بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৭/ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف আয়াতঃ ২০৬ মাক্কী
৭ : ৩১ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَكُمۡ عِنۡدَ كُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ كُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۳۱﴾
یبنی ادم خذوا زینتكم عند كل مسجد و كلوا و اشربوا و لا تسرفوا انهٗ لا یحب المسرفین ﴿۳۱﴾
• হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

-আল-বায়ান

• হে আদাম সন্তান! প্রত্যেক সলাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর, আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না, অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

-তাইসিরুল

• হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর। তবে অপব্যয় ও অমিতাচার করবেনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেননা।

-মুজিবুর রহমান

• O children of Adam, take your adornment at every masjid, and eat and drink, but be not excessive. Indeed, He likes not those who commit excess.

-Sahih International

৩১. হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহন কর।(১) আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না।(২) নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

(১) আয়াতে পোষাককে ‘যীনাত’ বা ‘সাজ-সজ্জা’ শব্দের মাধ্যমে এ জন্যই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, সালাতে শধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করা ছাড়াও সামথ্য অনুযায়ী সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করা শ্ৰেয়। হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতের সময় উত্তম পোষাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি বলতেনঃ 'আল্লাহ্ তা'আলা সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তাই আমি প্রতিপালকের সামনে সুন্দর পোষাক পরে হাজির হই’। যে গুপ্ত-অঙ্গ সর্বাবস্থায় বিশেষতঃ সালাত ও তাওয়াফে আবৃত করা ফরয, তার সীমা কি? কুরআনুল কারীম সংক্ষেপে গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করার নির্দেশ দিয়ে এর বিবরণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পুরুষের গুপ্তাঙ্গ নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের গুপ্তাঙ্গ মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল ছাড়া সমস্ত দেহ।

হাদীসসমূহে এসব বিবরণ বর্ণিত রয়েছে। এ হচ্ছে গুপ্ত অঙ্গের ফরয সম্পর্কিত বিধান। এটি ছাড়া সালাতই হয় না। সালাতে শুধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করাই কাম্য নয়; বরং সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করতেও বলা হয়েছে। যেমন সাদা পোষাক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পোষাকাদির মধ্যে সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা, পোষাকাদির মধ্যে তাই উত্তম পোষাক। আর এতে তোমাদের মৃতদেরকে কাফনও দাও। [আবু দাউদঃ ৩৮৭৮, তিরমিযীঃ ৯৯৪, ইবন মাজাহঃ ১৪৭২]

অনেকে সাজসজ্জার পোষাক পরাকে অহংকারী পোষাক মনে করে থাকে এটা আসলে ঠিক নয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক লোক বললঃ কোন লোক পছন্দ করে তার পোষাক উত্তম হোক, তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূল বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর, সুন্দরকে ভালবাসেন। অহংকার হল, হককে না মানা, মানুষকে অবজ্ঞা করা। [মুসলিমঃ ১৪৭] আবার অহংকার হয় এমন পোষাকও পরা যাবে না যদিও তাতে কারো কারো নিকট বাহ্যিক সুন্দর রয়েছে। যেমনঃ টাখনুর নীচে কাপড় পরা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে অহংকার বশে কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দিবে আল্লাহ তার দিকে তাকবেন না। [বুখারীঃ ৫৭৮৩]

আয়াতের শানে নুযুল হিসেবে এসেছে যে, আরবের মুশরিকরা জাহেলিয়াতে মসজিদে হারামে কাবার তাওয়াফ করার সময় উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করত। এ ব্যাপারে তাদের দর্শন ছিল, যে কাপড় পরে গুণাহ করেছি তা দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না। বিশেষতঃ কুরাইশরা এ বিধিবিধানের প্রবর্তন করে। তারাই শুধু তাওয়াফের জন্য কাপড় দিতে পারবে। এতে করে তারা কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারত। এমনকি মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। শয়তান তাদেরকে এভাবে ইবাদাত করতে উদ্বুদ্ধ করত এবং এ কাজকে তাদের মনে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় কা'বার তাওয়াফ করত আর বলত, কে আমাকে তাওয়াফের কাপড় ধার দেবে? যা তার লজ্জাস্থানে রাখবে। আরও বলতঃ আজ হয় কিছু অংশ প্রকাশ হয়ে পড়বে নয়ত পুরোটাই। আর যা আজ প্রকাশিত হবে তা আর হালাল করব না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়- “তোমরা তোমাদের মাসজিদ তথা ইবাদাতের স্থানে সুন্দর পোষাক পরবে।” [মুসলিমঃ ৩০২৮]

(২) এ আয়াত থেকে একটি মাসআলা এরূপ বুঝা যায় যে, জগতে পানাহারের যত বস্তু রয়েছে সেগুলো সব হালাল ও বৈধ ৷ যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বিশেষ বস্তুর অবৈধতা ও নিষিদ্ধতা শরীআতের কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ প্রত্যেক বস্তুকে হালাল ও বৈধ মনে করা হবে। আয়াতে وَلَا تُسْرِفُوا বলে পানাহারের অনুমতি বরং নির্দেশ থাকার সাথে সাথে অপব্যয় করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আয়াতে ব্যবহৃত إسراف শব্দের অর্থ সীমালংঘন করা। সীমালংঘন কয়েক প্রকারের হতে পারে। (এক) হালালকে অতিক্রম করে হারাম পর্যন্ত পৌছা এবং হারাম বস্তু পানাহার করতে থাকা। এ সীমালংঘন যে হারাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। (দুই) আল্লাহর হালালকৃত বস্তুসমূহকে শরীআত সম্মত কারণ ছাড়াই হারাম মনে করে বর্জন করা। হারাম বস্তু ব্যবহার করা যেমন অপরাধ ও গোনাহ, তেমনি হালালকে হারাম মনে করাও আল্লাহর আইনের বিরোধিতা ও কঠোর গোনাহ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কম খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া, ফলে ফরয কর্ম সম্পাদনের শক্তি না থাকা- এটাও সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য। উল্লেখিত উভয় প্রকার অপব্যয় নিষিদ্ধ করার জন্য কুরআনুল কারীমের এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ “অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।” [সূরা আল-ইসরাঃ ২৭]

অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন, যারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করে- প্রয়োজনের চাইতে বেশী ব্যয় করে না এবং কমও করে না।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ৬৭] এ আয়াতে পানাহার সম্পর্কে যে মধ্যবর্তিতার নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে, তা শুধু পানাহারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরিধান ও বসবাসের প্রত্যেক কাজেই মধ্য পন্থা পছন্দনীয় ও কাম্য।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সীমালংঘন ও অহংকার না করে খাও, দান কর এবং পরিধান কর।” [নাসাঈঃ ৫/৭৯, ইবন মাজাহঃ ৩৬০৫] অনুরূপভাবে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ যা ইচ্ছা পানাহার কর এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাক। (এক) তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চাইতে বেশী না হওয়া চাই এবং (দুই) গর্ব ও অহংকার না থাকা চাই। [বুখারী] অন্যত্র এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়েছে। [নাসায়ী: ২৫৫৯] তবে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্বাভাবিক সীমা দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ আদম সন্তান যে সমস্ত ভাণ্ডার পূর্ণ করে, তন্মধ্যে পেট হল সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশী করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য নির্দিষ্ট করে। [তিরমিযীঃ ২৩৮০, ইবন মাজাহঃ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৩২]

(وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا) আয়াত থেকে বেশ কয়েকটি মাসআলা জানা যায়। (এক) যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা ফরয। (দুই) শরীআতের কোন দলীল দ্বারা কোন বস্তুর অবৈধতা প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত সব বস্তুই হালাল। (তিন) আল্লাহ্ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তুসমূহকে ব্যবহার করা অপব্যয় ও অবৈধ ৷ (চার) যেসব বস্তু আল্লাহ্ তাআলা হালাল করেছেন, সেগুলোকে হারাম মনে করাও অপব্যয় এবং মহাপাপ। (পাঁচ) পেট ভরে খাওয়ার পরও আহার করা সমীচীন নয়। (ছয়) এতটুকু কম খাওয়াও অবৈধ, যদ্দরুন দুর্বল হয়ে ফরয কর্ম সম্পাদন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩১) হে আদমের বংশধরগণ! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর।[1] পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। [2]

(1) আয়াতে (زِينَة) (সৌন্দর্য) বলতে পোশাক বুঝানো হয়েছে। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণও হল মুশরিকদের উলঙ্গ তাওয়াফ করা। তাই তাদেরকে বলা হল, পোশাক পরে আল্লাহর ইবাদত ও তাওয়াফ কর।

(2) (إِسْرَافٌ) (অপচয় করা) প্রত্যেক জিনিসেই এমন কি পানাহারেও অপছন্দনীয়। একটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “যা ইচ্ছা খাও, যা ইচ্ছা পরিধান কর। তবে দুটি জিনিস থেকে অবশ্যই বেঁচে থাক। অপচয় ও অহংকার থেকে।” (বুখারী, লিবাস অধ্যায়) কোন কোন সালাফের উক্তি হল, মহান আল্লাহ (وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا) (পানাহার কর এবং অপচয় করো না) এই অর্ধেক আয়াতে সমস্ত চিকিৎসাবিদ্যাকে একত্রিত করে দিয়েছেন। (ইবনে কাসীর) কেউ কেউ বলেছেন, (زِينَة) হল এমন পোশাক, যা সৌন্দর্যের জন্য পরা হয়। তাঁদের এই উক্তি অনুযায়ী নামাযে ও তাওয়াফে সাজ-সজ্জা করার নির্দেশও পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এই আয়াত দ্বারা নামাযে লজ্জাস্থান ঢাকা ওয়াজেব হওয়ার কথাও প্রমাণ করা হয়েছে। বরং হাদীসসমূহের আলোকে লজ্জাস্থান (পুরুষের নাভি থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত অংশকে) ঢাকা প্রত্যেক অবস্থায় জরুরী। এমন কি মানুষ নির্জনে একাকী থাকলেও। (ফাতহুল কাদীর) জুমআহ এবং ঈদের দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করাও মুস্তাহাব। কেননা, এটাও (زِينَة) তথা সাজ-সজ্জারই অংশ। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩২ قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِیۡنَۃَ اللّٰهِ الَّتِیۡۤ اَخۡرَجَ لِعِبَادِهٖ وَ الطَّیِّبٰتِ مِنَ الرِّزۡقِ ؕ قُلۡ هِیَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا خَالِصَۃً یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۲﴾
قل من حرم زینۃ الله التی اخرج لعبادهٖ و الطیبت من الرزق قل هی للذین امنوا فی الحیوۃ الدنیا خالصۃ یوم القیمۃ كذلك نفصل الایت لقوم یعلمون ﴿۳۲﴾
• বল, ‘কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র রিয্ক’? বল, ‘তা দুনিয়ার জীবনে মুমিনদের জন্য, বিশেষভাবে কিয়ামত দিবসে’। এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য, যারা জানে।

-আল-বায়ান

• বল, ‘যে সব সৌন্দর্য-শোভামন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কে তা হারাম করল’? বল, ‘সে সব হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বিশেষতঃ ক্বিয়ামাতের দিনে। এভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।’

-তাইসিরুল

• তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যে সব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে নিষিদ্ধ করেছে? তুমি ঘোষণা করে দাও - এই সমস্ততো তাদের জন্যই যারা পার্থিব জীবনে এবং বিশেষ করে কিয়ামাত দিবসে বিশ্বাস করে। এমনিভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করে থাকি।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "Who has forbidden the adornment of Allah which He has produced for His servants and the good [lawful] things of provision?" Say, "They are for those who believe during the worldly life [but] exclusively for them on the Day of Resurrection." Thus do We detail the verses for a people who know.

-Sahih International

৩২. বলুন, আল্লাহ্ নিজের বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে(১)? বলুন, ‘পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে কেয়ামতের দিনে এ সব তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে।(২) এভাবে আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।

(১) কোন বস্তু হালাল অথবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। কাজেই সেসব লোক দণ্ডনীয়, যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট পোষাক অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যকে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণাবস্থায় থাকা ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। খোরাক ও পোষাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সুন্নাতের সারকথা এই যে, এসব ব্যাপারে লৌকিকতা পরিহার করতে হবে। যেরূপ পোষাক ও খোরাক সহজলভ্য তাই কৃতজ্ঞতা সহকারে ব্যবহার করতে হবে। আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, আরবরা জাহিলিয়াতে কাপড়-চোপড় সহ বেশ কিছু জিনিস হারাম করত।

অথচ এগুলো আল্লাহ হারাম করেননি। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, বলুন তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ্ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ, বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ? [সূরা ইউনুস: ৫৯] তখন আল্লাহ্ তা'আলা আলোচ্য এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী] কাতাদা বলেন, এ আয়াত দ্বারা জাহেলিয়াতের কাফেররা বাহীরা, সায়েবা, ওসীলা, হাম ইত্যাদি নামে যে সমস্ত প্রাণী হারাম করত সেগুলোকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী]

(২) আয়াতের এ বাক্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, দুনিয়ার সব নেয়ামত; উৎকৃষ্ট পোষাক ও সুস্বাদু খাদ্য প্রকৃতপক্ষে আনুগত্যশীল মুমিনদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের কল্যাণেই অন্যেরা ভোগ করতে পারছে। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত নেয়ামত ও সুখ কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। আয়াতের এ বাক্যে বলা হয়েছে, “আপনি বলে দিনঃ সব পার্থিব নেয়ামত প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনেও মুমিনদেরই প্রাপ্য এবং কেয়ামতের দিন তো এককভাবে তাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে।” [তাবারী ইবন আব্বাস হতে] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অপর মতে এ বাক্যটির অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আখেরাতে শাস্তির কারণ হবে না- এ বিশেষ অবস্থাসহ তা একমাত্র অনুগত মুমিন বান্দাদেরই প্রাপ্য। কাফের ও পাপাচারীর অবস্থা এরূপ নয়। পার্থিব নেয়ামত তারাও পায় বরং আরো বেশী পায়; কিন্তু এসব নেয়ামত আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ও স্থায়ী আযাবের কারণ হবে।

কাজেই পরিণামের দিক দিয়ে এসব নেয়ামত তাদের জন্য সম্মান ও সুখের বস্তু নয়। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদের মতে এর অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামতের সাথে পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ও নানারকম দুঃখ-কষ্ট লেগে থাকে, নির্ভেজাল নেয়ামত ও অনাবিল সুখের অস্তিত্ব এখানে নেই। তবে কেয়ামতে যারা এসব নেয়ামত লাভ করবে, তারা নির্ভেজাল অবস্থায় লাভ করবে। এগুলোর সাথে কোনরূপ পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচ্যুযত হওয়ার আশংকা এবং কোন চিন্তা-ভাবনা থাকবে না [বাগভী] উপরোক্ত তিন প্রকার অর্থই আয়াতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই সাহাবী ও তাবেয়ী তাফসীরবিদগণ এসব অর্থই গ্রহণ করেছেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) বল, ‘আল্লাহ স্বীয় দাসদের জন্য যে সব সুশোভন বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, তা কে নিষিদ্ধ করেছে?’ বল, ‘পার্থিব জীবনে বিশেষ করে কিয়ামতের দিনে এ সমস্ত তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে।’[1] এরূপে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।

[1] মুশরিকরা যেভাবে তাওয়াফ করার সময় পোশাক পরিধান করাকে অপছন্দনীয় মনে করেছিল, অনুরূপ কিছু হালাল জিনিসকেও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হারাম করে নিয়েছিল। (যেমন, অনেক সূফীবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিরাও করে থাকে)। আর অনেক হালাল জিনিসকে নিজেদের প্রতিমাদের নামে উৎসর্গ করার কারণে সেগুলোকেও হারাম মনে করত। মহান আল্লাহ বললেন, মানুষের সাজ-সজ্জার জন্য (যেমন, পোশাক ইত্যাদি) এবং পানাহারের জন্য অনেক উৎকৃষ্ট জিনিস বানিয়েছি, সেগুলোকে কে হারাম করেছে? অর্থ হল, মানুষের হারাম করে নেওয়ার কারণে আল্লাহর হালাল করা জিনিস হারাম হয়ে যাবে না। বরং সেগুলো হালালই থাকবে। এই হালাল ও পবিত্র জিনিসগুলো আসলে আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যদিও কাফেররাও তা থেকে উপকারিতা এবং তৃপ্তি লাভ করে থাকে। বরং অনেক সময় পার্থিব সম্পদ এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করার ব্যাপারে তাদেরকে মুসলিমদের চেয়েও বেশী সফল দেখা যায়। তবে তা অপরের অসীলায় এবং সাময়িকভাবে। এতে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগত ইচ্ছা ও হিকমতও আছে। কিয়ামতের দিন এ নিয়ামতসমূহ কেবল ঈমানদারদের জন্য হবে। কেননা, কাফেরদের উপর যেভাবে জান্নাত হারাম হবে, অনুরূপভাবে জান্নাতের যাবতীয় খাদ্য-পানিও তাদের জন্য হারাম হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৩ قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ وَ الۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ اَنۡ تُشۡرِكُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا وَّ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۳﴾
قل انما حرم ربی الفواحش ما ظهر منها و ما بطن و الاثم و البغی بغیر الحق و ان تشركوا بالله ما لم ینزل بهٖ سلطنا و ان تقولوا علی الله ما لا تعلمون ﴿۳۳﴾
• বল,‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।

-আল-বায়ান

• বল, ‘আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায়, বিরোধিতা, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।

-তাইসিরুল

• তুমি বলঃ আমার রাব্ব প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা যার পক্ষে আল্লাহ কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়সমূহ) নিষিদ্ধ করেছেন।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "My Lord has only forbidden immoralities - what is apparent of them and what is concealed - and sin, and oppression without right, and that you associate with Allah that for which He has not sent down authority, and that you say about Allah that which you do not know."

-Sahih International

৩৩. বলুন, নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা(১)। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালংঘন এবং কোন কিছুকে আল্লাহ্র শরীক করা- যার কোন সনদ তিনি নাযিল করেননি। আর আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।(২)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন আর কেউ নেই; এজন্যই তিনি অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রশংসাপ্রিয় আর কেউ নেই। [বুখারীঃ ৫২২০]

(২) আল্লাহ্র উপর না জেনে কথা বলার ব্যাপারে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে সাবধান করা হয়েছে। যেমনঃ সূরা আল-বাকারার ১৬৯, এবং সূরা আল-ইসরার ৩৬ নং আয়াত। আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলা আসলেই বড় গোনাহর কাজ। আল্লাহ্ সম্পর্কে, গায়েব সম্পর্কে, আখেরাত সম্পর্কে, আল্লাহ্র দ্বীন সম্পর্কে যাবতীয় কথা যতক্ষন পর্যন্ত কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক না হবে ততক্ষন তা আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলার আওতায় পড়বে। অনুরূপভাবে যারা না জেনে-বুঝে ফাতাওয়া দেয় তারাও আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলেন। আর এজন্যই বলা হয়ঃ ফাতাওয়া দানে যে যতবেশী তৎপর জাহান্নামে যাওয়ার জন্যও সে ততবেশী তৎপর।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) বল, ‘আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে,[1] পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে[2] এবং কোন কিছুকে আল্লাহর অংশী করাকে, যার কোন দলীল তিনি প্রেরণ করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলাকে (নিষিদ্ধ করেছেন) যে সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই।’

[1] প্রকাশ্য অশ্লীলতা বলতে কেউ কেউ বেশ্যালয় গিয়ে ব্যভিচার এবং গোপন অশ্লীলতা বলতে কোন ‘গার্ল্ ফ্রেন্ড’ বা অবৈধ প্রেমিকার সাথে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করাকে বুঝিয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন, প্রকাশ্য অশ্লীলতা হল, যাদের সাথে বিবাহ হারাম, তাদেরকে বিবাহ করা। সঠিক কথা হল, এটা কোন একটি জিনিসের সাথে নির্দিষ্ট নয়, বরং এটা ব্যাপক, যাতে সকল প্রকার প্রকাশ্য নির্লজ্জতা শামিল। (যেমন, ভিডিও, ভিসিআর, ভিসিপি, সিডি প্লেয়ার বা টিভির মাধ্যমে সিনেমা, নাটক, অশ্লীল ফিল্ম, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা, নাচ-গানের আসর, মহিলাদের পর্দাহীনতা, পুরুষদের সাথে তাদের অবাধ মেলা-মেশা এবং বিবাহ-শাদীর দেশাচার ও লৌকিকতায় নির্লজ্জতার ব্যাপক প্রদর্শন ইত্যাদি সবই প্রকাশ্য অশ্লীলতার আওতাভুক্ত। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهَا

[2] পাপ হল আল্লাহর অবাধ্যতার নাম। একটি হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘পাপ হল সেই জিনিস, যা তোমার অন্তরে খটকা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং মানুষ জেনে নিক -এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’ (মুসলিম, বির্র অধ্যায়) কেউ কেউ বলেছেন, পাপ হল এমন জিনিস, যার প্রতিক্রিয়া পাপী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। আর বিদ্রোহ তথা অন্যায় হল এমন জিনিস, যার প্রতিক্রিয়া অপর পর্যন্তও পৌঁছে থাকে। এখানে بغي শব্দের সাথে بغير الحق লাগানোর অর্থ হল, অসংগত ও অযথা যুলুম ও অত্যাচার করা। যেমন, মানুষের অধিকার হরণ করা, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করে নেওয়া, অন্যায়ভাবে মার-ধর করা এবং গালাগালি করে বেইজ্জত করা ইত্যাদি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৪ وَ لِكُلِّ اُمَّۃٍ اَجَلٌ ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ لَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ ﴿۳۴﴾
و لكل امۃ اجل فاذا جآء اجلهم لا یستاخرون ساعۃ و لا یستقدمون ﴿۳۴﴾
• আর প্রত্যেক জাতির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।

-আল-বায়ান

• প্রতিটি জাতির জন্য সময় নির্ধারিত আছে। তাদের নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে তখন এক মুহূর্তকাল পশ্চাৎ-অগ্র হবে না।

-তাইসিরুল

• প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় সমুপস্থিত হবে তখন তা এক মুহুর্তকালও আগে কিংবা পরে হবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• And for every nation is a [specified] term. So when their time has come, they will not remain behind an hour, nor will they precede [it].

-Sahih International

৩৪. আর প্রত্যেক জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে।(১) অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহুর্তকাল দেরি করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।

(১) এ সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা দুনিয়াতে ভোগ-বিলাসে থাকতে পারবে। কিন্তু এরপর যখন আল্লাহ তা'আলা তাদের পাকড়াও করতে চাইবেন তখন তাদের আর সময় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূরায় অনুরূপ আলোচনা এসেছে, যেমনঃ সূরা আল-হিজরঃ ৫ ও সূরা নূহঃ ৪, সূরা আল-মুনাফিকূনঃ ১১।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) আর প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে।[1] সুতরাং যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না।

[1] ‘নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদ’ বলতে আমল করার সেই অবসর ও সুযোগ, যা মহান আল্লাহ পরীক্ষা করার জন্য প্রত্যেককে দান করেন। তিনি দেখতে চান যে, সে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার প্রতি যত্ন নেয়, না তার অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতা আরো বেড়ে যায়। এই অবসর কখনো কখনো তার পুরো জীবন পর্যন্ত প্রসারিত থাকে। অর্থাৎ, পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করেন না। বরং কেবল আখেরাতেই তিনি শাস্তি দেবেন। তার নির্দিষ্ট মেয়াদ হল কিয়ামতেরই দিন। আর যাকে দুনিয়াতে তিনি শাস্তি দেন, তার নির্দিষ্ট মেয়াদ তখনই হয়, যখন তাকে পাকড়াও করেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৫ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ اِمَّا یَاۡتِیَنَّكُمۡ رُسُلٌ مِّنۡكُمۡ یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتِیۡ ۙ فَمَنِ اتَّقٰی وَ اَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۳۵﴾
یبنی ادم اما یاتینكم رسل منكم یقصون علیكم ایتی فمن اتقی و اصلح فلا خوف علیهم و لا هم یحزنون ﴿۳۵﴾
• হে বনী আদম, যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসে যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে, তবে যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং (আমল) সংশোধন করবে, তাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

-আল-বায়ান

• হে আদাম সন্তান! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্যে থেকে যখন রসূলগণ আসে যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতগুলোকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে আর নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিত হবে না।

-তাইসিরুল

• হে আদম সন্তান! তোমাদের মধ্য হতে যদি কোন রাসূল তোমাদের নিকট আগমন করে এবং আমার বাণী ও নিদর্শন তোমাদের কাছে বিবৃত করে; তখন যারা সতর্ক হবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নিবে এবং সৎ কাজ করবে, তাদের কোন ভয়-ভীতি থাকবেনা।

-মুজিবুর রহমান

• O children of Adam, if there come to you messengers from among you relating to you My verses, then whoever fears Allah and reforms - there will be no fear concerning them, nor will they grieve.

-Sahih International

৩৫. হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন, যারা আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিবৃত করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) হে মানবজাতি! যখন তোমাদের মধ্য হতে কোন রসূল তোমাদের নিকট এসে আমার নিদর্শনসমূহ বিবৃত করে, তখন যারা সাবধান হবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। [1]

[1] এ আয়াতে সেই ঈমানদারদের সুন্দর পরিণামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁরা আল্লাহভীরুতা এবং নেক আমলের সাজে সজ্জিত হন। কুরআন ঈমানের সাথে সাথে অধিকাংশ স্থানে নেক আমলের কথা অবশ্যই উল্লেখ করেছে। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নিকট সেই ঈমানই গ্রহণযোগ্য যার সাথে নেক আমলও থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৬ وَ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ اسۡتَكۡبَرُوۡا عَنۡهَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۳۶﴾
و الذین كذبوا بایتنا و استكبروا عنها اولٓئك اصحب النار هم فیها خلدون ﴿۳۶﴾
• আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী।

-আল-বায়ান

• আর যারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করবে আর সেগুলোর ব্যাপারে ঔদ্ধত্য দেখাবে, তারাই হল জাহান্নামের বাসিন্দা, তাতে তারা চিরকাল থাকবে।

-তাইসিরুল

• আর যারা আমার নিদর্শন ও বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং অহংকার করে ওটা হতে দূরে সরে থাকে তারাই হবে জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

-মুজিবুর রহমান

• But the ones who deny Our verses and are arrogant toward them - those are the companions of the Fire; they will abide therein eternally.

-Sahih International

৩৬. আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারাই দোযখবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। [1]

[1] এতে ঈমানদারদের বিপরীত সেই লোকদের মন্দ পরিণামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা আল্লাহর বিধানসমূহকে মিথ্যাজ্ঞান করে এবং তার সামনে অহংকার প্রদর্শন করে। ঈমানদার ও কাফের উভয়ের পরিণাম বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল, যাতে মানুষ এমন আচরণকে অবলম্বন করে, যার পরিণাম সুন্দর এবং এমন আচরণ থেকে বেঁচে থাকে, যার পরিণাম মন্দ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৭ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰیٰتِهٖ ؕ اُولٰٓئِكَ یَنَالُهُمۡ نَصِیۡبُهُمۡ مِّنَ الۡكِتٰبِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا یَتَوَفَّوۡنَهُمۡ ۙ قَالُوۡۤا اَیۡنَ مَا كُنۡتُمۡ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ؕ قَالُوۡا ضَلُّوۡا عَنَّا وَ شَهِدُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ اَنَّهُمۡ كَانُوۡا كٰفِرِیۡنَ ﴿۳۷﴾
فمن اظلم ممن افتری علی الله كذبا او كذب بایتهٖ اولٓئك ینالهم نصیبهم من الكتب حتی اذا جآءتهم رسلنا یتوفونهم قالوا این ما كنتم تدعون من دون الله قالوا ضلوا عنا و شهدوا علی انفسهم انهم كانوا كفرین ﴿۳۷﴾
• সুতরাং তার চেয়ে কে অধিক যালিম, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ রটায় কিংবা তাঁর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। তাদের ভাগ্যে লিখিত অংশ তাদের কাছে পৌঁছবে। অবশেষে যখন আমার ফেরেশতারা তাদের নিকট আসবে তাদের জান কবজ করতে, তখন তারা বলবে, ‘কোথায় তারা, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে’? তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে’ এবং তারা নিজদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা ছিল কাফির।

-আল-বায়ান

• তাত্থেকে বড় যালিম আর কে আছে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে রচনা করে অথবা তাঁর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে? কিতাবে লিখিত (দুনিয়াতে তাদের জন্য) নির্দিষ্ট অংশ তাদের কাছে পৌঁছবে, যে পর্যন্ত না আমার প্রেরিত ফেরেশতা তাদের জান কব্য করার জন্য তাদের কাছে আসবে। তারা (অর্থাৎ ফেরেশতারা) জিজ্ঞেস করবে, ‘আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা আহবান করতে তারা কোথায়’? তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে’ আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে যে তারা কাফির ছিল।

-তাইসিরুল

• যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তাঁর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে সে অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হতে পারে? তাদের ‘আমলনামায় লিখিত নির্ধারিত অংশ তাদের নিকট পৌঁছবেই, পরিশেষে যখন আমার প্রেরিত মালাক/ফেরেশতা তাদের প্রাণ হরণের জন্য তাদের নিকট পৌঁছবে, তখন তারা (ফেরেশতারা) জিজ্ঞেস করবেঃ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে তারা কোথায়? তখন তারা উত্তরে বলবেঃ আমাদের হতে তারা উধাও হয়ে গেছে। আর নিজেরাই স্বীকারোক্তি করবে যে, তারা কাফির বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ছিল।

-মুজিবুর রহমান

• And who is more unjust than one who invents about Allah a lie or denies His verses? Those will attain their portion of the decree until when Our messengers come to them to take them in death, they will say, "Where are those you used to invoke besides Allah?" They will say, "They have departed from us," and will bear witness against themselves that they were disbelievers.

-Sahih International

৩৭. সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে কিংবা তার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? তাদের জন্য যে অংশ লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌছবে।(১)। অবশেষে যখন আমাদের ফিরিশতাগণ তাদের জান কবজের জন্য তাদের কাছে আসবে, তখন তারা জিজ্ঞেস করবে, আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে(২) তারা কোথায়? তারা বলবে, তারা আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়েছে এবং তারা নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফের ছিল।

(১) অর্থাৎ তাদের শাস্তির যে পরিমাণ লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌছবেই। [তাবারী] কাতাদা বলেন, দুনিয়াতে তারা যে আমল করেছে সেটার ফলাফল আখেরাতে তাদের কাছে পৌছবেই। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে, যাদের তোমরা ইবাদত করতে এখন তারা কোথায়? তারা কি তোমাদেরকে এখন সাহায্য করতে পারে না? তারা কি তোমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না? তখন তারা স্বীকার করবে যে, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা আহবান করত, যাদের ইবাদত করত, তারা সবাই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। এভাবে তারা তাদের নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষী দিল যে, তারা মুশরিক ছিল, তাওহীদবাদী ছিল না। [মুয়াসসার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, কিংবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করে, তার অপেক্ষা বড় অত্যাচারী আর কে? তাদের ভাগ্যলিপিতে লিখিত নির্ধারিত অংশ তাদের নিকট পৌঁছবে।[1] পরিশেষে যখন আমার প্রেরিত (ফিরিশতা)রা প্রাণ হরণের জন্য তাদের নিকট আসবে ও জিজ্ঞাসা করবে, ‘আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে তারা কোথায়?’ তারা বলবে, ‘তারা উধাও হয়েছে।’ এবং তারা স্বীকার করবে যে, তারা অবিশ্বাসী ছিল।

[1] এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। একটি অর্থ আমল, রুযী এবং বয়স করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের ভাগ্যে যে রুযী নির্ধারিত আছে তা পরিপূর্ণ করে নেওয়ার এবং যত বয়স নির্ধারিত আছে তা সম্পূর্ণ করার পর অবশেষে মৃত্যু বরণ করতেই হবে। প্রায় এই অর্থেরই আয়াত এটাও, {إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لا يُفْلِحُونَ، مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ} অর্থাৎ, তুমি বলে দাও, যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে, তারা সফলকাম হবে না। (ওদের জন্য) দুনিয়ায় কিছু সুখ-সম্ভোগ রয়েছে। তারপর আমারই দিকে তাদেরকে ফিরে আসতে হবে। (সূরা ইউনুসঃ ৬৯-৭০)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৮ قَالَ ادۡخُلُوۡا فِیۡۤ اُمَمٍ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ فِی النَّارِ ؕ كُلَّمَا دَخَلَتۡ اُمَّۃٌ لَّعَنَتۡ اُخۡتَهَا ؕ حَتّٰۤی اِذَا ادَّارَكُوۡا فِیۡهَا جَمِیۡعًا ۙ قَالَتۡ اُخۡرٰىهُمۡ لِاُوۡلٰىهُمۡ رَبَّنَا هٰۤؤُلَآءِ اَضَلُّوۡنَا فَاٰتِهِمۡ عَذَابًا ضِعۡفًا مِّنَ النَّارِ ۬ؕ قَالَ لِكُلٍّ ضِعۡفٌ وَّ لٰكِنۡ لَّا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۸﴾
قال ادخلوا فی امم قد خلت من قبلكم من الجن و الانس فی النار كلما دخلت امۃ لعنت اختها حتی اذا اداركوا فیها جمیعا قالت اخرىهم لاولىهم ربنا هؤلآء اضلونا فاتهم عذابا ضعفا من النار قال لكل ضعف و لكن لا تعلمون ﴿۳۸﴾
• তিনি বলবেন, ‘আগুনে প্রবেশ কর জিন ও মানুষের দলগুলোর সাথে, যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে’। যখনই একটি দল প্রবেশ করবে, তখন পূর্বের দলকে তারা লা‘নত করবে। অবশেষে যখন তারা সবাই তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তী দলটি পূর্বের দল সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের রব, এরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তাই আপনি তাদেরকে আগুনের দ্বিগুণ আযাব দিন’। তিনি বলবেন, ‘সবার জন্য দ্বিগুণ, কিন্তু তোমরা জান না’।

-আল-বায়ান

• আল্লাহ বলবেন, ‘তোমাদের আগে জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, তাদের মাঝে প্রবেশ কর।’ যখনই একটি দল প্রবেশ করবে, তখন তারা অন্যদলকে অভিসম্পাত করবে। অবশেষে সবাই যখন তার ভিতর একত্রিত হবে, তখন প্রত্যেকটি পরবর্তী দল আগের দল সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! ওরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে, কাজেই ওদেরকে আগুনে দ্বিগুণ শাস্তি দাও।’ আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেকের শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে (নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য এবং অন্যদের পথভ্রষ্ট করার জন্য) কিন্তু তোমরা জান না।’

-তাইসিরুল

• আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের পূর্বে মানব ও জিন হতে যে সব সম্প্রদায় গত হয়েছে, তাদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর। যখন কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসস্পাত করবে, পরিশেষে যখন তাতে সকলে জমায়েত হবে তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং আপনি এদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন! তখন আল্লাহ বলবেনঃ তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জাননা।

-মুজিবুর রহমান

• [Allah] will say, "Enter among nations which had passed on before you of jinn and mankind into the Fire." Every time a nation enters, it will curse its sister until, when they have all overtaken one another therein, the last of them will say about the first of them "Our Lord, these had misled us, so give them a double punishment of the Fire. He will say, "For each is double, but you do not know."

-Sahih International

৩৮. আল্লাহ্ বলবেন, তোমাদের আগে যে জিন ও মানবদল গত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অন্য দলকে তারা অভিসম্পাত করবে।(১) অবশেষে যখন সবাই তাতে একত্র হবে তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল(২); কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন। আল্লাহ বলবেন, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না।

(১) অর্থাৎ যখনই কোন ধর্মাবলম্বী জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখনই সে তার ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আগে যারা প্রবেশ করেছে তাদেরকে অভিসম্পাত দিতে থাকবে। সুতরাং মুশরিকরা মুশরিকদেরকে, ইয়াহূদীরা ইয়াহূদীদেরকে, নাসারারা নাসারাদেরকে, সাবেয়ীরা সাবেয়ীদেরকে, অগ্নিউপাসকরা অগ্নিউপাসকদের লা'নত দিতে থাকবে। তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের অভিসম্পাত দিবে। [তাবারী]

(২) এ আয়াতে তাদেরকে কি কারণে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়নি। সূরা আল-আহযাবের ৬৭ নং আয়াতে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা ছিল তাদের নেতা গোছের লোক। তাদের নেতৃত্বের প্রভাবেই এরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। সূরা সাবা'র ৩১ ও ৩২ নং আয়াতে এর বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) আল্লাহ বলবেন, তোমাদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানবদল[1] গত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা দোযখে প্রবেশ কর। যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে, তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে।[2] পরিশেষে যখন সকলে ওতে একত্র হবে,[3] তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে,[4] ‘হে আমাদের প্রতিপালক! ওরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, সুতরাং তুমি ওদেরকে দোযখের দ্বিগুণ শাস্তি দাও।’[5] আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে;[6] কিন্তু তোমরা জান না।’

[1] أُمَمٌ হল أُمَّةٌ এর বহুবচন। উদ্দেশ্য এমন ফির্ক্বা ও দলসমূহ, যারা কুফরী, বিরোধিতা, শিরক ও মিথ্যাজ্ঞান করার ব্যাপারে একই রকম হবে। فِيْ অর্থ مَعَ ও হতে পারে। অর্থাৎ, তোমাদের পূর্বে মানুষ ও জ্বিনদের দল তোমাদের মতই এখানে এসেছে তাদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করে যাও অথবা তাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও।

[2]{لَعَنَتْ أُخْتَهَا} তার অনুরূপ দলকে অভিশাপ করবে। أُخْتٌ বোনকে বলা হয়। একটি দল (উম্মত)-কে অপর দলের (উম্মতের) দ্বীনের দিক দিয়ে অথবা ভ্রষ্টতার দিক দিয়ে অনুরূপ হওয়ার কারণে বোন বলা হয়েছে। অর্থাৎ, উভয়েই একটি ভুল মতাদর্শের অনুসারী অথবা ভ্রষ্ট ছিল। কিংবা জাহান্নামের সাথী হওয়ার কারণে তাদেরকে একে অপরের বোন গণ্য করা হয়েছে।

[3] ادَّارَكُوْا এর অর্থ হল, تَدَارَكُوْا যখন পরস্পর মিলিত হবে এবং পরস্পর একত্রিত হবে।

[4] أُخْرَى (পরবর্তী দল) বলতে যারা পরে প্রবেশ করবে। আর أُوْلَى (পূর্ববর্তী দল) বলতে তাদের আগে যারা প্রবেশ করবে। অথবা أُخْرَى বলতে أَتْبَاعٌ (অনুসারীগণ) এবং أُوْلَى বলতে مَتْبُوْعٌ অনুসৃত নেতা ও সর্দারদেরকে বুঝানো হয়েছে। এদের অপরাধ যেহেতু অনেক বেশী, কারণ তারা নিজেরা সত্য পথ থেকে তো সরে ছিলই, অপরকেও প্রচেষ্টা করে দূরে রেখেছিল, তাই এরা অনুসারীদের পূর্বেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

[5] যেমন অন্য এক স্থানে বলা হয়েছে, জাহান্নামীরা বলবে, {رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلا، رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا} অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে তুমি দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং মহা অভিসম্পাত কর।’’ (সূরা আহ্যাবঃ ৬৭-৬৮)

[6] অর্থাৎ, এখন আর একে অপরকে দোষারোপ করে এবং একে অপরের উপর অপবাদ দিয়ে কোন লাভ হবে না। তোমরা সকলেই বড় অপরাধী এবং তোমরা সকলেই দ্বিগুণ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। অনুসারী ও অনুসৃতদের পারস্পরিক এ কথোপকথন সূরা সাবার ৩১-৩২নং আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৩৯ وَ قَالَتۡ اُوۡلٰىهُمۡ لِاُخۡرٰىهُمۡ فَمَا كَانَ لَكُمۡ عَلَیۡنَا مِنۡ فَضۡلٍ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡسِبُوۡنَ ﴿۳۹﴾
و قالت اولىهم لاخرىهم فما كان لكم علینا من فضل فذوقوا العذاب بما كنتم تكسبون ﴿۳۹﴾
• আর তাদের পূর্ববর্তী দল পরবর্তী দলকে বলবে, ‘তাহলে আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। অতএব তোমরা যা অর্জন করেছিলে, তার কারণে তোমরা আযাব আস্বাদন কর’।

-আল-বায়ান

• তাদের পূর্ববর্তী দল (আগের জেনারেশন) পরবর্তী দলকে (পরের জেনারেশনকে) বলবে, ‘আমাদের চেয়ে তোমাদের বেশি কোন মর্যাদা নেই, কাজেই তোমাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তিও স্বাদ গ্রহণ কর।’

-তাইসিরুল

• অতঃপর পূর্ববর্তী লোকেরা পরবর্তী লোকদেরকে বলবেঃ আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাক।

-মুজিবুর রহমান

• And the first of them will say to the last of them, "Then you had not any favor over us, so taste the punishment for what you used to earn."

-Sahih International

৩৯. আর তাদের পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদেরকে বলবে, আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কাজেই তোমরা যা অর্জন করেছিলে, তার জন্য শাস্তি ভোগ কর।(১)

(১) এ থেকে জানা গেল যে, যে ব্যক্তি বা দল কোন ভুল চিন্তা বা কর্মনীতির ভিত রচনা করে সে কেবল নিজের ভুলের ও গোনাহের জন্য দায়ী হয় না বরং দুনিয়ায় যতগুলো লোক তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদের সবার গোনাহের একটি অংশও তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকে। এ বিষয়টি বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) আর তাদের পূর্ববর্তীরা তাদের পরবর্তীদেরকে বলবে, ‘আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে থাক।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭ : ৪০ اِنَّ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ اسۡتَكۡبَرُوۡا عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ اَبۡوَابُ السَّمَآءِ وَ لَا یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ حَتّٰی یَلِجَ الۡجَمَلُ فِیۡ سَمِّ الۡخِیَاطِ ؕ وَ كَذٰلِكَ نَجۡزِی الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۴۰﴾
ان الذین كذبوا بایتنا و استكبروا عنها لا تفتح لهم ابواب السمآء و لا یدخلون الجنۃ حتی یلج الجمل فی سم الخیاط و كذلك نجزی المجرمین ﴿۴۰﴾
• নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।* আর এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দেই।

-আল-বায়ান

• যারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে আর এ ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত হবে না আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না-যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করে। এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।

-তাইসিরুল

• নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং অহংকার বশতঃ তা থেকে ফিরে থাকে, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবেনা এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করবেনা, যতক্ষণ না সুচের ছিদ্র পথে উট প্রবেশ করে, এমনিভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।

-মুজিবুর রহমান

• Indeed, those who deny Our verses and are arrogant toward them - the gates of Heaven will not be opened for them, nor will they enter Paradise until a camel enters into the eye of a needle. And thus do We recompense the criminals.

-Sahih International

* এ দ্বারা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব বুঝানো হয়েছে।

৪০. নিশ্চয় যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা সম্বন্ধে অহংকার করে তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না(১) যতক্ষন না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।(২) আর এভাবেই আমরা অপরাধীদেরকে প্রতিফল দেব।

(১) আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এ আয়াতের বর্ণিত এক তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, তাদের আমল ও তাদের দোআর জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। অর্থাৎ তাদের দো'আ কবুল করা হবেনা এবং তাদের আমলকে ঐ স্থানে যেতে দেয়া হবেনা, যেখানে আল্লাহর নেকবান্দাদের আমলসমূহ সংরক্ষিত রাখা হয় কুরআনের সূরা আল-মুতাফফিফীনে এ স্থানটির নাম ইল্লি’য়্যীন বলা হয়েছে। কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতেও উল্লেখিত বিষয়বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়েছে (إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ) অর্থাৎ মানুষের পবিত্র বাক্যাবলী আল্লাহ্ তা'আলার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এবং সৎকর্ম সেগুলোকে উত্থিত করে। [সূরা ফাতেরঃ ১০]

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে অপর এক বর্ণনা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও অন্যান্য সাহাবী থেকে এমনও বর্ণিত আছে যে, কাফেরদের আত্মার জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। এসব আত্মাকে নীচে নিক্ষেপ করা হবে। এ বিষয়বস্তুর সমর্থন বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসার সাহাবীর জানাযায় গমন করেন। কবর প্রস্তুতে কিছু বিলম্ব দেখে তিনি এক জায়গায় বসে যান সাহাবায়ে কেরামও তার চারদিকে চুপচাপ বসে যান। তিনি মাথা উঁচু করে বললেনঃ মুমিন বান্দার মৃত্যুর সময় হলে আকাশ থেকে সাদা ধবধবে চেহারাবিশিষ্ট ফিরিশতারা আগমন করে। তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি থাকে। তারা মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির সামনে বসে যায়।

অতঃপর মালাকুল মাউত আসেন এবং তার আত্মাকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নিশ্চিন্ত আত্মা, পালনকর্তার মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির জন্য বের হয়ে আস। তখন তার আত্মা, এমন অনায়াসে বের হয়ে আসে, যেমন মশকের মুখ খুলে দিলে তার পানি বের হয়ে আসে। মৃত্যুদূত তার আত্মাকে হাতে নিয়ে উপস্থিত ফিরিশতাদের কাছে সমর্পণ করে। ফিরিশতারা তা নিয়ে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে একদল ফিরিশতার সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা জিজ্ঞেস করেঃ এ পাক আত্মা কার? ফিরিশতারা তার ঐ নাম ও উপাধি উল্লেখ করে, যা দুনিয়াতে তার সম্মানার্থে ব্যবহার হত এবং বলেঃ ইনি হচ্ছেন অমুকের পুত্র অমুক। ফিরিশতারা তার আত্মাকে নিয়ে প্রথম আকাশে পৌছে দরজা খুলতে বলে। দরজা খোলা হয়। এখান থেকে আরো ফিরিশতা তাদের সঙ্গী হয়। এভাবে তারা সপ্তম আকাশে পৌছে। তখন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমার এ বান্দার আমলনামা ইল্লিয়্যীনে লিখ এবং তাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দাও।

এ আত্মা আবার কবরে ফিরে আসে। কবরে হিসাব গ্রহণকারী ফিরিশতা এসে তাকে উপবেশন করায় এবং প্রশ্ন করেঃ তোমার পালনকর্তা কে? তোমার দ্বীন কি? সে বলেঃ আমার পালনকর্তা আল্লাহ তা'আলা এবং দ্বীন ইসলাম। এরপর প্রশ্ন হয়ঃ এই যে ব্যক্তি, যিনি তোমাদের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? সে বলে আল্লাহর রাসূল। তখন একটি আওয়াজ হয় যে, আমার বান্দা সত্যবাদী। তার জন্য জান্নাতের শয্যা পেতে দাও, জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের দিকে তার কবরের দরজা খুলে দাও। এ দরজা দিয়ে জান্নাতের সুগন্ধি ও বাতাস আসতে থাকে। তার সৎকর্ম একটি সুশ্রী আকৃতি ধারণ করে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য তার কাছে এসে যায়। এর বিপরীতে কাফেরের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আকাশ থেকে কাল রঙের ভয়ঙ্কর মূর্তি ফিরিশতা নিকৃষ্ট চট নিয়ে আগমন করে এবং তার বিপরীত দিকে বসে যায়।

অতঃপর মৃত্যুদূত তার আত্মা এমনভাবে বের করে, যেমন কোন কাটাবিশিষ্ট শাখা ভিজা পশমে জড়িয়ে থাকলে তাকে সেখান থেকে টেনে বের করা হয়। আত্মা বের হলে তার দুর্গন্ধ মৃত জন্তুর দুর্গন্ধের চাইতেও প্রকট হয়। ফিরিশতারা তাকে নিয়ে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে একদল ফিরিশতার সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা জিজ্ঞেস করেঃ এ দুরাত্মাটি কার? ফিরিশতারা তখন তার ঐ হীনতম নাম ও উপাধি উল্লেখ করে, যা দ্বারা সে দুনিয়াতে পরিচিত ছিল। অথাৎ সে অমুকের পুত্র অমুক। অতঃপর প্রথম আকাশে পৌছে দরজা খুলতে বললে তার জন্য দরজা খোলা হয় না বরং নির্দেশ আসে যে, এ বান্দার আমলনামা সিজ্জীনে রেখে দাও। সেখানে অবাধ্য বান্দাদের আমলনামা রাখা হয়। এ আত্মাকে নীচে নিক্ষেপ করা হয় এবং তা পুনরায় দেহে প্রবেশ করে। সে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরে কেবল “আ-আ– আমি জানি না” বলে। তাকে জাহান্নামের শয্যা ও জাহান্নামের পোষাক দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দিকে তার কবরের দরজা খুলে দেয়া হয়। ফলে তার কবরে জাহান্নামের উত্তাপ পৌছাতে থাকে এবং কবরকে তার জন্য সংকীর্ণ করে দেয়া হয়। [আহমাদঃ ৪/২৮৭, ২/৩৬৪-৩৬৫, ৬/১৪০; ইবন মাজাহঃ ৪২৬২; নাসায়ী: ৪৬২]

(২) আয়াতের শেষে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না উটের মত বিরাট পেট বিশিষ্ট জন্তু সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য, সূচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করা যেমন স্বভাবতঃ অসম্ভব, তেমনি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাও অসম্ভব। এতে তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি বর্ণনা করা উদ্দেশ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) অবশ্যই যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না[1] এবং তারা বেহেশ্তেও প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না সূচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করে।[2] এরূপে আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।

[1] এ থেকে কেউ কেউ আমল, কেউ কেউ আত্মা এবং কেউ কেউ দু’আ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, তাদের আমল অথবা আত্মা অথবা দু’আর জন্য আসমানের দরজা খোলা হয় না। অর্থাৎ, আমল ও দু’আ কবুল হয় না এবং আত্মাকে যমীনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (যেমন, মুসনাদ আহমাদে বর্ণিত একটি হাদীস থেকেও জানা যায়।) ইমাম শাওকানী বলেন, তিনটি জিনিসই উদ্দেশ্য হতে পারে।

[2] অসম্ভাব্য জিনিসের সাথে এখানে শর্ত লাগানো হয়েছে। যেমন সূচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করা অসম্ভব, তেমনি কাফেরদের জান্নাতে প্রবেশ করাও অসম্ভব। উটের দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে এই জন্য যে, তা আরবদের নিকট সর্বাধিক পরিচিত এবং দৈহিক গঠনে একটি বড় পশু। আর সূচের ছিদ্র এত সূক্ষ্ণ ও সংকীর্ণ যে তার তুলনা নেই। এই দু’টি জিনিসের উল্লেখ অসম্ভব জিনিসের সাথে শর্ত লাগানোর অর্থকে আরো বেশী পরিষ্কার করে দিল। আর অসম্ভব জিনিসের সাথে শর্ত বলতে, এমন জিনিসের সাথে শর্ত লাগানো যা সম্ভবই নয়। যেমন, উট সূচের ছিদ্রে প্রবেশ করতেই পারে না। এখন কোন জিনিসের সংঘটিত হওয়াকে উটের সূচের ছিদ্রে প্রবেশ করার সাথে শর্ত লাগানো হলে, সেটাই হয় অসম্ভব জিনিসের সাথে শর্ত লাগানো।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২০৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 18 19 20 21 পরের পাতা »