শক্তিহীন হওয়ার কারণ বলে দেয়া হয়েছে, যাতে তা থেকে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যায়। বলা হয়েছে, তোমরা যদি বিবাদে লিপ্ত হও তবে তোমাদের মাঝে সাহসহীনতা বিস্তার লাভ করবে এবং তোমাদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে, তোমরা হীনবল হয়ে পড়বে। [আইসারুত তাফসীর] এখানে আনুগত্য না করার ক্ষতিকর দিকগুলোর উপর আলোকপাত করে তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি পঞ্চম হিদায়াত।
(৪) বলা হয়েছে, আর ধৈর্য ধারণ কর। এটি ষষ্ঠ হিদায়াত। [আইসারুত তাফসীর] এটা যেমন বিবাদ-বিসংবাদ থেকে রক্ষা পাবার একান্ত কার্যকর ব্যবস্থা, তেমনি নিজেদের লোভ-লালসা ও আবেগ উচ্ছাসের ধারা সংযত রাখার উপায়। তাড়াহুড়া, ঘাবড়িয়ে যাওয়া, কাতর হয়ে পড়া, লোভ ও অবাঞ্ছনীয় উত্তেজনা পরিহার কর। বিপদ ও কঠিন অবস্থা সম্মুখে আসলেও যেন পদস্খলন না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকবে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মত মানসিকতা রাখতে হবে। মনকে এ ব্যাপারে তৈরী করে নিতে হবে।
(৫) এখানে সবর অবলম্বনের এক বিরাট উপকারিতার কথা বলে এর তিক্ততা দূর করে দিয়েছেন যে, (إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ) (যারা সবর তথা ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন) এটি এমন এক মহা সম্পদ যে, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সম্পদ এর মোকাবেলায় নগণ্য। যারা এ সমস্ত অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে পারবে আল্লাহর সহায়তা ও সাহায্য কেবল তারাই লাভ করবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহর কারো সাথে থাকার অর্থ এ নয় যে, তার সাথে লেগে থাকবে। বরং এর অর্থ দুটিঃ এক. সাহায্য ও সহযোগিতা দ্বারা সাথে থাকা। দুই. জ্ঞানের মাধ্যমে সাথে থাকা। কারণ, সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে। কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নেই। [সিফাতিল্লাহিল ওয়ারিদা ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ] এখানে সবরকারীদের সাথে থাকার অর্থ সাহায্য ও সহযোগিতায় তাদের সাথে থাকা। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর ও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি ও প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। [1]
[1] তৃতীয় আদব হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। এটা একেবারে স্পষ্ট কথা যে, এই শোচনীয় অবস্থায় আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অবাধ্যাচরণে বড় ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এহেন অবস্থায় বরং প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক। তথাপি যুদ্ধের ময়দানে তাঁদের আনুগত্য করা আরো অধিকরূপে আবশ্যক হয়ে যায়। আর এই অবস্থায় সামান্য অবাধ্যাচরণও আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চতুর্থ আদব হল, কোন বিষয় নিয়ে আপোসে ঝগড়া-বিবাদ ও মতবিরোধ করবে না। কারণ এরূপ করলে তোমরা হীনবল হয়ে পড়বে। আর তোমাদের শক্তি চূর্ণ হয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। পঞ্চম আদব হল যে, ধৈর্যধারণ করবে। অর্থাৎ, যত বড়ই বিপদ বা কঠিন কষ্টের সম্মুখীন হও না কেন, ধৈর্যচ্যুত হবে না। নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! শত্রুদের সাথে মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করো না, বরং তা হতে আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাও। পরন্তু যদি শত্রুদের সাথে লড়াই শুরু হয়েই যায়, তাহলে সবর কর (অর্থাৎ, বিচলিত না হয়ে লড়াই কর)। আর জেনে রাখ, জান্নাত তরবারির ছায়ার নিচেই আছে।’’ (সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. আর তোমরা তাদের মত হবে না যারা গর্বের সাথে ও লোক দেখানোর জন্য নিজ ঘর থেকে বের হয়েছিল(১) এবং তারা লোকজনকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। আর তারা যা করে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।
(১) অর্থাৎ ইখলাসের সাথে যুদ্ধ করবে, আর একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই অভিযানে বের হতে হবে। এটি সপ্তম হিদায়াত। [আইসারুত তাফসীর] সুতরাং মুমিন কখনো কাফের, মুশরিক ও পাপাচারীদের মত হবে না। যেমনটি করেছিল আবু জাহল ও তার কাফের বাহিনী। কারণ তারা অত্যন্ত জাক-জমক ও শান-শওকত, গান বাদ্য, নারী দাসী সহ বের হয়েছিল। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা গর্বভরে ও লোক দেখানোর জন্য নিজ গৃহ হতে বের হয়েছিল এবং লোককে আল্লাহর পথ হতে বাধা দান করছিল।[1] তাদের সকল কীর্তিকলাপই আল্লাহর জ্ঞানায়ত্তে রয়েছে।
[1] মক্কার মুশরিকরা যখন নিজেদের বাণিজ্য কাফেলার হিফাযত ও যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হল, তখন তারা বড় ফখর, গর্ব ও অহংকারের সাথে বের হল। মুসলিমদেরকে কাফেরদের এই কুঅভ্যাস থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. আর স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের কার্যাবলীকে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয় অর্জনকারী নেই, আর নিশ্চয় আমি তোমাদের পাশে অবস্থানকারী। অতঃপর দু দল যখন পরস্পর দৃশ্যমান হল তখন সে পিছনে সরে পড়ল এবং বলল, নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্কে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।(১)
(১) আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, মক্কার কুরাইশ বাহিনী যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, তখন তাদের মনে এমন এক আশংকা চেপে ছিল যে, আমাদের প্রতিবেশী বনু-বকর গোত্রও আমাদের শত্রু; আমরা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে চলে গেলে সেই সুযোগে শত্রু গোত্র না আবার আমাদের বাড়ী-ঘর এবং নারী-শিশুদের উপর হামলা করে বসে। সুতরাং কাফেলার নেতা আবু সুফিয়ানের ভয়ার্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ী থেকে তারা বেরিয়ে গেল বটে, কিন্তু মনের এ আশংকা তাদের পায়ের বেড়ী হয়ে রইল। এমনি সময়ে শয়তান সোরাকাহ ইবন মালেকের রূপে এমনভাবে সামনে এসে উপস্থিত হল যে, তার হাতে রয়েছে একটি পতাকা আর তার সাথে রয়েছে বীর সৈনিকদের একটি খণ্ড দল। সুরাকাহ ইবন মালিক ছিল সে এলাকার এবং গোত্রের বড় সর্দার।
কুরাইশদের মনে তারই আক্রমণের আশংকা ছিল। সে এগিয়ে গিয়ে কুরাইশ জওয়ানদের বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক ভাষণ দিয়ে বলল, আজকের দিনে এমন কেউ নেই যারা তোমাদের উপর জয়লাভ করতে পারে। আর বনূ-বকর প্রভৃতি গোত্রের ব্যাপারে তোমাদের মনে যে আশংকা চেপে আছে যে, তোমাদের অবর্তমানে তারা মক্কা আক্রমণ করে বসবে, তার দায়-দায়িত্ব আমি নিয়ে নিচ্ছি। আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। [তাবারী] মক্কার কুরাইশরা সুরাকাহ ইবন মালেক এবং তার বিরাট ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবগত ছিল। কাজেই তার বক্তব্য শোনামাত্র তাদের মন বসে গেল এবং বনু-বকর গোত্রের আক্রমণাশংকা মুক্ত হয়ে মুসলিমদের মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ হল। এ দ্বিবিধ প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তাদেরকে নিজেদের বধ্যভূমির দিকে দাবড়ে দিল।
কিন্তু যখন মক্কার মুশরিক ও মুসলিম উভয় দল (বদর প্রাঙ্গণে) সম্মুখ সমরে লিপ্ত হল, তখন শয়তান পিছন ফিরে পালিয়ে গেল। বদর যুদ্ধে যেহেতু মক্কার মুশরিকদের সহায়তায় একটি শয়তানী বাহিনীও এসে উপস্থিত হয়েছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাআলা তাদের মোকাবেলায় জিবরীল ও মিকাঈল আলাইহিমাস সালাম-এর নেতৃত্বে ফিরিশতাদের বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন। ইমাম ইবন জরীর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, শয়তান যখন সুরাকাহ ইবন মালেকের রূপে স্বীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন সে জিবরীল-আমীন এবং তার সাথী ফিরিশতা বাহিনী দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সময় তার হাত এক কুরাইশী যুবক হারেস ইবন হিশামের হাতে ধরা ছিল।
সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইল। হারেস তিরস্কার করে বললঃ এ কি করছ? তখন সে বুকের উপর এক প্রবল ঘা মেরে হারেসকে ফেলে দিল এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। হারেস তাকে সোরাকাহ মনে করে বললঃ হে আরব সর্দার সোরাকাহ! তুমি তো বলেছিলে আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। অথচ ঠিক যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করছ! তখন শয়তান সুরাকাহর বেশেই উত্তর দিল, আমি কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না। অর্থাৎ ফিরিশতা বাহিনী। আর আমি আল্লাহকে ভয় করি। কাজেই তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। [তাবারী]
শয়তান যখন ফিরিশতা বাহিনী দেখতে পেল এবং সে যেহেতু তাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল, তখন বুঝল যে, এবার আর পরিত্রাণ নেই। তবে তার বাক্য ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ সম্পর্কে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম কাতাদাহ বলেন যে, কথাটি সে মিথ্যে বলেছিল। [ইবন কাসীর] ইবন ইসহাক বলেন, আর যখন সে বলেছিল যে, ‘আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না।’ এ কথাটি সত্যি বলেছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) স্মরণ কর, শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হবে না, আর আমি অবশ্যই তোমাদের সহযোগী (প্রতিবেশী)। অতঃপর দু’ দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হল, তখন সে পিছু হটে সরে পড়ল ও বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। নিশ্চয় আমি তা দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না।[1] নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি।’[2] আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [3]
[1] মুশরিকরা যখন মক্কা থেকে রওনা দিল তখন তাদের দুশমন গোত্র বানী বাকার বিন কিনানার পক্ষ থেকে তাদের আশঙ্কা ছিল যে, তাদেরকে পিছন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সুতরাং শয়তান বানী বাকার বিন কিনানার একজন সর্দার সুরাকা বিন মালেকের রূপ ধরে এল এবং সে তাদেরকে শুধু বিজয়ের সুসংবাদই দিল না; বরং তাদের সহযোগিতা করার পূর্ণ আস্থা দিল। কিন্তু যখন মুসলিমদের পক্ষে ফিরিশতা দ্বারা আল্লাহর মদদ তার পরিদৃষ্ট হল, তখন সে সকলকে ছেড়ে পিছন ফিরে পলায়ন করল।
[2] আল্লাহর ভয় তার অন্তরে আর কি সৃষ্টি হবে? তবে তার দৃঢ়-বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, মুসলিমদের জন্য আল্লাহর বিশেষ সাহায্য রয়েছে; মুশরিকরা তাদের সামনে টিঁকে থাকতে পারবে না।
[3] হতে পারে এটা শয়তানের কথার একাংশ। আর এটাও হতে পারে যে, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পৃথকভাবে নতুন বাক্য ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. স্মরণ কর, যখন মুনাফেক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা বলছিল, এদের দ্বীন এদের বিভ্রান্ত করেছে। বস্তুতঃ কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করলে আল্লাহ তো প্রবল পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।(১)
(১) বদরের ময়দানে মুষ্টিমেয় এই মুসলিমরা যে এহেন বিরাট শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে এসেছে, তাদেরকে তাদের দ্বীনই প্রতারণায় ফেলে মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড় করিয়েছে, এটাকেই মুনাফিকরা ধোঁকা বলছে। কারণ, তারা ঈমানদারগণকে সংখ্যায় কম দেখে মনে করেছিল যে, তারা নিশ্চিত মারা পড়বে। [ইবন কাসীর] আল্লাহ্ তাআলা তাদের উত্তরে বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করে, জেনে রাখ, সে কখনো অপমানিত ও অপদস্ত হয় না। কারণ আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছুর উপর পরাক্রমশালী। তার কৌশলের সামনে সবার জ্ঞান-বুদ্ধিই বিকল হয়ে যায়। তিনি প্রজ্ঞাময়, হিকমতওয়ালা। তিনি জানেন কে সহযোগিতা পাওয়ার উপযুক্ত, আর কে অপমানিত হওয়ার উপযুক্ত। সে অনুসারে তিনি সম্মানিত বা অপমানিত করে থাকেন [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) স্মরণ কর, যখন মুনাফিক্ব (কপট) ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে[1] তারা বলতে লাগল, ‘এদের ধর্ম এদেরকে প্রতারিত করেছে।’[2] আর যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে, (সে বিজয়ী হয়।) নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [3]
[1] ‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে’ থেকে উদ্দেশ্য হল সেই নও মুসলিমগণ যাঁরা প্রথম প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মুসলিমদের সাফল্যের ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল। অথবা এ থেকে উদ্দেশ্য মুশরিকদল। আর এটাও হতে পারে যে, এ থেকে মদীনায় বসবাসকারী ইয়াহুদীদল উদ্দেশ্য।
[2] অর্থাৎ, এদের সংখ্যা তো দেখ! আর যুদ্ধসামগ্রীর যা অবস্থা তাও তো প্রকাশ। অথচ এরা মুকাবিলা করতে চলেছে মক্কার মুশরিকদের সাথে; যারা এদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশী এবং তাদের আছে নানান ধরনের যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম ও উপকরণ। মনে হয় যে, এদের দ্বীন এদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে। এই মোটা কথাও ওদের মগজে ধরে না?!
[3] আল্লাহ তাআলা বলেন, ওই দুনিয়াদারদের কাছে সেই ঈমানদারদের ঈমান, মনোবল ও অবিচলতার কি অনুমান হতে পারে, যাদের ভরসা এক আল্লাহর উপর, যিনি মহাপরাক্রমশালী। অর্থাৎ, তাঁর প্রতি ভরসাকারীকে তিনি অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেন না। আর তিনি প্রজ্ঞাময়ও; তাঁর প্রত্যেক কর্ম প্রজ্ঞা ও হিকমতে পরিপূর্ণ; যা পূর্ণরূপে অনুভব করতে মানুষের জ্ঞান অপারগ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. আর আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন ফিরিশতাগণ যারা কুফরী করেছে তাদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের মুখমণ্ডলে ও পিঠে আঘাত করছিল।(১) আর বলছিল তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর।(২)
(১) আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, যখন আল্লাহর ফিরিশতাগণ কাফেরদের রূহ কবজ করছিলেন, তাদের মুখে ও পিঠে আঘাত করছিলেন এবং বলছিলেন যে, আগুনে জ্বলার আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর; আপনি যদি সে সময় তাদের অবস্থা দেখতেন এতটুকু বলা হয়েছে। এখানে ‘যদি’ শব্দের উত্তর বর্ণিত হয়নি, মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে উত্তর উহ্য রয়েছে, যার মূল কথা হচ্ছে, তখন আপনি এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেতেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) এ আয়াতে “যারা কুফরী করেছে” বলে কাদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে; এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছেঃ
কোন কোন মুফাসসির এ বিবরণকে সে সমস্ত কুরাইশ কাফেরের অবস্থা বলে সাব্যস্ত করেছেন, যারা বদর যুদ্ধে মুসলিমদের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়েছিল এবং আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের সাহায্যের জন্য ফিরিশতা বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে এর অর্থ হবে এই যে, বদর যুদ্ধে যেসব কাফের সর্দার নিহত হয়, তাদের মৃত্যুতে ফিরিশতাদের হাত ছিল। তারা তাদেরকে সামনের দিক দিয়ে তাদের মুখে এবং পিছন দিক থেকে তাদের পিঠে আঘাত করে তাদেরকে হত্যা করেছিলেন আর সেই সঙ্গে আখেরাতে জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে তাদেরকে সংবাদ দিয়ে দিচ্ছিলেন। [ইবন কাসীর]
কোন কোন মুফাসসিরের মতে এখানে ঐ সমস্ত কাফেররাই উদ্দেশ্য যারা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বদর যুদ্ধে মারা যায়নি। সে হিসেবে এসমস্ত কাফেরদের মৃত্যুকালে কি হাল-অবস্থা হবে তা পূর্ব থেকেই জানিয়ে দিয়ে একদিকে ঈমানদারদেরকে সান্তনা, অপরদিকে কাফেরদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর]
অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, যারা’ শব্দের ব্যাপকতার ভিত্তিতে এর বিষয়বস্তুকেও ব্যাপক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবে এই যে, যখন কোন কাফের মারা যায়, তখন মৃত্যুর ফিরিশতা রূহ কবজ করার সময় তার মুখে ও পিঠে আঘাত করেন। কিন্তু যেহেতু এই আযাবের সম্পর্ক জড় জগতের সাথে নয়, বরং কবর জগতের সাথে যাকে বরযখ বলা হয়, কাজেই এই আযাব সাধারণতঃ চোখে দেখা যায় না। এ ব্যাপারে কুরআনের অন্যান্য আয়াত যেমন, সূরা আল-আনআমঃ ৯৩; সূরা মুহাম্মাদ:২৭ এবং বারা ইবন আযিব বর্ণিত বিখ্যাত কবরের আযাবের হাদীসটি প্রমাণবহ। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) তুমি যদি দেখতে তখনকার অবস্থা যখন ফিরিশতাগণ অবিশ্বাসীদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করছে এবং বলছে, তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর। [1]
[1] কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এটা বদর যুদ্ধে মুশরিকদের নিহত হওয়ার ব্যাপার। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত যে, যখন মুশরিকরা মুসলিমদের দিকে অগ্রসর হত, তখন মুসলিমরা তাদের চেহারায় তরবারি দ্বারা আঘাত করত। তা হতে বাঁচার জন্য তারা পিছন ফিরে পলায়ন করত। তখন ফিরিশতাগণ তাদের পাছাতে তরবারি মারতেন। কিন্তু এই আয়াত ব্যাপক; প্রত্যেক কাফের ও মুশরিক এর অন্তর্ভুক্ত। আর এর অর্থ হল, মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ তাদের মুখমন্ডলে ও পাছায় আঘাত করে থাকেন; যেমন সূরা আনআমে (৯৩ আয়াতে) বলা হয়েছে। {وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلآئِكَةُ بَاسِطُواْ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُواْ أَنفُسَكُمُ} অর্থাৎ, ‘‘যদি তুমি দেখতে পেতে (তখনকার অবস্থা) যখন (ঐ) যালেমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে আর ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের কর।’’ আর কারো কারো নিকটে ফিরিশতাগণের এই মার হবে কিয়ামতের দিন, যখন তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবেন এবং জাহান্নামের দারোগা বলবেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আযাব আস্বাদন কর।’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান