بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৬/ আল-আন'আম | Al-An'am | سورة الأنعام আয়াতঃ ১৬৫ মাক্কী
৬ : ৪১ بَلۡ اِیَّاهُ تَدۡعُوۡنَ فَیَكۡشِفُ مَا تَدۡعُوۡنَ اِلَیۡهِ اِنۡ شَآءَ وَ تَنۡسَوۡنَ مَا تُشۡرِكُوۡنَ ﴿۴۱﴾
بل ایاه تدعون فیكشف ما تدعون الیه ان شآء و تنسون ما تشركون ﴿۴۱﴾
• বরং তাকেই তোমরা ডাকবে। অতঃপর যদি তিনি চান, যে জন্য তাকে ডাকছ, তা তিনি দূর করে দেবেন। আর তোমরা যা শরীক কর, তা তোমরা ভুলে যাবে।

-আল-বায়ান

• বরং (এমন অবস্থায়) তোমরা একমাত্র তাঁকেই ডেকে থাক, অতঃপর ইচ্ছে করলে তিনি তা দূর করে দেন যার জন্য তোমরা তাঁকে ডাক আর তোমরা যাদেরকে তাঁর অংশীদার বানাও তাদের কথা ভুলে যাও।

-তাইসিরুল

• বরং তাঁকেই তোমরা ডাকতে থাকবে। অতএব যে বিপদের জন্য তোমরা তাঁকে ডাকছো, ইচ্ছা করলে তিনি তা তোমাদের থেকে দূর করে দিবেন, আর যাদেরকে তোমরা অংশী করেছিলে তাদের কথা ভুলে যাবে।

-মুজিবুর রহমান

• No, it is Him [alone] you would invoke, and He would remove that for which you invoked Him if He willed, and you would forget what you associate [with Him].

-Sahih International

৪১. না, তোমরা শুধু তাকেই ডাকবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাকে ডাকছ তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের সে দুঃখ দুর করবেন এবং যাকে তোমরা তার শরীক করতে তা তোমরা ভুলে যাবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) বরং শুধু তাঁকেই ডাকবে। অতঃপর ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের সেই কষ্ট দূর করবেন যার জন্য তোমরা তাঁকে ডাকবে এবং যাকে তোমরা তাঁর অংশী করতে তা বিস্মৃত হবে।’ [1]

[1] أَرَءَيْتَكُمْ এ كُم সম্বোধনের জন্য। এর অর্থ, أَخْبِرُوْنِيْ (তোমরা আমাকে বল বা খবর দাও)। এই বিষয়টাকেও কুরআনের কয়েকটি স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। (সূরা বাক্বারার ১৬৫নং আয়াতের টীকা দেখুন।) এর অর্থ হল, তাওহীদ হল মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক আহবান। মানুষ পরিবেশ অথবা পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণের কারণে বহু শিরকীয় আকীদা ও কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে এবং গায়রুল্লাহকে প্রয়োজনাদি পূরণকারী ও বিপদাপদ দূরকারী মনে করে, তাদের নামেই মানত করে। কিন্তু যখন সে কোন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তখন এ সব ভুলে যায়। তখন তার মূল প্রকৃতি এ সবের উপর বিজয়ী হয়ে যায় এবং অন্য এখতিয়ার ছাড়াই সেই সত্তাকেই ডাকে, যাঁকে ডাকা উচিত। যদি মানুষ এই প্রকৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, তবে কতই না ভাল হয়! আখেরাতের মুক্তি তো সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক এই ডাকের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ, তাওহীদ অবলম্বন করার মধ্যেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪২ وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰۤی اُمَمٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِالۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمۡ یَتَضَرَّعُوۡنَ ﴿۴۲﴾
و لقد ارسلنا الی امم من قبلك فاخذنهم بالباسآء و الضرآء لعلهم یتضرعون ﴿۴۲﴾
• আর আমি তোমাদের পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে বহু রাসূল পাঠিয়েছি, আমি তাদের প্রতি ক্ষুধা, দারিদ্রতা ও রোগ ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছি, যেন তারা নম্রতা প্রকাশ করে আমার সামনে নতি স্বীকার করে।

-আল-বায়ান

• তোমার পূর্বে আমি অনেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি, কিন্তু তাদের অবাধ্যতার কারণে) অভাব অনটন আর দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা বিনীত হয়।

-তাইসিরুল

• আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে বিভিন্ন কওমের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর আমি তাদেরকে দারিদ্র্য ও দুঃখ দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে।

-মুজিবুর রহমান

• And We have already sent [messengers] to nations before you, [O Muhammad]; then We seized them with poverty and hardship that perhaps they might humble themselves [to Us].

-Sahih International

৪২. আর অবশ্যই আপনার আগে আমরা বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পাকড়াও করেছি(১), যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে।(২)

(১) এ আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা'আলা পূর্ববর্তী উম্মতদের ঘটনাবলী এবং তাদের উপর প্রয়োগকৃত বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, আমি আপনার পূর্বেও অন্যান্য উম্মতের কাছে স্বীয় রাসূল প্রেরণ করেছি। দু’ভাবে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। প্রথমে কিছু অভাব-অনটন ও কষ্টে ফেলে দেখা হয়েছে যে, কষ্টে ও বিপদে অস্থির হয়েও তারা আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করে কি না। তারা যখন এ পরীক্ষায় ফেল করল এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও অবাধ্যতা ত্যাগ করার পরিবর্তে তাতে আরো বেশী লিপ্ত হয়ে পড়ল, তখন তাদের দ্বিতীয় পরীক্ষা নেয়া হল। অর্থাৎ তাদের জন্য পার্থিব ভোগ-বিলাসের সব দ্বার খুলে দেয়া হল এবং পার্থিব জীবন সম্পর্কিত সবকিছুই তাদেরকে দান করা হল।

আশা ছিল যে, তারা এসব নেয়ামত দেখে নেয়ামতদাতাকে চিনবে এবং এভাবে তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে। কিন্তু এ পরীক্ষায়ও তারা অকৃতকার্য হল। নেয়ামতদাতাকে চেনা ও তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তারা ভোগ-বিলাসের মোহে এমন মত্ত হয়ে পড়ল যে, আল্লাহ ও রাসূলের বাণী এবং শিক্ষা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে গেল। উভয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর যখন তাদের ওযর-আপত্তির আর কোন ছিদ্র অবশিষ্ট রইল না, তখন আল্লাহ্ তাআলা অকস্মাৎ তাদেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করলেন এবং এমনভাবে নাস্তানাবুদ করে দিলেন যে, বংশে বাতি জ্বালাবারও কেউ অবশিষ্ট রইল না।

পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর এ আযাব জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বিভিন্ন পন্থায় এসেছে এবং গোটা জাতিকে ধংস করে দিয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-এর গোটা জাতিকে এমন প্লাবন ঘিরে ধরে, যা থেকে তারা পর্বতের শৃঙ্গেও নিরাপদ থাকতে পারেনি। আদ জাতির উপর দিয়ে উপর্যপুরি আট দিন প্রবল ঝড়-ঝঞা বয়ে যায়। ফলে তাদের একটি প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারেনি।

সামূদ জাতিকে একটি হৃদয়বিদারী আওয়াজের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হয়। লুত 'আলাইহিস সালাম-এর কওমের সম্পূর্ণ বস্তি উল্টে দেয়া হয়, যা আজ পর্যন্ত জর্দান এলাকায় একটি অভূতপূর্ব জলাশয়ের আকারে বিদ্যমান। এ জলাশয়ে ব্যাঙ, মাছ ইত্যাদি জীব-জন্তুও জীবিত থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘বাহর মাইয়্যেত’ বা ‘মৃত সাগর’ নামে অভিহিত করা হয়। মোটকথা, পূর্ববর্তী উম্মতদের অবাধ্যতার শাস্তি প্রায়ই বিভিন্ন প্রকার আযাবের আকারে নাযিল হয়েছে, যাতে সমগ্র জাতি বরবাদ হয়ে গেছে। কোন সময় তারা বাহ্যতঃ স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে এবং পরবর্তীতে তাদের নাম উচ্চারণকারীও কেউ অবশিষ্ট থাকেনি।

(২) অর্থাৎ আমি তাদেরকে দুনিয়াতে যে কষ্ট ও বিপদে জড়িত করেছি, এর উদ্দেশ্য প্রকৃতপক্ষে শাস্তি দান নয়, বরং এ পরীক্ষায় ফেলে আমার দিকে আকৃষ্ট করাই ছিল উদ্দেশ্য। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই বিপদে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। সুতরাং কষ্ট ও বিপদাপদের মাধ্যমে তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে ধাবিত করাই উদ্দেশ্য। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪২) আর তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকট আমি রসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর (রসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে) তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-শোক দ্বারা পীড়িত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৩ فَلَوۡلَاۤ اِذۡ جَآءَهُمۡ بَاۡسُنَا تَضَرَّعُوۡا وَ لٰكِنۡ قَسَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ زَیَّنَ لَهُمُ الشَّیۡطٰنُ مَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۴۳﴾
فلولا اذ جآءهم باسنا تضرعوا و لكن قست قلوبهم و زین لهم الشیطن ما كانوا یعملون ﴿۴۳﴾
• সুতরাং তারা কেন বিনীত হয়নি, যখন আমার আযাব তাদের কাছে আসল? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা করত, শয়তান তাদের জন্য তা শোভিত করেছে।

-আল-বায়ান

• আমার শাস্তি যখন তাদের উপর পড়ল তখন তারা বিনয় নম্রতা অবলম্বন করল না কেন? বরং তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল, আর তারা যা করছিল শয়তান সেগুলোকে তাদের জন্য (খুব ভাল কাজ হিসেবে) সুশোভিত করে দিয়েছিল।

-তাইসিরুল

• সুতরাং তাদের প্রতি যখন আমার শাস্তি এসে পৌঁছল তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করলনা? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে পড়ল, আর শাইতান তাদের কাজকে তাদের চোখের সামনে সুশোভিত করে দেখাল।

-মুজিবুর রহমান

• Then why, when Our punishment came to them, did they not humble themselves? But their hearts became hardened, and Satan made attractive to them that which they were doing.

-Sahih International

৪৩. সুতরাং যখন আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৩) সুতরাং আমার শাস্তি যখন তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা বিনীত হল না কেন? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল, শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করল। [1]

[1] জাতি যখন চারিত্রিক অবনতি এবং অনুচিত কর্ম-কান্ডের শিকার হয়ে নিজেদের অন্তঃকরণে জং লাগিয়ে নেয়, তখন আল্লাহর আযাবও তাদেরকে উদাসীনতার নিদ্রা থেকে জাগাতে এবং তাদের মনে পরিবর্তন আনতে অসফল হয়। তাদের হাত ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহর সামনে ওঠে না, তাদের অন্তর তাঁর কাছে বিনয়ী হয় না এবং সংশোধন হওয়ার প্রতি তাদের কোন আগ্রহও জাগে না। বরং নিজেদের মন্দ আমলগুলোর উপর অপব্যাখ্যা ও অজুহাতের সুন্দর চাদর চাপিয়ে নিজেদের মনকে সন্তুষ্ট করে নেয়। এই আয়াতে এমন জাতিরই সেই কর্ম-কান্ডসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলোকে শয়তান তাদের জন্য সুন্দর আকারে পেশ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৪ فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُكِّرُوۡا بِهٖ فَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ اَبۡوَابَ كُلِّ شَیۡءٍ ؕ حَتّٰۤی اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰهُمۡ بَغۡتَۃً فَاِذَا هُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ ﴿۴۴﴾
فلما نسوا ما ذكروا بهٖ فتحنا علیهم ابواب كل شیء حتی اذا فرحوا بما اوتوا اخذنهم بغتۃ فاذا هم مبلسون ﴿۴۴﴾
• অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল্ল হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল।

-আল-বায়ান

• তাদেরকে যে নাসীহাত করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য যাবতীয় নি‘আমাতের দরজা খুলে দিলাম; পরিশেষে, তাদেরকে যা দেয়া হল তাতে তারা যখন আনন্দে মেতে উঠল, হঠাৎ করে তাদেরকে ধরে বসলাম। তখন (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে গেল।

-তাইসিরুল

• অতঃপর তাদেরকে যা কিছু উপদেশ ও নাসীহাত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল তখন আমি সুখ শান্তির জন্য প্রতিটি বস্তুর দরজা উন্মুক্ত করে দিলাম। যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লসিত হল তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল।

-মুজিবুর রহমান

• So when they forgot that by which they had been reminded, We opened to them the doors of every [good] thing until, when they rejoiced in that which they were given, We seized them suddenly, and they were [then] in despair.

-Sahih International

৪৪. অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমরা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম: ফলে তখনি তারা নিরাশ হল।(১)

(১) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদের অবাধ্যতা যখন সীমাতিক্রম করতে থাকে, তখন তাদেরকে একটি বিপজ্জনক পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। অর্থাৎ তাদের জন্য দুনিয়ার নেয়ামত, সুখ ও সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়া হয়। এতে সাধারণ মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, দুনিয়াতে কোন ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্পদের প্রাচুর্য দেখে ধোঁকা খেয়ো না যে, তারাই বুঝি বিশুদ্ধ পথে আছে এবং সফল জীবন যাপন করছে। অনেক সময় আযাবে পতিত অবাধ্য জাতিসমূহেরও এরূপ অবস্থা হয়ে থাকে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত এই যে, তাদেরকে অকস্মাৎ কঠোর আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা দেখ যে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা'আলা দুনিয়ার ধন-দৌলত প্রদান করছেন, অথচ সে গোনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে, তাকে ঢিল দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তার এ ভোগ-বিলাস কঠোর আযাবে গ্রেফতার হওয়ারই পূর্বাভাস। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৪৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) তাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা বিস্মৃত হল, তখন তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম, অবশেষে তাদেরকে যা দেওয়া হল, যখন তারা তাতে মত্ত হল, তখন অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৫ فَقُطِعَ دَابِرُ الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ؕ وَ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۴۵﴾
فقطع دابر القوم الذین ظلموا و الحمد لله رب العلمین ﴿۴۵﴾
• অতএব যালিম সম্প্রদায়ের মূল কেটে ফেলা হল। আর সকল প্রশংসা রাববুল আলামীন আল্লাহর জন্য।

-আল-বায়ান

• অতঃপর যারা যুলম করেছিল তাদের শিকড় কেটে দেয়া হল, আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য।

-তাইসিরুল

• অতঃপর অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হল, আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বের রাব্ব আল্লাহরই জন্য।

-মুজিবুর রহমান

• So the people that committed wrong were eliminated. And praise to Allah, Lord of the worlds.

-Sahih International

৪৫. ফলে যালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল এবং সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই।(১)

(১) এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, অপরাধী ও অত্যাচারীদের উপর আযাব নাযিল হওয়াও সারা বিশ্বের জন্য একটি নেয়ামত। এজন্য আল্লাহ্ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কারণ তিনি তার বন্ধুদের সাহায্য করেছেন এবং তাঁর শক্রদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। [মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) অতঃপর যালিম-সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই; যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। [1]

[1] এতে আল্লাহ-ভোলা জাতিদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলছেন যে, কখনো কখনো আমি সাময়িকভাবে এ ধরনের জাতির জন্য পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধির যাবতীয় দরজা খুলে দিই। তারপর তারা যখন তাতে একেবারে নিমগ্ন হয়ে পড়ে এবং নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য চরম অহংকার প্রদর্শন করতে আরম্ভ করে, তখন হঠাৎ আমি তাদেরকে পাকড়াও করে বসি এবং তাদের মূল শিকড় পর্যন্ত কেটে ছাড়ি। হাদীসেও এসেছে যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা দেখবে যে, মহান আল্লাহ অবাধ্যতা সত্ত্বেও কাউকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী পার্থিব সুখ দিচ্ছেন, তখন জানবে এটা তার জন্য ঢিল দেওয়া হচ্ছে।’’ অতঃপর তিনি এই আয়াতটাই পাঠ করলেন। (আহমাদ ৪/১৪৫) কুরআনের এই আয়াত এবং নবী করীম (সাঃ)-এর হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পার্থিব উন্নতি এবং সচ্ছলতা এ কথা প্রমাণ করে না যে, যে ব্যক্তিই অথবা যে জাতিই তা লাভ করে, সে আল্লাহর প্রিয় হয় এবং মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন; যেমন, অনেকে তা মনে করে। বরং অনেকে তো

{أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ} (الأنبياء: ১০৫) আয়াতের ভিত্তিতে তাদেরকে ‘আল্লাহর নেক বান্দা’ পর্যন্ত গণ্য করে! পক্ষান্তরে এ রকম মনে করা এবং এমন কথা বলা ভুল। যেহেতু ভ্রষ্ট জাতির বা ব্যক্তিবর্গের পার্থিব সচ্ছলতা পরীক্ষা এবং অবকাশ বা ঢিল দেওয়ার ভিত্তিতে। এটা তাদের কুফরী এবং অবাধ্যতার প্রতিদান নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৬ قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَخَذَ اللّٰهُ سَمۡعَكُمۡ وَ اَبۡصَارَكُمۡ وَ خَتَمَ عَلٰی قُلُوۡبِكُمۡ مَّنۡ اِلٰهٌ غَیۡرُ اللّٰهِ یَاۡتِیۡكُمۡ بِهٖ ؕ اُنۡظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ ثُمَّ هُمۡ یَصۡدِفُوۡنَ ﴿۴۶﴾
قل ارءیتم ان اخذ الله سمعكم و ابصاركم و ختم علی قلوبكم من اله غیر الله یاتیكم بهٖ انظر كیف نصرف الایت ثم هم یصدفون ﴿۴۶﴾
• বল, ‘তোমরা আমাকে জানাও, যদি আল্লাহ তোমাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহ কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহে মোহর এঁটে দেন, কে আছে ইলাহ, আল্লাহ ছাড়া, যে তোমাদের এগুলো নিয়ে আসবে’? দেখ, কীভাবে আমি বিভিন্নরূপে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করি, তারপর তারা এড়িয়ে চলে।

-আল-বায়ান

• (হে রসূল) বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি আর দর্শন শক্তি কেড়ে নেন, আর তোমাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কে ইলাহ আছে সেগুলো তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে? লক্ষ্য কর আমি আমার (শক্তি-ক্ষমতার) নিদর্শনগুলোকে কেমন বিশদভাবে বর্ণনা করি কিন্তু তা সত্তেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-তাইসিরুল

• তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের মনের কপাটে তালা লাগিয়ে মোহর এটে দেন তাহলে এই শক্তি তোমাদেরকে আবার দান করতে পারে এমন কোন সত্তা আল্লাহ ব্যতীত আছে কি? লক্ষ্য করতো! আমি আমার নিদর্শনসমূহ ও দলীল প্রমাণাদী কিভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করছি। এর পরেও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়!

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Have you considered: if Allah should take away your hearing and your sight and set a seal upon your hearts, which deity other than Allah could bring them [back] to you?" Look how we diversify the verses; then they [still] turn away.

-Sahih International

৪৬. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর করে দেন তবে আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ আছে যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে? দেখুন, আমরা কিরূপে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করি; এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) বল, ‘তোমরা আমাকে বল, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয় মোহর করে দেন, তাহলে আল্লাহ ব্যতীত কোন্ উপাস্য আছে, যে তোমাদের ঐগুলি ফিরিয়ে দেবে?’ লক্ষ্য কর, কিরূপে আয়াতগুলি নানাভাবে বর্ণনা করি। এতদসত্ত্বেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। [1]

[1] চোখ, কান এবং অন্তর হল মানুষের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মহান আল্লাহ বলছেন, তিনি ইচ্ছা করলে তাদের সেই বৈশিষ্ট্যগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, যেগুলো তিনি তাদের দেহে দিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ, দেখার, শোনার এবং অনুধাবন করার বৈশিষ্ট্যসমূহ। যেমন, কাফেরদের ঐ অঙ্গগুলো উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে বঞ্চিত থাকে। অথবা তিনি চাইলে অঙ্গগুলোকেই নিঃশেষ করে দেবেন। দু’টোই তিনি করতে পারেন। তাঁর পাকড়াও থেকে কেউ বাঁচতে পারে না; কেবল সে ছাড়া যাকে তিনিই বাঁচাতে চান। আয়াতগুলি বিভিন্নভাবে পেশ করার অর্থ হল, কখনো সতর্ক করে, কখনো সুসংবাদ দিয়ে, কখনো লোভ দেখিয়ে, কখনো ভয় দেখিয়ে, আবার কখনো অন্যভাবেও।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৭ قُلۡ اَرَءَیۡتَكُمۡ اِنۡ اَتٰىكُمۡ عَذَابُ اللّٰهِ بَغۡتَۃً اَوۡ جَهۡرَۃً هَلۡ یُهۡلَكُ اِلَّا الۡقَوۡمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۴۷﴾
قل ارءیتكم ان اتىكم عذاب الله بغتۃ او جهرۃ هل یهلك الا القوم الظلمون ﴿۴۷﴾
• বল, ‘তোমরা আমাকে জানাও, যদি আল্লাহর আযাব হঠাৎ কিংবা প্রকাশ্যে তোমাদের কাছে এসে যায়, যালিম কওম ছাড়া অন্য কাউকে ধ্বংস করা হবে কি?’

-আল-বায়ান

• বল, তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ, যদি তোমাদের কাছে আকস্মিক বা প্রকাশ্যে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে তাহলে যালিম সম্প্রদায় ছাড়া আর কে ধ্বংস হবে?

-তাইসিরুল

• তুমি আরও জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহর শাস্তি যদি হঠাৎ করে অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর এসে পড়ে তাহলে কি অত্যাচারীরা ছাড়া আর কেহ ধ্বংস হবে?

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Have you considered: if the punishment of Allah should come to you unexpectedly or manifestly, will any be destroyed but the wrongdoing people?"

-Sahih International

৪৭. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহর শাস্তি হঠাৎ বা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আপতিত হলে যালিম সম্প্রদায় ছাড়া আর কাউকে ধ্বংস করা হবে কি?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) বল, ‘তোমরা আমাকে বল, আল্লাহর শাস্তি অকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আপতিত হলে অনাচারী সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেউ ধ্বংস হবে কি?’ [1]

[1] بَغْتَةً (অকস্মাৎ) বলতে রাত এবং جَهْرَةً (প্রকাশ্য) বলতে দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটাকেই সূরা ইউনুসে{بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا}  বলা হয়েছে। অর্থাৎ, দিনে আযাব আসুক অথবা রাতে। কিংবা بَغْتَةً হল এমন আযাব যা হঠাৎ করে কোন পূর্বাভাস এবং ভূমিকা ছাড়াই আচমকা আসে। আর جَهْرَةً হল এমন আযাব যা পূর্বাভাস এবং ভূমিকার পর আসে। জাতিসমূহের ধ্বংসের জন্য এ আযাব তাদের উপরেই আসে, যারা যালেম ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়। অর্থাৎ, কুফরী, বিরুদ্ধাচরণ এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘন করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৮ وَ مَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ ۚ فَمَنۡ اٰمَنَ وَ اَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۴۸﴾
و ما نرسل المرسلین الا مبشرین و منذرین فمن امن و اصلح فلا خوف علیهم و لا هم یحزنون ﴿۴۸﴾
• আর আমি রাসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করি। অতএব যারা ঈমান এনেছে ও শুধরে নিয়েছে, তাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তারা চি‎‎ন্তিত হবে না।

-আল-বায়ান

• আমি তো রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, অতঃপর (রসূলের আনুগত্য করে) যারা ঈমান আনে ও নিজেকে সংশোধন করে তাদের নেই কোন ভয়, নেই তাদের কোন দুঃখ।

-তাইসিরুল

• আমি রাসূলদেরকে শুধু এ উদ্দেশে পাঠিয়ে থাকি যে, তারা (সৎ লোকদেরকে) সুসংবাদ দিবে এবং (অসৎ লোকদেরকে) ভয় দেখাবে। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও চরিত্র সংশোধন করেছে তাদের জন্য কোন ভয়-ভীতি থাকবেনা এবং তারা চিন্তিতও হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And We send not the messengers except as bringers of good tidings and warners. So whoever believes and reforms - there will be no fear concerning them, nor will they grieve.

-Sahih International

৪৮. আর আমরা রাসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। অতঃপর যারা ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৮) রসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি।[1] সুতরাং যে বিশ্বাস করবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তার কোন ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না। [2]

[1] তাঁরা আনুগত্যকারীদেরকে সেই নিয়ামতসমূহের এবং অজস্র নেকীর সুসংবাদ দেন, যা মহান আল্লাহ জান্নাত আকারে তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। আর অবাধ্যজনদেরকে সেই আযাব থেকে ভয় দেখান, যা মহান আল্লাহ জাহান্নাম আকারে তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন।

[2] আগামীতে (অর্থাৎ আখেরাতে) আগত অবস্থাসমূহের কোন ভয় তাদের নেই এবং নিজেদের পশ্চাতে দুনিয়াতে যা কিছু ছেড়ে এসেছে অথবা দুনিয়ার যেসব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তারা ভোগ করতে পায়নি, তার জন্য তারা দুঃখিত হবে না। কেননা, ইহকাল ও পরকালে তাদের অভিভাবক এবং সাহায্যকারী হলেন দু’জাহানের প্রতিপালক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৪৯ وَ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَمَسُّهُمُ الۡعَذَابُ بِمَا كَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۴۹﴾
و الذین كذبوا بایتنا یمسهم العذاب بما كانوا یفسقون ﴿۴۹﴾
• আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে তাদেরকে স্পর্শ করবে আযাব, এ কারণে যে, তারা নাফরমানী করত।

-আল-বায়ান

• আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে মনে করে, শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে, কেননা তারা নাফরমানীতে লিপ্ত ছিল।

-তাইসিরুল

• আর যারা আমার আয়াত ও নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে তারা তাদের নিজেদের ফাসেকীর কারণে শাস্তি ভোগ করবে।

-মুজিবুর রহমান

• But those who deny Our verses - the punishment will touch them for their defiant disobedience.

-Sahih International

৪৯. আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, তাদেরকে স্পর্শ করবে আযাব, কারণ তারা নাফরমানী করত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৯) যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করে, সত্য-ত্যাগের জন্য তাদের উপর শাস্তি আপতিত হবে। [1]

[1] অর্থাৎ, তাদের শাস্তি এই জন্য হবে যে, তারা কুফরী এবং মিথ্যাজ্ঞান করার পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর নির্দেশাবলীর কোন পরোয়া করেনি। তাঁর হারামকৃত ও নিষিদ্ধ কার্যকলাপে লিপ্ত থেকেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬ : ৫০ قُلۡ لَّاۤ اَقُوۡلُ لَكُمۡ عِنۡدِیۡ خَزَآئِنُ اللّٰهِ وَ لَاۤ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ وَ لَاۤ اَقُوۡلُ لَكُمۡ اِنِّیۡ مَلَكٌ ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ ؕ قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ؕ اَفَلَا تَتَفَكَّرُوۡنَ ﴿۵۰﴾
قل لا اقول لكم عندی خزآئن الله و لا اعلم الغیب و لا اقول لكم انی ملك ان اتبع الا ما یوحی الی قل هل یستوی الاعمی و البصیر افلا تتفكرون ﴿۵۰﴾
• বল, ‘তোমাদেরকে আমি বলি না, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডারসমূহ রয়েছে এবং আমি গায়েব জানি না এবং তোমাদেরকে বলি না, নিশ্চয় আমি ফেরেশতা। আমি কেবল তাই অনুসরণ করি যা আমার কাছে ওহী প্রেরণ করা হয়’। বল, ‘অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অতএব তোমরা কি চিন্তা করবে না’?

-আল-বায়ান

• বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্যের খবরও জানি না। আর আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা, আমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয় তাছাড়া (অন্য কিছুর) আমি অনুসরণ করি না। বল, অন্ধ আর চোখওয়ালা কি সমান, তোমরা কি চিন্তা করে দেখ না?

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ আমি তোমাদেরকে এ কথা বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভান্ডার রয়েছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক/ফেরেশতা। আমার কাছে যা কিছু অহী রূপে পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করে থাকি। তুমি (তাদেরকে) জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা করনা?

-মুজিবুর রহমান

• Say, [O Muhammad], "I do not tell you that I have the depositories [containing the provision] of Allah or that I know the unseen, nor do I tell you that I am an angel. I only follow what is revealed to me." Say, "Is the blind equivalent to the seeing? Then will you not give thought?"

-Sahih International

৫০. বলুন, আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ আছে, আর আমি গায়েবও জানি না এবং তোমাদেরকে এও বলি না যে, আমি ফিরিশতা, আমার প্রতি যা ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫০) বল, ‘আমি তোমাদেরকে এ বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি অবগত নই এবং তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। আমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি!’[1] বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষমান কি সমান?[2] তোমরা কি অনুধাবন কর না?’

[1] আমার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত কোন এমন ধন-ভান্ডার নেই (যার অর্থ, সব রকমের শক্তি-সামর্থ্য) যে, আমি আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়াই তোমাদেরকে এমন বড় মু’জিযা দেখাতে পারব, যেমন তোমরা চাও এবং যা দেখে তোমাদের মধ্যে আমার সত্যতার প্রতি বিশ্বাস জন্মাবে। আমার কাছে অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞানও নেই যে, আমি তোমাদেরকে আগত অবস্থাদি সম্পর্কে অবহিত করে দেব। আমি ফিরিশতা হওয়ার দাবীও করি না যে, তোমরা আমাকে এই ধরনের অস্বাভাবিক জিনিস সংঘটন করতে বাধ্য করবে, যা মানবীয় শক্তির অনেক ঊর্ধ্বে। আমি তো কেবল সেই অহীর অনুসরণ করি, যা আমার উপর অবতীর্ণ হয়। আর এ কথায় হাদীসও শামিল আছে। যেমন, নবী (সাঃ) বলেছেন, أُوْتِيْتُ الْقُرْءَان وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘‘আমাকে কুরআনের সাথে তার মত (আরো একটি জিনিস) দেওয়া হয়েছে। আর এই ‘তার মত’ হল রসূল (সাঃ)-এর হাদীস।

[2] এই জিজ্ঞাসা অস্বীকৃতিসূচক। অর্থাৎ, অন্ধ ও চক্ষুষমান, ভ্রষ্ট ও হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং মু’মিন ও কাফের উভয়ে সমান হতে পারে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৪১ থেকে ৫০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 14 15 16 17 পরের পাতা »