بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২০/ ত্ব-হা | Ta-Ha | سورة طه আয়াতঃ ১৩৫ মাক্কী
২০ : ৪১ وَ اصۡطَنَعۡتُكَ لِنَفۡسِیۡ ﴿ۚ۴۱﴾
و اصطنعتك لنفسی ﴿۴۱﴾
• এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য মনোনীত করেছি।

-আল-বায়ান

• আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য তৈরি করেছি।

-তাইসিরুল

• এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি।

-মুজিবুর রহমান

• And I produced you for Myself.

-Sahih International

৪১. এবং আমি আপনাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি।(১)

(১) অর্থাৎ আপনাকে আমার ওহী ও রিসালাত বহনের জন্য তৈরী করে নিয়েছি, যাতে আমার ইচ্ছামত সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। [ইবন কাসীর] যাজ্জাজ বলেন, এর অর্থ, আমার দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনাকে আমি পছন্দ করে নিয়েছি। আর আপনাকে আমার ও আমার বান্দাদের মধ্যে ওহী ও রিসালাতের বাহক হিসেবে নির্ধারণ করছি। এতে আপনি তাদের কাছে যখন প্রচার করবেন, তখন যেন সেটা আমিই প্রচার করছি ও আহবান জানাচ্ছি ও দলীল-প্রমাণাদি পেশ করছি। [ফাতহুল কাদীর] এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের পছন্দ করেন তাদেরকে নিজের করে তৈরী করেন। যাতে করে পরবর্তী দায়িত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হন। অন্যত্র বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে, নূহকে ও ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরকে বিশ্বজগতে মনোনীত করেছেন।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৩৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে (মনোনীত করে) নিয়েছি।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪২ اِذۡهَبۡ اَنۡتَ وَ اَخُوۡكَ بِاٰیٰتِیۡ وَ لَا تَنِیَا فِیۡ ذِكۡرِیۡ ﴿ۚ۴۲﴾
اذهب انت و اخوك بایتی و لا تنیا فی ذكری ﴿۴۲﴾
• তুমি ও তোমার ভাই আমার আয়াতসমূহ নিয়ে যাও এবং আমাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কোনরূপ অলসতা করো না।

-আল-বায়ান

• তুমি আর তোমার ভাই আমার নিদর্শন নিয়ে যাও আর তোমরা আমাকে স্মরণ করার বিষয়ে শৈথিল্য করো না।

-তাইসিরুল

• তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসমূহ সহ যাত্রা শুরু কর এবং আমার স্মরণে তোমরা উভয়ে শৈথিল্য করনা।

-মুজিবুর রহমান

• Go, you and your brother, with My signs and do not slacken in My remembrance.

-Sahih International

৪২. আপনি ও আপনার ভাই আমার নিদর্শনসহ যাত্রা করুন এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করবেন না,(১)

(১) এর এক অর্থ হচ্ছে, আমার ওহী ও রিসালাত প্রচারে কোন প্রকার দেরী করবেন না। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ আপনারা দু'জন আমার স্মরণ কখনও পরিত্যাগ করবেন না। ফিরআউনের কাছে যাওয়ার সময়ও যিকির করবেন, যাতে করে যিকির আপনাদের জন্য তাকে মোকাবিলার সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪২) তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসমূহসহ যাত্রা শুরু কর এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।[1]

[1] এখানে আল্লাহর পথে আহবানকারীদের জন্য মহতী শিক্ষা রয়েছে, আর তা এই যে, তাঁরা আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৩ اِذۡهَبَاۤ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی ﴿ۚۖ۴۳﴾
اذهبا الی فرعون انهٗ طغی ﴿۴۳﴾
• তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে।

-আল-বায়ান

• তোমরা দু’জন ফেরাউনের নিকট যাও, বস্তুতঃ সে সীমালঙ্ঘন করেছে।

-তাইসিরুল

• তোমরা উভয়ে ফির‘আউনের নিকট যাও, সেতো সীমালংঘন করেছে।

-মুজিবুর রহমান

• Go, both of you, to Pharaoh. Indeed, he has transgressed.

-Sahih International

৪৩. আপনারা উভয়ে ফিরআউনের কাছে যান, সে তো সীমালংঘন করেছে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৩) তোমরা দু’জন ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৪ فَقُوۡلَا لَهٗ قَوۡلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّهٗ یَتَذَكَّرُ اَوۡ یَخۡشٰی ﴿۴۴﴾
فقولا لهٗ قولا لینا لعلهٗ یتذكر او یخشی ﴿۴۴﴾
• তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।

-আল-বায়ান

• তার সঙ্গে তোমরা নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা (আল্লাহর) ভয় করবে।’

-তাইসিরুল

• তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে।

-মুজিবুর রহমান

• And speak to him with gentle speech that perhaps he may be reminded or fear [Allah]."

-Sahih International

৪৪. আপনারা তার সাথে নরম কথা বলবেন(১), হয়ত সে উপদেশ গ্ৰহণ করবে অথবা ভয় করবে।(২)

(১) অর্থাৎ আপনাদের দাওয়াত হবে নরম ভাষায়, যাতে তা তাঁর অস্তরে প্রতিক্রিয়া করে। এবং দাওয়াত সফল হয়। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা” [সূরা আন-নাহল: ১২৫] এ আয়াতে দাওয়াত প্ৰদানকারীদের জন্য বিরাট শিক্ষা রয়েছে। সেটা হচ্ছে, ফিরআউন হচ্ছে সবচেয়ে বড় দাম্ভিক ও অহংকারী, আর মূসা হচ্ছেন আল্লাহর পছন্দনীয় লোকদের অন্যতম। তারপরও ফিরআউনকে নরম ভাষায় সম্বোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর]

এতে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রতিপক্ষ যতই অবাধ্য এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস ও চিন্তাধারার বাহক হোক না কেন, তার সাথেও সংস্কার ও পথ প্রদর্শনের কর্তব্য পালনকারীদের হিতাকাংখার ভঙ্গিতে নমভাবে কথাবার্তা বলতে হবে। এরই ফলশ্রুতিতে সে কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য হতে পারে এবং তার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হতে পারে।

(২) মানুষ সাধারণত: দু’ভাবে সঠিক পথে আসে। সে নিজে বিচার-বিশ্লেষণ করে বুঝে-শুনে ও উপদেশবাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে, অথবা অশুভ পরিণামের ভয়ে সোজা হয়ে যায়। তাই আয়াতে ফিরআউনের জন্য দুটি সম্ভাবনাই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আয়াতে মূসা আলাইহিস সালাম কিভাবে সে নরম পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন সেটার বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছিলেন, “আপনার কি আগ্রহ আছে যে, আপনি পবিত্র হবেন— ‘আর আমি আপনাকে আপনার রবের দিকে পথপ্রদর্শন করি যাতে আপনি তাঁকে ভয় করেন?” [সূরা আন-নাযিআত: ১৮–১৯]

এ কথাটি অত্যন্ত নরম ভাষা। কেননা, প্রথমে পরামর্শের মত তাকে বলা হয়েছে যে, আপনার কি আগ্রহ আছে? কোন জোর নয়, আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। দ্বিতীয়ত বলা হচ্ছে যে, আপনি পবিত্র হবেন, এটা বলা হয়নি যে, আমি আপনাকে পবিত্র করব। তৃতীয়ত: তার রবের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন, যিনি তাকে লালন পালন করেছেন। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে,[1] হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে।

[1] এই গুণটিও আল্লাহর দিকে আহবানকারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণ, কঠোরতা অবলম্বনের ফলে বীতরাগ হয়ে মানুষ পালিয়ে যায়। পক্ষান্তরে নম্রতা অবলম্বনের ফলে নিকটবর্তী, প্রভাবিত ও সত্য গ্রহণকারী হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৫ قَالَا رَبَّنَاۤ اِنَّنَا نَخَافُ اَنۡ یَّفۡرُطَ عَلَیۡنَاۤ اَوۡ اَنۡ یَّطۡغٰی ﴿۴۵﴾
قالا ربنا اننا نخاف ان یفرط علینا او ان یطغی ﴿۴۵﴾
• তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমরা তো আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা সীমালঙ্ঘন করবে’।

-আল-বায়ান

• তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ভয় হচ্ছে সে আমাদের প্রতি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠবে কিংবা আমাদের প্রতি আচরণে বাড়াবাড়ি করবে।’

-তাইসিরুল

• তারা বললঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা আশংকা করি যে, সে আমাদেরকে ত্বরায় শাস্তি দিতে উদ্যত হবে অথবা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।

-মুজিবুর রহমান

• They said, "Our Lord, indeed we are afraid that he will hasten [punishment] against us or that he will transgress."

-Sahih International

৪৫. তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা আশংকা করি সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।(১)

(১) (إِنَّنَا نَخَافُ) মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম এখানে আল্লাহ্ তা'আলার সামনে দুই প্রকার ভয় প্রকাশ করেছেন। এক ভয় (أَنْ يَفْرُطَ) শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। এর অর্থ সীমালংঘন করা। উদ্দেশ্য এই যে, ফিরআউন সম্ভবতঃ আমাদের বক্তব্য শ্রবণ করার আগেই ক্ষমতার অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে উঠবে এবং অনাকাঙ্খিত কিছু করে বসবে। [ইবন কাসীর] দ্বিতীয় ভয় (أَنْ يَطْغَىٰ) শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। এর উদ্দেশ্য এই যে, সম্ভবতঃ সে আপনার শানে অসমীচীন কথাবার্তা বলে আরো বেশী অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে। অথবা তাড়াতাড়ি আক্রমন করে বসবে। অথবা আমাদের উপর তার হাত প্রসারিত করবে। ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ সীমালঙ্ঘন করবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা অবশ্যই আশংকা করি যে, সে আমাদেরকে দ্রুত শাস্তি দিতে উদ্যত হবে অথবা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৬ قَالَ لَا تَخَافَاۤ اِنَّنِیۡ مَعَكُمَاۤ اَسۡمَعُ وَ اَرٰی ﴿۴۶﴾
قال لا تخافا اننی معكما اسمع و اری ﴿۴۶﴾
• তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি’।

-আল-বায়ান

• তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথেই আছি, আমি (সব কিছু) শুনি আর দেখি।

-তাইসিরুল

• তিনি বললেনঃ তোমরা ভয় করনা, আমিতো তোমাদের সংগে আছি, আমি শুনি ও দেখি।

-মুজিবুর রহমান

• [Allah] said, "Fear not. Indeed, I am with you both; I hear and I see.

-Sahih International

৪৬. তিনি বললেন, “আপনারা ভয় করবেন না, আমি তো আপনাদের সঙ্গে আছি(১), আমি শুনি ও আমি দেখি।

(১) আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি সব শুনব এবং দেখব। আল্লাহ তা'আলা আরশের উপর আছেন, এটাই একজন মুমিনের আকীদা-বিশ্বাস। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাঁর সঠিক বান্দা ও সৎ লোকদের সাথে আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা অনুসারে সে সমস্ত আয়াতে সঙ্গে থাকার অর্থ সাহায্য করা। অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা তাদের সাথে থাকবে। পরবর্তী বাক্য, “আমি শুনি ও আমি দেখি”ও এ কথা প্রমাণ করে যে, এখানে সহযোগিতার মাধ্যমে সংগে থাকা বোঝানো হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; আমি শুনব ও দেখব।[1]

[1] অর্থাৎ, তুমি ফিরআউনকে যা কিছু বলবে ও তার প্রত্যুত্তরে সে তোমাদেরকে যা কিছু বলবে, আমি তা শুনব ও তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করব। আর সেই অনুযায়ী আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব এবং তার সকল চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিব। সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং দ্বিধা ও ভয় করো না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৭ فَاۡتِیٰهُ فَقُوۡلَاۤ اِنَّا رَسُوۡلَا رَبِّكَ فَاَرۡسِلۡ مَعَنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۬ۙ وَ لَا تُعَذِّبۡهُمۡ ؕ قَدۡ جِئۡنٰكَ بِاٰیَۃٍ مِّنۡ رَّبِّكَ ؕ وَ السَّلٰمُ عَلٰی مَنِ اتَّبَعَ الۡهُدٰی ﴿۴۷﴾
فاتیه فقولا انا رسولا ربك فارسل معنا بنی اسرآءیل و لا تعذبهم قد جئنك بایۃ من ربك و السلم علی من اتبع الهدی ﴿۴۷﴾
• সুতরাং তোমরা দু’জন তার কাছে যাও অতঃপর বল, ‘আমরা তোমার রবের দু’জন রাসূল। সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও এবং তাদেরকে নির্যাতন করো না। আমরা তোমার কাছে এসেছি তোমার রবের আয়াত নিয়ে। আর যারা সৎ পথ অনুসরণ করে, তাদের প্রতি শান্তি’।

-আল-বায়ান

• কাজেই তোমরা দু’জন তার কাছে এসো আর বল- আমরা তোমার প্রতিপালকের রসূল, কাজেই বানী ইসরাঈলকে আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দাও, তাদের প্রতি উৎপীড়ন করো না। তোমার প্রতিপালকের নিদর্শনসহই আমরা তোমার কাছে এসেছি, আর শান্তি বর্ষিত হোক তাদের প্রতি যারা সৎ পথ অনুসরণ করে।

-তাইসিরুল

• সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বলঃ অবশ্যই আমরা তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। সুতরাং আমাদের সাথে বানী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিওনা, আমরাতো তোমার নিকট এনেছি তোমার রবের নিকট হতে নিদর্শন। এবং শান্তি তাদের প্রতি যারা সৎ পথের অনুসরণ করে।

-মুজিবুর রহমান

• So go to him and say, 'Indeed, we are messengers of your Lord, so send with us the Children of Israel and do not torment them. We have come to you with a sign from your Lord. And peace will be upon he who follows the guidance.

-Sahih International

৪৭. সুতরাং আপনারা তার কাছে যান এবং বলুন, আমরা তোমার রব এর রাসূল, কাজেই আমাদের সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার কাছে এনেছি তোমার রব এর কাছ থেকে নিদর্শন। আর যারা সৎপথ অনুসরণ করে তাদের প্রতি শান্তি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বল, অবশ্যই আমরা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রসূল, সুতরাং আমাদের সাথে বানী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমরা তো তোমার নিকট এনেছি তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে নিদর্শন এবং সালাম (শান্তি) তাদের প্রতি যারা সৎ পথের অনুসরণ করে।[1]

[1] এ সালাম অভিবাদনের জন্য নয়; বরং শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমন্ত্রণ। যেমন মহানবী (সাঃ) রোমসম্রাট হিরাকলকে পত্রে লিখেছিলেন أَسلِم تَسلَم অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ করে নাও, শান্তিতে বসবাস করবে। এভাবে তিনি পত্রের শুরুতে {وَالسَّلَامُ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى}  (শান্তি তাদের প্রতি যারা সৎপথের অনুসরণ করে) এ কথাগুলো লিখতেন। (ইবনে কাসীর) এর অর্থ এই যে, কোন অমুসলিমকে পত্র লিখলে বা কোন সভায় সম্বোধন করতে হলে উক্ত শব্দাবলী দ্বারা সালাম দেওয়া যেতে পারে; যা সৎপথ গ্রহণের সাথে শর্ত-সাপেক্ষ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৮ اِنَّا قَدۡ اُوۡحِیَ اِلَیۡنَاۤ اَنَّ الۡعَذَابَ عَلٰی مَنۡ كَذَّبَ وَ تَوَلّٰی ﴿۴۸﴾
انا قد اوحی الینا ان العذاب علی من كذب و تولی ﴿۴۸﴾
• নিশ্চয় আমাদের নিকট ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, আযাবতো তার জন্য, যে মিথ্যা আরোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-আল-বায়ান

• আমাদের কাছে ওয়াহী করা হয়েছে যে শাস্তি (অপেক্ষা করছে) তার জন্য যে (সত্য) প্রত্যাখ্যান করে আর মুখ ফিরিয়ে নেয়।’

-তাইসিরুল

• আমাদের প্রতি অহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, it has been revealed to us that the punishment will be upon whoever denies and turns away.' "

-Sahih International

৪৮. নিশ্চয় আমাদের প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, শাস্তি তো তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৮) নিশ্চয় আমাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য, যে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৪৯ قَالَ فَمَنۡ رَّبُّكُمَا یٰمُوۡسٰی ﴿۴۹﴾
قال فمن ربكما یموسی ﴿۴۹﴾
• ফির‘আউন বলল, ‘হে মূসা, তাহলে কে তোমাদের রব’?

-আল-বায়ান

• ফেরাউন বলল, ‘হে মূসা! কে তোমাদের প্রতিপালক?’

-তাইসিরুল

• ফির‘আউন বললঃ হে মূসা! কে তোমাদের রাব্ব?

-মুজিবুর রহমান

• [Pharaoh] said, "So who is the Lord of you two, O Moses?"

-Sahih International

৪৯. ফিরআউন বলল, হে মূসা! তাহলে কে তোমাদের রব?(১)

(১) ফিরআউনের এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, তোমরা দু'জন আবার কাকে রব বানিয়ে নিয়েছে, মিসর ও মিসরবাসীদের রব তো আমিই। অন্যত্র এসেছে, সে বলেছিল, “আমি তোমাদের প্রধান রব।” [সূরা আন-নাযিআত: ২৪] অন্যত্র বলেছে, “হে আমার জাতি! মিসরের রাজত্বের মালিক কি আমি নই? আর এ নদীগুলো কি আমার নীচে প্রবাহিত হচ্ছে না?” [সূরা আয-যুখরুফ: ৫১] আরও বলেছিল, “হে জাতির সরদারগণ! আমি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ আছে বলে আমি জানি না। হে হামান! কিছু ইট পোড়াও এবং আমার জন্য একটি উচু ইমারত নির্মাণ করো। আমি উপরে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে চাই।” [সূরা আল-কাসাস: ৩৮] অন্য সূরায় সে মূসাকে ধমক দিয়ে বলেঃ “যদি আমাকে ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করলে আমি তোমাকে কয়েদিদের অন্তর্ভুক্ত করবো।” [সূরা আশ-শু'আরা: ২৯] এভাবে সে প্রকাশ্যে একজন ইলাহের অস্বীকার করছিল যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুর মালিক। [ইবন কাসীর]

আসলে সে একথা মেনে নিতে প্ৰস্তুত ছিল না যে, অন্য কোন সত্তা তার উপর কর্তৃত্ব করবে, তার প্রতিনিধি এসে তাকে হুকুম দেবে এবং তার কাছে এ হুকুমের আনুগত্য করার দাবী জানাবে। মূলতঃ ফিরআউন সৰ্বেশ্বরবাদী লোক ছিল। সে মনে করত যে, তার মধ্যে ইলাহ ভর করেছে। আত্মগৰ্ব, অহংকার ও ঔদ্ধত্যের কারণে প্রকাশ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো এবং নিজে ইলাহ ও উপাস্য হবার দাবীদার ছিল। [এর জন্য বিস্তারিত দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম: ২/৩৯১; মাজমু ফাতাওয়া: ২/১২৪; ২/২২০; ৬/৩১৪; ৮/৩০৮] 

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৯) ফিরআউন বলল, ‘হে মূসা! কে তোমাদের প্রতিপালক?’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ : ৫০ قَالَ رَبُّنَا الَّذِیۡۤ اَعۡطٰی كُلَّ شَیۡءٍ خَلۡقَهٗ ثُمَّ هَدٰی ﴿۵۰﴾
قال ربنا الذی اعطی كل شیء خلقهٗ ثم هدی ﴿۵۰﴾
• মূসা বলল, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি সকল বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন’।

-আল-বায়ান

• মূসা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি যিনি সকল (সৃষ্ট) বস্তুকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন।’

-তাইসিরুল

• মূসা বললঃ আমার রাব্ব তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন; অতঃপর পথ নির্দেশ করেছেন।

-মুজিবুর রহমান

• He said, "Our Lord is He who gave each thing its form and then guided [it]."

-Sahih International

৫০. মূসা বললেন, আমাদের রব তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার সৃষ্টি আকৃতি দান করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন।(১)

(১) আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. তিনি প্রতিটি বস্তুর জোড়া সৃষ্টি করেছেন। দুই. মানুষকে মানুষই বানাচ্ছেন, গাধাকে গাধা, ছাগলকে ছাগল। তিন. তিনি প্রতিটি বস্তুর সুনির্দিষ্ট আকৃতি দিয়েছেন। চার. প্রতিটি সৃষ্টিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরী করেছেন। পাচ. প্রতিটি সৃষ্টিকে তার জন্য যা উপযোগী সে রকম সৃষ্টিরূপ দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের জন্য গৃহপালিত জন্তুর কোন সৃষ্টিরূপ দেননি। গৃহপালিত জন্তুকে কুকুরের কোন অবস্থা দেননি। কুকুরকে ছাগলের বৈশিষ্ট্য দেননি। প্রতিটি বস্তুকে তার অনুপাতে বিয়ে ও তার জন্য যা উপযুক্ত সেটার ব্যবস্থা করেছেন। সৃষ্টি, জীবিকা ও বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে কোন কিছুকে অপর কোন কিছুর মত করেননি। [ইবন কাসীর]

ছয়. তিনি প্রতিটি বস্তুকেই যেটা তার জন্য ভাল সেটার জ্ঞান দিয়েছেন। তারপর সে ভাল জিনিসটার দিকে কিভাবে যেতে হবে সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] সাত. কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ, আল্লাহর বাণী “আর যিনি নির্ধারণ করেন অতঃপর পথনির্দেশ করেন” [সূরা আল-আ'লা: ৩] এর মত, তখন এর দ্বারা অর্থ হবে, আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, তারপর সেটাকে সে তাকদীরের দিকে চলার জন্য পথ দেখান। তিনি কার্যাবলী, আয়ু ও রিযিক লিখে নিয়েছেন। সে হিসেবে সমস্ত সৃষ্টিকুল চলছে। এর ব্যতিক্রম করার সুযোগ কারও নেই। এর থেকে বের হওয়াও কারও পক্ষে সম্ভব নয়। মূসা বললেন, আমাদের রব তো তিনিই, যিনি প্রতিটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন, তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং সৃষ্টিকুলকে তাঁর ইচ্ছা অনুসারে চালাচ্ছেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫০) মূসা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথ নির্দেশ করেছেন।’[1]

[1] মানুষের জন্য যে আকার-আকৃতি যথোপযুক্ত ছিল তা মানুষকে এবং পশুদের জন্য যে আকার-আকৃতি যথোপযুক্ত ছিল তা তাদেরকে দান করেছেন। আর ‘পথ-নির্দেশ’ করার অর্থ হল প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার প্রকৃতিগত আবশ্যকতা অনুসারে বসবাস, পানাহার ও আচার-আচরণের নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। আর সেই নিয়মানুসারে প্রত্যেক জীব নিজের জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করে এবং নিজ নিজ মেকী জীবনের দিন-রজনী অতিবাহিত করে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৪১ থেকে ৫০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »