১৮ : ৪১
اَوۡ یُصۡبِحَ مَآؤُهَا غَوۡرًا فَلَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ لَهٗ طَلَبًا ﴿۴۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. অথবা তার পানি ভূগর্ভে হারিয়ে যাবে এবং তুমি কখনো সেটার সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না।(১)
(১) অর্থাৎ যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব কিছু লাভ করেছে তাঁরই হুকুমে এসব কিছু তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া যেতে পারে। তুমি যদি এখন প্রচুর পানি পাওয়ার কারণে ক্ষেত-খামার করার সুবিধা লাভ করে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে কাফের হয়ে যাচ্ছ, তবে মনে রেখো তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের এ পানি পুনরায় ভূগর্ভে প্রোথিত করে দিতে পারেন, তারপর তুমি কোন ভাবেই তা আনতে সক্ষম হবে না। কুরআনের অন্যত্রও এ কথা বলে মহান আল্লাহ তাঁর এ বিরাট নেয়ামত পানি নিঃশেষ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছি কি যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?” [সূরা আল-মুলক: ৩০] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) অথবা ওর পানি ভূ-গর্ভে অন্তর্হিত হবে এবং তুমি কখনো ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’ [1]
[1] অথবা মধ্যস্থলে যে নদী প্রবাহিত, যেটা হল বাগানের শস্য-শ্যামলতার উৎস, তার পানিকে এত গভীরে পাঠিয়ে দেবেন যে, সেখান হতে পানি অর্জন করা অসম্ভব হয়ে যাবে। আর যেখানে পানি অতি গভীরে চলে যায়, পুনরায় সেখান হতে পানি বের করতে বড় বড় অশ্বশক্তিসম্পন্ন পাম্প্-মেশিনও ব্যর্থ সাব্যস্ত হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪২
وَ اُحِیۡطَ بِثَمَرِهٖ فَاَصۡبَحَ یُقَلِّبُ كَفَّیۡهِ عَلٰی مَاۤ اَنۡفَقَ فِیۡهَا وَ هِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِهَا وَ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُشۡرِكۡ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا ﴿۴۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. আর তার ফল-সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য হাতের তালু মেরে আক্ষেপ করতে লাগল যখন তা মাচানসহ ভূমিতে লুটিয়ে পড়ল। সে বলতে লাগল, ‘হায়, আমি যদি কাউকেও আমার রব-এর সাথে শরীক না করতাম!(১)
(১) এখানে বাহ্যতঃ সে দুনিয়া লাভের জন্য, দুনিয়ার সম্পদ বাঁচানোর জন্য একথা বলেছিল। অথবা বাস্তবেই সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে শির্ক থেকে তাওবাহ করতে চেয়ে একথা বলেছিল। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) তার ফল-সম্পদ পরিবেষ্টিত হয়ে গেল[1] এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল;[2] যখন তা মাচান সহ পড়ে গেল।[3] সে বলতে লাগল, ‘হায়! আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম।’[4]
[1] এটা হল ধ্বংস ও বিনাশেরই আভাস। অর্থাৎ, তার পুরো বাগানটাই ধ্বংস করে দেওয়া হল।
[2] অর্থাৎ, বাগান প্রস্তুত ও সংস্কারের কাজে এবং চাষাবাদে যে অর্থ ব্যয় সে করেছিল, তার জন্য আক্ষেপের হাত কচলাতে লাগল। হাত কচলানোর অর্থ, অনুতপ্ত হওয়া।
[3] অর্থাৎ, যে মাচান ও ছাদ-ছপ্পরের উপর আঙ্গুরের লতা রাখা ছিল, সেগুলো সব যমীনে পড়ে গেল এবং আঙ্গুরের সমস্ত ফসল ধ্বংস হয়ে গেল।
[4] এখন সে অনুভব করতে পেরেছে যে, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করা, তাঁর যাবতীয় নিয়ামত দ্বারা প্রতিপালিত ও উপকৃত হয়ে তাঁর বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা ও তাঁর অবাধ্যতা করা কোনভাবেই কোন মানুষের জন্য উচিত নয়। তবে এখন আক্ষেপ ও অনুতাপ কোন ফল দেবে না। ধ্বংসের পর আফসোস করলে আর কি হবে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৩
وَ لَمۡ تَكُنۡ لَّهٗ فِئَۃٌ یَّنۡصُرُوۡنَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ مَا كَانَ مُنۡتَصِرًا ﴿ؕ۴۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. আর আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হলো না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না[1] এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না।
[1] যে জনবলকে নিয়ে তার গর্ব ছিল, সে জনবল না তার কোন কাজে এল, আর না তারা নিজেরা আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে সক্ষম হল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৪
هُنَالِكَ الۡوَلَایَۃُ لِلّٰهِ الۡحَقِّ ؕ هُوَ خَیۡرٌ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ عُقۡبًا ﴿۴۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. এখানে কর্তৃত্ব আল্লাহরই(১), যিনি সত্য।(২) পুরস্কার প্রদানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।
(১) আয়াতটির অর্থ নির্ধারণে দু'টি প্রসিদ্ধ মত এসেছে:
এক, আয়াতে উল্লেখিত هنالك শব্দটির অর্থ আগের বাক্যের সাথে করা হবে। আর الولاية থেকে নতুনভাবে অর্থ করা হবে। সে মতে পূর্বের আয়াতের অর্থ হবেঃ যেখানে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছে সেখানে আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হলো না। দুই, আর যদি هنالك শব্দটিকে এ আয়াতের পরবর্তী বাক্য الولاية এর সাথে মিলিয়ে অর্থ করা হয় তখন আয়াতের দু’ধরনের অর্থ হয়।
যদি الولاية শব্দটির واو এর উপর فتحة দিয়ে পড়া হয় তখন শব্দটির অর্থ হয়, অভিভাবকত্ব, বন্ধুত্ব। আর আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়: যখন আযাব নাযিল হয় তখন কাফের বা মুমিন সবাই অভিভাবক ও বন্ধু হিসেবে একমাত্র আল্লাহর দিকেই ফিরবে, তাঁর আনুগত্য মেনে নিবে। এর বাইরে কোন কিছু চিন্তাও করবে না। যেমন কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারপর তারা যখন আমার শাস্তি দেখতে পেল। তখন বলল, আমরা এক আল্লাহতেই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। [সূরা গাফের: ৮৪]
অনুরূপভাবে ফিরআউনের মুখ থেকেও বিপদকালে এ কথাই বের হয়েছিল, মহান আল্লাহ বলেনঃ “পরিশেষে যখন সে নিমজ্জামান হল তখন বলল, “আমি বিশ্বাস করলাম বনী ইসরাঈল যার উপর বিশ্বাস করে। নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমৰ্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ‘এখন! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে?” [সূরা ইউনুসঃ ৯০–৯১]
আর যদি الولاية শব্দটির واو এর নীচে كسرة দিয়ে পড়া হয়। যেমনটি কোন কোন قراءة তে আছে, তখন শব্দটির অর্থ হয় ক্ষমতা, নির্দেশ ও আইন। আর আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়: যখন আযাব নাযিল হবে তখন একমাত্র মহান আল্লাহর ক্ষমতা, আইন ও নির্দেশই কার্যকর হবে। অন্য কারো কোন কথা চলবে না। তিনি তাদের ধ্বংস করেই ছাড়বেন। [ইবন কাসীর]
(২) আয়াতের দুটি অর্থ করা যায়। এক, তখন একমাত্র হক্ক ও সত্য ইলাহ আল্লাহ তা'আলারই কর্তৃত্ব। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারপর তাদের হক্ক ও সত্য প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তারা ফিরে আসে। দেখুন, কর্তৃত্ব তো তাঁরই এবং হিসেব গ্রহনে তিনিই সবচেয়ে তৎপর।” [সূরা আল-আন’আম: ৬২] দুই, তখন একমাত্র হক্ক ও সত্য কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্ব আল্লাহরই। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, “সে দিন সত্য ও হক্ক কর্তৃত্ব ও অভিভাকত্ত্ব হবে কেবলমাত্র দয়াময়ের এবং কাফিরদের জন্য সে দিন হবে কঠিন।” [সূরা আল-ফুরকান: ২৬] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) এই ক্ষেত্রে সাহায্য করবার অধিকার সত্য আল্লাহরই।[1] পুরস্কারদানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ। [2]
[1] وِلاَيَةٌ এর অর্থ, বন্ধুতত্ত্ব ও সাহায্য। অর্থাৎ, এ রকম মুহূর্তে প্রত্যেক মু’মিন ও কাফের অবগত হয়ে যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ কারো সাহায্য করতে এবং তাঁর আযাব থেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম নয়। আর এটাই কারণ যে, এ রকম মুহূর্তে বড় বড় অবাধ্য যালেমও ঈমান প্রকাশ করতে বাধ্য হয়ে যায়, যদিও এ সময় ঈমান ফলপ্রসূ ও গৃহীত হয় না। যেমন, কুরআন ফিরআউনের ব্যাপারে উল্লেখ করেছে যে, যখন সে ডুবতে লাগল, তখন বলতে লাগল যে, آمَنْتُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرائيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ ‘‘যে কথায় বানী ইস্রাঈল বিশ্বাস করেছে, আমিও তাতে বিশ্বাস করলাম যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মাবূদ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’’ (সূরা ইউনুস ৯০ আয়াত) অন্য কাফেরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তারা যখন আমার আযাব দেখল, তখন বলল, ‘‘আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদের শরীক করতাম, তাদেরকে পরিহার করলাম’’। (সূরা মু’মিনঃ ৮৪) যদি الولاية এর و অক্ষরে জের (الوِلاية) হয়, তাহলে তার অর্থ হবে, শাসন ও এখতিয়ার। (ইবনে কাসীর)
[2] তিনি তাঁর বন্ধুদের উৎকৃষ্ট প্রতিদান দেবেন এবং উত্তম পরিণাম দানে ধন্য করবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৫
وَ اضۡرِبۡ لَهُمۡ مَّثَلَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا كَمَآءٍ اَنۡزَلۡنٰهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخۡتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الۡاَرۡضِ فَاَصۡبَحَ هَشِیۡمًا تَذۡرُوۡهُ الرِّیٰحُ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ مُّقۡتَدِرًا ﴿۴۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. আর আপনি তাদের কাছে পেশ করুন উপমা দুনিয়ার জীবনের: এটা পানির ন্যায় যা আমরা বর্ষণ করি আকাশ থেকে, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, তারপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান।(১)
(১) কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনকে আকাশ থেকে নাযিল হওয়া পানির সাথে তুলনা করেছেন। দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বের উদাহরণ হলো আকাশ থেকে বৰ্ষিত পানির মত। যা প্রথমে যমীনে পতিত হওয়ার সাথে সাথে যমীনে অবস্থিত উদ্ভিদরাজিতে প্ৰাণের উন্মেষ ঘটে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে পানি পুরিয়ে গেলে, পানির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে আবার সে প্রাণের নিঃশেষ ঘটে। দুনিয়ার জীবনও ঠিক তদ্রুপ; এখানে আসার পর জীবনের বিভিন্ন অংশের প্রাচুর্যে মানুষ মোহান্ধ হয়ে আখেরাতকে ভুলে বসে থাকে। কিন্তু অচিরেই তার জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সে আবার হতাশ হয়ে পড়ে।
এ কথাটি মহান আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র এভাবে বলেছেনঃ “বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ, যেমন আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু খেয়ে থাকে। তারপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারীগণ মনে করে ওটা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিনে বা রাতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে ও আমি ওটা এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও ওটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বর্ণনা করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” [সূরা ইউনুস: ২৪]
আরো বলেছেনঃ “আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ্ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তারপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তা দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা পীত বর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তিনি ওটাকে খড়-কুটায় পরিণত করেন? এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।”[সূরা আয-যুমার: ২১] আরও বলেছেনঃ “তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক শ্লাঘা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এর উপমা বৃষ্টি, যা দ্বারা উৎপন্ন শস্য-সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর সেগুলো শুকিয়ে যায়, ফলে আপনি ওগুলো পীতবর্ণ দেখতে পান, অবশেষে সেগুলো খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সস্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্ৰী ছাড়া কিছু নয়।” [সূরা আল-হাদীদ: ২০]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছেনঃ “দুনিয়া হলো সুমিষ্ট সবুজ-শ্যামল মনোমুগ্ধকর। সুতরাং তোমরা দুনিয়া থেকে বেঁচে থাক আর মহিলাদের থেকে নিরাপদ থাক।” [মুসলিম: ২৭৪২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। [1]
[1] এই আয়াতে দুনিয়া যে অস্থায়ী এবং ক্ষণস্থায়ী সে কথা ক্ষেতের একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষেতের ফসলাদি ও গাছ-পালার উপর যখন আসমান থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে, তখন তা গ্রহণ করে ক্ষেত শ্যামল-সবুজ হয়ে ওঠে। ফসলাদি ও গাছপালা নতুন জীবনে মেতে ওঠে। কিন্তু এক সময় আবার এমন আসে, যখন পানি না পাওয়ার অথবা ফসল পেকে যাওয়ার কারণে ক্ষেত শুকিয়ে যায়। অতঃপর বাতাস তা উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। বাতাসের এক ঝটকা কখনও তাকে ডান দিকে আবার কখনও বাম দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়। পার্থিব জীবনও বাতাসের এক ঝটকা অথবা পানির বুদ্বুদের অথবা ক্ষেতের মত, যা কিছু কাল মনোহারিত্ব দেখিয়ে ধ্বংসের কোলে ঢলে পড়ে। আর এই সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রণ সেই সত্তার হাতে, যিনি একক এবং প্রতিটি জিনিসের উপর সর্বশক্তিমান। মহান আল্লাহ দুনিয়ার এই দৃষ্টান্ত কুরআন মাজীদের কয়েক স্থানে বর্ণনা করেছেন। যেমন, সূরা ইউনুসের ২৪নং, সূরা যুমারের ২১নং এবং সূরা হাদীদের ২০নং আয়াত সহ আরো বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৬
اَلۡمَالُ وَ الۡبَنُوۡنَ زِیۡنَۃُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ الۡبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیۡرٌ عِنۡدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ اَمَلًا ﴿۴۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা; আর স্থায়ী সৎকাজ(১) আপনার রব-এর কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাংখিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট।
(১) স্থায়ী সৎকাজ বলতে কুরআনে বর্ণিত বা হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত যাবতীয় নেককাজই বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর দাস হারেস বলেন, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদিন বসলে আমরা তার সাথে বসে পড়লাম। ইতিমধ্যে মুয়াজ্জিন আসল। তিনি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। সে পানির পরিমাণ সম্ভবত এক মুদ (৮১৫.৩৯ গ্রাম মতান্তরে ৫৪৩ গ্রাম) পরিমান হবে। (দেখুন, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা) তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সে পানি দ্বারা অজু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ অজুর মত অজু করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ আমার অজুর মত অজু করে জোহরের সালাত আদায় করে তবে এ সালাত ও ভোরের মাঝের সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তারপর যদি আসরের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও জোহরের সালাতের মধ্যকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
এরপর যদি মাগরিবের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও আসরের সালাতের মধ্যে কৃত গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর এশার সালাত আদায় করলে সে সালাত এবং মাগরিবের সালাতের মধ্যে হওয়া সমূদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এরপর সে হয়ত: রাতটি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে। তারপর যখন ঘুম থেকে জেগে অজু করে এবং সকালের সালাত আদায় করে তখন সে সালাত এবং এশার সালাতের মধ্যকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর এগুলোই হলো এমন সৎকাজ যেগুলো অপরাধ মিটিয়ে দেয়। লোকেরা এ হাদীস শোনার পর বলল, হে উসমান এগুলো হলো “হাসানাহ” বা নেক-কাজ। কিন্তু “আল-বাকিয়াতুস সালেহাত” কোনগুলো? তখন তিনি বললেন, তা হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ এবং লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৭১]
“আল-বাকিয়াতুস-সালেহাত” এর তাফসীরে এ পাঁচটি বাক্য অন্যান্য অনেক সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “আল বাকিয়াতুস-সালেহাত” দ্বারা আল্লাহর যাবতীয় যিকর বা স্মরণকে বুঝানো হয়েছে। সে মতে তিনি ‘তাবারাকাল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত পাঠ, সাওম, সালাত, হজ্জ, সাদাকাহ, দাসমুক্তি, জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণ সহ যাবতীয় সৎকাজকেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেনঃ এর দ্বারা ঐ সমূদয় কাজই উদ্দেশ্য হবে যা জান্নাতবাসীদের জন্য যতদিন সেখানে আসমান ও যমীনের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বাকী থাকবে অর্থাৎ চিরস্থায়ী হবে; কারণ জান্নাতের আসমান ও যমীন স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) ধনোশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।[1] আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী[2] ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট।
[1] এতে সেই সব দুনিয়াদার লোকদের খন্ডন করা হয়েছে, যারা পার্থিব ধন-মাল, উপায়-উপকরণ এবং গোত্র ও সন্তান-সন্ততির জন্য গর্ব করে। মহান আল্লাহ বললেন, এই জিনিসগুলো হল ধ্বংসশীল এবং পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য। আখেরাতে এগুলো কোন কাজে আসবে না। এই জন্য পরে বলা হয়েছে যে, আখেরাতে কাজে আসবে স্থায়ী সৎকর্মসমূহ।
[2] بَاقِيَات صَالِحَات (স্থায়ী নেকীসমূহ) কোনটি বা কি কি? কেউ নামাযকে, কেউ তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) বলাকে এবং কেউ আরো অন্যান্য সৎকর্মাদিকে বুঝিয়েছেন। তবে সঠিক কথা হল, এটা ব্যাপক; যাতে সকল প্রকার নেক কাজ শামিল। যাবতীয় ফরয ও ওয়াজেব এবং সুন্নত ও নফল কাজই হল স্থায়ী নেকীসমূহ। এমন কি নিষিদ্ধ কার্যাদি থেকে বিরত থাকাও এক প্রকার নেক কাজ; এতেও আল্লাহর কাছে নেকী পাওয়া যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৭
وَ یَوۡمَ نُسَیِّرُ الۡجِبَالَ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ بَارِزَۃً ۙ وَّ حَشَرۡنٰهُمۡ فَلَمۡ نُغَادِرۡ مِنۡهُمۡ اَحَدًا ﴿ۚ۴۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. আর স্মরণ করুন, যেদিন আমরা পর্বতমালাকে করব সঞ্চালিত(১) এবং আপনি যমীনকে দেখবেন উন্মুক্ত প্রান্তর(২), আর আমরা তাদের সকলকে একত্র করব; তারপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।
(১) অর্থাৎ যখন যমীনের বাঁধন আলগা হয়ে যাবে এবং পাহাড় ঠিক এমনভাবে চলতে শুরু করবে। যেমন আকাশে মেঘেরা ছুটে চলে। কুরআনের অন্য এক জায়গায় এ অবস্থাটিকে এভাবে বলা হয়েছেঃ “আর আপনি পাহাড়গুলো দেখছেন এবং মনে করছেন এগুলো অত্যন্ত জমাটবদ্ধ হয়ে আছে কিন্তু এগুলো চলবে ঠিক যেমন মেঘেরা চলে।” [সূরা আন-নামলঃ ৮৮] আরো বলা হয়েছেঃ “যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে এবং পর্বত চলবে দ্রুত; [সূরা আত-তূর: ৯–১০] আরো এসেছেঃ “আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।” [সূরা আল-কারি'আ: ৫]
(২) অর্থাৎ এর উপর কোন শ্যামলতা, বৃক্ষ তরুলতা এবং ঘরবাড়ি থাকবে না। সারাটা পৃথিবী হয়ে যাবে একটা ধুধু প্রান্তর। এ সূরার সূচনায় এ কথাটিই বলা হয়েছিল এভাবে যে, “এ পৃথিবী পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সেসবই আমি লোকদের পরীক্ষার জন্য একটি সাময়িক সাজসজ্জা হিসেবে তৈরী করেছি। এক সময় আসবে যখন এটি সম্পূর্ণ একটি পানি ও বৃক্ষ লতাহীন মরুপ্রান্তরে পরিণত হবে।”
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) (স্মরণ কর,) যেদিন আমি পর্বতকে করব সঞ্চালিত[1] এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে একটি শূন্য প্রান্তর; সেদিন মানুষকে আমি একত্রিত করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না। [2]
[1] এখানে কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং তার বড় বড় ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। পর্বতকে সঞ্চালিত করার অর্থ, পাহাড় তার স্থান থেকে সরে যাবে এবং তা ধূনিত পশমের মত উড়তে থাকবে। وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ ‘‘এবং পাহাড়গুলো ধূনিত রঙিন পশমের মত হয়ে যাবে।’’ (সূরা ক্বারেআহ ৫ আয়াত) আরো দেখুন, সূরা তূরের ৯-১০, সূরা নাম্লের ৮৮ এবং সূরা ত্বহা র ১০৫-১০৭নং আয়াতগুলো। যমীন থেকে এই শক্তিশালী পাহাড়গুলো যখন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তখন ঘর-বাড়ী, গাছপালা এবং এই ধরনের অন্যান্য জিনিসগুলো কিভাবে সব সব অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে? এই জন্যই পরে বলা হয়েছে, ‘‘তুমি যমীনকে দেখবে একটি শূন্য প্রান্তর।’’
[2] অর্থাৎ, পূর্বের ও পরের, ছোট ও বড় এবং কাফের ও মু’মিন সকলকেই একত্রিত করব। কেউ যমীনের তলায় পড়ে থাকবে না এবং কবর থেকে বেরিয়ে কোথাও লুকাতে পারবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৮
وَ عُرِضُوۡا عَلٰی رَبِّكَ صَفًّا ؕ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا كَمَا خَلَقۡنٰكُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍۭ ۫ بَلۡ زَعَمۡتُمۡ اَلَّنۡ نَّجۡعَلَ لَكُمۡ مَّوۡعِدًا ﴿۴۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. আর তাদেরকে আপনার রব-এর কাছে উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে(১) এবং আল্লাহ্ বলবেন, তোমাদেরকে আমরা প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম উপস্থিত হয়েছ(২), অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্য আমরা কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারণ করব না।(৩)
(১) সারিবদ্ধভাবে বলা দ্বারা এ অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারে যে, সবাই এক কাতার হয়ে দাঁড়াবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ এক কাতার হয়ে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন। সে ছাড়া অন্যেরা কথা বলবে না এবং সে যথাৰ্থ বলবে।” [সূরা আন-নাবাঃ ৩৮] অথবা এর দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, তারা কাতারে কাতারে দাঁড়াবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “এবং যখন আপনার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন ও সারিবদ্ধভাবে ফিরিশতাগণও” [সূরা আল-ফাজার: ২২]
(২) কেয়ামতের দিন সবাইকে বলা হবে; আজ তোমরা এমনিভাবে খালি হাতে, নগ্ন পায়ে, কোন খাদেম ব্যতীত, যাবতীয় জৌলুস বাদ দিয়ে, খালি গায়ে, কোন আসবাবপত্র না নিয়ে আমার সামনে এসেছ, যেমন আমি প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। কুরআনের অন্যত্রও এ ধরনের আয়াত এসেছে, যেমন সূরা আল-আন’আম: ৯৪, সূরা মারইয়াম: ৮০, ৯৫, সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪৷ এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “লোকসকল! তোমরা কেয়ামতে তোমাদের পালনকর্তার সামনে খালি পায়ে, খালি গায়ে, পায়ে হেঁটে উপস্থিত হবে। সেদিন সর্বপ্রথম যাকে পোষাক পরানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম। একথা শুনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব নারী-পুরুষই কি উলঙ্গ হবে এবং একে অপরকে দেখবো? তিনি বললেনঃ সেদিন প্রত্যেককেই এমন ব্যস্ততা ও চিন্তা ঘিরে রাখবে যে, কেউ কারো প্রতি দেখার সুযোগই পাবে না। [বুখারীঃ ৩১৭১, মুসলিমঃ ২৮৫৯]
(৩) অর্থাৎ সে সময় আখেরাত অস্বীকারকারীদেরকে বলা হবেঃ দেখো, নবীগণ যে খবর দিয়েছিলেন তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে তো। তারা তোমাদের বলতেন, আল্লাহ যেভাবে তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনি দ্বিতীয়বারও সৃষ্টি করবেন। তোমরা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলে। কিন্তু এখন বলো, তোমাদের দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা হয়েছে কি না?
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) আর তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে[1] (এবং বলা হবে), ‘তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ; অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত সময় আমি উপস্থিত করব না?’
[1] এর অর্থ হল, একই সারিতে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে অথবা সারিবদ্ধভাবে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৪৯
وَ وُضِعَ الۡكِتٰبُ فَتَرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا فِیۡهِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ یٰوَیۡلَتَنَا مَالِ هٰذَا الۡكِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیۡرَۃً وَّ لَا كَبِیۡرَۃً اِلَّاۤ اَحۡصٰهَا ۚ وَ وَجَدُوۡا مَا عَمِلُوۡا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظۡلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا ﴿۴۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. আর উপস্থাপিত করা হবে আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে দেখবেন আতংকগ্ৰস্ত এবং তারা বলবে, হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্ৰন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে।(১) আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে(২); আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না।(৩)
(১) দুনিয়ার বুকে তারা যা যা করেছিল তা সবই লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সে সব লিখিত গ্রন্থগুলো সেখানে তারা দেখতে পাবে। তাদের কারও আমলনামা ডান হাতে আবার কারও বাম হাতে দেয়া হবে। তারা সেখানে এটাও দেখবে যে, সেখানে ছোট-বড়, গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বহীন সবকিছুই লিখে রাখা হয়েছে। অন্যত্র মহান আল্লাহ তাদের আমলনামা সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাজ আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। “তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেবা-নিকেশের জন্য যথেষ্ঠ। [সুরা আল-ইসরা: ১৩]
(২) অর্থাৎ হাশরবাসীরা তাদের কৃতকর্মকে উপস্থিত পাবে। অন্যান্য আয়াতে আরো স্পষ্ট ভাষায় তা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে: “যে দিন প্রত্যেকে সে যা ভাল কাজ করেছে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তা বিদ্যমান পাবে, সেদিন সে তার ও ওটার মধ্যে ব্যবধান কামনা করবে। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করতেছেন। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াদ্র।” [সূরা আলে-ইমরান: ৩০] আরও বলা হয়েছেঃ “সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গেছে।” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৩]
আরও বলা হয়েছেঃ “যে দিন গোপন ভেদসমূহ প্রকাশ করা হবে” [সূরা আত-ত্বরেক: ৯] মুফাসসিরগণ বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে এর অর্থ সাধারণভাবে এরূপ বর্ণনা করেন যে, এসব কৃতকর্মই প্রতিদান ও শাস্তির রূপ পরিগ্রহ করবে। তাদের আকার-আকৃতি সেখানে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যেমন, কোন কোন হাদীসে আছে, যারা যাকাত দেয় না, তাদের মাল কবরে একটি বড় সাপের আকার ধারণ করে তাদেরকে দংশন করবে এবং বলবেঃ আমি তোমার সম্পদ ৷ [বুখারীঃ ১৩৩৮, তিরমিযীঃ ১১৯৫] সৎকর্ম সুশ্ৰী মানুষের আকারে কবরের নিঃসঙ্গ অবস্থায় আতঙ্ক দূর করার জন্য আগমন করবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৮৭] মানুষের গোনাহ বোঝার আকারে প্রত্যেকের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে। অনুরূপভাবে, কুরআন ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষনকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- (إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا) [সূরা আন-নিসাঃ ১০]
অথবা, আয়াতের এ অর্থও করা যায় যে, তারা তাদের কৃতকর্মের বিবরণ সম্বলিত দপ্তর দেখতে পাবে, কোন কিছুই সে আমলনামা লিখায় বাদ পড়েনি। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াত শুনিয়ে বলতেন: তোমরা যদি লক্ষ্য কর তবে দেখতে পাবে যে, লোকেরা ছোট-বড় সবকিছু গণনা হয়েছে বলবে কিন্তু কেউ এটা বলবে না যে, আমার উপর যুলুম করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা ছোট ছোট গুনাহর ব্যাপারে সাবধান হও; কেননা এগুলো একত্রিত হয়ে বিরাট আকার ধারণ করে ধ্বংস করে ছাড়বে। [তাবারী]
(৩) অর্থাৎ এক ব্যক্তি একটি অপরাধ করেনি। কিন্তু সেটি খামাখা তার নামে লিখে দেয়া হয়েছে, এমনটি কখনো হবে না। আবার কোন ব্যক্তিকে তার অপরাধের কারণে প্রাপ্য সাজার বেশী দেয়া হবে না এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে অযথা পাকড়াও করেও শাস্তি দেয়া হবে না। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা মানুষদেরকে অথবা বলেছেন বান্দাদেরকে নগ্ন, অখতনাকৃত এবং কপর্দকশূণ্য অবস্থায় একত্রিত করবেন। তারপর কাছের লোকেরা যেমন শুনবে দূরের লোকরাও তেমনি শুনতে পাবে এমনভাবে ডেকে বলবেনঃ আমিই বাদশাহ, আমিই বিচার-প্রতিদান প্রদানকারী, জান্নাতে প্রবেশকারী কারও উপর জাহান্নামের অধিবাসীদের কোন দাবী অনাদায়ী থাকতে পারবে না।
অনুরূপভাবে, জাহান্নামে প্রবেশকারী কারও উপর জান্নাতের অধিবাসীদের কারও দাবীও অনাদায়ী থাকতে পারবে না। এমনকি যদি তা একটি চপেটাঘাতও হয়। বর্ণনাকারী বললেনঃ কিভাবে তা সম্ভব হবে, অথচ আমরা তখন নগ্ন শরীর, অখতনাকৃত ও রিক্তহস্তে সেখানে আসব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নেককাজ ও বদকাজের মাধ্যমে সেটার প্রতিদান দেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৯৫] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘শিংবিহীন প্রাণী সেদিন শিংওয়ালা প্রাণী থেকে তার উপর কৃত অন্যায়ের কেসাস নিবে।’ [মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৯৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) সেদিন (প্রত্যেকের হাতে) রাখা হবে আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে ভীত-সন্ত্রস্ত; তারা বলবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের! এ কেমন গ্রন্থ! এ তো ছোট-বড় কিছুই বাদ দেয়নি; বরং এ সমস্ত হিসাব রেখেছে!’ তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; আর তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি যুলুম করেন না ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান১৮ : ৫০
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِكَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ كَانَ مِنَ الۡجِنِّ فَفَسَقَ عَنۡ اَمۡرِ رَبِّهٖ ؕ اَفَتَتَّخِذُوۡنَهٗ وَ ذُرِّیَّتَهٗۤ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِیۡ وَ هُمۡ لَكُمۡ عَدُوٌّ ؕ بِئۡسَ لِلظّٰلِمِیۡنَ بَدَلًا ﴿۵۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. আর স্মরণ করুন, আমরা যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমের প্রতি সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করল ইবলীস ছাড়া; সে ছিল জিন্দের একজন(১) সে তার রব-এর আদেশ অমান্য করল।(২) তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে(৩) অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, অথচ তারা তোমাদের শত্রু।(৪) যালেমদের বিনিময় কত নিকৃষ্ট!(৫)
(১) ইবলিস কি ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল নাকি ভিন্ন প্রজাতির ছিল এ নিয়ে দুটি মত দেখা যায়। [দুটি মতই ইবন কাসীর বর্ণনা করেছেন।] কোন কোন মুফাসসিরের মতে, সে ফিরিশতাদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন তাদের মতে, এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলার বাণী “সে জিনদের একজন” এর ‘জিন’ শব্দ দ্বারা ফেরেশতাদের এমন একটি উপদল উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যাদেরকে ‘জিন’ বলা হতো। সম্ভবত: তাদেরকে মানুষের মত নিজেদের পথ বেছে নেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ইবলিস আল্লাহ তা’আলার নির্দেশের আওতায় ছিল। কিন্তু সে নির্দেশ অমান্য করে। অবাধ্য ও অভিশপ্ত বান্দা হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে ইবলীস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল না।
তারা আলোচ্য আয়াত থেকে তাদের মতের সপক্ষে দলীল গ্রহণ করেন। ফেরেশতাদের ব্যাপারে কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় বলে, তারা প্রকৃতিগতভাবে অনুগত ও হুকুম মেনে চলেঃ “আল্লাহ তাদেরকে যে হুকুমই দেন না কেন তারা তার নাফরমানী করে না এবং তাদেরকে যা হুকুম দেয়া হয় তাই করে” [সূরা আত-তাহরীমঃ ৬] আরো বলেছেনঃ “তারা অবাধ্য হয় না, তাদের রবের, যিনি তাদের উপর আছেন, ভয় করে এবং তাদেরকে যা হুকুম দেয়া হয় তাই করে।” [সূরা আন-নাহলঃ ৫০]। তাছাড়া হাদীসেও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে তৈরী করা হয়েছে, ইবলীসকে আগুনের ফুল্কি থেকে এবং আদমকে যা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা তোমাদের কাছে বিবৃত করা হয়েছে৷ [মুসলিম: ২৯৯৬]
(২) এতে বুঝা যাচ্ছে যে, জিনরা মানুষের মতো একটি স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টি। তাদেরকে জন্মগত আনুগত্যশীল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তাদেরকে কুফর ও ঈমান এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা উভয়টি করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। এ সত্যটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইবলীস ছিল জিনদের দলভুক্ত, তাই সে স্বেচ্ছায় নিজের স্বাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করে ফাসেকীর পথ বাছাই করে নেয়। এখানে আল্লাহর নির্দেশ থেকে অবাধ্য হয়েছিল। এর দুটি অর্থ করা হয়ে থাকে। এক, সে আল্লাহর নির্দেশ আসার কারণে অবাধ্য হয়েছিল। কারণ সিজদার নির্দেশ আসার কারণে সে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল। এতে বাহ্যত: মনে হবে যে, আল্লাহর নির্দেশই তার অবাধ্যতার কারণ। অথবা আয়াতের অর্থ, আল্লাহর নির্দেশ ত্যাগ করে সে অবাধ্য হয়েছিল। [ফাতহুল কাদীর]
তবে ইবলীস ফেরেশতাদের দলভুক্ত না হয়েও নির্দেশের অবাধ্য কারণ হচ্ছে, যেহেতু ফেরেশতাদের সাথেই ছিল, সেহেতু সিজদার নির্দেশ তাকেও শামিল করেছিল। কারণ, তার চেয়ে উত্তম যারা তাদেরকে যখন সিজদা করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তখন সে নিজেই এ নির্দেশের মধ্যে শামিল হয়েছিল এবং তার জন্যও তা মানা বাধ্যতামূলক ছিল। [ইবন কাসীর]
(৩) وَذُرِّيَّتَهُ এ শব্দ থেকে বোঝা যায় যে, শয়তানের সন্তান-সন্ততি ও বংশধর আছে। কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে ذرّية অর্থাৎ বংশধর বলে সাহায্যকারী দল বোঝানো হয়েছে। কাজেই শয়তানের ঔরসজাত সন্তান-সন্ততি হওয়া জরুরী নয়। [ফাতহুল কাদীর]
(৪) উদ্দেশ্য হচ্ছে পথভ্রষ্ট লোকদেরকে তাদের এ বোকামির ব্যাপারে সজাগ করে দেয়া যে, তারা নিজেদের স্নেহশীল ও দয়াময় আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যত নেয়ামত তোমার প্রয়োজন সবই সরবরাহ করেছেন এবং শুভাকাংখী নবীদেরকে ত্যাগ করে এমন এক চিরন্তন শত্রুর ফাঁদে পা দিচ্ছে যে সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সবসময় তোমার ক্ষতি করার অপেক্ষায় থাকে। [ফাতহুল কাদীর]
(৫) যালেম তো তারা, যারা প্রতিটি বস্তুকে তার সঠিক স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রেখেছে। তাদের রবের ইবাদাতের পরিবর্তে শয়তানের ইবাদাত করেছে। এত কত নিকৃষ্ট অদল-বদল! আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানের ইবাদাত! [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা তা বলেছেন, “আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও, হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্ৰু? আর আমারই ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ। শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল, তবুও কি তোমরা বুঝনি?” [সূরা ইয়াসীন: ৫৯–৬২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) (স্মরণ কর,) আমি যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল; সে ছিল জীনদের একজন।[1] সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল;[2] তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে; অথচ তারা তোমাদের শত্রু?[3] সীমালংঘনকারীদের পরিবর্ত কত নিকৃষ্ট![4]
[1] কুরআনের স্পষ্ট এই বর্ণনা থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শয়তান ফিরিশতা ছিল না। ফিরিশতা হলে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করার তার কোনই উপায় থাকত না। কেননা, ফিরিশতাদের গুণ মহান আল্লাহ এইভাবে বর্ণনা করেছেন, ﴿ لا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾ ‘‘তাঁরা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন তা অমান্য করেন না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাঁরা তা-ই করেন।’’ (সূরা তাহরীমঃ ৬ আয়াত) এখানে একটি জটিলতা এই থেকে যায় যে, যদি সে ফিরিশতা হয়ে না থাকে, তবে তো সে আল্লাহর সম্বোধনের আওতাভুক্ত ছিল না। কেননা, সম্বোধন তো ফিরিশতাদের করা হয়েছিল। তাঁদেরকেই সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ‘রূহুল মাআনী’র লেখক বলেছেন যে, সে অবশ্যই ফিরিশতা ছিল না, কিন্তু ফিরিশতাদের সাথেই থাকত এবং তাঁদেরই মধ্যে গণ্য হত। কাজেই সেও اسْجُدُوا لِآدَمَ এই আদেশের আওতাভুক্ত ছিল। আদম (আঃ)-কে সিজদা করার নির্দেশে তাকেও যে সম্বোধন করা হয়েছিল এ কথা সুনিশ্চিত। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ অর্থাৎ, আমি যখন আদেশ করলাম, তখন তোকে কিসে সিজদা করতে বারণ করল? (সূরা আ’রাফ ১২ আয়াত)
[2] فِسْقٌ এর অর্থ হয় বেরিয়ে যাওয়া। ইঁদুর তার গর্ত থেকে বেরিয়ে গেলে বলা হয়, فَسَقَتِ الْفأْرَةُ مِنْ جُحْرِهَا শয়তানও সম্মান ও সম্ভাষণের সিজদাকে অস্বীকার করে প্রতিপালকের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
[3] অর্থাৎ, তোমাদের জন্য কি এটা ঠিক যে, তোমরা এমন ব্যক্তি ও তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, যে তোমাদের পিতা আদম (আঃ)-এর শত্রু, তোমাদের শত্রু ও আল্লাহর শত্রু এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই শয়তানের আনুগত্য করবে?
[4] দ্বিতীয় একটি অর্থ এই করা হয়েছে যে, ‘‘অত্যাচারীরা কতই নিকৃষ্ট পরিবর্ত নির্বাচন করেছে।’’ অর্থাৎ, আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করে, শয়তানের আনুগত্য ও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। আর এটা হল অতি নিকৃষ্টতম পরিবর্ত; যা এই যালেমরা গ্রহণ করেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান