-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে(১), এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে(২) তখন তারা বলবে, হায়! এটাকে আমরা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ। আর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট।
(১) যে সমস্ত কাফের মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান হওয়াকে অস্বীকার করেছে, তারা যখন কিয়ামতকে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে দেখতে পাবে, আর তাদের খারাপ পরিণতি তাদেরকে ঘিরে ধরবে, তখন তারা নিজেদের দুনিয়ার জীবনকে হেলায় নষ্ট করার জন্য আফসোস করতে থাকবে। আর তারা তখন তাদের পিঠে গোনাহের বোঝা বহন করতে থাকবে। তাদের এ বোঝা কতই না নিকৃষ্ট। [মুয়াস্সার] এ আফসোসের কারণ সম্পর্কে এক হাদীসে আরও এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জাহান্নামীরা জান্নাতে তাদের জন্য যে স্থান ছিল সেটা দেখতে পাবে এবং সে জন্য হায় আফসোস! বলতে থাকবে। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
(২) কিয়ামত হঠাৎ করেই হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত এমনভাবে সংঘটিত হবে যে, দু'জন লোক কোন কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রসারিত করেছে, সেটাকে তারা আবার মোড়ানোর সময় পাবে না। কিয়ামত এমনভাবে হবে যে, একজন তার জলাধার ঠিক করছে কিন্তু সেটা থেকে পানি পান করার সময় পাবে না। কিয়ামত এমনভাবে হবে যে, তোমাদের কেউ তার গ্রাসটি মুখের দিকে নেওয়ার জন্য উঠিয়েছে কিন্তু সে সেটা খেতে সময় পাবে না। [বুখারী: ৬৫০৬; মুসলিম: ২৯৫৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে, তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কি অকস্মাৎ যখন তাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হবে, তখন তারা বলবে, ‘হায় আফসোস! এ (কিয়ামত)কে আমরা অবজ্ঞা করেছি।’ তারা তাদের পৃষ্ঠে নিজেদের পাপভার বহন করবে। দেখ, তারা যা বহন করবে, তা কত নিকৃষ্ট! [1]
[1] আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের ব্যাপারকে যারা মিথ্যা মনে করে, তারা যেভাবে ক্ষতির ও অসফলতার শিকার হবে, নিজেদের উদাসীনতার জন্য যেভাবে তারা অনুতপ্ত হবে এবং মন্দ আমলগুলোর বোঝা যেভাবে তারা বহন করবে, তারই চিত্র এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। فَرَّطْنَا فِيْهَا তে সর্বনামের লক্ষ্যস্থল হল الساعة (কিয়ামত)। অর্থাৎ, কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তাকে সত্য মনে করার ব্যাপারে যে অবহেলা আমাদের দ্বারা হয়েছে। অথবা তার লক্ষ্যস্থল হল الصَّفْقَةُ (কেনা-বেচা)। যদিও আয়াতে এই শব্দের উল্লেখ নেই, তবুও আলোচ্য বিষয় থেকে এটা প্রমাণিত হয়। কারণ, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কেনা-বেচাতেই হয়। আর কেনা বলতে বুঝানো হয়েছে ঈমানের পরিবর্তে কুফরী কেনা। অর্থাৎ, এটা (ঈমানের পরিবর্তে কুফরী) কিনে আমরা চরম অবহেলা করেছি। কিংবা তার লক্ষ্যস্থল হল حَيَاة (জীবন)। অর্থাৎ, জীবনে অন্যায়-অনাচারে এবং কুফরী ও শির্কে লিপ্ত থেকে যে অবহেলা করেছি। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. আর দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম; অতএব, তোমরা কি অনুধাবন কর না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) আর পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক বৈ আর কিছুই নয়। আর যারা সাবধানতা অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেয়, তোমরা কি (তা) অনুধাবন কর না?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. আমরা অবশ্য জানি যে, তারা যা বলে তা আপনাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়; কিন্তু তারা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।(১)
(১) অর্থাৎ কাফেররা প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতিই মিথ্যারোপ করে। অর্থাৎ কাফেররা আপনাকে নয়- আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে। আয়াতের এ অর্থও হতে পারে যে, কাফেররা বাহ্যতঃ যদিও আপনাকে মিথ্যা বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনাকে মিথ্যা বলার পরিণাম স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলাকে ও তার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলা। কাতাদা বলেন, অর্থাৎ তারা জানে যে আপনি আল্লাহর রাসূল কিন্তু তারা ইচ্ছা করে সেটাকে অস্বীকার করছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে, তা তোমাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়। আসলে তারা তো তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে না, বরং অত্যাচারিগণ আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করে। [1]
[1] নবী করীম (সাঃ)-কে কাফেরদের মিথ্যা ভাবার কারণে যে দুঃখ-কষ্ট তাঁর হত, তা দূরীকরণের এবং তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে, এই মিথ্যা মনে করা তোমাকে নয় (তোমাকে তো তারা সত্যবাদী ও বিশ্বাসী মনে করে), বরং প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে এবং এটা একটি মস্ত বড় যুলুমের কাজ তারা করছে। তিরমিযী ইত্যাদির একটি বর্ণনায় এসেছে যে, আবূ জাহল একদা রসূল (সাঃ)-কে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ, আমরা তোমাকে নয়, বরং তুমি যা নিয়ে এসেছ সেটাকে মিথ্যা মনে করি।’ তার উত্তরে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। তিরমিযীর এই বর্ণনা সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হলেও অন্য সহীহ বর্ণনা দ্বারা এ ব্যাপারের সত্যতা প্রমাণিত হয়। মক্কার কাফেররা নবী করীম (সাঃ)-কে আমানতদার, বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী মনে করত, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর রিসালাতের উপর ঈমান আনা থেকে দূরেই ছিল। বর্তমানেও যারা নবী করীম (সাঃ)-এর উত্তম চরিত্র, গুণ ও কৃতিত্ব, তাঁর অমায়িক ব্যবহার এবং তাঁর আমানত ও বিশ্বস্ততার কথাকে গা-মাথা দুলিয়ে বড় মোহিত হয়ে বর্ণনা করে এবং এ বিষয়ের উপর সাহিত্য-শৈলী ভাষায় ও চমৎকার ভঙ্গিমায় বত্তৃজ্ঞতা, না’ত ও গজলও পরিবেশন করে, কিন্তু রসূল (সাঃ)-এর আনুগত্য ও তাঁর অনুসরণ করার ব্যাপারে কুণ্ঠাবোধ ও শৈথিল্য করে। তাঁর কথার উপর ফিকহ, কিয়াস (অনুমান) এবং ইমামদের কথাকে প্রাধান্য দেয়। তাদের চিন্তা করা উচিত যে, এ আচরণ কার যা তারা অবলম্বন করেছে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. আর আপনার আগেও অনেক রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করা হয়েছিল; কিন্তু তাদের উপর মিথ্যারোপ করা ও কষ্ট দেয়ার পরও তার ধৈর্যধারণ করেছিল, যে পর্যন্ত না আমাদের সাহায্য তাদের কাছে এসেছে।(১) আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই। আর অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ আপনার কাছে এসেছে।
(১) কাতাদা বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তার নবীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এবং তাকে সংবাদ দিচ্ছেন যে, আপনার পূর্বেও অনেক নবী-রাসূলকে অনুরূপ মিথ্যারোপের শিকার হতে হয়েছিল কিন্তু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিলেন। তাই আপনিও ধৈর্য ধারণ করুন। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) তোমার পূর্বেও অনেক রসূলকে অবশ্যই মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা ও ক্লেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের নিকট আমার সাহায্য না আসা পর্যন্ত তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল।[1] আল্লাহর (প্রতিশ্রুত) বাক্যকে পরিবর্তন করার মত কেউ নেই।[2] আর অবশ্যই প্রেরিত পুরুষগণের কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট এসেছে। [3]
[1] নবী করীম (সাঃ)-কে অতিরিক্ত সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে, আল্লাহর পয়গম্বরকে কাফেরদের অস্বীকার করার ঘটনা এটা প্রথম নয়, বরং পূর্বেও অনেক রসূল এসেছিলেন যাদেরকে মিথ্যা মনে করা হয়েছে। অতএব তাদের অনুসরণ করে তুমিও ধৈর্য ও সাহসিকতা অবলম্বন কর, যেভাবে তারা তাদেরকে মিথ্যাজ্ঞান ও কষ্টদানের সময় ধৈর্য ধারণ ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেছিল। যাতে তোমার কাছেও আমার সাহায্য-সহযোগিতা ঐভাবেই আসে, যেভাবে পূর্বের রসূলদের কাছে আমার সাহায্য-সহযোগিতা এসেছে। আর আমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি না। আমার তো প্রতিশ্রুতি দেওয়াই আছে, {إِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا} ‘‘অবশ্যই আমি আমার রসূলদের এবং ঈমানদারদের সাহায্য করব।’’ (সূরা মুমিন ৫১) {كَتَبَ اللهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي} ‘‘আল্লাহ লিখে দিয়েছেন যে, আমি ও আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব।’’ (সূরা মুজাদালাহ ২১, অনুরূপ দেখুনঃ সূরা স্বাফফাত ১৭১-১৭২)
[2] সুতরাং তাঁর এই প্রতিশ্রুতি সুসম্পন্ন হবেই যে, তিনি (সাঃ) কাফেরদের উপর বিজয়ী হবেন এবং হয়েছেও তা-ই।
[3] যার দ্বারা এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের সম্প্রদায়রা তাঁদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাঁদেরকে কষ্ট দিয়েছে এবং তাঁদের জীবনকে সংকীর্ণ করে তুলেছে, কিন্তু পরিশেষে আল্লাহর সাহায্যে বাঞ্ছিত সফলতা এবং চিরন্তন মুক্তি তাঁদের ভাগ্যেই জুটেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. আর যদি তাদের উপেক্ষা আপনার কাছে কষ্টকর হয় তবে পারলে ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ বা আকাশে সিড়ি খোঁজ করুন এবং তাদের কাছে কোন নিদর্শন নিয়ে আসুন। আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতেন। কাজেই আপনি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) যদি তাদের উপেক্ষা তোমার নিকট কষ্টকর হয়, তাহলে পারলে ভূগর্ভে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সোপান অন্বেষণ করে তাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন কর। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সকলকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতেন।[1] সুতরাং তুমি অবশ্যই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।[2]
[1] নবী করীম (সাঃ)-কে বিরোধিতাকারী কাফেরদের মিথ্যা মনে করার কারণে তিনি যে মনঃপীড়া ও কষ্ট অনুভব করতেন সে ব্যাপারেই মহান আল্লাহ বলছেন, এটা তো আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর নির্ধারিত নিয়তির ভিত্তিতে হওয়ারই ছিল। আর আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তুমি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার প্রতি আকৃষ্ট করতে পার না। এমন কি যদি তুমি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ বানিয়ে অথবা আকাশে সিঁড়ি বা মই লাগিয়ে সেখান থেকে কোন নিদর্শন এনে তাদেরকে দেখিয়ে দাও, তাহলে প্রথমতঃ এ রকম করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়, আর যদি এ রকম দেখিয়েও দাও, তবুও তারা ঈমান আনবে না। কেননা, তাদের ঈমান আনার ব্যাপারটা আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল; যাকে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পূর্ণরূপে পরিবেষ্টিত করতে পারে না। অবশ্য এতে তার একটি বাহ্যিক হিকমত হল এই যে, মহান আল্লাহ তাদেরকে এখতিয়ার এবং (করা ও না করার) স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষা করছেন। অন্যথা সমস্ত মানুষকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করা আল্লাহর জন্য কোন কঠিন ব্যাপার ছিল না। তাঁর كُنْ (হও) শব্দ দ্বারা নিমিষে এ কাজ হতে পারত।
[2] অর্থাৎ, তুমি তাদের কুফরীর কারণে খুব বেশী আফসোস ও অনুতাপ প্রকাশ করো না। কেননা, তার সম্পর্ক আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর নির্ধারিত নিয়তির সাথে। কাজেই এটাকে আল্লাহর উপরেই ছেড়ে দাও। তিনি এর হিকমত এবং ভাল-মন্দের ব্যাপারটা বেশী বুঝেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. যারা শুনতে পায় শুধু তারাই ডাকে সাড়া দেয়। আর মৃতদেরকে আল্লাহ আবার জীবিত করবেন(১); তারপর তাঁর দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।
(১) আল্লামা শানকীতী বলেন, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এ আয়াতে মৃত বলে কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতেও সেটা আমরা দেখতে পাই। যেমন, “যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমরা পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলোক দিয়েছি, সে ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে রয়েছে।” [সূরা আল-আনআমঃ ১২২] “এবং সমান নয় জীবিত ও মৃত। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছে শোনান; আর আপনি শোনাতে পারবেন না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে।” [সূরা ফাতের ২২] [আদওয়াউল বায়ান; আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) যারা শ্রবণ করে, শুধু তারাই আহবানে সাড়া দেয়।[1] আর মৃতদিগকে আল্লাহ পুনর্জীবিত করবেন, অতঃপর তাঁর দিকেই তারা প্রত্যানীত হবে।
[1] আর এই কাফেরদের অবস্থা হল মৃতদের মত। যেভাবে মৃতরা শোনা ও অনুধাবন করার শক্তি থেকে বঞ্চিত, অনুরূপ এরা যেহেতু তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা সত্যকে বুঝতে চেষ্টা করে না, তাই এরাও মৃত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. আর তারা বলে, তার রব-এর কাছ থেকে তার উপর কোন নিদর্শন আসে না কেন? বলুন, নিদর্শন নাযিল করতে আল্লাহ্ অবশ্যই সক্ষম, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।(১)
(১) মুশরিকরা এমন কোন অলৌকিক নিদর্শন দেখতে চেয়েছিল, যা দেখার পর তারা ঈমান আনবে বলে ওয়াদা করছে। আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াতে এটাই ঘোষণা করছেন যে, তাদের চাহিদা মোতাবেক নিদর্শন দেখানো আল্লাহর পক্ষে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু তারা প্রকৃত অবস্থা জানে না। অন্য আয়াতে তারা কি জানে না সেটাও ব্যক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, যদি তাদের কথামত নিদর্শন দেয়ার পর তারা ঈমান না আনে, তবে আল্লাহর শাস্তির পথে আর কোন বাধা থাকবে না। যেমনটি সালিহ আলাইহিস সালামের জাতির বেলায় ঘটেছিল। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “আর পূর্ববর্তিগণের নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাদেরকে নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রাখে।
আমরা শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উট দিয়েছিলাম, তারপর তারা এর প্রতি যুলুম করেছিল। আমরা শুধু ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।” [সূরা আল-ইসরা: ৫৯] অন্য আয়াতে এটাও বলা হয়েছে যে, কুরআন নাযিল করার পর আর কোন নিদর্শনের প্রয়োজন নেই বিধায় তিনি তা নাযিল করেন না। “এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ঈমান আনে।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৫১] সুতরাং এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, কুরআনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মু'জিযা বা নিদর্শন। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকটে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ বল, ‘নিদর্শন অবতীর্ণ করতে আল্লাহ সক্ষম।[1] কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।’ [2]
[1] অর্থাৎ, এমন মু’জিযা যা তাদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবে। যেমন, তাদের চোখের সামনে ফিরিশতার অবতরণ অথবা পাহাড়কে তাদের মাথার উপর তুলে ধরা; যেভাবে বানী-ইস্রাঈলদের উপর ধরা হয়েছিল। বললেন, মহান আল্লাহ তো অবশ্যই এ রকম করতে পারেন, কিন্তু তা এই জন্য করেন না যে, এ রকম করলে মানুষদের পরীক্ষার বিষয়টা শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া তাদের দাবী অনুপাতে যদি কোন মু’জিযা দেখিয়ে দেওয়া যায়, আর তারপরও যদি তারা ঈমান না আনে, তাহলে এই দুনিয়াতেই তাদেরকে অতি সত্বর কঠিন শাস্তি দেওয়া হত। এইভাবে আল্লাহর এই হিকমতেও রয়েছে তাদের পার্থিব লাভ।
[2] যারা আল্লাহর নির্দেশ ও ইচ্ছার পূর্ণ হিকমত (যৌক্তিকতা)-কে অনুধাবন করতে পারে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি জীব বা দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মত এক একটি উম্মত। এ কিতাবে(১) আমরা কোন কিছুই বাদ দেইনি; তারপর তাদেরকে তাদের রব-এর দিকে একত্র করা হবে।(২)
(১) এখানে কিতাব বলে, লাওহে মাহফুজের লেখা বোঝানো হয়েছে। তাতে সবকিছুই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। [তাবারী]
(২) এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, কেয়ামতের দিন মানুষের সাথে সর্বপ্রকার জানোয়ারকেও জীবিত করা হবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন তোমরা সব হক আদায় করবে, এমনকি (আল্লাহ্ তা'আলা এমন সুবিচার করবেন যে,) কোন শিং বিশিষ্ট জন্তু কোন শিংবিহীন জন্তুকে দুনিয়াতে আঘাত করে থাকলে এ দিনে তার প্রতিশোধ তার কাছ থেকে নেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৬২] এমনিভাবে অন্যান্য জন্তুর পারস্পরিক নির্যাতনের প্রতিশোধও নেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৬২]
অন্য হাদীসে এসেছে, যখন তাদের পারস্পরিক অধিকার ও নির্যাতনের প্রতিশোধ নেয়া সমাপ্ত হবে, তখন আদেশ হবেঃ তোমরা সব মাটি হয়ে যাও। সব পক্ষীকুল ও জন্তু-জানোয়ার তৎক্ষণাৎ মাটির স্তুপে পরিণত হবে। এ সময়ই কাফেররা আক্ষেপ করে বলবেঃ (يَا لَيْتَنِي كُنْتُ تُرَابًا) অর্থাৎ “আফসোস আমিও যদি মাটি হয়ে যেতাম” এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে যেতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (কেয়ামতের দিন) সব পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করা হবে, এমনকি, শিংবিহীন ছাগলের প্রতিশোধ শিংবিশিষ্ট ছাগলের কাছ থেকে নেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৬৩, ৫/১৭২-১৭৩; মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩৪৫; ৪/৬১৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং (বায়ুমন্ডলে) নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখী তোমাদের মতই এক একটি জাতি।[1] কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি।[2] অতঃপর তাদের সকলকে স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত করা হবে। [3]
[1] অর্থাৎ, এদেরকেও মহান আল্লাহ ঐভাবেই সৃষ্টি করেছেন, যেভাবে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপ তাদেরকেও তিনি রুযী দেন, যেরূপ তোমাদেরকে রুযী দেন এবং তোমাদের মত তারাও তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের আওতাভুক্ত।
[2] ‘কিতাব’ বলতে ‘লাওহে মাহফূয’। অর্থাৎ, তাতে প্রতিটি জিনিসই লিপিবদ্ধ আছে। অথবা ‘কিতাব’ অর্থ কুরআন। যাতে সার-সংক্ষেপে কিংবা বিস্তারিতভাবে দ্বীনের প্রতিটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন, অন্যত্র বলেন, {وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ} ‘‘আমি তোমার উপর এমন বিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে রয়েছে প্রতিটি জিনিসের বর্ণনা।’’ (সূরা নাহল ৮৯) এখানে আলোচ্য বিষয়ের দিক দিয়ে প্রথম অর্থই (সঠিকতার) নিকটতর।
[3] অর্থাৎ, উল্লিখিত সমস্ত জাতিকেই কিয়ামতে একত্রিত করা হবে। এই দলীলের ভিত্তিতেই উলামাগণের একটি দল মনে করেন যে, যেভাবে সমস্ত মানুষকে জীবিত করে তাদের হিসাব নেওয়া হবে, অনুরূপ জীব-জন্তু এবং অন্যান্য সকল সৃষ্ট জীবকে জীবিত করে তাদেরও হিসাব নেওয়া হবে। (মহান আল্লাহ বলেছেন, যখন বন্য পশুগুলিকে একত্রিত করা হবে। সূরা তাকবীর ৫) আর এই ধরনের কথা একটি হাদীসেও নবী করীম (সাঃ) বলেছেন। ‘‘শিংবিশিষ্ট কোন ছাগল যদি শিংহীন কোন ছাগলের উপর যুলুম করে থাকে, তাহলে কিয়ামতের দিন শিংবিশিষ্ট ছাগলের কাছে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।’’ (মুসলিম ১৯৯৭নং) কোন কোন আলেম ‘হাশর’ (সমবেত) বলতে কেবল মৃত্যু মনে করেছেন। অর্থাৎ, সবাইকে মরতে হবে। আবার কোন কোন আলেম বলেছেন, এখানে ‘হাশর’ বলতে কাফেরদের হাশর এবং মধ্যে যেসব অন্যান্য কথা এসেছে তা বিচ্ছিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর উল্লিখিত হাদীস (যাতে ছাগলের আপোসে প্রতিশোধ গ্রহণ করার কথা এসেছে) কেবল উদাহরণ পেশ করার জন্য এসেছে। এর উদ্দেশ্য কিয়ামতের হিসাব-নিকাশের গুরুত্বকে স্পষ্ট করা। অথবা জীব-জন্তুর মধ্যে কেবল অত্যাচারী ও অত্যাচারিতকে জীবিত করে অত্যাচারিতকে অত্যাচারীর নিকট থেকে বদলা নিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর উভয়ের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। (ফাতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি) আর এর সমর্থন কোন কোন হাদীস থেকেও হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তারা বধির ও বোবা, অন্ধকারে রয়েছে।(১)। যাকে ইচ্ছে আল্লাহ বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছে তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।
(১) কাতাদা বলেন, এটি কাফেরদের জন্য দেয়া উদাহরণ, তারা অন্ধ ও বধির। তারা হেদায়াতের পথ দেখে না। হেদায়াত থেকে উপকৃত হতে পারে না। হক থেকে তারা বধির। এমন অন্ধকারে তারা অবস্থান করছে যে, সেখান থেকে বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত বধির ও মূক। যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি সরল পথে স্থাপন করেন। [1]
[1] আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যাজ্ঞানকারীরা যেহেতু নিজেদের কান দিয়ে সত্য কথা শুনে না এবং নিজেদের জবান দিয়ে সত্য কথা বলে না, সেহেতু তারা হল ঐ রকমই, যে রকম হল বোবা ও বধির। এ ছাড়াও এরা কুফরী ও ভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। তাই তাদের দৃষ্টিতে কোন এমন জিনিস পড়ে না, যাতে তাদের সংশোধন সাধিত হতে পারে। তাদের যাবতীয় বোধশক্তি লোপ পেয়ে গেছে। সেগুলো দিয়ে কোন অবস্থাতেই তারা উপকৃত হতে পারে না। অতঃপর বলেছেন, সমস্ত এখতিয়ার আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে চান ভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াতের পথ ধরিয়ে দেন। তবে তাঁর এই ফায়সালা যে এমনিই কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়া হয় তা নয়, বরং সম্পূর্ণ সুবিচারের দাবীসমূহের ভিত্তিতে তা হয়। পথভ্রষ্ট তাকেই করেন, যে ভ্রষ্টতায় ফাঁসতে চায় এবং তা থেকে বের হওয়ার না সে প্রচেষ্টা করে, আর না সে বের হওয়াকে পছন্দ করে। (আরো দেখুন, সূরা বাক্বারা ২৬নং আয়াতের টীকা)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হয় বা তোমাদের কাছে কিয়ামত উপস্থিত হয়, তবে কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) বল, ‘তোমরা ভেবে দেখ যে, আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হলে, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ডাকবে? যদি তোমরা সত্যবাদী হও (তাহলে উত্তর দাও)।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান