-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. তারা(১) এমন লোক যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে সালাত কায়েম করবে(২), যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর সব কাজের চুড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর ইখতিয়ারে।
(১) এই আয়াতে তাদেরই বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে, যাদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে বিনা কারণে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এজন্যেই আবুল আলীয়া বলেন, এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর] হাসান বসরী বলেন, তারা হচ্ছে এ উম্মতের সে সমস্ত লোক, যারা কোন জায়গা জয় করলে সেখানে সালাত কায়েম করে। ইবন আবী নাজীহ বলেন, এখানে শাসকদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। দাহহাক বলেন, এটা এমন এক শর্ত যা আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতা প্ৰদান করেছেন তাদের উপর আরোপ করেছেন। [কুরতুবী] উমর ইবন আবদুল আযীয বলেন, এটি শুধু গভর্ণরের দায়িত্ব নয়, এটা গভর্ণর ও যাদের উপর তাকে গভর্ণর বানানো হয়েছে তাদের সবার দায়িত্ব।
আমি কি তোমাদেরকে গভর্ণরের উপর কি দায়িত্ব আর গভর্ণরের জন্য তোমাদের উপর কি দায়িত্ব সেটা জানিয়ে দেব না? গভর্ণরের দায়িত্ব হচ্ছে, তোমাদের উপর আল্লাহর হকের ব্যাপারে তোমাদেরকে পাকড়াও করা। আর তোমাদের কারও দ্বারা অপর কারও আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে তার হক আদায় করা। আর যতটুকু সম্ভব তোমাদেরকে সহজ সরল সঠিক পথে পরিচালিত করা। আর তোমাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, আনুগত্য করা। তবে জোর করে নয়। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য কথার বিপরীতে গোপনে ভিন্ন কথা না বলা। [ইবন কাসীর] আতিয়্যাহ আল-আওফী বলেন, এ আয়াতটি অন্য একটি আয়াতের মত। যেখানে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে”। [সূরা আন-নূর: ৫৫]
আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমি তাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা তাদের ক্ষমতাকে সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের কাজে প্রয়োগ করবে। এই আয়াত মদীনায় হিজরতের অব্যবহিত পরে তখন নাযিল হয়, যখন মুসলিমদের কোথাও পূর্ণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্পর্কে পূর্বেই বলে দিলেন যে, তারা ক্ষমতা লাভ করলে তা দ্বীনের উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ কাৰ্য সম্পাদনে ব্যয় করবে। এ কারণেই ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ ثَنَاءٌ قَبْلَ بَلَاء অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার এই এরশাদ কর্ম অস্তিত্ব লাভ করার পূর্বেই কর্মীদের গুণ ও প্রশংসা করার শামিল। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
এরপর আল্লাহ তা'আলার এই নিশ্চিত সুসংবাদ দুনিয়াতে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। চারজন খেলাফায়ে রাশেদীন এ আয়াতের বিশুদ্ধ প্রতিচ্ছবি ছিলেন। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকেই ক্ষমতা দান করলেন এবং কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর অনুরূপ তাদের কর্ম ও কীর্তি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাদের ক্ষমতা এ কাজেই ব্যয় করেন। তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করেন, যাকাতের ব্যবস্থা সুদৃঢ় করেন, সৎকাজের প্রবর্তন করেন এবং মন্দ কাজের পথ রুদ্ধ করেন।
(২) সালাত কায়েম করার অর্থ হলোঃ সময়মত, সালাতের সীমারেখা, আরকান ও আহকামসহ জামা'আতের সাথে আদায় করা।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ)ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে।[1] আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে। [2]
[1] আলোচ্য আয়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। যার বাস্তবায়ন খেলাফতে রাশেদা ও প্রথম শতাব্দীর ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত উদ্দেশ্য সাধন করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর যার কারণে তাঁদের রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিস্তার লাভ করেছিল, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও ছিল এবং মুসলিমরা মাথা উঁচু করে জীবন যাপন করতে পেরেছিলেন। আজও সউদী আরবে -- আলহামদুলিল্লাহ -- ঐ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। যার বর্কতে পৃথিবীর মধ্যে সউদী আরব শান্তি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে একটি শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ দেশ বলে পরিচিত। বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে সফল রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য বড় হৈচৈ ও হাঙ্গামা শোনা যায় এবং প্রত্যেক ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়করা সফল রাষ্ট্রের দাবিও করে থাকেন। কিন্তু প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্রে অশান্তি, বিশৃংখলা, হত্যা, লুঠতরাজ, দুর্নীতি ও অবনতি ব্যাপক হয়ে আছে এবং অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে চলেছে। এর একমাত্র কারণ এই যে, তাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান না মেনে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ (ধর্মহীন) বিধান দ্বারা সাফল্য অর্জন করতে চান। যা আকাশ স্পর্শ করা ও বাতাসকে মুষ্ঠিবদ্ধ করার মত অবাস্তব অপচেষ্টা। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলিতে কুরআনের বর্ণিত নিয়মানুসারে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান ব্যবস্থা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদানের বিধান বাস্তবায়ন না করা হবে এবং এ লক্ষ্যকে রাজনীতির অন্যান্য কার্যের উপর অগ্রাধিকার না দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সফল রাষ্ট্র কায়েম করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
[2] প্রত্যেক ব্যাপার আল্লাহর আজ্ঞাধীন এবং তাঁর তদবীরের মুখাপেক্ষী। তাঁর আজ্ঞা, হুকুম ও অনুমতি বিনা এ বিশ্বের কোন গাছের একটি পাতাও নড়ে না। সুতরাং কে আল্লাহর আজ্ঞা ও নিয়ম-নীতি হতে বিচ্যুত হয়ে সত্যিকার সফলতা ও কৃতকার্যতা অর্জন করতে পারে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. আর যদি লোকেরা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তবে তাদের আগে নূহ, আদ ও সামুদের সম্প্রদায়ও তো মিথ্যারোপ করেছিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) লোকে যদি তোমাকে মিথ্যা মনে করে, তাহলে (এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই, কারণ) তাদের পূর্বে তো নূহের সম্প্রদায়, আ’দ এবং সামূদও মিথ্যা মনে করেছিল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. এবং ইবরাহীম ও লুতের সম্প্রদায়,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) এবং ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়ও।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. আর মাদইয়ানবাসীরা; অনুরূপভাবে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল মূসার প্রতিও। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম। অতএব (প্রত্যক্ষ করুন) আমার প্রত্যাখ্যান (শাস্তি) কেমন ছিল।(১)
(১) এখানে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো, نكير এর অর্থ, কোন কিছুকে পূর্ণভাবে অস্বীকার করা। অর্থাৎ তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণতি অস্বীকার করে আমার যে সমস্ত কর্মপ্রণালী ছিল তা কেমন হয়েছে তা দেখে নিন। তারা নবী-রাসূলদেরকে অস্বীকার করে, তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নের মাধ্যমে যে অন্যায় করেছিল আমি সে অন্যায়কে অস্বীকার করে তার প্রতিকার করেছি তাদেরকে প্রথমে ছাড় দিয়ে তারপর পাকড়াও করে শাস্তি বিধান করার মাধ্যমে। তাদের নেয়ামতসমূহ ধ্বংস করার মাধ্যমে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) এবং মাদয়্যানবাসীরাও (তাদের নবীদেরকে মিথ্যা মনে করেছিল) এবং মিথ্যা মনে করা হয়েছিল মূসাকেও। আমি অবিশ্বাসীদেরকে অবকাশ দিয়েছিলাম এবং পরে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম।[1] অতএব কেমন (ভয়ঙ্কর) ছিল আমার প্রতিকার (শাস্তি)! [2]
[1] এই আয়াতে নবী (সাঃ)-কে সান্তনা দেওয়া হয়েছে যে, যদি মক্কার কাফেররা তোমাকে মিথ্যা মনে করে, তাহলে এটা কোন নতুন কথা নয়, বরং সমস্ত বিগত জাতি তাদের নবীদের সাথে এরূপ ব্যবহারই করেছে। আমিও তাদেরকে ঢিল ও অবকাশ দিতে থেকেছি। অতঃপর যখন তাদের অবকাশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তখন তাদেরকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। এতে মক্কার মুশরিকদের জন্য এই ইশারা ও ইঙ্গিত রয়েছে যে, মিথ্যাজ্ঞান করা সত্ত্বেও তোমরা আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদে আছ, আর তার অর্থ তোমরা এই বুঝো না যে, তোমাদেরকে কেউ পাকড়াও করবে না। বরং এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে অবকাশ বা ঢিল; যা তিনি প্রত্যেক জাতিকে দিয়েছেন। অতঃপর তারা যদি এই অবকাশ সময়কে কাজে লাগিয়ে আনুগত্য ও বাধ্য হওয়ার রাস্তা অবলম্বন না করেছে, তাহলে তাদেরকে ধ্বংস কিংবা মুসলিম কর্তৃক পরাজিত ও লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে। (অনুরূপ তোমাদেরও হবে।)
[2] অর্থাৎ, কেমন করে আমি তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত করে শাস্তি ও ধ্বংসের সম্মুখীন করেছিলাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. অতঃপর আমরা বহু জনপদ ধ্বংস করেছি যেগুলোর বাসিন্দা ছিল যালেম। ফলে এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। অনুরূপভাবে বহু কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে এবং অনেক সুদৃঢ় প্রাসাদও!
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেগুলির বাসিন্দা ছিল যালেম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. তারা কি যমীনে ভ্ৰমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত।(১) বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়।
(১) এই আয়াতে শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশভ্রমণে উৎসাহিত করা হয়েছে এতে আরও ইঙ্গিত আছে যে, অতীতকাল ও অতীত জাতিসমূহের অবস্থা সরে যমীনে প্রত্যক্ষ করলে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। তবে শর্ত এই যে, এসব অবস্থা শুধু ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, শিক্ষা গ্রহণের দৃষ্টিভঙ্গিতেও দেখতে হবে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতি-শক্তিসম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। [1]
[1] যখন কোন জাতি ভ্রষ্টতার এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যেখানে তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের যোগ্যতা পর্যন্তও হারিয়ে ফেলে, তখন পথপ্রাপ্তির পরিবর্তে বিগত জাতিসমূহের মত তাদেরও ভাগ্যে ধ্বংসই জোটে। আলোচ্য আয়াতে জ্ঞানের সম্পর্ক হৃদয়ের সাথে জুড়া হয়েছে; যার দ্বারা প্রমাণ করা হয় যে, জ্ঞান-বুদ্ধির অবস্থান হৃদয়ে। পক্ষান্তরে কিছু উলামা বলেন, জ্ঞানের অবস্থানক্ষেত্র মস্তিষ্ক বা মগজ। আবার কেউ কেউ বলেন, উক্ত উভয় মতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ কোন কিছুকে জানা ও বোঝার জন্য হৃদয় ও মস্তিষ্কর পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. আর তারা আপনাকে শাস্তি তত্ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি কখনো ভঙ্গ করেন না।(১) আর নিশ্চয় আপনার রব-এর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান(২);
(১) আয়াতের পূর্ণ অর্থ কি? এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে- (এক) এসব মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীরা তাদের মূর্খতা, অবাধ্যতা ও অদূরদর্শিতার কারণে তাড়াতাড়ি আল্লাহর আযাব কামনা করছে। অথচ আল্লাহ কখনো ওয়াদা খেলাফ করেন না। তিনি যে শাস্তির ধমকি দিয়েছেন, তা আসবেই। তারা আপনার কাছে তাড়াতাড়ি সে শাস্তি কামনা করলেও তা তো আর আপনার কাছে নেই, সুতরাং তাদের এই তাড়াহুড়া করা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছুই নেই। কেননা, তাদের সামনে রয়েছে কেয়ামত দিবস, যেদিন তিনি পূর্বাপর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে একত্রিক করবেন। তখন তিনি তাদেরকে তাদের প্রতিফল দেবেন। তাদের উপর তো চিরস্থায়ী শাস্তি আপতিত হবে। সুতরাং দুনিয়ার বুকে তাদের উপর শাস্তি আসুক বা নাই আসুক, সেদিন তা তাদের উপর আসবেই। [দেখুন, ইবন কাসীর] (দুই) যদি আয়াতে উল্লেখিত আযাব দ্বারা দুনিয়ার আযাব উদ্দেশ্য হয় তখন আগের অংশের সাথে পরের অংশের মিল হবে এভাবে যে, তোমাদের উপর আযাব দুনিয়াতেই আসবে। আর সেটা এসেছিল বদরের যুদ্ধে। [কুরতুবী]
(২) এ আয়াতে বলা হয়েছে, “আপনার রব-এর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান”। আখেরাতের একদিন সার্বক্ষণিকভাবে দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে এর পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘নিঃস্ব মুসলিমগণ ধনীদের থেকে অর্ধেক দিন পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে।” [তিরমিযিঃ ২৩৫৩, ২৩৫৪]। সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে, বান্দাদের এক হাজার বছরের সমান হচ্ছে আল্লাহর একদিন। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি কখনো ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান। [1]
[1] এই কারণে এরা নিজেদের হিসাব অনুসারে জলদি করে। কিন্তু আল্লাহর হিসাবে এক দিন হাজার বছরের সমান। এই হিসাবে আল্লাহ যদি কাউকে একদিন (২৪ ঘণ্টার) অবকাশ দেন তাহলে আযাবের জন্য এক হাজার বছর, অর্ধেক দিনের অবকাশে ৫০০ বছর, ছয় ঘণ্টার অবকাশে ২৫০ বছর প্রয়োজন। এইভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে এক ঘণ্টা অবকাশ পাওয়ার অর্থ কমবেশি ৪০ বছরের অবকাশ পাওয়া যায়। (আইসারুত্ তাফাসীর) আয়াতের অন্য একটি অর্থ হল, আল্লাহর কুদরতে এক দিন ও এক হাজার বছর উভয়ই সমান। সুতরাং তরান্বিত বা বিলম্বিত করাতে কোন পার্থক্য নেই। এরা ত্বরান্বিত করে, আর তিনি বিলম্বিত করেন। তবে এ কথা সুনিশ্চিত যে, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূর্ণ করবেন। আবার কেউ কেউ এর তাৎপর্য পরকাল মনে করে বলেছেন যে, কিয়ামতের ভয়াবহতা এত বেশি হবে যে, তার একদিন কারো নিকট এক হাজার বছর; বরং অনেকের নিকট ৫০ হাজার বছর বলে মনে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, পরকালের একদিন বাস্তবেই এক হাজার বছর সমান হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. আর আমি অবকাশ দিয়েছি বহু জনপদকে যখন তারা ছিল যালেম; তারপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি, আর আমারই কাছে প্রত্যাবর্তনস্থল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) আর আমি অবকাশ দিয়েছি কত জনপদকে যখন তারা ছিল অত্যচারী; অতঃপর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট। [1]
[1] সেই কারণেই অবকাশ নীতির কথার আবার বর্ণনা হচ্ছে যে, আমার পক্ষ থেকে শাস্তির ব্যাপারে যতই দেরী হোক না কেন, আমার হাত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না এবং পালাতেও পারবে না। শেষ পর্যন্ত আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. বলুন, হে মানুষ! আমি তো কেবল তোমাদের জন্য এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) বল, ‘হে মানুষ! আমি তো তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’ [1]
[1] এটি কাফের ও মুশরিকদের আযাব দাবি করার জবাবে বলা হচ্ছে যে, হে নবী! তুমি বল, আমার কাজ তো কেবল সতর্ক করা ও সুসংবাদ দেওয়া। আযাব ও শাস্তি প্রেরণ করা আল্লাহর কাজ। কাউকে জলদি পাকড়াও করা অথবা কাউকে দেরীতে পাকড়াও করা, এ কাজ তাঁর হিকমত ও ইচ্ছাধীন। তার জ্ঞানও আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। এ কথা যদিও মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, তবুও যেহেতু নবী (সাঃ) ছিলেন সারা মানবকুলের পথপ্রদর্শক ও রসূল, সেই জন্য সম্বোধন ‘হে মানুষ’ দিয়ে করা হয়েছে। এই আয়াতে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত কাফের ও মুশরিকদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যারা মক্কার লোকেদের মত আচরণ করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. কাজেই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা(১);
(১) “মাগফেরাত” বলতে বুঝানো হয়েছে অপরাধ, পাপ, ভুল-ভ্ৰান্তি ও দুর্বলতা উপেক্ষা করা ও এড়িয়ে চলা। অর্থাৎ আল্লাহ তাদের পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। আর “সম্মানজনক জীবিকা”র অর্থ, জান্নাত। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান