-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪১. হে আমার কারা-সঙ্গীদ্বয়! তোমাদের দুজনের একজন তার মনিবকে মদ পান করবে(১) এবং অন্যজন(২) শূলবিদ্ধ হবে; অতঃপর তার মস্তক হতে পাখি খাবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।(৩)
(১) প্রচার ও দাওয়াত সমাপ্ত করার পর ইউসুফ আলাইহিস সালাম কয়েদীদের স্বপ্নের দিকে মনোযোগ দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের একজন তো মুক্তি পাবে এবং চাকুরীতে পুনর্বহাল হবে। অপরজনের অপরাধ প্রমাণিত হবে এবং তাকে শূলে চড়ানো হবে। পাখিরা তার মাথার মগজ ঠুকরে খাবে।
(২) ইবনে কাসীর বলেনঃ উভয় কয়েদীর স্বপ্ন পৃথক পৃথক ছিল। প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা নির্দিষ্ট ছিল এবং এটাও নির্দিষ্ট ছিল যে, যে ব্যক্তি বাদশাহকে মদ্যপান করাত, সে মুক্ত হয়ে চাকুরীতে পুনর্বহাল হবে এবং বাবুর্চিকে শূলে চড়ানো হবে। কিন্তু ইউসুফ আলাইহিস সালাম নবীসুলভ অনুকম্পার কারণে নির্দিষ্ট করে বলেননি যে, তোমাদের অমুককে শূলে চড়ানো হবে -যাতে সে এখন থেকেই চিন্তান্বিত না হয়ে পড়ে। বরং তিনি সংক্ষেপে বলেছেন যে, একজন মুক্তি পাবে এবং অপরজনকে শূলে চড়ানো হবে। সবশেষে বলেছেনঃ আমি তোমাদের স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, তা নিছক অনুমানভিত্তিক নয়; বরং এটাই আল্লাহর অটল ফয়সালা।
(৩) যেসব মুফাসসির তাদের স্বপ্নকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলেছেন, তারা একথাও বলেছেন যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম যখন স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন, তখন তারা উভয়েই বলে উঠলঃ আমরা কোন স্বপ্নই দেখিনি, বরং মিছামিছি বানিয়ে বলেছিলাম। তখন ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম বললেনঃ (قُضِيَ الْأَمْرُ الَّذِي فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ) তোমরা এ স্বপ্ন দেখে থাক বা না থাক, এখন বাস্তবে তাই হবে, যা বর্ণনা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, তোমরা মিথ্যা স্বপ্ন তৈরী করার যে গোনাহ করেছ, এখন তার শাস্তি তা-ই, যা ব্যাখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) হে আমার কারাসঙ্গীদ্বয়![1] তোমাদের একজন সম্বন্ধে কথা এই যে, সে তার প্রভুকে মদ্য পান করাবে[2] এবং অপরজন সম্বন্ধে কথা এই যে, সে শূলবিদ্ধ হবে, অতঃপর তার মস্তক হতে পাখি আহার করবে।[3] যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’ [4]
[1] তওহীদের নসীহত করার পর এখন ইউসুফ (আঃ) তাদের বর্ণনাকৃত স্বপ্নের তাৎপর্য বর্ণনা করছেন।
[2] এ সেই ব্যক্তি যে স্বপ্নে নিজেকে আঙ্গুরের জুস তৈরী করতে দেখেছিল। এর পরেও তিনি উভয়ের মধ্যে কোন একজনকে নির্দিষ্ট করেননি, যাতে যে শূলবিদ্ধ হবে, সে আগে থেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে।
[3] এ সেই ব্যক্তি যে স্বপ্নে নিজ মাথার উপর রুটির ঝুড়ি বহন করতে দেখেছিল।
[4] অর্থাৎ, এই সিদ্ধান্ত যা আমি স্বপ্নের তাৎপর্য হিসাবে বর্ণনা করেছি, তা পূর্ব থেকেই স্থিরীকৃত হয়ে আছে। নিঃসন্দেহে তা বাস্তবায়িত হবে। যেমন হাদীসে আছে, নবী (সাঃ) বলেছেন, যতক্ষণ স্বপ্নের তাৎপর্য বর্ণনা না করা হয়, ততক্ষণ তা পাখির পায়ে (অস্থিতিশীল) থাকে। অতঃপর যখন তার তাৎপর্য বর্ণনা করে দেওয়া হয়, তখন তা বাস্তবে সংঘটিত হয়।’’ (আহমাদ, ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪২. আর ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করলেন, তাকে বললেন, তোমার মনিবের কাছে আমার কথা বলো, কিন্তু শয়তান তাকে তার মনিবের কাছে তার বিষয় বলার কথা ভুলিয়ে দিল; কাজেই ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে রয়ে গেলেন।(১)
(১) এ আয়াতের দুটি অর্থ করা হয়ে থাকে,
এক. বন্দী দু'জনের মধ্যে যে ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে রেহাই পাবে, তাকে ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেনঃ যখন তুমি মুক্ত হয়ে কারাগারের বাইরে যাবে এবং শাহী দরবারে পৌছবে, তখন বাদশাহর কাছে আমার বিষয়েও আলোচনা করবে যে, এ নিরপরাধ লোকটি কারাগারে পড়ে রয়েছে। কিন্তু মুক্ত হয়ে লোকটি ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কথা ভুলে গেল। এ হিসাবে فَأَنْسَاهُ এর মধ্যে ব্যবহৃত সর্বনামটি দ্বারা সেই বন্দী লোকটিকে বুঝানো হবে। ফলে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মুক্তি আরো বিলম্বিত হয়ে গেল এবং এ ঘটনার পর আরো কয়েক বছর তাকে কারাগারে কাটাতে হল। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
দুই. মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ ইউসুফ আলাইহিসসালাম বন্দীর প্রভু বা রাজার কাছে তার কথা উল্লেখ করার কথা বলেছিলেন। এতে করে তিনি যেহেতু তার প্রভু রাব্বুল আলামিনকে ভুলে গিয়েছিলেন এর শাস্তি স্বরূপ তাকে বেশ কয়েক বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। এ হিসাবে فَأَنْسَاهُ শব্দের মধ্যে ব্যবহৃত সর্বনামটি দ্বারা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে বুঝানো হবে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
আয়াতে (بِضْعَ سِنِينَ) বলা হয়েছে। শব্দটি তিন থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যা বোঝায়। কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ ঘটনার পর আরো সাত বছর তাকে জেলে থাকতে হয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল, তাকে বলল, ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বলো।’ কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর কাছে তার বিষয় বলবার কথা ভুলিয়ে দিল; সুতরাং ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে থেকে গেল। [1]
[1] بضع শব্দটি তিন থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যার জন্য ব্যবহার হয়। অহাব বিন মুনাব্বেহ বলেন, আইয়ুব (আঃ) তাঁর ব্যাধি অবস্থায় এবং ইউসুফ (আঃ) জেলখানায় সাত বছর ছিলেন। আর বুখতে নাসরের আযাবও সাত বছর ছিল। পক্ষান্তরে অনেকে বলেন, বারো বছর এবং অনেকের মতে চৌদ্দ বছর জেলখানাতে ছিলেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৩. আর রাজা বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভী, তাদেরকে সাতটি দুর্বল গাভী খেয়ে ফেলছে এবং দেখলাম সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক। হে সভাষদগণ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তবে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) রাজা বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি স্থূলকায় গাভী; ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক। হে প্রধানগণ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তাহলে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৪. তারা বলল, এটা অর্থহীন স্বপ্ন এবং আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই।(১)
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মুক্তির জন্য একটি উপায় সৃষ্টি করলেন। বাদশাহ একটি স্বপ্ন দেখে উদ্বেগাকুল হলেন এবং সভাষদদের একত্রিত করে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলেন। স্বপ্লটি কারো বোধগম্য হল না। তাই সবাই উত্তর দিলঃ (أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيلِ الْأَحْلَامِ بِعَالِمِينَ) এখানে أَضْغَاث শব্দটি ضغث এর বহুবচন। এর অর্থ এমন পুঁটলী, যাতে বিভিন্ন প্রকার আবর্জনা ও ঘাসখড় জমা থাকে। [কুরতুবী] অর্থ এই যে, এ স্বপ্নটি মিশ্র ধরণের। এতে কল্পনা ইত্যাদি শামিল রয়েছে। আমরা এরূপ স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানি না। সঠিক স্বপ্ন হলে ব্যাখ্যা দিতে পারতাম। [কুরতুবী] কোন কোন মুফাসসির বলেন, তাদের এ উত্তরের মাধ্যমে তারা অজ্ঞতা ও তার উপর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেয়ার মত দু'টি ভুলই করেছিল। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) তারা বলল, ‘এটা আবোল-তাবোল স্বপ্ন এবং আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই।’ [1]
[1] أضغاثٌ শব্দটি ضغثٌ এর বহুবচন, যার অর্থ হল ঘাসের গোছা। أحلامٍ শব্দটি حُلم এর বহুবচন যার অর্থ হল স্বপ্ন। أضغاث أحلام এর অর্থ হবে, অর্থহীন স্বপ্ন বা বিক্ষিপ্ত খেয়াল, যার কোন ব্যাখ্যা হয় না। উক্ত স্বপ্ন মিসরের সেই রাজা দেখলেন, আযীয যাঁর মন্ত্রী ছিলেন। এই স্বপ্ন দ্বারা আল্লাহ তাআলা ইউসুফ (আঃ)-কে জেল থেকে মুক্ত করতে চাইলেন। সুতরাং রাজার সভাসদ, জ্যোতিষী ও গণকমন্ডলী সকলে সেই জটিল স্বপ্নের তাৎপর্য বর্ণনা করতে অক্ষমতা প্রকাশ করল। কেউ কেউ বলেন, জ্যোতিষী প্রভৃতিদের অক্ষমতা প্রকাশ করার অর্থ, তাদের আদৌ ব্যাখ্যার জ্ঞান ছিল না। পক্ষান্তরে কিছু তফসীরবিদ বলেন, তারা ব্যাখ্যা জানতো না এমন নয়, আর না তারা না জানার কথা বলেছে, বরং তারা কেবল উক্ত স্বপ্নের ব্যাখ্যা বর্ণনা করার অক্ষমতা প্রকাশ করেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৫. আর সে দুজন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে যার স্মরণ হল সে বলল, আমি এর তাৎপর্য তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। কাজেই তোমরা আমাকে পাঠাও।(১)
(১) এ ঘটনা দেখে দীর্ঘকাল পর ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কথা মুক্তিপ্রাপ্ত সেই কয়েদীর মনে পড়ল। সে অগ্রসর হয়ে বললঃ আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলতে পারব। তখন সে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গুণাবলী, স্বপ্ন ব্যাখ্যায় পারদর্শিতা এবং মজলুম হয়ে কারাগারে আবদ্ধ হওয়ার কথা বর্ণনা করে অনুরোধ করল যে, তাকে কারাগারে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হোক। বাদশাহ এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করলেন এবং সে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাছে উপস্থিত হল। [ইবন কাসীর] কুরআনুল কারীম এসব ঘটনাকে একটি মাত্র শব্দ فَأَرْسِلُونِ দ্বারা বর্ণনা করেছে। এর অর্থ আমাকে পাঠিয়ে দিন। ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর নাম উল্লেখ, সরকারী মঞ্জুরী অতঃপর কারাগারে পৌছা এসব ঘটনা আপনা-আপনি বোঝা যায়।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৫) দু’জন কারা-বন্দীর মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে তার স্মরণ হল সে বলল, ‘আমি এর তাৎপর্য তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, সুতরাং তোমরা আমাকে পাঠিয়ে দাও।’ [1]
[1] এ ব্যক্তি জেলখানার সঙ্গীদ্বয়ের একজন ছিল, যে অবিলম্বে ছাড়া পাবে। তাকে ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন যে, ‘তুমি তোমার প্রভুর (মালিকের) নিকট আমার কথা বলবে, যাতে আমিও মুক্ত হতে পারি।’ সেই ব্যক্তির হঠাৎ স্মরণ হল এবং সে বলল, ‘আমাকে সময় দাও, আমি তোমাদেরকে এই স্বপ্নের তাৎপর্য বলে দেব।’ সুতরাং সেখান থেকে বের হয়ে সে সোজা ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট গেল এবং স্বপ্নের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে তার তাৎপর্য জানতে চাইল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৬. সে বলল, হেইউসুফ! হে সত্যবাদী!(১) সাতটি মোটাতাজা গাভী, সেগুলোকে সাতটি দুর্বল গাভী খেয়ে ফেলছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে আপনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দিন(২), যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি ও তারা জানতে পারে।(৩)
(১) মূল ভাষ্যে الصديق শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি আরবী ভাষায় সর্বোচ্চ মানের সততা ও সত্যবাদিতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যার কথা ও কাজ সত্য। [ইবন কাসীর] এ থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, কারাগারে অবস্থান কালে এ ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালামের পবিত্র জীবন ও চরিত্র দ্বারা কী বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল! দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পরও এ প্রভাব কেমন অটুট ছিল! তাই লোকটি কারাগারে পৌছে ঘটনার বর্ণনা শুরু করে প্রথমে ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর صديق অর্থাৎ কথা ও কাজে সাচ্চা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। অতঃপর দরখাস্ত করেছে যে, আমাকে একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিন। তখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন। কেন তার কথা বাদশাকে বলতে ভুলে গিয়েছিল সে ব্যাপারে কোন তিরস্কার না করেই। অনুরূপভাবে তাকে এখান থেকে বের করে নিতে হবে এমন কোন শর্ত না দিয়েই। [ইবন কাসীর]
(২) স্বপ্ন এই যে, বাদশাহ সাতটি মোটাতাজা গাভী দেখেছেন। এগুলোকেই অন্য সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো গমের সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুষ্ক শীষ দেখেছেন।
(৩) অর্থাৎ আপনি ব্যাখ্যা বলে দিলে অচিরেই আমি ফিরে যাব এবং তাদের কাছে ব্যাখ্যা বর্ণনা করব। এতে সম্ভবতঃ তারা আপনার জ্ঞান-গরিমা সম্পর্কে অবগত হবে। অথবা এর অর্থ- যাতে জনগণ এ স্বপ্নের তা'বীর জানতে পারে। কেননা, তারা তা জানার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৬) সে বলল, ‘হে ইউসুফ! হে মহা সত্যবাদী! সাতটি স্থূলকায় গাভী, ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে আপনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দিন, যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি এবং যাতে তারা অবগত হতে পারে।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৭. ইউসুফ বললেন, তোমরা সাত বছর একাধারে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য কাটবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে, তা ছাড়া বাকী সবগুলো শীষসহ রেখে দেবে;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৭) ইউসুফ বলল, ‘তোমরা সাত বছর একাদিক্রমে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা যে শস্য সংগ্রহ করবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা ভক্ষণ করবে, তা ব্যতীত সমস্ত শস্য শীষ সমেত রেখে দেবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৮. এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর(১), এ সাত বছর, যা আগে সঞ্চয় করে রাখবে, লোকেরা তা খাবে; শুধুমাত্র সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে, তা ছাড়া।(২)।
(১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ কুরাইশরা যখন ইসলাম গ্রহণ করতে গড়িমসি করল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর বদদোয়া করে বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে তাদের ব্যাপারে ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাত বছরের মত সাত বছর দিয়ে যথেষ্ট করুন। ফলে কুরাইশগণ এমন এক দুর্ভিক্ষে পতিত হলো যে, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেল। এমনকি তারা হাড় খেতেও বাধ্য হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, তাদের কোন কোন লোক ক্ষুধার তাড়নায় আকাশের দিকে তাকালে শুধু ধোঁয়ার মত অস্বচ্ছ দেখতে পেত। আল্লাহ বলেনঃ “সুতরাং অপেক্ষা করুন সেদিনের যেদিন আকাশ সুস্পষ্ট ধোঁয়া নিয়ে আসবে”। তোমরা ফিরে আসবে। কিয়ামতের দিনের পরে কি তাদের শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে? ধোঁয়া চলে গেছে তবে আল্লাহর পাকড়াও বাকী আছে। [বুখারীঃ ৪৬৯৩, মুসলিমঃ ২৭৯৮]
(২) কারণ সেটা তোমরা তোমাদের বীজ হিসেবে রেখে দিবে। অর্থাৎ তা খেয়ে ফেলো না। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন যে, এগুলো তোমরা না খেয়ে জমা রাখবে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৮) এরপর আসবে সাতটি কঠিন (দুর্ভিক্ষের) বছর, এই সাত বছর যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে, লোকে তা খাবে;[1] শুধু সামান্য কিছু যা তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ব্যতীত। [2]
[1] আল্লাহ তাআলা ইউসুফ (আঃ)-কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা-জ্ঞান প্রদান করেছিলেন, ফলে তিনি অবিলম্বে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বুঝতে পারলেন। তিনি সাতটি মোটা-তাজা গাভী দ্বারা এমন সাতটি বছর অর্থ নিলেন, যে বছরগুলিতে খুব ভাল ফসল উৎপন্ন হবে। আর সাতটি শীর্ণকায় গাভী দ্বারা তার বিপরীত দুর্ভিক্ষের সাতটি বছর অর্থ নিলেন। অনুরূপ সাতটি সবুজ শীষ দ্বারা ব্যাখ্যা নিলেন যে, যমীনে অধিকহারে ফসল উৎপন্ন হবে এবং সাতটি শুষ্ক শীষ দ্বারা যমীনে সাত বছর ফসল উৎপন্ন না হওয়ার ব্যাখ্যা নিলেন। সেই সাথে তার জন্য কি ব্যবস্থা নিতে হবে তাও বলে দিলেন; বললেন, ‘পর পর সাত বছর চাষাবাদ করবে এবং যে শস্য উৎপন্ন হবে, তা কেটে শীষ সহ জমা রাখবে; যাতে শস্য ভালভাবে সংরক্ষিত থাকে। পরে যখন সাতটি দুর্ভিক্ষের বছর আসবে, তখন সে শস্য তোমাদের কাজে আসবে, যা তোমরা সঞ্চয় করে রাখবে।’
[2] مما تحصنون (যা তোমরা সংরক্ষণ করবে)এর অর্থ হল, সেই শস্যবীজ যা পুনরায় চাষ করার জন্য সংরক্ষণ করে রাখবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪৯. তারপর আসবে এক বছর, সে বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বছর মানুষ ফলের রস নিংড়াবে।(১)
(১) আয়াতে يعصرون শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর শাব্দিক মানে হচ্ছে নিংড়ানো। এখানে এর মাধ্যমে পরবর্তীকালের চতুর্দিকের এমন শস্য শ্যামল তরতাজা পরিবেশ বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য যা দুর্ভিক্ষের পর রহমতের বৃষ্টিধারা ও নীল নদের জোয়ারের পানি সিঞ্চনের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে। জমি ভালোভাবে পানিসিক্ত হলে তেল উৎপাদনকারী বীজ, রসাল ফল ও অন্যান্য ফলফলাদি বিপুল পরিমাণে উৎপন্ন হয় এবং ভালো ঘাস খাওয়ার কারণে গৃহপালিত পশুরাও প্রচুর পরিমাণে দুধ দেয়। অর্থাৎ প্রথম সাত বছরের পর ভয়াবহ খরা ও দুর্ভিক্ষের সাত বছর আসবে এবং পূর্ব-সঞ্চিত শস্য ভাণ্ডার খেয়ে ফেলবে। বাদশাহ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, শীর্ণ ও দুর্বল গাভীগুলো মোটাতাজা ও শক্তিশালী গাভীগুলোকে খেয়ে ফেলছে। তাই ব্যাখ্যায় এর সাথে মিল রেখে বলেছেন যে, দুর্ভিক্ষের বছরগুলো পূর্ববর্তী বছরগুলোর সঞ্চিত শস্য ভাণ্ডার খেয়ে ফেলবে; যদিও বছর এমন কোন বস্তু নয় যা কোন কিছুকে ভক্ষণ করতে পারে। উদ্দেশ্য এই যে, মানুষ ও জীব-জন্তুতে দুর্ভিক্ষের বছরগুলোতে পূর্ব-সঞ্চিত শস্য ভাণ্ডার খেয়ে ফেলবে। বাদশাহর স্বপ্নে বাহ্যতঃ এটুকুই ছিল যে, সাত বছর ভাল ফলন হবে, এরপর সাত বছর দুর্ভিক্ষ হবে। কিন্তু ইউসুফ আলাইহিস সালাম আরো কিছু বাড়িয়ে বললেন যে, দুর্ভিক্ষের বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে এক বছর খুব বৃষ্টিপাত হবে এবং প্রচুর ফসল উৎপন্ন হবে।
এ বিষয়টি ইউসুফ আলাইহিস সালাম এভাবে জানতে পারেন যে, দুর্ভিক্ষের বছর যখন সর্বমোট সাতটি, তখন আল্লাহর চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী অষ্টম বছর বৃষ্টিপাত ও উৎপাদন হবে। কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা ওহীর মাধ্যমে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে এ বিষয়ে জ্ঞাত করেছিলেন, যাতে স্বপ্নের ব্যাখ্যার অতিরিক্ত কিছু সংবাদ তারা লাভ করে, তার জ্ঞানগরিমা প্রকাশ পায় এবং তার মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। তদুপরি ইউসুফ আলাইহিস সালাম শুধু স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেই ক্ষান্ত হননি; বরং এর সাথে একটি বিজ্ঞজনোচিত ও সহানুভূতিমূলক পরামর্শও দিয়েছিলেন যে, প্রথম সাত বছর যে অতিরিক্ত শস্য উৎপন্ন হবে, তা গমের শীষের মধ্যেই সংরক্ষিত রাখতে হবে -যাতে পুরানো হওয়ার পর গমে পোকা না লাগে- অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে যে, শস্য যতদিন শীষের মধ্যে থাকে, ততদিন তাতে পোকা লাগে না। [কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৯) এবং এরপর আসবে এক বছর, সেই বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সেই বছর মানুষ ফলের রস নিঙড়াবে।’ [1]
[1] অর্থাৎ, দুর্ভিক্ষের সাতটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর প্রচুর বৃষ্টি হবে, ফলে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হবে এবং তোমরা আঙ্গুর থেকে তার রস বের করবে, যায়তুন থেকে তেল বের করবে এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে দুধ দোয়াবে। উক্ত ব্যাখ্যার সাথে স্বপ্নের খুব সূক্ষ্ণ সম্পর্ক আছে, যা একমাত্র সেই ব্যক্তিই বুঝতে পারে, যাকে আল্লাহ তাআলা সঠিক বুঝার ক্ষমতা দান করেছেন এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইউসুফ (আঃ)-কে তা প্রদান করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫০. আর রাজা বলল, তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে আস(১)। অতঃপর যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মনিবের কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর, যে নারীরা হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কি! নিশ্চয় আমার রব তাদের ছলনা সম্পর্কে সম্যক অবগত।(২)
(১) ঘটনার গতিধারা দেখে বোঝা যায় যে, এ ব্যক্তি স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে এসেছে এবং বাদশাহকে তা অবহিত করেছে। [কুরতুবী] বাদশাহ বৃত্তান্ত নিশ্চিন্ত ও ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গুণ-গরিমায় মুগ্ধ হয়েছেন। [ইবন কাসীর] কিন্তু কুরআনুল কারীম এসব বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার মনে করেনি। কারণ, এগুলো আপনা থেকেই বোঝা যায়। পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ (وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ) অর্থাৎ বাদশাহ আদেশ দিলেন যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে আসো। অতঃপর বাদশাহর জনৈক দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌছল। [ইবন কাসীর]
(২) ইউসুফ আলাইহিস সালাম দীর্ঘ বন্দীজীবনের দুঃসহ যাতনায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং মনে মনে মুক্তি কামনা করছিলেন। কাজেই বাদশাহর প্রেরিত বার্তাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত হয়ে বের হয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাজের প্রশংসা করে বলেনঃ যদি ইউসুফের মত আমি এত বছর জেল খাটতাম, তারপর আমার কাছে বের হওয়ার আহবান আসত তাহলে আমি সে ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতাম। [বুখারীঃ ৬৯৯২, মুসলিমঃ ১৫১] এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলতঃ নিজেকে নম্রভাবে পেশ করে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এর চেয়ে বেশী কষ্টের শি'আবে আবী তালেবে কাটিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও আপোষ করেননি।
আল্লাহ তা'আলা নবীগণকে যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, তা অন্যের পক্ষে অনুধাবন করাও সম্ভব নয়। ইউসুফ আলাইহিস সালাম দূতকে উত্তর দিলেন, তুমি বাদশাহর কাছে ফিরে গিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস কর যে, আপনার মতে ঐ মহিলাদের ব্যাপারটি কিরূপ, যারা হাত কেটে ফেলেছিল? বাদশাহ এ ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করেন কি না এবং আমাকে দোষী মনে করেন কি না? এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম এখানে হস্তকৰ্তনকারিণী মহিলাদের কথা উল্লেখ করেছেন, আযীয-পত্নীর নাম উল্লেখ করেননি; অথচ সে-ই ছিল ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বলাবাহুল্য, এতে ঐ নিমকের কদর করা হয়েছে, যা ইউসুফ আলাইহিস সালাম আযীযের গৃহে লালিত-পালিত হয়ে খেয়েছিলেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) রাজা বলল, ‘তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এস।’[1] সুতরাং যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল, তখন সে বলল, ‘তুমি তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর, যে মহিলারা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল, তাদের অবস্থা কি?[2] আমার প্রতিপালক তাদের ছলনা সম্বন্ধে সম্যক অবগত।’
[1] উদ্দেশ্য এই যে, যখন সেই ব্যক্তি ব্যাখ্যা নিয়ে বাদশার নিকট গেল ও ব্যাখ্যা বর্ণনা করল, তখন সেই ব্যাখ্যা ও ইউসুফ (আঃ)-এর বলা তদবীর শ্রবণ করে বাদশাহ বড় প্রভাবিত হলেন এবং তিনি অনুমান করলেন যে, এই ব্যক্তি, যাঁকে বেশ কিছুদিন থেকে জেলে রাখা হয়েছে, তিনি অসাধারণ জ্ঞান, মর্যাদা ও উচ্চ যোগ্যতার অধিকারী। সুতরাং বাদশাহ তাঁকে দরবারে উপস্থিত করার জন্য আদেশ দিলেন।
[2] ইউসুফ (আঃ) যখন দেখলেন যে, এখন বাদশাহ সম্মান দিতে প্রস্তুত, তখন তিনি এইভাবে শুধু অনুগ্রহের পাত্র হয়ে জেল থেকে বের হওয়া পছন্দ করলেন না। বরং আপন চরিত্রকে উচ্চ এবং নিজের পবিত্রতাকে সাব্যস্ত করাকে প্রাধান্য দিলেন, যাতে পৃথিবীর সামনে তাঁর নির্মল চরিত্র ও সুউচ্চ মর্যাদা পরিষ্ফুটিত হয়ে যায়। কারণ একজন (দায়ী) আল্লাহর পথে আহবানকারীর জন্য এই পবিত্রতা ও মহান চরিত্র খুবই জরুরী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান