৫৫ : ৩১
سَنَفۡرُغُ لَكُمۡ اَیُّهَ الثَّقَلٰنِ ﴿ۚ۳۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩১. হে মানুষ ও জিন্ন! আমরা অচিরেই তোমাদের (হিসাব নিকাশের) প্রতি মনোনিবেশ করব(১),
(১) ثقلان শব্দটি ثقل এর দ্বি-বচন। যে বস্তুর ওজন ও মূল্যমান সুবিদিত, আরবী ভাষায় তাকে ثقل বলা হয়। এখানে মানব ও জিন জাতিদ্বয় বুঝানো হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إِنِّىْ تَارِكٌ فِيْكُم الثَّقَلَيْنِ অর্থাৎ আমি দুটি ওজনবিশিষ্ট ও সম্মানার্হ বিষয় ছেড়ে যাচ্ছি। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৭১] আলোচ্য আয়াতে জিন ও মানব জাতিকে এই অর্থের দিকে দিয়েই ثقلان বলা হয়েছে। কারণ পৃথিবীতে যত প্রাণী বসবাস করে, তাদের মধ্যে জিন ও মানব সৰ্বাধিক ওজন বিশিষ্ট ও সম্মানার্হ। سنفرغ শব্দটি فراغ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ কর্মমুক্ত হওয়া। এর বিপরীত কর্মব্যস্ততা। فراغ শব্দ থেকে দুটি বিষয় বুঝা যায়- (এক) পূর্বে কোন কাজে ব্যস্ত থাকা এবং (দুই) এখন সেই কাজ সমাপ্ত করে কর্মমুক্ত হওয়া। উভয় বিষয় সৃষ্টজীবের মধ্যে প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত। [কুরতুবী] ইবনুল আরাবী, আবু আলী আল-ফারেসী প্রমুখের মতে এখানে কর্মব্যস্ততা উদ্দেশ্য। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) হে মানুষ ও জ্বিন! আমি শীঘ্রই তোমাদের (হিসাব-নিকাশের) জন্য অবসর গ্রহণ করব। [1]
[1] এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর অবসর বা অবকাশ নেই। বরং (মানুষের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী) এটা একটি কথার কথা বলা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য ধমক ও ভীতি-প্রদর্শন; অর্থঃ মনোনিবেশ করব। ثَقَلاَنِ (মানুষ ও জ্বিনকে) এই কারণে বলা হয়েছে যে, তাদের উপর শরীয়তের সমস্ত কিছুর ভার ও দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। পক্ষান্তরে এই ভার ও বোঝ থেকে অন্য সৃষ্টি মুক্ত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩২
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ﴿۳۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩২. কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩২) অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৩
یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ اِنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ اَنۡ تَنۡفُذُوۡا مِنۡ اَقۡطَارِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ فَانۡفُذُوۡا ؕ لَا تَنۡفُذُوۡنَ اِلَّا بِسُلۡطٰنٍ ﴿ۚ۳۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৩. হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! আসমানসমূহ ও যমীনের সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না সনদ ছাড়া।(১)
(১) আয়াতে এ কথা বলা উদ্দেশ্য যে, প্রতিদান দিবসের উপস্থিতি এবং হিসাব-নিকাশ থেকে পলায়ন করতে পারবে না। মৃত্যুর কবল থেকে অথবা কিয়ামতের হিসাব থেকে গা বাঁচিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাধ্য কারও নেই। হে জিন ও মানবকুল, তোমরা যদি মনে কর যে, তোমরা কোথাও পালিয়ে গিয়ে মালাকুল-মওতের কবল থেকে গা বাঁচিয়ে যাবে অথবা হাশরের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়ে হিসাব-নিকাশের ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে, তবে জেনে নাও যে, এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তোমাদেরকে আল্লাহর প্রভুত্বাধীন এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু সে ক্ষমতা তোমাদের নেই। যদি আকাশ ও পৃথিবীর সীমা অতিক্রম করার সামৰ্থ্য তোমাদের থাকে, তোমরা যদি মনে এ ধরনের অহমিকা পোষণ করে থাক তাহলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে অতিক্রম করে দেখাও। এখানে আসমান ও যমীন অর্থ গোটা সৃষ্টিজগত অথবা অন্যকথায় আল্লাহর প্রভুত্ব। আয়াতে আকাশ ও পৃথিবীর প্রান্ত অতিক্রম করার সম্ভাব্যতা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য নয়; বরং অসম্ভবকে সম্ভব ধরে নেয়ার পর্যায়ে তাদের অক্ষমতা ব্যক্ত করা উদ্দেশ্য। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৩) হে জ্বিন ও মানুষ সম্প্রদায়! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, তাহলে অতিক্রম কর,[1] কিন্তু কোন শক্তি ব্যতিরেকে তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না। [2]
[1] এই হুমকিও একটি অনুগ্রহ। কেননা, এর ফলে অবাধ্যজন অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে এবং সৎ লোকেরা আরো সৎকর্ম করে।
[2] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও ফায়সালা থেকে পালিয়ে কোথাও যেতে পারলে চলে যাও। কিন্তু এ সাধ্য ও শক্তি কার আছে? আর পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? কোন্ জায়গা এমন আছে, যা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে? এটাও হুমকি যা পূর্বের হুমকির ন্যায় নিয়ামতও বটে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা হাশরের ময়দানে বলা হবে। যেখানে ফিরিশতারা চতুর্দিক থেকে মানুষকে ঘিরে থাকবেন। উভয় অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৪
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ﴿۳۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৪. কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৪) অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৫
یُرۡسَلُ عَلَیۡكُمَا شُوَاظٌ مِّنۡ نَّارٍ ۬ۙ وَّ نُحَاسٌ فَلَا تَنۡتَصِرٰنِ ﴿ۚ۳۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৫. তোমাদের উভয়ের প্রতি প্রেরিত হবে আগুনের শিখা ও ধুম্রপুঞ্জ(১), তখন তোমরা প্রতিরোধ করতে পারবে না।
(১) অধিকাংশ তফসীরবিদ বলেন, ধূম্রবিহীন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হবে شواظ এবং অগ্নিবিহীন ধূম্রকুঞ্জ نجاس বলা হয় এই আয়াতেও জিন ও মানবকে সম্বোধন করে তাদের প্রতি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও ধূম্রকুঞ্জ ছাড়ার কথা বর্ণনা হয়েছে। অর্থাৎ হে জিন ও মানব, জাহান্নাম থেকে তোমরা যেদিকেই পালাতে চাইবে, সেদিকেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও ধূম্রকুঞ্জ তোমাদেরকে ঘিরে ফেলবে আথবা হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামের অপরাধীদের কেউ যদি পালাতে চেষ্টা করে তাদেরকে ফেরেশতাগণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও ধূম্রকুঞ্জ দ্বারা ঘিরে ফেলবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) তোমাদের উভয়ের প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধূম্রপুঞ্জ (অথবা গলিত তামা),[1] তখন তোমরা প্রতিরোধ করতে পারবে না। [2]
[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন যদি তোমরা কোথাও পালিয়েও যাও, তবে ফিরিশতাগণ অগ্নিশিখা ও ধূম্রপুঞ্জ তোমাদের উপর নিক্ষেপ করে অথবা গলিত তামা তোমাদের মাথায় ঢেলে তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন। نُحَاسٌ এর দ্বিতীয় অর্থ গলিত তামা করা হয়েছে।
[2] অর্থাৎ, আল্লাহর শাস্তিকে প্রতিহত করা তোমাদের সাধ্য হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৬
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ﴿۳۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৬. কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৭
فَاِذَا انۡشَقَّتِ السَّمَآءُ فَكَانَتۡ وَرۡدَۃً كَالدِّهَانِ ﴿ۚ۳۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৭. যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে সেদিন তা রক্তিম গোলাপের মত লাল চামড়ার রূপ ধারণ করবে(১);
(১) এখানে কিয়ামতের দিনের কথা বলা হয়েছে। আসমান বিদীর্ণ হওয়ার অর্থ মহাকাশ বা মহাবিশ্বের মধ্যকারী পারস্পরিক আকর্ষণ বা ভারাসম্যের নীতি অবশিষ্ট না থাকা, মহাকাশের সমস্ত সৌরজগতের বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া। আরো বলা হয়েছে, সে সময় আসমান লাল চামড়ার মত বৰ্ণধারণ করবে। অর্থাৎ সেই মহাধ্বংসের সময় যে ব্যক্তি পৃথিবী থেকে আসমানের দিকে তাকাবে তার মনে হবে গোটা ঊর্ধ্বজগতে যেন আগুন লেগে গিয়েছে। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সেদিন ওটা (লাল চামড়া বা) তেলের মত লাল (গোলাপের) রূপ ধারণ করবে।[1]
[1] কিয়ামতের দিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে পড়বে। ফিরিশতাগণ পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সেই দিন আকাশ জাহান্নামের আগুনের প্রচন্ড তাপের কারণে গলে রঙানো চামড়ায় মত লাল হয়ে যাবে। دِهَانٌ তেল অথবা লাল চামড়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৮
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ﴿۳۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৮. কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৩৯
فَیَوۡمَئِذٍ لَّا یُسۡـَٔلُ عَنۡ ذَنۡۢبِهٖۤ اِنۡسٌ وَّ لَا جَآنٌّ ﴿ۚ۳۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩৯. অতঃপর সেদিন না মানুষকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে, না জিন্নকে!(১)
(১) অর্থাৎ সেদিন কোন মানব অথবা জিনকে তার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না। এর এক অর্থ এই যে, তাদেরকে কিয়ামতে এই প্রশ্ন করা হবে না যে, তোমরা অমুক গোনাহ করেছ কি না? এ কথা তো ফেরেশতাদের লিখিত আমলনামায় এবং আল্লাহ তা'আলার জ্ঞানে পূর্ব থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। বরং প্রশ্ন এই হবে যে, তোমরা অমুক গোনাহ কেন করলে? কোন কোন মুফাস্সির বলেন, এর অর্থ, অপরাধীদের শাস্তিদানে আদিষ্ট ফেরেশতাগণ অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে না যে, তোমরা এই গোনাহ করেছ কিনা? এর প্রয়োজনই হবে না। কেননা, প্রত্যেক গোনাহের একটি বিশেষ চিহ্ন অপরাধীদের চেহারায় ফুঠে উঠবে। ফেরেশতাগণ এই চিহ্ন দেখে তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেবে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) সেদিন না মানুষকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে, না জ্বিনকে? [1]
[1] অর্থাৎ, যে সময় তারা কবর থেকে বের হবে। তাছাড়া পরে তো হিসাবের ময়দানে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ অবশ্যই করা হবে। কেউ কেউ এর অর্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, গোনাহ সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। কারণ, তাদের তো সম্পূর্ণ কর্মবিবরণী ফিরিশতাদের কাছেও থাকবে এবং আল্লাহর জ্ঞানেও। অবশ্য এ কথা জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমরা এ কাজ কেন করেছিলে? অথবা অর্থ হল, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না, বরং মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্বয়ং সমস্ত কিছু বলে দেবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৫৫ : ৪০
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ﴿۴۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪০. কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান