بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ২/ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة আয়াতঃ ২৮৬ মাদানী
২:৩১ وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ کُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ ۙ فَقَالَ اَنۡۢبِـُٔوۡنِیۡ بِاَسۡمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۳۱﴾
و علم ادم الاسماء کلها ثم عرضهم علی الملىکۃ ۙ فقال انۢبونی باسماء هولاء ان کنتم صدقین ۳۱

আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। আল-বায়ান

এবং তিনি আদাম (আ.)-কে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, ‘এ বস্তুগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তাইসিরুল

এবং তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন, অনন্তর তৎসমূদয় মালাইকা/ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপিত করলেন, অতঃপর বললেনঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে আমাকে এ সব বস্তুর নামসমূহ বর্ণনা কর। মুজিবুর রহমান

And He taught Adam the names - all of them. Then He showed them to the angels and said, "Inform Me of the names of these, if you are truthful." Sahih International

৩১. আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা(১) দিলেন, তারপর সেগুলো(২) ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

১. অর্থাৎ আগে যে খলীফা বানানোর ঘোষণা আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং আদম। সাঈদ ইবনে জুবাইর বলেন, আদমকে আদম এজন্যই নাম রাখা হয়েছে, কারণ তাকে যমীনের ‘আদীম’ বা চামড়া অর্থাৎ উপরিভাগ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [তাবাকাতু ইবনে সাদ, তাবারী] আয়াত থেকে আরও সাব্যস্ত হয়েছে যে, আদম আলাইহিস সালাম নবী ছিলেন। তার সাথে আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং কথা বলেছেন। হাদীসে এসেছে, আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! আদম কি নবী ছিলেন? রাসূল বললেন, ‘হ্যাঁ, যার সাথে কথা বলা হয়েছে। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তার মাঝে ও নুহের মাঝে ব্যবধান কেমন? রাসূল বললেন, দশ প্রজন্ম।” [ইবনে হিব্বানঃ ৬১৯০]

প্রশ্ন হতে পারে যে, আদম আলাইহিস সালামকে কি কি নাম শিখানো হয়েছিল? কাতাদাহ বলেন, সবকিছুর নাম শিখিয়েছিলেন, যেমন এটা পাহাড়, এটা সমুদ্র, এটা এই, ওটা সেই, প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। তারপর ফেরেশতাগণের কাছে সেগুলো পেশ করে নাম জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। [তাবারী, ইবনে কাসীর] আর তা ছিল মূলত: সমস্ত সৃষ্টিকুলের নাম এবং তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের নাম। বিখ্যাত শাফাআতের হাদীসেও এসেছে যে, “মানুষজন কিয়ামতের মাঠে যখন কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হবে তখন আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ করে বলবে যে, আপনি সকল মানুষের পিতা, আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সাজদাহ করিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং وَعَلَّمَكَ أسْمَاءَ كُلَّ شَيْءٍ বা সবকিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন।” [বুখারী ৪৪৭৬]

২. ইবনে আব্বাস, কাতাদাহ ও মুজাহিদ বলেন, যে সমস্ত বস্তুর নাম আদমকে শিখিয়ে দিলেন সে বস্তুগুলো ফেরেশতাদের কাছে পেশ করে তাদের কাছে এগুলোর নাম জানতে চাওয়া হলো। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৩১। এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে-সকল ফিরিশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩২ قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۳۲﴾
قالوا سبحنک لا علم لنا الا ما علمتنا انک انت العلیم الحکیم ۳۲

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। আল-বায়ান

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাছাড়া আমাদের কোন জ্ঞানই নেই, নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’। তাইসিরুল

তারা বলেছিলঃ আপনি পরম পবিত্র! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তদ্ব্যতীত আমাদের কোনই জ্ঞান নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

They said, "Exalted are You; we have no knowledge except what You have taught us. Indeed, it is You who is the Knowing, the Wise." Sahih International

৩২. তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান! আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

৩২। তারা বলল, ‘আপনি মহান পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৩ قَالَ یٰۤاٰدَمُ اَنۡۢبِئۡهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۚ فَلَمَّاۤ اَنۡۢبَاَهُمۡ بِاَسۡمَآئِهِمۡ ۙ قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکُمۡ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ غَیۡبَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۙ وَ اَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَ مَا کُنۡتُمۡ تَکۡتُمُوۡنَ ﴿۳۳﴾
قال یادم انۢبىهم باسماىهم ۚ فلما انۢباهم باسماىهم ۙ قال الم اقل لکم انی اعلم غیب السموت و الارض ۙ و اعلم ما تبدون و ما کنتم تکتمون ۳۳

তিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও’। অতঃপর যখন সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল, তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব জানি এবং জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’? আল-বায়ান

তিনি নির্দেশ করলেন, ‘হে আদাম! এ জিনিসগুলোর নাম তাদেরকে জানিয়ে দাও’। যখন সে এ সকল নাম তাদেরকে বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা প্রকাশ কর ও গোপন কর, আমি তাও অবগত’? তাইসিরুল

তিনি বলেছিলেনঃ হে আদম! তুমি তাদেরকে ঐ সকলের নামসমূহ বর্ণনা কর; অতঃপর যখন সে তাদেরকে ঐগুলির নামসমূহ বলেছিল তখন তিনি বলেছিলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয়ই আমি আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় অবগত আছি এবং তোমরা যা প্রকাশ কর ও যা গোপন কর আমি তাও পরিজ্ঞাত আছি? মুজিবুর রহমান

He said, "O Adam, inform them of their names." And when he had informed them of their names, He said, "Did I not tell you that I know the unseen [aspects] of the heavens and the earth? And I know what you reveal and what you have concealed." Sahih International

৩৩. তিনি বললেন, ‘হে আদম! তাদেরকে এসবের নাম বলে দিন। অতঃপর তিনি (আদম) তাদেরকে সেসবের নাম বলে দিলে তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আসমান যমীনের গায়েব জানি। আরও জানি যা তোমরা ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’।(১)

১. কাতাদাহ ও আবুল আলীয়া বলেন, তারা যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, আমাদের রব আল্লাহ্ তা'আলা যা-ই সৃষ্টি করুক না কেন আমরা তার থেকে বেশী জ্ঞানী ও সম্মানিত থাকব। [তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ] তাছাড়া বিভিন্ন সাহাবা থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা যা প্রকাশ করেছিল তা হলো, “আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে”। আর যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, ইবলীস তার মনের মধ্যে যে গর্ব ও অহঙ্কার গোপন করে রাখছিল তা। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৩। তিনি বললেন, ‘হে আদম! ওদেরকে (ফিরিশতাদেরকে) এদের (এ সকলের) নাম বলে দাও।’ অতঃপর যখন সে তাদেরকে সে-সবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (1)

(1) আসমা তথা নামসমূহ বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিস-পত্রের নামসমূহ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ যা মহান আল্লাহ 'ইলহাম' 'ইলক্বা' (অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করা)র মাধ্যমে আদম (আঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন আদম (আঃ)-কে ঐ জিনিসগুলোর নাম বলতে বলা হল, তখন তিনি সত্বর তা বলে দিলেন। অথচ ফিরিশতাগণ তা পারেননি। এইভাবে আল্লাহ তাআলা প্রথমতঃ ফিরিশতাদের সামনে আদম সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করলেন। দ্বিতীয়তঃ দুনিয়ার নিয়ম-নীতি পরিচালনার জন্য জ্ঞানের কত গুরুত্ব এবং তার কত ফযীলত ও মর্যাদা তা বর্ণনা করে দিলেন। যখন ফিরিশতাদের সামনে (আদম সৃষ্টির) যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন তাঁরা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি যে অতি সল্প তা স্বীকার করে নিলেন। আর ফিরিশতাদের এই স্বীকৃতি দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা একমাত্র আল্লাহর সত্তা। তাঁর বিশিষ্ট বান্দাদের কেবল ততটাই জ্ঞান থাকে, যতটা মহান আল্লাহ তাঁদেরকে দান করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৪ وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۳۴﴾
و اذ قلنا للملىکۃ اسجدوا لادم فسجدوا الا ابلیس ابی و استکبر ٭۫ و کان من الکفرین ۳۴

আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। আল-বায়ান

যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদামকে সাজদাহ কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সাজদাহ করল, সে অমান্য করল ও অহঙ্কার করল, কাজেই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। তাইসিরুল

এবং যখন আমি মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সাজদাহ কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলে সাজদাহ করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। মুজিবুর রহমান

And [mention] when We said to the angels, "Prostrate before Adam"; so they prostrated, except for Iblees. He refused and was arrogant and became of the disbelievers. Sahih International

৩৪. আর স্মরণ করুন, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর(১), তখন ইবলিস(২) ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল(৩)। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।(৪)

১. এ আয়াতে বাহ্যতঃ যে কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা এই যে, আদম 'আলাইহিস সালামকে সিজদা করার হুকুম ফেরেশতাদেরকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে যখন এ কথা বলা হলো যে, ইবলীস ব্যতীত সব ফেরেশতাই সিজদা করলেন, তখন তাতে প্রমাণিত হলো যে, সিজদার নির্দেশ ইবলিসের প্রতিও ছিল। কিন্তু নির্দেশ প্রদান করতে গিয়ে শুধু ফেরেশতাগণের উল্লেখ এ জন্য করা হলো যে, তারাই ছিল সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। যখন তাদেরকে আদম 'আলাইহিস সালাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হলো, তাতে ইবলিস অতি উত্তম রূপে এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত বলে জানা গেল। অথবা সে যেহেতু ফেরেশতাদের দলের মধ্যেই অবস্থান করছিল তখন তাকে অবশ্যই নির্দেশ পালন করতে হত। সে নিজেকে নির্দেশের বাইরে মনে করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। শুধুমাত্র তার গর্ব ও অহঙ্কারই তাকে তা করতে বাধা দিচ্ছিল। [ইবনে কাসীর]

এ আয়াতে আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করতে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা ইউসুফ-এ ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পিতা-মাতা ও ভাইগণ মিশর পৌছার পর ইউসুফকে সিজদা করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে।

এটা সুস্পষ্ট যে, এ সিজদা ইবাদাতের উদ্দেশ্যে হতে পারে না। কেননা, আল্লাহ ব্যতীত অপরের ইবাদাত শির্ক ও কুফরী। কোন কালে কোন শরীআতে এরূপ কাজের বৈধতার কোন সম্ভাবনাই থাকতে পারে না। সুতরাং এর অর্থ এছাড়া অন্য কোন কিছুই হতে পারে না যে, প্রাচীনকালের সিজদা আমাদের কালের সালাম, মুসাফাহা, মু'আনাকা, হাতে চুমো খাওয়া এবং সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সমার্থক ও সমতুল্য ছিল। ইমাম জাসসাস আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববতী নবীগণের শরীআতে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সিজদা করা বৈধ ছিল। শরীআতে মুহাম্মদীতে তা রহিত হয়ে গেছে। বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি হিসেবে এখন শুধু সালাম ও মুসাফাহার অনুমতি রয়েছে। রুকূ’সিজদা এবং সালাতের মত করে হাত বেঁধে কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানোকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। [আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস]

এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, সিজদায়ে তাজিমী বা সম্মানসূচক সিজদার বৈধতার প্রমাণ তো কুরআনুল কারীমের উল্লেখিত আয়াতসমূহে পাওয়া যায়, কিন্তু তা রহিত হওয়ার দলীল কি? উত্তর এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদীস দ্বারা সিজদায়ে তাজিমী হারাম বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি আমি আল্লাহ্ তাআলা বৃহৎ অধিকারের কারণে সিজদা করার জন্য স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম, কিন্তু এই শরীআতে সিজদায়ে-তাজিমী সম্পূর্ণ হারাম বলে কাউকে সিজদা করা কারো পক্ষে জায়েয নয়। [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/১৫৮]

২. ابليس ‘ইবলিস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে চরম হতাশ। আর পারিভাষিক অর্থে এমন একটি জিনকে ইবলিস বলা হয় যে আল্লাহর হুকুমের নাফরমানী করে আদম ও আদম-সন্তানদের অনুগত ও তাদের জন্য বিজিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করার ও কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ভুল পথে চলার প্রেরণা দান করার জন্য সে আল্লাহর কাছে সময় ও সুযোগ প্রার্থনা করেছিল। আসলে শয়তান ও ইবলিস মানুষের মত একটি কায়াসম্পন্ন প্রাণীসত্তা। তাছাড়া সে ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এ ভুল ধারণাও কারো না থাকা উচিত। কারণ পরবর্তী আলোচনাগুলোতে কুরআন নিজেই তার জিনদের অন্তর্ভুক্ত থাকার এবং ফেরেশতাদের থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য পরিবেশন করেছে।

৩. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকারও অবশিষ্ট থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [আবুদাউদ: ৪০৯১] আর ইবলীসের মন ছিল গর্ব ও অহঙ্কারে পরিপূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর সমীপ থেকে দূরিভূত হওয়াই ছিল তার জন্য যুক্তিযুক্ত শাস্তি।

৪. সুদ্দী বলেন, সে ঐ সমস্ত কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল যাদেরকে আল্লাহ তখনও সৃষ্টি করেননি। যারা তার পরে কাফের হবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল। মুহাম্মাদ ইবনে কাব আল-কুরাযী বলেন, আল্লাহ ইবলীসকে কুফর ও পথভ্রষ্টতার উপরই সৃষ্টি করেছেন, তারপর সে ফেরেশতাদের আমল করলেও পরবর্তীতে যে কুফরির উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে তার দিকেই ফিরে গেল। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৪। যখন ফিরিশতাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সিজদাহ কর।’ (1) তখন সকলেই সিজদাহ করল; কিন্তু ইবলীস সিজদাহ করল না; সে অমান্য করল (2) ও অহংকার প্রদর্শন করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল।(3)

(1) জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত হওয়ার পর আদম (আঃ) এই দ্বিতীয় সম্মান লাভ করেন। সিজদার অর্থঃ নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করা। আর তার সর্বশেষ পর্যায় হল, মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দেওয়া। (ক্বুরতুবী) এই সিজদা ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য জায়েয নয়। নবী করীম (সাঃ)-এর প্রসিদ্ধ উক্তি হল, যদি (আল্লাহ ব্যতীত) অন্য কারো জন্য সিজদা করা জায়েয হত, তাহলে আমি মহিলাকে নির্দেশ দিতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে। তিরমিযী ১০৭৯নং) তবে ফিরিশ্তাগণ আল্লাহর নির্দেশে আদম (আঃ)-কে যে সিজদা করেছিলেন এবং যে সিজদা দ্বারা ফিরিশ্তাদের সামনে তাঁর (আদম)এর সম্মান ও ফযীলত প্রকাশ করা হয়েছিল, সে সিজদা ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে; ইবাদতের ভিত্তিতে নয়। এখন এই সম্মান প্রদর্শনের জন্যও কাউকে সিজদা করা যাবে না। (যেহেতু এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ নেই।)

(2) ইবলীস সিজদা করতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়। ইবলীস ক্বুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী জ্বিন (জাতিভুক্ত বড় আবেদ) ছিল। মহান আল্লাহ তার সম্মানার্থে ফিরিশ্তাদের মধ্যে তাকে শামিল করে রেখেছিলেন। এই জন্য আল্লাহর ব্যাপক নির্দেশে তার পক্ষেও সিজদা করা অত্যাবশ্যক ছিল। কিন্তু সে হিংসা ও অহংকারবশতঃ সিজদা করতে অস্বীকার করল। বলা বাহুল্য, এই হিংসা ও অহংকার এমন পাপ যা মানবতার দুনিয়ায় সর্বপ্রথম সম্পাদিত হয়েছে এবং এর সম্পাদনকারী ছিল ইবলীস।

(3) অর্থাৎ, আল্লাহর ইলম ও তকদীর নির্ধারণে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৫ وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۳۵﴾
و قلنا یادم اسکن انت و زوجک الجنۃ و کلا منها رغدا حیث شىتما و لا تقربا هذه الشجرۃ فتکونا من الظلمین ۳۵

আর আমি বললাম, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আল-বায়ান

আমি বললাম, ‘হে আদাম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেখানে যা ইচ্ছে খাও, কিন্তু এই গাছের নিকটে যেয়ো না, গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের মধ্যে শামিল হবে’। তাইসিরুল

এবং আমি বললামঃ হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং তা হতে যা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর; কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়োনা, তাহলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। মুজিবুর রহমান

And We said, "O Adam, dwell, you and your wife, in Paradise and eat therefrom in [ease and] abundance from wherever you will. But do not approach this tree, lest you be among the wrongdoers." Sahih International

৩৫. আর আমরা বললাম, 'হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী(১) জান্নাতে বসবাস করুন এবং যেখান থেকে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করুন, কিন্তু এই গাছটির কাছে যাবেন না(২); তাহলে আপনারা হবে যালিমদের(৩) অন্তর্ভুক্ত।

১. কুরআনের বাকরীতি দ্বারা বোঝা যায় যে, আদম আলাইহিস সালাম এর জান্নাতে প্রবেশের আগেই হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা ইবলীসকে অভিশপ্ত করার পর আদমের প্রতি মনোনিবেশ করলেন। আদম আলাইহিস সালামকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করা হল এবং তার বাম পাঁজর থেকে একখানা হাড় নেয়া হলো। আর সে স্থানে গোশত সংযোজন করা হলো। তখনও আদম ঘুমিয়ে ছিলেন। তখন হাড় থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হল এবং তাকে যথাযথ রূপ দান করা হল যেন আদম তার সাহচর্যে পরিতৃপ্ত থাকেন। যখন তন্দ্রাচ্ছন্নতা কাটল এবং নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলেন, তখন হাওয়াকে তার পাশে বসা দেখলেন। সাথে সাথে তিনি বললেন, আমার গোশত, আমার রক্ত ও আমার স্ত্রী [ইবনে কাসীর]

অন্য বর্ণনায় ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস এবং অন্যান্য সাহাবী থেকে এসেছে, ইবলীসকে জান্নাত থেকে বের করা হল আর আদমকে জান্নাতে বসবাসের সুযোগ দেয়া হল। কিন্তু তিনি জান্নাতে একাকীত্ব অনুভব করতে থাকলেন। তারপর তার ঘুম আসল, সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তার মাথার পাশে একজন মহিলা বসে আছেন, যাকে তার পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কে? বললেন, মহিলা। আদম বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? বললেন, যাতে তুমি আমার কাছে প্রশান্তি লাভ কর। তখন ফেরেশতাগণ তাকে প্রশ্ন করলেন: হে আদম! এর নাম কি? আদম বললেন, হাওয়া। তারা বলল, তাকে হাওয়া কেন নাম দেয়া হল? তিনি বললেন, কেননা তাকে জীবিত বস্তু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [ইবনে কাসীর]

এর সমর্থনে আমরা একটি হাদীস পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আমার উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা, তাদেরকে পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের সবচেয়ে বাঁকা অংশ হচ্ছে, উপরিভাগ। তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও তবে তাকে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি ছেড়ে দাও, সব সময় বাঁকাই থেকে যাবে। সুতরাং নারীদের ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ কর। [বুখারী ৩৩৩১, মুসলিম: ১৪৬৮] হাফেজ ইবনে হাজার এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে ইসহাক থেকে উপরোক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেন।

২. কোন বিশেষ গাছের প্রতি ইংগিত করে বলা হয়েছিল যে, এর ধারে কাছেও যেও না। প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল, সে গাছের ফল না খাওয়া। কিন্তু তাকীদের জন্য বলা হয়েছে, কাছেও যেও না। সেটি কি গাছ ছিল, কুরআনুল কারীমে তা উল্লেখ করা হয়নি। কোন নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারাও তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে এ কথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে বৃক্ষের ফল না খাওয়া ছিল এ নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত উদ্দেশ্য। কিন্তু সাবধানতা-সূচক নির্দেশ ছিল এই যে, সে গাছের কাছেও যেও না। এর দ্বারাই ফিকাহশাস্ত্রের কারণ-উপকরণের নিষিদ্ধতার মাসআলাটি প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ কোন বস্তু নিজস্বভাবে অবৈধ বা নিষিদ্ধ না হলেও যখন তাতে এমন আশংকা থাকে যে, ঐ বস্তু গ্রহণ করলে অন্য কোন হারাম ও অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, তখন ঐ বৈধ বস্তুও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। যেমন, গাছের কাছে যাওয়া তার ফল-ফসল খাওয়ার কারণও হতে পারতো। সেজন্য তাও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। একে ফিকাহশাস্ত্রের পরিভাষায় উপকরণের নিষিদ্ধতা বলা হয়।

৩. যালিম শব্দটি গভীর অর্থবোধক। ‘যুলুম’ বলা হয় অধিকার হরণকে। যে ব্যক্তি কারো অধিকার হরণ করে সে যালিম। যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম পালন করে না, তার নাফরমানি করে সে আসলে তিনটি বড় বড় মৌলিক অধিকার হরণ করে। প্রথমতঃ সে আল্লাহর অধিকার হরণ করে। কারণ আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে, এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর অধিকার। দ্বিতীয়তঃ এ নাফরমানি করতে গিয়ে সে যে সমস্ত জিনিষ ব্যবহার করে তাদের সবার অধিকার সে হরণ করে। তার দেহের অংগপ্রত্যংগ, স্নায়ুমণ্ডলী, তার সাথে বসবাসকারী সমাজের অন্যান্য লোক, তার ইচ্ছা ও সংকল্প পূর্ণ করার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ফেরেশতাগণ এবং যে জিনিষগুলো সে তার কাজে ব্যবহার করে-এদের সবার তার উপর অধিকার ছিল, এদেরকে কেবলমাত্র এদের মালিকের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু যখন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে তাদের উপর নিজের কর্তৃত্ব ব্যবহার করে তখন সে আসলে তাদের উপর যুলুম করে। তৃতীয়তঃ তার নিজের অধিকার হরণ করে। কারণ তার উপর তার আপন সত্তাকে ধ্বংস থেকে বাচাবার অধিকার আছে। কিন্তু নাফরমানি করে যখন সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি লাভের অধিকারী করে তখন সে আসলে ব্যক্তি সত্তার উপর যুলুম করে। এসব কারণে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ‘গোনাহ’ শব্দটির জন্য যুলুম এবং ‘গোনাহগার’ শব্দের জন্য যালিম ব্যবহার করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৫। আমি বললাম, ‘হে আদম! তুমি তোমার স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস কর (1) এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না; (2) হলে তোমরা অনাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’

(1) এটা আদম (আঃ)-এর তৃতীয় ফযীলত। জান্নাতকে তাঁর জন্য বাসস্থান বানানো হয়েছিল।

(2) এই গাছটি কিসের গাছ ছিল? ক্বুরআন ও হাদীসে এর কোন পরিষ্কার বর্ণনা নেই। তা গমের গাছ বলে যে লোকমাঝে প্রসিদ্ধি আছে তার কোন ভিত্তি নেই। পক্ষান্তরে আমাদের গাছের নাম জানার কোন প্রয়োজন নেই এবং তাতে কোন লাভও নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৬ فَاَزَلَّهُمَا الشَّیۡطٰنُ عَنۡهَا فَاَخۡرَجَهُمَا مِمَّا کَانَا فِیۡهِ ۪ وَ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ وَ لَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّ مَتَاعٌ اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۳۶﴾
فازلهما الشیطن عنها فاخرجهما مما کانا فیه و قلنا اهبطوا بعضکم لبعض عدو ۚ و لکم فی الارض مستقر و متاع الی حین ۳۶

অতঃপর শয়তান তাদেরকে জান্নাত থেকে স্খলিত করল। এবং তারা যাতে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল, আর আমি বললাম, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য যমীনে রয়েছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাস ও ভোগ-উপকরণ’। আল-বায়ান

কিন্তু শয়ত্বান তাত্থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দু’জন যেখানে ছিল, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল; আমি বললাম, ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে’। তাইসিরুল

অনন্তর শাইতান তাদের উভয়কে সেখান হতে বিচ্যুত করল, অতঃপর তারা উভয়ে যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বর্হিগত করল; এবং আমি বললামঃ তোমরা নীচে নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু; এবং পৃথিবীতেই রয়েছে তোমাদের জন্য এক নির্দিষ্ট কালের অবস্থিতি ও ভোগ সম্পদ। মুজিবুর রহমান

But Satan caused them to slip out of it and removed them from that [condition] in which they had been. And We said, "Go down, [all of you], as enemies to one another, and you will have upon the earth a place of settlement and provision for a time." Sahih International

৩৬. অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো(১) এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বের করল(২)। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শক্র রূপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে।

১. زَلَّةٌ শব্দের অর্থ বিচ্যুতি বা পদস্খলন। অর্থাৎ শয়তান আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামকে পদস্থলিত করেছিল বা তাদের বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। কুরআনের এসব শব্দে পরিস্কার এ কথা বোঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম কর্তৃক আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম লংঘন সাধারণ পাপীদের মত ছিল না, বরং শয়তানের প্রতারণায় প্রতারিত হয়েই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পরিণামে যে গাছের ফল নিষিদ্ধ ছিল, তা খেয়ে বসলেন। এ বর্ণনার দ্বারা বোঝা গেল যে, আদম 'আলাইহিস সালামকে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ ব্যাপারেও সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যে, শয়তান তোমাদের শত্রু। কাজেই সে যেন তোমাদেরকে পাপে লিপ্ত করে না দেয়। এরপরও আদম 'আলাইহিস সালাম এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য। অথচ নবীগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে, এখানে কয়েকটি ব্যাপারে আলেমদের ইজমা তথা ঐক্যমত সংঘটিত হয়েছেঃ

১) নবীগণ উম্মতের নিকট আল্লাহর নির্দেশ পৌছানোর ব্যাপারে যাবতীয় ভুল-ত্রুটি বা পাপ হতে মুক্ত।

২) অনুরূপভাবে মর্যাদাহানিকর নিম্নমানের কর্মকাণ্ড থেকেও মুক্ত।

৩) তাদের দ্বারা মর্যাদাহানিকর নয় এমন সগীরা গোনাহ হতে পারে কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কোন প্রকার গোনাহ বা ভুলের উপর অবস্থান করতে দেননা। অর্থাৎ তাদের দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাদেরকে সাবধান করা হয়, যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন করে নেন। ফলে তাদের মর্যাদা পূর্বের চেয়ে আরও বেশী বৃদ্ধি পায়।

২. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুম'আর দিন। এতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এতেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এ দিনই তাকে জান্নাতে থেকে বের করা হয়েছে।” [মুসলিম: ৮৫৪] এখানে এ বিতর্ক অনাবশ্যক যে, শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম 'আলাইহিস সালামকে প্রতারিত করার জন্য কিভাবে আবার সেখানে প্রবেশ করলো? কারণ, শয়তানের প্রবঞ্চনার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা শয়তান ও জীন জাতিকে দূর থেকেও প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৬। কিন্তু শয়তান তা হতে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বহিষ্কার করল। (1) আমি বললাম, ‘তোমরা (এখান হতে) নেমে যাও। তোমরা একে অন্যের শত্রু। (2) পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের অবস্থান ও জীবিকা রইল।

(1) শয়তান জান্নাতে প্রবেশ করে সরাসরি তাঁদেরকে পদস্খলিত করে, নাকি প্ররোচনার মাধ্যমে --এ ব্যাপারে কোন পরিষ্কার বর্ণনা নেই। তবে এ কথা পরিষ্কার যে, যেভাবে সিজদা করার নির্দেশের সময় আল্লাহর আদেশের মোকাবেলায় সে কিয়াস (আমি আদম থেকে উত্তম এই অনুমান) করে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল, অনুরূপ এই সময় আল্লাহর নির্দেশ তোমরা গাছের কাছে যাবে না -এর তাবীল (অপব্যাখ্যা) করে আদম (আঃ)-কে চক্রান্তে ফাঁসাতে সে সফলকাম হয়। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা আ'রাফ (১৯নং আয়াতে) আসবে। আল্লাহর নির্দেশের মোকাবেলায় অনুমান এবং ক্বুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট উক্তির অপব্যাখ্যা সর্বপ্রথম শয়তানই করেছিল। -নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক-।

(2) অর্থাৎ, আদম (আলাইহিসসালাম) এবং শয়তান। অথবা এর অর্থ হল, আদম-সন্তান আপসে একে অপরের শত্রু।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৭ فَتَلَقّٰۤی اٰدَمُ مِنۡ رَّبِّهٖ کَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَیۡهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۳۷﴾
فتلقی ادم من ربهٖ کلمت فتاب علیه انهٗ هو التواب الرحیم ۳۷

অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী পেল, ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী, অতি দয়ালু। আল-বায়ান

তারপর আদাম (আ.) তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল, অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

অতঃপর আদম স্বীয় রাব্ব হতে কতিপয় বাণী শিক্ষা লাভ করল, আল্লাহ তখন তার প্রতি কৃপা দৃষ্টি দিলেন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়! মুজিবুর রহমান

Then Adam received from his Lord [some] words, and He accepted his repentance. Indeed, it is He who is the Accepting of repentance, the Merciful. Sahih International

৩৭. তারপর আদম(১) তার রবের কাছ থেকে কিছু বাণী পেলেন(২)। অতঃপর আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন(৩)। নিশ্চয় তিনিই তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

১. আদম 'আলাইহিস সালাম চরমভাবে বিচলিত হলেন। মহান আল্লাহ অন্তর্যামী এবং অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাময়। এ করুণ অবস্থা দেখে আল্লাহ্ তা'আলা নিজেই ক্ষমা প্রার্থনারীতি সম্বলিত কয়েকটি বচন তাদেরকে শিখিয়ে দিলেন। তারই বর্ণনা এ আয়াতসমূহে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, আদম 'আলাইহিস সালাম স্বীয় প্রভুর কাছ থেকে কয়েকটি শব্দ লাভ করলেন। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি করুণা করলেন। অর্থাৎ তাদের তাওবা গ্রহণ করে নিলেন। নিঃসন্দেহে তিনি মহা ক্ষমাশীল এবং অতি মেহেরবান। কিন্তু যেহেতু পৃথিবীতে আগমনের মধ্যে আরও অনেক তাৎপর্য ও কল্যাণ নিহিত ছিল - যেমন, তাদের বংশধরদের মধ্য থেকে ফেরেশতা ও জ্বিন জাতির মাঝামাঝি এক নতুন জাতি - মানব জাতির আবির্ভাব ঘটা, তাদেরকে এক ধরনের কর্ম স্বাধীনতা দিয়ে তাদের প্রতি শর’য়ী বিধান প্রয়োগের যোগ্য করে গড়ে তোলা এবং অপরাধীর শাস্তি বিধান, শরীআতী আইন ও নির্দেশাবলী প্রবর্তন। এই নতুন জাতি উন্নতি সাধন করে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবে।

২. যেসব বাক্য আদম 'আলাইহিস সালামকে তাওবার উদ্দেশ্যে বলে দেয়া হয়েছিল, তা কি ছিল? এ সম্পর্কে মুফাসসির সাহাবাগণের কয়েক ধরনের বর্ণনা রয়েছে। ইবনে আব্বাসের অভিমতই এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, যা কুরআনুল কারীমের অন্যত্র বর্ণনা (رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ) “হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নিজেদের উপর অত্যাচার করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পরিগণিত হয়ে যাব [সূরা আল-আরাফঃ ২৩] আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে যখন তাদেরকে তাওবার এই বাক্যগুলো শিখিয়ে দেয়া হলো, তখন আদম 'আলাইহিস সালাম যথোচিত মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে তা গ্রহণ করলেন।

৩. (তাওবা) এর প্রকৃত অর্থ, ফিরে আসা। যখন তাওবার সম্বন্ধ মানুষের সংগে হয়, তখন তার অর্থ হবে তিনটি বস্তুর সমষ্টি:- এক কৃত পাপকে পাপ মনে করে সেজন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। দুই পাপ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা। তিন, ভবিষ্যতে আবার এরূপ না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। আর যদি পাপ বান্দার হকের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তা ফেরৎ দেয়া বা তার থেকে মাফ নিয়ে নেয়া।

এ বিষয়গুলোর যেকোন একটির অভাব থাকলে তাওবা হবে না। সুতরাং মৌখিকভাবে “আল্লাহ তাওবা” বা অনুরূপ শব্দ উচ্চারণ করা নাজাত লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। আয়াতে বর্ণিত (فَتَابَ عَلَيْهِ) এর মধ্যে তাওবার সম্বন্ধ আল্লাহর সাথে। এর অর্থ তাওবা গ্রহণ করা। অর্থাৎ আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। এ আয়াতের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তাওবা গ্রহণের অধিকারী আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া আর কেউ নয়। ইয়াহূদী ও নাসারাগণ এই ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুলে পড়ে আছে। তারা পাদ্রী-পুরোহিতদের কাছে কিছু হাদিয়া উপঢৌকনের বিনিময়ে পাপ মোচন করিয়ে নেয় এবং মনে করে যে, তারা মাফ করে দিলেই আল্লাহর নিকটও মাফ হয়ে যায়। বর্তমানে বহু মুসলিমও এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করে। তারা কোন কোন পীরের কাছে তাওবা করে এবং মনে করে যে, পীর মাধ্যম হয়ে আল্লাহর কাছ থেকে তার পাপ মোচন করিয়ে নেবেন। অথচ কোন পীর বা আলেম কারো পাপ মোচন করিয়ে দিতে পারেন না।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৭। অতঃপর আদম তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল। (1) আল্লাহ তার তওবা (অনুশোচনা) কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

(1) আদম (আঃ) লজ্জিত অবস্থায় দুনিয়ায় আগমন করে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনায় মনোনিবেশ করলেন। এই সময় মহান আল্লাহ তাঁর দিক-নির্দেশনা ও সহযোগিতা করে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার সেই বাক্যগুলো শিখিয়ে দিলেন, যা সূরা আ'রাফে (২৩নং আয়াতে) উল্লেখ করা হয়েছে। {قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا...} কেউ কেউ এখানে একটি জাল হাদীসের আশ্রয় নিয়ে বলেন যে, আদম (আঃ) আল্লাহর আরশের উপরে "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" লেখা দেখেন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অসীলা গ্রহণ করে দুআ করেন; ফলে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেন। এটা ভিত্তিহীন বর্ণনা এবং ক্বুরআনের বর্ণনারও পরিপন্থী। এ ছাড়া এটা আল্লাহর বর্ণিত তরীকারও বিপরীত। প্রত্যেক নবী সব সময় সরাসরি আল্লাহর নিকট দুআ করেছেন। অন্য কোন নবী ও অলীর মাধ্যম ও অসীলা ধরেননি। কাজেই নবী করীম (সাঃ) সহ সকল নবীদের দুআ করার নিয়ম এটাই ছিল যে, তাঁরা বিনা অসীলা ও মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে সরাসরি দুআ করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৮ قُلۡنَا اهۡبِطُوۡا مِنۡهَا جَمِیۡعًا ۚ فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ هُدًی فَمَنۡ تَبِعَ هُدَایَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۳۸﴾
قلنا اهبطوا منها جمیعا ۚ فاما یاتینکم منی هدی فمن تبع هدای فلا خوف علیهم و لا هم یحزنون ۳۸

আমি বললাম,‘তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’। আল-বায়ান

আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এখান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার নিকট হতে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসবে তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’। তাইসিরুল

আমি বললামঃ তোমরা সবাই এখান থেকে নীচে নেমে যাও; অনন্তর আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট যে উপদেশ উপস্থিত হবে-যারা আমার সেই উপদেশ অনুসরণ করবে বস্তুতঃ তাদের কোনই ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা। মুজিবুর রহমান

We said, "Go down from it, all of you. And when guidance comes to you from Me, whoever follows My guidance - there will be no fear concerning them, nor will they grieve. Sahih International

৩৮. আমরা বললাম, তোমরা সকলে এখান থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট কোন হিদায়াত আসবে তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না(১)”।

১. خَوْفٌ এর অর্থ আগত দুঃখ-কষ্টজনিত আশংকার নাম। আর حُزْنٌ বলা হয়, কোন উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার কারণে সৃষ্ট গ্রানি ও দুশ্চিন্তাকে লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে যে, এ দুটি শব্দে যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে এমনভাবে কেন্দ্রিভূত করে দেয়া হয়েছে যে, স্বাচ্ছন্দ্যের একবিন্দুও এর বাইরে নেই। এ আয়াতে আসমানী হিদায়াতের অনুসারীগণের জন্য দু’ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমতঃ তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং দ্বিতীয়তঃ তারা চিন্তাগ্রস্ত হবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৮। আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৩৯ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۳۹﴾
و الذین کفروا و کذبوا بایتنا اولىک اصحب النار ۚ هم فیها خلدون ۳۹

আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আল-বায়ান

আর যারা কুফরী করবে ও আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাইসিরুল

আর যারা অবিশ্বাস করবে এবং আমার নিদর্শনসমূহে অসত্যারোপ করবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী - তন্মধ্যে তারা সদা অবস্থান করবে। মুজিবুর রহমান

And those who disbelieve and deny Our signs - those will be companions of the Fire; they will abide therein eternally." Sahih International

৩৯. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে(১) মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।(২)

১. আরবীতে “আয়াত” এর আসল মানে হচ্ছে নিশানী বা আলামত। এই নিশানী কোন জিনিসের পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ দেয়। কুরআনে এই শব্দটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথাও এর অর্থ হয়েছে নিছক আলামত বা নিশানী। কোথাও প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের নিদর্শনসমূহকে বলা হয়েছে আল্লাহর আয়াত। কারণ এ বিশ্ব জাহানের অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি বস্তুই তার বাহ্যিক কাঠামোর অভ্যন্তরে নিহিত সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করছে। কোথাও নবী-রাসূলগণ যেসব মু'জিযা দেখিয়েছেন সেগুলোকে বলা হয়েছে আল্লাহর আয়াত। কারণ এ নবী-রাসূলগণ যে এ বিশ্ব জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রভূর প্রতিনিধি এ মু'জিযাগুলো ছিল আসলে তারই প্রমাণ ও আলামত।

কোথাও কুরআনের বাক্যগুলোকে আয়াত বলা হয়েছে। কারণ, এ বাক্যগুলো কেবল সত্যের দিকে পরিচালিত করেই ক্ষান্ত নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কোন কিতাবই এসেছে, তার কেবল বিষয়বস্তুই নয়, শব্দ, বর্ণনাভঙ্গি ও বাক্য গঠনরীতির মধ্যেও এ গ্রন্থের মহান মহিমান্বিত রচয়িতার অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যের নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। কোথায় ‘আয়াত’ শব্দটির কোন অর্থ গ্রহণ করতে হবে তা বাক্যের পূর্বাপর আলোচনা থেকে সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে জানা যায়।

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আর যারা জাহান্নামবাসী হিসেবে সেখানকার অধিবাসী হবে, তারা সেখানে মরবেও না বাঁচবেও না” [মুসলিম: ১৮৫] অর্থাৎ কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা সেখানে স্থায়ী হবে।  সুতরাং তাদের জাহান্নামও স্থায়ী।

তাফসীরে জাকারিয়া

৩৯। আর যারা (কাফের) অবিশ্বাস করে ও আমার নিদর্শনকে মিথ্যাজ্ঞান করে, তারাই অগ্নিকুণ্ডবাসী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’[1]

(1) দুআ কবুল করা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তাঁদেরকে পুনরায় জান্নাতে আবাদ না করে দুনিয়াতে থেকেই জান্নাত লাভের চেষ্টা করতে বলেন। আর আদম (আঃ)-এর মাধ্যমে সকল আদম-সন্তানকে জান্নাত লাভের পথ বলে দেওয়া হচ্ছে যে, আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম)-এর মাধ্যমে আমার হিদায়াত (জীবন পরিচালনার বিধি-বিধান) তোমাদের নিকট আসবে। সুতরাং যে তা গ্রহণ করবে, সে জান্নাতের অধিকারী হবে। আর যে তা গ্রহণ করবে না, সে আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হবে।

তাদের কোন ভয় নেই -এর সম্পর্ক আখেরাতের সাথে। অর্থাৎ, আখেরাত সংক্রান্ত যে বিষয়ই তাদের সামনে আসবে, তাতে তাদের কোন ভয় থাকবে না। আর তারা দুঃখিত হবে না -এর সম্পর্ক দুনিয়ার সাথে। অর্থাৎ, দুনিয়া সংক্রান্ত যা কিছু তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে, সে ব্যাপারে তারা দুঃখিত হবে না। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,

{فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى} (طـه: (১২৩)

যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে (দুনিয়াতে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (আখেরাতে) দুঃখ-কষ্টও পাবে না। (ইবনে কাসীর) অর্থাৎ, {لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُوْنَ} এই মর্যাদা সকল সত্যবাদী মুমিন লাভ করবে। এটা কোন এমন মর্যাদা নয় যে, কেবল আল্লাহর অলীরাই তা পাবে। অনুরূপ এই মর্যাদা'র তাৎপর্যও অন্য কিছু নয়, বরং প্রত্যেক মুমিন ও আল্লাহভীরুই আল্লাহর অলী। "আল্লাহর আউলিয়া" কোন ভিন্ন সৃষ্টি নয়। তবে হ্যাঁ, অলীদের মর্যাদা ও দর্জায় তফাৎ থাকতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২:৪০ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتِیَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ وَ اَوۡفُوۡا بِعَهۡدِیۡۤ اُوۡفِ بِعَهۡدِکُمۡ ۚ وَ اِیَّایَ فَارۡهَبُوۡنِ ﴿۴۰﴾
یبنی اسراءیل اذکروا نعمتی التی انعمت علیکم و اوفوا بعهدی اوف بعهدکم ۚ و ایای فارهبون ۴۰

হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার নিআমতকে স্মরণ কর, যে নিআমত আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমাকেই ভয় কর। আল-বায়ান

হে বানী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যদ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর। তাইসিরুল

হে ইসরাঈলী বংশধর! আমি তোমাদেরকে যে সুখ সম্পদ দান করেছি তা স্মরণ কর এবং আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর - আমিও তোমাদের প্রতি কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। মুজিবুর রহমান

O Children of Israel, remember My favor which I have bestowed upon you and fulfill My covenant [upon you] that I will fulfill your covenant [from Me], and be afraid of [only] Me. Sahih International

৪০. হে ইসরাঈল(১) বংশধরগণ(২) তোমরা আমার সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি(৩) এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর(৪), আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।

১. ইসরাঈল ইয়াকুব আলাইহিস সালামের অপর নাম। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর দুটি নাম রয়েছে, ইয়াকুব ও ইসরাঈল।

২. এ সূরার চল্লিশতম আয়াত থেকে আরম্ভ করে একশত তেইশতম আয়াত পর্যন্ত শুধু আসমানী গ্রন্থে বিশ্বাসী আহলে-কিতাবদেরকে বিশেষভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রথমে তাদের বংশগত কৌলিন্য, বিশ্বের বুকে তাদের যশ-খ্যাতি, মান-মর্যাদা এবং তাদের প্রতি আল্লাহ্ তা'আলার অগণিত অনুকম্পাধারার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের পদচ্যুতি ও দুস্কৃতির জন্য সাবধান করে দেয়া হয়েছে এবং সঠিক পথের দিকে আহবান করা হয়েছে। প্রথম সাত আয়াতে এসব বিষয়েরই আলোচনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে প্রথম তিন আয়াতে ঈমানের দাওয়াত এবং চার আয়াতে সৎকাজের শিক্ষা ও প্রেরণা রয়েছে। এরপর অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। বিস্তারিত সম্বোধনের সূচনাপর্বে গুরুত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যে (হে ইসরাঈলের বংশধর) শব্দসমষ্টি দ্বারা সংক্ষিপ্ত সম্বোধনের সূচনা হয়েছিল, সমাপ্তিপর্বেও সেগুলোরই পুনরুল্লেখ করা হয়েছে।

৩. বনী ইসরাঈলকে যে সমস্ত নেআমত প্রদান করা হয়েছে তা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, ফেরআউন থেকে নাজাত, সমুদ্রে রাস্তার ব্যবস্থা করে তাদের বের করে আনা, তীহ ময়দানে মেঘ দিয়ে ছায়া প্রদান, মান্না ও সালওয়া নাযিলকরণ, সুমিষ্ট পানির ব্যবস্থা করণ ইত্যাদি। তাছাড়া তাদের হিদায়াতের জন্য অগণিত অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ ও তৎকালীন বিশ্বের সবার উপর শ্ৰেষ্ঠত্ব প্রদানও উল্লেখযোগ্য।

৪. এ আয়াতে ইসরাঈল-বংশধরগণকে সম্বোধন করে এরশাদ হয়েছেঃ “আর তোমরা আমার অঙ্গীকার পূরণ কর।” অর্থাৎ তোমরা আমার সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলে, তা পূরণ কর কাতাদাহ-এর মতে তাওরাতে বর্ণিত সে অংগীকারের কথাই কুরআনের এ আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা ইসরাঈল-বংশধর থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং আমরা তাদের মাঝে থেকে বার জনকে দলপতি নিযুক্ত করে পাঠিয়েছিলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহঃ ১২] সমস্ত রাসূলের উপর ঈমান আনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারই এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। যাদের মধ্যে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এছাড়া সালাত, যাকাত এবং মৌলিক ইবাদতও এ অঙ্গীকারভূক্ত। এ জন্যই ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন যে, এ অঙ্গীকারের মূল অর্থ মুহাম্মাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসরণ।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, অঙ্গীকার ও চুক্তির শর্তাবলী পালন করা অবশ্য কর্তব্য আর তা লংঘন করা হারাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, অঙ্গীকার ভংগকারীদেরকে নির্ধারিত শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে এই শাস্তি দেয়া হবে যে, হাশরের ময়দানে যখন পূর্ববতী ও পরবর্তী সমগ্র মানবজাতি সমবেত হবে, তখন অঙ্গীকার ভংগকারীদের পিছনে নিদর্শনস্বরূপ একটি পতাকা উত্তোলন করে দেয়া হবে এবং যত বড় অঙ্গীকার ভংগ করবে, পতাকাও তত উচু ও বড় হবে। [সহীহ মুসলিম: ১৭৩৮] এভাবে তাদেরকে হাশরের ময়দানে লজ্জিত ও অপমানিত করা হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

৪০। হে বনী ঈস্রাঈল! [1] আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর যার দ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি, এবং আমার সঙ্গে তোমাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করব; এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।

(1) "ইস্রাঈল" (অর্থ আব্দুল্লাহ) ইয়াক্বুব (আঃ)-এর উপাধি। ইয়াহুদীদেরকে বানী ইস্রাঈল - অর্থাৎ ইয়াক্বুব (আঃ)-এর সন্তান বলা হত। কারণ ইয়াক্বুব (আঃ)-এর বারো জন সন্তান ছিল, তা থেকে বারোটি বংশ গঠিত হয় এবং এ­ই বংশসমূহ থেকে বহু নবী ও রসূল হন। ইয়াহুদীদের আরবে বিশেষ মর্যাদা ছিল। কারণ, তারা অতীত ইতিহাস এবং ইলম ও দ্বীন সম্পর্কে অবহিত ছিল। আর এই জন্যই তাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত অতীত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে বলা হচ্ছে যে, তোমরা সেই অঙ্গীকার রক্ষা কর, যা শেষ নবী এবং তাঁর নবুঅতের উপর ঈমান আনার ব্যাপারে তোমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। যদি তোমরা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করো, তাহলে আমিও আমার অঙ্গীকার রক্ষা করে তোমাদের উপর থেকে সেই বোঝা নামিয়ে দেব, যা তোমাদের ভুল-ত্রুটির কারণে শাস্তিস্বরূপ তোমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তোমাদেরকে পুনরায় উন্নতি দান করব। আর আমাকে ভয় করো, কারণ আমি তোমাদেরকে অব্যাহত লাঞ্ছনা ও অধঃপতনের মধ্যে রাখতে পারি, যাতে তোমরা পতিত আছ এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষগণও পতিত ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৮৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 26 27 28 29 পরের পাতা »