-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান(১), যাতে তারা ফিরে আসে।(২)
(১) অর্থাৎ স্থলে, জলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের কুকর্মের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বিপর্যয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাবলীর প্রাচুর্য, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম এবং ক্ষতি বেশী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে। [সা’দী, কুরতুবী, বাগভী] অন্য এক আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা: ৩০]
উদ্দেশ্য এই যে, এই দুনিয়ায় বিপদাপদের সত্যিকার কারণ তোমাদের গোনাহ; যদিও দুনিয়াতে এসব গোনাহের পুরোপুরি প্রতিফল দেয়া হয় না এবং প্রত্যেক গোনাহর কারণেই বিপদ আসে না। বরং অনেক গোনাহ, তো ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে এটা সত্য যে, সমস্ত গোনাহর কারণে বিপদ আসে না বরং কোন কোন গোনাহর কারণেই বিপদ আসে। দুনিয়াতে প্রত্যেক গোনাহর কারণে বিপদ আসলে একটি মানুষও পৃথিবীতে বেঁচে থাকত না। ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা আন-নাহল: ৬১]
আল্লাহ আরো বলেন, আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা ফাতির: ৪৫] বরং অনেক গোনাহ তো আল্লাহ মাফই করে দেন। যেগুলো মাফ করেন না, সেগুলোরও পুরোপুরি শাস্তি দুনিয়াতে দেন না; বরং সামান্য স্বাদ আস্বাদন করান।
(২) কাতাদাহ বলেন, এটা আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে পাঠানোর আগের অবস্থার বর্ণনা। যখন যমীন ভ্ৰষ্টতা ও অন্ধকারে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারপর আল্লাহ যখন তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠালেন, তখন মানুষের মধ্যে যারা ফিরে আসার তারা ফিরে আসল। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোন কোন কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে। [1]
[1] ‘স্থল’ বলতে মানুষের বাসভূমি এবং জল বলতে সমুদ্র, সামুদ্রিক পথ এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসের স্থান বুঝানো হয়েছে। ‘ফাসাদ’ (বিপর্যয়) বলতে ঐ সকল আপদ-বিপদকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা মনুষ্য-সমাজে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয় এবং মানুষের শান্তিময় জীবন-যাত্রা ব্যাহত হয়। এই জন্য এর অর্থ গোনাহ ও পাপাচরণ করাও সঠিক। অর্থাৎ, মানুষ এক অপরের উপর অত্যাচার করছে, আল্লাহর সীমা লংঘন করছে এবং নৈতিকতার বিনাশ সাধন করছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। অবশ্য ‘ফাসাদ’-এর অর্থ আকাশ-পৃথিবীর ঐ সকল বিপর্যয় নেওয়াও সঠিক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ও সতর্কতা স্বরূপ প্রেরণ করা হয়। যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অনিরাপত্তা, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি। উদ্দেশ্য এই যে, যখন মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নেয়, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিফল স্বরূপ তাদের কর্মপ্রবণতা মন্দের দিকে ফিরে যায় এবং তার ফলে পৃথিবী নানা বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সুখ-শান্তি বিলীন হয় এবং তার পরিবর্তে ভয়-ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ছিন্তাই-ডাকাতি, লড়াই ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে। তার সাথে সাথে কখনো আকাশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন আপদ-বিপদ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ)ও প্রেরিত হয়। আর তাতে উদ্দেশ্য এই থাকে যে, ঐ সর্বনাশী বিপর্যয় ও আপদ-বিপদ দেখে সম্ভবত মানুষ পাপকর্ম থেকে বিরত হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে পুনরায় তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসবে। এর বিপরীত যে সমাজের রীতি-নীতি ও চাল-চলন আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যে সমাজে আল্লাহর ‘হদ্দ’ (দন্ডবিধি) কায়েম হয়, অত্যাচারের জায়গায় ন্যায়পরায়ণতা বিরাজ করে, সে সমাজে সুখ-শান্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মঙ্গল ও বরকত দেওয়া হয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার একটি ‘হদ্দ’ কায়েম করা সেখানকার মানুষের জন্য চল্লিশ দিনের বৃষ্টি থেকেও উত্তম।’’ (নাসাঈ, ইবনে মাজা) অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে, ‘‘যখন একটি পাপাচারী মারা যায়, তখন শুধু মানুষই নয়; বরং গ্রাম-শহর, গাছপালা এবং প্রাণীরাও পর্যন্ত শান্তিলাভ করে।’’ (বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক, মুসলিমঃ কিতাবুল জানাইয)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. বলুন, তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর অতঃপর দেখ পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে! তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) বল, ‘তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে দেখ, তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে। ওদের অধিকাংশই ছিল অংশীবাদী।’[1]
[1] এখানে বিশেষ করে অংশীবাদী ও মুশরিকদের কথা উল্লেখ হয়েছে। যেহেতু শিরক হল সবচাইতে বড় গোনাহ। এ ছাড়াও এতে অন্যান্য পাপাচার ও অবাধ্যতাও এসে যায়। কারণ, অন্যান্য পাপও মানুষ নিজের প্রবৃত্তি-পূজার ফলেই করে থাকে। এই জন্য অনেকেই পাপ ও অবাধ্যাচরণকে আমলগত শিরক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. সুতরাং আপনি সরল-সঠিক দ্বীনে নিজকে প্রতিষ্ঠিতত করুন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দিন অনিবার্য তা উপস্থিত হওয়ার আগে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে।(১)
(১) কাতাদাহ বলেন, এর অর্থ আপনি ইসলামের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকুন। সেদিন আসার পূর্বেই যেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে, একদল জান্নাতী হবে, আরেকদল হবে জাহান্নামী। [তাবারী] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াত এ সূরার অন্য আয়াতের অনুরূপ যেখানে এসেছে, “আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা জন্নাতে খোশহালে থাকবে; আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, পরিণামে তাদেরকেই আযাবের মাঝে উপস্থিত রাখা হবে।” তাছাড়া অন্য সূরায় এসেছে, “এবং সতর্ক করতে পারেন কেয়ামতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জলন্ত আগুনে।” [সূরা আশ-শূরা: ৭]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) যে দিবস অনিবার্য,[1] আল্লাহর নির্দেশে তা উপস্থিত হওয়ার পূর্বে তুমি স্থিতিশীল ধর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর; সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে। [2]
[1] অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সংঘটিত হওয়াকে কেউ নিবারণ করতে বা বাধা দিতে পারবে না। অতএব তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর আনুগত্যের পথ বেছে নিয়ে সৎকর্ম করে পুণ্য সঞ্চয় করে নাও।
[2] অর্থাৎ, দুই দলে বিভক্ত হয়ে যাবে; এক দল মু’মিন, অপর দল কাফের।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. যে কুফরী করে কুফরীর শাস্তি তারই প্ৰাপ্য; আর যারা সৎকাজ করে তারা নিজেদেরই জন্য রচনা করে সুখশয্যা।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) যে অবিশ্বাস করে, অবিশ্বাসের জন্য সে-ই দায়ী। আর যারা সৎকাজ করে, তারা নিজেদেরই জন্য সুখশয্যা রচনা করে। [1]
[1] مهد এর অর্থ রাস্তা সমান করা, বিছানা বিছানো। অর্থাৎ তারা নেক আমল দ্বারা জান্নাত যাওয়া এবং জান্নাতে উচ্চস্থান অর্জন করার নিমিত্তে রাস্তা নির্মাণ ও সুখশয্যা রচনা করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. যাতে করে আল্লাহ যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে পুরস্কৃত করেন। নিশ্চয় তিনি কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) কারণ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে পুরস্কৃত করেন।[1] নিশ্চয় তিনি অবিশ্বাসীদেরকে ভালবাসেন না।
[1] অর্থাৎ, জান্নাত অর্জনের জন্য শুধু নেকীই ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার সাথে আল্লাহর অনুগ্রহ শামিল হবে। সুতরাং তিনি স্বীয় অনুগ্রহে এক এক নেকীর বিনিময় দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি বায়ু পাঠান সুসংবাদ দেয়ার জন্য(১) এবং তোমাদেরকে তাঁর কিছু রহমত আস্বাদন করাবার জন্য; আর যাতে তার নির্দেশে নৌযানগুলো বিচরণ করে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহের কিছু সন্ধান করতে পার, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও।(২)
(১) মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
(২) এ আয়াতের সমার্থে আরও দেখুন, সূরা আল-বাকারাহ: ১৬৪; সূরা আল-মুমিনুন: ২২।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি এই যে, তিনি সুসংবাদবাহীরূপে[1] বায়ু প্রেরণ করেন; যাতে তিনি তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহ আস্বাদন করান[2] এবং যাতে তাঁর নির্দেশে জলযানগুলি বিচরণ করে,[3] আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার[4] এবং তাঁর কৃতজ্ঞ হতে পার।[5]
[1] অর্থাৎ, বৃষ্টির সুসংবাদবাহীরূপে।
[2] অর্থাৎ, বৃষ্টিদানে তোমাদেরকে আনন্দিত করেন এবং ক্ষেতের ফসলও সবুজ হয়ে মেতে ওঠে।
[3] অর্থাৎ, সেই বায়ু দ্বারা নৌকা চলাচল করে; উদ্দেশ্য পাল-তোলা নৌকা। বর্তমানে মানুষ আল্লাহর দেওয়া বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রচালিত জলজাহাজ, নৌকা ইত্যাদি তৈরি করেছে। তারপরেও তার জন্য অনুকূল বায়ুর প্রয়োজন। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা তাকে তুফানী ঢেউ দ্বারা সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
[4] অর্থাৎ, তার সাহায্যে বিভিন্ন দেশে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা (তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার)।
[5] ঐ সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অগণিত অনুগ্রহ ও নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হতে পার। অর্থাৎ, এই সকল অনুগ্রহ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এই জন্য প্রদান করে থাকেন, যাতে তোমরা নিজেদের জীবন-যাত্রায় তার দ্বারা উপকৃত হও এবং আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. আর আমরা তো আপনার আগে রাসূলগণকে পাঠিয়েছিলাম তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে। অতঃপর তাঁরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলেন; অতঃপর আমরা অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। আর আমাদের দায়িত্ব তো মুমিনদের সাহায্য করা।(১)
(১) অর্থাৎ আমি অপরাধী কাফেরদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিলাম এবং মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব ছিল। এই আয়াত থেকে জানা গেল যে, আল্লাহ তাআলা কৃপাবশতঃ মুমিনের সাহায্য করাকে নিজ দায়িত্বে গ্রহণ করেছেন। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) আমি তো তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম, তারা ওদের নিকট সুস্পষ্ট বহু নিদর্শন এনেছিল; অতঃপর আমি অপরাধীদের শাস্তি দিয়েছিলাম। আর বিশ্বাসীদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।[1]
[1] অর্থাৎ, হে মুহাম্মাদ! যেমন আমি তোমাকে তোমার সম্প্রদায়ের নিকট রসূল করে প্রেরণ করেছি, অনুরূপ তোমার পূর্বের রসূলগণকে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তাদের সাথে যথাযথ প্রমাণ ও অলৌকিক নিদর্শনাবলী ছিল। কিন্তু তাদের সম্প্রদায়রা তাদেরকে মিথ্যা মনে করেছিল এবং তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করেনি। অবশেষে তাদের মিথ্যাজ্ঞান ও অবাধ্যতার পাপের ফলে আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং আমার কর্তব্য হিসাবে মু’মিনদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছি। এটা আসলে নবী (সাঃ) ও তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারী মুসলিমদের জন্য সান্ত্বনা যে, কাফের ও মুশরিকদের মিথ্যাজ্ঞান করাতে ভয়ের কোন কারণ নেই। যেহেতু এটা কোন নতুন কথা নয়; বরং প্রত্যেক নবীর সাথে তাঁর জাতি একই রকম ব্যবহার প্রদর্শন করেছে। অনুরূপ এটা কাফেরদের জন্য সতর্কবাণী যে, যদি তারা ঈমান আনয়ন না করে, তাহলে তাদেরও শেষ ফল তাই হবে, যা পূর্ববর্তী জাতিদের হয়েছে। কারণ আল্লাহর সাহায্য তো পরিশেষে মু’মিনদের জন্যই আসে; যাতে পয়গম্বর ও মু’মিনগণ সকলেই শামিল থাকেন। حَقاًّ শব্দটি كان এর খবর হিসেবে ব্যবহার হয়েছে এবং তা তার ইসম (বিশেষ্য)র পূর্বে ব্যবহার হয়েছে, আর তা হল نَصرُ المُؤمِنِين ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. আল্লাহ, যিনি বায়ু পাঠান, ফলে তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে; অতঃপর তিনি এটাকে যেমন ইচ্ছে আকাশে ছড়িয়ে দেন; পরে এটাকে খণ্ড-বিখণ্ড করেন, ফলে আপনি দেখতে পান সেটার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা; তারপর যখন তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের কাছে ইচ্ছে এটা পৌছে দেন, তখন তারা হয় আনন্দিত,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, ফলে তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে;[1] অতঃপর তিনি একে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন,[2] পরে একে খন্ড-বিখন্ড করেন[3] এবং তুমি দেখতে পাও, তা থেকে বারিধারা নির্গত হয়।[4] অতঃপর যখন তিনি তাঁর দাসদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা তা দান করেন; তখন ওরা হর্ষোৎফুল্ল হয়।
[1] অর্থাৎ, সে মেঘমালা যেখানেই থাকুক, সেখান থেকে বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
[2] কখনো চালিয়ে, কখনো স্থির রেখে, কখনো থাক-থাক ঘনীভূত করে, কখনো বহুদূর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ করে। এইভাবে আকাশে মেঘমালার বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে।
[3] অর্থাৎ, মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেওয়ার পর কখনো তাকে বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত করে দেন।
[4] وَدَق এর অর্থ বৃষ্টি। অর্থাৎ ঐ সকল মেঘমালা থেকে আল্লাহ যখন চান বৃষ্টি বর্ষণ হয়। যাতে বৃষ্টির প্রয়োজন বোধকারিগণ আনন্দিত হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. যদিও ইতোপূর্বে তাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণের আগে তারা ছিল একান্ত নিরাশ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) ওরা অবশ্যই ওদের প্রতি বৃষ্টি প্রেরিত হওয়ার পূর্বে নিরাশ থাকে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. সুতরাং আপনি আল্লাহর অনুগ্রহের ফল সম্বন্ধে চিন্তা করুন, কিভাবে তিনি যমীনকে জীবিত করেন সেটার মৃত্যুর পর। এভাবেই তো আল্লাহ মৃতকে জীবিতকারী, আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।(১)
(১) এ আয়াতের সমার্থে সূরা আল-আ’রাফের ৫৭ নং আয়াত দেখুন।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) সুতরাং তুমি আল্লাহর করুণার চিহ্ন লক্ষ্য কর, কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর একে পুনর্জীবিত করেন। নিঃসন্দেহে তিনি মৃতকে জীবিত করবেন[1] এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
[1] ‘করুণার চিহ্ন’ বলতে ঐ সকল ফল-ফসলকে বুঝানো হয়েছে, যা বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন হয় এবং মানুষের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের কারণ হয়। এখানে লক্ষ্য করা বা দেখার অর্থ হল, শিক্ষা গ্রহণের চোখে দেখা, যাতে মানুষ আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কথা এবং কিয়ামতের দিন তিনি যে মৃতকে জীবিত করবেন, সে কথা স্বীকার করে নেয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান